চার নম্বর

চার নম্বর

বারাসতের রাখি পালের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই বালিগঞ্জ নিবাসী, রিটায়ার্ড সরকারি অফিসার পরেশ সান্যালের৷ কিন্তু তবু ওর খবর শুনতেই হবে তাঁকে! তিনি শুনতে না চাইলেও প্রায় কান ধরে টেনে শোনাবে চ্যানেলওয়ালারা! বারবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবে সেই কিশোরীর নিষ্পাপ মুখ! পালাবার পথ নেই!

টিভিতে প্রতিটা চ্যানেলে তখনও সেই একই সংবাদ চলছে! সংবাদপাঠিকা নীল ব্লেজার পরে, লাল রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে ন্যাকা ন্যাকা কণ্ঠে সেই একই শব্দগুলো বারবার বলে চলেছেন৷ এ ভাষণের আপাতত কোনও বিরাম নেই৷ যতদিন না ব্র্যান্ড নিউ, আরও গরম কোনও খবর না আসছে, ততদিন এই ধারাবাহিক বিবরণী চলবে৷ রাখি পাল নামক এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর ওপরে তিন মদ্যপ, কামার্ত জানোয়ারের নৃশংস অত্যাচার! গ্যাং রেপ ও মার্ডার কেস! দুজন অভিযুক্ত ধরা পড়লেও তিন নম্বর এখনও ফেরার৷ পুলিশ সবেগে তার জন্য অনুসন্ধান চালাচ্ছে৷

‘আপনার কী মনে হয় দিদি?’ সংবাদপাঠিকা এবার ফোনে ধরেছেন এক বিখ্যাত সমাজসেবিকাকে৷ লাল ঠোঁট বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে চুইংগাম চিবোনোর মতো চিবিয়ে চিবিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘রাজ্যে এভাবে একের পর এক নৃশংস ধর্ষণের ঘটনার কারণ কী?’

সমাজসেবিকা কিছু বলার আগেই পরেশবাবু অস্ফুটে বললেন, ‘সানি লিওন৷’

পিছন থেকে মেয়ে মিঠির তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর ভেসে আসে৷ কণ্ঠস্বরে প্রতিবাদের সুর স্পষ্ট, ‘মেয়েটা স্কুল ইউনিফর্ম পরে ছিল বাবা৷’

পরেশবাবু বুঝলেন তাঁর মন্তব্যটা মিঠির কানে গিয়েছে৷ তিনি দুম করে সঙ্গে সঙ্গেই টিভি অফ করে দেন৷ রেপ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন, এখনও তিনি অত আধুনিক হয়ে উঠতে পারেননি৷ বরং বাড়াবাড়ি রকমের রক্ষণশীল! মেয়ের যাতে চোখে না পড়ে সে জন্য খবরের কাগজ এলেই কাঁচি দিয়ে সটাসট কেটে দেন পৌরুষবর্ধক ক্যাপসুল বা বক্ষসৌন্দর্যবর্ধক তেলের বিজ্ঞাপনগুলো৷ টিভিতে অন্তর্বাস বা কন্ডোমের বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করলেই চ্যানেল পালটে দেন৷ সন্ধে ছ’টার পরে মিঠির বাইরে থাকা বারণ৷ বন্ধুদের সঙ্গে ফিল্ম কিংবা বন্ধুর বাড়ির আড্ডা তো নৈব নৈব চ! কলেজ এবং বাড়ির বাইরে মিঠি একমুহূর্তও কোথাও কাটায় তা পরেশবাবুর পছন্দ নয়!

সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই মেয়ের কথার কোনও উত্তর না দিয়ে তিনি আড়চোখে তার দিকে তাকালেন৷ ড্রেস কোড ঠিক আছে তো? মিঠি স্কুল ছেড়ে কলেজে পদার্পণ করলেও কখনও কাজল, লাইনার, মাস্কারা বা লিপস্টিক ব্যবহার করে না! ওর অন্যান্য বান্ধবীদের মতো মিঠিরও যে সাজতে ইচ্ছে করে না তা নয়৷ কিন্তু বাড়িতে বাবার বিশেষ বারণ আছে৷ কলেজে কি মানুষ পড়তে যায় না স্টাইল দেখাতে যায়? ‘ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ’! শারীরিক সৌন্দর্যচেতনা সেই তপস্যার পথে মূর্তিমান ব্যাঘাত৷ এসব ব্যাপারে মাথা গলালে ছেলে-মেয়ে গোল্লায় যায়! এ বিষয়ে পরেশবাবু অত্যন্ত সতর্ক৷

‘ওড়নাটা কাঁধে ফেলে নিয়েছিস কেন?’ তিনি মেয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, ‘ঠিক করে নে৷’

মিঠি ওড়না দিয়ে বুক ঢাকল৷ ইচ্ছে করছিল, খানিকটা মাথায় টেনে, ঘোমটা দিয়ে নেয়৷ কিন্তু বাবার সামনে বেশি বাড়াবাড়ি করার সাহস তার নেই৷ সুতরাং ওড়না ঠিক করে নিয়ে থমথমে মুখে বলল, ‘ঠিক আছে?’

‘ঠিক আছে৷’

‘আসছি৷’

‘আয়৷’

মিঠি বেরিয়ে গেল৷ পরেশবাবু অলস চোখে তার গমনপথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন৷ তারপর আবার টিভিটা অন করে দিয়েছেন৷ ফের শুরু হয়ে গেল সেই একঘেয়ে প্যানপ্যানানি, ‘গত শুক্রবার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী রাখি পাল…!’ সঙ্গে সঙ্গেই স্ক্রিনে ভেসে উঠল উদ্ভিন্নযৌবনার পেলব মুখের ছবি৷

এবার কিন্তু আর টিভি অফ করলেন না তিনি৷ একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখতে থাকলেন মেয়েটির কোমল ফর্সা মুখ৷ টানা টানা কালো কুচকুচে ভুরুর নীচে দুটি মায়াবী স্বপ্নালু চোখ৷ ঈষৎ স্ফুরিত, অভিমানী একজোড়া গোলাপি ঠোঁট…!

রোজ বিকেলবেলায় সামনের পার্কে নিয়ম করে টহল দেওয়া অভ্যাস পরেশ সান্যালের৷ রিটায়ার করার আগে অবশ্য এই নিয়মটা ছিল না৷ কিন্তু কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই তিনি রীতিমতো স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছেন৷ রোজ নিয়ম করে ভোরে উঠে প্রাণায়াম, কপালভাতি ইত্যাদি নানারকম যোগাসন করেন৷ সঙ্গে একঘণ্টা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ৷ চল্লিশের পর সেই যে মিষ্টি খাওয়া ছেড়েছেন, আর কোনওদিন ছুঁয়েও দেখেননি৷ অবসর নেওয়ার পর থেকেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছেন৷ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য কম খান, সবজি খান বেশি৷ এমনকি খাবারের তালিকায় মাছ, ডিম, মাংসের পাটও তুলে দিয়েছেন৷ স্রেফ নিরামিষ বরাদ্দ৷ স্ত্রী হিমানীর ছলছলে দৃষ্টি, নম্র অনুরোধও তাঁকে আমিষমুখো করতে পারেনি! বিকেলে এই বিরাট মাঠটায় ন্যূনতম পাঁচ পাক চক্কর মারেন৷ অনেকটা ক্যালোরির সঙ্গে ঝরে যায় ফ্যাট, কোলেস্টেরল জাতীয় উৎপাত৷

তাঁর হাঁটার সঙ্গী রতনবাবু মাঝেমধ্যেই বলেন, ‘আপনি তো মশাই রীতিমতো সাত্ত্বিক মানুষ! আমাকে দেখুন! এত বয়েস হল, তা সত্ত্বেও মিষ্টির ওপর ছেলেমানুষের মতো লোভ! রাস্তায় এগরোল ভাজার গন্ধ বা গরম শিঙাড়ার সুবাস পেলেই নোলা সকসকিয়ে ওঠে৷ তখন বঙ্কিমবাবুর ওই লাইনটা মনে পড়ে যায়! জীবনে রসগোল্লা, পান্তুয়া নেই! শিঙাড়া, তেলেভাজা দেখলেই মনে হয় পরস্ত্রী’র দিকে তাকাচ্ছি! হে ঈশ্বর, ‘এ জীবন লইয়া কী করিব?’

মনে মনে মৃদু হাসেন পরেশ সান্যাল৷ ‘সাত্ত্বিক’ শব্দটা শুনতে তাঁর ভারী ভালো লাগে৷ অল্পবিস্তর অহং বোধও হয়৷ তবে মুখে কিছু বলেন না৷ শুধু বিশেষণটা উপভোগ করেন৷

‘এখনও পর্যন্ত ক’চক্কর মারলেন দাদা?’

আজ পার্কে ঢুকে গোটা দুয়েক পাক মারার পরই রতনবাবু এসে উদয় হলেন৷ দ্রুতগতিতে তাঁর পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘কোটা কমপ্লিট নাকি?’

‘না৷’ হাঁটার গতি না কমিয়েই উত্তর দেন পরেশ, ‘আরও তিন পাক বাকি আছে৷’

‘আপনি মশাই কিছু মেইনটেইন করেছেন নিজেকে’৷ রতন বললেন; ‘আমার গিন্নি তো রোজ কানের কাছে ক্যাটক্যাট করেন৷ ‘ভুঁড়ি কমাও, ভুঁড়ি কমাও!’ কিন্তু ভুঁড়ি বাবাজি আর কমবার নাম নিচ্ছেন না৷ একেবারে প্রেয়সীর মতো কোমর আঁকড়ে বসে আছেন৷’

‘হাঁটাহাঁটি তো আপনিও কম করেন না! তবু ভুঁড়ি কমছে না কেন?’

রতনবাবু একটা প্রাণখোলা হাসি হাসলেন, ‘কী করে কমবে দাদা! দেহটাকে কষ্ট দিয়ে ক্যালোরি ঝরাচ্ছি, কিন্তু ওদিকে যে চোখ বেয়ে প্রাণের আরাম হচ্ছে৷ তাতেই ক্যালোরি বেড়ে যাচ্ছে৷’

ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে বিরক্ত হন পরেশ৷ রোজ সকালে ও বিকেলে অল্পবয়সি মেয়েরা এই মাঠেই কবাডি খেলা প্র্যাকটিস করে৷ টাইট টপ আর শর্টস পরিহিত মেয়েদের ধস্তাধস্তি চলতেই থাকে৷ টানা-হেঁচড়ার চোটে কারোর টপটা খানিকটা উঠে যায়৷ চোখে পড়ে কমনীয় কোমর বা পেট৷ কখনও শর্টসটা উঠে যায় আরও ওপরে! সবার সামনে উন্মুক্ত কচি মেয়ের জঙ্ঘা! পরেশবাবুর অস্বস্তি হয়! রাগও হয়! এটা খেলা, না শরীরের প্রদর্শনী! খেলার চোটে ওদের কারোর খেয়ালই থাকে না যে কখন নীচু হয়ে আক্রমণ করার সময়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্লিভেজ! টেনে ধরার সময়ে কারোর শর্টস বিপদসীমার ওপরে উঠে যাচ্ছে! মেয়েগুলো কী নির্বিকার! নির্বিকার না নির্লজ্জ! ওদের বাপ-মা কি এসব দেখে না? বরদাস্ত করে কী করে? আর রতনবাবুও বলিহারি! এখানে এসে এইসব দেখছেন! মেয়েরা ছোট ছোট জামা পরে লাফালাফি করছে দেখে ওঁর চোখের নাকি আরাম হচ্ছে!

‘ওই মেয়েটা দারুণ খেলে৷’ রতন একটি লম্বা বলিষ্ঠ চেহারার মেয়ের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বললেন, ‘ওকে আমি চিনি৷ রেলপাড়ের বস্তিতে থাকে৷ ওর মা লতা আমাদের বাড়িতে ঠিকা কাজ করে৷ মেয়েটা পড়াশোনায় আহামরি কিছু না৷ কিন্তু খেলোয়াড় হিসাবে দুর্দান্ত৷ অসম্ভব পরিশ্রমও করে৷ লতা মাঝেমধ্যেই বলে, মেয়ে যদি একটা টিমে সিলেক্টেড হয়ে যায়, তাহলে ভালো চাকরি পাবে৷ ওর বাপটার তো অ্যাক্সিডেন্টে দুটো পা-ই কাটা গিয়েছে! সংসার লতাই চালায়! মেয়েটা যদি কোনওভাবে স্কোপ পেয়ে যায় তবে…!’

রতনবাবুর কথা কানে ঢুকছিল না পরেশ সান্যালের৷ তিনি মেয়েটির দিকে তাকিয়েছিলেন৷ লম্বা, চওড়া যথেষ্ট ভরন্ত দেহ৷ তার ওপর টপটা যেন কেটে বসছে শরীরে৷ ঘামে ভিজে লেপ্টে গিয়েছে গায়ের চামড়ার সঙ্গে৷ বুকের ঔদ্ধত্য, কোমরের খাঁজ, মসৃণ উরুর পেলবতা; সব যেন বড় বেশি প্রকট!

মেয়েটার কপাল থেকে টপটপ করে ঘাম পড়ছিল! শরীর ক্লান্তিতে ভেঙে আসছে৷ তবু ঘর্মাক্ত মুখ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ শত্রুকে যে করেই হোক হারাবে৷ তার অনেক শত্রু৷ বাড়িতে পঙ্গু বাপ বসে আছে৷ মা দশ বাড়িতে খেটে দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোগাড় করে! ছোট বোনটা গতবছর তিনদিনের জ্বরে বিনা চিকিৎসাতেই মারা গেল৷ ছোট ভাইটার স্কুল ফিজ এবার জমা না দিলে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেবে…!

মেয়েটা লড়ছিল প্রতিপক্ষের সঙ্গে! পরেশবাবু তখন তার পরনের ঘামে ভেজা টাইট টপ আর শর্টস দেখে মেয়েটির চরিত্র বিশ্লেষণ করছিলেন! মেয়েটির মুখ এতদূর থেকে ভালো করে দেখা সম্ভব নয়৷ কিন্তু মনে হল স্পষ্ট দেখছেন :

…সেই কোমল ফর্সা মুখ৷ টানা টানা কালো কুচকুচে ভুরুর নীচে দুটি মায়াবী স্বপ্নালু চোখ৷ ঈষৎ স্ফুরিত, অভিমানী একজোড়া গোলাপি ঠোঁট…!

রাখি পালের স্কুল ইউনিফর্ম কী ছিল? টাইট ব্লাউজ? আর হাঁটুর অনেকটা ওপরে তোলা স্কার্ট?

তখন মধ্যরাত৷ কোথাও যেন জল পড়ার অবিরাম শব্দ, টুপটাপ৷ তার মধ্যেই দুটো কুকুরের প্রবল আস্ফালন ভেসে আসে৷ নিজেদের অধিকার নিয়ে চলছে লড়াই৷ কেউ কাউকে একতিলও জায়গা ছেড়ে দেবে না৷ হিংস্র দন্তপংক্তি বের করে প্রবল গর্জনে পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে দুটি শ্বাপদ৷ সর্বশক্তি দিয়ে হারানোর চেষ্টা করছে একে অপরকে৷

পরেশবাবু বারান্দায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে দেখছিলেন এই প্রাণান্তকর যুদ্ধ৷ এ যুদ্ধ অকারণ নয়৷ দুটি যুযুধান সারমেয়র মাঝখানে বসে আছে এক সুন্দরী৷ তাকে নিয়েই যুদ্ধ চলছে দুজনের৷ যে অপেক্ষাকৃত বলবান, সে-ই যুদ্ধ জিতে দখল নেবে সুন্দরীর৷ আর পরাজিত সারমেয়টি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রাস্তা ছেড়ে দেবে৷ এটাই নিয়ম! এটাই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে৷ ক্ষুধা থেকে শুরু করে যৌনতা; সব কিছুর জন্যই ওদের লড়তে হয়৷ ওরা কুকুর৷ মানুষ নয় যে ভাগ-যোগ করে ভোগ করবে৷ মানুষ হলে তো দুজনে মিলেই ঝাঁপিয়ে পড়ত! আফটার অল, সামাজিক প্রাণী!

আজ রাতেই রাখি পাল গ্যাংরেপ ও মার্ডার কেসের তৃতীয় অপরাধীটি ধরা পড়েছে৷ তার বাবা-মা থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, এমনকি প্রতিবেশীরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে ওই আপাতনিরীহ ছেলেটি এমন ভয়ংকর কাজ করতে পারে! প্রত্যেকেই মিডিয়াকে বলছেন, ‘ও এমন কাজ করতেই পারে না৷ ও তো ভালো ছেলে!’

‘ভালো ছেলে’! শব্দটা শুনেই হাসি পেয়ে যায় পরেশের৷ এ তো সামাজিক বিশেষণ! যেমন রতনবাবু তাঁকে বলেন ‘সাত্ত্বিক মানুষ’!

এখনও বেডরুম থেকে তাঁর স্ত্রী হিমানীর কাতর গোঙানির শব্দ ভেসে আসছে৷ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন যন্ত্রণায়৷ হয়তো নির্যাতনটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে৷ হিমানী চাননি৷ আপ্রাণ বাধা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরেশবাবু তাঁর সমস্ত প্রতিরোধকে দুরমুশ করেছেন নৃশংস ভাবে! তাঁর ভালো লেগেছে স্ত্রী’র ওপর অত্যাচার করতে৷ সব কাজ শেষ করে এই মুহূর্তে ভীষণ,…ভীষণ পরিতৃপ্ত পরেশ সান্যাল৷ অনেকদিন পরে সত্যিই এমন আরামদায়ক অভিজ্ঞতা হল৷

শুধু একটা কথা কোনওদিন কেউ জানবে না৷ হিমানীও বুঝতে পারেননি, আগামীতেও পারবেন না৷ যখন তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন হিমানীর ওপরে, অত্যাচারে তাকে ধ্বস্ত-বিধ্বস্ত করছিলেন, অদৃশ্য দাঁত-নখে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করছিলেন, তখন ওখানে হিমানী ছিল না! ছিল সেই কোমল ফর্সা মুখ! টানা টানা কালো কুচকুচে ভুরুর নীচে দুটি মায়াবী স্বপ্নালু চোখ! ঈষৎ স্ফুরিত, অভিমানী একজোড়া গোলাপি ঠোঁট…!

তিন নম্বর ধরা পড়েছে৷ কিন্তু তাতে পরেশবাবুর কী? রাখি পালের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই!

তিনি তো শুধু চার নম্বরে আছেন!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *