মৌর্য – ৩৩

৩৩

আমার জীবনটা এমন কেন রে দিদি? ‘ভালোবেসে যাকে ছুঁই, সেই যায় দীর্ঘ পরবাসে’।

লাউডিস বললেন, কর্নেলিয়া, এত হতাশ হবি না। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখ। সর্বাণী চন্দুগুপ্ত সম্পর্কে যে কথা বলেছেন, শুনে তো আমি অবাকই হচ্ছি।

তাতে কী হয়েছে? চন্দ্রগুপ্ত এখন আমাদের শত্রু। তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই জাতি হিসেবে আমাদের কর্তব্য।

তা ঠিক আছে। কোনোটিই মিথ্যে নয়। তুই সম্রাটকে ভালোবাসিস, তা-ও তো সত্য। দিন যত যাচ্ছে, সবকিছু জটিল হচ্ছে। জানি না কোন ট্র্যাজিক পরিণতি অপেক্ষা করছে আমার জন্য।

তুই খুব বেশি ভাবিস, কর্নেলিয়া।

ভাবতে হচ্ছে, কী করব।

আরও একটি সংবাদ আছে, জানি, তা তোর পছন্দ হবে না।

কর্নেলিয়া ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী সংবাদ?

বাবা যুদ্ধে যাওয়ার আগে সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে এন্টিওকাসকেই মনোনীত করছেন।

বাবা সব ভুলে গেছেন? আমার রাগে-ক্ষোভে চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। বাবা এত দুর্বল কেন? একেউস কী দোষ করেছে? ওকেও তো মনোনীত করা যেত।

সে তো রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায় না, ধন-সম্পদ আর আনাতোলি, যার জমিদারি নিয়ে থাকতে চায়। এ ছাড়া সে এন্টিওকাসের সঙ্গে বিরোধে যাবে না।

আমি আনাতোলিয়া যাব। ওর সঙ্গে কথা বলব। তুইও যাবি।

কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না। ওকে আমি চিনি। ও রাজ্যচালনাকে ঝামেলা মনে করে।

তাহলে কী করব আমি? ও সম্রাট হলে আমি গ্রিসে চলে যাব। গ্রিসের রাজা বাবাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছে।

তার আগে বাবার সঙ্গে কথা বল।

ঠিক বলেছিস। পিসিকে নিয়ে কথা বলতে হবে।

.

এদিকে মৌর্য রাজধানী পাটালিপুত্রে যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করেছে। এ দামামা কেন যেন সম্রাজ্ঞী দুরধরার হৃদয়ে বিদ্ধ হচ্ছে। বাড়ছে তাঁর অস্থিরতা। দাসীকে ডেকে বললেন, অপ্সরা, যুদ্ধের বাদ্য বাজছে কেন? যাত্রা কি সমাগত?

মহড়া চলছে, সম্রাজ্ঞী।

আমার শরীরে সবাই মিলে জল ঢালতে শুরু কর। অপ্সরা বলল, সম্রাজ্ঞী, রাজবৈদ্যকে কি খবর দেব?

দে, একজন ওঝাকেও ডাক।

অপ্সরা রাজবৈদ্যকে সংবাদ দিল।

রাজবৈদ্য বুঝতে পারছেন না শরীর কেন জ্বলবে। তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করলেন। ওঝা এসে ঝাড়-ফুঁক করল। বৃক্ষমূল বাম বাহুতে বেঁধে দিল। সাময়িক স্বস্তি পেলেন সম্রাজ্ঞী। কিন্তু মনের ভেতর কোথায় যেন একটা ব্যথা রয়ে গেল।

প্রতিবারই যুদ্ধযাত্রায় তাঁর আশীর্বাদ থাকে। আগ্রহ থাকে। এ নিয়ে দুবার ব্যতিক্রম হলো। মন তাঁর সায় দিচ্ছে না সম্রাট যুদ্ধে যান। কেন আর যুদ্ধ—যদি যুদ্ধ শান্তি না দেয়। সম্রাটকে কথাটা বলবেন তিনি। আর যুদ্ধ নয়, এবার শান্তি চান।

সম্রাট কথাটা শুনে হেসে দিয়ে বললেন, ক্ষত্রিয় বংশে জন্মেছেন সম্রাজ্ঞী, যুদ্ধকে ভয় পেলে চলে? আমরা বীরের জাতি, যুদ্ধ করাই বীরের ধর্ম। কথাটা গতানুগতিক। সম্রাট এ কথা বলতে বলতে ভাবলেন, সম্রাজ্ঞীকে এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য কেউ বলে দেয় নি তো? আবার বললেন, গ্রিকরা ভারতবর্ষে উপনিবেশ স্থাপন করেছে, সিন্ধু অববাহিকা দখল করে নিয়েছে। এদের এখন সমুচিত শাস্তি দেওয়ার সময় এসেছে। এ সময়ে চুপ করে বসে থাকা যায় না, সম্রাজ্ঞী। আপনি খোলা মনে হৃষ্টচিত্তে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বিদায় দিন আমাদের।

এই যুদ্ধের কথা শুনলে বা মনে হলে আমি অস্থির হই, আমার শরীর-মনে জ্বালা করতে শুরু করে। এ যুদ্ধ কোনো সর্বনাশ ডেকে আনছে না তো?

আপনি শান্ত হোন, সম্রাজ্ঞী। যুদ্ধে জয়-পরাজয় আছে। এসবকে মেনেই সম্রাটকে সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে হয়। এ সংস্কৃতির সঙ্গে আপনার দীর্ঘ পরিচয় আছে। তবে হ্যাঁ, কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। আপনি সন্তানসম্ভবা, তাই মনমানসিকতা ও শরীরে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। আপনার পাশে আমরা সবাই আছি। আপনি কি চান না আমরা যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসি। আমাকে দুর্বল করে দেবেন না, আমি যুদ্ধের মাঠে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করব।

সম্রাজ্ঞী দুরধরা সম্রাটের আকুতি যেন বুঝতে পারলেন। তাঁর ভুল হয়েছে। পৃথিবীতে কোনো সম্রাজ্ঞী সম্রাটকে যুদ্ধযাত্রায় বাধা দিয়েছেন বলে জানা যায় না। সবাই প্রেরণা দিয়েছেন। প্রয়োজনে অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাই দুরধরা বললেন, ক্ষমা করবেন, সম্রাট, আমি ভুল করেছি। প্রতিবারের মতো এবারও যুদ্ধযাত্রার আনুষ্ঠানিকতায় আমার যথার্থ সম্রাজ্ঞীর ভূমিকা থাকবে।

সম্রাট জড়িয়ে ধরলেন দুরধরাকে। এ প্রথম তাঁর মনে হলো, কর্নেলিয়ার কথা ভেবে তিনি কি ভুল করছেন? ভেতর থেকে কে যেন বলল, না চন্দ্রগুপ্ত, সম্রাট ভুল করে না, এখন পিছিয়ে গেলে ভুল করবে। সামনে তোমাকে এগোতে হবে।

.

পিসি আসেন নি। দুই বোন গেছেন বাবা সেলুকাসের কাছে।

কর্নেলিয়া ও লাউডিস সেলুকাসকে সরাসরি বললেন, বাবা, এ সিদ্ধান্ত তোমাকে পাল্টাতে হবে।

তাহলে উত্তরাধিকারী কে হবে? তাকে একটা প্রদেশের শাসনভার দেওয়া আছে।

আমরা একেউসের কথা ভাবছি। সে-ও তো তোমার সন্তান।

আমার সন্তান তা ঠিক আছে। কিন্তু সে রাজনীতি পছন্দ করে না, এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। আলেকজান্ডারের অন্য জেনারেলদের সঙ্গে এই যে এত যুদ্ধ-বিগ্রহ-বিরোধ, সে একবারও এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায় নি। জমিদারি নিয়ে আছে, তাতেই ভালো আছে। এত বড় সেলুসিড সাম্রাজ্যের দায়িত্ব আমি তাকে দিতে পারি না। এ ছাড়া… বলে থামলেন সেলুকাস।

কর্নেলিয়া বলল, এ ছাড়া কী, বাবা?

এ ছাড়া এন্টিওকাস ভুল করলেও আমি ভুল করতে পারি না। সে আমার বড় ছেলে, সিংহাসনের উত্তরাধিকারী।

ছি বাবা, ছি! ক্রোধে-ক্ষোভে কর্নেলিয়া সীমা অতিক্রম করে কথাটা উচ্চারণ করে ফেললেন। লাউডিস তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, কর্নেলিয়া, তুই বাবার কাছে ক্ষমা চা!

কর্নেলিয়া যেন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। বললেন, আমি দুঃখিত, বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে আঘাত দিতে চাই নি।

লাউডিস কর্নেলিয়াকে নিয়ে ফিরে গেলে সেলুকাস ভাবতে লেগে গেলেন। কর্নেলিয়ারা আসলে ভুল কিছু বলে নি। একজনের সহোদর ভাই, আরেকজনের মা। দুজনই অনেক কষ্ট পেয়েছে এ ঘটনায়। বেশি কষ্ট পেয়েছে কর্নেলিয়া। তাঁর ভাই তাঁর মাকে বিয়ে করেছে—এর চেয়ে কষ্টের আর কী থাকতে পারে। তিনি উত্তরাধিকার দলিলটি গোপন করে ফেললেন। মনে মনে বললেন, সে যদি নিজের থেকে এ সাম্রাজ্য তার অধিকারে নিতে পারে, নিক। তিনি কাউকে উত্তরাধিকারী করে যাবেন না। এ রকম ভাববার আরেকটি কারণও আছে, কর্নেলিয়ার মাকে যে তিনি ভুলতে পারেন না। কী কঠিন এক সময়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সেলুসিড সম্রাট সেলুকাস আপন স্ত্রী আর আপন পুত্রের সঙ্গে আপস করে নিয়েছেন এবং এ জগতের সবচেয়ে মর্মান্তিক ও জঘন্য ঘটনা ঘটতে দিয়েছেন, তা এখন ভেবে নিজেকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। তিনি চাইলে দুশ্চরিত্রা স্ত্রী ও অবাধ্য পুত্রকে হত্যা করতে পারতেন, সারা জীবনের জন্য কারাগারের অন্ধকার কুঠরিতে নিক্ষেপ করতে পারতেন, কিন্তু তা করেন নি। এ সময় দেবী আফ্রোদিতেই যেন তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি নিয়ন্ত্রণ করেছেন সবকিছু। সর্বশক্তিমান সম্রাটের সেখানে কিছুই করার ছিল না। ‘সে’ সুখে থাক, তা তিনি এখনো সর্বান্তঃকরণে কামনা করেন। কী আশ্চর্য প্রেম!

এদিকে লাউডিস কর্নেলিয়াকে বোঝাচ্ছেন, দেখ সেলুসিড সাম্রাজ্য আজ অনেক বড়। বাবার অবর্তমানে এন্টিওকাস ছাড়া কেউ তার অখণ্ডতা বজায় রাখতে পারবে না।

শুধু সাম্রাজ্য আর সাম্রাজ্য! মানবিক সম্পর্কের দিকটা একবারও দেখবি না, দিদি। আমার মায়ের পেটে জন্মেছে এমন শিশু আমাকে পিসি ডাকবে। আবার বাবাকে ডাকবে দাদু। কী সাংঘাতিক! কী মর্মান্তিক! কী অদ্ভুত!

এই সমস্যা তো আমারও কর্নেলিয়া, তোর মাকে কখনো আমার সত্মা মনে হয় নি। পারস্য মায়ের মেয়ে আমি, সিরীয় মা কি দূরবর্তী হয়? দূরবর্তী দেশ গ্রিস। দেখ আমাদের চেহারা, শরীরের রং আর রক্তে কত মিল। আমরা তো পরাজিত মায়েদের সন্তান। কিন্তু এটা অপ্রিয় হলেও সত্য, এই অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ের জন্য যা হয়েছে এবং যা ভবিষ্যতে ঘটবে, এসবই হচ্ছে বাস্তবতা।

এমন বাস্তবতার কাছে আমি নতিস্বীকার করব না, দিদি। এন্টিওকাস ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে কী করব আমি জানি না, তবে সাংঘাতিক কিছু যে ঘটবে, সে কথা তোকে বলে রাখলাম। একটু চুপ করে থেকে আবার বললেন, আমি ভেবেছিলাম এ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যারাই আক্ৰমণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে তরবারি নিয়ে যুদ্ধে নামব। এখন মনে হচ্ছে এ সাম্রাজ্য আমার নয়, এক তস্করের, যে আমার পিতার সঙ্গে, আমাদের সবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, যে বিশ্বাসঘাতকতার লজ্জাজনক নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আরেকটি নেই।

সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মহামন্ত্রী চাণক্যকে ডেকেছেন। সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর তিনি অস্বস্তিতে আছেন। সম্রাজ্ঞী শেষটায় যুদ্ধযাত্রায় সম্মতি দিলেও হৃদয় থেকে যে দেন নি, তা স্পষ্ট। সম্রাজ্ঞীর ইচ্ছার বাইরে যুদ্ধের নামে যে অভিযানে যাচ্ছেন, তা কতটা সফল হবে, সে ভাবনা তাঁর হৃদয়কে দ্বিধা-বিভক্ত করে দিয়েছে। তিনি এই দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে ছটফট করছেন। একবার মনে হলো, মহামন্ত্রী চাণক্যকে না ডেকে ভদ্রবাহুর কাছে যাওয়া উচিত ছিল।

চাণক্য এলেন। মহামান্য সম্রাট, বলে একটু ভেবে নিয়ে বললেন, এন্টিগোনাসের দূত সেলুসিড সেনাবাহিনী এবং তাদের যুদ্ধকৌশল সম্পর্কে যা বলেছে, সবই ঠিক আছে। আমাদের গোয়েন্দারা প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই করে দেখেছে।

আর প্রস্তুতি?

প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। যাত্রা করা যায়।

আচার্য, এই যুদ্ধের লক্ষ্য দুটি, ভারতীয় ভূখণ্ড গ্রিকদের কাছ থেকে উদ্ধার এবং… মহামান্য সম্রাট, আমাদের প্রস্তুতি বলছে, এ যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা দুটো লক্ষ্যই অর্জন করব।

আচার্য, সমস্যাটা অন্য জায়গায়।

চাণক্য সম্রাটের কথায় নড়েচড়ে উঠলেন।

কী সমস্যা, সম্রাট।

সম্রাজ্ঞী অবশ্য শেষ পর্যন্ত যুদ্ধযাত্রায় সম্মতি দিয়েছেন।

তাহলে?

ব্যাপারটা কি তিনি অবগত হয়ে গেছেন?

মনে হয় না, তাহলে এই যুদ্ধের বিরোধিতা অব্যাহত রাখতেন এবং নানামুখী তৎপরতা চালাতেন, যাতে যুদ্ধে যেতে না হয়।

আমার মনে হয় আপনি ঠিক বলেছেন।

আমি আধ্যাত্মিক তরিকার মানুষ নই, কিন্তু আমার মনে হয় যুদ্ধজয়ের এ হচ্ছে একটি ভালো ইঙ্গিত। সম্রাজ্ঞীর হৃদয় থেকেই উৎসরিত হয়েছে এক অজানা আশঙ্কা, তার মূলে কী আছে, তিনি তা জানেন না।

হতে পারে। হঠাৎই সম্রাট প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললেন, সুবন্ধু ব্রাহ্মণই রয়ে গেছেন। সেটি আমাকে বিচলিত করে না। আমি অবাক হচ্ছি তাকে আপনি সঙ্গে সঙ্গে রেখেছেন।

আমি তার মর্মার্থ বুঝি নি, সম্রাট, ক্ষমা করবেন।

নন্দরাজ আপনার পরিবর্তে তাকেই ব্রাহ্মণসভার সভাপতি করেছিলেন, যাতে আপনি অপমানিত বোধ করেন।

করেছিলেন, আমি জানি, সে একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি, তাকে আমার নীতিশাস্ত্র হজম করিয়েছি, তার অর্থ আমি তাকে চোখে চোখে রাখছি, ব্যস্ত রাখছি, আমার কাজ করিয়ে নিচ্ছি।

আমি জানি, আপনি বিপজ্জনক ব্যক্তিদের সরিয়ে দেন।

আপনি মনে করতে পারেন এটি আমার একটি খেলা। সাপুড়ে বিপজ্জনক জেনেও সাপ নিয়ে খেলা করে। আমাকে সব সময় সতর্ক রাখার জন্যই এ ব্যবস্থা। কিন্তু হঠাৎ করে এ চিন্তা আপনার মাথায় কেন এল, সম্রাট?

মানবচরিত্রের কোনো কোনো রহস্য আমাকে চমকে দেয়, কিন্তু তার নিগূঢ় অর্থ খুঁজে শুধু ক্লান্তই হই।

চাণক্য চলে যাওয়ার পর মন্দাকিনী এল। সে বাইরে অপেক্ষা করছিল। হাতে একটা পত্র। কর্নেলিয়া পাঠিয়েছেন। লিখেছেন,

মহামান্য সম্রাট,

আমার অভিবাদন গ্রহণ করবেন। আপনার পরিচয় না জানলে ভালো হতো। একজন রাজকুমারীকে রাজকীয় কায়দায় অভিবাদন জানাতে হতো না। আর একজন নারীর ভালোবাসার ওপর যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, সে ঝড়ও বয়ে যেত না। আপনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি। যুদ্ধের ময়দানেই বোধ হয় আপনার সঙ্গে আমার দেখা হবে। আমরা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি। যুদ্ধ আমাদের ব্রত। আপনি প্লেগের কথা বলেছেন। আমি আমাদের প্লেগের দেবতা আর্টেমিসের কাছে গিয়ে এর প্রাদুর্ভাব থেকে পরিত্রাণ চেয়েছি। এত দিনে নিশ্চয়ই পরিত্রাণ মিলেছে। তা মানবিক কারণে করেছি, অন্য কোনো কারণে নয়। মানবিক কারণে আরেকটি অনুরোধ আছে, রক্ষা করা, না করা আপনার ইচ্ছা, আপনি অনুগ্রহ করে রাক্ষসপত্নী সর্বাণীকে রাজকীয় মর্যাদা দেবেন। বন্দিনীর সঙ্গে যাতে ভালো ব্যবহার করা হয়, তার প্রতি লক্ষ রাখবেন।

মসিতে আর কিছু লেখা হবে না, অসিতেই জবাব মিলবে।

পুনশ্চ: এক পত্রে আপনাকে ডায়নোসাসের কথা লিখেছিলাম। প্রাচীন গ্রিক ট্র্যাজেডিগুলো সম্পূর্ণভাবে তার দুর্ভোগের ওপর নির্ভরশীল, আপনার ভাগ্যেও কি তাই আছে?

ইতি
প্রিন্সেস

সম্রাটের সামনে চিঠি পাঠ শেষ করে মন্দাকিনী হতাশার দৃষ্টিতে তাকালেন তাঁর দিকে। সম্রাট মৃদু হেসে বললেন, সম্রাটতনয়ার মতোই জবাব দিয়েছেন। ভাবলেন, ভালোবাসায় কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা অন্যখানে, রাজকীয় রীতিনীতি কিংবা অহমিকায়। তাহলে দ্বিতীয়বার দেখা হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে। দায়িত্ব একটু বেড়ে গেল, রাজকুমারীর যুদ্ধক্ষেত্রে যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে তাঁকেই।

মন্দাকিনী একটি স্বপ্ন দেখেছিল। দাসীদের ওপর তো বটে, গ্রিক রাজকুমারী এলে পুরো রাজ অন্তঃপুরে তাঁর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপিত হবে। সে স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে গেল। জনান্তিকে খুব কাঁদল সে। দুর্ভাগ্যকেই দোষ দিল। সম্রাটের জন্যও খুব দুঃখ হলো তার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *