বাতাসবাড়ি জ্যোৎস্নাবাড়ি – ৪

চার

সুমিত্রাই বলে যাচ্ছে। তিনি শুনতে শুনতে ফোন কান থেকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন। হুঁ-হাঁ করছিলেন। সুমিত্রা বলছে, ইদানীং তোমার কথা খুব মনে পড়ত বাবলুদা, কিন্তু এইভাবে যে যোগাযোগ হয়ে যাবে ভাবিনি, তোমাকে দেখতে পাব ভাবিনি। 

তুই দেখলি কী করে? অনুপম অবাক।

আমার ছেলে দেখাল, মা এঁকে চিনতে পারো, আমি কিন্তু একবারেই চিনেছি, আমার ছেলের মোবাইল ফোনে তোমার ছবি রয়েছে, তোমার ছেলে আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছে, সকলের ছবি। সুমিত্রার গলা বুজে এল, এত বয়স তোমার, কিন্তু বোঝাই যায় না বাবলুদা, কী হ্যান্ডসাম রয়েছ! 

তোর হাজব্যান্ড? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, ক্যানেল রেভিনিউ অফিসার ছিল না? 

তুমি জানো? কে বলল? তুমি কী করে ভুলে গেলে আমাকে, আমাকে তোমার মনে আছে বাবলুদা? 

তোর হাজব্যান্ড রিটায়ার করেছে? তিনি জিজ্ঞেস করলেন। 

ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিল, কিন্তু রিটায়ার করার পরপর চলে গেল, ছ’মাস আগে হলে ছেলেটা চাকরি পেয়ে যেত, এসডি তাই বলেছিল, ডাই ইন হারনেস তো হয়নি, ওর খুব সুগার ছিল, আর, থাক বাবলুদা সব কথা বলা যায় না। 

অনুপম বলল, থাক বলতে হবে না। 

আগের গরমেন্ট থাকলে হতোই, পার্টির নেতারা আমাকেও চিনত, করিয়ে নিতাম, এখন আর হচ্ছে না, ছেলে অবশ্য ঢুকে গেছে সরকারি পার্টির ভিতরে, যাকগে সে লোক তো বিছানায় পড়ে ছিল, পাঁচ বছর হল নেই, তোমার বউ যেমন গেছে, আমার বর, রোগের ডিপো ছিল, খরচা করেছি কম না, কিন্তু থাকল না, তুমি তো ভালো আছ শুনেছি। সুমিত্রা তার বানানো হা-হুঁতাশের কথা বলতে আরম্ভ করে এইবার। দুঃখের কথা। হ্যাঁ, দুঃখ একরকম বিলাসই। সুমিত্রার অভাব নেই। সম্পন্ন গৃহস্থ। জমি- জমাও আছে। কিন্তু দুঃখ না থাকলে সাত কাহন করে সে বলবে কী? বানিয়ে বানিয়ে দুঃখের কথা? অনুপম জানেন দুঃখও পরিমিত পরিমাণে থাকা দরকার মানুষের জীবনে। সুমিত্রা বলছিল সেই দুঃখের কথা। এসব কথা কতসময় ভালো লাগে। তোর সুগার আছে? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন। 

না গো, কিন্তু পায়ে ব্যথা, হাঁটুতে, চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। বলল সুমিত্রা, বাবলুদা, তুমি আমার সেই বাবলুদা, জ্যোৎস্না রাতে মেসোমশায় বললেন, আয় সবাই মিলে লুকোচুরি খেলি, কী ভালো ছিলেন তিনি, আজ এত ভালো লাগছে তোমার সঙ্গে কথা বলে! 

অনুপম বুঝতে পারছিলেন কথা ফুরিয়ে আসছে, আর কী কথা হবে এখন? লতা মঙ্গেশকরের গান? সত্যজিতের ছবি, রাজনীতি, খেলা? সুমিত্রা নিশ্চয় এসব কথা বলতে ফোন করেনি। সে এসবের খোঁজ না রেখেই দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুই বর্ধমান আসিস না? 

ভাইরা সম্পর্ক রাখে না বাবলুদা, তবু যাই, আমার তো অংশ আছে ওই বাড়িতে। 

কলকাতা আসিস না? অনুপম জিজ্ঞেস করল। 

না, আমাদের আত্মীয় সব অসমে, গোয়ালপাড়া, ধুবড়ি, গুয়াহাটি, ওদিকের সঙ্গেই যোগ বেশি। 

গোয়ালপাড়ার গান শুনেছিস? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, তোর সেই চুল আছে? 

তুমি শুধু খুলে দেখাতে বলতে, তোমার বন্ধুরা এলেও বলতে সুমির চুল দেখবি, কত চুল! 

আছে তা? অনুপম সাগ্রহে জিজ্ঞেস করলেন। 

চুপ করে থাকে সুমিত্রা। চুপ মানে নেই। না, নেই। এতদিন কি ওসব থাকে বাবলুদা? সুমিত্রা গাঢ় স্বরে বলল, তুমি আমাকে খুব খাটাতে, চুল খুলে আবার খোঁপা করা, দেখে যেন আশ মিটত না, উফ কী দিন গেছে সেই চোদ্দো মাস। 

চুল নেই তো, বেঁচে গেছিস, না হলে এখনও চুল দেখাতে হতো তোকে। অনুপম বললেন। 

কী যে বলো তুমি বাবলুদা, সেই রকমই আছ ঠিক। সুমিত্রা বলল, বাবলুদা, শোভনকে খুব ভালোবাসে টুটুল, ওদের চ্যাট হয়, শোভন একটা ইন্টারভিউ পেয়েছে, কলকাতা যাবে, কিন্তু কলকাতায় তো আমাদের কেউ থাকে না, থাকার জায়গা নেই, কোথায় উঠবে? 

কবে ইন্টারভিউ? জিজ্ঞেস করলেন অনুপম।

সামনেই, এদিকে কি চাকরি আছে, চেষ্টা করল খুব, টুটুল মানে সূর্যনীল তখন বলল তোমার ওখানে যেতে, তুমি একা থাকো, একদিন ভিডিও কল হল, তোমার ছেলেটা এত ভালো, কী বলব দাদা। 

আচ্ছা, কিন্তু …… , বলতে গিয়ে থেমে গেলেন অনুপম, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কবে আসতে চায়? 

সুমিত্রা বলল, ফোনটা ওকে দিচ্ছি বাবলুদা, ওই বলুক। অনুপমের ফোনে ভেসে এল ভারী কণ্ঠস্বর। সে শোভন। বলল, মামা প্রণাম নিও, আমি তোমার কাছে শিয়ালদা থেকে কী করে যাব, একটু বলে দাও। 

ইন্টারভিউ কবে? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন।

খুব সামনে মামা–শোভন জবাব দেয়।

কবে আসতে চাও? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন।

ধরো দশ তারিখ নাগাদ।

অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, এত আগে কেন? 

আরও কটা খোঁজ করতে হবে, একটু কাজ আছে মামা। শোভন কত ঘনিষ্ঠ হয়ে উত্তর দিল, কলকাতায় কি একটা কাজ নিয়ে যাওয়া হয়? 

তুমি কলকাতা এসেছ আগে? জিজ্ঞেস করলেন অনুপম।

হ্যাঁ, যাওয়া তো হয়, শিয়ালদার হোটেলে উঠি আবার অন্য কারুর বাড়িতে উঠি, মামা তোমাদের ওদিকে বৃষ্টি হচ্ছে? শোভন আচমকা প্রসঙ্গ বদলে দিল, সে আর তার আশ্রয় নিয়ে কথা বলতে চায় না। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে নিয়ে বিষয়টি সেটল করে নিল যেন শোভন। 

অনুপম বুঝলেন শোভন ছেলেটি খুব বুদ্ধিমান। সে তাঁর সম্মতি তো আদায় করেই নিয়েছে বলা যায়। আসার তারিখ বলে দিয়েছে। এখন ওই প্রসঙ্গে কথা না বলাই ভালো। সে বর্ষার কথা তুলে বলল, খুব বৃষ্টি হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। মৌসুমী মেঘ আগেই এসে গেছে ওখানে। তাই-ই হয়। উত্তরের পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে সেই মেঘ দক্ষিণের দিকে যাত্রা করে। এবারে আসছে না এদিকে, অথচ উত্তরদেশ ভেসে যাচ্ছে বর্ষায়। খুবই চমৎকার আবহাওয়া। রাতে গায়ে চাদর দিতে হয়। বিনা মন্তব্যে শুনতে শুনতে আচমকা ফোন কেটে দিলেন অনুপম। আবার ফোন বাজল। হ্যাঁ, সেই ফোন। তিনি বললেন, ঘরে গেস্ট এসেছে, পরে কথা হবে। 

আচ্ছা মামা, কখন তুমি ফ্রি থাকো, ও তুমি তো সব সময়ই ফ্রি, দেখো মামা আমি এখানকার যুব সম্মিলনীর প্রেসিডেন্ট। 

অনুপম বললেন, রাখছি। 

ফোন কেটে দিয়ে বিরক্তিতে মন ভরে গেল। সুমিত্ৰা কি সেই কৈশোরের অধিকার দাবি করছে? তা কি হয়। সেই কিশোরী তো মিলিয়ে গেছে কালের গর্ভে। নাকি ভেসে আছে কোথাও। আজ দিনটা খারাপ শুরু হয়েছে, না ভালো–তা বুঝতে পারছেন না। সকালে চিনি একটু অসন্তুষ্ট হয়েছে তার কাছে মহাভারত ফেরত চাইতে। কাশীরাম দাসের মহাভারত পড়তে নিয়েছিল চিনি। তা প্রায় মাস দেড়েক হয়ে গেছে। ক’দিন ধরে তাঁর মনে হচ্ছিল মহাপ্রস্থান পর্ব আর একবার পড়েন। দ্রৌপদীকে সব চেয়ে ভালোবাসত ভীম। শাঁওলি মিত্রর নাটক নাথবতী অনাথবৎ পাঠ শুনলেন তিনি সেদিন সিডিতে। মনে হল মূল মহাভারতে কী আছে একটু দেখলে হতো। নাটকটি অসামান্য। তিনি সকালে চিনির কাছে মহাভারত চাইলে সে বলল, শেঠকাকুর মাসির মেয়ে নিয়ে গেছে তার শাশুড়ির জন্য। তিনি পড়ছেন, পড়ে ফেরত দেবেন। শুনে মনে হল, এইটি খুব অন্যায়। চিনি বলল, সে পড়েনি, সবে আরম্ভ করেছিল, কিন্তু তখনই স্বাতী এসে গেল। স্বাতী রতন শেঠের আপন মাসতুতো বোন। না দিয়ে পারে? 

আমি তো তোমাকে দিয়েছিলাম পড়তে। অনুপম বলেছিলেন।

কিন্তু শেঠকাকুর মাসতুতো বোন স্বাতী যে নিতে চাইল শাশুড়ির জন্য। চিনি বোঝাতে চেয়েছিল। 

মহাভারত তো ছোট উপন্যাস নয় বা খবরের কাগজ, সিনেমা ম্যাগাজিন নয় যে অন্যের কাছ থেকে নিয়ে পড়া যায়, কিনে নিতে বলো, বইটা আমার দরকার। ক্ষুব্ধ গলায় বলেছিলেন অনুপম। 

রাগ করলেন কাকু, আচ্ছা আমি যদি পড়তাম?

তোমাকেই তো পড়ার জন্য দিয়েছিলাম। অনুপম ক্ষুব্ধ স্বরে বলেছিলেন। 

আমার বদলে না হয় শেঠকাকুর মাসতুতো বোনের শাশুড়ি পড়ছে, খুব ধার্মিক উনি, ঠাকুরের সিংহাসনে যত্ন করে রেখে দিয়েছেন আপনার বই, ধুপধুনো দিয়ে তবে পাতা খোলেন। চিনি হেসে হেসে শোনাল। 

খুব সন্তুষ্ট হননি অনুপম। বরং রতন শেঠের নাম শুনে বিরক্তিতে মন ভরে গিয়েছিল। মহাভারতের গায়ে কি এবার সিঁদুর লেপা হবে? আসলে তিনি পড়ার লোক নন। মহাভারত লোকের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে কি পড়া হয়? চিনিরও বইয়ে কোনও আকর্ষণ নেই। সে চায় লোকে ধর্মপথে আসুক। তাঁর মনে পড়ল সেই মেদিনীপুর শহরের কথা। অমল সেনগুপ্ত খুব বই পড়তেন। কিনতেন বই। লাইব্রেরি থেকেও নিয়ে আসতেন। ওঁর কথায় কুন্তলা অভ্যাস করে বই পড়ার। আর তাঁর ছিল গান শোনার নেশা। কত লং প্লেয়িং রেকর্ড। অনুপম যেন শুনতে পেলেন হেমন্তর সুধাময় সেই কণ্ঠস্বর, বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা। দূর নীলিমায় ওঠে চাঁদ বাঁকা। সন্ধ্যায় সেই গান শোনা তাঁর অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। কারণ একটি। গানের সঙ্গে ভেসে আসত নিজের কৈশোর। দাঁড়ের মাঠের বাড়িটা পাকা ছিল। কিন্তু মাথায় ছিল টালি। বারান্দায় বসে গল্প হতো সন্ধের লেখাপড়া শেষ করে। দূরে চাঁদ ভেসে আছে নির্মল আকাশে। সুমি তাঁকে ছুঁয়ে থাকত। অনুপম দৃশ্যটি দেখতে পেতেন হেমন্তর ওই গানের ভিতর দিয়ে। আর সেই লোভেই নেশার মতো উঠে যেতেন অমল সেনগুপ্তর দোতলায়। কুন্তলা জানেইনি। সুমিও না। ওর মা বাবা বাংলাদেশের জমি-জমার সব ব্যবস্থা করে এদেশে বর্ধমানে সব বিনিময় করে আসে ছ’মাস পর। তখন সুমি ফিরে যায় মা বাবার কাছে। বসিরহাট, ২৪ পরগনা, দাঁড়ের মাঠ থেকে বর্ধমান অনেক দূর। সেই যে গেল কিশোরী মেয়েটা, বুড়ি হয়ে ফিরে এল। 

অনুপম ইজি চেয়ারে অনেকটা হেলে বসলেন। ল্যান্ড লাইনের রিসিভার ক্রেডল থেকে নামিয়ে রাখলেন। মনে হচ্ছিল শোভন কিংবা সুমিত্রা আবার ফোন করবে। এবার হয়তো সুমিত্রার স্বামীর হাতে ফোন যাবে। সে তার অসুখের কথা বলে যাবে এক নাগাড়ে না হলে সুমি চুলের কথা বলবে। চুল কবে ঝরে গেল জানে না সুমিত্রা। এখন তো সামান্য আছে। নাকি সুমিত্রার স্বামী বিয়ের পরই চুল কাটতে বলেছিল। বব কাটিং। হাসলেন অনুপম নিজের মনে। অনেক কিছুই হতে পারে। প্রতিটি মানুষ এই পৃথিবীতে এসে কিছু রং আহরণ করে। তারপর সেই রং জ্বলে পুড়ে যেতে থাকে। কেউ কেউ আবার নিজের রং নিজের আলো নিজেই নষ্ট করে। হ্যাঁ, তাই। সুমি নষ্ট করল। তার ছেলে না হয় হোটেলেই থাকত। কী দরকার ছিল ফোন করার? অদ্ভুত! সমস্ত দিন মনে পড়তে লাগল সুমির কথা। এখন কেমন হয়েছে সে? সমস্ত দিন বিরক্ত হয়ে থাকলেন টুটুলের ওপর। টুটুল কেন ফোন নম্বর দিল। তার অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। শোভন ছেলেটা এসে বিরক্ত করবে। সুমি এখন মনের দিগন্তের বাইরে। 

সেদিন রাতে আবার সুমি এল। তিনি ঘুমের ভিতরে দাঁড়ের মাঠে গিয়ে দাঁড়ালেন। বাড়ির পিছনে কটি পেয়ারা, জামরুল, হিমসাগর আম গাছে বাগান মতো। ফনফনে চাঁদের আলো আর বাগানের গাছের ছায়ার ভিতরে তিনি ডাকলেন, কোথায় লুকোলি রে? 

আমি আছি গো, কাছেই। তিনি যেন সুমির নিঃশ্বাস পেলেন গায়ের উপর। গরম বাতাসের ভাপ, তোমার বুকের ভিতরে। 

কী যে বলিস তুই সুমি। তিনি অন্ধকারে সুমিকে দেখতে চাইলেন, লুকোলি কোথায়? 

খুঁজে বের করো বাবলুদা। খিলখিল করে হাসে সুমি।

তিনি পায়ে পায়ে আলো আর ছায়া পার হয়ে যাচ্ছেন। সে চাপা গলায় ডাক দিচ্ছে, ও বাবলুদা, এই বাবলু, বাবলু! 

এমন করিস তুই সুমি, কেউ যদি শোনে? কিশোর তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। 

শুনুক না, আমি কেয়ারই করি না, এই আমাকে দেখতে পাচ্ছ? রিনরিনে গলায় ডাকল কিশোরী, এদিকে এসো না বাবলুদা, এই বাবলু! 

অনুপম পার হয়েই যাচ্ছেন ছায়া আর আলো। বাগানে আমের বোল হয়েছে। গন্ধ ভাসছে বাতাসে। দূরে আর সব বালক বালিকা, কিশোর কিশোরীদের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। তিনি এগিয়েই যাচ্ছেন, ডাকছেন, কইরে সুমি, আমি চলে যাচ্ছি, এরপর আমাদের খুঁজবে সবাই। 

এই তো আছি। চাপা হাসি শুনলেন অনুপম। সুমির হাসি তাঁর ভিতরে শিহরন আনে। 

বাগানে ভূত আছে, গাছের ডাল থেকে আলতা পরা পা দুলছে দেখতে পাচ্ছিস? তিনি চাপা স্বরে বললেন। 

ইস্, মোটেও না, মিথ্যে, তুমিই সেই ভূত। অন্ধকার থেকে সুমি জবাব দিল, তুমি একটা গেছো ভূত। 

চুল বেয়ে উঠে আসে তারা অন্ধকার থেকে, তোর চুল সামলা সুমি, তারা চুল খুলে দিয়ে উঠে পড়বে তোর ভিতরে। 

কথাটা বলতেই সুমি অন্ধকারের ভিতর থেকে ঝাঁপিয়ে এল যেন। দুই হাতে তাঁকে জাপটে ধরল। যেন এই কথাটির জন্যই সে অপেক্ষা করছিল। এই ভয়ের বাতাবরণের জন্য সে অপেক্ষা করছিল। আমার খুব ভয় করছে বাবলুদা, তুমি আমাকে সরিয়ে দিও না। দম আটকে আসছিল অনুপমের। 

সরে যা, কেউ এসে যাবে। অনুপম বললেন। 

আসুক আমি ভয় পাই না, বাবলুদা ছুঁয়ে দেখ আমার বুক কেমন কাঁপছে। 

সুমি, আমাদের ডাকছে মা, সকলে মিলে খেলা, আলাদা হয়ে যাওয়া ঠিক না। 

কই না তো, কেউ ডাকছে না। সুমি তাঁর বুকে মুখ ঘষতে লাগল। 

ছাড়, এত ভয়ের কিছু হয়নি, ছাড় বলছি। অনুপম ছটফট করতে লাগলেন। তাঁর দম আটকে আসতে লাগল। 

না গো বাবলুদা, আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার চুল খুলে দিচ্ছে, বাবলুদা! সুমি তার সমস্ত শরীর দিয়ে তাঁকে আঁকড়ে ধরে দম আটকে দিচ্ছে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *