১১. নিহত হওয়ার স্বাদ

নিহত হওয়ার স্বাদ

“আমি তিন বার নিহত হয়েছি! প্রতি বারই আমাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে!”

জ্ঞান ফেরার পরই শমসের নামের লোকটি এ কথা বলছিল, কিন্তু আমরা কেউই তার কথা বিশ্বাস করিনি। করার কারণও নেই। তিন বার তো দূরের কথা, চাইলেও একবারের বেশি মরতে পারে না কেউ।

ঢাকা-মাওয়া মহাড়কের পাশে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টহল পুলিশ তাকে খুঁজে পায় গত রাতে। আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ধরেই নিয়েছিলাম, লোকটা মৃত। তারপরও ডাক্তারি পরীক্ষা না করে কাউকে মৃত ঘোষণা করা যায় না-আর সেটা করতে গিয়েই দেখি লাশের হৃদপিণ্ড তখনও সচল! সবাইকে ভিরমি খাইয়ে দিয়ে অচেতন লোকটা আজ সকালে জেগে ওঠার পরই বলে যাচ্ছে-তাকে তিন বার হত্যা করার অদ্ভুত গল্পটি!

“প্রথমে আমাকে হত্যা করেছে আহাম্মেদুল্লাহ!” পুলিশ আসার পর লোকটি আবারও বলে যেতে লাগলো। “শ্বাসরোধ করে, তীব্র যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করেছে সে।”

স্থানীয় থানা থেকে বাহাদুর বেপারি নামের এক ইন্সপেক্টর এসেছে, মুখভর্তি পান চিবোচ্ছে সে। মাঝবয়সি এই ভদ্রলোককে দেখে মোটেও আশ্বস্ত হতে পারলাম না। এমন রহস্যের সুরাহা করা তার পক্ষে অসম্ভব।

“এরপর আপনি আবার কখন জীবন ফিরে পেলেন?” আমিই প্রশ্নটা করলাম। যদিও ভেবেছিলাম পুলিশের লোকটাই এসব জানতে চাইবে।

“মরে যাবার কতোক্ষণ পর জানি না…” রোগি বলল। “…সম্ভবত এক-দুদিন পর আমি আবার প্রাণ ফিরে পাই!”

ইন্সপেক্টর তখনও নিশ্চুপ। পান চিবোতে চিবোতে গল্প শুনে যাচ্ছে, কিছুই জিজ্ঞেস করছে না।

“আমার লাশটা আহাম্মেদুল্লাহ ফেলে দিয়েছিল কোনো ঝোঁপে। সে ভাবেনি আমি আবার প্রাণ ফিরে পাবো।”

“আপনে কেমনে বুঝলেন এতোক্ষণ মইরা ছিলেন?” বাহাদুর তার প্রথম প্রশ্নটা করলো এবার। “এমনও তো হইতে পারে, আপনে আসলে মরেন নাই…জ্ঞান হারাইছিলেন?”

ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে রইলো রোগি। “যদি তাই হয় তবে দ্বিতীয় মৃত্যুটাকে কী বলবেন?”

আমি আর ইন্সপেক্টর একে অন্যের দিকে তাকালাম।

“জীবন ফিরে পেয়ে আমি খুবই প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠি, আহাম্মেদুল্লাহকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি কিন্তু সে ততোক্ষণে পালিয়ে গেছে। পুলিশ তাকে খুঁজছে আমাকে হত্যা করার সন্দেহে।”

“কুন থানার পুলিশ?”

“কেরাণীগঞ্জ থানার।”

মাথা নেড়ে সায় দিলো বাহাদুর। মনে হলো, এটা সে খতিয়ে দেখবে।

“আমি আহাম্মেদুল্লাহকে পেলাম না, পেলাম তার ছোটোভাই সলিমুল্লাহকে, সে আমাকে দেখেই ভয় পেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো।”

“ওয় কেন ডরাইলো?”

“আমাকে হত্যা করার সময় বড়ভায়ের সাথেই ছিল ও!”

বাহাদুরের চোখ কপালে উঠে গেল। আপনি যদি কাউকে চেখের সামনে হত্যা করতে দেখেন আর এক-দুদিন পর দেখেন সেই লোক আপনার সামনে এসে হাজির, তখন ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

“আমিও তার পিছু পিছু দৌড়ালাম…কেন এটা করলাম জানি না। সম্ভবত আমার মাথায় খুন চেপে গেছিল। প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছিলাম আমি।”

“তারপর?” লোকটা থামতেই জানতে চাইলাম।

“সলিমুল্লাহকে ধাওয়া করে জীবনের দ্বিতীয় ভুলটা করলাম আমি। নির্জন এক জায়গায় এসে আমাকে কজা করে ফেললো সে তার লোকজন দিয়ে। আমি বুঝতে পারিনি, ওটা তার আস্তানা ছিল।”

“আপনেরে ধইরা ফালাইলো?” নিশ্চিত হতে চাইলো বাহাদুর বেপারি।

“হ্যাঁ। সলিমুল্লাহ তার বড়ভাইয়ের অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ করলো তখন। আমাকে পিস্তলের মুখে আটকে, হাত-পা বেধে পানিতে ফেলে দিলো। আমি তলিয়ে গেলাম ধলেশ্বরীর বুকে।”

“সেইখান থেইকা কেমনে ফিরা আইলেন?” ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলো বাহাদুর।”কবে আইলেন?”

“কততদিন পর জানি না…সম্ভবত এক দু’দিনের বেশি হবে না। জ্ঞান ফেরার পর দেখি, নদীর পাড়ে পড়ে আছি।”

বাহাদুরের মতো আমিও অবাক হয়ে শুনে যাচ্ছি এই অসম্ভব কাহিনী।

“দ্বিতীয় বার জীবন ফিরে পেয়ে আমি আর বোকামি করলাম না। প্রতিশোধ নেবার আশা বাদ দিয়ে নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু কপাল খারাপ, মুক্তারের সাথে দেখা হয়ে গেল।”

“মুক্তার? সে আবার কে?” বাহাদুরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো শমসের। “আহাম্মেদুল্লাহর পোপাষা কুকুর…ডানহাতও বলতে পারেন।”

“ওয় কিভাবে জানলে আপনে বাঁইচ্যা আছেন?”

“ও জানতো না…আমার সাথে দেখা হয়ে গেছিল কাকতালিয়ভাবে।”

“কোনখানে?”

“বাসে করে বিক্রমপুর যাচ্ছিলাম…আমার দেশের বাড়িতে, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি একই বাসে মুক্তারও যাচ্ছে। সে আমাকে দেখার পর ভড়কে গিয়েছিল। সে জানতো, আহাম্মেদুল্লাহ আমাকে হত্যা করেছে।” একটু ঢোক গিলে নিলো রোগি। “বুঝতে পারছিলাম, আমাকে ভুত ভাবছে সে। ধরে নিয়েছে, আমি তার পিছু নিয়েছি, আহাম্মেদুল্লাহকে না পেয়ে তাকে ধরার চেষ্টা করছি।”

“তারপর?” রোগি একটু থামতেই বাহাদুর বলে উঠল।

“বাসটা প্রথম যে স্টপেজে থামলো, সেখানে নেমেই কেটে পড়ার চেষ্টা করি, কিন্তু মাঝ রাতে মহাসড়কে পায়ে হাঁটা ছাড়া আর কোনোভাবে পালানো সম্ভব ছিল না। ভেবেছিলাম মুক্তারকে ধোঁকা দিতে পেরেছি, কিন্তু ভুলটা ভাঙে আধঘণ্টা পর। সড়কের নির্জন এক জায়গায় আসতেই দেখি পিস্তল হাতে সে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে!”

বাহাদুর উত্তেজনার চোটে জোরে জোরে পান চিবোতে লাগলো। টের পেলাম, আমার নিশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠছে।

“মুক্তারকে দেখে আমার পা দুটো স্থির হয়ে গেছিল। কেন জানি আর পালাতে পারিনি। হয়তো দু দুবার মৃত্যুবরণ করার পর আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম-মুক্তার চাইলেও আমাকে মারতে পারবে না।” একটু থেমে রোগি আবার বলে উঠল, “মুক্তার খুব বেশি সময় নেয়নি, সোজা আমার মাথায় পিস্তল তাক করে কিছুক্ষণ চোখের দিকে তাকিয়েছিল। অনুনয় বিনয় করে তার মন গলানোর চেষ্টা করেছিলাম আমি, নিজের ছোট্ট সন্তানের কথাও বললাম করুণা পাবার জন্য কিন্তু তার শীতল চোখ দেখে বুঝে গেছিলাম, আমাকে মরতে হবে….আবারও!”

“এরপরই পুলিশ আপনেরে রাস্তায় খুঁইজ্যা পায়?”

“আমি না…আমার লাশকে!”

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। লোকটার গল্প বিশ্বাস করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে, তার কথায় সত্যতা আছে! কারণটা আমার নিজেরও অজানা।

“এরপর তো সবই জানেন…তৃতীয় বারের মতো আমি জীবন ফিরে পেলাম।”

বাহাদুর আমার দিকে তাকালো, বুঝলাম তার ইঙ্গিতটা। মাথা নেড়ে সায় দিলাম। এই লোক অলৌকিকভাবেই প্রাণে বেঁচে গেছে। তার মাথার বাম পাশে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছিল, গুলিটা খুলি দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরও হয়ে গেছে, স্থায়িভাবে মস্তিষ্কে ক্ষতিও করেছে নিশ্চয়। সেটা পরবর্তিতে আরও পরিস্কার হয়ে উঠবে। কিন্তু প্রাণঘাতি বুলেট তার প্রাণ কেড়ে নিতে পারেনি! আর এটাই হলো সব চেয়ে ভড়কে যাবার মতো ব্যাপার। অন্তত লোকটার দাবির পক্ষে এই শক্তিশালী প্রমাণটি উড়িয়ে দেয়া যায় না।

বাহাদুর বেপারিকে দেখে মনে হলো কোনো কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। অবশ্য আমারও একই অবস্থা। দেখতে স্মার্ট না-হলে কোনো পুলিশ অফিসার কিংবা গোয়েন্দার উপরে কি আস্থা তৈরি হয়? বাহাদুরের মধ্যে আস্থার আ-টাও খুঁজে পেলাম না। পান খেতে খেতে ভদ্রলোক চলে গেল রোগিকে রেখেই।

দ্বিতীয় দিনেও রোগির মধ্যে তেমন কোনো সমস্যা দেখলাম না-এরকম ঘটনায় যা খুবই বিরল। তার সাথে টুকটাক কথা হলেও ওই উদ্ভট গল্পটা নিয়ে কোনো কথা বললাম না। এ দিন বাহাদুর বেপারি আবারও হাসপাতালে এলো, শমসের নামের রোগির কাছে বসে একই গল্প শুনে গেল সে। তার বলা গল্পে কোনো হেরফের হলো না। একেবারে প্রথম বার যা বলেছিল সেটাই হুবহু বলল আবার। ডাক্তার হিসেবে আমি বিরক্ত হলাম। ইন্সপেক্টরকে বললাম, এই রোগি বিস্ময়করভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও তার মস্তিষ্কে মারাত্মক রকমের ক্ষতি হয়েছে, তাকে এ মুহূর্তে এক কথা বার বার জিজ্ঞেস করে মানসিক চাপ দেয়া ঠিক হচ্ছে না। বাহাদুর বেপারি আমার কথায় হেসে ফেললো। রোগির সাথে কথা বলে তার নাকি মনেই হচ্ছে না লোকটার মাথায় কোনো সমস্যা আছে। যাইহোক, আমার সতর্কতার পরও রোগিকে ব্যক্তিগত কিছু প্রশ্ন করলো সে। শমসের খুব বেশি কিছু জানাতে পারলো না অবশ্য। শুধু জানালো, তার মা-বাবা অনেক আগেই মারা গেছে। ভাইবোন, স্ত্রী-সন্তান কিছু নেই। তার আদি বাড়ি বিক্রমপুরের গাঁউদিয়া গ্রামে।

কিছুক্ষণ পর বাহাদুর আমার কাছে এসে বলল, যে তিন জনের কথা বলছে শমসের, তারা সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

“তাহলে এই লোক যা বলেছে সবটাই সত্যি?!”

আমার বিস্মিত চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে বাহাদুর কাঁধ তুললো। “বুঝবার পারতাছি না…হের অনেক কথারই মিল পাইতাছি, তয় খটকাও আছে কিছু।”

“কী রকম?”

আমার দিকে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকে বাহাদুর বলল, “তদন্ত চলতাছে…শ্যাষ হউক, সব জানামুনে।”

এ কথা বলে উদভ্রান্ত দৃষ্টি নিয়ে ইন্সপেক্টর চলে গেল, আর মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে সারা দিন নিজের বেডে বসেই কাটিয়ে দিলো শমসের। তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছুই দেখলাম না।

তৃতীয় দিন সকালেই হাসপাতালে শোরগোল পড়ে গেল। বাহাদুর বেপারি থানা থেকে আরও কিছু পুলিশ নিয়ে হাজির। মাথার টুপিটা খুলে কিছুক্ষণ আফসোসের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকলো শমসেরের দিকে। মাথায় আঘাত পাওয়া রোগিকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে থানায় নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করলো সে। রোগি তখনও কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে কোনো প্রশ্নও করলো না। ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো কেবল।

“তারে পুলিশের জিম্মায় রাখা দরকার, ইন্সপেক্টর বলল আমাকে।

“কিন্তু কেন?”

“পুলিশ আইজকা ভোরে দুইটা লাশ খুঁইজ্যা পাইছে,” দীর্ঘশ্বাস ফেললো বাহাদুর। “আহাম্মেদুল্লাহরটা ধলেশ্বরীর পাড়ে এক ঝোঁপে…সলিমুল্লাহরটা ধলেশ্বরী নদী থেইকা।”

মূর্তির মতো জমে গেলাম কয়েক মুহূর্তের জন্য।

বাহাদুর আরও জানালো, মুক্তার নামের যার কথা বলেছে শমসের, সে মারা গেছে দু’ মাস আগে। লোকটা নাকি আত্মহত্যা করেছিল। আর আহাম্মেদুল্লাহর সাথে শমসের নামের একজনকে চলতে ফিরতে দেখেছে কেরাণীগঞ্জের অনেক মানুষজন, তবে তাকে কেউ ভালো করে চেনে না। সম্ভবত সে এখানে বেশি দিন আগে পা রাখেনি।

ইন্সপেক্টর আরও জানালো, সলিমুল্লাহ নামের দ্বিতীয় খুনির গত মাসেই এক ছেলে সন্তান হয়েছে। তার পরিবার জানিয়েছে সেই সন্তানের মুখটাও দেখেনি সে, লাপাত্তা হয়ে আছে কয়েক দিন ধরে। কিন্তু শমসের তাকে জানিয়েছিল, সলিমুল্লাহ তাকে খুন করার সময় নিজের সন্তানের মুখ দেখার জন্য আকুতি জানিয়েছিল সে। অথচ পরবর্তিতে পরিবারের কথা জানতে চাইলে সে জানায়, তার বাবা-মা মারা গেছে, স্ত্রী-সন্তানও নেই। এই একটি খটকা থেকেই বাহাদুর পুরো গল্পটা সাজিয়ে নিতে পেরেছে-অদ্ভুত এই রোগির বলা গল্পগুলো ঠিকই আছে শুধু তিনজন খুনির জায়গায় তাকে বসিয়ে দিলেই হলো!

“এই লোক আত্মহত্যা করেছিল?”

আমার প্রশ্নে সায় দিলো বাহাদুর। “হ…মুক্তারের মতোনই।”

“তাহলে পুলিশ পিস্তলটা খুঁজে পেলো না কেন?”

কাঁধ তুললো বাহাদুর। “হইবার পারে, যে পথম লাশটা দেখছিলে হে সরায়া ফালাইছে?”

সায় দিলাম আমি। ইন্সপেক্টর আরও জানালো, আহাম্মেদুল্লাহ আর সলিমুল্লাহ নামের দুই ভাই এখানকার ভূমিদস্যু হিসাবে পরিচিত, মুক্তার ছিল তাদের পোষা খুনি। অনেক খুনখারাবি করিয়েছে তাকে দিয়ে, পরে ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে যায়, নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করে সে। মুক্তারের জায়গায় আহাম্মেদুল্লাহ এই শমসেরকে নিয়ে আসে। কোত্থেকে কীভাবে একে জোগাড় করেছিল সেটা অবশ্য বের করা যায়নি এখনও।

“কিন্তু এই লোক তার মনিব আর তার ভাইকে হত্যা করলো কেন?”

আমার প্রশ্নে গাল চুলকালো বাহাদুর। “যতোটুকুন বুঝবার পারতাছি, অ্যাগেইনস্ট পার্টির কাছ থিকা ট্যাকা খাইয়া এই কাম করছে। থানার এক ইনফর্মার আমারে জানাইছে, পরশপাথর গ্রুপ নামের এক বিরাট বড় রিয়েল এস্টেটের লগে তাগোর সমস্যা চলছিল কিছু দিন ধইরা।” একটু থেমে আবার বলল ইন্সপেক্টর, “বিক্রমপুরের গাঁউদিয়া নামে যে গ্রামের সে কইছে, ঐটা অনেক আগেই পদ্মায় হারায়া গেছে। এর পর থিকা পোলাটা ভাসমান হয়া গেছে মনে হইতাছে।”

মাথা নেড়ে সায় দিয়ে গল্পের বাকি পাজলগুলো মেলাতে শুরু করলাম আমি : বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজের মনিব আর তার ভাইকে হত্যা করার পর যেকোনো কারণেই হোক তীব্র অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকে শমসের। সেই অনুশোচনা তাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। মুক্তারের মতো সে-ও অনুশোচনা থেকে মুক্তি পায় আত্মহত্যা করার মধ্য দিয়ে, কিন্তু বুলেট তার মস্তিষ্ক ভেদ করলেও ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যায়। তবে বুলেটের কারণে তার মস্তিষ্কে এক ধরণের বিপর্যয় ঘটে-যে তীব্র অনুশোচনার জন্ম হয়েছিল তার মধ্যে, সেটা এমন কিছুতে রূপান্তরিত হয় যে, খুন করা মানুষগুলোকে নিজের জায়গায় ভাবতে শুরু করে সে…বিশ্বাস করতে শুরু করে, তাকেই তিনবার হত্যা করা হয়েছে।

আর শমসেরের তৃতীয় হত্যাকাণ্ডটি ছিল আসলে নিজেকে হত্যা করা!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *