কৈফিয়ত

কৈফিয়ত

হে পাঠক আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। কল্পকাহিনিটি লেখার সময়ে আমি ভাবিনি এই পরিশিষ্ট লেখবার কথা কিন্তু অগস্ত্য এবং ইরতেনসেনু যখন সেই হরিৎক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হল তখন আমার মনে হল আপনার মনে কি প্রশ্নের ঝড় ওঠেনি?

অগস্ত্য কি সত্যিই এমন চমৎকার আবিষ্কার করেছিলেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে এসে যায় আরো একটি প্রশ্ন। অগস্ত্য কি সত্যিই ছিলেন? কতটা তার অস্তিত্ত্বের পরিচয় পাই আমরা? কতটাই বা পুরাণের গাথা মাত্ৰ?

ঋষি অগস্ত্যর উল্লেখ আমরা পাই ঋগবেদে। সেখানে বেশ কিছু শ্লোকের তিনি রচয়িতা। রামায়ণেও পাই তাঁকে, গোদাবরী নদীর তীরে তাঁর আশ্রম। আবার মহাভারতের বনপর্বে দেখি আশ্চর্য ক্ষমতার অধিকারী অগস্ত্য ঋষির উল্লেখ। মৎস্যপুরাণ এবং পদ্মপুরাণেও বর্ণিত আছে তাঁর কথা। তাঁর জন্ম কোন সময়ে হয়েছিল তা বোঝা যায় না সঠিকভাবে। এমন এক কীর্তিমান মানুষের জীবন ব্যপ্ত সহস্রাধিক বছর ধরে। কিন্তু কারোর জীবনই তো এত বছর স্থায়ী হয় না। তাহলে কি অগস্ত্য নামের বেশ কয়েকজন ঋষি ছিলেন? নাকি সম্মিলিত ঋষিকুলের নাম ছিল অগস্ত্য? এই উত্তর জানা নেই।

অগস্ত্যর যে আশ্চর্য আবিষ্কারগুলির কথা উপন্যাসে বলা হয়েছে সেগুলি সত্যিই ছিল? প্রাচীন পৃথিবীর আকাশে কি সত্যিই উড়েছিল হাইড্রোজেন বেলুন? এই ঘটনা যে সত্যিই ঘটেছিল তার কোনো নির্দিষ্ট চিহ্ন এই পৃথিবীর বুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু পাওয়া গেছে কিছু আশ্চর্য শ্লোকের সন্ধান, যার রচয়িতা নাকি স্বয়ং অগস্ত্য। শ্লোকগুলি অগস্ত্য-সংহিতায় লিপিবদ্ধ। অগস্ত্য যদিই সত্যিই কখনও এই পৃথিবীর বুকে শ্বাস নিয়ে থাকেন এবং শ্লোকের রচনা করে থাকেন তাহলে সেই শ্লোকগুলি বারংবার পঠিত এবং রচিত হয়ে এসেছে।

আমি নিজে বিজ্ঞানের ছাত্র। প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছুকে বিশ্বাস করতে মন চায় না। তবুও যখন এই শ্লোকগুলির সন্ধান আমি পাই তখন নিজের কল্পনাকেই প্রশয় দেওয়ার সাধ হয়েছিল। মনে হয়েছিল যদি সত্যিই কয়েক সহস্র বছর আগে কাচের গোলকের মধ্যে জ্বলে উঠত বৈদ্যুতিক আলো? সেই সময়ের পৃথিবীর আকাশে উড়ত এক আশ্চর্য বায়ুযান?

এই প্রসঙ্গে আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন এসেছে যে লোপামুদ্রা তাহলে মিশরীয়? না, এও আমার বিশুদ্ধ কল্পনা। তবে বিদর্ভের রাজার কাছে যোগবলে লোপামুদ্রার জন্ম হয়েছিল বলে যে দাবি অগস্ত্য করেছিলেন তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। সেই কারণেই জন্ম নিয়েছে মিশর দুহিতা ইরতেনসেনু, যে পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে এসে হয়েছে লোপামুদ্রা।

ফারাও হাতসেপসুত কিন্তু সত্যিই ছিলেন। ‘জেহের জেসের’ আজও মাটির উপরে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে রয়েছে আমুন-রা, হাথোরের উপাসনা গৃহ।

পুন্তের অস্তিত্ব আদৌ কোথায় তা আজও কেউ জানে না। যদিও রানি হাতসেপসুতের সময়ে পুন্ত নগরীর উল্লেখ বারবার পাওয়া যায়। হয়তো এখনকার দেশ সুদানের কোনো একটি অংশে ছিল এই পুস্ত।

নীলনদের যে গতিপথ এই উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে তা আবার পুরোটাই বাস্তবিক। নদীর উপরের জলপ্রপাত, কোম ওম্বের মন্দির, নুবিয়ার রাজ্যগুলি সত্যিই রয়েছে। নীলনদ দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়। এই নদীর মূল উৎস সত্যিই একটি জঙ্গলে ঘেরা হ্রদ,’ লেক ভিক্টোরিয়া’। ব্রিটিশ অভিযাত্রী জন হ্যানিং স্পেক ১৮৫৮ সালে লেক ভিক্টোরিয়ায় পৌঁছতে সক্ষম হন।

বলা বাহুল্য, লেক ভিক্টোরিয়ার জলের নীচে কামারু নামের দৈত্যটি কোনোদিন ছিল না।

হে পাঠক, ‘হারানো সূর্যের খোঁজে’ আদ্যন্ত একটি ইতিহাস সুরভিত কল্পকাহিনি। এই আমার নির্ভেজাল স্বীকারোক্তি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *