অ্যালেক্স – ৬০

অধ্যায় ৬০ 

রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোন ধরলো লা গুয়েন। 

“রাতটা আজকে ভালই কাটলো।”

“কতদূর এগুলে?” 

“আপনি কোথায় এখন?” জিজ্ঞেস করলো ক্যামিল। 

সঙ্কোচ বোধ করলো লা গুয়েন, তারমানে অবশ্যই নারীসঙ্গে রয়েছে।

“আমি কিন্তু আগেই বলেছি, আর কোন বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে থাকতে পারবো না। কোনভাবেই না।” 

“হ্যা, আমি জানি। আর বলতে হবে না। তা ছাড়া আমি এবার তেমন কিছু করতেও যাচ্ছি না।”

“লিখে রাখবো নাকি কথাটা?” 

“হ্যা, অবশ্যই।” 

“এখন কিন্তু আসলেই চিন্তায় ফেলে দিলেন।” 

“তোমার ওইদিকে কী অবস্থা?” 

ঘড়ির দিকে তাকালো ক্যামিল ।

“বোনকে টাকা দিতো, ফোন পেয়ে ওই রাতেই হোটেলে গিয়েছিলো, যেখানে ওর বোনও ছিলো।” 

“ভাল। এতে কাজ হবে তো?” 

“ও নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। এখন শুধু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। আশা করি ম্যাজিস্ট্রেট…” 

এদিকটা আমি সামলে নিবো। তা ছাড়া উনিও এখন আমাদের পক্ষেই।” 

“তাহলে এখন সব থেকে উত্তম কাজ হবে একটু ঘুমিয়ে নেয়া।” 

*

বাসায় ফিরে গেল ক্যামিল 

রাত তিনটা বাজে। বাসায় ফিরে দেয়ালে পেরেক ঠুকতে শুরু করে, মাঝরাতে এমন শব্দ প্রতিবেশীদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। যদিও তার প্রতি তাদের কোন অভিযোগ নেই। পেরেক ঠুকে, মায়ের আঁকা ছবিটা দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়। অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল তার মন। 

অফিস থেকে ফেরার পথে লুইসকে খুঁজছিলো। কিন্তু লুইস আরো আগেই বেরিয়ে গেছে। কালই তার সাথে দেখা হবে। কিন্তু কী বলবে, তাই ভাবতে লাগলো। এমন কাজের জন্য একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য হয়ে গেছে তার। কিন্তু টাকার ব্যাপারটা এখনো তার মাথায় ঘুরছে। 

ছোট্ট অ্যালেক্সের ছবি মনে ভেসে উঠতেই, তার চোখ গড়িয়ে পানি নেমে এলো। 

গুটি গুটি অক্ষরে লেখা ছোট্ট মেয়েটার উপর পাশবিক অত্যাচারের কথা মনে পড়তেই কষ্টে বুক ভেঙে গেল। 

*

পরবর্তি সতেরো ঘণ্টার ব্যবধানে আরো তিনবার জেরা করা হলো টমাস ভ্যাসোকে। দুইবার আরম্যান্ড, একবার লুইস। আরম্যান্ড প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতে শুরু করলো। তুলুজে কবে কবে গিয়েছিলো তা দিন তারিখ সহ জানতে চাইলে রেগে যায় টমাস। 

“বিশ বছর আগের কথা- দুই একদিন এদিক ওদিক হলে সমস্যা কোথায়?” 

আরম্যান্ড এমনভাবে তাকালো যেন বলতে চাইছে, ‘আমার সাথে চিল্লাচিল্লি করে লাভ নেই। আমি শুধু আদেশ পালন করছি’। 

“আমার বিরুদ্ধে আপনারা কিছুই পাননি। একটা চুলও না।” 

“সেক্ষেত্রে, আপনার চিন্তা করার কিছু নেই।” মুচকি হেসে জবাব দিলো আরম্যান্ড। 

ঘড়ির দিকে তাকালো ভ্যাসো। সময় যেন কাটতে চাইছে না। কখন এখান থেকে মুক্তি পাবে। 

কিছুক্ষণ পর ক্যামিলও চলে এলো। 

“কী খবর, ক্যাপ্টেন? দিনকাল কেমন চলছে? খুব শীঘ্রই আমরা আলাদা হয়ে যাচ্ছি। আশা করি কষ্ট পাবেন না?” 

“তাড়াতাড়ি? এতো ‘তাড়াতাড়ি কেন?” 

এমন সময়ে ফোন বেজে উঠলো। আরম্যান্ড যেয়ে ফোন রিসিভ করলো। অপর প্রান্ত থেকে কিছু বলার পর ধন্যবাদ বলে ফোন রেখে দিলো সে। 

ক্যামিল এখনো ভ্যাসোর উপর থেকে চোখ সরায়নি। 

“কেবলই ম্যাজিস্ট্রেট আপনাকে পুলিশ হেফাজতে রাখার সময় আরো চব্বিশ ঘণ্টা বাড়িয়ে দিলো।” একদম শান্ত কণ্ঠে বলল ক্যামিল। 

“আমি এখনই ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দেখা করতে চাই!” উচ্চস্বরে বলল টমাস। 

“আমি অত্যন্ত দুঃখিত, মঁসিয়ে ভ্যাসো। কিন্তু হয়েছে কি আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব একটু ব্যস্ত তো, উনি এখন আসতে পারবে না। আমরা আরো কিছুটা সময় না হয় একসাথে কাটাই। আশা করি আপনি কষ্ট পাবেন না?” 

“এরপর কী করবেন আপনি? ম্যাজিস্ট্রেটকে ভুলভাল বুঝিয়ে না হয় চব্বিশ ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এরপর? এরপর তো আমাকে ছেড়ে দিতেই হবে। কেননা, আমার বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ করতে পারবেন না আপনি। আপনি আসলে…”

শব্দ হারিয়ে ফেললো টমাস ভ্যাসো। 

তার সাহায্যে এগিয়ে এলো ক্যামিল। 

“… অসহ্যকর একজন মানুষ।” 

*

সারাদিন পর তিনটার দিকে লুইসকে একা পেলো ক্যামিল। এরপর আর কোন দেরি না করে বলল, “ধন্যবাদ।” 

“ধন্যবাদ, লুইস।” 

আরো কিছু বলা দরকার তার। এখানেই থেমে গেলে হবে না। 

“এটা-” 

বলেই থেমে গেল লুইস। গিফটটা যে লুইস দেয়নি, তা তার মুখভঙ্গি দেখেই বুঝে ফেললো। এখানে তার কোন হাত ছিল না। 

“ধন্যবাদ? কিসের জন্য?” 

“সবকিছুর জন্য, লুইস। তোমার সাহায্য….মানে সবকিছু।” 

“তাই নাকি?” লুইস কিছুটা বিস্মিত, কেননা এভাবে ক্যামিলের কাছ থেকে ধন্যবাদ পেয়ে অভ্যস্ত না। 

*

কিছু তথ্য যাচাই করার জন্য ভ্যাসোকে আবারো তার সেল থেকে নিয়ে আসা হলো। 

লা গুয়েনের অফিসে চলে গেল ক্যামিল। নক না করেই ভেতরে ঢুকে পড়লে খারাপ খবর এসেছে ভেবে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। হাত তুলে তাকে আশ্বস্ত করলো ক্যামিল। কেসের ব্যাপারে কথাবার্তা বলল কিছুক্ষণ। এখন শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। ক্যামিল তার মায়ের ছবির নিলামের প্রসঙ্গ তুললো। 

“কত বললে তুমি?” 

টাকার অঙ্কটা আবারো বলল ক্যামিল, যা তার নিজেরই বিশ্বাস হয় না। লা গুয়েনকে বেশ মুগ্ধ মনে হলো। 

পোট্রেটের কথা উল্লেখ করলো না ক্যামিল। কেননা নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে সে। মায়ের সে বন্ধুকে ফোন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো, নিলামে ভাল লাভ হওয়ার কারণে, মায়ের এই স্মৃতি উপহার হিসেবে দিয়েছে তাকে। স্বস্তি বোধ করলো সে। 

ঠিক সাতটার সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।

এখন সাতটা বাজে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চলে এসেছে। 

টমাস ভ্যাসো ক্লান্ত ভঙ্গিতে সেল থেকে অফিসে এসে বসলো। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। বেশ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে তাকে, গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় প্রায় ঘুমায়নি বললেই চলে। এক নির্মম সত্য তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। 

অধ্যায় ৬১ 

“ব্যাপারটা হলো আপনার বোনের মৃত্যুর ব্যাপারে এখনও কিছু সন্দেহ রয়ে গেছে আমাদের। ওহ, সরি, সৎ বোনের ব্যাপারে।” 

কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না টমাস। এই প্রশ্নের পিছনে কী কারণ থাকতে পারে, তাই নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো। সময় প্রায় শেষের দিকে বলে আর উত্তেজিত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। নিজেকে শান্ত করে ভাবতে শুর করে বাকিটা সময় কীভাবে পার করবে। আর পরবর্তী প্রশ্নগুলোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলো। 

“আচ্ছা, আপনাদের সময় আটটার দিকে শেষ হবে, তাই না?” 

“বোনের মৃত্যু নিয়ে দেখছি আপনার কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।” 

কোন উত্তর না দিয়ে ভ্যাসো এমনভাবে সিলিঙয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো যেন ওখান থেকে কোন অনুপ্রেরণা খুঁজছে। 

“আমি আসলে মর্মাহত। খুবই মর্মাহত। কিন্তু কী করার আছে বলুন? রক্তের বাঁধন ছিড়ে গেলে কার না কষ্ট লাগে?” 

“আমি তার মৃত্যু নিয়ে কথা বলছি না। কীভাবে মারা গেল সেটাই জানার চেষ্টা করছি। 

নড় করলো ভ্যাসো। 

“বার্বিচুরেট। আসলেই, খুবই কষ্টদায়ক আর ভয়াবহ। ওর নাকি ঠিকমতো ঘুম হতো না। বার্বিচুরেট ছাড়া ঘুমাতেই পারতো না।” 

এমনভাবে বলল যেন বোনের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। এখনও ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। 

ওষুধের ব্যাপারটাই এমন, প্রচুর ভেবেচিন্তে খেতে হয়, তাই না? আপনার কী মনে হয়? নার্স হওয়ার কারণে যে কোন ওষুধ খুব সহজেই কিনতে পারতো অ্যালেক্স।” 

হুট করেই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়লো ভ্যাসো। 

“কিন্তু আমি এখনও বুঝলাম না বার্বিচুরেটের কারণে মৃত্যু হয় কীভাবে? হয়তো শরীরে খিঁচুনি উঠে মারা যায় মানুষ।” 

“খুব দ্রুত সময়ে মাত্রাতিরিক্ত ডোজ দেয়ার ফলে ভিক্টিম কোমায় চলে যায়। আস্তে আস্তে শ্বাসতন্ত্র নিজের কাজ করার ক্ষমতা হারায়; ভিক্টিমের শ্বাসের সাথে সাথে বমিও চলে যায় ফুসফুসে এবং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।” 

একনাগারে কথা বলে বড় করে শ্বাস নিলো ক্যামিল। 

“যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে আমরা এখন ওইরাতে ফিরে যাই যে রাতে আপনি অ্যালেক্সের হোটেলে গিয়েছিলেন। মাঝরাতের একটু পরেই তো, তাই না?” 

“আপনার তো সাক্ষী আছেই, তাদেরকেই জিজ্ঞেস করুন না?”

“তাদের সাথে কথা হয়েছে আমাদের।” 

“কী বলল?” 

“বারোটা বিশের দিকে।” 

“তাহলে, তাই।” 

“আমাদের দু’জন সাক্ষীর চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও, অন্য আরেকজন ঠিকই আপনাকে দেখে ফেলে। সাক্ষী আপনাকে লিফট এর জন্য অপেক্ষা করতে দেখেছে। এরপর কী হয়েছিলো তা সে জানে না। কেননা তার রুম ছিল নিচতলায়। আর আপনি তো লিফটে…” 

“না।” 

“আসলেই? কিন্ত…”

“আমি কোথায় যাবো লিফটে?” 

“ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর আমরাও খুঁজে বেড়াচ্ছি। আপনি কোথায় যাচ্ছিলেন।” 

অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলো ভ্যাসো। 

“দেখুন, অ্যালেক্স ফোন করে তার সাথে দেখা করতে বলে, আমি ওর দেয়া ঠিকানায় যেয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। ও না আসায় হোটেলে যাই, কিন্তু সেখানেও দেখি রিসিপশন ডেস্কে কেউ নেই। এরপর আমি কী করবো? দুইশটা রুমে যেয়ে দরজা নক করে বলবো, ‘আমার বোনকে দেখছেন?” 

“সৎ বোন,” শুধরে দিলো ক্যামিল। 

রাগে দাঁত কিড়মিড় করলো ভ্যাসো। না শোনার ভান করে এগিয়ে গেল।

“তো যাই হোক, হোটেল থেকে দুইশ মিটার দূরে নিজের গাড়িতে বসে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। যে কেউ একই কাজ করতো। আমি ভেবেছিলাম রিসিপশন ডেস্কে গেস্টদের লিস্ট পাবো, সেখান থেকে অ্যালেক্সের রুমও বের করে নিবো। কিন্তু ওখানে কিছুই ছিল না। আমার আর কী করার ছিলো? তাই, এরপর বাসায় চলে যাই। এই তো।” 

“তারমানে এরপর আপনি আর কিছুই করেননি?”

“না। আমি আর কিছুই করিনি।” 

অসন্তুষ্ট ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো ক্যামিল। 

“কী? এতে সমস্যা কোথায়?” 

সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। 

আর একবার ঘড়ির দিকে তাকালো সে। আর বেশি সময় নেই। একটু পরেই এখান থেকে বের হয়ে যেতে পারবে ভেবে মুচকি হাসলো ভ্যাসো। 

“আমি তো কোন সমস্যা দেখি না। শুধু…” 

“শুধু কী?” 

“যদি আমি ওকে খুঁজে পেতাম, তাহলে এমন কিছুই হতো না।”

“মানে?” 

“মানে আমি খুঁজে পেলে, ওকে বাঁচাতে পারতাম।” 

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে আপনি খুঁজে পাননি, আর বাঁচানোও যায় নি।” 

নিজের হাত প্রসারিত করলো ভ্যাসো। 

ক্যামিল নিজের কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিলো। 

“আপনার বোনের মৃত্যুর ব্যাপারে প্যাথলজিস্টের কিছু সন্দেহ আছে, মঁসিয়ে ভ্যাসো।” 

“সন্দেহ?” 

“হ্যা।” 

“কী রকম?” 

“আপনার বোনকে আসলে হত্যা করা হয়েছিলো, কিন্তু তা আত্মহত্যার মত করে সাজানো হয়েছে। আমার মতে, একদম ঠাণ্ডা মাথায় এ কাজ করা হয়েছে।” 

“এসব কী বালছাল বলছেন?” উত্তেজিত কণ্ঠে বলল ভ্যাসো। 

প্রথমত, অ্যালেক্সের আচার আচরণে মনে হয় না, আত্মহত্যা করার মত মেয়ে ও।” 

“কেমন আচার আচরণ…?” 

“জুরিখের টিকেট, গোছানো লাগেজ আর ট্যাক্সির বুকিং। আত্মহত্যা করতে যাওয়া একজনের এসব ঠিক করে রাখার কথা নয়। এছাড়াও সন্দেহ করার মত আরো কারণ আছে। মাথায় বেশ কয়েকটা গভীর ক্ষত আছে যা বাথরুমের বেসিনে আঘাত করার ফলে হয়েছে। অটোপসি রিপোর্ট এ বলা হয়েছে ক্ষতগুলো বেশ গভীর। তাই আমাদের ধারণা, এটা অন্য কেউ করেছে। ওইরাতে অ্যালেক্সের সাথে আরেকজন ছিলো।” 

“কিন্তু…কে?” 

“সত্যি বলতে, মঁসিয়ে ভ্যাসো, আমাদের বিশ্বাস আপনিই ছিলেন।”

“কী?” চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল ভ্যাসো। 

“আপনি বসে পড়ুন।” 

কিছু সময় পর ভ্যাসো শান্ত হয়ে বসলো। 

“আমি জানি বোনের মৃত্যু আপনার জন্য অনেক বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে, মঁসিয়ে ভ্যাসো। কিন্তু, কিছু করার নেই আমাদের। সাধারণত আত্মহত্যার ক্ষেত্রে ভিক্টিম একটা পদ্ধতি অনুসরণ করে। কেউ সিলিংয়ে ঝুলে পড়ে, কেউ জানালা থেকে লাফ দেয়, কেউ নিজের কব্জি কেটে ফেলে কিংবা অন্য কোন অংশ। আবার কেউ পিল খায়। কিন্তু একইসাথে দুইটা পদ্ধতি কেউ অনুসরণ করে না।” 

“এসবের সাথে আমার কী সম্পর্ক?” 

কথার ঝাঁঝেই বোঝা গেল এসবের সাথে তার কোন সম্পর্কই নেই। 

“ঠিক বুঝলাম না।” 

“আমি বলতে চাচ্ছি, এসবের সাথে আমার কী সম্পর্ক?” 

“সবকিছুর সাথেই আপনি জড়িত। কেননা আপনার ছাপ…”

“ছাপ? কিসের ছাপ? বালের…” 

টেলিফোন বেজে উঠলো, কিন্তু সে থামলো না। ক্যামিল ফোন রিসিভ করলো। তাই লুইস আর আরম্যান্ডের দিকে তাকালো ভ্যাসো। 

“কোন ছাপের কথা হচ্ছে?” 

লুইস মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলো এই ব্যাপারে তার কোন ধারণা নেই। আরম্যান্ড তো আরো আগে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। 

“কোন ছাপের কথা বলছেন আপনি?” ক্যামিলকে জিজ্ঞেস করলো ভ্যাসো। 

“ওহ, আচ্ছা। অ্যালেক্সের আঙুলের ছাপের কথা বলছি।” 

“ওর আঙুলের ছাপ নিয়ে আবার কী হলো?” 

কিছুই বলল না ক্যামিল। মাঝে মাঝে তাকে বুঝে উঠা যে কারো জন্য মুশকিল। 

“আরে, আজব তো। ওই রুমে অ্যালেক্স ছিলো। ওখানে তো ওর আঙুলের ছাপ থাকাটা স্বাভাবিক।” 

হাত তালি দিয়ে ভ্যাসোর বুদ্ধির প্রশংসা করলো ক্যামিল । 

“ঠিক এটা আমারও কথা। কিন্তু ওর আঙুলের ছাপ বেশিরভাগ পাওয়া যায় নি।” হাততালি থামিয়ে বলল ক্যামিল। 

ভ্যাসো বুঝতে পারছে এরপরেই আসবে আরেকটা প্রশ্ন। এরজন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে। 

“রুম থেকে অ্যালেক্সের আঙুলের ছাপ খুব কম পেয়েছি আমরা, যা বেশ অস্বাভাবিক। আমাদের বিশ্বাস কেউ তার নিজের আঙুলের ছাপ মুছতে গিয়ে অ্যালেক্সেরটাও মুছে ফেলেছে। সব না, কিন্তু বেশিরভাগই। কিছু জায়গা আবার চোখে পড়ার মত। যেমন, দরজার হাতল।” 

ভ্যাসো যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো। বলার মত কিছুই খুঁজে পেলো না।

“দেখুন, মঁসিয়ে ভ্যাসো, যে মানুষটা আত্মহত্যা করবে, সে কখনোই নিজের আঙুলের ছাপ মুছতে যাবে না।” 

কথাগুলো ঠিক যেন হজম হচ্ছে না টমাস ভ্যাসোর। 

“এরজন্যেই, আমাদের বিশ্বাস যে ওইরাতে তার সাথে অন্য কেউ ছিলো, যে এই কাজগুলো করেছে।” 

টমাসের মুখের করুণ অবস্থা দেখে, তাকে তথ্যগুলো হজম করার সময় দিলো ক্যামিল। কিছুক্ষণ পর স্কুল শিক্ষকের ভঙ্গিমায় কথা বলতে শুরু করলো। 

“আঙুলের ছাপের দিক থেকে চিন্তা করলে, হুইস্কির বোতল আবার আরেকটা সমস্যা। হুইস্কির বোতল প্রায় অর্ধেক খালি ছিলো। হুইস্কি বার্বিচুরেটের বিষক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত করে, মৃত্যুকে করে সুনিশ্চিত। কিন্তু, সমস্যাটা হলো হুইস্কির বোতল থেকেও খুব সতর্কতার সাথে আঙুলের ছাপ মুছে ফেলা হয়েছে, আর যে টি-শার্ট দিয়ে মোছা হয়েছে তা সোফার পাশেই পড়ে ছিলো। আবার ফরেনসিক বিভাগ থেকে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, আঙুলের ছাপ এমন চ্যাপ্টা যে কেউ হয়তো জোর করিয়ে হুইস্কি খেতে বাধ্য করেছে তাকে। এই ব্যাপারে আপনার কী মতামত?” 

“আমা…আমার কিছুই বলার নেই। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।”

“ওহ, কিন্তু আপনার তো জানার কথা, মঁসিয়ে ভ্যাসো। কেননা, আপনিই ওইরাতে অ্যালেক্সের সাথে ছিলেন!!” 

মোটেও না। আমি কখনোই ওখানে ছিলাম না। আমি কিন্তু আগেই বলেছি, আমি বাসায় ফিরে গিয়েছিলাম।” 

“আপনি যদি সেখানে নাই থাকতেন, তাহলে ওখানে আপনার আঙুলের ছাপ আমরা কীভাবে পেলাম, মঁসিয়ে ভ্যাসো?” 

ভ্যাসো বোবা হয়ে গেল। ক্যামিল নড়েচড়ে বসলো। 

“আমরা অ্যালেক্সের রুমে আপনার আঙুলের ছাপ খুঁজে পেয়েছি। আমাদের ধারণা আপনিই তাকে খুন করেছেন। 

তীক্ষ্ণ এক চিৎকার যেন ভ্যাসোর গলায় আটকে গেল তাই কেঁউকেঁউ করে চেঁচাতে লাগলো। 

“এটা অসম্ভব। আমি ওই রুমে এক কদমও রাখিনি। আঙুলের ছাপ কোথায় পেয়েছেন?” 

“বার্বিচুরেটের বোতলে। আপনি হয়তো মুছতে ভুলে গেছেন। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই, তাড়াহুড়োয় এমনটা হতেই পারে।”

“বুঝতে পেরেছি! বুঝতে পেরেছি! ওই বোতল আমি দেখেছিলাম, গোলাপি পিল। আমি ধরেছিলাম। অ্যালেক্সও ছিল তখন!” গর্জন করে বলল ভ্যাসো। 

ক্যামিল ব্যাখ্যা দাবি করলো। 

“যখন অ্যালেক্সের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো…” 

“আচ্ছা।” 

“শেষবার যখন দেখা হয়েছিলো…” 

“কবে সেটা?” 

“আমার ঠিক মনে নেই। তিন সপ্তাহ আগে নয়তো একমাস।“

“আচ্ছা।” 

“ও আমাকে বোতলটা দেখিয়েছিলো।” 

“সত্যিই? কোথায় দেখিয়েছিলো?” 

“আমার অফিসের পাশের একটা ক্যাফেতে।” 

“বাহ, বেশ ভাল, মঁসিয়ে ভ্যাসো, আপনি আমাদের বিস্তারিত বলুন না?” আস্তে আস্তে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এলো তার। তার সামনে যেন নতুন দুয়ার খুলে গিয়েছে। আবারো একটা সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে তার সামনে। এখন পুরো ঘটনাটা ব্যাখ্যা করতে পারবে, আর তা মানতেই হবে এই অফিসারদের। একটা বোতলের কারণে তার বিরুদ্ধে এই কেস হতে পারে না। 

“একমাস আগে অ্যালেক্স আমার সাথে দেখা করতে চায়।”

“টাকা চেয়েছিলো?” 

“না।” 

“তাহলে কীসের জন্য এসেছিলো?” 

ভ্যাসো জানে না। আদতে অ্যালেক্স তাকে কখনোই কারণ বলেনি, তা ছাড়া তাদের এই সাক্ষাতও হুট করে শেষ হয়ে যায়। অ্যালেক্স কফি অর্ডার করলেও, বিয়ার অর্ডার করে টমাস। আর তখনই একটা বোতল বের করে অ্যালেক্স। ভ্যাসো জিজ্ঞেস করে বোতলের ভেতরে কী আছে। 

“আলেক্সকে ওই সব ছাইপাশ খেতে দেখে…” 

“বোনের স্বাস্থ্য নিয়ে তো বেশ চিন্তিত ছিলেন আপনি।” 

ঠেস মারা কথাটা শুনেও না শোনার ভান করলো ভ্যাসো। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে মুক্তি চায় সে। 

“আমি বোতলটা ওর হাত থেকে কেড়ে নেই। তাই আমার আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।” 

সামনে বসে থাকা অফিসারদের এখনও সন্তুষ্ট মনে হলো না। আরো কিছু জানতে চায় তারা। 

“ওষুধের নাম কী ছিলো, মঁসিয়ে ভ্যাসো?” 

“আমি নামটাম কিছু দেখিনি, বোতলটা কেড়ে নেই। খুলে দেখি, কিছু গোলাপি পিল রয়েছে সেখানে। ওকে জিজ্ঞেস করি এসব কী। ব্যস, আর কিছু না।” 

“আচ্ছা, আমি বুঝতে পেরেছি বোধহয়। দুইটা একই বোতল ছিল না। কেননা অ্যালেক্স যে পিল খেয়ছিলো ওগুলো নীল ছিলো, গোলাপী না।” 

“এর মানে কী?” 

“এর মানে হচ্ছে দুইটা আলাদা বোতল ছিলো।” 

“না। না। না! এভাবে বললে হবে না।”

“চলুন একটু পিছনে ফিরে যাই। অ্যালেক্সকে হত্যা করার শক্ত কারণ ছিল আপনার, কেননা সে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করছিলো। একবার বিশ হাজার ইউরো নিয়ে নিয়েছিলো, হয়তো সামনে আরো নেয়ার পরিকল্পনা ছিলো। আপনার স্ত্রীকে মিথ্যা বলে আপনি বাসা থেকে বের হন। আপনার মতে, আপনি এরকম জায়গায় যান, যেখানে আপনাকে কেউ দেখেনি। এরপর হোটেলে যান, যেখানে দু’জন আপনাকে দেখেছে।” 

“কিন্তু এর কোনটাই আমাকে অপরাধী প্রমাণ করে না!” 

“কিন্তু কারণ তো আমরা পেয়েই গেছি, কোন অ্যালিবাই নেই, আবার রহস্যজনকভাবে আপনি অপরাধস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এর সাথে আরো যোগ করা যায়, অ্যালেক্সের মাথায় যে আঘাত ছিল তা তার নিজের পক্ষে করাও সম্ভব না, আবার ঘটনাস্থল থেকে আঙুলের ছাপও মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। এরপর আর কী বলার…”

“না! না! এতোটুকুই যথেষ্ট না…”

“আচ্ছা। ঠিক আছে, মানলাম। কিন্তু আমরা তো আপনার ডি.এন.এ পেয়েছি ওখান থেকে, মঁসিয়ে ভ্যাসো।” 

ভ্যাসো একদম বোকা বনে গেল। 

“অ্যালেক্সের লাশের পাশেই আমরা একটা চুল খুঁজে পেয়েছি। আপনার ডি.এন.এ’র সাথে তা মিলে যায়। প্রমাণ মুছে ফেলার সময় হয়তো এটা খেয়াল করেননি।” 

ক্যামিল তার সামনে দাঁড়ালো। 

“তো, মঁসিয়ে ভ্যাসো, আপনার কী মনে হয়, ডি.এন.এ কি যথেষ্ট হবে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য?” 

হতবাক হয়ে গেল টমাস ভ্যাসো। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। হাত পা যেন অসাড় হয়ে এলো তার। হুট করেই উঠে দাঁড়ালো আর বলল, 

“ও এটা ইচ্ছা করে করেছে…” 

এতো আস্তে করে বলল যেন নিজেকেই নিজে বলছে, কিন্তু কথাটা সামনে থাকা অফিসারদের উদ্দেশ্য করে বলা। 

“এই সব কিছু করেছে আমাকে ফাঁসানোর জন্য…তাই না?” 

হুট করে যেন একটা ঝাঁকি খেলো সে। কথা বলার সময় সারা শরীর কেঁপে উঠছে। অন্য যে কোন কেস হলে, যে কোন পুলিশ অফিসারের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দেখাতো। কিন্তু এখন তেমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না কারো মাঝে। লুইস কেস ফাইল নিয়ে পড়ে আছে। আর আরম্যান্ড পেপারক্লিপ দিয়ে নখ খুঁচিয়ে যাচ্ছে। তবে ক্যামিল কেবল মজা পেতে শুরু করেছে। তাই সে এগিয়ে এলো। 

“আমি অ্যালেক্সকে মেরেছিলাম….” 

কণ্ঠে কোন প্রাণ নেই তার। ক্যামিলের দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে কথা বলে চললো। 

“ক্যাফেতে পিল নিতে দেখে আমি ওর সাথে রাগারাগি করি। এরপর আমাকে শান্ত করতে অ্যালেক্স আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তখন আমার চুলে ওর আংটি আটকে যায়। এরপর হাত টান দিলে আমার চুলও উঠে আসে কয়েকটা। তখন আমি ওকে থাপ্পড় মারি। আমার চুল…” 

হতবুদ্ধিকর অবস্থা থেকে জেগে উঠলো ভ্যাসো। 

“শুরু থেকেই আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমন ফাঁদ পেতেছে, তাই না?” 

চারপাশে সাহায্যের জন্য তাকালো। কিন্তু ক্যামিল, লুইস, আরম্যান্ড কেউই সাড়া দিলো না। 

“পুরো ঘটনাটাই ওর সাজানো এবং অনেকদিন ধরে নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে। আপনারা তো বুঝতে পারছেন, তাই না? জুরিখে যাবার টিকেট, গোছানো সুটকেস, ট্যাক্সির বুকিং সবই সাজানো, যাতে পুলিশ ধারণা করে ও পালাতে চাইছিলো, আত্মহত্যার কোন ইচ্ছাই ছিল না। আর আমার সাথে এমন জায়গায় দেখা করার ব্যবস্থা করে যেখানে আমাকে কেউ দেখবে না, বেসিনে নিজের মাথা ঠুকে, নিজের আঙুলের ছাপ মুছে ফেলে, আমার আঙুলের ছাপওয়ালা বোতল ফেলে রাখে, আর একটা চুল মেঝেতে ফেলে দেয়…”

“কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ঠিক এর উল্টোটাই ঘটেছে। আর আপনার কথা প্রমাণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। অ্যালেক্স আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো, আর আপনি ওর থেকে মুক্তি চাচ্ছিলেন, তাই মোক্ষম সুযোগ বুঝে তাকে হত্যা করেন। ডি.এন.এ আর আঙুলের ছাপ তারই প্রমাণ।” 

কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা নেমে এলো। এরপর মুখ খুললো ক্যামিল। 

“আপনার জন্য একটা ভালো খবর, আরেকটা খারাপ খবর আছে। ভালো খবর হলো পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় শেষ হয়েছে, আর খারাপ খবর হলো খুনের দায়ে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।” 

“আমি খুন করিনি! আপনি জানেন, আমি খুন করিনি। আপনি জানেন, এটা ওর সাজানো নাটক, তাই না?” 

এবার সরাসরি ক্যামিলের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি শুরু থেকেই জানতেন খুনটা আমি করিনি!” 

“আপনি তো আবার হিউমারের খুব ভক্ত। আমারও কিন্তু এই ব্যাপারে প্রতিভা আছে টুকটাক। যাওয়ার আগে আপনাকে বলি, অ্যালেক্স কিন্তু আপনাকে একদম বোল্ড আউট করে দিলো।” 

“আর হ্যা, আপনাকে দু-দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু কী করবো বলুন ডিএনএ টেস্ট করতে একটু সময় লাগে তো। তাই দুইদিন রাখতে বাধ্য হয়েছি। আশা করি কিছু মনে করবেন না,” বলল ক্যামিল ।

অধ্যায় ৬২ 

লুইস করিডোর ধরে হাঁটা শুরু করলো, আরম্যান্ড ঠিক তার পেছনেই হাঁটছে। গায়ে এখনো সেই জরাজীর্ণ পোশাক। 

ক্যামিল নিজের অফিস রুমে গিয়ে আঠারো হাজার ইউরোর একটা চেক লিখলো। তার হাত কাঁপছে। এরপর নিজের ফাইলপত্র নিয়ে করিডোরের দিকে চললো। কিছুক্ষণ পর তাকে আরম্যান্ডের ডেস্কের সামনে দেখা গেল। তার সামনে আরম্যান্ড দাঁড়িয়ে আছে। 

“নাও, এটা তোমার জন্য।” চেকটা আরম্যান্ডের দিকে বাড়িয়ে দিলো ক্যামিল। 

টাকার অংক দেখে ইংরেজী ও অক্ষরের মত মুখ হা হয়ে গেল আরম্যান্ডের। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না। 

“না। না। স্যার, আমি এটা নিতে পারবো না,” বলল আরম্যান্ড। “আরে, কেন নয়? এটা তোমার উপহার। আমার পক্ষ থেকে ছোট একটা উপহার।” 

“ওহ। আপনি আসলেই অনেক ভাল মানুষ, স্যার।” 

আরম্যান্ডকে আজকে বেশ খুশি মনে হলো এতোগুলো টাকা একসাথে পেয়ে। 

*

“বেশ ভাল কাজ দেখিয়েছো তোমরা,” এই বলে লা গুয়েনের সাথে হাত মেলালো ম্যাজিস্ট্রেট। 

একটু সামনে ক্যামিল দাঁড়িয়ে আছে। সেদিকে এগিয়ে গেল ম্যাজিস্ট্রেট ভিডার্ড। 

“কম্যান্ড্যান্ট…” 

মাথা ঝাঁকালো ক্যামিল। 

“ভ্যাসো হয়তো এটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করবে, আর আসল সত্য উদ্ঘাটনের দাবি জানাবে…”

“হ্যা, আমিও এমনটাই শুনেছি,” বলল ভিডার্ড 

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কিছু একটা ভাবলো। 

“কোনটা সত্য আর কোনটা সত্য নয়, এটা কে দেখতে যাবে? সত্যের চেয়েও বড় বিষয় হলো ন্যায়বিচার। আর আমি সেটাই নিশ্চিত করবো। এতে হবে না?” 

ক্যামিল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। 

ম্যাজিস্ট্রেট ভিডার্ড, লা গুয়েন, ক্যামিল- সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে প্রশান্তির হাসি দিলো। এতোদিনের সাধনার পর এই কেস সমাধান হয়েছে। আর প্রকৃত অপরাধীর সাজার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। 

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *