অ্যালঝাইমার

অ্যালঝাইমার

‘আই হেট অ্যালঝাইমার! অ্যালঝাইমার কী জিনিস জানেন?’

প্রশ্নটা আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নীরব হয়ে বসে রইলেন তরুণ বিজ্ঞানী সুগত সেন৷ তাঁর তীব্রদৃষ্টি আমায় জরিপ করছিল৷ যেন শব্দটার গুরুত্ব বোঝাতে চাইছেন৷ আমি চুপ করে বসেছিলাম৷ ভদ্রলোক আঙুল তুলে নির্দেশ করেন—

‘ওই দেখুন, অ্যালঝাইমার৷’

শব্দগুলো উচ্চারণ করেই তিনি বারান্দার দিকে তাকালেন৷ আমিও তাঁর নজর অনুসরণ করে তাকাই৷ বারান্দায় আরামকেদারায় এক বয়স্ক ভদ্রলোক চুপ করে বসে আছেন৷ একমাথা সাদা চুল, পাকা গোঁফ-দাড়ি৷ কোনওদিকে হুঁশ নেই৷ শুধু চুপ করে সামনে তাকিয়ে থাকা ছাড়া যেন জগতে আর তাঁর কোনও কাজ নেই! একেবারে পুতুলের মতো স্থির৷

‘উনি আমার বাবা!’ সুগত একটু থেমে বললেন, ‘সারাদিন ওখানেই বসে থাকেন৷ খেতে দিলে খান, নয়তো অভুক্তই থাকেন৷ চলতে ফিরতে ভুলে গেছেন৷ অবশ্য এখনও কথা বলেন৷ তবে আমার সঙ্গে নয়৷ মায়ের সঙ্গে৷ ওঁর তো এও মনে নেই যে মা বহুবছর হল মারা গিয়েছেন৷’

আমি কী বলব বুঝে পাই না৷ এমন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলাও খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়৷ শব্দগুলোরও বুঝি স্মৃতিভ্রংশ হয়ে যায়৷ বেশির ভাগ সময় একটাই স্বরবর্ণ এমন অবস্থায় সামাল দেয়৷ আমার মুখ থেকেও সেই অক্ষরটাই বেরোল, ‘ও!’

‘ ‘ডিমেনশিয়া’ থেকে একটু একটু করে ‘অ্যালঝাইমারের’ দিকে চলে গেলেন৷ প্রথম প্রথমই কিন্তু সবকিছু ভুলতেন না৷ শুধু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোই ভুলে যেতেন৷’ সুগত বিড়বিড় করে বললেন, ‘পরে আর কিছুই মনে রইল না৷ শুনেছি আমার ঠাকুর্দারও এই রোগটা ছিল৷ ওঁকেও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল অ্যালঝাইমার৷ বাবার মুখেই শুনেছি৷’

আমি একটু আন্তরিক স্বরেই বলি, ‘বুঝতে পারছি৷’

‘না৷ আপনি বুঝতে পারছেন না৷’ ওঁর কণ্ঠস্বর এবার তীব্র হয়ে উঠেছে, ‘যে এই রোগের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি, সে কখনও এই কষ্ট, এই নরকযন্ত্রণা বুঝবে না৷ আপনার কোনও প্রিয় মানুষের এই রোগ হয়েছে?’

আমি নেতিবাচক ভাবে মাথা নাড়ি৷ আমার পূর্বপুরুষেরা কখনও বিস্মৃতির রোগে ভোগেননি৷ বরং তাঁদের স্মৃতিশক্তি এতটাই জোরালো ছিল যে শৈশবের প্রতিটা ঘটনা শেষদিন পর্যন্ত মনে রেখেছিলেন তাঁরা৷

‘তাহলে জীবনেও বুঝবেন না৷’ সুগত বললেন, ‘আমি আমার ঠাকুর্দাকে দেখেছি৷ তখন একেবারে লাস্ট স্টেজ৷ বেশির ভাগ সময়ই চুপ করে বসে থাকতেন৷ আর প্রায়ই খুব শান্তস্বরে ঠাকুমাকে ডাকতেন৷ আজও তাঁর সেই কণ্ঠস্বর মনে পড়ে৷ বাবা রোজ তাঁকে বোঝাতেন যে ঠাকুমা কোনওদিনই ফিরবেন না, তিনি সাত বছর আগেই মারা গিয়েছেন! কিন্তু কে শোনে কার কথা! সাময়িক চুপ করে যেতেন ঠিকই, আবার কিছুক্ষণ পরেই ডাকাডাকি শুরু হয়ে যেত! কীভাবে খেতে হয়, ভুলে গিয়েছিলেন৷ খাবার দিলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন৷ যেন কী দেওয়া হয়েছে বুঝতে পারছেন না!’ তাঁর কণ্ঠস্বরে অব্যক্ত যন্ত্রণা উঠে এল, ‘ভেবে দেখুন, আপনার প্রিয় মানুষ আপনারই চোখের সামনে একটু একটু করে জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত ভুলে যাচ্ছেন, আপনাকে এমনকি নিজেকেও ভুলে যাচ্ছেন, অথচ আপনার কিছু করার নেই! একটা অদৃশ্য ডাস্টার আস্তে আস্তে একটা অস্তিত্বকে মুছে দিচ্ছে, আপনার জীবনের একটা মূল্যবান অধ্যায়কে শেষ করে দিচ্ছে, অথচ আপনার নীরব দর্শকের মতো দেখা ছাড়া উপায় নেই! এই যন্ত্রণার নাম : অ্যালঝাইমার! ক্যান্সারও হয়তো এর চেয়ে অনেক সদয় রোগ৷ দুটো রোগই কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার৷ ক্যান্সার কষ্টকর! কিন্তু অ্যালঝাইমারের মতো নিষ্ঠুর জিনিস এ পৃথিবীতে আর নেই৷’

‘সেজন্যই কি অ্যালঝাইমারকে এত ঘৃণা করেন?’

প্রশ্নটা অবিকল সাংবাদিকের মতো ছুড়ে দিয়েছি৷ ভদ্রলোক ফের কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন৷ কপালে বেশ কয়েকটা ভাঁজ পড়ল৷ তরুণ বিজ্ঞানীর কাটা কাটা ধারালো সুন্দর মুখে অদ্ভুত একটা অভিব্যক্তি! চশমার পেছনের ভাসা ভাসা চোখ একটু অন্যমনস্ক৷ যেন মনে মনে উত্তরটা খুঁজছেন৷

আমি প্রশ্নটা দ্বিতীয়বার করব কিনা ভাবছিলাম৷ তার আগেই তিনি বিড়বিড় করে বললেন, ‘না৷ শুধু এটুকুই নয়৷ অ্যালঝাইমার আমার জীবন থেকে আরও অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে৷ অনেক দামি কিছু…!’

‘কী?’

কৌতূহলী হয়ে জানতে চাই৷ সুগত আমার দিকে ওঁর আকর্ষণীয় চোখদুটো তুলে তাকালেন৷ ভদ্রলোক অসম্ভব রূপবান৷ বয়স কত হবে? মেরেকেটে চল্লিশ! কিন্তু রূপের চেয়েও বেশি আকর্ষণ করে তীক্ষ্ণতা৷ তীক্ষ্ণ চোখদুটোর দৃষ্টি এখন যেন তীক্ষ্ণতর৷ দৃষ্টি নয়, যেন লেসার বিম! ভয় হল, উনি একবার আমার ওপরে দৃষ্টিটা আলতো করে বোলালেই আমি টুকরো টুকরো হয়ে যাব!

তেমন কিছু অবশ্য ঘটল না৷ সুগত দৃষ্টিটা ফিরিয়ে নিয়ে মৃদুস্বরে বললেন, ‘সে অনেক কথা৷ বলতে সময় লাগবে৷’ একটু থেমেই ফের জুড়ে দিলেন আরও একটা শব্দ, ‘শুনতে চান?’

ডঃ সুগত সেনের কথা :

আমার মা যেদিন অসুস্থ হয়ে পড়লেন সেদিনটা এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে৷

দিনটা অন্য কারণে আমার কাছে স্মরণীয় ছিল৷ সেদিনই আমি প্রথম স্কুলে গিয়েছিলাম৷ এদিকে আমি প্রথমবার স্কুলে গেলাম, আর ওদিকে তিনি প্রথমবার হাসপাতালে গেলেন৷ তফাত একটাই৷ আমি দিনের শেষে বাড়ি ফিরলাম৷ তাঁর আর সেদিন ফেরা হল না৷

বাবা তখন উঠতি সাহিত্যিক৷ কিন্তু সাহিত্যের সঙ্গে দেবী সরস্বতীর যতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে ততটাই বৈরিতা! দুই দেবীর মারপিটে আমাদের নাভিশ্বাস উঠত৷ মা স্কুলে চাকরি করে সংসার চালাতেন৷ ফলে তাঁর অসুস্থ হয়ে পড়াটা আমাদের কারোর কাছেই অভিপ্রেত ছিল না৷ মা-বাবার প্রেমজ বিয়ে৷ মা বড় ঘরের সুন্দরী, বিদুষী মেয়ে৷ কিন্তু কষ্টের সংসারের জোয়াল নিজের কাঁধে তুলে নিতে বিন্দুমাত্রও আপত্তি করেননি৷ হাসিমুখেই সব কর্তব্য করতেন৷ কোনওদিন তাঁকে কোনও অনুযোগ করতে শোনা যায়নি৷

বাবা বেশির ভাগ সময়টাই অদ্ভুত একটা ঘোরের মধ্যে থাকতেন৷ সে ঘোরে প্রেম, বিপ্লব, স্বপ্ন ও স্বপ্নসুন্দরী, দুনিয়ার তাবৎ সুন্দর ও রোম্যান্টিক জিনিস থাকতে পারে, কিন্তু ডাল, চাল, তেল, নুন, আটা কখনই ছিল না৷ বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে ঘাড় গুঁজে ডায়েরিতে একমনে লেখালেখি করে যেতে দেখেছি৷ দুনিয়ার কোথায় কী হচ্ছে, তা নিয়ে বিন্দুমাত্রও মাথাব্যথা ছিল না৷ শুধু যখন আমার অ্যালঝাইমারগ্রস্ত ঠাকুর্দা ঠাকুমার নাম ধরে ডাকাডাকি করতেন, তখনই একটা অদ্ভুত যন্ত্রণার ছায়া তাঁর নিস্পৃহ মুখে ছাপ ফেলে যেত৷ এ ছাড়া উনি আমার কাছে স্রেফ একটুকরো হিমশৈল; আইসবার্গ বললে বোধহয় ঠিক হয়! সংসার সমুদ্রে একটুকরো নির্লিপ্ত শীতল বরফের ভাসমান চাঁই৷ উপরটুকু দেখা যায়৷ তার শিরা-উপশিরা সমুদ্রের অতলান্তে কতদূর ছড়িয়ে আছে বোঝা দুষ্কর!

এই অবধি বলেই ডঃ সেন একটু থামলেন৷ তাঁর চোখদুটো তখন অতীতের সাম্রাজ্যে বিচরণ করছে৷ আমি তাঁর মৌনতাকে ভাঙলাম না৷ বরং কৌতূহলী দৃষ্টিতে ওঁর বাবার দিকে তাকিয়েছি৷ ভদ্রলোক এখনও আরামকেদারায় চুপ করে বসে আছেন৷ দক্ষিণের দামাল বাতাস তাঁর সাদা চুলে ঝটপটিয়ে খেলা করছে৷ সাদা পাঞ্জাবি ইতস্তত উড়ছে৷ কিন্তু লোকটার কোনও সাড় নেই৷

একটু সময় নিয়েই ফের সুগত মুখ খুললেন, ‘প্রায় দিন পনেরো পরে মা বাড়িতে ফিরে এলেন৷ আমি বাদে সবাই জানতে পারল, রোগটা লাং ক্যান্সার৷ আমি দেখলাম আমার সুন্দরী মা কয়েকদিনেই শুকিয়ে কালো হয়ে গেছেন! বিশেষ কিছুই বুঝলাম না৷ শুধু দেখলাম এই প্রথম আমার হিমশৈল বাবা বিচলিত হলেন৷ ভয় পেলেন! একদিন সকালে আমার দাদু, দিদু, মামা, মাসি আচমকা এসে হাজির৷ ক্যান্সারের চিকিৎসা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য বাবার ছিল না৷ কিন্তু দাদুর ছিল৷ তাই বাবাকে যা নয় তাই বলে ভর্ৎসনা করে, শেষ পর্যন্ত মাকে ওঁরা নিয়ে গেলেন৷ আমাকে আর বাবাকে দেখার জন্য রেখে গেলেন পুষ্পমাসিকে৷ মায়ের অবিবাহিতা পিসতুতো বোন৷ পুষ্পমাসি এতটাই কুৎসিত ছিলেন যে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ বাপ-মা কেউ ছিল না বলে দাদুর সংসারে আশ্রিতা ছিলেন৷ তবে সংসারের কাজে অসম্ভব পারদর্শী হওয়ায় তিনিই আমাদের সংসারের দায়িত্ব নিলেন৷

এরপরের বিস্তারিত ইতিহাস বলে আর গোটা আখ্যানকে ভারাক্রান্ত করতে চাই না৷ মা চিরদিনই অত্যন্ত দৃঢ় চিত্তের, লড়াকু মনের মানুষ! শেষ পর্যন্ত লড়লেন রোগটার সঙ্গে৷ আমাকে মামা রোজই স্কুল থেকে নিয়ে যেতেন দাদুর বাড়িতে৷ সেখানে মাকে দেখতাম৷ শীর্ণ, ক্লান্ত মুখটা ঝলমল করে উঠত আমাকে দেখলেই৷ প্রায়ই বাবার কথা জিজ্ঞাসা করতেন৷ খুব আদর করে পাশে বসিয়ে জলখাবার খাওয়াতেন৷ তারপর মামাই আবার পৌঁছে দিতেন আমাদের বাড়িতে৷

আমার ছোট্ট মনে প্রায়ই একটা প্রশ্ন উঠত৷ আমি তো রোজই আসি৷ কিন্তু বাবা কেন মাকে দেখতে আসেন না! সে কথা বললেই মা বিষণ্ণ হয়ে যেতেন৷ এক টুকরো হাসি কোনওমতে টেনে এনে উত্তর দিতেন, ‘বাবার তো অনেক জরুরি কাজ! তাই হয়তো সময় পান না৷ কাজ শেষ হলেই আসবেন৷’

একবছর রোগটার সঙ্গে প্রাণপণ লড়ে গেলেন মা৷ তার মধ্যে একদিনও বাবার তথাকথিত ‘জরুরি কাজ’ শেষ হল না! বরং জরুরি কাজের মধ্যে আরও কিছু কাজ যুক্ত হল৷ যখন আমি মামাবাড়ি থেকে ফিরতাম, তখন দেখতাম বাবা মাসির সঙ্গে কোথাও বেরোচ্ছেন! মাসি আমার মায়ের গয়না, শাড়িতে সেজেগুজে কোথাও চলেছেন! বয়েস কম ছিল৷ কিন্তু তবু সহ্য হত না! মাসি কেন মায়ের শাড়ি পরবে? কেন গয়না পরবে? কেন বাবার সঙ্গে বেড়াতে যাবে?

শুধু এইটুকুই নয়! একদিন রাতের বেলায় আচমকা ঘুম ভেঙে আবিষ্কার করলাম, বাবা পাশে নেই! ভয় পেয়ে এদিক-ওদিক তাকাই৷ কই, কোথাও কেউ নেই তো! ভয়ে কান্না পেয়ে গেল৷ উঠে বাইরে বেরিয়ে দেখি মাসির ঘরে আলো জ্বলছে৷ এক শিশুর স্বাভাবিক প্রবৃত্তিতেই ছুটে যাই সেদিকেই৷ কিন্তু যা দেখলাম, তার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলাম না! মাসির সঙ্গে বাবা এটা কী করছে? খেলছে নাকি! ওদের দুজনেরই গায়ে জামাকাপড় নেই কেন! এ কী! আমায় একা ফেলে বাবা এখানে মাসির সঙ্গে খেলবে কেন?

রেগেমেগে নালিশ করলাম মায়ের কাছে৷ মা যথারীতি আদর করতে করতে বলেছিলেন, ‘লক্ষ্মী হয়ে থেকো বাবু৷ ভালো করে পড়াশোনা কোরো৷ মাসির সব কথা শুনে চলবে৷ আর বাবা লিখতে বসলে একদম বিরক্ত করবে না৷’

আমি চটেমটে বললাম, ‘বাবা তো লেখেই না৷ রাতে রোজ আমায় ছেড়ে মাসির সঙ্গে খেলা করে৷ আমার একা শুতে খুব ভয় করে মা!’

মায়ের মুখ দিয়ে শুধু একটা কথাই বেরোল, ‘কী!’

এ জাতীয় কথা যে সর্বসমক্ষে বলতে নেই তা জানা ছিল না! ফলস্বরূপ যা হওয়ার তা হল৷ দাদুর মুখ গম্ভীর হল৷ মামা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বললেন, ‘শালা লম্পট! আজ ওর একদিন কী আমার একদিন! জা-নো-য়া-র! ব্লাডি বাস্টার্ড…!’

বলতে বলতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি! আর মা এতদিন এত যন্ত্রণা সহ্য করেও যা করেননি, সেদিন তাই করলেন৷ কেঁদে ফেললেন৷ তখন সেই কান্নাকে বর্ণনা করার সঠিক বিশেষণ জানা ছিল না৷ বড় হতে হতে অনেকরকম কান্না দেখেছি৷ আজ বলতে পারি মায়ের কান্নাটাকে ‘বার্সট ইনটু টিয়ার্স’ বললে হয়তো খানিকটা বোঝানো যায়৷

পরের ইতিহাস অতি সংক্ষিপ্ত! দাদু আমায় আর ফিরে যেতে দিলেন না ও বাড়িতে৷ পুষ্পমাসিকেও এ বাড়িতে ফিরিয়ে আনা গেল না৷ তিনি বাবার সঙ্গেই থাকলেন৷ এর মধ্যেই মা এক সকালে চলে গেলেন৷ সেটাই স্বাভাবিক৷ কারণ ওই একটা কুৎসিত বাস্তবই তাঁর সমস্ত বাঁচার ইচ্ছে, লড়াই করার সাহস; একলপ্তে ছিনিয়ে নিয়েছিল৷ মা তো সেদিনই শেষ হয়ে গিয়েছিলেন৷ দৈহিক তথা আনুষ্ঠানিক মৃত্যুটা শুধু বাকি ছিল৷ যাওয়ার আগে আমায় ডেকে বললেন, ‘বাবু, বাবাকে ক্ষমা করে দিস৷’

এরপর গঙ্গা, ভলগা, দানিয়ুব দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেল৷ আমি বড় হলাম৷ বড় হতে হতেই শুনলাম, আমার বাবা একজন চরিত্রহীন, লম্পট, স্বার্থপর এবং সুবিধাবাদী৷ মায়ের মৃত্যুর জন্য বাবাই দায়ী! বাবার অবহেলা, তঞ্চকতা, বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই অকালে চলে গেলেন মা৷ শুনতে শুনতে, জ্বলতে জ্বলতে বড় হলাম৷ ও পক্ষের কথা শোনার সুযোগ ছিল না৷ কারণ প্রথমদিকে আমায় ও বাড়িতে যেতে দেয়নি কেউ৷ পরে আমি নিজেই যেতে চাইনি কখনও৷ ছোটবেলায় যে দৃশ্যগুলো কাঁচা চোখ দেখেছিল, সেগুলোর প্রকৃত অর্থ এতদিনে বুঝতে পারলাম৷ সর্বশরীর ঘৃণায় রি রি করে উঠল! আইসবার্গের অদেখা অংশটা এত কুৎসিত! ঘৃণা, ক্ষোভ, প্রশ্নের চেয়েও বেশি ছিল প্রতিশোধস্পৃহা! যত বয়েস বাড়ে, প্রতিহিংসার জ্বালাও বেড়ে যায় ততগুণ! মা ক্ষমা করে দিতে বলেছিলেন৷ আমি পারলাম না৷ এতদিন ধরে শোনা কথাগুলোই বসে গেল মনের ভেতরে৷ আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করলাম, মারণ রোগ ক্যান্সার নয়, ওই দুই নারী-পুরুষ আমার মায়ের মৃত্যুর কারণ! ওরা মায়ের বিশ্বাসকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল! তার শাস্তি পাবে না? এ কি সম্ভব? ক্ষমা নয়, শাস্তিই পেতে হবে৷ কঠোর শাস্তি!

যত দিন যায়, তত দিনই অন্ধরাগ মাথায় চড়ে বসতে থাকে৷ আমি পড়াশোনা করে বড় হলাম৷ দাঁতে দাঁত চেপে জেদের বশে একের পর এক স্কলারশিপ ঘরে তুললাম! এই অসম্ভব জেদ ও পরিশ্রমের ইন্ধন জুগিয়েছিল সেই ভয়ংকর প্রতিশোধস্পৃহা! লোকমুখেই শুনেছিলাম বাবা লেখা ছেড়ে দিয়েছেন৷ পুষ্পমাসি ছোটখাটো একটা কাজ করে সংসার চালায়৷ ভাবলাম, বেশ হয়েছে৷ ওদের দেখিয়ে দেব, আমি, ওই হতভাগী, প্রবঞ্চিত মায়ের ছেলে কত বড় মানুষ হতে পারি! যাঁকে তোমরা মেরে ফেলেছ, তাঁর রক্ত কত বড় হতে পারে প্রমাণ করার ছিল৷ বিজ্ঞানী হলাম৷ নামডাক হল অল্পবিস্তর৷ কিন্তু নিজের মনেরই রাশ আমার হাতে নেই৷ দিনরাত শুধু মাথার মধ্যে একটাই শব্দ আগুনপাখির মতো ডানা ঝাপটে মরত, ‘প্রতিশোধ! প্রতিশোধ নিতে হবে!’

আর কতদিন এভাবে চলত কে জানে৷ প্রতিশোধের জ্বালায় ক্রমাগত অন্ধ হয়ে যাচ্ছি৷ অথচ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উপায় নেই! নিজের মধ্যেই গুমরে মরছি৷ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বুঝলাম, সাফল্যে শান্তি নেই৷ প্রতিশোধে আছে! কথায় আছে, মানুষ একান্তভাবে যা কামনা করে, দুনিয়ার কোনও শক্তি, এমনকি স্বয়ং ঈশ্বরও তাকে সেই বহু ঈপ্সিত বস্তু থেকে বেশিদিন দূরে ঠেকিয়ে রাখতে পারেন না৷ আমি রিভেঞ্জ চেয়েছিলাম৷ কিন্তু রাস্তা দেখতে পাইনি৷ শেষ পর্যন্ত ভাগ্য সে সুযোগ এনে দিল৷

একরাতে পুষ্পমাসি ফোন করলেন৷ বললেন, ‘বাবু, কিছু কথা তোমার শোনা দরকার৷ তোমার বাবা গুরুতরভাবে অসুস্থ! হয়তো বেশিদিন থাকবেনও না! তোমার এবার কিছু কথা জানার সময় এসেছে৷’

এককথায় রাজি হয়ে যাই৷ কেনই বা আপত্তি করব! এই সুযোগটার অপেক্ষাতেই তো এতদিন বসেছিলাম! আমি আর আমার মায়ের খুনিরা মুখোমুখি! এবার ওঁদের সব কথা শুনব আমি৷ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে৷ এতদিন যে জ্বালায় জ্বলে যাচ্ছি, ওঁদেরও সেই জ্বালায় জ্বলতে হবে৷ শাস্তি পেতে হবে, নির্মম শাস্তি!

পরদিন বিকেলে ঠিক সময়মতোই ও বাড়িতে গিয়ে হাজির হই৷ বহুবছর পর যাচ্ছি; তাই সৌজন্যবশত একটা ছোট মিষ্টির বাক্স নিতে ভুললাম না! আমার মনের অবস্থা তখন বলার মতো নয়! মায়ের খুনিদের সঙ্গে দেখা করতে চলেছি, অথচ হাতে বন্দুকের বদলে মিষ্টির বাক্স! নিজের ওপরই ঘৃণা হচ্ছে৷ ভীষণ…ভীষণ ঘৃণা! সারা রাস্তা নিজেকে চাবুক মারতে মারতে গেলাম৷ যন্ত্রণা আর ঘৃণা উত্তরোত্তর বাড়ছে৷ মনে হচ্ছিল নিজেকেই মেরে ফেলি! জীবনে নিজেকে খুনি বলে মনে হয়নি৷ কিন্তু যখন নিজের পৈতৃক বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম, তখনই টের পেলাম আমার ভিতরে একটা উন্মত্ত জানোয়ার লাফিয়ে, দাপিয়ে মরছে৷ বেল বাজাতেই পুষ্পমাসি দরজা খুললেন৷ ইচ্ছে করছিল তখনই তাঁর গলা টিপে ধরি!

‘এসো!’ মাসি আমায় মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছেন, ‘কত বড় হয়ে গেছ! কত নামডাক তোমার! তোমায় কত ছোট দেখেছিলাম! তুমি একেবারে দিদির চেহারা পেয়েছ!’

আদিখ্যেতা! টের পেলাম জিঘাংসা ক্রমাগতই সহ্যের সীমা ছাড়াচ্ছে!

ভিতরের ঘরে বাবা বসেছিলেন৷ অনেকদিন পর দেখলাম তাঁকে! সেই একই রকম! আস্ত একটা হিমশৈল! কোনও তাপ-উত্তাপ নেই!

‘এই দেখো৷ তোমার ছেলে!’ মাসি হেসে বললেন৷

বাবা বিস্মিত, ‘আমার ছেলে! কিন্তু সে তো ভেতরের ঘরে!’

এবার আমার ভিতরের রাগটা চরম সীমায় পৌঁছল! নিজের স্ত্রীকে অপমান করেছে এই জানোয়ারটা! তাঁকে খুন করেছে৷ এখন তাঁর গর্ভজাত ছেলেকেও এতবড় অপমান! আমাকে অস্বীকার করছে লোকটা! ভিতরের ঘরে ওঁর কোন ছেলে আছে? এই বেশ্যার অবৈধ সন্তান? সে-ই ওর ছেলে? আমি নই? আমার ভেতরের জানোয়ারটা এবার শেকল ছেঁড়ার জন্য দাপাদাপি করতে শুরু করে…!’

বলতে বলতেই ফের থেমে গেলেন সুগত৷ ভুরু কুঁচকে কী যেন ভাবছেন৷ চোখদুটো ফের অন্যমনস্ক৷ কাঁপা হাতে সিগারেট ধরালেন৷ আমি একটু অধৈর্য হয়েই বলি, ‘তারপর?’

‘তারপর?’ তিনি একটু হেসে টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা পুরোনো চিঠি বের করে এগিয়ে দিলেন, ‘মাসি এই চিঠিটা তুলে দিলেন আমার হাতে৷ বললেন, ‘সময় করে পড়ে নিও৷’

‘স্নেহের বাবু,

হয়তো তুমি আমাদের ওপরে এখনও রেগে আছ৷ হয়তো মনে মনে ঘৃণা করো আমাদের৷ তবু আশা করছি এ চিঠি পড়ার পর আমাকে না হোক, তোমার বাবাকে অন্তত ক্ষমা করতে পারবে৷ তুমি একজন বিজ্ঞানী৷ বিজ্ঞানের পরিভাষা বুঝবে বলেই সব কথা জানাচ্ছি৷

তোমার মা যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন তোমার বাবার অবস্থা দেখার মতো ছিল৷ অনুশ্রীদি, মানে তোমার মাকে ছেড়ে থাকা মানুষটার পক্ষে যমযন্ত্রণার শামিল৷ তখন বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝি; সমস্যাটা তখন থেকেই শুরু হয়৷ প্রথম প্রথম বেশি কথাবার্তা বলতেন না৷ কেমন চুপ করে থাকতেন৷ তারপর আচমকা একদিন আমাকে ডেকে বললেন, ‘অনু, চা দেবে না?’

আমি ওঁর ভুল শুধরে দিই, ‘জামাইবাবু, আমি অনু নই৷ পুষ্প৷’

এর ঠিক মিনিট পাঁচেক পরেই ফের ডাক এল, ‘অনু, চা দিয়ে যাও!’

আমি আর কথা না বাড়িয়ে ওঁকে চা দিয়ে এলাম৷ কিন্তু ঘটনাটা সেখানেই থেমে থাকল না৷ ফের একদিন বললেন, ‘অনু, তুমি আজকাল আর সাজো না কেন? সাজলে তোমায় বেশ দেখায়!’

আমি অবাক, ‘জামাইবাবু, আমি অনু নই!’

জামাইবাবু স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন৷ যেন আমার কথা কানেই যায়নি৷ তারপর নিরুত্তাপ কণ্ঠেই বললেন, ‘আজ বিকেলে একটু বেরোব৷ তুমি তৈরি থেকো! আর নীল রঙের শাড়িটা পরবে৷ তোমায় ওই শাড়িটায় দারুণ মানায়৷’

এই শুরু! এরপর ব্যাপারটা অনেকদূর গড়াল৷ উনি আমাকে পুরোপুরি গ্রাস করলেন৷ আমি আপ্রাণ বাধা দিতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বারবার ছেলেমানুষের মতো বলতে লাগলেন, ‘আমায় ফিরিয়ে দিও না অনু৷ কতদিন তোমায় ভালোবাসিনি! কতদিন তুমি আমায় ভালোবাসো না! প্লিজ, ফিরিয়ে দিও না!’

আমি বুঝতে পেরেছিলাম কোথাও একটা ভুল হচ্ছে! আমি ‘অনুদি’ নই৷ কিন্তু ভুলটাই আমার কাছে বড় মনোরম ছিল৷ চিরকালই আশ্রিতা হয়ে জীবন কাটিয়েছি৷ রূপ ছিল না, কিন্তু তা বলে কি স্বপ্নগুলো মরে যায়? আমি কুৎসিত বলে কি কোনও চাহিদা থাকবে না, সংসার থাকবে না, আদর সোহাগ করার পুরুষ থাকবে না! আমার জীবনে কি কিছুই পাওয়ার নেই? তাই যখন এমন একটা কাণ্ড হল, স্বার্থপরের মতোই মেনে নিলাম! তোমার বাবা সকালে, বিকেলে, বকার সময়ে, আদর করার সময়ে, বিছানায় সবসময়ই একটা নামই বলে যেতেন; ‘অনু…অনু…অনু!’ খুব খারাপ লাগত৷ তবু প্রতিবাদ করিনি৷

তখন ডাক্তার দেখানোর কথা ভাবিনি৷ কিন্তু এরপর যখন তোমার মামা এসে আমাদের যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করে গেলেন তখন সমস্যাটা আরও বাড়ল৷ জামাইবাবু বারবার অস্থিরভাবে বলতে শুরু করলেন, ‘অনু, বাবু কোথায়? বাবু?’ আমি অনেকবার বোঝালাম যে তুমি এখানে নেই৷ তবু বারবার একই কথা বলে গেলেন, ‘বাবু, আমার বাবু, আমার বাবু কোথায়? অ্যাঁ?’ ক্রমাগতই তিনি হিংস্র হয়ে উঠছিলেন৷ আমি নানারকম স্তোকবাক্যে ওঁকে সাময়িক ভাবে ভোলাই৷

আজও ওঁর ধারণা যে বাবু এখনও ছোট আছে৷ আজও উনি বাবুকে খোঁজেন৷ আজও আমাকে অনু বলেই ডাকেন৷ কারণটা বলাই বাহুল্য ওঁর মনের অসুখ৷ ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, অনুশ্রীদিকে তোমার বাবা এতটাই ভালোবাসতেন যে তাঁর অত বড় অসুখ, আসন্ন বিচ্ছেদের ভয় তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি৷ তাঁর মস্তিষ্ক ওই ভয়াবহ সত্যিটাকে ভুলতে চেয়েছিল৷ ডাক্তারবাবু আরও বলেছেন, এই খবরটা ওঁর কাছে চরম যন্ত্রণাদায়ক একটা শক ছিল৷ ফলস্বরূপ ওই শকেই উনি সমস্ত কিছুই ভুলে গিয়েছিলেন৷ শুধু মনে ছিল, অনু ওঁর সামনে আছে৷ অনু সঙ্গে আছে৷ আমি যদি এই ভুল ভাঙাতে যাই তবে হিতে বিপরীত হতে পারে৷

আমি ওঁর ভুল ভাঙাইনি৷ কিন্তু একটা কথা স্পষ্ট বুঝেছিলাম৷ জীবনের একটা দিনও উনি ‘পুষ্প’ বলে কাউকে ভালোবাসেননি৷ ‘পুষ্প’ বলে কারোর অস্তিত্ব ওঁর জীবনে ছিলই না! ছিল শুধু অনু! জীবনের শেষদিন পর্যন্ত উনি ‘অনুদি’ মানে, তোমার মাকেই ভালোবেসে গেছেন! অনুদির স্মৃতির সঙ্গে যৌবনের দিনগুলোতেই আটকে আছেন৷ আর কিছুই মনে নেই ওঁর৷

ডাক্তার বলেছেন, এই রোগটার নাম অ্যালঝাইমার! এর নাকি কোনও ওষুধ হয় না! পারলে তোমার অসুস্থ বাবাকে ক্ষমা করে দিও৷ উনি বিশ্বাসঘাতক নন, অসুস্থ মাত্র!’

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম৷ এই হল অ্যালঝাইমার! ডঃ সুগত সেনের ভাষায় ‘নিষ্ঠুরতম রোগ’৷

বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলাম পরম যত্নে নিজের বাবাকে খাইয়ে দিচ্ছেন ডঃ সেন! ওঁর তো মনেই নেই যে, যে মিষ্টির বাক্সটা নিয়ে গিয়েছিলেন, তাতে সুকৌশলে নিজেই বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলেন৷ পরে যখন বাড়ি ফিরে চিঠিটা পড়লেন, ততক্ষণে সব শেষ! সঙ্গে সঙ্গেই আত্মগ্লানিতে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু কপালজোরে বেঁচে যান৷ কোর্টও ওঁকে কোনও শাস্তি দিতে পারেনি! কারণ বিচারাধীন থাকাকালীনই তিনি ফের আত্মহত্যার চেষ্টা করেন৷ আর তারপরই একদিন আশ্চর্য শান্ত হয়ে গেলেন৷ জেলারকে বারবার অনুরোধ করলেন তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য৷ কারণ ওঁর বাবা অ্যালঝাইমার পেশেন্ট৷ উনি না দেখলে তিনি খাবেনও না, শোবেন না, কিছুই করবেন না!

বলাই বাহুল্য, এরপর তিনি জেল থেকে চলে এলেন আমার মেন্টাল অ্যাসাইলামে! এবং এইমুহূর্তে উনি একটি বড়সড় গোঁফ-দাড়িওয়ালা ম্যানিকুইনকে বাবা ভেবে পরমানন্দে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন! কী অদ্ভুত প্রশান্তি তাঁর মুখে! সেখানে কোনও ঘৃণার ছাপ নেই৷ কোনও দুঃখ নেই! আপাতত ডিমেনশিয়ায় আছেন৷ অর্থাৎ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ভুলে গিয়েছেন৷ অ্যালঝাইমারের ফার্স্ট স্টেজ৷ এই ভাবেই একসময় আস্তে আস্তে…!

এই হল অ্যালঝাইমার! আশীর্বাদ না অভিশাপ জানি না! কিন্তু ফ্যাসিনেটিং ডিজিজ৷ নয়?

Leave a Reply to Raja Basu Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *