বাতাসবাড়ি জ্যোৎস্নাবাড়ি – ৯

নয়

এই ফ্ল্যাটে অনেকদিন বাদে চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে। এর আগে এমন কথাবার্তা কবে হয়েছিল? টুটুল থাকতে? টুটুল অবশ্য জোরে কথা বলত না। বুবুলও না। তিনিও না। কুন্তলা বলত যখন টুটুল বা বুবুলের ফোন আসত। আমেরিকা থেকে ফোন? দিল্লির ফোন। দূরের ফোন। সুতরাং জোরে না কথা বললে শুনতে পাবে কেন? এই ছেলেটাকে অনুপম পছন্দ করতে পারছেন না। কেন? তাঁর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে যেন। কুন্তলা চলে যেতে তিনি একা থাকতে থাকতে, একা থাকার স্বাধীনতা ভোগ করতে করতে তাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। অ্যাবসলিউট ফ্রিডম কি একেই বলে? তিনি জানেন পূর্ণ স্বাধীনতা হয় না। সমাজের কিছু রীতিনীতি আছে। তা মান্য করতে হয়। পরিবার গড়েছিলেন তিনি একটি। সেই পরিবার ভেঙে গেছে প্রায়। পুত্র কন্যা এবং তিনি, তিন জায়গায় বসবাস। তারা তাদের পরিবার গড়ে তুলছে। সেই পরিবার এই রাষ্ট্রের অংশ। তিনি একা। একা মানুষ সব কিছুতে নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। কিন্তু তা হয় না। দেশ, রাষ্ট্র সমাজ মানুষের অনেক অধিকার হরণ করে নিয়েছে। শোভন অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে। তিনি মর্নিংওয়াকে আজ যাননি। তাঁর মনে হচ্ছিল শোভন ঘুমোলেও সে একাই ফ্ল্যাটে থাকবে। শোভনকে একা রেখে তিনি বেরবেন না। রুকসানা মাসি এসে ফেরত যাবে দরজায় তালা দেখে। রুকসানার স্বামীর মোবাইলে তিনি খবর দিয়েছেন গত রাতেই। রান্নার মাসিকেও খবর দিয়েছেন। শোভন উঠল বেলা করে। পৌনে আটটা। রুকসানা মাসি অবাক। কে এসেছে? কে, ও কে দাদাবাবু? শোভন উঠে ব্রাশ করে তার সামনে বসল। বেশ জোরে কথা বলে সে। জিজ্ঞেস করল, মুসলিম? 

কেন? তীব্র দৃষ্টিতে তিনি শোভনের চোখে চোখ রাখলেন। 

না কিছু না, এমনি জিজ্ঞেস করলাম। শোভন একটু কুঁকড়ে গেছে তাঁর প্রতিক্রিয়ায়। বলল, আসলে আমাদের ওদিকে এমন হয় না, তাই, ঘরে তো ঠাকুর-দেবতা থাকে, এখেনে হিন্দু কাজের লোক পাওয়া যায় না? 

রুকসানা মাসি কাজ করে চলে যেতে শোভন বলল, আমার মা অ্যালাও করত না মামা। 

তিনি চুপ করে থাকলেন। শোভন কী মনে করে বলল, তার কোনও অসুবিধে হবে না। সে এইসব মানে না, হিন্দু না মুসলিম, জিজ্ঞাসে কোন জন, রবি ঠাকুরের কথা, কবিরা যা বলে সব কি ঠিক বলে! 

অসহ্য! উঁচু গলায় শোভন বলছে রবি ঠাকুরের গান ভালো, তুমি রবে নীরবে হিদয়ে মম, আর একটা গান, শাওন রাতে যদি…। যা মনে হয় তাই বলে যাচ্ছে শোভন। সবদিক শুনিয়ে কথা বলে। সে তার কথা চাপিয়ে দিতেই উঁচু গলার আশ্রয় নেয়, মনে হল অনুপমের। তিনি বিব্রত হচ্ছেন শোভনের উচ্চস্বরে। বললেন, তুমি চা করতে পারো? 

মা করে দেয়, আর কাজের মেয়েটা, কিন্তু পারি না যে তা নয়।

তাহলে করে নিও। অনুপম বললেন। 

তোমার চা কে করে দেয়?

নিজে করে নিই। অনুপম বললেন। 

ভালো করো, মুসলিমের হাতের চা না খাওয়া ভালো, আর চা করা কিছু না, আমি না হয় করেই নেব, তোমাকেও করে দেব। 

অনুপম বললেন, তুমি এসব আর একবারও বলবে না, আমি পছন্দ করি না। তখন শোভন বলল, তোমার রান্নার লোক কেমন রাঁধে? 

অনুপম জবাব দিলেন না। এত কথা বলে কেন এই যুবক? একা থাকার ভিতরে যে সুখ আছে, যে মগ্নতার স্বাদ আছে, তা ব্যাহত হচ্ছে যেন। তিনি চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করলেন। দেখতে লাগলেন নিজের বাসস্থান এই ফ্ল্যাটের সিলিং, ঘূর্ণমান পাখা। সিলিঙে ঝুল। সপ্তাহে একবার করে রুকসানা মাসি ঝুল পরিষ্কার করে। এই ঝুল গতরাতেও ছিল না মনে হয়। রুকসানাকে বলতে হবে। 

শোভন বলল, আমাকে বেরতে হবে মামা, সুইনহো স্ট্রিট যাব, স্নান করে নিই মামা, মাকে একটা ফোন করতে হবে, মা টেনশনে আছে, তুমি রেস্ট নাও, পরে মা-র সঙ্গে কথা বলো, মা-র ফোনে আন-লিমিটেড কল, তুমি মিসড কল মেরো একবার। 

জবাব না পেয়ে শোভন বলল, আমি বাইরে খেয়ে নেব, তোমার চিন্তা করতে হবে না। 

অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, চেনো সুইনহো স্ট্রিট? 

কলকাতার সব চিনি মামা, আমি তো আসি প্রায়ই, মামা তুমি ফেসবুক করো? 

কেন? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন। 

মায়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছি আমি, মা করে, তুমি খুলবে, আমি খুলে দেব? 

কী হবে? 

মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে, চ্যাট করবে ইন-বক্সে, তোমার হোয়াটস অ্যাপ আছে? 

তিনি বললেন, দরকার নেই। 

দরকার আছে মামা, মায়ের হোয়াট’স অ্যাপ আছে, তুমি ছবি পাঠাতে পারবে, ভয়েজ মেসেজ, ভিডিও কল, আমেরিকাতেও ভিডিও কল করতে পারবে, মা-র সঙ্গে ভিডিও কল হবে, মা তোমাকে দেখতে চায়। 

তিনি বললেন, তোমার দেরি হয়ে যাবে, সুইনহো স্ট্রিটে কী?

শোভন বলল, একজনের সঙ্গে দেখা করব, কেসের ব্যাপারেই যাচ্ছি, হেবি পাওয়ারফুল ম্যান, বর্ধমানে আমার মামার বাড়ির গ্রামে বাড়ি, তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে, একটা খবর মাকে দিতে হবে, মা খুব টেনশনে থাকে, তুমি হোয়াট’স অ্যাপে মায়ের সঙ্গে কথা বললে মা খুব খুশি হবে, মা বলে বাবলুদার মতো আর কেউ হয় না, রজ্জাকের মতো দেখতে, রজ্জাকের সঙ্গে নাকি সিনেমা করার কথা হয়েছিল মা’র। 

অনুপম বললেন, বেশি বকো না, তুমি স্নানে যাও। 

অনুপম একটু বাদে শাওয়ার থেকে জল পড়ার আওয়াজ শুনলেন। তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে আচমকা গেয়ে ওঠা শোভনের গান। উচ্চৈঃস্বরে গান গেয়ে গেয়ে সে স্নান করছে। গানটি হিন্দি না বাংলা বুঝতে পারছেন না। কিন্তু বেশ কাঁপিয়ে দিচ্ছে ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাটে এমন হয়নি কখনও। বুবুল টুটুল করত না। তিনি পছন্দ করেন না, তা ওরা জানত। শোভনের স্নান শেষ হল যে তা গান থামতে বুঝলেন তিনি। বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ হল। শোভন উল্লাস প্রকাশ করল, দারুণ হয়েছে বাথরুমটা, হেবি, কাল বাথ টাবে শুয়ে চান করবে সে, আজ দেরি হয়ে যাবে… বলতে বলতে সে ঢুকে গেছে টুটুলের ঘরে। গুনগুন করছে। অনুপম ভাবলেন ওকে বলতে হবে চলে যেতে। পরীক্ষা দিতে আসেনি ও। এসেছে কোর্ট কেস তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে। তাহলে নাকি ওর চাকরি বাঁধা। জেলার পার্টি কর্মকর্তারা বলেছে যদি পারে, তাহলে একজন চাকরি পেলেও ও পাবে। শুনে অদ্ভুত লাগছিল অনুপমের। ও বলছে চাকরি তার বাঁধা। বিনয়দা স্যারের সঙ্গে দেখা করবে দু-একদিনের ভিতর। বিনয়দা স্যার হলেন বিনয় পালোধী। তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজ্য নেতা। অনুপম বললেন, তুমি তো এসব কথা আগে বলোনি। 

কালো জিনস আর নীল রঙের টি শার্ট পরে সামনে বসে আছে শোভন, বলল, মামা, এখন এই ভাবে চাকরি হয়, আমি তো পার্টির লোকই, দেখবে কীভাবে কেস তুলি। 

কীভাবে তুলবে? অনুপম কৌতূহলী হলেন। 

স্রেফ ভয় দেখাব, তাতেই হয়ে যাবে। বলল শোভন মোবাইল খুঁটতে খুঁটতে, কেস না তুললে ডিস্ট্রিক্টে ফিরলেই ক্যালানি, হাত- পা ভেঙে রেখে দেব, ওইটা বলতে এসেছি, কেস উ’ড্র করলেই সব মিটে যাবে। কথাগুলো বলতে বলতে শোভন ফুলে উঠতে থাকে। তার দুই চোখ যেন আগুন হয়ে ওঠে, বলে, মারেই ঠান্ডা হয়ে যাবে। 

এটা তো ঠিক না। অনুপম বললেন, ভয় দেখিয়ে জোর করে কেস উইথড্র করাবে? 

মামা, ওরা ফালতু কেস করে সবার চাকরি আটকে দিয়েছে, ছাড়ব কেন? 

অনুপম চুপ করে থাকলেন। বুঝলেন শোভন খুব সাধারণ নয়। খবরটির কিছু কিছু তিনি জানেন। চরম অনিয়ম হয়েছে অ্যাডমিট কার্ড বিলিতে। যারা টাকা জমা দিয়েছে অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে তারা কেন পরীক্ষায় বসতে পারবে না? পরীক্ষায় না বসতে পারা মানে চাকরি না পাওয়া। পরীক্ষা দিলেই যে চাকরি পাবে তার কোনও গ্যারান্টিও নেই। তবু। শোভন যেন তাঁর মনের কথা ধরতে পারে, বলল, এরপর আবার কেস হবে মামা, পরীক্ষায় বসেছে কিন্তু কেন ইন্টারভিউ পায়নি, তারপর আবার কেস হবে, ইন্টারভিউ পেয়েছে তো চাকরি কেন পায়নি, কোর্টে যাওয়া বন্ধ করতেই আমি এসেছি, ভালো করে ক্যালানি দিলেই ঠান্ডা হয়ে যাবে সব। আসার আগে তো একথা বলনি। অনুপম ক্ষুব্ধ গলায় বললেন, বলেছিলে এগজাম আছে। 

না বলিনি, বললে তুমি না করতে, মা বলেছিল বলতে, আমিই বললাম, না বলার কথা, বললে তুমি ভয় পেতে, অ্যালাউ করতে না। 

অনুপম বললেন, তুমি যা করতে এসেছ, তা আমি সমর্থন করি না, ওরা যদি কোর্টে অভিযোগ করে তোমার অসুবিধে হবে। শোভন বলল, কিস্যু হবে না, তোমার চিন্তা নেই মামা, আমি আড়ালে থাকব, পুলিসে সব ব্যবস্থা করা আছে। 

মাথা নাড়লেন অনুপম, বললেন, আমার এখানে থেকে এসব করতে দিতে পারি না। 

হে হে করে হাসল শোভন, বলল, আরে তুমি তো দেখছি দারুণ ভিতু, এটা নর্থ বেঙ্গলের কেস, তোমার কী, আর ওদের সাহসই হবে না ফারদার কমপ্লেন করতে, এমন রেপ কেসে ফাঁসিয়ে দেব, কেঁদে কুল পাবে না, আর মেয়েগুলোকে চমকালেই ঠান্ডা হয়ে যাবে, রেপের ভয় নেই! 

অনুপম বললেন, না, আমার এখানে থেকে এই কাজ করবে না, আমি এসব করতে দিতে পারি না। 

উফ, তুমি এত ভিতু, মা ঠিকই বলে বাবলুদা খুব ভিতু ছিল, একটুও সাহস ছিল না, অথচ তুমি বিলিয়ান্ট ছিলে, মাকে ইংরিজি শিখিয়েছিলে ছমাসেই যা তারপরে মা আর কিছু শেখেনি। বলে শোভন কানে হিয়ারিং কর্ড দেয়। বেশ বড়সড় মোবাইলে মিউজিক সার্ফ করতে থাকে। কী গান শুনছে ও? সুমি কি বলেছে তার ছেলেকে নিজের কৈশোর থেকে যৌবনে পা দেওয়ার দিনগুলির কথা। ভিতু। হ্যাঁ, ভিতুই ছিল বাবলু। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা মায়ের সইয়ের মেয়ের ছিল মাত্রাতিরিক্ত সাহস। আগুন ছিল মেয়েটা। রজ্জাক রজ্জাক, তাঁকে সব দিতে পারে সদ্য যুবতী। বাবলুদা তার রজ্জাক। উফ, আর কিছুদিন তাদের বাড়ি থাকলে জ্বালিয়ে দিত ঘর-বাড়ি। বাবলুকে কতবার সে আমবাগানে ডেকেছে। সেই মস্ত এক পুরনো আমবাগান। তাদের নয়। যাদের তারা ছিল এক পড়তি বনেদি বংশ। সুমি এই এত বয়সেও ভোলেনি সেই দিন। বাবলুদা, তুমি একটু সাহসী হও, যা চাও সব দেব আমি, আই লাভ ইউ বাবলুদা, তুমি আমার রজ্জাক, আমি তোমার করবী, তুমি আমার রজ্জাক, রজ্জাক, ও বাঁশি বাঁশিরে, নাম ধইরা যখন তখন আর ডাইক্য না, দিন দুপুরে করুণ সুরে আর বাইজ্য না, বাঁশি আর বাইজ্য না….। 

তুই ঢাকায় গেলেই পারতিস, এলি কেন এপারে? সরে গিয়েছিলেন অনুপম। 

পারতাম, সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল, লাস্ট মোমেন্টে মা ধরে ফেলল, বইয়ের ভিতর চিঠি ছিল, না হলে আমি তো ঢাকা থেকে করাচিই চলেই যেতাম, উর্দু সিনেমায় হিরোইন হয়ে যেতাম। বলেছিল সুমি। 

শান্ত হ সুমি। অনুপম তাকে থামাতে চেয়েছেন। 

মা-বাবা আমার জীবনটাকেই ধ্বংস করে দিল ইন্ডিয়ায় পাঠিয়ে, বাবলুদা প্লিজ, তুমি আমার পাশে থাকো। 

শোভন বলল, প্লিজ মামা তুমি রাগ করো না।

তাঁর চটকা ফিরল, বললেন, রাগ করব না কেন, তুমি তো সত্যি কথা বলোনি। 

এসব কি ফোনে বলা যায় মামা, তুমি তোমার মতো থাকো, আমি আমার কাজ করি, কোনও অসুবিধে হবে না তোমার, আমি তোমার বাজার করে দেব, কিছুই করতে হবে না তোমাকে, পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবে, নেট করবে, হোয়াটস আপে কথা বলবে। 

অনুপমের কাছে ফোন এল মেয়ের। বুবুল বলল, তুমি কী করছ বাবা? 

কী করব? ফোন নিয়ে তিনি ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। দেখলেন মুখোমুখি রাস্তার ওপারের পুরনো বাড়ির ব্যালকনিতে সেই বৃদ্ধা বসে। দুপুরেই শুধু থাকেন না, সকালে এবং বিকেল থেকে। অন্ধ, কিন্তু ব্যালকনিতে আসা চাই-ই। হয়তো অন্ধ নন, ভাসা ভাসা দেখতে পান। মেয়ে বলল, তুমি জবাব দিচ্ছ না কেন বাবা? 

বল, কী বলবি বল। অনুপম শান্ত গলায় বললেন।

কী করছ এখন? একই কথা আবার। কথা একটাই। বাবা কী করছে একা একা? 

অনুপম বললেন, কী করব, কিছু না। 

তাহলে তো ফোন করতে পারতে বাবা। বুবুল বলল, চুপচাপ বসে না থেকে ফোন করে দুটো কথা তো বলতে পারো। 

অনুপম চুপ করে থাকলেন। তখন বুবুল জিজ্ঞেস করল, মেদিনীপুর থেকে কবে ফিরলে? 

গতকাল সন্ধেয়। 

তোমার বন্ধু বিজনকুমার সিংহর সঙ্গে দেখা হল? হ্যাঁ। খুবই সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন অনুপম। 

দাদা বলল অমন কারও নাম শোনেনি। বুবুল জেরা করছে যেন। 

তিনি জবাব দিলেন না। 

বাবা তুমি সিউড়ি না এসে মেদিনীপুর গেলে, আমার খুব খারাপ লেগেছে। 

তিনি বললেন, দরকার ছিল। 

কীসের দরকার বাবা, ইউ আর নিয়ার সেভেন্টি, তোমার আবার কাজ কী, সব কাজ শেষ হয়ে গেছে, এখন তুমি কী কাজে গেলে মেদিনীপুর, দাদা বলল, তোমার এইটা স্বার্থপরতা, তুমি একা থাকতে ভালোবাসো, মাকে দাঁড়ের মাঠে রেখেও জেলায় বদলি নিয়ে একা থেকেছ, আমাদের কলকাতায় রেখে তুমি বাঁকুড়া গেলে দু’বছরের জন্য। 

তুই কি সকালে ঝগড়া করছিস আমার সঙ্গে? 

তা কেন, তুমি সিউড়ি এলে না অথচ…। কথা অসমাপ্ত রাখে বুবুল। 

কেন আমার কি বন্ধুর কাছে যাওয়ার অধিকার নেই?

বিজনকুমার সিংহ নামের কেউ শালবনি থাকে না।

অনুপম বললেন, তুই জানিস? 

জানি বাবা, শালবনিতে আমার চারজন ফেসবুক ফ্রেন্ড, অনিমেষ, লিপিকা, সায়ন্তিকা, অনুপ, তারা বলল, এমন কারও কথা জানে না। 

তারা সকলকে চেনে? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন। 

চেনে বাবা। টুটুল বলল, ছোট একটা গঞ্জ, সকলে সকলকে চেনে, তুমি কেমন হয়ে যাচ্ছ বাবা। 

তিনি আচমকা বললেন, তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।

কেন, দেখা হয়নি কেন? 

অনুপম বললেন, জানি না। 

বাবা, তুমি বদলে যাচ্ছ, আমার মনে হয় তোমার একবার দাদার কাছে যাওয়া দরকার, ছ’মাস থেকে এসো। 

কেন, ছ’মাস আমি ওখানে কী করব? 

বুবুল বলল, দাদার সঙ্গে থাকবে, বাবা, আমাদের একটা ফ্যামিলি আছে, কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর তুমি সরে যাচ্ছ ফ্যামিলি থেকে, তুমি কি নিজে বুঝতে পারছ না, নাতিকে দেখতে যাও আমেরিকা। 

অনুপম চুপ করে থাকলেন। ছমাস ইউএসএ। ছমাস নির্বাসন। সমস্ত দিন ফ্ল্যাটে একা। সপ্তাহ না ফুরোলে ছেলে কোথাও নিয়ে যাবে না। কেন যাবেন তিনি? ছেলে নিয়ে যেতে চায়। তিনি না করেছেন। তাঁর আমেরিকা নিয়ে অত আহ্লাদ নেই। পশ্চিমের ধনগর্বী দেশ হ্যাঁমেলিনের বাঁশিওয়ালার মতো সব দেশের মেধাবীদের বাঁশির সুরে মোহিত করেছে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *