তিন
হেবার জেনিংস—কুম্ভরাশির লোক। ইউরেনাস যখন চাঁদের সাথে মিলিত হয়ে উঠতির দিকে, ঠিক সেই সময়েই ওরা হেবারের ওপর প্রভাব ফেলেছে। নোংরা থাকার জন্যে যেমন কারও কারও নাম আছে, কিন্তু হেবার ওদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। সাংবাদিক জগতে ওকে সহ্য করা হয় কেবল ওর নিষ্ঠা আর কষ্ট সহিষ্ণুতার জন্যে। ইঁদুর ধরার জন্যে বিড়াল ধৈর্য ধরে বসে থাকে, হেবারও তেমনি ঘাপটি মেরে বসে থাকে দিনের পর দিন বিশেষ কোন ছবি তোলার জন্যে। তার ছবির ধারাই অন্য রকম, যেমন: ইউক্যালিপটাস গাছের ওপর চড়ে শক্তিশালী টেলি-লেন্স দিয়ে তোলা মারসেলো ম্যাসট্রোয়ানির টয়লেটে বসে থাকার ছবি; কুইন মাদারের পায়ের কড়া তোলানোর ছবি; বা জ্যাকুলিনের নিজের ইয়টের রেলিং ধরে বমি করার ছবি। এগুলোই তার রত্ন ভাণ্ডার। কেমন করে যেন টের পায় ছবির জন্যে কখন কোথায় অপেক্ষা করতে হবে। চেলসিতে একটা এক কামরার ফ্ল্যাটে সে থাকে—পকেট প্রায় সব সময়েই থাকে গড়ের মাঠ ছবি নিয়ে গবেষণা আর চিন্তা-ভাবনা করা তার একটা নেশা।
ইদানীং লণ্ডনের অ্যামবাসেডরকে সে টার্গেট করেছে। রবার্ট থর্ন যে তার নিষ্কলুষ মহাপুরুষের খোলসের নিচে আর পাঁচজনের মত সাধারণ রক্তমাংসের মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়, এটা তার প্রমাণ করাই চাই। তার ধারণা উপর থেকে জল যতই পরিষ্কার দেখাক না কেন ঠিক জায়গায় খুঁজলে তার তলায় পাক পাওয়া যাবেই। সে কি গোপনে অশ্লীল ম্যাগাজিন কেনে? অথবা তার কি অবৈধ সম্পর্ক আছে কোন নারীর সাথে? নাকি লোকটা মদ খেয়ে বৌ পেটায়, বা আর কিছু? এসব প্রশ্ন আনাগোনা করে হেবারের মনে। কোনদিনই হয়ত সে জবাব পাবে না এসব প্রশ্নের, কিন্তু আশা ছাড়েনি সে। লেগে থাকতে পারলে একটা না একটা কিছু সে বের করতে পারবে বলেই তার ধারণা।
আজকে হেবার যাচ্ছে পেরিফোর্ডে থর্নের প্রাসাদে। সেখানে অনেক গণ্যমান্য লোকের সমাবেশ হবে। কিন্তু ওদের ছবি তোলার উদ্দেশ্যে নিয়ে ওখানে যাচ্ছে না সে। তার আসল উদ্দেশ্য পরিবেশটার সাথে ভাল করে পরিচিত হয়ে নেয়া। কোন্ জানালার দিকে নজর রাখা দরকার, কোন্ কাজের লোককে টাকার লোভ দেখিয়ে কেনা যাবে, ইত্যাদি খোঁজখবর নিতে হবে তাকে।
সকালে উঠেই সে তার ক্যামেরাগুলো চেক করে নিল, টিসু কাগজ দিয়ে লেন্স পরিষ্কার করে ফেলল। তারপর একটা ফোঁড়া টিপে গলিয়ে ওই কাগজ দিয়ে পুঁজ মুছল। আটত্রিশ বছর বয়স হয়েছে তার কিন্তু এখনও নোংরা থাকার দরুন খুজলি—পাঁচড়া তার লেগেই আছে। এই কারণেই হয়ত সে ক্যামেরার পিছনে মুখ ঢেকে ঘুরে বেড়াবার পেশাটা বেছে নিয়েছে। মাঝারি ধরনের গড়ন হলেও তার পেশিতে কোন ভাঁজ নেই। বাইরে থেকে যেটুকু ভাঁজ দেখা যাচ্ছে সেটা কাপড়ের ভাঁজ বিছানার পায়ের দিকে স্তূপ করে রাখা দলা পাকানো জামা-কাপড় থেকে বেছে পরেছে বলে!
ঘর থেকে বেরুবার আগে টেবিলের ওপর ছড়ানো অগোছাল কাগজগুলোর ভিতর থেকে এমবস করে ছাপানো নিমন্ত্রণের চিঠিটা খুঁজে বের করে সাথে নিল সে। ওটা ডেমিয়েনের চতুর্থ জন্মদিনের দাওয়াত।
বাসে বসে দুপাশে সুন্দর উপভোগ্য গ্রাম্য দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে সে। একটা গাঁজা ভরা সিগারেটে দম দিয়ে মাথার জট ছাড়িয়ে হালকা করে নিল হেবার। অল্পক্ষণ পরই সে দেখতে পেল রাস্তাটাই ছুটতে আরম্ভ করেছে, আর বাসটা দাঁড়িয়ে আছে।
থর্ন এলাকার এক মাইল আগে থেকেই পুলিশকে যাত্রীদের পরিচয় দেখে নিয়ে যানবাহনগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পার্ক করার নিদের্শ দিতে দেখা গেল। বোকার মত বাইরে দিকে চেয়ে বসে রইল হেবার। পুলিশ ওর পরিচয় পত্র দুবার করে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিল ওটা জাল নয়। গার্ড আর পুলিশদের এই অপমানজনক আচরণ, তার গাঁ-সওয়া হয়ে গেছে। একটু পরিপাটি জামা কাপড় পরলেই তার এই অনাদর আর হজম করতে হয় না—কিন্তু এটা তার অস্ত্র। নোংরা আর অগোছাল থাকলে সহজে কেউ ওকে চিনতে বা মনে রাখতে চায় না, তাই সে-ও নিরিবিলি অলক্ষ্যে থেকে অন্য সবাইকে লক্ষ্য করার সুযোগ পায়।
শেষ পর্যন্ত বিশাল কাঁচা লোহার গেট দিয়ে পথ দেখিয়ে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হল ওকে। ঘন ঘন কয়েকবার চোখ মিটমিট করে গাঁজার নেশাটা কাটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল হেবার। সামনেই দেখল বিরাট এলাকা জুড়ে আনন্দ মেলা বসেছে। মাঠে রঙ আর প্রাণচাঞ্চল্যের সাড়া। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাঁবুগুলোর আশেপাশে ছুটোছুটি করছে, ইতস্তত ফেরিওয়ালারা বুড়ির চুল, সিরায় ডুবানো আপেল আর মিষ্টি খাবার ফেরি করছে। কিন্তু ওদের গলার স্বর ছাপিয়ে শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন চরকা আর মেরি-গো-রাউণ্ডের অরগ্যান আর ব্যাণ্ডের বাজনা। বাজনার তালে তালে চরকায় হাঁস আর গোলাপী ঘোড়ায় চড়ে বাচ্চারা উপরে নিচে ওঠানামা করতে করতে মহা আনন্দে ঘুরছে। হাত দেখে ভাগ্য গণনার তাঁবুও পড়েছে একটা–লণ্ডনের অনেক মহারথীকেই ওটার সামনে ভিড় করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কয়েকটা ট্রেনিং পাওয়া টাট্টু ঘোড়া ছাড়া হয়েছে মাঠে। এমন কি একটা ছোট্ট হাতিকেও দেখা যাচ্ছে রঙের বড় ফোঁটায় সজ্জিত হয়ে বাচ্চাদের হাত থেকে চিনাবাদাম নিয়ে খাচ্ছে আর ছেলেমেয়েরা ভয় খুশি মেশানো কণ্ঠে উত্তেজিত ভাবে চিৎকার করছে। চারদিকে ফাটোগ্রাফারদের দেখা যাচ্ছে একটার পর একটা ছবি তুলে যাচ্ছে ব্যস্তভাবে, কিন্তু হেবারের কাছে এগুলো তুলে রাখার মত কোন ছবিই নয়।
‘ব্যাপার কি, বন্ধু? ফিল্ম শেষ হয়ে গেছে?’
