বেলেচিনের প্রেতাত্মারা

বেলেচিনের প্রেতাত্মারা

স্কটল্যাণ্ডের বেলেচিন হাউসের অবস্থান ছিল লজিয়েরেট থেকে কয়েক মাইল দূরে পাহাড়ি এলাকায়। টে নদীর উপত্যকার ওপর ঝুলে ছিল অনেকটা। বিচিত্র সব স্পিরিটের কারখানা হিসাবে পরিচিতি পাওয়া ডানকেলডও ওখান থেকে খুব দূরে নয়।

স্টুয়ার্ট পরিবার ষোলো শতক থেকেই এস্টেটটার মালিক। রাজা দ্বিতীয় রবার্টের বংশধর ছিল স্টুয়ার্টরা। পুরানো ম্যানর হাউসের বদলে বেলেচিন হাউস তৈরি হয় ১৮০৬ সালে।

যাঁর মাধ্যমে বেলেচিন হাউসে ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানার সূচনা তিনি রবার্ট স্টুয়ার্ট। বেলেচিন হাউসটা যখন বানানো হয় তখনই তাঁর জন্ম। ১৮২৫ সালে উনিশ বছর বয়সে ভারত যান রবার্ট, সেখানে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হিসাবে যোগ দেন। পঁচিশ বছর পর মেজর হিসাবে অবসরে যান। বাবার মৃত্যুর পর ১৮৩৪ সালে বেলেচিনের উত্তরাধিকারী হন তিনি। ১৮৫০ সালে যখন ভারত থেকে ফেরেন আবিষ্কার করেন তাঁর বাড়িটায় ভাড়াটেরা থাকছে। বেলেচিন কটেজ নামে এস্টেটের সীমানার মধ্যে ছোট্ট এক কটেজ তৈরি করান তিনি। সেখানে ভাড়াটেদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকেন। তারপর মূল বাড়িতে ওঠেন।

মেজর স্টুয়ার্ট ছিলেন একটু খোঁড়া। ধারণা করা হয় ভারতে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কোন এক দুর্ঘটনায় জখম হন তিনি। অবিবাহিত ছিলেন। তবে তরুণী এক হাউসকিপার সবসময় সঙ্গ দিত তাঁকে। দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে নানান কানাঘুষা শোনা যায়। তাঁর ছিল দুই ভাই এবং ছয় বোন। বোনদের একজন ইসাবেলা সন্ন্যাস জীবন বেছে নেন। বাড়ির অশরীরী কাজ-কারবারের অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত হন পরে এই নারী। ১৮৮০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক আশ্রমে মৃত্যু হয় তাঁর।

১৮৭৬ সালে মারা যাওয়া মেজর স্টুয়ার্ট ছিলেন খুব খামখেয়ালি মানুষ। ভারতে অতিপ্রাকৃত বিষয়ের প্রতি আগ্রহ জাগে তাঁর। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন মারা যাওয়ার পর আত্মা অন্য কিছুতে ভর করে ফিরে আসতে পারে। বেলেচিনে যে পঁচিশ বছর বাস করেন অদ্ভুত আচার- আচরণের জন্য গোটা জেলায় রীতিমত পরিচিত হয়ে যান।

গোটা বাড়িটা নানা ধরনের কুকুর দিয়ে ভরিয়ে ফেলেন তিনি। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছিল একটা বিশাল কালো স্প্যানিয়েল। মৃত্যুর পর ওটার দেহেই ফিরে আসার বাসনা ছিল স্টুয়ার্টের। মেজর স্টুয়ার্টের কুকুরের দেহে ফিরে আসার এই খায়েশ তাঁর বংশধর ও আত্মীয়-স্বজনরা মোটেই সহজভাবে নেয়নি। রবার্ট স্টুয়ার্টের মৃত্যুর পর দেরি না করে স্প্যানিয়েলটাসহ সবগুলো কুকুরকেই গুলি করে মারে তারা। ধরে নেয় এভাবে মেজরের ফিরে আসার পথ বন্ধ হয়ে গেল।

১৮৫৩ সালের উইলে মেজর বেলেচিনের উত্তরাধিকার করেন তাঁর বিবাহিত বোন মেরির সন্তানদের। মেরির ছিল পাঁচ সন্তান। ১৮৬৭ সালে বড় ছেলে মারা যান। পরের বছরই ছোট তিন সন্তানকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করে নতুন উইল করেন। এতে ১৮৭৬ সালে বেলেচিনের একমাত্র মালিক বনে যান মেরির দ্বিতীয় পুত্র জন। দেরি না করে নিজের নামের সঙ্গে স্টুয়ার্ট জুড়ে দেন। সরাসরি উত্তরাধিকার না হওয়া সত্ত্বেও বংশ ঐতিহ্য ঠিক রাখার জন্য এটা করেন বলে ধারণা করা হয়।

খালা ইসাবেলার মত জন স্টুয়ার্ট ছিলেন ক্যাথলিক খ্রীষ্টান। বুড়ো মেজর ছিলেন একজন প্রটেসট্যান্ট। লজিয়েরেটের গোরস্থানে ২৭ বছর বয়সী তাঁর সেই হাউসকিপারের পাশেই সমাহিত করা হয় তাঁকে। ১৮৭৩ সালে রহস্যময়ভাবে মারা যায় সারা নামের ওই মেয়েটি।

বেলেচিনের প্রধান বেডরুমে মৃত্যু হয় সারার। পরবর্তীতে বাড়ির সবচেয়ে ভুতুড়ে কামরায় পরিণত হয় এটি। যে বিছানায় সারা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তার চারপাশে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মেজরের ভূতের চলাফেরা করার আওয়াজ পাওয়া যেত।

জীবিত থাকা অবস্থায় একুশ বছর মামার ওই সম্পত্তির আয়-রোজগারে আরামের সঙ্গেই দিন গুজরান করেন জন স্টুয়ার্ট। বিবাহিত ছিলেন তিনি, কয়েকটা সন্তানও ছিল। বড় ছেলে যোগ দেয় সেনাবাহিনীতে, ছোটটা হয় যাজক। জন স্টুয়ার্টের সময় মামার গড়ে তোলা ওই কটেজটায় নান বা সন্ন্যাসিনীদের থাকার ব্যবস্থা হয়। ওই সময়ই ভুতুড়ে ঘটনার শুরু।

বুড়ো মেজরের মৃত্যুর পর পরই তাঁর ভাগ্নে বউ মিসেস স্টুয়ার্ট, যে কামরাটাকে মেজর স্টাডি হিসাবে ব্যবহার করতেন সেখানে নিজের বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখা শুরু করেন। এসময়ই একদিন হঠাৎ কামরাটায় কুকুরের কড়া গন্ধ পেতে থাকেন। ছোট্ট ডেস্কটায় বসে কুকুরের গায়ের গন্ধ কীভাবে এল এটা ভেবে বের করার চেষ্টা করতে লাগলেন। তাঁর মনে পড়ল যখন মেজরের মৃত্যুর পর সবগুলো কুকুরকে পরপারে পাঠিয়ে দেয়া হয় তখনও কামরাটায় এমন একটা গন্ধ পাওয়া গিয়েছিল। তারপরই সবচেয়ে বড় ভয়টা পেলেন। মনে হলো, অদৃশ্য একটা কুকুর ধাক্কা দিচ্ছে তাঁকে। তাঁর মনে হলো কুকুরগুলোকে মেরেও মেজরের অতৃপ্ত আত্মার হাজির হওয়া বন্ধ করতে পারেননি তাঁরা।

এদিকে মেজরের মৃত্যুর পর থেকে কিছু রহস্যময় ঘটনা ঘটতে থাকে। বিভিন্ন কামরায় জোরে টোকা দেয়ার শব্দ শোনা যায় যখন-তখন। নানা ধরনের অদ্ভুত আওয়াজ হয়। হঠাৎ একটা কামরার মাঝখান থেকে শোনা যেতে থাকে ঝগড়ার শব্দ।

চাকর-বাকরেরা আর এখানে থাকতে রাজি হলো না। তাদের মাধ্যমে গল্পগুলো ছড়িয়ে পড়ল আশপাশের এলাকায়। একপর্যায়ে স্কটল্যাণ্ডের সবচেয়ে ভুতুড়ে বাড়ির তকমা লেগে গেল এর গায়ে।

১৮৭০-এর দশকের শেষ দিকে স্টুয়ার্টদের সন্তানদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা গভর্নেস মেয়েটাও একের পর এক ভুতুড়ে ঘটনা এবং অস্বাভাবিক শব্দের জন্য চাকরি ছেড়ে চলে যায়। এ বাড়িতে কিছুদিন বাস করা এক যাজক বলেন তাঁর বিছানা এবং ছাদের মাঝামাঝি কোন জায়গা থেকে বিস্ফোরণের মত একটা শব্দ হতে থাকে টানা।

কটেজে বাস করা সন্ন্যাসীদের আত্মিক প্রশিক্ষণের জন্য বেলেচিনে আনা হয় ফাদার হেইডেনকে। বাড়ির মালিককে সমস্যার বিষয়টা খুলে বলেন তিনি। জন স্টুয়ার্ট অনুমান করেন তাঁর প্রয়াত মামার কীর্তি এটা। মেজরের পৃথিবীতে ফিরে আসবার জন্য প্রার্থনা করবেন এই আশায় যাজকের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তিনি।

যাজক আরও বেশ কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনা টের পান। বিশেষ করে বড় একটা জানোয়ারের চিৎকার, সম্ভবত কোন কুকুরের। বাইরে থেকে তাঁর ঘরের দরজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার শব্দও পেতেন তিনি। কখনও দরজায় টোকা দেয়ার ঠক ঠক আওয়াজও শুনতেন যাজক।

স্টুয়ার্ট পরিবার বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল। বিশেষ করে ছোট ছেলে-মেয়েদের কথা ভেবে। জন স্টুয়ার্ট নিজেও একদিন এক জানালা থেকে ভুতুড়ে কয়েকজন সন্ন্যাসী এবং সন্ন্যাসিনীকে দেখেন। এদিকে ফাদার হেইডেন যে কামরায় থাকতেন পরে এক রাতে ওই কামরায় ঘুমানো এক দম্পতিও একই ধরনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। একপর্যায়ে স্টুয়ার্ট বেলেচিন হাউসের কিছু অংশ সম্প্রসারিত করে মোট ১২টি নতুন বেডরুম তৈরি করান। উদ্দেশ্য, অন্তত ছেলে- মেয়েগুলো যেন দালানের ভুতুড়ে অংশের বাইরে থাকে।

জানুয়ারি ১৮৯৫ সালে ঘটে ভয়ানক ঘটনাটা। এক সকালে পারিবারিক এক ব্যবসার কাজে লণ্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার কথা তাঁর। স্টাডিতে এজেন্টের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এসময় হঠাৎ প্রবল তিনটি টোকার শব্দে কথা থামিয়ে দিতে বাধ্য হন দু’জনে। ওই দিন লণ্ডনে পৌছার পরই গাড়ি চাপায় মারা যান জন স্টুয়ার্ট। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে ওই টোকার শব্দের কোন ভূমিকা আছে কিনা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।

বেলেচিনের পরবর্তী স্টুয়ার্ট ছিলেন এক আর্মি ক্যাপ্টেন। তবে এই ভুতুড়ে বাড়িতে বাস করার কোন ইচ্ছাই তাঁর ছিল না। বিশাল এস্টেটটাকে ১৮৯৬ সালে একটা ধনী পরিবারের কাছে ভাড়া দিতে মোটেই বেগ পেতে হলো না তাঁর।

তবে ক্যাপ্টেন পরিবারটির কাছে বাড়িটার ভুতুড়ে বলে যে বদনাম আছে তা প্রকাশ করেননি। অগ্রিম ভাড়া দিয়ে এক বছরের জন্য এস্টেটটার অধিকার পায় পরিবারটি। মাত্র সাত সপ্তাহ এখানে কাটাতে সমর্থ হয়। রাত্রিকালীন নানা উপদ্রব এবং শরীরের রক্ত পানি করে দেয়া ভুতুড়ে কুকুরের গর্জন তাদের এলাকাছাড়া হতে বাধ্য করে।

বিছানার চারপাশে একটা খোঁড়া লোকের চলার শব্দে ভয় পেয়ে বাড়ির মেয়েটা ভাইকে ডেকে আনে। সে কামরার মধ্যে সোফায় শুয়ে পড়ে। শুতে না শুতেই ওই খোঁড়ানো পদশব্দ শুরু হয় আবার। ছেলেটা নিশ্চিত হয়ে যায় বোনের বিছানার চারপাশে কেউ খুঁড়িয়ে হাঁটছে। তবে দু’জনের কেউই কাউকে দেখতে পায়নি। ১৮৭৩ সালে এই বিছানায়ই মারা যায় সারা। তবে ভাইটি পরে দু’বার এক অশরীরীকে দেখার দাবি করে। একবার একটা ঘন, দুর্ভেদ্য কুয়াশার আবরণে ঢাকা অবস্থায়, দ্বিতীয়বার ওটা হাজির হয় একটা লোকের বেশে। দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকে, তবে দেয়ালের সামনে গিয়ে অদৃশ্য হয়।

১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বরটা ছিল বেলেচিনের জন্য বিভীষিকাময়। ওই সময় অতিথি হিসাবে থাকা এক নারী লেখেন, প্রতি রাতে প্রবল ঠক ঠক শব্দ, আর্ত চিৎকার আর গোঙানিতে চমকে উঠতে হত বাড়িসুদ্ধ লোককে। অতিথিরা দরজায় প্রবল ধাক্কার শব্দে জেগে উঠতেন। মনে হত দরজাটাই ছিটকে পড়বে। কিন্তু সাহস করে দরজা খুললে কাউকেই পেতেন না। এমনকী একটা কামরায় কুকুর পর্যন্ত থাকতে চাইত না কোনভাবেই।

দ্য টাইমসের ১৮৯৭ সালের ৮ জুন সংখ্যায় এই বাড়ির ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানাগুলো নিয়ে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। তারপর সেখানে ছাপা হয় বেলেচিনের প্রাক্তন বাটলার হেরল্ড স্যাণ্ডার্সের একটি চিঠি। স্যাণ্ডার্স বাড়ির সবাইকে আতঙ্কিত করে তোলা ভয়ানক এক গর্জনের কথা বলে। তারপরই বাড়ির চাকর-বাকরেরা বিদায় নেয়। এমনকী বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথিরা রাতে ভয়ে লাঠি আর রিভলভার নিয়েও জেগে কাটান।

এদিকে এখানকার অশরীরীদের হানা দেয়ার বিষয়টি অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে কাজ করা গোস্ট হান্টারদের নজর কাড়ে। এদের মধ্যে আছেন কর্নেল টেইলর এবং মিস গুডরিচ ফ্রিয়ার। টেইলর অল্প সময়ের জন্য স্টুয়ার্ট পরিবারের কাছ থেকে ভাড়া নেন বাড়িটা।

টেইলর কোন কারণে যেতে না পারায় বান্ধবী মিস কন্সটেন্সি মুরসহ ১৮৯৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বেলেচিনে আস্তানা গাড়েন মিস ফ্রিয়ার।

সেদিন তুষার পড়ছিল অঝোর ধারায়। বাড়িটাকে মনে হচ্ছিল অশুভ। মিস ফ্রিয়ার তাঁর জার্নালে লেখেন, ‘একটা ভল্টের মত মনে হচ্ছিল ওটাকে। কয়েক মাস যাবৎ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল ওটা। যেসব জিনিসপত্রের অর্ডার দিয়েছিলাম একটাও এসে পৌছেনি। আমাদের ছুরি, প্লেট, ওয়াইন কিছুই ছিল না। খাবার আর জ্বালানী ছিল নামকাওয়াস্তে। লজিয়েরেট থেকে আসার সময় সঙ্গে আনা রুটি, মাখন এবং টিনের মাংস খেয়ে বিছানায় যাই। কামরাটা ছিল অসম্ভব শীতল।’

আগের দিনের পরিশ্রমের কারণে মড়ার মত ঘুমাচ্ছিলেন দু’জনে। রাত তিনটার দিকে চড়া একটা শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাঁদের। সাড়ে চারটার দিকে বেশ কয়েকটি কণ্ঠের কথা বলার আওয়াজ পান। তবে সকালে অবশ্য সব ধরনের অস্বাভাবিক শব্দ থেমে যায়। পরের দিন রাতে তাঁরা জোরে জোরে কিছু আবৃত্তি করার শব্দ শুনতে পান, অনেকটা কোন যাজকের ধর্মগ্রন্থের শ্লোক পড়ার মত।

পরবর্তীতে তাঁদের এখানকার অনুসন্ধানের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ পায় দ্য এলিজড হণ্টিং অভ বি. হাউস নামে। তবে ছদ্মনাম ব্যবহার করার কারণে অনেকেই তখন বুঝতে পারেননি কোন্ বাড়িটার কথা বলা হচ্ছে। ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত হয় বইটি।

মিস ফ্রিয়ার নানের অশরীরীকে বরফে ঢাকা বার্নের কাছে কয়েকবার দেখেছেন। প্রথমবার এক নিঃসঙ্গ নান কাঁদছিল বিরামহীন। অন্য সময় নানা ছিল দু’জন। একজন হাঁটুতে ভর দিয়ে কাঁদছিল, অপরজন মৃদুস্বরে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল। ধারণা করা হয় এই নানরা জন স্টুয়ার্টের সময়কার, যখন ছোট কটেজটায় নানরা বসবাস করত। তবে এটাও হতে পারে কাঁদতে থাকা সন্ন্যাসিনীটি আর কেউ নন, ইসাবেলা, ১৮৮০ সালে এক আশ্রমে যিনি মারা যান।

তবে সব কিছু মিলিয়ে দেখা যায় মোটামুটি তিন ধরনের অতিপ্রাকৃত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু বাড়িটি।

প্রথমত, দুই নান। ইসাবেলার বরফঢাকা বার্নের পাশে কাঁদার রহস্য কী?

দ্বিতীয়ত, সারার রহস্যময় মৃত্যুর কারণে স্টুয়ার্টের খোঁড়া ভূতের নারীটির বিছানার চারপাশে হাঁটা।

তৃতীয়ত, মেজরের প্রিয় কালো স্প্যানিয়েল। যার শরীরে বাস করতে চেয়েছিলেন মেজর মৃত্যুর পর। এটা এড়ানোর জন্য স্টুয়ার্টের বংশধরেরা ওটাসহ অন্য কুকুরগুলোকে নির্দয়ভাবে গুলি করে মারে।

মৃত প্রাণীদের ভূতের অনেক গল্প শোনা গেলেও এটা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত। প্রথমে এর কথা বলেন মিসেস স্টুয়ার্ট। পরের বিশ বছর অনেক মানুষই অদৃশ্য একটা কুকুরের পায়ের শব্দের উল্লেখ করেন। প্রায়ই কোন কুকুরের দরজার ওপর লাফিয়ে পড়ার আওয়াজও পাওয়া যেত। একটা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ঘটে মিসেস ফ্রিয়ারেরই। তাঁর বিছানায় ওই রাতে শুয়ে ছিল স্পোকস নামের একটা কুকুর। ওটা ছিল ১৮৯৭ সালের ৪ মে। মধ্যরাতে জন্তুটার ভয়াবহ গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মিস ফ্রিয়ারের। মোম জ্বালতেই দেখেন স্পোকস ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বিছানার পাশের টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। ওই দৃষ্টি লক্ষ্য করে তাকাতেই টেবিলের ওপর কেবল এক জোড়া কালো পা দেখলেন। ওপরে কিছু নেই। ‘অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম ওই দৃশ্য দেখে।’ স্মৃতিচারণ করেন ফ্রিয়ার।

এমনকী এই বাড়িতে বাস করা বেশ যুক্তিবাদী মেইডরাও তাদের ভুতুড়ে সব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছে। রান্নাঘরের দায়িত্বে ছিল লিজি। সে জানায় তার বিছানার চাদরটা অদৃশ্য এক জোড়া হাত ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। ওপরতলার মেইড কার্টার জানায় এক ভোরে ঘুম থেকে জেগে দেখে ধূসর শাল পরা এক নারীর অর্ধেক শরীর তার বিছানার পাশে। ওই অশরীরীর কোন পা ছিল না। পুরোপুরি আলো হওয়া পর্যন্ত কম্বলের ভেতর কাঁপতে থাকে মেয়েটা। তারপর এক ছুটে বাড়িতে। আর কখনও বেলেচিনমুখী হয়নি।

শেষ পর্যন্ত বেলেচিন হাউস স্টুয়ার্টদের হাতছাড়া হয়। ১৯৩২ সালে মি. আর. ওয়েমিস হানিম্যান নামের এক ভদ্রলোক এটা কিনে নেন। ১৯৬৩ সালে ভেঙে ফেলা হয় পুরানো বাড়িটি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *