নৌকা
আমি আগেই বলেছি রামেশ্বরাম মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। রামেশ্বরামের এই দ্বীপেই আমি বেড়ে উঠি। আর যেহেতু সমুদ্রের খুব কাছাকাছি বড় হয়েছি, তাই সমুদ্র আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ছিল। তাই আমার শৈশব স্মৃতির একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে, সমুদ্রের স্রোত, ঢেউ আছড়ে পড়ার ধ্বনি, পাম্বান ব্রিজের ওপর দিয়ে রেলগাড়ির ছুটে চলার শব্দ, পাখিদের পুরো শহর জুড়ে উড়ে বেড়ানো এবং সমুদ্রের সেই লবণ পানি যা বাতাসে এক অপূর্ব মহিমা ছড়িয়ে দিয়েছে।
সমুদ্রের সাথে কেবল আমাদের সম্পর্ক এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না, সমুদ্র ছিল আমাদের জীবিকার উৎস। প্রায় প্রতিটি পরিবারই কোনো না কোনোভাবে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। কেউ জেলে হয়ে আবার কেউ নৌকার মালিক হয়ে। আমার বাবাও একটা ফেরি চালাতেন। সেই ফেরি রামেশ্বরাম থেকে ধনুশকরিত পর্যন্ত চলত এবং লোকজন আনা নেওয়ার কাজ করত। ধনুশকরি রামেশ্বরাম থেকে প্রায় ২২ কিলমিটার দূরে।
আমার এখনও মনে আছে বাবা কিভাবে এই ফেরি পারাপারের বুদ্ধি বের করলেন এবং কিভাবে নৌকা তৈরি করলেন। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই রামেশ্বরাম ধর্মীয় দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। হিন্দু ধর্মালম্বীরা বিশ্বাস করেন যে, রাম সীতাকে উদ্ধারের সময় এই এলাকায় এসেছিলেন এবং লঙ্কায় যাওয়ার সেতু তৈরি করেছিলেন।
রামেশ্বরামের মন্দির মূলত শিবের উপাসনার জন্য তৈরি করা হয়। এই মন্দিরে যে শিবলিঙ্গ আছে তা সীতার তৈরি বলে ধারণা করা হয়। রামায়ণের কিছু কিছু সংস্করণে উল্লেখ আছে যে, রাম এবং সীতা লঙ্কা থেকে আযোধ্যায় যাত্রাকালে এখানে থেমেছিলেন এবং শিবের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। যারা আমাদের শহরে, মানে রামেশ্বরামে তীর্থযাত্রায় আসত তারা ধনুশকরিতে অবশ্যই যেত। কারণ ধনুশকরিতে ভ্রমণ তীর্থযাত্রার একটা বিশেষ অংশ। সাগর সঙ্গমে স্নান করা একটা পবিত্র প্রথা বলে বিবেচিত। ভারতসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলকে সঙ্গম বলা হয়। ধনুশকরিতে যাওয়ার জন্য এখন রাস্তা নির্মিত হয়েছে এবং রামেশ্বরামের সাথে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই পূণ্যারথিরা এখন ভ্যানে করেই ধনুশকরি যেতে পারে। তবে যখন আমি ছোট ছিলাম তখন ধনুশকরি যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম ছিল এই ফেরি।
আমার বাবা তার স্বল্পআয়ের পাশাপাশি বাড়তি কিছু আয়ের জন্য এই ফেরি ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। বাবা নৌকা তৈরির কাজ শুরু করলেন। এই নৌকা আমাদের ব্যবসায়ের জন্য তৈরি করা হবে। আমি বিস্ময় নিয়ে দেখতে থাকলাম কিভাবে কয়েক টুকরা কাঠ এবং ধাতু নৌকার আকৃতি পেল। আমার মনে হচ্ছিল এই নৌকা যেন জীবন পেয়েছে। এই নৌকা তৈরি স্বচক্ষে দেখার মাধ্যমেই ইঞ্জিনিয়ারিং জগতের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। আমার বাবাকে সাহায্য করার জন্য তার এক ভাই এলেন। তিনি বাবার আপন ভাই নয়। বাবার চাচাত বা মামাত ভাই হবে। তার নাম আহমেদ জালালউদ্দীন।
বাবা যেখানে নৌকা তৈরি করছিলেন সেই জায়গায় যাওয়ার জন্য আমি প্রতিদিন অধীর অপেক্ষায় থাকতাম। প্রথমে লম্বা কাঠের টুকরোগুলোকে প্রয়োজনীয় মাপ অনুযায়ী কেটে নিয়ে শুকিয়ে নেওয়া হলো। এরপর সেগুলো আরও মসৃণ করে জোড়া দেওয়া হলো। কাঠের আগুনেই কাঠ সিজনিং করা হয়। সিজনিং হলো কাঠের ভেতরের রাসায়নিক পদার্থ শুকিয়ে ফেলার একটা প্রক্রিয়া, যাতে কাঠ পচে না যায়। আর এই সিজনিং করা কাঠ দিয়ে তৈরি হয় নৌকার হাল এবং বাল্কহেডস। ধীরে ধীরে নৌকার তল তৈরি হয়ে গেল। এরপর নৌকার দুই পাশের কাজ সম্পন্ন করা হলো। এরপর তৈরি করা হলো নৌকার হাল। আর এই পুরো প্রক্রিয়া আমি নিজ চোখে দেখেছি।
.
এর বহু বছর পরে, নিজের কাজ করতে গিয়ে, আমি রকেট এবং মিসাইল তৈরি করতে শিখি। রকেট এবং মিসাইলের ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পেছনে রয়েছে জটিল সব গাণিতিক সমীকরণ। এই সকল সমীকরণ অনেকের কাছেই এক ধরনের বিস্ময়। তবে যে নৌকা দিয়ে পূণ্যারথীদের ফেরি পার করানো হতো, তার তৈরির কৌশল এখনও আমাকে সমান বিস্মিত করে। কত সহজভাবেই না তৈরি হয়ে যায় একটি নৌকা। তবে এর পেছনের প্রক্রিয়া সত্যিই বিস্ময়কর। তবে এমন কেউ নেই যে বলবে না-এই সাধারণ নৌকা তখন আমাদের জীবনের কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয় অংশ ছিল না।
তবে এই নৌকা তৈরি আরেকভাবে আমার ওপর প্রভাব ফেলে। আর এই প্রভাব দ্বারা আমি দারুণভাবে উপকৃত হই। এই নৌকা তৈরি করতে গিয়েই জালালউদ্দীনের সাথে আমার পরিচয় হয়। সে বয়সে আমার থেকে অনেক বড়। তারপরও আমাদের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কোনো জিনিস শেখার জন্য আমার অদম্য আগ্রহ এবং না বুঝতে পারলে প্রশ্ন করার অভ্যাস, জালালউদ্দীন ধরতে পারেন। এবং তিনি সবসময় ধৈর্য্য সহকারে আমার কথা শুনতেন। আমার প্রশ্নের জবাব দিতেন এবং প্রয়োজনে দিকনির্দেশনাও দিতেন।
জালালউদ্দীন ইংরেজি লিখতে ও পড়তে পারতেন। তিনি আমার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি বিজ্ঞানী, আবিষ্কার, সাহিত্য, চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে কথা বলতেন। রামেশ্বরামের রাস্তায় বা সমুদ্রের তীরে বা নৌকায় আমাদের মধ্যে এইসব বিষয় নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা চলত। তার সাথে কথাবার্তা বা আলোচনা করতে করতেই আমার মাঝে নতুন সব চিন্তা, এবং আকাঙক্ষার উদ্ভব ঘটে।
বাবার ফেরি ব্যবসা সফল হয়। আমার বাবা নৌকা চালানোর জন্য কয়েকজনকে কাজে রাখলেন। পূণ্যারথিরা আমাদের নৌকা ব্যবহার করেই ধনুশকরি যেত। অনেকবার আমি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ভিড়ের মাঝে নৌকায় উঠে পড়ি। নৌকা ছাড়লে আমি ভিড় থেকে সরে গিয়ে মাঝিদের পাশে বসে সমুদ্রযাত্রা উপভোগ করতাম নৌকা রামেশ্বরাম থেকে ধনুশকরি গিয়ে পৌছাত। আবার নতুন যাত্রী নিয়ে রামেশ্বরামে ফিরে আসত।
আমি রামের গল্পটা শুনেছি। রাম কিভাবে তার বানর সেনাদের নিয়ে লঙ্কায় যাওয়ার সেতু তৈরি করেছিলেন সেই গল্প। গল্পটা অনেকটা এরকম-রাম রাবনের রাজ্য লঙ্কা থেকে হরণকৃত সীতাকে উদ্ধার যাত্রায় রামেশ্বরামে থামে। সেখানে তার বানর সেনার সহযোগিতায় একটি সেতু নির্মাণ করে। সীতাকে উদ্ধার করে ফেরার পথে রাম এবং সীতা আবার রামেশ্বরামে থামে। থামার কারণ হলো-রাবনকে হত্যা করতে সক্ষম হওয়ার জন্য শিবকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন। তাই শিবের উপাসনা করার জন্য রাম হনুমানকে সুদূর উত্তর থেকে শিব লিঙ্গ নিয়ে আসার নির্দেশ প্রদান করে। তবে হনুমান দেরি করে ফেলে। আর হনুমানের দেরি দেখে সীতা নিজ হাতে শিবলিঙ্গ তৈরি করে এর স্থাপনা করে। শিবলিঙ্গ স্থাপনা শেষে তারা সেই লিঙ্গের পুজা করে শিবকে ধন্যবাদ জানায়।
এই গল্প এবং এরকম আরও অনেক গল্পই লোকমুখে শোনা যেত। পুরো ভারতজুড়ে লোকজন তীর্থযাত্রায় আসত। আর এই অঞ্চলে তীর্থযাত্রায় আসলে আমাদের ফেরি সার্ভিসই ব্যবহার করতে হতো। তাই এই সকল পূণ্যারথিদের মুখে একই গল্প ভিন্নভাবে শোনা যেত। এত লোকজনের মাঝে একটা ছোট বাচ্চা খুব সহজেই মিশে যেতে পারে। আর এই বিপুল সংখ্যক লোকের মাঝে কেউ না কেউ ঠিকই থাকত যে, আমার সাথে স্বেচ্ছায় কথা বলত। তারা খুব সরল মনেই নিজেদের জীবনের গল্প এবং তীর্থযাত্রায় আসার উদ্দেশ্য নিয়ে আমার সাথে কথা বলত।
এভাবেই বছর পার হয়ে গেল। আমি স্কুল, আমার শিক্ষকবৃন্দ এবং আহমেদ জালালউদ্দীনের কাছ থেকে অনেক শিক্ষা পেলাম। আর আমার এই শিক্ষার পেছনে সেই নৌকা এবং এর যাত্রীদের অবদানও অস্বীকার করতে পারব না। এভাবেই সমুদ্রের ঢেউ, সৈকতের সাদা বালি, হাসি-কান্না এবং গল্পের মাঝেই আমার দিন কেটে যাচ্ছিল।
একদিন হঠাৎ করেই, দেখা দিল বিপর্যয়। বঙ্গপসাগরে ক্রমাগত সাইক্লোন আঘাত হেনে যাচ্ছিল। সাইক্লোনের আঘাতের জন্য, নভেম্বর এবং মে মাস খুবই বিপজ্জনক। যে রাতে সাইক্লোন আঘাত হেনেছিল, সেই রাতের কথা আমি এখনও আবছাভাবে মনে করতে পারি। বেশ কয়েকদিন ধরেই ঝড়ো
বাতাস বইছিল। আর সেই রাতে বাতাস ভয়ংকর গর্জন শুরু করল। বাতাসের তীক্ষ্ম শব্দে আমাদের কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম। বাতাসের ভয়াল তাণ্ডবে গাছগাছালি ভেঙে একাকার অবস্থা। সেই ভয়াল তাণ্ডব পথে যা পেয়েছে তাই চুরমার করে দিয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। আমরা অনেক আগেই আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। তখনকার দিনে আমাদের ওদিকে বিদ্যুৎ ছিল না। আর প্রচণ্ড বাতাসের কারণে প্রদীপেরও প্রায় নিভু নিভু অবস্থা। সেই মৃদু আলোতে অন্ধকার দূর হওয়ার বদলে আরও জেঁকে বসেছিল। এদিকে বাইরে তীব্র বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আর বৃষ্টির ধারালো শব্দে তখন কান পাতা দায়। আমরা ঘরের ভিতর জড়ো হয়ে বসে, ভোরের অপেক্ষা করছিলাম। তবে আমার মনে তখন দুটো প্রশ্নই বারবার ঘুরে-ফিরে আসছিল। কেউ কি এই ভয়াবহ ঝড়ে সমুদ্রে আটকা পড়ল? আর এই ধরনের ভয়াবহ ঝড়ের কবলে মায়ের অনুপস্থিতি কেমন লাগবে?
সকাল নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলো। আমরা চোখে অবিশ্বাস নিয়ে ঝড়ের তাণ্ডবলীলার প্রমাণ দেখলাম। সবকিছু একাকার হয়ে গেছে। গাছপালা, বাড়িঘর, এবং ফসলাদি উপড়ে পরে আছে। যে জায়গায় আগের দিন পর্যন্ত রাস্তা ছিল, সেখানে এখন অথৈ পানি ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। সম্পূর্ণ রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে যে বাতাস বইছিল তা বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ এনে ফেলেছে সৈকতে।
তবে আমরা যে খবরটা শুনে প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম তা হলো-আমাদের নৌকা পানিতে ভেসে গেছে। বর্তমানে আমার সেই দিনটির কথা মনে পড়লে আমি বুঝতে পারি যে, আমার বাবা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে এমনটা হবে। যদিও বাবা ছাড়া আমরা কেউই বুঝতে পারিনি যে, আমাদের নৌকা ভেসে যেতে পারে। আমরা কেবল ঝড় কেটে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।
বাবা তার জীবনকালে অসংখ্য ঝড় এবং সাইক্লোন দেখেছেন। এই সাইক্লোনও তার মধ্যে একটা ছিল। তারপরও বাবা তখন আমাদের, বিশেষ করে ছোটদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন এবং আমাদেরকে কোনো দুশ্চিন্তা করতে না দিয়েই ঘুমাতে পাঠান
তবে সকালের আলোতে, বাবার মুখ শুকনো লাগছিল। বাবার চোখের নিচে বসে যাওয়া দাগই বলে দিচ্ছিল যে, বাবা চিন্তায় আছেন। বাবাকে এমনভাবে দেখে আমি শক্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম যে আমাদের ফেরি করার নৌকাটা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। আমার এক ধরনের অনুভুতি হচ্ছিল। অনুভূতিটা এরকম যে-আমি নিজে হাতে কিছু তৈরি করলাম যা কোনো কথাবার্তা ছাড়াই ফেলে দেওয়া হলো। তবে আমার বাবার স্থিরতার কারণে আমরা সেই দুরাবস্থাও কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম।
কিছু সময়ের মধ্যেই অন্য একটা নৌকা তৈরি করা হলো। ব্যবসাও পুনরায় শুরু হলো। পূণ্যারথি এবং পর্যটকরাও আবার দল বেঁধে আসা শুরু করল। মন্দির এবং মসজিদে উপাসকদের ভিড়ে ভরে গেল। আর বাজার এলাকা আবার নারী-পুরুষের কোলাহলে মুখর হয়ে উঠল। আবার বেচাকেনা শুরু হলো।
এরপর বহুবার ঝড় বয়ে গেছে। তবে এরপর থেকে ঝড় আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমি তখন ঝড়ের মধ্যেও শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম। তারও অনেক পরে, ১৯৬৪ সালে বিরাট এক সাইক্লোন আঘাত হানল। তখন আর আমি রামেশ্বরামে নেই। সেই সাইক্লোনে ধনুশকরির ভূখণ্ডের বড় একটা অংশ সাগরে বিলীন হয়ে যায়। পাম্বান ব্রিজে একটা ট্রেন যাত্রারত ছিল। সেই ট্রেনও বহু পূণ্যারথি নিয়ে পানিতে ভেসে যায়।
.
১৯৬৪ সালের সেই সাইক্লোনে সেই অঞ্চলের বড়সড় একটা ভৌগোলিক পরিবর্তন ঘটে। তারপর থেকেই, ধনুশকরি একটি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হয়। সে তার পূর্বের রূপ আর ফিরে পায়নি।
আজ পর্যন্ত সেই শহরের স্থাপনাগুলো ১৯৬৪ এর সাইক্লোনের নিরব সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সেই সাইক্লোনেও বাবা তার ফেরি করার নৌকা হারায়। বাবাকে আবার নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে হয়। আমি তখন অনেক দূরে ছিলাম। তাই বাবাকে খুব একটা সাহায্য করতে পারিনি। তবে আমি যখন Satellite Launch Vehicle (SLV) যা পৃথ্বী নামে পরিচিত এবং অগ্নি মিসাইলের কাজ করছিলাম তখন আমাদের কাউন্টডাউন এবং টেকঅফের কাজে বাঁধা আসল। কারণে আমাদের রকেট নিক্ষেপণ কেন্দ্র যা বঙ্গোপসাগরের ঠুম্বা এবং চান্দিপুরে অবস্থিত, সেখানে ভারী বর্ষণ হচ্ছিল। তখন আমার মনে পড়ছিল বাবার কথা। ঝড়ের পরে বাবার চেহারা যেরকম থাকে, সেই চেহারা ভেসে বেরাচ্ছিল আমার কল্পনায়।
এটা এক ধরনের প্রদর্শন। আর প্রকৃতি হলো এই প্রদর্শনের প্রদর্শক। এই প্রদর্শন দ্বারা প্রকৃতি মূলত তার ক্ষমতা প্রদর্শন করে। প্রকৃতি দেখিয়ে দেয় যে, সে কিভাবে মুহূর্তের মধ্যে আমাদের সকল আশা, স্বপ্ন সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে। আর প্রকৃতির এই ক্ষমতার মাঝে টিকে থাকতে পারার একমাত্র উপায় হলো সমস্যা থেকে দূরে পালিয়ে না গিয়ে এর মুখমুখি হওয়া এবং নিজের জীবনকে পুনর্গঠন করা।