এক মানুষ, ছাই
ইলেকট্রিক চুল্লির ভেতর শুয়ে আছি আমি। কিছুক্ষণ আগে আমাকে এর ভেতর ঢোকানো হয়েছে। ট্রলিতে করে ডোম যখন আমাকে এই লাল টকটকে হাঁ মুখটার ভেতর ঢুকিয়ে দিচ্ছিল তখন ভীষণ ভয় করছিল আমার। ইচ্ছে করছিল উঠে দৌড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু উপায় ছিল না। আমার গোটা শরীর ব্যান্ডেজে বাঁধা। মর্গে পোস্ট-মর্টেমের পর আমার পেটের নাড়িভুঁড়ি সব বার করে দিয়ে সেলাই করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আমার কপালেও সেলাই।
ডোমটা আমার চোখদুটোও নিয়ে নিতে চেয়েছিল। পারেনি। কারা যেন বাধা দিয়েছিল। তাদের মুখগুলো অস্পষ্ট। চিনতে পারিনি। হয়তো বন্ধুরা হবে, কিংবা…অন্য কেউ। ঠিক জানি না। আমি যখন মর্গের বেডে শুয়েছিলাম তখন দেখেছিলাম আমার পাশের বেডে শোয়ানো একটি পনেরো-ষোলো বছরের মেয়ের চোখ দুটো ডোমটা নিজের বাঁ-হাতের কড়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে কী অদ্ভুত কায়দায় বার করে নিয়েছিল। তারপর সে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল। এত চোখ নিয়ে সে কী করে? বিক্রি? দৃষ্টি বিক্রি করে। তার মুখে ঝাঁঝালো মদের গন্ধ। আমার ডান পায়ের থাইয়ের মাংস খুবলে খাচ্ছিল যে ধেড়ে ইঁদুরটা, সেটাকে অলসভাবে সরিয়ে দিয়ে আমার চোখের দিকে আঙুল বাড়িয়েছিল, নিতে পারেনি…ভাগ্যিস! কারা যে আটকেছিল একটুও মনে পড়ছে না। শুধু মনে আছে সন্ধেবেলা রেললাইন দিয়ে হাঁটা, অনেক দূরের আলো…আরও কাছে…আরও কাছে…তীক্ষ্ণ হুইসেল…ট্রেনের ধাতব চাকার শব্দ আমার শরীরের ওপর দিয়ে। এতটুকু রক্ত পড়েনি। ট্রেনে কাটা পড়লে রক্ত পড়ে না। অদ্ভুত! সারারাত লাইনের ওপর একা শুয়েছিলাম। পেটের ওপরের অংশ দুই লাইনের মাঝে আর বাকিটুকু লাইনের বাইরে। চিৎ হয়ে শুয়েছিলাম আমি। হ্যাঁ, চিৎ হয়ে। হিমে ভিজে যাচ্ছিল শরীর আমার। আকাশভরতি তারা। ঘন কালচে নীল আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া শিফন মেঘ। ভালো লাগছিল আমার অমনি করে শুয়ে থাকতে। কতকাল শুইনি ওভাবে। ছোটবেলায় বাড়ির পাশের মাঠটায় রাত্তিরে মাঝেমধ্যে ওভাবে শুয়ে থাকতাম একা। আর আকাশ দেখতাম। তারাগুলো থেকে আলো বইত। হাওয়া বইত। মন হু-হু করে উঠত আমার। খুব ইচ্ছে করত ওখানে চলে যেতে। এই তারা থেকে এই তারায়। ওই গ্রহ থেকে সেই গ্রহে।…সারা রাত হিম মেখে নিবিড়ভাবে রাতের সঙ্গে থাকার সঙ্গে থাকার পর ভোরবেলা লোক এসে বস্তায় ভরে ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে গেল আমাকে। মর্গে।
আমার গায়ে জড়ানো ব্যান্ডেজ কখন পুড়ে ছাই। মাংসপোড়া গন্ধে নিশ্চয়ই ভরে গেছে এই একমানুষ আগুন কুঠুরিটা। আগুন আমার সমস্ত জুড়ে। অথচ তাপের দহনের অনুভব নেই আমার। চিৎ হয়ে শুয়ে আছি গতকাল থেকে। পাশ ফিরতে ইচ্ছে হল আমার। ফিরতেই চমকে উঠলাম। আমার পাশের চুল্লির ভেতরটাও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ওখানেও একইরকম আগুন জ্বলছে গনগন করে। একজন মানুষ শুয়ে। আমারই মতো। বড় তৃপ্তির সঙ্গে পুড়ছে। পুরুষের শরীর। চেনা চেনা মনে হল…সত্যি কি? হয়তো মৃত্যুর পর কিংবা জ্বলতে থাকা সব মানুষকে একইরকম দেখতে লাগে। লোকটার বেরিয়ে আসা পাঁজরের হাড় আগুনের দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে। ওপরের দিকে তাকিয়ে ছিল লোকটা। হাই তুলল একবার। তারপর মুখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকাল। ‘বাবা…তুমি!’ প্রচণ্ড চমকে উঠলাম আমি। ‘এখানে…কেন?’ বাবা উত্তর দিল না। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে। যেভাবে মানুষটা আজীবন সব কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকত। বোবা দৃষ্টি। কথাহীন তাকানো। প্রথম দিকে খুব রাগো হত আমার। পরে কষ্ট লাগত। জিগ্যেস করলাম, ‘কষ্ট হচ্ছে তোমার?’
আমার প্রশ্নে সামান্য হাসার চেষ্টা করল বাবা। দীর্ঘ অনভ্যাসের ফলে হাসি এল না। ঠোঁট অল্প ফাঁক হল শুধু। সামনে তিনটে ধবধবে সাদা দাঁত দেখতে পেলাম। ওই তিনটে দাঁত অনেকদিন আগে থেকেই ছিল না। ফাঁকা ছিল। বাঁধিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে ছিল লোকটার। করে উঠতে পারেনি। কবে বাঁধাল কে জানে? গোঁফদাড়িও নিপুণভাবে কামানো। দেখলেই মনে হয় সুন্দর আফটার শেভ লোশনের গন্ধ বের হচ্ছে। জিগ্যেস করলাম, ‘দাঁত বাঁধিয়েছ?’
ঘাড় নাড়ল বাবা। তারপর হাড় বার করা সাদা হাতের মুঠোর তার জড়ানো ছোট্ট চৌকোমতো একটা জিনিস তুলে ধরে দেখাল। হিয়ারিং-এইড! আশ্চর্য এসব কখন কিনল? কাল বিকেল পর্যন্ত যতক্ষণ আমি বাড়ি ছিলাম এসব কিছুই দেখিনি তো। আমি যখন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসি তখন বাবা বাটিতে জল-মুড়ি খাচ্ছিল বিছানায় বসে। দাঁতের জন্যে শুকনো মুড়ি চিবোতে অসুবিধা হত। জলে ভিজিয়ে চুষে খেত। বাবা আরও একটা কী যেন বাঁ-হাতে ধরে রয়েছে, চোখে পড়ল আমার। সোনালি ফ্রেমের চশমা। পালিশ ওঠা মোটা কালো ফ্রেমের ঘষা ঘষা লেন্সের চশমাটা আমি আজীবন বাবার চোখে দেখে এসেছি। কখন কিনল এত কিছু! আর আমাকে এভাবে এখন দেখাচ্ছে কেন? রাগ হয়ে গেল আমার। যা হোক কিছু একটা আমারও দেখাতে ইচ্ছে করল বাবাকে। কী দেখাব ভাবতেই দেখি আমার পুড়ে ছাই হয়ে আসা পায়ের কাছে একটা লাল টুকটুকে প্লাস্টিকের বল, ব্যাট। খেলনা রেলগাড়ি। আমার বুকের ওপর জড়ো করে রাখা আছে অজস্র গল্পের বই, দামি ক্যাডবেরি। আমার হাতের মুঠোয় ধরা তুলি, প্যাস্টেল রং, ড্রয়িং খাতা। চমকে উঠলাম আমি। এগুলো কখন এল এখানে? কীভাবে এল? আমার আশৈশবের না পাওয়া সুখগুলো কীভাবে চলে এল এখন! এই সব জিনিসগুলো কেউ আমরা কখনও পাইনি। পরস্পরকে দিতেও পারিনি। বাবা কি একদৃষ্টে এগুলোই দেখছিল এতক্ষণ? একটা লোকাল সিনেমা হলের লাইটম্যান ছিল আমার বাবা। সেই হলে আমি দুবার সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। নেতাজি সুভাষচন্দ্র আর আফ্রিকান সাফারি। একবার মায়ের সঙ্গে আর একবার সাধনামাসির সঙ্গে। হলের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোথাও এতটুকু হোঁচট না খেয়ে আমাদের বসার চেয়ারে কী নিপুণভাবে একবার টর্চের আলো ফেলেছিল বাবা। অহংকারে ফুলে উঠেছিল সে দুদিন আমার ছোট বুক। এত অন্ধকারেও বাবা সব দেখতে পায়। সব অন্ধকার বাবার চেনা। সমস্ত কোণ, সমস্ত দিক। পরে একটু বড় হওয়ার পর বুঝেছি বাবার আসলে ওইটুকু অন্ধকারই চেনা ছিল। বাকি সব অন্ধকারে আমার মতোই হাতড়াত, হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ত। আমি যেমন প্ল্যানেটোরিয়ামের ঘন অন্ধকারের মধ্যেও কৃষ্ণার ঠোঁটে একেবারে চুমু খেতে পারতাম, ব্লাউজে হাত ঢুকিয়ে ব্রায়ের হুক খুলে ফেলতে পারতাম। আলো কিংবা অন্ধকার আসলে কিছুই নয়। সবটাই অভ্যাস।
সিনেমা হলটা ধুঁকতে শুরু করেছিল। মফসসল অঞ্চলে কেবল লাইন ঢোকার পর থেকে হলগুলোতে আগের মতো ভিড় হত না। মালিক নতুন সিনেমা আনা বন্ধ করে ব্লু ফিল্ম দেখাতে শুরু করল পয়সা তোলার জন্য। হলের বাইরে হিন্দি ছবির পোস্টার। ভেতরে মালয়ালম কিংবা ইংলিশ টু বা থ্রি। ইয়ং ছেলেরা ভিড় করত। আমার বন্ধুরাও যেত। বাবা মাথা নীচু করে অন্যদিকে তাকিয়ে তাদের সিট দেখাত।
ভেঙে যাচ্ছিল লোকটা। গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছিল। আমি বুঝতে পারতাম। তবু শেষপর্যন্ত সিনেমাহলটা বন্ধ হয়ে গেল। অভ্যাস হয়ে গেল বাবার বাড়িতে বসে যাওয়া। মা-র সারাদিনের চিৎকার, অসুস্থতা বেড়ে যাওয়া আর সাধনামাসির সঙ্গে বাবার অদ্ভুত সম্পর্ক। মায়ের দূর সম্পর্কের বোন ছিল সাধনামাসি। ছোটবেলায় দেখতাম মাঝেমধ্যেই আমাদের বাড়ি আসত। আমার জন্য লজেন্স, বিস্কুট কখনও চানাচুর নিয়ে আসত। বাবার সঙ্গে গল্প করত মায়ের থেকে বেশি। মা প্রথম দিকে কিছু না বললেও পরের দিকে মুখ গম্ভীর করে থাকত। আমি মা-র সঙ্গে তখন কোনও কথা বলতে গেলে আমাকেও অকারণ ঝাঁঝিয়ে উঠত। তখন খুব রাগ হত আমার মাসির ওপর। আমি বুঝতে পারতাম ও বাড়িতে এসে বাবার সঙ্গে কথা বলছে বলেই আমাকে বকা খেতে হচ্ছে।
মাসি একটা অদ্ভুত রকমের কাজ করত। কলকাতার অফিসে গিয়ে গিয়ে টেলিফোন মোছার কাজ। বেশ কয়েকটা অফিস ধরা ছিল মাসির। প্রত্যেক জায়গায় সপ্তাহে একদিন করে। মাসে কোথাও তিনশো। কোথাও দুশো। সব মিলিয়ে পনেরোশোর মতো হত। সারা বছর ভোর চোরটেয় উঠত মাসি। সাড়ে পাঁচটার ট্রেন ধরত। রাত্তিরে শুতে শুতে সাড়ে এগারোটা থেকে বারো। এক বার জিগ্যেস করেছিলাম, ‘মাসি, তুমি বিয়ে করোনি কেন?’
শত কোঁচকানো চামড়ায় ঢাকা তোবড়ানো গালের ভেতর থেকে ভাঙাচোরা দাঁত বার করে হেসে মাসি বলেছিল, ‘আমি বিয়ে করলে ও-দুটোকে কে দেখত?’
মাসির ভাই একটা চাউমিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করত। অ্যাজমার রোগ ছিল ছেলেটার। সে মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের বউ আর ছেলেকে টানত মাসি। আজীবন। নি:শব্দে। কথাগুলো বলার সময় মাসির চিবুক বেয়ে টুপটুপ আলো ঝরে পড়ছিল। এত আলো!
আমি বুঝতাম বাবার সঙ্গে সাধনামাসির কোনওদিনই কোনওরকম শারীরিক যোগাযোগ নেই। বুকের বদলে মাসির কণ্ঠার হাড় উঁচু হয়ে থাকত। খনখনে মৃদু গলা। প্যাঁকাটি হাতে সেফটিপিন ঝোলানো দুটো চুড়ি আমার আজও মনে আছে। আর মাসির সেই ছেঁড়া ফাটা, জীর্ণ কালো ব্যাগটা, যার মধ্যে রাখত স্পিরিট, তুলো, ন্যাকড়া, কলিন—কাজের জিনিসপত্র। আমি বোতল খুলে স্পিরিটের গন্ধ শুঁকতাম। হাতে লাগাতাম। ঠান্ডা লাগত। বাবা দেখতে পেলে ধমক লাগাত—’অ্যাই, ছিপি বন্ধ কর।’ মাসি বলত, ‘আহা, বকছ কেন ওকে, থাক না।’
আমার মায়ের মৃগী ছিল। হঠাৎ হঠাৎ দেখতাম দাঁতে দাঁত লেগে শুয়ে পড়ে ঠকঠক করে কাঁপত। ভীষণ ভয় করত দেখে। বাবা তখন মায়ের মুখে চামচ ঢুকিয়ে, পায়ে চাবি ঘষে, কখনও জুতোর গন্ধ শুঁকিয়ে ঠিক করত। একদিন মা দুম করে মরে গেল, দুপুরে একা পুকুরে চান করতে গিয়ে। হঠাৎ করে রোগটা চেপে বসেছিল। মা তখন জলের মধ্যে। বাবা কখনও মাকে পুকুরে চান করতে দিত না। মা-ও যায়নি কোনওদিন। সেদিন হঠাৎ একা একা কেন গিয়েছিল কে জানে! জলের ওপর উপুড় হয়ে মায়ের ভেসে থাকা শরীর আমি কতদিন স্বপ্নে দেখে ভয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরেছি। আমার মা আজীবন কী চেয়েছিল বাবার কাছে? আমার কাছে? কে জানে। মা সেদিন হঠাৎ পুকুরে চান করতে গিয়েছিল কেন তাও জানি না। মা মারা যাওয়ার পর সাধনামাসি আর ঠিক একদিন এসেছিল আমাদের বাড়িতে। আমার তখন ধড়া নেওয়া, অশৌচ। আর কোনওদিন আসেনি। স্টেশন-বাজারে একদিন সন্ধেবেলা বাবা আর সাধনামাসিকে মাছ কিনতে দেখেছিলাম। কাটাপোনা, বাবা খেতে ভালোবাসত। কার জন্য কে কিনছিল দেখতে ইচ্ছে হওয়ার আগেই সরে গিয়েছিলাম ওখান থেকে। কে যে কাকে কীভাবে চায়? আমাদের পাশের পাড়ায় বাড়ি ছিল মাসির। আমি জানতাম বাবা মাঝেমধ্যে যেত ওদের বাড়িতে। আমার ভালো লাগত। দুটো একলা মানুষ এত তীব্র অথচ নিষ্পৃহভাবে পরস্পরের কাছে থাকত দেখে ভীষণ ভালো লাগত আমার। অথচ আমি আর কৃষ্ণা কখনও এভাবে থাকতে পারিনি। কৃষ্ণার শরীর আমার কাছে মুক্তির মতো ছিল। জংলি গাছের মতো ওর গায়ের গন্ধে আমি অবশ হয়ে পড়তাম। এত আদিমতা, এত অরণ্য ছিল ওর শরীর জুড়ে। সময়ের পর সময় পার করে আমি খুঁজে যেতাম ওর উৎসকে। আমার পাগলামো দেখে ও হাসত। বলত, ‘এত কী খোঁজো বলো তো, সবই তো চেনা তোমার।’
‘জানি না।’
‘পাগল কোথাকার!’
সত্যিই…কী যে খুঁজতাম? স্তন, বাহুমূল, নাভি, ওর শরীরের প্রতিটি রোম আমার চেনা ছিল তবু কীই যে…কেন যে! শুধু কি আমিই? আমার শীর্ণ খোলা শরীরটায় কৃষ্ণা নরম আঙুলের ছোঁয়া রেখে বলত ফিসফিস করে, ‘তোমার শরীর বুদ্ধের মতো। এত সুন্দর রেখা, যেন চুঁইয়ে পড়ে।’ ওর কথায় আমি সত্যি সত্যি ঈশ্বর হয়ে উঠতাম তখন। কোনও নারী কোনও পুরুষকে বুদ্ধের শরীরের সঙ্গে…নিজেকে আকাশ মনে হত আমার। কৃষ্ণা ভালোবাসত আমাকে, আমার আঁকা ছবিগুলোকে। ছোটবেলা থেকে একটা ভালো পেনসিল, রং কিংবা কাগজ না পাওয়া সত্বেও দুর্ভাগ্যজনভাবে আমি ভালো ছবি আঁকতে পারতাম।
রাজনীতি করত কৃষ্ণা। বোমা-বন্দুকের রাজনীতি, যে আঙুল ছুঁয়ে আমাকে ও ঈশ্বর করে দিত সেই আঙুলেই পিস্তলের ট্রিগার ধরত। অবাক লাগত আমার। বলতাম, ‘কী করে পারো তুমি?’
উত্তরে ও শুধু হাসত। আমি বলতাম, ‘তোমার সত্যি কি মনে হয় এই ভাবে সমাজ বদলানো যাবে?’
‘চেষ্টা করতে ক্ষতি কী?’
‘ক্ষতি চেষ্টার নয়, তোমার।’
‘তুমি কাওয়ার্ড।’ আমার চোখে চোখ রেখে বলেছিল ও।
‘শুধু আমি নয়। আমরা সবাই কাওয়ার্ড। সবাই ভয় পেয়ে বেঁচে আছি। পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমি ছবি আঁকছি, তুমি বন্দুক ধরছ। আমার বাবা সাধনামাসির কাছে যাচ্ছে। এই সব কিছু আসলে ভয়েতে। পালানোর জন্য।’
‘এগুলোকে পালানো বলে না।’
‘হ্যাঁ, বলে।’
‘বেশ। তুমি যেভাবে ভাবতে চাও।’
‘আমার সঙ্গে থাকবে কৃষ্ণা?’
‘আমি কি তোমার সঙ্গে নেই।’
‘আছো—ও, প্রতি মুহূর্তের জন্য চাই তোমাকে। বিয়ে করবে আমায়?’
‘…না।’
‘কেন নয়?’
‘…ভয় করে আমার।’
‘ভয়! কীসের?’
‘জানি না…ঠিক জানি না…কিন্তু…’
‘ব্যাগের ভেতর পিস্তল রাখতে ভয় করে না। পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়োতে ভয় করে না?
‘এগুলো আমাকে করতেই হবে। আমার যে আর কিছু জানা নেই। আর কিছু পারি না।’ কৃষ্ণার অবস্থাও প্রায় আমার মতোই ছিল। বাবা নেই। ভাই জন্ম থেকে পঙ্গু, মা আলসারের রুগি, পার্টি থেকে হাজার দেড়েক টাকা পেত। ওতেই সংসার চালাত।
‘পেটের দায়ে সমাজ সংস্কার করো তুমি! সোশ্যাল রিফর্মারের চাকরি। ছি:! লজ্জা করে না তোমার।’
‘না করে না। বাঁচতে লজ্জা করে না আমার।’
এর পরেও আমাদের দেখা হত। আমরা কখনও গাদিয়াড়া গেছি। কখনও দিঘা। একবার রিম্বিক। মনে আছে, জঙ্গলের ভেতর বিশাল একটা গাছের গায়ে জমে থাকা শ্যাওলায় আলতোভাবে আঙুল রেখে চোখ বুজে ফেলেছিল কৃষ্ণা। আশ্লেষে। আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম গাছ নয়, বিরাট এক পুরুষের চওড়া বুকের রোমে আঙুল ছুঁয়ে রেখেছিল ওই মেয়ে। চোখ বুজে থিরথির করে কাঁপছিল তখনও। পরে আমি সেই ছবি আঁকতে চেষ্টা করেছিলাম বারবার। পারিনি। কেন পারিনি, জানি না। একটুও পারিনি…। কী যেন নাম ছিল ছেলেটার—সৈকত। কৃষ্ণার সঙ্গে রাজনীতি করত। সুন্দর চেহারাটার মতো কথাও বলত সুন্দর। কৃষ্ণাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল একদিন আমার সঙ্গে। ডাক্তারি পড়তে পড়তে ছেড়ে দিয়ে জঙ্গি রাজনীতি করতে চলে এসেছিল বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে। সুখের জীবনযাপন, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ—সব কিছু ছেড়ে দিয়ে কৃষ্ণার মতোই লুকোনো, পালানো জীবন বেছে নিয়েছিল। কার যে কোন জীবন ভালো লাগে? কে যে কেমনভাবে ঠিক বাঁচতে চায়?—এত কঠিন…পুরোনো সব কথাগুলোর মতো হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি। সম্বিৎ ফিরতে দেখি বাবা চিৎ হয়ে শুয়ে থেকেই পায়ের ওপর পা তুলে খবরের কাগজ পড়ছে। চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমাটা। পাশে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ। মুখে দামি লম্বা সিগারেট। সুখী সুখী দেখতে লাগছে বাবাকে। এখন বাবার বুক জ্বলছে। পেটের পর থেকে নীচের বাকিটুকু নেই। সব পুড়ে খাক। নিজের দিকে তাকালাম আমি। আমারও তাই। বুকের কাছে আগুন। ডাকলাম ‘বাবা।’
বাবা মুখ ফেরাল। সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়লাম, ‘তুমি কি সাধনামাসিকে ভালোবাসতে?’
বাবা কি শুনতে পেল না? আমার দিকে তাকিয়ে রইল শুধু। আমি আরও জোরে বললাম কথাটা। আরও জোরে—দু-তিনবার। বাবা চুপ থাকল তবু। সারাজীবন চুপ থাকলে কেন?—একটা কথার উত্তর দিতেও ভয় করে? অ্যাঁ, ভয় করে? কাপুরুষ। বলতে পারো না, হ্যাঁ ভালোবাসতাম। মিথ্যেই না হয় বলতে। সেটুকু সাহসও নেই? আমি কিছু জানি না, কিছু দেখেনি ভেবেছ? একদিন বিকেলে, মা তখন ঘরে ছিল না, সাধনামাসি আমাদের ঘরে কাঁদতে কাঁদতে তোমাকে বলেছিল, ‘আমি জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে গেলাম সুকুদা।’ মাসিকে সেই প্রথম কাঁদতে দেখেছিলাম আমি। তুমি তখন ওর শিরা ওঠা হাতের ওপর হাত রাখোনি? আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম, খোঁচা খোঁচা শুকনো কাঁচা-পাকা দাড়ির ভেতর তোমার চিবুক কেঁপে উঠেছিল।…কথাগুলো বলতে পারলাম না। এতটা তুচ্ছ সামান্য মানুষের পরম গোপনীয় মুহূর্তটুকু চিৎকার করে উলঙ্গ করে দিতে ইচ্ছে করল না। উলটে প্রশ্ন করলাম, ‘তুমি বললে না তো কেন এসেছ এখানে? কীভাবে?’ বাবা আমার প্রশ্নে ঠোঁট নাড়াল। কথাগুলো কানে না পৌঁছোলেও বুঝতে পারলাম বাবাও আমাকে একই প্রশ্ন জিগ্যেস করছে।
‘আমি ভেবেছিলাম না পাওয়াগুলো মানুষের বোধহয় একসময় অভ্যাস হয়ে যায়। যায় না। কিচ্ছু অভ্যাস হয় না আসলে। শুনতে পাচ্ছ? হয় না। কোনওদিন হয় না। আজীবন ধরে…’ আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বাবা ওপাশ ফিরল। আমি চিৎকার করে উঠলাম, ‘তুমি এখনও এভাবে পিছন ফিরতে পারো না। আমার কথাগুলো শুনতে তুমি বাধ্য। আমার এই অবস্থার জন্য তোমারও কিছু কৈফিয়ত দেওয়া উচিত।’ কথাগুলো বলতে বলতেই আগুন আমার বাঁ-চোখ ছুঁল, ফটাস করে ফেটে গেল চোখটা। একটা চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাথাটা গরম হয়ে গেল আমার। জোর গলায় বললাম, ‘আর্ট কলেজে পড়তে পারিনি তোমার কথা ভেবে। টিউশন করে যেটুকু রোজগার করতাম তার প্রায় সবটাই দিয়ে দিতে হত সংসারে। কোনওদিন এতটুকু খোঁজ নিয়েছিলে, আমার কী চাই? তুমি কি এটুকুও জানতে কাল আমার বত্রিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল। জন্মদিন ছিল আমার। কাল কতদিন পরে সারাদিন ধরে একটা ছবি এঁকেছিলাম আমি। কার ছবি জানো? সাধনামাসির। ওর মুখটা হঠাৎ কেন আঁকলাম জানি না। সাধনামাসি এখন কোথায় বলতে পারো? পেটে ক্যানসার ধরা পড়ার পর একদিন কাউকে কিছু না বলে কোথায় যে চলে গেল মাসি, কেন পালিয়ে গিয়েছিল, বাবা? মাসি তো পালিয়ে যাওয়ার মানুষ ছিল না। জানো না তুমি? মাসির ভাইয়ের বউ এখন ক’বাড়ির রান্নার কাজ করে। ছেলেটা ক্লাস এইট। ও যখন খুব ছোট, মাসি আমাকে বলেছিল, ‘জানিস, বাবুটার পড়াশুনোয় মাথা খুব ভালো। কী বলে শুনবি, বলে বড় হয়ে নাকি ইঞ্জিন হবে। মানে বুঝলি…ইঞ্জিনিয়র’ বলে মাসির সেদিনের হি-হি করে হাসি আমার আজও মনে আছে। কোথায় চলে গিয়েছিল বাবা, সত্যি কি জানতে না তুমি? কেন শেষপর্যন্ত পালিয়ে গিয়েছিল একটুও জানতে না? তাহলে মাসির চলে যাওয়ার পরেও, তোমাদের এতদিনের সম্পর্কের পরেও তোমার মনে এতটুকু দাগ কাটল না! তুমিও কি ভয় পেয়েছিলে? কীসের? একেকদিন ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করত মাসিকে। কোনওদিন বলিনি তোমাকে। কারণ জানতাম তোমাকে কিছু বলে কোনও কোনও লাভ নেই। তুমি কিচ্ছু পারো না। কিস্যু না। দিতেও না। নিতেও না। শুধু পালাতে আর না পারতে আর পেতে শিখেছিলাম তোমার কাছে। বাড়িতে যতটুকু সময় থাকতাম, দেখতাম কী একটা পরলোকতত্বের বই খুলে তুমি বসে আছ। তখন ভীষণ ঘেন্না হত তোমার ওপর। একটা গুটিয়ে যাওয়া কেন্নোর মতো মনে হত তোমাকে। ইচ্ছে হত কৃষ্ণার কাছ থেকে পিস্তলটা নিয়ে এসে তোমার হাতে গুঁজে দিয়ে বলি কিছু একটা করো, যা হোক কিছু। কোথাও পালিয়ে যাওয়া যায় না বাবা। কোনও জায়গা নেই। আমি অন্তত এটুকু বুঝেছিলাম, তুমি বোঝোনি। শুধু দৌড়ে বেড়ালে। ঘরে চুরি করতে আসা বেড়ালটাকে জানালা-দরজা সব বন্ধ করে দিয়ে তাড়া করলে ওটা যেমন দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে এলোপাথাড়ি ছোটাছুটি করতে থাকে, ঠিক তেমনিভাবে ছুটেছ তুমি। জীবনভর। এই উদাহরণটা অবশ্য আমার বানানো নয়। অংশু একদিন আমাকে মানুষ প্রসঙ্গে কথাটা বলেছিল। ও আপ্রাণ সরকারি চাকরির চেষ্টা করত। দিনরাত এক করে খাতা-বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকত। একটার পর একটা পরীক্ষা দিত। আমিও কিছুদিন পড়াশোনা করেছিলাম ওর সঙ্গে। ও পেয়ে গেল। আমি পাইনি। রাইটার্সে চাকরি করে এখন। পরশু বিকেলেও দেখা হয়েছিল ওর সঙ্গে। দোকানে নিয়ে গিয়ে এগরোল খাওয়াল জোর করে। তারপর চা খেয়ে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করে নিজে একটা ধরিয়ে আরেকটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেশ লাজুক গলায় বলল সামনের মাসে বিয়ে করছে। বর্ধমানের মেয়ে। আমাকে নাকি দু-দিন আগে থাকতেই হবে।…আরও কত কিছু বলে যাচ্ছিল গলগল করে। বিশ্বাস করো বাবা ওর মুখ দেখে আমি ভেবেছিলাম প্রচণ্ড হিংসা হবে আমার। জ্বলেপুড়ে যাব। স্যাঁতসেঁতে ড্যাম্প খাওয়া দেওয়ালের মতো। সেদিন সত্যি সত্যি আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছিল আমার। হিংসাটুকুও…। অনেকক্ষণ ওপাশ ফিরে রয়েছ তুমি। তুমি কি ঘুমোচ্ছ? আমি জানি, তুমি ঘুমোচ্ছ না। আমার প্রতিটা কথা প্রতিটা শব্দ শুনছ। আজীবন যেভাবে না শোনার ভান করে উদাসীন সেজে শুনে গেছ সবার কথা। রাগের, দু:খের, ভালোবাসার, আনন্দের সব কথার একই অভিব্যক্তি ছিল তোমার মুখে। ‘একবার আমার দিকে ফিরবে?—প্লিজ! কিছু বলবে আমাকে?—বাবা…’ কথাটা শেষ করতেই আমার গলায় আগুন ধরল। পাশ ফিরল বাবা, ঠোঁটে আগুন জ্বলছে। বাবা কথা বলার জন্য সামান্য হাঁ করতেই ভলকে ভলকে মুখের ভেতর থেকে আগুন বেরোতে থাকল শুধু। কিছু শুনতে পেলাম না আমি।
‘আর একটু জোরে বলবে তুমি? আর একটু…’
বাবা বলতে গেল প্রাণপণ। শুধু গলগল করে আগুন। বাবার দুটো চোখই ফট করে জ্বলে গেল একসঙ্গে।
‘কী হল বলো? কেন বলতে পারো না তুমি? বলো’—চিৎকার করে উঠলাম। দুটো চোখের কোটর দিয়ে, গলা দিয়ে আগুন বেরিয়ে আসছে। দুহাতে আগুনটা চেপে ধরে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিল বাবা। তারপর হাতে তুলে ধরল একটা কাগজ। আমি কাগজটার দিকে তাকালাম। বিচ্ছিরিভাবে খাতা থেকে ছেঁড়া রুলটানা কাগজটায় আঁকাবাঁকা হাতে লেখা—’আমার আর কোনও উপায় ছিল না সুকুদা। বিশ্বাস করো। ওদের সামনে মরে যেতে আমার লজ্জা করত।’
সাধনামাসি, তুমিও। তুমিও ভয় পেতে?—এসব তুমি এতদিন পরে কেন দেখাচ্ছ আমাকে?…আচ্ছা বাবা, তুমি আমাকেও ভালোবাসতে, না? আমি জানি বাসতে। মা যখন রেগে গিয়ে আমার ছবি আঁকার কাগজ, রং, তুলি সব ছুড়ে বাইরে ফেলে দিত তখন পরে সবার আড়ালে তুমি ওগুলো যত্ন করে কুড়িয়ে আবার তুলে রাখতে। আমি দেখেছি। তুমি মাকেও ভালোবাসতে, না? ভালোবাসতে এত ভয় করে কেন বলতে পারো?
জানো কৃষ্ণা কনসিভ করেছিল। একদিন দেখা হয়েছিল ওর সঙ্গে। আমি জানতাম বাচ্চাটা নিশ্চয়ই সৈকতের। বিয়ে না করে মা হওয়ায় পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে ওকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। আমি জানতাম কৃষ্ণা কিছুতেই পার্টির কাছে সৈকতের নাম বলেনি। ওকে আমি চিনি। আমার কাছেও বলেনি নামটা। আমিও জিগ্যেস করিনি। ওর সুন্দর চোখদুটো আরও সুন্দর লাগছিল সেদিন। বাঘ-সিংহ খেলনা বানানোর একটা কারখানায় কাজ পেয়েছিল ও। কৃষ্ণা চলে যাওয়ার পরেও আমি ওখানটায় একা চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলাম অনেকক্ষণ। হাওয়া দিয়েছিল খুব। হাওয়াতে সত্যি সত্যি দুধের গন্ধ ছিল তখন।
…আমার এইটার ভেতরে কতক্ষণ হল আছি? এক ঘণ্টা? আরও বেশি? পুরোটা কেন ছাই হচ্ছি না বাবা? ওই তো তোমার হাত-পা-পেট-বুক সব পুড়ে খাক। আমারও। শুধু মাথাটা…ওহ মাথাটা যে কখন…শুধু তুমি আর আমি কেন? আর কেউ নেই? তুমি কীভাবে এলে বললে না তো। বলবে না। আচ্ছা থাক। লজ্জা পাচ্ছ বলতে। ‘জানো বাবা, ট্রেনটা যখন আমার খুব কাছে চলে এসেছিল, যখন আমার আর সরে যাওয়ার উপায় নেই, তখন একমুহূর্তের জন্য ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করেছিল আমার। সত্যি সত্যি। শা…ল লা হ! তোমারও তাই হয়েছিল কি? বলো না, হয়েছিল? নিশ্চয়ই হয়েছিল। অথচ জানো তার একটু আগে পর্যন্তও মরতে একটুও রাগ হয়নি আমার। তোমার?’—কথাগুলো বলতে বলতেই দেখলাম বাবার মাথাভর্তি আগুন ভরে গেছে। দাউদাউ করে জ্বলছে মাথা। আমারও জ্বলছে। অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে আগুনের। অনেকটা ঝিঁঝির মতো। ঘিলু-শিরা-উপশিরা সব কিছু ধকধক করে জ্বলে উঠে আমার খুলিটা ফটাস করে ফেটে যাওয়ার শব্দে হতেই ধড়মড় করে আমি উঠে বসলাম বিছানায়। ঘেমে স্নান করে গেছি। চোখ খুলে দেখলাম আমাদের টিনের চালের ছোট্ট গুমটি ঘরটার মাঝখানে চৌকিতে বসে আছি আমি। একটা স্বপ্নে রাত ভোর হয়ে এসেছে। ছোট জানলার পরদা সরিয়ে ভোরের প্রথম আলো আর মিহি ঠান্ডা হাওয়া ঢুকছে ঘরের ভেতর। আমি পাশে তাকালাম। বাবা শিশুর মতো ঘুমোচ্ছে। বিছানা ছেড়ে সন্তর্পণে উঠতে যাচ্ছি শুনতে পেলাম পিছন থেকে বাবা ঘুমজড়ানো অলস গলায় বলে উঠল তোর পিঠে ছাইয়ের গুঁড়ো লেগে রয়েছে মুছে নিস।’
আমার সময়
জুলাই, ২০০৮