মৌর্য – ৪৬

৪৬

গান্ধারা প্রাসাদে ব্যাপক আনন্দের বন্যা বইছে। সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত এসেছেন, তাতে সম্রাজ্ঞী খুশি। সম্রাজ্ঞী খুশি তো দাস-দাসীরা খুশি। এত বড় ঝামেলা গেছে সম্রাজ্ঞীকে নিয়ে। তাঁর মানসিক অশান্তি, শরীরের জ্বালাপোড়া সবাইকে অস্থির করে তুলেছিল।

সম্রাট সম্রাজ্ঞীর ডান হাতটা নিজের দুহাতের মুঠোয় পুরে চুপচাপ বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর সম্রাজ্ঞী বললেন, মহামান্য সম্রাটের দয়া হয়েছে, তিনি দুরধরাকে দেখতে এসেছেন।

দুরধরা কি জানেন থর মরু প্রান্তরে একজন দিগ্বিজয়ী পরাক্রমশালী সম্রাটের দিন কত প্রেমতৃষ্ণায় কাটে। উপায় নেই এই সম্রাটের। গ্রিকদের পরাজিত না করে যে শান্তি নেই, স্বস্তি নেই।

সম্রাট, তা আমি শুনতে চাই না। আমাদের সন্তান না আসা পর্যন্ত সম্রাটকে এখানেই থাকতে হবে।

থাকতে তো আমিও চাই, দুরধরা, প্রিয়তমা আমার। কিন্তু দ্বারে শত্রু রেখে কেউ কি স্বস্তি পায়? তাকে নিধন না করা পর্যন্ত কী করে আমাদের শান্তি হবে?

মৌর্য সাম্রাজ্য কি তার উত্তরাধিকারী চায় না, সম্রাট?

এ কথা কেন বলছেন, সম্রাজ্ঞী? একজন উত্তরাধিকারীর জন্যই তো ছুটে আসি। প্রাণপণ চেষ্টা করি, যাতে আমাদের সন্তান আমাদের সৌভাগ্য বয়ে আনে। আমাদের পুত্রসন্তান হবে, আচার্য ভদ্ৰবাহু এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

তা বলেছেন তিনি? বলে সম্রাজ্ঞী ভদ্রবাহুর উদ্দেশ্যে হাত জোড় করে প্রণাম জানালেন।

সম্রাটও ভদ্রবাহুর উদ্দেশ্যে হাত জোড় করে প্রণাম জানিয়ে বললেন, আমাদের পুত্রসন্তান হবে শারীরিকভাবে সুঠাম ও সর্বৈব নিখুঁত। তার হস্তযুগল হবে নিটোল, পঞ্চইন্দ্রিয় হবে প্রখর সৌভাগ্য লক্ষণ ফুটে উঠবে তার মুখমণ্ডলে, তার ভালো ও সদ্‌গুণগুলো প্রতিফলিত হবে কাজ ও কর্মে। লম্বা, ওজন ও শারীরিক গড়নে হবে মোহনীয় ঠিক পূর্ণচন্দ্রের মতো। শৈশবেই হবে বুদ্ধিদীপ্ত, যৌবনে মেধাবী। চারবেদ, জৈনগ্রন্থ, ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞানরহস্য—সবই ভালোভাবে জানবে। অসাধারণভাবে রপ্ত করবে গণিত, ধ্বনি ও ভাষাতত্ত্ব, ব্যাকরণ, পরিমাপ, জ্যোতির্বিদ্যা, শব্দবিদ্যা, জ্যোতিষবিদ্যা ও রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতা। চৌষট্টি কলায় হবে দক্ষ—শ্ৰেষ্ঠ মহাজ্ঞানী। আমার অবর্তমানে হবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্রাট।

যেন তা-ই হয়, সম্রাট, এসব উচ্চাশা বুকে ধারণ করেই তো বেঁচে আছি, বললেন সম্রাজ্ঞী। রাজপুত্র আমার ঘোড়া হাঁকিয়ে বেসামাল ছুটে বেড়াবে, আমার কোনো বাধাই মানবে না। আমি বকব, শাসন করব, সে বিজয়ীর হাসি হাসবে। একদিন বড় হবে। বিশ্বের সব রাজকুমারী তার চারপাশে ঘুরঘুর করবে, কিন্তু সে পাত্তা দেবে না। আমরা যে রাজকুমারীকে পছন্দ করব, তাকেই সে বিয়ে করবে। বাবার মতো হবে সৎ ও ক্ষমাহীন সম্রাট।

সম্রাজ্ঞীর কথা শুনে হাসলেন সম্রাট। রাজবৈদ্যকে ডাকলেন। সম্রাজ্ঞী ও তাঁর গর্ভের সন্তানের খোঁজখবর নিলেন। রাজবৈদ্য বললেন, নয় মাস সাড়ে সাত দিন পর সম্রাজ্ঞী সুস্থ একজন পুত্ৰ সন্তানের জন্ম দেবেন। আলোকিত হয়ে উঠবে সম্রাটের প্রাসাদ ও সমস্ত সাম্রাজ্য। কী যে গৌরবময় হবে দিনগুলো। স্বর্গ নেমে আসবে তখন। উৎসব হবে পুরো বছরজুড়ে। সম্রাজ্ঞী আর রাজপুত্রকে নিয়ে আমরা মাতোয়ারা হব।

সম্রাজ্ঞী উৎফুল্ল চিত্তে রাজবৈদ্যের উদ্দেশে বললেন, হেমপ্রভা, আশীর্বাদ করো যেন রাজপুত্র কুশলে জন্মলাভ করে।

সম্রাজ্ঞীর উপস্থিতিতেই সম্রাট মন্দাকিনীকে ডাকলেন।

সম্রাজ্ঞী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মন্দাকিনীকে কী দরকার?

আসার সময় তাকে কয়েকটি কাজ দিয়েছিলাম।

এখন না, বলে সম্রাজ্ঞী অস্থির হয়ে উঠলেন। তাঁর গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। তাই অস্থিরতা প্রবল হয়ে উঠেছে।

সম্রাট বললেন, সম্রাজ্ঞী, কোনো সমস্যা?

না, আমি ঠিক আছি।

আপনি ঠিক নেই, সম্রাজ্ঞী। হেমপ্রভা, সম্রাজ্ঞীর কী অবস্থা, তিনি ঘামছেন কেন? কদমফুলে বৃষ্টির ফোঁটা জমা হওয়ার মতো সম্রাজ্ঞীর মুখমণ্ডলে ঘাম জমা হচ্ছে। অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে তাঁকে। সম্রাটের সেদিকে দৃষ্টি নেই, তাঁর উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

সম্রাজ্ঞী বললেন, ওঝা ডাকুন। আমার অস্থির লাগছে।

সম্রাট এক দাসীকে বললেন, মন্দাকিনীকে বলো আসার দরকার নেই। সম্রাজ্ঞী তাকে আমি পাটালিপুত্রে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি আমার কাছে আসুন। আর সবাই চলে যাও। আমরা একান্তে কথা বলব।

রাজবৈদ্য ও দাস-দাসীরা কক্ষ থেকে চলে যাওয়ার পর সম্রাট সম্রাজ্ঞীকে কাছে টেনে নিলেন। বললেন, আপনার কেন এই অস্থিরতা। এত বছরেও আস্থার অভাব?

তাকে কেন এনেছেন?

সে গ্রিক জানে, তাই। আমার প্রয়োজন হতে পারে।

অন্যেরাও তো আছে।

তা আছে, এমন গোপন বিষয় আদান-প্রদান করা লাগতে পারে, যা আমি ছাড়া অন্য কারও জানা উচিত নয়। তাই তাকে এখানে রেখেছি।

সে কথা আগে বলেন নি কেন?

আচ্ছা, বলুন তো এত নারী রক্ষী আমাকে ঘিরে রাখে সব সময়, তাকে আপনার অবিশ্বাস কেন? আমাকে ছোট করলেন, সম্রাজ্ঞী।

আমি দুঃখিত, সম্রাট, বলে আরও ঘনিষ্ঠ হলেন সম্রাজ্ঞী।

আমাদের পুত্রসন্তান জন্ম নেওয়ার পর আমি আপনার সঙ্গে সিন্ধু উপত্যকায় যাব!

অবশ্যই যাবেন। এত সুন্দর জায়গা। না দেখলে সব সাধ অপূর্ণ থেকে যাবে। সম্রাজ্ঞী মুখের ঘামটা মুছে ফেলতে যাচ্ছিলেন। সম্রাট বললেন, থাক না হিরের টুকরোগুলো।

.

জায়গাটির প্রেমে পড়েছেন কর্নেলিয়াও। যুদ্ধশিবিরের অতিথিশালা নয়, তিনি ঘুরছেন সিন্ধুর তীর ঘেঁষে। তাঁকে অনুসরণ করছে চাণক্যের গোয়েন্দারা। সঙ্গে আছে নিকোমেডেস।

নিকোমেডেস, আমি কী চিন্তা করেছি, তোকে বলেই ফেলি।

বেশ, বল।

চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে যখন আমার জীবন শুরু হবে, তখন ফাওলিনকে এখানে নিয়ে আসব। এই সুন্দর জায়গায় তোদের বিয়ে হবে, বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।

আমি অবাক হচ্ছি।

কেন?

তোর নিজের বিয়ে বাদ দিয়ে এখানে আমার বিয়ে নিয়ে ভাবছিস। তুই আসলেই কী? তুই এই জায়গার মর্ম বুঝবি না, ফাওলিন বুঝবে। পিসি যে কী খুশি হবেন, ভাবতেই আমার ভালো লাগছে।

তুই বাস্তববাদী হ, কর্নি।

অবাস্তব কী বললাম?

আমার মনে হয় মহামন্ত্রী কোনো ফন্দি আঁটছে।

আরে না, তাকে সে রকম মনে হয় নি।

আমাদের সৈনিকের চোখ, বুঝলি? মানুষের মনোভাব বোঝার প্রশিক্ষণ আমাদের দেওয়া হয়!

কিন্তু আমার মন বলছে মহামন্ত্রী আমাদের সম্রাটের কাছে সম্মানের সঙ্গেই হাজির করবেন। সিন্ধুতীরে বসে আছেন এঁরা দুজন। পড়ন্ত বিকেল। সিন্ধুর জলে বিকেলের রোদ যেন বাতাসের সঙ্গে খেলা করছে। আর তাই ঝলমলে ঢেউগুলো ফেনার মুকুট মাথায় পরে তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। এদিকে তাকিয়ে কর্নেলিয়া বললেন, সুন্দরগুলো কেন এভাবে নিঃশেষ হয়, নিকো?

নিকোমেডেস তার জবাব না দিয়ে বলল, আমাদের বিকল্প কিছু ভেবে রাখা দরকার। এ ছাড়া সেলুসিড সম্রাটের সঙ্গে দেখা করে এখানে আসা উচিত ছিল। এখন আমাদের খুঁজে না পেয়ে মহাচিন্তায় পড়ে যাবেন।

ভালো দিকও তো আছে। আমাদের উদ্ধারের জন্য তৎপর হবেন।

তার পরিণাম কি ভালো হবে?

সময়ই তা বলবে। তুই বরং অন্য কিছু ভাব। বিকল্প কী যেন ভাবতে বলেছিলি। সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাতের বিকল্প পথ?

না, মহামন্ত্রীর কাছ থেকে পালানোর।

তুই এখনো সে কথাই ভাবছিস। এই মহামন্ত্রীর কোনো সাধ্য নেই আমাদের ক্ষতি করতে পারে।

এত বিশ্বাস কিন্তু বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্বাসের ওপর সম্পর্ক দাঁড়ায়।

এ সময়ই সুবন্ধুকে নিয়ে চাণক্য উপস্থিত হলেন। বললেন, আমার মনে হয় সিন্ধুর দৃশ্য প্রিন্সেসকে মুগ্ধ করে রেখেছে।

ঠিক বলেছেন। এ রকম সুন্দর দৃশ্য ভূস্বর্গে আর আছে কি না, জানি না।

জায়গাটা আপনার পছন্দ হয়েছে শুনে ভালো লাগছে। এখানে আপনার সময় ভালো কাটবে।

ওদিককার খবর কী?

আমি দুঃখিত। হঠাৎ করেই সম্রাট গান্ধারা রাজপ্রাসাদে গেছেন।

কোথায় এটা?

কাছেই। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছা সম্ভব।

তাহলে আমরা যাই?

না, তা ঠিক হবে না। সম্রাজ্ঞী ওই প্রাসাদে আছেন। অসুস্থ।

তাহলে?

সম্রাট ফিরে আসবেন। দেরি হলে আমাকে বলে যেতেন।

আচ্ছা, বলে নিকোমেডেসের দিকে তাকালেন কর্নেলিয়া। নিকোমেডেসের চোখে অর্থপূর্ণ দৃষ্টি, যেন বলছে, আমি কী বলেছিলাম।

তা চাণক্যের দৃষ্টি এড়ায় নি। বললেন, আমরা দুজনই শুধু কথা বলে যাচ্ছি, প্রিন্স কিছু বলছেন না।

নিকোমেডেস হেসে দিয়ে বললেন, মহামন্ত্রী, ক্ষমা করবেন। কথা কম বলার জন্য আমার বিরুদ্ধে এই অনুযোগ সবারই। একটি দারুণ জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেছেন। সে জন্য ধন্যবাদ।

আমি গ্রিসে কখনো যাই নি। গ্রিসের সৌন্দর্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা শুনেছি। দর্শন, সাহিত্য, শিল্প, ভাস্কর্য, চিত্র, নাটক — সবকিছুতেই গ্রিস পাশ্চাত্যে পথিকৃত।

আপনি ঠিকই শুনেছেন।

যুদ্ধবিদ্যায়ও যথেষ্ট পারদর্শিতা আছে

ভুল বলেন নি। কিন্তু আপনাদের মতো নয়। প্রথম আক্রমণেই আমাদের পেছনে হটতে বাধ্য করলেন।

আমাদের সৈন্যবল বেশি।

না, আপনাদের হস্তীবলই আমাদের প্রাথমিক পরাজয়ের কারণ, বলল নিকোমেডেস।

হস্তীবল জয়ের বড় কারণ হতে পারে, কিন্তু একমাত্র কারণ নয়, বললেন চাণক্য।

আপনাদের যুদ্ধকৌশল আর দেব-অস্ত্রের কথা আমি শুনেছি। দেব-অস্ত্রটা আসলেই কি দেবতাদের কাছ থেকে পেয়েছেন?

কর্নেলিয়ার কথা শুনে চাণক্য হেসে দিলেন। পরে বললেন, আমাদের দুটি মহাকাব্য আছে- রামায়ণ ও মহাভারত। সেখানে মহান দুই কবির বর্ণনায় দেবতাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রের নাম রয়েছে। আমরা আমাদের উদ্ভাবিত অস্ত্রের নাম রেখেছি সে কল্পিত অস্ত্রের নামে। দেবতারা আমাদের কোনো অস্ত্র দেয় নি, দেবতারা বড়জোর আশীর্বাদ দিতে পারেন, অস্ত্র নয়। বলে আবার হাসলেন ও বললেন, আপনারা কি গ্রিক দেবতাদের কাছ থেকে অস্ত্র পান?

কর্নেলিয়া বললেন, অস্ত্র পাওয়া যায় কি না, জানি না, তবে হোমারের ইলিয়াডে স্পিরিচুয়াল দোরি (ট্রয়ের যুদ্ধে ব্যবহার করা) অস্ত্রের নামে আমাদেরও অস্ত্র রয়েছে।

ঐতিহ্যগত ধ্যানধারণা সব জাতিরই মজ্জাগত, বলল নিকোমেডেস।

আপনাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, আশা করি, বললেন চাণক্য!

প্রিন্সেস বললেন, না, হচ্ছে না। আমরা খুব ভালো আছি।

সুবন্ধু, তুমি লোকজনকে বলে দাও যেন তাঁদের কোনো অসুবিধে না হয়, বলে হাসলেন। আবার বললেন, আমি সম্রাটের খবর নিই কখন আসবেন। আমরা আসি। বিদায়।

এদিকে সম্রাট সেলুকাস কন্যার সন্ধান না পেয়ে বড় অস্থির আছেন। তিনি সর্বত্র তাঁর গোয়েন্দাদের পাঠিয়েছেন। কেউই এখনো সন্ধান দিতে পারে নি।

জেনারেল ফিলেকাস সম্রাটকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এই বলে যে প্রিন্সেস অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, নিশ্চয়ই সুকুশলে ফিরে আসবেন।

ফিলেকাস, তুমি জানো না ভারতবর্ষ এক বড় বিচিত্র জায়গা। এখানে মন্ত্র দ্বারা মানুষ বশীকরণ করা হয়। আমি শুনেছি, এখানকার ওঝারা মানুষকে মুহূর্তে নেই করে দিতে পারে বিদ্যুচ্চমকের মতো। কোথায় হারাল এরা, বললেন সম্রাট।

নিকোমেডেসটা কে মহামান্য সম্রাট?

সে আমার বোনের ছেলে। টলেমির নৌবাহিনীতে অফিসার হিসেবে কাজ করে।

তাহলে তো চৌকস হওয়ার কথা। আমার মনে হয় এরা ঠিকই আছে। কোথাও আনন্দ করছে।

তুমি আর্কিমেডেসকে ডাকাও। সে বসে আছে কেন?

আর্কিমেডেনকে ডাকা হলো। আর্কিমেডেসও প্রিন্স। তরুণ জেনারেল। তিনি এখন নিকোমেডেসকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে বসে আছেন। কর্নেলিয়ার সঙ্গে দেখামাত্র তাঁর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এতক্ষণ সামরিক পোশাক ছেড়ে মুড খারাপ করে বসে ছিলেন। সম্রাটের ডাক পড়েছে শুনে আবার ইউনিফর্ম পরে তড়িঘড়ি করে ছুটে এলেন।

সম্রাট বললেন, তুমি খোঁজখবর রাখো?

কিছু না বুঝে তাকিয়ে রইলেন আর্কিমেডেন্স।

ফিলেকাস বললেন, প্রিন্সেসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কী বলছেন, স্যার?

তুমি খুঁজে বের করার দায়িত্ব নাও। মহামান্য সম্রাট তা-ই চাইছেন। তন্ন তন্ন করে খুঁজবে। যেখানে সম্ভাবনা আছে, প্রয়োজনে অভিযান চালাবে।

হঠাৎ সেলুকাস বললেন, ওদের ধরে নিয়ে যায় নি তো মৌর্যরা?

ফিলেকাস বললেন, আমাদের অনুসন্ধান পরিকল্পনায় এই আশঙ্কাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে আমার মনে হয় না এমনটি ঘটবে।

প্রিন্সেসের এখানে না আসাই উচিত ছিল।

আপনি এত অস্থির হবেন না, মহামান্য সম্রাট। অনুমতি দিলে আর্কিমেডেস এখনই কাজ শুরু করবে।

ফিলেকাস, তুমি কি জানো সে আমার কাজিনের ছেলে? ওরা কিন্তু গ্রিক রাজবংশের সন্তান। নাম দেখেই তো বুঝতে পারা উচিত। আমার বোনের ছেলের নামের মধ্যেও সে ঐতিহ্য আছে।

অবাক ব্যাপার, মহামান্য সম্রাট। আমার মনে হতো কিছু নামেই আভিজাত্য প্রকাশ পায়, বিশেষ করে আর্কিমেডেসের নাম যখন শুনি।

আর্কিমেডেস, এখন যাও। পরিবারই হচ্ছে প্রথম। তাদের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে, বলতেন আলেকজান্ডার। কথাটা বলে সেলুকাস একটু থামলেন। আর্কিমেডেস চলে যাওয়ার পর বললেন, ফিলেকাস, যদি মৌর্যরা প্রিন্সেসকে অপহরণ করে থাকে, তাহলে যুদ্ধ করে তাকে উদ্ধার করতে হবে। এ কাজে শক্তি বাড়াতে হবে। পশ্চিম রণাঙ্গনের কমান্ডার জেনারেল মোলনকে কি কিছু চৌকস সৈন্য নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে বলব?

জেনারেল ফিলেকাস ভেবে দেখলেন, জেনারেল মোলন এলে তিনি গুরুত্ব হারাবেন। কিন্তু সরাসরি সম্রাটকে না বলা যাবে না। বললেন, প্রয়োজনে জেনারেল মোলনকে ডাকা যাবে। এখন আমরা তৎপরতা চালিয়ে দেখি কী করা যায়।

ব্যাপারটা মাথায় রেখো।

পশ্চিম দিকটা কি…বলতে গিয়ে থেমে গেলেন ফিলেকাস। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্ব মোলনেরই থাক। এন্টিওকাসকে সংবাদ পাঠিয়ে আনা হোক। পরে ভাবলেন, তিনি ভুল করতে যাচ্ছিলেন। তা করা হলে আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়া হতো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *