প্ৰথম দিন – রাত

রাত ৮টা 

দ্বিতীয় তলার হাতের ডান দিকেই সিঁড়ি। 

আজকাল সবাই আরামপ্রিয়, তাই লিফট ব্যবহার করে। বিশেষ করে হাসপাতালে তো কেউই সিঁড়িতে পা মাড়ায় না। 

মসবার্গের ব্যারেল প্রায় পয়তাল্লিশ সেন্টিমিটার লম্বা। বড়সড় কোনো রেইনকোর্টের পকেটে সহজেই এঁটে যায়। তবে আপনাকে একটু শক্ত হয়ে হাঁটতে হবে অনেকটা রোবটের মত, যাতে ব্যারেলটা ঊরুতে সেঁটে থাকে। মসবার্গ নিয়ে ভেতরে ঢোকার একটাই উপায়। যে কোনো মুহূর্তে গুলি করা কিংবা পালানোর জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে আপনাকে। পরিস্থিতি যাই হোক, তাতে নিজের সেরাটা দিতে হবে। 

ছোট্ট পুলিশটা নিচে চলে গেছে। মেয়েটা এখন একা। যদি এখনো হাসপাতাল না ছেড়ে থাকে, তাহলে গুলির শব্দ শুনতে পাবে ওই পুলিশ। আর ঠিক সাথে সাথে যদি ছুটে না আসে, তাহলে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠবে ওর বিরুদ্ধে। পুলিশ বাহিনীতে ওর ভবিষ্যৎ তো পুরো অন্ধকার। 

সরকারি প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত। দ্বিতীয়বার তাকানোর সময়ও কেউ পায় না। হতাশাগ্রস্ত পরিবার আর চিন্তিত বন্ধুবান্ধবে করিডোর ভরপুর থাকে। তারা এমনভাবে রুমে ঢুকছে আর বের হচ্ছে, যেন কোনো চার্চে এসেছে। এদিকে মুখে ক্লান্তির ছায়া নিয়ে তীরবেগে ছুটছে নার্সরা। 

দ্বিতীয় তলার করিডোর বেশ বড়। অনেকটা মহাসড়কের মত। 

২২৪ নাম্বার রুম করিডোরের একদম শেষ মাথায়। মূলত যাদের লম্বা সময়ের জন্য বিশ্রাম প্রয়োজন, তাদেরকে এখানে রাখা হয়। লম্বা বিশ্রামের কথা যেহেতু উঠলোই, আমার ধারণা সময়টা যাতে কখনোই শেষ না হয়, সে ব্যবস্থা করতে পারবো। 

রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। 

দরজা খোলার সময় সতর্ক হতে হলো আমাকে। হাসপাতালের মেঝেতে শটগানের ঘষায় কোনো শব্দ হলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। আর এদেরকে বোঝানোও খুব একটা সহজ না। রেইনকোর্ট মেলে ধরে, এক হাত থেকে আরেক হাতে নিয়ে নিলাম শটগান। দরজায় দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটা বিছানায় পড়ে আছে। পা দুটোও চোখে পড়লো, কোনো নড়াচড়া নেই। মনে হচ্ছে কোনো লাশের পা। একটু কাত হতেই পুরো শরীরটা চোখে পড়লো আমার… 

হায় ঈশ্বর, এ কী অবস্থা মুখের! 

বাহ! দারুণ কাজ করেছি তো আমি ।

এক পাশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। ঠোঁটের কোণা বেয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে, চোখের পাতা ফুলে বন্ধ হয়ে আছে-একদম অয়েল পেইন্টিঙের মত লাগছে। সাথে সাথেই ‘খোমা পালটে দেয়া’ অনুভূতির কথা মনে পড়লো আমার। তাকে দেখতে একদম মধ্যযুগের পিকাসোর মত লাগছে। ব্যান্ডেজ গুলো হয়তো কাজে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তার ত্বকের বিচিত্র রঙ। ত্বক যেন পার্চমেন্ট, ক্যানভাসও বলা যায়। মাথাটা অদ্ভুতরকমভাবে ফুলে আছে। যদি বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখে নেয়া উচিত হবে। 

দরজা খুলে এমনভাবে দাঁড়ালাম যেন শটগানটা দেখা যায়। 

আমি যে খালি হাতে আসিনি, তা তো জানাতে হবে। 

দরজাটা করিডোরের দিকে খুলে আছে। কিন্তু, মেয়েটা চোখ খুললো না। এতো বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে এমন অভ্যর্থনা পেলাম? আহত লোকজন অনেকটা পশুর মত, এরা আপদ টের পায়। সে অবশ্যই জেগে উঠবে। শুধু কিছুটা সময় দিতে হবে। চোখ মেললেই মসবার্গটা দেখবে-তার আর মসবার্গের বন্ধুত্ব তো অনেক পুরোনো। 

আমাকে শটগান হাতে দেখলেই, ভয়ে কেঁপে উঠবে সে। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসারও চেষ্টা করতে পারে। 

আর্তনাদের কথা নাই বা বললাম। 

চোয়ালের যা অবস্থা করেছি, তাতে মনে হয় না কথাবার্তা বলে খুব একটা শান্তি পাবো। সর্বোচ্চ ‘হেহহহহ’ কিংবা ‘হুহহহহ’ উচ্চারণ করতে পারবে। এর বেশি না। নিজের উচ্চারণের অস্পষ্টতা ঢাকতে হয়তো জোরে চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করবে, যাতে করে সবাই তাকে বাঁচাতে ছুটে আসে। যদি এমনটা হয় তাহলে কাজ শুরুর আগে আঙুল দিয়ে ইশারা করে তাকে থামতে বলবো। কিন্তু, আমার কথা না শুনে চিৎকারের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দেবে সে। ঈশ্বরের দোহাই লাগে! থামো! এটা হাসপাতাল! 

“মঁসিয়ে?” 

হুট করে কারো শব্দে চিন্তায় ছেদ পড়লো আমার। 

আমার ঠিক পেছন থেকে কেউ ডাকছে। 

মোটেও ঘুরবে না, যেভাবে আছ সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকো। নিজেকে শান্ত করলাম। 

“আপনি কি কাউকে খুঁজছেন…..?” 

হাসপাতালে সাধারণত কারো মনোযোগ আকর্ষণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু যেই না আপনি শটগান হাতে উপস্থিত হলেন, গুটি কয়েক নার্স জড়ো হয়ে যাবে সাহায্যের জন্য। 

দরজার নাম্বারের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকলাম, যেন দেখে মনে হয় কেবলই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। নার্সটা আরো কাছে চলে এলো। ওদিকে না ঘুরেই, অপ্রস্তুত অবস্থায় বললাম, 

“দুঃখিত, ভুল রুমে চলে এসেছিলাম…”

যে কোনো কাজে মাথা ঠাণ্ডা রাখাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডাকাতি করেন কিংবা হাসপাতালে যান, সবক্ষেত্রেই এটা জরুরি। মনে মনে বের হবার পরিকল্পনা সাজিয়ে নিলাম। সিঁড়ি দিয়ে এক তলা উপরে উঠে হাতের ডানে যেতে হবে। এখনই সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমার যদি ঘুরতে হয়, তাহলে মসবার্গ দিয়ে নার্সের মাথা উড়িয়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। এমনিতেই হাসপাতালের নার্স সংকট। এরমাঝে তাদের বিপদে ফেলতে চাচ্ছি না। লম্বা কদমে হাঁটা শুরু করলাম। 

“লিফট ওই দিকে না…” 

খট করে একটা শব্দ হওয়ার সাথে সাথে নিরবতা নেমে এলো। নার্সের কণ্ঠে আতঙ্ক ভর করলো। 

“মঁসিয়ে!” 

শটগান যেহেতু লোড করা আছে তাই চিন্তার কিছু নেই। এখন শুধু সময় নিয়ে নির্ভুলভাবে কাজটা সারতে হবে। 

শটগানের ব্যারেল আমার ট্রেঞ্চ কোটের ওপরে ভেসে উঠেছে; দেখে মনে হচ্ছে কাঠের পা। তিন কদম এগিয়ে গেলাম। কোটের এক কোণা হুট করে সরে যাওয়ায়, অল্প সময়ের জন্য ব্যারেলের শেষ মাথা দৃশ্যমান হলো। অনেকটা আলোকচ্ছটার মত, যেন কোনো কাচে সূর্যরশ্মি এসে প্রতিফলিত হচ্ছে। এতো অল্প সময়ে চেনা তো দূরের কথা, খেয়ালও করার কথা না। তবুও, আপনি জানেন যে কিছু একটা দেখেছেন। একটু দ্বিধায় ভুগবেন। হয়তো…না, এটা অসম্ভব… 

*** 

মুহূতেই লোকটা ঘুরে দাঁড়ালো। মাথা নিচু করে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কোটটা ঠিক করে সিঁড়ির দিক এগিয়ে গেছে। কিন্তু সে নিচে না নেমে উপরে উঠলো। তার মানে সে পালাচ্ছে না, নইলে নিচের দিকেই যেতো। কিন্তু কেমন জানি শক্ত হয়ে হাঁটছিল, অস্বাভাবিকভাবে। কোটের নিচে ওটা কী ছিল? দূর থেকে বন্দুকের মতো লাগছিল। কিন্তু এখানে? হাসপাতালে? না-কোনোভাবেই নিজেকে বিশ্বাস করতে পারলো না নার্স। তবে ওটা কী ছিল তা জানার একটাই উপায়… 

“মঁসিয়ে…মঁসিয়ে?” 

.

রাত ৮টা ১০ 

যাওয়ার সময় হয়েছে। ছ্যাকা খাওয়া প্রেমিকের মত আচরণ ক্যামিলের শোভা পায় না। ভিক্টিমের পাশে কোনো গোয়েন্দা সারারাত কাটায় না। এমনিতেই অনেক ঝামেলা পাকিয়েছে একদিনে। 

ঠিক এমন সময় তার মোবাইল কেঁপে ওঠে। হাতে নিয়ে দেখলো, কমিশনার মিচার্ড। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে হাত নেড়ে রিসেপশনিস্টকে বিদায় জানালো সে। জবাবে হাত নেড়ে কিছু একটা ইঙ্গিত করলো রিসেপশনিস্ট। না বোঝার ভান করলো ক্যামিল। তাই ক্লান্তিকর ভঙ্গিতে তার দিকে এগিয়ে গেল। পার্কিং টিকেট তো তার পকেটেই আছে, আবার কী সমস্যা হলো? 

“আপনি তাহলে চলেই যাচ্ছেন? এই চাকরিতে তো খুব বেশি ঘুমের সময় পান না, তাই না?” 

কটাক্ষ করেই কথাটা বলা হয়েছে, কেন না সে হাসছে, আবারও ওই বাঁকা দাঁত দেখা যাচ্ছে। শুধু শুধু সময় নষ্ট করার জন্য নিজেকে মনে মনে গালি দিলো ক্যামিল। দীর্ঘ এক শ্বাস নিয়ে রিসেপশনিস্টের দিকে তাকিয়ে হাসলো। যে কোনো মূল্যে তার এখন ঘুম দরকার। এই ভেবে তিন কদম হাঁটতে না হাঁটতেই পেছন থেকে ডাক এলো। 

“ওহ্! ভালো কথা, একটা ফোন এসেছিল। আপনাকে জানিয়ে রাখলাম।” 

“কখন?” 

“বেশ কিছুক্ষণ আগে…সাতটার কাছাকাছি সময়ে।” 

ক্যামিল জিজ্ঞেস করার আগেই… 

“উনার ভাই করেছিল।” 

নাথান। অ্যানির ভাইয়ের সাথে কখনো দেখা হয়নি ক্যামিলের, তবে ভয়েসমেইলে তার কণ্ঠ শুনেছে। বোনের চেয়ে পনেরো বছরের ছোট সে, দুর্বোধ্য কয়েকটা বিষয় নিয়ে গবেষণা করে-ফোটন, ন্যানোটেকনোলজি, আরও দুয়েকটা বিষয় যা ক্যামিলের কাছে অর্থহীন মনে হয়। 

“আর ভাইটাকে খুব একটা সভ্য মনে হলো না। তার কথা শুনে, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে নিজেকে বেশ ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।” 

হুট করেই ক্যামিলের মাথায় একটা চিন্তা আসলো : নাথান কীভাবে জানলো অ্যানি হাসপাতালে? 

ক্যামিলের সমস্ত ইন্দ্রিয় সতর্ক হয়ে উঠলো। প্রায় দৌড়ে ডেস্কের এপাশে চলে এলো। এই অবস্থা দেখে প্রশ্নের অপেক্ষা করলো না রিসেপশনিস্ট। 

“পূর্ণবয়স্ক একজন পুরুষ, তাকে…অশিক্ষিত আর খুবই অভদ্র মনে হলো। ‘ফরেস্টিয়ে…হ্যাঁ, শুরুতে একটা ফ, আপনি কীভাবে লিখবেন, দুইটা ফ দিয়ে? (লোকটার চাঁচাছোলা আর উদ্ধত কণ্ঠ নকল করলো রিসেপশনিস্ট।) ওর আসলে কী হয়েছে? ডাক্তার কী বলল? এসব কী বলছেন, তারা জানে না মানে?’ (রাগে ফেটে পড়া কণ্ঠের অভিনয় ভালোই দেখালো সে।)…” 

তার কথায় আঞ্চলিকার ছাপ ছিল? 

মাথা নাড়লো রিসেপশনিস্ট। চারপাশটা দেখে নিলো ক্যামিল। এর উত্তর সে ঠিকই পাবে, শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা। 

“বয়স কত হতে পারে?” 

“চল্লিশের কাছাকাছি হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় সে…” 

আর কিছুই কানে যাচ্ছে না ক্যামিলের। ইতোমধ্যে সে দৌড়ানো শুরু করেছে, কোনো বাঁধা মানছে না। নিজের সর্বোচ্চ গতিতে একের পর এক সিঁড়ি পার হচ্ছে। 

.

রাত ৮টা ১৫ 

আমার পায়ের আওয়াজ পেয়েই লোকটা উপরে চলে গেছে, মনে মনে তাই ভাবলো নার্স। তার বয়স বাইশের কাছাকাছি। বাইরে থেকে দেখতে বিরক্তিকর মনে হলেও তার ভেতরটা পুরোপুরি আলাদা। আদতে তার মন অত্যন্ত নরম আর সংবেদনশীল। সিঁড়ি বেয়ে কারো উপরে উঠার শব্দ শুনতে পেল সে। কিছু সময়ের জন্য লোকটা কোথায় গেল তা ভেবে দ্বিধায় পড়ে গেল সে। উপরে উঠে নিউরোসার্জিক্যাল ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে নিচে নেমে যেতে পারে, কিংবা অন্য কোথাও। 

তার কী করা উচিত ছিল? কী দেখেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়ায় হাসপাতালের অ্যালার্মও বাজাতে পারেনি। নার্সদের জন্য নির্ধারিত রুমের দিকে এগিয়ে গেল সে। পুরো বিষয়টাই কেমন হাস্যকর লাগছে। হাসপাতালে কেউ শটগান নিয়ে কেন আসবে? কিন্তু ওটা যদি বন্দুক না হয়, তাহলে কী ছিল? কোনো নকল পা? মাঝে মাঝে কিছু লোক অবশ্য বড় ধরনের গ্লাডিওলাস নিয়ে আসে, কিন্তু এখনো কী গ্লাডিওলাসের সময় হয়েছে? তার ভাষ্যমতে, ভুল রুমে চলে এসেছিল। 

তবুও তার মন থেকে সন্দেহ দূর হলো না। নার্সিং কলেজে পড়ার সময় চূড়ান্ত নৃশংসতার শিকার মহিলাদের উপর কোর্স করেছে সে। তাই পুরুষজাতি কতটা হিংস্র হতে পারে, তা ভালোমতোই জানা আছে তার। হাসপাতালে এসে স্ত্রীকে মারতেও দ্বিধা করে না তারা। তাই, ২২৪ নাম্বার রুমের দরজার দিকে নজর দিলো সে। ওই রুমের রোগি সবসময় কাঁদে, যখনই নার্স ঢোকে, দেখে সে কাঁদছে। ক্ষত বিক্ষত মুখে হাত বুলায়। কথা বলার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। দুইবার তাকে বাথরুমের আয়নার সামনে পেয়েছে নার্স, যদিও নিজ পায়ে দাঁড়াতে তার এখনো বেশ কষ্ট হয়। 

রুম থেকে বের হবার পরেও তার মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, কোটের নিচে ওটা কী ছিল? প্রথমে ঝাড়ুর হাতলের মত লাগছিল। কিন্তু যখনি কোটটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য সরে গিয়েছিল, তখনি ধাতব কিছু একটা চোখে পড়েছিল তার। শটগানের ব্যারেলের মত আর কী হতে পারে, তাই মনে করার চেষ্টা করলো সে। একটা ক্রাচ? 

তার মনে যখন চিন্তার ঝড় চলছে, এমনে সময়ে করিডোরের শেষ মাথায় পুলিশ অফিসারকে দেখা গেল। সারাটা বিকাল রোগির পাশেই কাটিয়েছে সে-পাঁচ ফুটেরও কম উচ্চতার লোকের মুখটা বেশ গম্ভীর। নার্সকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে ২২৪ নাম্বার রুমের দিকে ছুটে গেল সে। দেখে মনে হচ্ছে এখনই বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়বে। 

“অ্যানি, অ্যানি…” এই বলে সে চিৎকার করতে লাগলো। 

*** 

লোকটা কেন এমন করছে, তা নার্সের মাথায় ঢুকলো না। একজন পুলিশ অফিসারের এমন আচরণ মোটেও শোভনীয় নয়। তবে রোগির স্বামী হলে ভিন্ন কথা। হাত উঁচু করে লোকটাকে থামার ইশারা করলো সে, চিৎকার বন্ধ করুন। 

“তুমি ঠিক আছো?” বারবার একই প্রশ্ন করতে থাকে ওই পুলিশ অফিসার। “তুমি ঠিক আছো?” 

তার শান্ত করার চেষ্টা করলাম আমি। এদিকে আমার দিকে কেমন শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোগি। “আমি ভালো আছি…” 

“আপনি কাউকে দেখেছেন?” আমাকে প্রশ্ন করলো পুলিশ অফিসার। “কেউ কি এই রুমে এসেছিল? তাকে দেখেছেন আপনি?” 

তার কণ্ঠে উদ্বিগ্নতার সুর 

“কেউ কি এসেছিল এই রুমে?” 

হ্যাঁ, মানে আমি বলতে চাইছি, না… 

“একটা লোক ছিল…সে বলল ভুল করে এখানে এসেছে, দরজাটা খুলল…” 

আমার কথা শেষ করতে দিলো না পুলিশ অফিসার। রোগির দিকে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে রইলো সে। কিছুই বলল না রোগি, শুধু মাথা নাড়লো। তাকেও বেশ হতভম্ব মনে হচ্ছে। কাউকে দেখেনি সে। চাদরটা মুখের কাছাকাছি টেনে কাঁদতে শুরু করলো। এতো সব প্রশ্ন, তার ভয় আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এদিকে পুলিশ অফিসার পাগলের মত করছে। আমার কিছু বলা দরকার। 

“মঁসিয়ে, এটা যে হাসপাতাল তা মনে রাখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।” মাথা নাড়লো সে, কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার মাথায় অন্য কিছু চলছে। 

“তাছাড়া, রোগির সাথে দেখা করার সময় শেষ।” 

আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো সে। 

“লোকটা কোনদিকে গিয়েছে?” 

এক মুহূর্তের জন্য বিরতি নিলাম আমি। উত্তর দেবার আগেই, সে চিৎকার শুরু করলো। 

“যে লোকটাকে আপনি দেখেছেন, সে কোনদিকে গিয়েছে?” 

আমি এগিয়ে গিয়ে রোগির নাড়ি পরীক্ষা করলাম। এসব নিয়ে মাথা ঘামানো আমার কাজ না। রোগির দেখভাল করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। 

“লোকটা সিঁড়ি দিয়ে…” 

কথা শেষ করার আগেই, বন্দুকের গুলির মত ইমার্জেন্সি এক্সিটের দিকে ছুটে গেল সে। সিঁড়িতে তার পদশব্দ শুনতে পেলাম, তবে উপরে উঠছে না নিচে নামছে তা বলা সম্ভব না। 

কিন্তু শটগানটা… না কি পুরোটাই আমার কল্পনা? 

কংক্রিটের সিঁড়িতে ক্যাথেড্রালের মত প্রতিধ্বনি হচ্ছে। সিঁড়ির রেলিং ধরে তাড়াহুড়ো করে নামতে শুরু করলো ক্যামিল। কয়েক কদম নেমে দাঁড়িয়ে গেল সে। 

না। খুনির জায়গায় আমি হলে, উপরের দিকে যেতাম। মনে মনে তাই ভাবলো ক্যামিল। 

তাই দেরি না করে উল্টোদিকে ঘুরলো সে। তবে এভাবে দশ কদম এগুলেই আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। আর বিশ কদম হলে তো পুরোপুরি বিধ্বস্ত। বিশেষ করে ছোট পা নিয়ে ক্যামিলের জন্য তা আরো কষ্টকর । 

হাঁপাতে হাঁপাতে তৃতীয়তলায় পৌঁছালো ক্যামিল। এরপর লোকটা কোথায় যেতে পারে, তাই ভাবতে লাগলো। আরো উপরে যাবে? না-করিডোরের এই গোলকধাঁধায় যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দৌড়ে ওদিকে যাওয়ার সময় এক ডাক্তারের সাথে ধাক্কা খেলো ক্যামিল। 

“আরে, পাগল নাকি…? দেখে চলতে পারেন না? অন্ধ না কি?” 

মাঝবয়সি লোকটার পরনে সাদা অ্যাপ্রোন (আয়রনের ভাঁজ একদম স্পষ্ট), হাতদুটো পকেটে রেখে স্থির অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ক্যামিলের উন্মত্ত আচরণে বেশ ক্ষুব্ধ সে… 

“এদিক দিয়ে কাউকে যেতে দেখেছেন?” 

বড় করে শ্বাস নিলো ডাক্তার, কোনো উত্তর না দিয়ে রাগান্বিত ভঙ্গিতে হাঁটতে শুরু করলো। 

“বয়রা না কি তুই?” চিৎকার করে বলল ক্যামিল। “কাউকে যেতে দেখেছিস কি না?” 

“না…মানে… 

এইটুকুই যথেষ্ট ক্যামিলের জন্য। যাওয়ার সময় দরজার হাতল এমনভাবে টানলো, যেন তা খুলেই ফেলবে। করিডোরে পাগলের মত দৌড়াতে থাকলো ক্যামিল। একবার ডানে যায় তো আরেকবার বামে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। একটু দম নিয়ে আবারো দৌড় শুরুর আগেই থেেেম গেল সে। হুট করে তার মনে হলো, ভুল পথে এগুচ্ছে সে। মনে একবার এমন সন্দেহ ঢুকলে, আপনার গতি এমনিতেই কমে যাবে। এমনকি দৌড়ানোর শক্তিটুকুও পাবেন না। করিডোরের শেষ মাথায় এসে ডানে মোড় নিতেই ইলেকট্রিকাল কাপবোর্ডের সাথে ধাক্কা খেলো সে। 

কাপবোর্ডের দরজায় গায়ে নানা ধরনের চিহ্ন আঁকা, যার মূলকথা হলো ‘বিপজ্জনক’। 

পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। 

*** 

এই কাজের আসল সৌন্দর্যই হলো, লোকচক্ষুর অন্তরালে আসা যাওয়া করা। 

এটা মোটেও সহজ কিছু না, এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, কঠোর মনোযোগ, শকুনের মত নজর আর ঠাণ্ডা মাথা। একজনের মাঝে এতোসব গুণের সমাহার সচরাচর দেখা যায় না। অনেকটা ডাকাতির মত; একবার নিয়ন্ত্রণ হারালে সব শেষ। আপনি অহিংস মনোভাব নিয়েই কাজে নামলেন, কিন্তু যেই না কেউ প্রতিরোধ করে তখনি যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত। কিছুক্ষণের মাঝেই আপনার হাতে থাকা অস্ত্র গর্জে ওঠে। শুরু হয় রক্তের হোলি খেলা। অথচ নিজের উপর আরেকটু নিয়ন্ত্রণ থাকলেই সব এড়ানো সম্ভব। 

এবার, পালানোর সহজ সুযোগ ছিল আমার সামনে। হুট করে সিঁড়িতে উদয় হওয়া এক ডাক্তার ছাড়া কারো সাথে দেখা হয়নি। তবে তাকেও ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়েছি। 

নিচতলায় নেমেই দ্রুতগতিতে হাঁটতে শুরু করলাম। সাধারণত হাসপাতালে সবারই তাড়াহুড়ো থাকে, কিন্তু কেউই দৌড়ায় না। দ্রুত হাঁটলে কারো না কারো চোখে পড়তে হয়। তবে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই, কাঙ্ক্ষিত জায়গায় চলে এসেছি আমি। তাছাড়া আমাকে দেখলেই বা তারা কী করতে পারতো? 

আমার ডানপাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। এখানকার ঠাণ্ডা বাতাস বেশ ভালো লাগছে। মসবার্গটা এখনো জায়গামতোই আছে। শুধু শুধু অন্যান্য লোকজনকে ভয় দেখানোর কোনো মানেই হয় না। এখানে সবকিছুই শান্ত। তবে আমার ধারণা উপরের পরিস্থিতি ঠিক বিপরীত। ওই শালা বামন পুলিশটা বোধহয় এখনো শিকারি কুকুরের মত আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর নার্স কী দেখেছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত না। হয়তো সে অন্যান্য নার্সের সাথে আলাপ আলোচনা করবে। বন্দুক? মজা করছো আমাদের সাথে? তুমি নিশ্চিত তো ওটা কোনো মিসাইল ছিল না? হয়তো বাকিরা এভাবেই নার্সের কথা উড়িয়ে দেবে। কাজের সময় আজেবাজে জিনিস পান করা নিষেধ, তুমি জানো না! তুমি আবারও গাঁজা ধরেছো, তাই না? এরকম না না ধরনের তিরস্কারের শিকার হবে সে। তবে সবার মাঝে একজন বলবে : যে যাই বলুক, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কারো সাথে কথা বলা দরকার তোমার… 

কিন্তু, ততোক্ষণে গাড়িতে করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাবো আমি। তিন মিনিট পরে, রাস্তায় উঠে ডানে মোড় নিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালে থামলাম। 

এখানেই হয়তো কাঙ্ক্ষিত সুযোগ পাবো। 

আর এখানে না হলেও আশেপাশে কোথাও।

এখন, শুধু একটু ধৈর্য্যের প্রয়োজন… 

*** 

পরাজিত বোধ করছে ক্যামিল, তবুও দৌড়ানো বন্ধ করলো না। লিফটে উঠে বুক ভরে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করলো সে। ভেতরে অন্য কেউ না থাকলে এতোক্ষণে লিফটের দেয়ালে গিয়ে ধাক্কা খেতো, তার পরিবর্তে বড় করে বেশ কয়েকবার শ্বাস নিলো সে। রিসেপশনের কাছাকাছি পৌঁছে, ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করলো। ডাক্তার আর নার্সে গিজগিজ করছে ক্যাজুয়ালটি বিভাগ। মানুষের আনাগোনা তো আছেই। ডানদিকের করিডোর ধরে এগুলেই ইমার্জেন্সি এক্সিট আর বামে গাড়ি পার্কিং। 

কারো নজর এড়িয়ে হাসপাতাল থেকে বের হবার কমপক্ষে ছয়টা রাস্তা আছে। 

নিয়মানুযায়ী এখন সাক্ষীদের জেরা করে তাদের বিবৃতি নিতে হবে। কিন্তু এই কাজ কে করবে? বিবৃতিই বা কে দেবে? যতক্ষণে তার টিম এসে পৌঁছাবে, ততোক্ষণে এখানকার বেশিরভাগ মানুষই চলে যাবে। 

নিজেকে লাথি মারতে ইচ্ছা করছে ক্যামিলের। 

দোতলায় উঠে নার্স স্টেশনের দিকে এগিয়ে গেল ক্যামিল। ফ্লোরেন্স, মেয়েটার ঠোঁটে দেখে মনে হয় মৌমাছি হুল ফুটিয়েছে। মাথা ঝুঁকে রোগির ফাইল দেখছে। পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়েছে সে। তাই মুখ না তুলেই জবাব দিলো যাকে খুঁজছেন সে এখানে নেই। কিন্তু ক্যামিল নাছোড়বান্দা। 

“এই ওয়ার্ডে আজকে সবারই কাজের চাপ বেশি,” বলল সে। 

“তার মানে, বেশিদূর যায়নি ওই নার্স…” 

মেয়েটা কিছু বলার আগেই গায়েব হয়ে গেল ক্যামিল। করিডোরের হেঁটে হেঁটে প্রত্যেকটা দরজায় উঁকি দিয়ে দেখলো। তার এখন এমন অবস্থা যে নারীদের টয়লেটে খুঁজতেও দ্বিধা করবে না। ওই নার্সকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারবে না। 

নার্সকে দেখে বেশ বিরক্ত মনে হচ্ছে। মনে মনে তার স্কেচ করলো ক্যামিল। দেখে খুব ভীত মনে হলেও আদতে সে কর্মতৎপর আর বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন-কেবলই তার প্রতিক্রিয়া দেখে তাই মনে হলো ক্যামিলের। ডাকা সত্ত্বেও হাঁটা থামালো না নার্স। তাই, তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বাধ্য হলো ক্যামিল। ।

“লোকটা ভুল করে এসেছিল। এটা তো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছে।” 

“লোকটার কণ্ঠ শুনেছিলেন?” 

“শুধু সরি বলতে শুনেছি, আর কিছু না।” 

“আরেকটু মনোযোগ দিয়ে ভাবুন…” দৃঢ় কণ্ঠে বলল ক্যামিল। 

এই ফাঁকে নার্সের নাম জেনে নিলো, সিনথিয়া। তার বাবা মা প্রচুর নাটক দেখেছে এতো কোনো সন্দেহ নেই। 

“যা দেখেছেন কিংবা শুনেছেন পুরোটা বলুন আমাকে, ‘সিনথিয়া’। একদম কিছুই বাদ দেবেন না…” 

যা যা দেখেছে সবটাই বলল সে। 

.

রাত ৯ টা ৩০ 

“যত দ্রুত সম্ভব আমি আসছি…” 

হাসপাতালের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধানকে খুব একটা সন্তুষ্ট মনে হলো 

না। এমন সময়ে বাসায় বসে আরাম করে খেলা দেখার কথা তার, সেখানে ইউনিফর্ম পরে কাজে যেতে হচ্ছে। সাবেক এই পুলিশ সদস্যের বিশাল বড় পেট, ঘাড় একরকম নেই বললেই চলে। তার এমন আকৃতির পেছনে মূল অবদান গরুর মাংস আর রেড ওয়াইনের। সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর জন্য তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরিত ওয়ারেন্ট লাগবে। তাও আবার এক কপি না, তিন কপি। 

“ফোনে না বললেন, আপনার কাছে ওয়ারেন্ট আছে…”

“না,” জোর কণ্ঠে জানালো ক্যামিল, “আমি বলেছিলাম, ব্যবস্থা করছি।” 

“ওহ, আমি অবশ্য অন্য কিছু ভেবেছিলাম 

এমনিতে আপোসের পথই বেছে নেয় ক্যামিল। তবে এখন এইসবের সময় নেই। 

“তো, আপনি কী ভেবেছিলেন?” উচ্চ স্বরে বলল সে। 

“জানি না…ভেবেছিলাম আপনার কাছে ওয়া…”

“না,” তাকে থামিয়ে দিলো ক্যামিল, “আমি ওয়ারেন্টের কথা বলছি না। আপনি কি জানেন, একটা লোক শটগান নিয়ে হাসপাতালে ঢুকেছিল? এমনকি সে দোতলায় এক রোগিকে খুন করার জন্য গিয়েছিল, যে রোগিকে রক্ষার দায়িত্ব আপনার? আর এত সহজে যদি কেউ ঢুকতে পারে, তাহলে গুলিও চালাতে পারবে, তাই না? আশা করি, এটাও জানেন যে যদি সে আবার এসে কাউকে হত্যা করে, তাহলে কোথায় জায়গা হবে আপনার?” 

ক্যামেরায় শুধু হাসপাতালের সামনের দরজার ফুটেজ দেখা যাচ্ছে। আর এদিক দিয়ে ওই লোকের আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যে শটগান নিয়ে আসার সাহস করবে, সে আর যাই হোক বোকা না। আর যতক্ষণ সে হাসপাতালে ছিল, সেই সময়ের ফুটেজেও কিছু পাওয়া গেল না। বেশ কয়েকবার গভীর মনোযোগে ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলো ক্যামিল। 

রুম থেকে বের হলো সে। কিছুক্ষণ পর আবার ঢুকলো। কোনো কথা না বলে ফুটেজের ডি.ভি.ডি নিয়ে বেরিয়ে গেল। 

“আমাকে কি ঘাস খাওয়া মানুষ মনে হয় না কি?” চিৎকার করে উঠলো নিরাপত্তা প্রধান। “ওয়ারেন্ট কই?” 

মাথা নাড়লো ক্যামিল। যেন বলতে চাইছে, এ ব্যাপারে পরে কথা হবে। 

গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় সতর্ক দৃষ্টি দিলো ক্যামিল। সে ভাবলো, যদি আমি হতাম তাহলে ঘুরে গিয়ে ইমার্জেন্সি এক্সিট দিয়ে ঢুকতাম। ওই জায়গাটা ভালোমতো পরীক্ষা করলো সে। কিন্তু জোর করে ঢোকার কোনো নমুনা পাওয়া গেল না। 

তখন তার মাথায় একটা প্রশ্ন আসলো। যখন রিসেপশনিস্ট সিগারেট ফুঁকতে বের হয়, তখন তার জায়গায় কে থাকে? 

রিসেপশন ডেস্কের দিকে হাঁটা শুরু করলো ক্যামিল। একদম শেষ মাথায় সরু এক রাস্তা তার চোখে পড়লো। ডেস্কের পেছন দিয়ে ওই রাস্তা সরাসরি ইমার্জেন্সি এক্সিটের দিকে চলে গেছে। 

হলুদ দাঁত বের করে হাসি দিলো অপেলিয়া। 

“দেখুন, এখানে মাতৃত্বকালীন ছুটিই দিতে চায় না। তাই সিগারেটের জন্য বিরতি আশা করাটা তো বোকামি!” 

লোকটা কি এখানে এসেছিল? 

গাড়ির দিকে যাওয়ার সময় ভয়েসমেইল চালু করলো ক্যামিল ।

“কমিশনার মিচার্ড। (তার কথায় রাগের সুর স্পষ্ট।) “যত রাতই হোক না কেন, আমাকে ফোন করবে। বর্তমানে কেসের কী অবস্থা তা জানা দরকার। কালকে সকালের মাঝে আমার টেবিলে রিপোর্ট চাই, ঠিক আছে?” 

খুব একা একা লাগছে ক্যামিলের। একাকীত্ব তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। 

.

রাত ১১টা 

হাসপাতালের রাত অন্য সবকিছুর থেকে আলাদা। নিরবতা এখানে নির্বাসিত। করিডোর জুড়ে স্ট্রেচার আর ট্রলির শব্দ। দূর থেকে ভেসে আসে কান্নার করুণ সুর আর নিরন্তর পদধ্বনি। 

একটানা ঘুমাতে পারছে না অ্যানি। বারবার একই দুঃস্বপ্ন, তাকে তাড়া করে বেরায়। কালো কাপড়ে ঢাকা একটা মুখ শটগান হাতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। শটগানটা তার মুখ বরাবর তাক করা। এই দৃশ্য দেখে বিকট চিৎকারে তার ঘুম ভাঙ্গে। কিছুক্ষণ একা একাই কাঁদে। এই দুঃস্বপ্ন থেকে তার মুক্তি কোথায়। 

ওই লোক তাকে হত্যা করতে চায়। 

সে আবার আসবে। অ্যানির রক্তে হাত না রাঙিয়ে থামবে না সে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *