বাতাসবাড়ি জ্যোৎস্নাবাড়ি – ১১

এগারো

অনুপম ফোন কেটে দিলেন। তারপর তার সাউন্ড মিউট করে দিলেন। সাইলেন্ট মোডে থাকার সুবিধে কোনও ফোন এলে বোঝা যায় না। ধরতে হয় না। পরে দেখা যাবে কারা ফোন করেছিল। ওর কথা শেষ হয়নি। মনে পড়ে যাচ্ছে সব। এই বয়সে পুরাতন প্রেম ফিরে আসে! মেয়েটা ভুলতে পারছিল না আশাভঙ্গের বেদনা। চুপ করে বসে থাকত। তখন সেই বাড়ির নবীন যুবকটি এগিয়েছিল তার দিকে। শান্ত করতে পেরেছিল। হাত ধরেছিল তার, বলেছিল, তোর পাকিস্তানের হিরোর চেয়ে উত্তমকুমার অনেক উত্তম। 

মেয়েটি ঘাড় বাঁকিয়ে তাকে দেখেছিল, চোখে ফুটে উঠেছিল। রাগ, বলেছিল, তোমাকে কে ওকালতি করতে বলেছে? 

যুবক অনুপম বলেছিল, সিনেমা দেখবি, দেখেছিস উত্তম- সুচিত্রা? 

তুমি রজ্জাক-করবীর বই দেখেছ? 

অনুপম বলেছিল, উত্তম-সুচিত্রার ওপরে কেউ হবে না। মেয়ে যেন জেগে উঠেছিল, আমি কোনওদিন দেখিনি উত্তম- সুচিত্রা, সাতক্ষীরের হলে একবার দেখিয়েছিল শুনেছি, আমি দেখতে পাইনি, দেখাবে? 

কদিনের ভিতরে সুযোগ এল। বসিরহাট মিলনী সিনেমায় মা যাবে উত্তম-সুচিত্রার ‘সবার উপরে’ দেখতে। মায়ের সঙ্গে সুমি যাবে ধরল। মা বলল, বাবলু তুইও চ। বাবলু মানে অনুপম। মেয়েটা মন খারাপ করে বসে থাকে, সিনেমা দেখলে যদি মা- বাবার কথা ভুলে থাকে। তারা কবে আসবে এদেশে পাকাপাকিভাবে, তার কি ঠিক আছে? মেয়ে পার করে দিয়ে তারা নিশ্চিন্ত। দরকারে পরের বছর ইস্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে। মা জানতই না মেয়েকে নিয়ে কেমন বিপদে পড়েছিল তার মা বাবা। মেয়ের সাধ ছিল, পালিয়ে ঢাকা হয়ে করাচি চলে যেত উর্দু সিনেমার হিরোইন হতে। ঢাকায় গিয়ে রজ্জাকের হিরোইন হতো। সুমি সব বলেছিল অনুপমকে। কিন্তু সে তো ঘনিষ্ঠতার পরে। সুমি অনুপম গেল মায়ের সঙ্গে। কিন্তু সিনেমা দেখবে কী, মেয়ে তার হাত ধরে থাকল সমস্ত সময়। মা কিছু বোঝেনি। মায়ের তেমন নজরও ছিল না, মুগ্ধ হয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান শুনছিল। সুচিত্রা-উত্তমকে দেখে বিমোহিত হয়েছিল। সে হাত সরিয়ে নিলেও মেয়ে তা আবার টেনে নিয়েছিল নিজের কাছে। হাফ টাইমে সুমি একেবারে আলাদা। মাসি মানে মায়ের সঙ্গে কলকল করে কী কথা, মাসি কত সুন্দর ইন্ডিয়ার সিনেমা, আমাদের রজ্জাকের চেয়ে উত্তম আরও বিউটিফুল। 

মা বলল, রজ্জাক আমি দেখিনি, শুনেছি ভালো, তবে উত্তমের কাছে কেউ না। 

সুমি বলেছিল, মাসি ভেজিটেবল চপ খাবে? ভেজিটেবল চপ কিনতে অনুপমের সঙ্গে সুমি বাইরে এসে বলল, তুমি একটা ক্যাবলা বাবলুদা। 

অনুপম কেঁপে উঠেছিল। তারপর একদিন শুনল মেয়ে কী করতে গিয়েছিল। তখন দেখে যেন ভয় হয়েছিল। সুমির কোনও ভয় নেই। বলেছিল, মুসলমান হয়ে যেতাম না হয়, তাতে কী হয়েছে, সিনেমায় তো নামতাম, নুরুলভাই সিনেমায় নেমেছিল ঢাকায়, সাইড রোল, সে-ই বলেছিল আমি পারব, করাচি যেতে পারলে উর্দু সিনেমায় চান্স পাব, উর্দু শিখছিলাম, পাকিস্তানে উর্দু ছাড়া কিছু হবে না, উর্দু জানলে সব হবে, নুরুলভাই বলেছিল। 

কে নুরুলভাই? 

হাতের চাচার ছেলে, আমাদের গ্রামেরই, নুরুলভাই ‘স্মৃতিটুকু থাক’ সিনেমায় রজ্জাকের কলেজের বন্ধুদের ভিতর ছিল। 

সুমির কথা যত শোনে অনুপম, অবাক। মেয়েকে দেখলে বোঝা যায় না সে কতটা আগুন নিয়ে এসেছে এদেশে। বলছে কলকাতা নয় ঢাকা যাবে। নুরুলভাই আসবে নিশ্চয় নিয়ে যেতে। সে নুরুলভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ধীরে ধীরে নুরুলের কথা কমে আসতে লাগল, অনুপমে সে মজে যেতে লাগল। বাবলুদা, তুমিও হিরো হতে পার। বেজে উঠেছে ল্যান্ড লাইন। আবার সুমি? কথা ফুরয়নি? ফুরনোর তো নয়। এখনও মনের ভিতরে পুষে রেখেছে সেই এক বছর! এতটা জীবন ওকে কিছুই ভোলাতে পারেনি। ফোন ধরবেন না ভাবতে ভাবতে ধরলেন অনুপম। এখন চুপ করে থাকবেন। কোনও কিছুই বলবেন না। হ্যালো হ্যালো করে সুমি থেমে যাবে। কিন্তু না। ফোন করেছে চিনি। ক’দিন তাঁকে দেখেনি মর্নিংওয়াকে। কী হয়েছে তাঁর? তিনি জবাব দিয়ে ফোন রাখতে পারলেন না। চিনি বলছে, আঙ্কেল, আমার কিছু কথা আছে, আমাকে খুব ডিস্টার্ব করছে পাশের ফ্ল্যাটের লোক। 

কেন? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? 

জানি না কাকু, আগে তো ভালো সম্পর্ক ছিল।

এখন কী হল? 

বুঝতে পারছি না ঠিক। 

অনুপম বললেন, তুমি জগৎ শেঠের বংশধর রতন শেঠকে বলো। 

কাকু, উনি আছেন কি না এর ভিতরে জানি না। 

কেন তোমার তো খুব বন্ধু। 

বন্ধু কেন হবেন, গুরুভাই, আমিই মন্ত্র দিয়েছি। চিনি বলল, কিন্তু উনি ভালো না। 

কী হয়েছে? 

দেখুন না, এখন আর আসে না সকালে।

খেয়াল করিনি। 

কাকু উনি আপনাদের মতো নন, আমাকে নিয়ে পুরী যাবেন বলছিলেন, না করেছি, মেসেজ করত খুব। 

সব নিয়ে থানায় যাও, পালকে বলো। 

মেসেজ তো আমি ডিলিট করে দিয়েছি, আর শেঠকাকু না-ও থাকতে পারেন, আমার নেবার। 

ওই কথা নিয়েই থানায় যাও। বললেন অনুপম। 

যাব, কিন্তু এই সমাজে কি একা মানুষের কোনও দাম নেই, সে কি একা থাকতে পারবে না? চিনি কথাটা বলে অপেক্ষা করতে লাগল অনুপমের জবাবের জন্য। 

অনুপম চুপ করে থাকলেন। বুঝতে পারছিলেন চিনির সমস্যা। একটা মেয়ে একা থাকে বড় ফ্ল্যাটে। কেন থাকবে? তিনি একা থাকেন, কেন থাকবেন? সমস্যা প্রায় একই রকম। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে তা আরও জটিল হয়ে যায়। অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, সেই কারণে? 

পাশের ফ্ল্যাটের কাকিমা কী অশ্রাব্য ভাষায় চিৎকার করে, সে আমি বলতে পারব না,আমার ফ্ল্যাটে নাকি রাতে লোক আসে, কী সব ভাষা! 

অনুপম কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। চিনি একা তার গুরুর ছবি নিয়ে থাকে। তার বিশ্বাস গুরু তাঁকে নিশ্চিন্তে রাখবেন। কিন্তু তা হচ্ছে না। পাশের ফ্ল্যাটের কাকিমা কেন গালাগালি করছে তা বুঝতে পারছে না চিনি। অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, পাশের ফ্ল্যাটের কাকিমার হাজব্যান্ড কী বলছেন, তুমি ওঁকে জিজ্ঞেস করো। 

দত্তকাকু এখন আমার সঙ্গে কথা বলেন না, উনি কিন্তু খুব ভালো। 

অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, কথা বলেন না কেন? 

জানি না কাকু, মনে হয় কাকিমা বারণ করেছে, আগে উনি এসে গীতা পাঠ শুনতেন আমার কাছে, গুরুর কথা শুনতেন। 

কাকিমা আসতেন না? 

আসতেন, শেষে কাকু একাই, তারপর তিনি বন্ধ করলেন আসা। 

কবে থেকে এই সব হল? 

এই মাস চার, আর সহ্য করা যাচ্ছে না কাকু।

তোমার ঠাকুর আছেন। 

ঠাকুরই তো আমার শক্তি, কিন্তু আমি কী করব বলুন আঙ্কেল। 

অনুপম বললেন, তুমি থানায় গিয়ে কী বলবে?

আমি বলব…কী বলব বলুন? 

যা ঘটছে তাই বলবে। 

বলেছিলাম তো, বলল চিনি, আগে একবার গিয়েছিলাম থানায়, এস আইকে বলেছিলাম, বলল, একা থাকা তো ঠিক না। 

এবারও তাই বলবে? 

তাহলে আমি কী করব? 

একা থেকো না। বলতে গিয়ে কেঁপে উঠলেন অনুপম। তিনি নিজে একা থাকেন, আর এই মেয়েটি একা থাকতে পারবে না? 

আমার যে আর কেউ নেই, কার সঙ্গে থাকব কাকু? চিনির গলার স্বরে বিষণ্ণতা, কাকিমা বলছে আমি নাকি উইচ, জাদুকরী, ডাইনি। 

কেন বলছে, খুব খারাপ কথা। অনুপম বললেন, এইটা কি আফ্রিকার জঙ্গল, সভ্যতা বিবর্জিত গ্রাম? 

কাকিমা বলছে চলে যেতে, কিন্তু আমি কোথায় যাব? তুমি তোমার ফ্ল্যাটে থাকো, উনি এসব বললে তুমি কমপ্লেইন করো। 

দেখুন কাকু, ফ্ল্যাট কমিটিকে বলেছিলাম, সেক্রেটারি বিনয়কাকু জিজ্ঞেস করল, একা থাকি কেন, কী করি একা একা, কখন ঘুমোই, সারাদিনে মোবাইলে কত কল করি। 

অনুপম বললেন, এখন তুমি কী করবে? 

বুঝতে পারছি না। চিনি অসহায় গলায় বলল, এমন রটিয়ে দিচ্ছে যে আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে কেউ কেউ, কাকু আমরা কি শহরে বাস করি না জঙ্গলে? 

অনুপম বুঝতে পারছিলেন সব। কী বলবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। চিনি বলে যাচ্ছিল তার কথা। বলছিল, আমি বশ করি পুরুষ মানুষকে, আমি নাকি মানুষকে মেরেও…উফ আমি আর বলতে পারছি না কাকু, মা বাবাকেও নাকি আমি…। 

তুমি কি থানায় এসব বলেছিলে?

না, বলতে পারিনি। চিনি বলল। 

এখন বলবে? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন। 

কী করে বলি, খুব ডিস্টার্ব করছে বলব? 

অনুপম ভাবছিলেন কী করবেন? তিনি থানায় যাবেন? কিন্তু তিনি কে? কেউ না, কিন্তু যে সাহায্যপ্রার্থী, তাকে সাহায্য করতে আসা। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। থানায় সেই কথাই বলবেন। থানা কী বলতে পারে, দেখছে তারা। কিন্তু কতটা দেখবে। এমন গোপন প্রচার কি বন্ধ হবে? 

কাকু আপনি তো একা থাকেন। বলল চিনি।

একা থাকা ঠিক না, তুমিই তো বলেছিলে। 

সে তো গুরুর কথা বলার জন্য, কাকু, আমি কেন একা থাকি, কাকিমার মাথাব্যথা, বলছে আমিই নাকি আমার মা বাবাকে…… কাকু বলুন দেখি, কাকু আমার খুব বিপদ, কী ভয়ানক কথা রটাচ্ছে। 

সাহস দরকার হয় একা থাকার জন্য। অনুপম বললেন, তোমার গুরু কি এখন তোমার সঙ্গে নেই? 

কথা এড়িয়ে গিয়ে চিনি বলতে লাগল, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে কাকিমা, আমার চেয়ে কম করে পনেরো বছরের বড়, 

আমি কতবার সিনেমা দেখিয়েছি কাকিমাকে, কিন্তু হঠাৎ এত বদলে গেল, সন্দেহ করে ওঁর হাজব্যান্ডকে আমি তুক করছি। তিনি তো আসেন না তোমার ঘরে? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, আসতে বলতে আগে? 

বলতাম, আমি তো সকলকে যেমন ডাকি গুরুমন্ত্র দেওয়ার জন্য, আপনাকেও যেমন ডেকেছিলাম, উনি তাই আসতেন, কাকিমাও আসতেন, তারপর দুজনের আসাই বন্ধ হয়ে গেল, কাকিমা নিন্দা আরম্ভ করলেন, ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে গিয়ে খারাপ খারাপ কথা বলছেন। 

অনুপম বললেন, সসীমকে নিয়ে কাউন্সিলারের কাছে যেতে পার। 

গিয়েছিলাম, কিন্তু আমার কথাই শুনলেন না, বললেন মা- বাবার ডেথ সার্টিফিকেট জমা দিতে। 

কেন, ডেথ সার্টিফিকেট কী হবে? 

চাপ দিতে কাকু, উনি সব জানেন, কাকিমা আমার আগেই ওঁর কাছে গেছে, কী অপমান বলুন, কাকিমা বলছে, আমি নাকি আমার মা বাবাকে মেরেছি, বাবা হার্ট অ্যাটাক, মা জ্বরে, কাকু আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। 

অনুপম ফোন রাখতে রাখতে বললেন, দেখছি, আমি থানায় কথা বলব। 

কাকু আপনার এক বন্ধু ডেপুটি কমিশনার, শুনেছিলাম।

চাকরিতে থাকার সময় দেখা হতো, দেখি কথা বলে, রাখছি এখন। অনুপম ফোন রেখে দিলেন। মেয়েটা বিপদে পড়েছে। কিন্তু এই শহরে কেউ ওসব বিশ্বাস করবে? তিনি চুপ করে বসে থাকলেন। মেয়েটির মা বাবা মারা গেছে। সে বাবার পেনশন পায়। চাকরি নেয়নি। তাতে তার আরাধনা ব্যাহত হতো। কিন্তু অনুপমের মনে হয় সে চাকরি নিলে ভালো করত। তাহলে সারাদিন ঘরে বসে থাকত না। চাকুরে মেয়েরা সমাজে সমীহ পায়। অনুপম সসীমকে ফোন করলেন। সসীম ধরেই জিজ্ঞেস করল ভাগ্নের সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না। ভাগ্নের কথা সে ভালোই জানে। ভাগ্নেকে দেখে তার ভালো লেগেছে। শোভনের কথা শেষ হলে অনুপম বললেন চিনির কথা। সসীম চুপ করে থাকল। তারপর বলল, সে কাউন্সিলরের কাছে তাকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অলকদা আগেই সব জানত। দত্তবাবুর বউ আগেই চলে গেছে। চিনির আগে যাওয়া উচিত ছিল। অনুপম জিজ্ঞেস করতে সসীম বলল, ওর কী দরকার দত্তবাবুকে নিজের ঘরে ডাকা। সকলে তো গুরুর মন্ত্র নেয় না, আপনি নেননি, আমি নিইনি তবে একটা ছবি এনে রেখেছি মাথার কাছে, তারপর থেকে ঘুম ভালো হয়, অ্যালজোলাম খেতে হচ্ছে না। 

সসীম চন্দ্র আগডুম বাগডুম বকে। তাকে থামান অনুপম, বলেন, ওর নামে খারাপ খারাপ কথা বলে বেড়াচ্ছে দত্তবাবুর স্ত্রী। 

ও স্যার হবে, দত্তবাবুকে মন্ত্র দেওয়ার দরকার কী?

কী রটাচ্ছে তা জানেন? 

ওর তো কোনও প্রমাণ নেই, চিনি এই নিয়ে যত শোরগোল করবে তত রটবে, চুপ করে থাকুক না। 

অনুপম বললেন, এইসব কথা কি বলা উচিত? 

তাঁকে অবাক করে দিয়ে সসীম বলল, ছ’মাসের ভিতর মা বাবা দুজনেই চলে গেছে, বাবার হার্টের অসুখ ছিল না, তাই-ই তো বলে চিনি, কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে চলে গেছেন স্যার, মা গেছে জ্বরে, এই সব তো সত্যি কথা, তা বললে মানুষের মুখ আটকাবেন কী করে? 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *