নিত্য ওথেলো
দাঁড়াও, জোজো! আরেকবার ভেবে দেখো!
আমার অন্তরাত্মা বলে উঠল। ঢুলুঢুলু চোখে গাড়ির হুইল ধরে আছি। চোখের সামনে মহাসড়কটি যেন সম্মোহিত করে রেখেছে আমায়। সিটের নীচ থেকে বোতলটা তুলে নিলাম, যেটুকু ছিল নিঃশেষ করে ফেললাম এক ঢোকে। আমি চাইনা আমার মাথার ভেতর থেকে আবার কেউ কথা বলে উঠুক, আমাকে থামানোর চেষ্টা করুক। করলেও লাভ হবেনা। আমি আমার জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছি!
রামানা, আমার স্ত্রী, আমি ওকে খুন করতে যাচ্ছি এখন।
সত্যি বলতে শুধু ওকে নয়, আরও একজকে খুন করতে যাচ্ছি আমি!
বামহাত দিয়ে কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তলটার অস্তিত্ব আরেকবার অনুভব করলাম। ফুল লোডেড। তবে আমি নিশ্চিত, দুটোর বেশি গুলির দরকার পড়বে না।
গতকাল রাত এগারোটা পর্যন্ত আমার জীবনটা অন্যরকম ছিল। ব্যাংক থেকে একটু দেরিতে বাসায় ফিরেছিলাম। হুট করেই দু-দিনের জন্য রামোনা ওর বাপের বাড়িতে গেছে, সঙ্গে করে নিয়ে গেছে কলিকে। এই মেয়েটা আমাদের ছোট্ট সংসারে রামোনাকে সব কাজে সাহায্য করে। যাইহোক, পুরো বাড়ি ফাঁকা বলে তাড়াতাড়ি ফিরে যাবার কোনো তাড়না বোধ করিনি। দশটার পর যখন ফিরলাম তখনও বুঝিনি ঘণ্টাখানেক পরই আমার পুরো জগা এলোমলো হয়ে যাবে।
রামোনা না থাকলে যা হয়, ক্লজিটের জামা-কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ওয়াইনের বোতলটার সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ওটা নিতে গিয়ে চমকে উঠি। একটা কিছু গুঞ্জন করছে রামোনার সাজিয়ে রাখা জামা কাপড়গুলোর ভেতর থেকে। কয়েক মুহূর্ত পরই বুঝতে পারলাম শব্দটা কিসের। কাপড়-চোপর হাতড়ে খুঁজে পেলাম একটি সেলফোন।
রামোনা ভুল করে তার সেলফোন রেখে যায়নি। ওর ফোনটা আমি ভালো করেই চিনি। তাহলে এটা কার? এখানে কেন লুকিয়ে রেখেছে?
ফোনটার রিংটোন বন্ধ করে রাখা, অধৈর্যের মতো ভাইব্রেট করতে থাকে আমার হাতে। কলারকে সেভ করা হয়েছে ‘জান’ নামে!
প্রচণ্ড কৌতূহল আর আতঙ্কের মধ্যে কলটা রিসিভ করে কানে চেপে ধরি আমি কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাইনি। কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলেই ফেলি, “কে?!”
আমার কণ্ঠ শোনামাত্রই লাইনটা কেটে দেয়া হয়। যে ফোন করেছে। তার দিক থেকে একদম সঠিক আচরণ!
কলব্যাক করলে কোনো লাভ হবেনা জেনেও করেছিলাম একবার। আমার ধারণাই ঠিক। রিং বেজে চললেও কলটা রিসিভ করা হয়নি।
ফোনসেটটা খুব বেশি দামি নয়, তবে তার কোনো দরকারও নেই। ফোনবুকে মাত্র একটিই নাম্বার! মাত্র একজনকে ফোন করার জন্যই এটা ব্যবহার করা হয়। গোপন একজন!
ইনবক্স চেক করে দেখি একটা ইনকামিং আর একটা আউটগোয়িং এসএমএস আছে, দুটোই বাংলা ফন্টে লেখা। মেসেজ দুটো পড়ার পর আমার মাথা ভনভন করে ঘুরতে শুরু করেছিল।
যা করার জলদি করো। আমার পিরিয়ড
বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যদি কিছু না করো
বিপদে পড়ে যাবো।
তুমি কোনো চিন্তা কোরো না, সোনা।
আমি ব্যবস্থা করছি। একদম চিন্তা করবা
না। ঠিক আছে?
সত্যি বলতে, মেসেজ দুটো পড়ার পর আমার পা দুটো টলে গেছিল। ধপাস করে বসে পড়ি মেঝের কার্পেটের উপর। এলোমেলো মাথাটা গুছিয়ে নেই দ্রুত। রামোনা প্রায়ই গাজীপুরে ওদের বাড়িতে যায়। কয়েকদিন থেকে চলে আসে। তাই আজ সকালে আমি অফিসে যাবার আগে যখন বলল দু দিনের জন্য মায়ের বাড়িতে যাবে, আমি একটুও অবাক হইনি। কলিকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে বলে ফ্রিজে দু-দিনের খাবার রান্না করে রেখে গেছে। একটু কষ্ট করে ওভেনে গরম করে খেয়ে নিতে বলেছে আমাকে। রামোনাকে ওর মায়ের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে রাত আটটার দিকে ফিরে আসে ড্রাইভার।
বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না রামোনার কাছে বাড়তি একটা সেলফোন আছে, আছে গোপন একজন পুরুষ! তারচেয়েও বড় কথা, সে প্রেগন্যান্ট!
আমার নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠেছিল। বোতল খুলে ঢক ঢক করে পান করতে শুরু করি আমি। খুব দ্রুতই বুঝতে পারি ঘটনা কী। রামোনা আর আমার সুখের সংসারে একটাই খামতি-বিয়ের সাতবছর পরও আমাদের কোনো সন্তান হয়নি। ডাক্তারের কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে এ জীবনে আমাদের পক্ষে সন্তানের মুখ দেখা সম্ভবও নয়-যদি না রামোনা অন্য কারোর সাথে…!
উফ! আমি আর ভাবতে পারিনি। মেডিকেল টেস্টে ধরা পড়েছে সমস্যাটা একান্তই আমার। এটা শোনার পর ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলাম, সুকঠিন দুঃখবোধে আক্রান্ত হয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমার সমস্ত দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছিল রামোনা। আমার সমস্ত অক্ষমতাকে মেনে নিয়ে আমার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছিল সে।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, বন্ধু সুহাসের কথা-ই শোনা উচিত ছিল। মেডিকেল রিপোর্টের কথাটা রামোনাকে জানাতে নিষেধ করেছিল সে। পরামর্শ দিয়ে বলেছিল, আমি যেন বলি, দু-জনের কারোর সমস্যা নেই। ডাক্তার বলেছে চেষ্টা করে যেতে, এক সময় হয়ে যাবে।
কিন্তু আমি সেটা করিনি। রামোনার সঙ্গে এতো বড় প্রতারণা করা সম্ভব হয়নি আমার পক্ষে।
গত রাত থেকেই নিজেকে খুব ফালতু, পরিত্যক্ত আর প্রবঞ্চিত একজন মনে করতে শুরু করি। প্রচুর পান করে ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। আমার বুকের ভেতরে রাগ-ক্ষোভ আর জিঘাংসার জন্ম নিয়েছে। সারাটা রাত কীভাবে কেটেছে বলতে পারবো না। শৈশবের, পাশের বাড়ির রাশেদচাচার মতো লজ্জায় আর অপমানে গলায় ফাঁস দেবার কথা মাথায় আসেনি। তার বউটা অন্য এক পুরুষের হাত ধরে পালিয়ে গেছিল কারণ মহিলা জেনে গেছিল তার স্বামী সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম। ঠিক আমার মতো!
রাশেদচাচার ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি মারতে গিয়ে আমিই তার ঝুলন্ত দেহটা প্রথম দেখেছিলাম। ঐ ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন নারী জাতির প্রতি এক ধরণের চাপাঘৃণা নিয়ে বেড়ে উঠেছি আমি। আমার সেই ঘৃণা আর ভয় রামোনা তার ভালোবাসা দিয়ে দূর করে দিয়েছিল। কিন্তু আমার বোঝা উচিত ছিল, মাতৃত্বের আকাঙ্খার কাছে ভালোবাসা হেরে যাবে।
অবশেষে ভোরের দিকে কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। দু-হাতে গাড়ির হুইল ধরে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেই ছুটে চলেছি এখন। দুনিয়ার কোনো শক্তিই আমাকে দমাতে পারবে না। পিস্তল থেকে বুলেট বের হয়ে গেলে যেমন সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়না তেমনি দু-দুটো খুন করার আগে আমিও থামবো না। যে সুতীব্র দুঃখ আর অপমানের চোরাবালিতে আমি নিপতিত হয়েছি সেখান থেকে কেবল দুটো খুনই আমাকে মুক্তি দিতে পারে।
রামোনাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে রাস্তার পাশে গাড়িটা রেখে এগিয়ে গেলাম। ওদের বাড়ির সামনে ওর বড়ভায়ের বিশাল পোলট্রি ফার্মের কাছে আসতেই একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে নিজের পরিকল্পনাটা গুছিয়ে নিলাম শেষবারের মতো। গভীর করে নিঃশ্বাস নিয়ে পা বাড়ালাম ওদের বাড়ির দিকে। আমি জোনায়েদ জোয়ার্দার জোজো, নিজ হাতে আমার স্ত্রী রামোনাকে খুন করবো। কোনো কথা নয়, কোনো ব্যাখ্যা নয়। সোজা তার কপালে একটা বুলেট ঢুকিয়ে দেবো। এটা করার সময় ভুলেও ওর চোখের দিকে তাকাবো না। সম্ভবত ঐ মায়াভরা চোখের দিকে তাকলে আমার আঙুল ট্রিগার চাপতে পারবে না। এরপরই দেরি না করে…।
আমার সমস্ত চিন্তা আচমকা ঝাঁকি খেলো। দূর থেকে দেখতে পেলাম বাড়ির বিশাল উঠোনটা পেরিয়ে দু-জন পুলিশ আমার দিকে আসছে! সঙ্গে সঙ্গে কাছের একটা ঝোঁপের আড়ালে গিয়ে লুকালাম। মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। ওদের বাড়িতে পুলিশ কেন?
আমার এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলো ঐ দুই পুলিশ। হেলেদুলে ঝোঁপের সামনে এসে একটু থামলো তারা।
“এইটা হইলো প্রেম-পিরিতের মামলা…বুঝলা…পুরাই ফালতু কেস,” গোঁফওয়ালা পুলিশ বলল তার সহকর্মিকে। “কামালভাই খামোখাই উল্টাপাল্টা ভাবতাছে।”
কামাল হলো রামোনার বড়ভাই। এখানকার নেতাগোছের একজন। বেশ ক্ষমতাবান।
“মিয়া-বিবি রাজি থাকলে পুলিশ কী করবো, অ্যাঁ? কামালভায়ের উচিত দুইটারে ধইরা আইনা বিয়া পড়াইয়া দেওয়া।”
দাঁত বের করে হাসলো গোঁফওয়ালা। “মাইয়া তো পোয়াতি হয়া গেছে, এহন ওরা নিজেরাই বিয়া কইরা লইবো, কাউরে আর দিতে হইবো না।”
“হুম। আমাগো কপালে আর বিয়া-বাড়ির খাওন নাই।”
দাঁত বের করে হাসলো পুলিশের লোকটা।
“তাইলে এহন কি করুম?”
“ধুরো, এইসব কেস লইয়া টাইম নষ্ট করনের কাম নাই, ওরা নিজেরাই মীমাংসা কইরা লইবো। এইরকম কেস জীবনে বহুত দেখছি। একটা জিডি কইরা রাখলেই হইবো।”
আবারও হেলেদুলে কথা বলতে বলতে পুলিশ দু-জন এগিয়ে যেতে লাগলো রাস্তা দিয়ে।
ঝোঁপের আড়ালে আমি ঝিম মেরে বসে রইলাম আরও কিছুটা সময়। তাহলে রামোনা ভেগে গেছে ওর গোপন প্রেমিকের সাথে! ও যে প্রেগন্যান্ট এটাও জেনে গেছে সবাই। দেরি করে ফেলেছি আমি। কাল রাতেই রওনা দেয়া উচিত ছিল। এমন আক্ষেপে যখন পুড়তে শুরু করেছি তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠল। ডিসপ্লে দেখে খুবই অবাক হলাম।
রামানার বড়ভাই!
তার বোন যে আরেকজন পুরুষের হাত ধরে পালিয়ে গেছে এটাই জানাবে হয়তো। একটু শরমিন্দাও হবে মনে হয়। মাফ-টাফ চাইবে। ব্যাপারটা মেনে নেবার জন্য অনুরোধ করবে ওদের পরিবারের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে যেন ঝামেলা না করি। রাজনীতি করে যখন, হুমকি-ধামকিও দিতে পারে আমাকে।
সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে কলটা রিসিভ করলাম। “হ্যালো?”
“তুমি কি অফিসে?”
রামোনা! ভিরমি খেলাম আমি। “তু-তুমি?” অবিশ্বাসে বলে উঠলাম। আমার দু-কানে ভো-ভো শব্দ হতে শুরু করলো।
“শোনো, একটা ঘটনা ঘটে গেছে…” ওপাশ থেকে বলল সে। তার কণ্ঠে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তার আগে বাড়িতে কেন এলাম সেটা বলি। তুমি আবার রাগ কোরো না। আজকাল তোমার যা মেজাজ হয়েছে…একটুতেই রেগে যাও…খুব ভয়ে ভয়ে থাকি।”
“-কী হয়েছে?” টের পেলাম কথা বের হতে চাইছে না গলা দিয়ে। উদ্বিগ্নতা নাকি কষ্ট আমি জানি না।
“আমাদের কলি…যে ভয়ে এখানে এলাম সেটাই করেছে, বুঝলে…ভোরের দিকে ও একটা ছেলের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।”
“কলি!” আমার সমস্ত চিন্তাভাবনা উল্টোদিকে ঘুরতে শুরু করলো এক নিমেষে। কলি মেয়েটা রামোনাদের দূরসম্পর্কের এক অভাবি আত্মীয়-তাকে ঠিক কাজের মেয়ে বলা যায় না। ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে সে। বেশ চটপটে। এসব আমার মাথায়ই ছিল না।
তারপর একনাগারে রামোনা যা বলে গেল তা শুনে দু-চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আমার নিঃশাস আটকে গেল যেন। নিজেকে ধিক্কার দিতে শুরু করলাম আমি। আরেকটু হলেই আত্মঘাতি এক খুনি হয়ে যেতাম। স্ত্রীকে খুন করার পর শেষ করে দিতাম নিজেকে।
গতকাল সকালে কলিকে একটা মোবাইফোনসহ হাতেনাতে ধরে ফেলে রামোনা। সেটটা জব্দ করে ক্লজিটে রেখে দেয়। কলি স্বীকার করেছে ফোনসেটটা তাকে দিয়েছে তার প্রেমিক। দীর্ঘদিন ধরে নাকি ওদের এই সম্পর্ক চলছে। ছেলেটার সাথে মেলামেশা করার কারণে সে অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়েছে। সে-কারণেই বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। বিষয়টা জানার পরই রামোনা আর দেরি করেনি। আমাকে বললে আমি খুবই হাউকাউ করতাম, রেগেমেগে মেয়েটাকে হয়তো বাড়ি থেকে বেরই করে দিতাম তাই আমাকে না জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। রামেনা চেয়েছে মেয়েটার বাবা-মাকে সব জানিয়ে ওদের হাতে তুলে দেবে। রামোনাদের কয়েকটা গ্রাম পরেই কলিদের বাড়ি। রাতেই ওর বাবা-মাকে খবর পাঠিয়ে দেয় সকালে চলে আসার জন্য, কিন্তু রাতের কোনো এক সময় মেয়েটা রামোনার ফোনসেট চুরি করে প্রেমিককে সব জানিয়ে দিয়েছিল সম্ভবত। খুব সকালে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছেলেটার সাথে চলে গেছে সে। রামোনার বড়ভায়ের ফার্মে কাজ করে এরকম এক ছেলে মেয়েটাকে এক লোকের সাথে চলে যেতে দেখেছে। পরবর্তিতে কলির কিছু হলে তারা যেন ঝামেলায় না পড়ে সেজন্যে পরিচিত দু-জন পুলিশ ডেকে এনে ঘটনা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় রামোনার বড়ভাই।
“এখন আসল খবরটা বলি তোমাকে,” রামোনার চাপাহাসির শব্দ শুনতে পেলাম বোধহয়।
“আসল খবর?” অস্ফুটভাবে বলে উঠলাম আমি।
“হুম।” তারপর একটু বিরতি দিয়ে বলল সে, “আমি বোধহয় কন্সিভ করেছি।”
“কী!”
“পুরোপুরি শিওর না। তবে মনে হচ্ছে…কাল বাসায় আসার পর শরীর খুব খারাপ করেছিল, বেশ কয়েকবার বমিও করেছি। বড়ভাবির কাছে প্রেগন্যান্সি টেস্ট স্টিক ছিল…আমাকে বলল একটু টেস্ট করে দেখতে…রেজাল্ট পজিটিভ…বিশ্বাস হয়, বলো? আমার কাছে তো অলৌকিক বলে মনে হচ্ছে।”
“কী বলছো তুমি?!” অবিশ্বাসের ঘূর্ণিপাকে পড়ে গেলাম। টের পেলাম আমার পা দুটো আবারও টলে যাচ্ছে। আমার মনের একটা অংশ বলছে এটা হতে পারে না। আমি অক্ষম। ডাক্তার অনেক টেস্ট করার পর নিশ্চিত হয়ে বলেছে। তাহলে? ও নিশ্চয় অন্য কারোর সাথে…!
আমার চিন্তায় ব্যঘাত ঘটিয়ে বলে উঠল রামোনা, “প্রথমে তো আমার বিশ্বাসই হয়নি…ভাবিকে বললাম ডাক্তারের কথা…ভাবি বলল, ডায়গনসিসে নিশ্চয় ভুল হয়েছে। এরকম হরহামেশাই হয়। আসলে আমাদের দুজনের কোনো সমস্যাই নেই।”
আমার কম্পিত হাত কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তলটার দিকে চলে গেল। গতরাত থেকে যে চিন্তাগুলো জেঁকে ধরেছিল সেগুলো যেন ঝড়ের মতো ফিরে এলো আবার। লণ্ডভণ্ড করে দিতে চাইলো আমাকে। একটা ঘোরের মধ্যে উঠে দাঁড়ালাম, পা বাড়ালাম রামোনাদের বাড়ির দিকে, আর ঠিক তখনই আমার অন্তরাত্মা বলে উঠল :
দাঁড়াও, জোজো! আরেকবার ভেবে দেখো!