হেরল্ড নিউজের হোবি তাড়াহুড়ো করে তার ক্যামেরায় আর একটা ফিল্ম ভরছে হট-ডগ স্টলের টেবিলটার পাশে দাঁড়িয়ে। হেবার ধীর পায়ে এগিয়ে কিছু খাবার তুলে নিল টেবিলের ওপর থেকে
‘বারুদে আগুন লাগার অপেক্ষায় আছি,’ বিরক্তিভরে জবাব দিল হেবার। ‘বুঝলাম না। অর্থাৎ?’
‘ব্যাপার দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চাটা রবার্ট থর্নের বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নয়, স্বয়ং যীশু!’
‘তোমার ভালর জন্যেই বলছি এমন সুযোগ হেলায় হারিও না, এরকম সমাবেশ রোজ রোজ হয় না।’
‘কি দরকার? প্রয়োজন হলে তোমার কাছ থেকেই ছবি কিনে নিতে পারব আমি।’
‘সবার থেকে আলাদা কিছু তুলবে তুমি, এই তো?
‘ঠিক ধরেছ।’
‘তোমার জন্যে শুভেচ্ছা রইল! জেনে রাখ মোনাকোর এধারে এমন সম্ভ্রান্ত পরিবার খুব কমই আছে।’ ফ্লিম ভরা শেষ করে ব্যস্ত ভাবে এগিয়ে গেল হোবি।
স্কুপ—হ্যাঁ, এটাই হেবারের স্বপ্ন। সাধারণ ছবিগুলোর দাম আছে বটে, কিন্তু অমূল্য ছবির জন্যে তাকে ঢুকতে হবে অন্দরে—একেবারে মূলে। তেমন ছবি হলেই সে পাবে সত্যিকার মর্যাদা আর সম্মান।
‘ন্যানি,···এই যে ন্যানি,’ দূর থেকে হোবির গলার স্বর শোনা গেল। এই দিকে চাও।’ ভিতর থেকে ট্রলির ওপর বসানো বিরাট বার্থ ডে কেকটা ঠেলে নিয়ে আসছে চেসা। সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হল ওদিকে।
ডেমিয়েনের ন্যানি চেসা সঙের পোশাক পরেছে। পাউডার দিয়ে মুখ সাদা করে জমকাল আর চটকদার রঙ মেখেছে। ফটোগ্রাফাররা তার চারপাশে ভিড় করে ছবি তুলছে। ছবি তোলা বেজায় পছন্দ চেসার বোঝাই যায়। ছবির জন্যে বিভিন্ন পোজ দিচ্ছে সে ডেমিয়েনকে সাথে নিয়ে। জড়িয়ে ধরে চুমো খাবার সময়ে তার মেকআপ যে বাচ্চাটার গালে মুখে লেগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই ওর। কেকের ওপর চারটে রঙিন মোমবাতি জ্বলছে। কেউ একজন সন্দেহ প্রকাশ করল ডেমিয়েন এক ফুঁ দিয়ে সবকটা মোমবাতি নেভাতে পারবে কিনা (বার্থ ডে-তে সেটা নিয়ম। যত বয়স ততগুলো জ্বলন্ত মোমবাতি থাকবে, আর যার জন্মদিন তাকে এক দমে ফুঁ দিয়ে সব কয়টা নেভাতে হবে)। হেবারের চোখ ঘুরছে সবার ওপর। অল্প দূরেই দাঁড়িয়ে আছে অ্যামব্যাসেডরের স্ত্রী, লক্ষ্য করল হেবার। একটা অসমর্থনের ভাব ফুটে উঠছে তার মুখে। এক মুহূর্তের জন্যে তার মুখোশের অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এসেছিল সে—ক্ষিপ্র হাতে হেবার একটা ছবি তুলে নিল পরক্ষণেই মধ্যমণি হয়ে উঠল ক্যাথি, তার চেহারা থেকে অসন্তুষ্টির ভাব মিলিয়ে গেল। ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে এল সে।
‘হাত দেখাতে নিয়ে চল ওকে,’ কেউ একজন বলে উঠল। ‘আমরা জানতে চাই বড় হলে ও কি হবে।’ জটলাটা ন্যানি আর তার পরাণের ধন ডেমিয়েন সহ ভাগ্য গণনার তাঁবুর দিকে এগিয়ে চলল।
তাড়াতাড়ি এগিয়ে এল ক্যাথি। ‘আমি নিচ্ছি ওকে,’ ওকে কোলে নেয়ার জন্যে হাত বাড়াল সে।
‘আপনার কষ্ট করতে হবে না, ম্যাডাম—আমিই নিচ্ছি ওকে,’ সপ্রতিভ ভাবেই প্রস্তাব দিল চেসা।
‘না, আমিই নেব,’ বলে হাসল ক্যাথি।
মুহূর্তের জন্যে ওদের চোখাচোখি হল। অত্যন্ত ভালবাসে ন্যানি ডেমিয়েনকে কিন্তু ক্যাথি প্রায় ছিনিয়ে নিল তাকে চেসার কাছ থেকে। ভিড় করে লোকজন এগিয়ে গেল। কেউ লক্ষ্য করল না ব্যাপারটা, তবে হেবারের চোখ ভিউ ফাইণ্ডারে ছিল, সে ঠিকই দেখল। সবাই এগিয়ে গেল; ন্যানি একা দাঁড়িয়ে রইল নিজের জায়গায়। ক্লাউনের সাজ তাকেই ব্যঙ্গ করছে এখন, তার এই পরিত্যক্ত রিক্ত অবস্থায় ঝটপট দুটো ছবি তুলে নিল হেবার। ধীর পায়ে তরুণী ফিরে গেল ঘরের দিকে।
ভাগ্য গণনার তাঁবুর সামনে এসে সবাইকে বাইরে দাঁড়াতে বলে ক্যাথি ঢুকল ভিতরে। ভিড় ছেড়ে তাঁবুর স্বল্প অন্ধকার পরিবেশে এসে হাঁফ ছাড়ল ক্যাথি
‘এই যে, খোকা বাবু!
কালো ঘোমটা পরা একটা মেয়ে একটু গলা কাঁপিয়ে কথা কয়টা বলল। ডাইনী বুড়ির অনুকরণে কথা বলছে মেয়েটা। ওর দিকে একবার চেয়েই ভয়ে শক্ত করে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরল ডেমিয়েন। ‘ভয় নেই ডেমিয়েন,’ হেসে বলল ক্যাথি। ‘এটা ভাল ডাইনী—তাই না?’ প্রশ্ন করল ক্যাথি।
‘অবশ্যই,’ বলে উঠল মহিলা। ‘তোমার কোন ক্ষতি করব না আমি।’
‘তোমার ভাগ্যে কি আছে তা বলে দেবে ও,’ অভয় দিল ক্যাথি।
‘কই, হাতটা বাড়িয়ে দাও দেখি?’
কিন্তু ডেমিয়েন কোন কথাই মানতে রাজি না, সে তার মায়ের গলা শক্ত করে ধরেই থাকল। মহিলা তার রবারের মুখোশ খুলে ফেলল। মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একজন হাস্যোজ্জ্বল তরুণীর মুখ।
‘এই যে দেখ–আমি আসলে একজন মানুষই। তোমার কোনই ক্ষতি করব না আমি।’
এবার আশ্বস্ত হয়ে ডেমিয়েন হাত বাড়িয়ে দিল। সবুজ টেবিলটার এ পাশে ডেমিয়েনকে নিয়ে বসল ক্যাথি।
‘ওহ্, কি সুন্দর নরম একটা হাত। বোঝাই যাচ্ছে চমৎকার ভবিষ্যৎ আছে তোমার।’ কিন্তু হাতের দিকে চেয়ে স্তম্ভিত হয়ে বসে রইল সে কিছুক্ষণ। তারপর বলল, ‘দেখি অন্য হাত?
অন্য হাত বাড়িয়ে দিল ডেমিয়েন। হাত দুটোর দিকে বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল মেয়েটা।
কি হল? এমন করছ কেন?’ প্রশ্ন করল ক্যাথি।
‘আমার জীবনে আমি হাজারও হাত দেখেছি, কিন্তু এমন হাত কখনও জামার চোখে পড়েনি।’
‘কেন? ওর হাতে কি আছে?’
‘দেখুন, এই হাতে ব্যক্তিত্বের কোন রেখা নেই। কেবল আছে কয়েকটা ভাঁজ।’
‘কী?’ ক্যাথিও চেয়ে দেখল। ‘আমার কাছে তো অস্বাভাবিক কিছু মনে হচ্ছে না?’
‘ও কি কোনদিন আগুনে পুড়েছিল?’
‘অবশ্যই না!’ একটু রোষের সাথেই জবাব দিল ক্যাথি।
‘নিজের হাতটা একবার দেখুন।…এই যে দাগগুলো একজনের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। বিভিন্ন মানুষের হাতে বিভিন্ন দাগ থাকে।’
নিজের হাতের দিকে চেয়ে দেখল ক্যাথি। ডেমিয়েন নিজেও তার হাত খুঁটিয়ে দেখছে—বুঝতে পারছে না তার দোষটা কোথায়। অস্বস্তিকর নীরবতায় কাটল মিনিট খানেক।
‘দেখুন ওর আঙুলের ডগাগুলো কেমন মসৃণ। মনে হয় না ওর হাতের টিপ নিলে কোন ছাপ পড়বে।
ভাল করে পরীক্ষা করে দেখে ক্যাথি বুঝল মেয়েটা মিথ্যে বলেনি।
‘যা হোক, এই ছেলে যদি ব্যাঙ্ক লুটও করে কেউ কোনদিন ওকে ধরতে পারবে না।’ হাল্কা রসিকতা করে পরিবেশটাকে সহজ করতে চেষ্টা করে হেসে উঠল মেয়েটা।
‘তুমি কি ওর ভাগ্য বলতে পারবে?’ ছোট্ট হাত দুটোর দিকে চেয়ে একটু বিব্রতভাবে জানতে চাইল ক্যাথি।
‘অবশ্যই,’ জবাব দিল মেয়েটা।
‘তাহলে বল। সে জন্যেই এসেছি আমরা।
বাচ্চার হাতটা আবার নিজের দিকে টেনে নিল মেয়েটা। কিন্তু ঠিক এই সময়ে বাইরের থেকে একটা চিৎকারের শব্দে বাধা পেল ও। ডেমিয়েনের ন্যানী চেসার গলা। দূর থেকে চিৎকার করছে সে।
‘ডেমিয়েন, ডেমিয়েন!’ চিৎকার করছে চেসা। ‘বেরিয়ে এসো। তোমাকে একটা মজার খেলা দেখাব।’
ভবিষ্যদ্বাণী করতে গিয়েও থমকে গেল মেয়েটা। ক্যাথির মত সে-ও টের পেয়েছে ওই ডাকের মাঝে আছে অলক্ষুণে কিছুর আভাস।
‘ডেমিয়েন, বেরিয়ে এসো,’ আবার চিৎকার করল চেসা। ‘দেখ তোমার জন্যে কি মজার একটা খেলা দেখাই আমি।
ডেমিয়েনকে কোলে নিয়ে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এল ক্যাথি। বাইরে বেরিয়েই বাড়ির দিকে নজর গেল ওর। বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে চেসা, হাতে মোটা এক গোছা দড়ি। দড়িটা উপর দিয়ে টেনে দেখাল সে, দড়ির ফাঁস তার নিজের গলায়। নিচে লোকজন জড়ো হয়ে সবাই অবাক হয়ে চেয়ে দেখছে উপর দিকে। সঙের জামা পরা মেয়েটা ছাদের ধারের দিকে এগিয়ে এল, হাত দুটো সামনের দিকে তুলে ধরেছে, যেন পানিতে ডাইভ দেবে এমন ভঙ্গি।
‘চেয়ে দেখ ডেমিয়েন,’ চিৎকার করে বলল সে। ‘এই সবই তোমার জন্যে!’ হঠাৎ সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে ঝাঁপ দিল সে। দেহটা নিচে নামতে নামতে দড়ির টানে প্রচণ্ড এক ঝাঁকি খেয়ে থেমে গেল মাঝপথে। মাথাটা একপাশে হেলে গেল। নীরবে শূন্যে ঝুলতে থাকল তার অসাড় দেহটা।
বাড়ির সামনে সবাই বজ্রাহতের মত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। মেরি-গো—রাউণ্ডের বাজনার তালে তালে দেহটা মৃদু মৃদু দুলছে। নারী কণ্ঠে চড়া সুরে আর্তনাদ করে উঠল কেউ। ক্যাথির স্বর—কয়েকজনে মিলে অনেক কষ্টে তাকে চুপ করিয়ে ঘরের ভিতর নিয়ে গেল।
.
নিজের ঘরে একা বসে ডেমিয়েন চেয়ে রয়েছে বাইরের দিকে। সবাই চেয়ে দেখছে পুলিশ কিভাবে সিঁড়ি লাগিয়ে দড়ি কেটে দেহটা নিচে নামায়। লোকটার হাত ফস্কে দেহটা নিচে পড়ে গেল, মাথাটা জোরে ঠুকে গেল পাকা জায়গাটার ওপর। নিথর দেহটা দেখা যাচ্ছে, খোলা চোখে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। রঙ মাখ মুখটা দেখে মনে হয় যেন হাসছে।
.
চেসার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগের কয়দিন আকাশ থমথমে থাকল। মাঝে মাঝে দূর থেকে বজের ক্রুদ্ধ গর্জন শোনা গেল। বেশিরভাগ সময়ই ক্যাথি কাটাল তাদের অন্ধকারে ঘেরা বৈঠকখানায়। চোখে শূন্য দৃষ্টি। অনুসন্ধানে জানা গেছে প্রচুর পরিমাণে অ্যালার্জির ওষুধ বেনাড্রিল খেয়েছিল মেয়েটা। কেন যে মেয়েটা আত্মহত্যা করতে গেল এমনভাবে তা কিছুই বোঝা গেল না। রিপোর্টারদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে নিজেদের যতটা সম্ভব গুটিয়ে নিয়েছে ওরা দুজনেই। রবার্ট অফিসে যায়নি আর এর মধ্যে সে ভয় পাচ্ছে তার স্ত্রী হয়ত ঘটনার পরে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়বে।
‘ঘটনাটা নিয়ে খুব বেশি ভাবছ তুমি,’ সন্ধ্যায় বৈঠকখানায় ঢুকে বলল রবার্ট। ‘এমন তো নয় যে সে আমাদের আপন কেউ ছিল?’
‘তা-ই ছিল,’ শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল ক্যাথি। ‘সারা জীবনই আমাদের সাথে থাকবে বলেছিল ও আমাকে।’
জবাব না দিয়ে কেবল নীরবে মাথা নাড়ল রবার্ট।
হয়ত সে তার মত পাল্টে ছিল?’ রূঢ় হতে চায়নি রবার্ট, কিন্তু তার কথাগুলো ছুরির মতই বিঁধল ক্যাথির বুকে। মুখ তুলে রবার্টের দিকে চাইল সে। ‘মাফ কর,’ বলে উঠল সে আবার। ‘তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আমার বড় কষ্ট হচ্ছে, ক্যাথি।’
‘আমার দোষেই এটা ঘটেছে, রবার্ট।’
‘তোমার দোষ?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল রবার্ট
হ্যাঁ, পার্টিতেই ঘটেছিল এটা।’ শুনতে শুনতে রবার্ট এগিয়ে এল ক্যাথির দিকে—তার চোখে ফুটে উঠেছে এর জন্যে দুঃখ আর উদ্বেগ। ‘সবাই ওকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিল, হিংসায় মরে যাচ্ছিলাম। নিজে মধ্যমণি হবার জন্যে ওর কাছ থেকে ডেমিয়েনকে কেড়ে নিয়েছিলাম আমি।
‘নিজের প্রতি অবিচার করছ তুমি, মেয়েটার মাথায় একটু দোষ ছিল।’
‘আমারই কি নেই?’ ফিসফিস করে বলল ক্যাথি। নইলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে আমি এমন উদগ্রীব হব কেন?’ এইটুকু বলে নীরব হয়ে গেল ক্যাথি। আর বলার কিছু নেই তার। রবার্টের হাতের ওপর মাথা রেখে চোখ বুজে পড়ে রইল সে। অল্পক্ষণ পরেই ঘুমিয়ে পড়ল ক্যাথি। আগে যখন লিব্রিয়ান খেত সে তখন ঠিক এইভাবে ঘুমাত, লক্ষ্য করল রবার্ট। চেসার মৃত্যু কি তাকে আবার সেই পর্যায়ে নিয়ে গেল? প্রায় আধঘন্টা ওই ভাবেই বসে থেকে ক্যাথিকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল সে।
*
পরদিন ক্যাথি ডেমিয়েনকে নিয়ে চেসার ফিউনারেলে গেল। শহরের বাইরে একটা ছোট্ট কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অত্যন্ত অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সমাধা হল সব কাজ। মেয়েটির গুটিকয়েক আত্মীয়স্বজনই কেবল এসেছে। রবার্ট আসতে রাজি হয়নি। ক্যাথিকেও আসতে মানা করেছিল সে। কিন্তু ক্যাথি শোনেনি। মেয়েটাকে সত্যিই ভালবাসত সে, তাই না এসে পারেনি।
গোরস্থানের বাইরে কয়েকজন রিপোর্টার উঁকি-ঝুঁকি মারছে। শেষ মুহূর্তে এমব্যাসি থেকে দুজন মেরিনকে পাঠিয়ে দিয়েছে রবার্ট। ওরাই গেটে থেকে রিপোর্টারদের ঠেকাচ্ছে, ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। কালো একটা বর্ষাতি গায়ে দিয়ে হেবারও এসেছে। দূরে গাছের ফাঁকে সে তেপায়ার ওপর খুব শক্তিশালী লেন্সের একটা ক্যামেরা বসিয়ে তৈরি হয়ে আছে। লেন্সের ভিতর দিয়ে সব খুঁটিয়ে লক্ষ্য করছে সে, একে একে সবার মুখ দেখল সে, আত্মীয়েরা সবাই কাঁদছে, ক্যাথি শোকে মুহ্যমান, পাশেই দাঁড়িয়ে ডেমিয়েন অস্থিরভাবে এদিক ওদিক চাইছে। ওর চোখ বিরাট মাঠের ওপরই ঘোরাফেরা করছে বেশি।
হেবারের নজর ডেমিয়েনের দিকে। ঠিক সময় মত শাটার টেপার জন্যে প্রস্তুত হয়ে রয়েছে সে। হঠাৎ ডেমিয়েনের চোখেমুখে ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠেই আবার মিলিয়ে গেল। একদৃষ্টে সে চেয়ে রয়েছে গোরস্থানের একটা বিশেষ কিছুর দিকে। ওই ঠাণ্ডা আর বৃষ্টির মধ্যেও ওর মুখের ভাব প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে, যেন কেউ এই ঠাণ্ডার ভিতরেও তার দেহে তাপ জোগাচ্ছে। ওর দৃষ্টিপথ লক্ষ্য করে ক্যামেরা ঘুরিয়ে সেদিকে খুঁজে দেখল হেবার, কিন্তু পাথরের স্মৃতি-ফলক ছাড়া আর কিছুই নজরে পড়ল না তার। কি যেন একটু নড়ে উঠল—কালো ঝাপসা একটা বস্তু। লেন্স ঘুরিয়ে ফোকাস করতেই পরিষ্কার হয়ে গেল সব। একটা জন্তু—কুকুর। মুখটা ছুঁচোল, চোখ দুটো খুব কাছাকাছি বসানো। নিচের চোয়ালটা খোলা, ঝুলে রয়েছে, ভিতরের সাদা এক সারি তীক্ষ্ণ দাঁত দেখা যাচ্ছে। সবার অলক্ষ্যে স্থির হয়ে বসে জন্তুটা একাগ্রদৃষ্টিতে সামনের দিকে চেয়ে রয়েছে। ক্যামেরায় রঙিন ছবি না ভরার জন্যে নিজের ওপর রাগ হল হেবারের। ওর হলুদ চোখ দুটো সাদা কালো ছবিতে ঠিক ধরা পড়বে না। ছবি তুলে নিল সে। ক্যামেরা ঘুরিয়ে বাচ্চারও কয়েকটা ছবি তুলল হেবার।
সকালটা সার্থক হয়েছে আজ। তল্পিতল্পা গুটিয়ে নিল হেবার সন্তুষ্ট মনে। তবু কেমন যেন একটা অস্বস্তি খচখচ করছে তার মনে। ঘাড় ঘুরিয়ে যেখানে কফিনটা কবরে নামানো হচ্ছে সেদিকে চাইল সে। ডেমিয়েন আর সেই কুকুরটাকে অনেক ছোট দেখাচ্ছে দূর থেকে কিন্তু ওদের মধ্যে যে একটা নীরব যোগাযোগ আছে তা স্পষ্ট অনুভব করা যায়।
পরদিন আবার নতুন উদ্যমে বৃষ্টি নামল। এই বৃষ্টি মাথয় করেই পৌঁছল মিসেস বেল্ক। মহিলা আইরিস, বিশাল দেহ তার। থর্নদের গেটে পৌঁছেই নিজেকে নতুন ন্যানি বলে পরিচয় দিল। দারোয়ান তাকে অপেক্ষা করতে বলে নিয়ম মত ভিতরে খবর পাঠাতে চেয়েছিল-কিন্তু তেমন পাত্রীই নয় মিসেস বেল্ক, ঠেলে সোজা ভিতরে ঢুকে এল সে। তার ব্যবহারে কোন জড়তা নেই। তার চালচলনই এমন যে তার আশেপাশের লোকজনের ওপর আধিপত্য আর প্রভাব বিস্তার করে ফেলে।
‘জানি শক্ত সময় গেছে আপনাদের,’ বারান্দায় উঠে ওভার কোট খুলতে খুলতে বলল মিসেস বেল্ল্ক। ‘তাই ও নিয়ে আলোচনা করে আপনাদের মনের ভার বাড়াতে চাই না আমি। কিন্তু একটা কথা না বলেও পারছি না, অমন হাড্ডিসার তরুণী ন্যানি রাখলে বিপদ ঘটতে বাধ্য।’
তার চলাফেরায় চারপাশে একেবারে বাতাস উঠে যায়। রবার্ট আর ক্যাথি দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেছে মিসেস বেলুকের নিশ্চিন্ত নিশ্চিত হাবভাবে।
‘ভাল ন্যানি চেনার সবচেয়ে ভাল উপায় কি জানেন?’ হাসিমুখে বলে চলল বেল্ল্ক, ‘বুকের মাপ! কবুতরের মত বুকওয়ালা মেয়েরা আজ আসে কাল যায়। একটু ঝুলে পড়া আমার মত ভারি বুকের মেয়েরাই শেষ পর্যন্ত টেকে। হাইড পার্কে একটু ঘুরে দেখলেই বুঝবেন আমার কথাটা কত সত্যি।’
নিজের সুটকেসটা হাতে তুলে নেয়ার জন্যে একটু থামল বেল্ক
ভাল কথা, ছেলেটা কোথায়?’
‘আমি দেখিয়ে দিচ্ছি,’ সিঁড়ির দিকে ইঙ্গিত করে বলল ক্যাথি।
আপনার আসার দরকার নেই, আমি নিজেই ওকে খুঁজে পরিচয়ের পালাটা সেরে নেব।’
নতুন লোকজনের সাথে সহজে মিশতে পারে না ডেমিয়েন–ও একটু লাজুক প্রকৃতির।’
কিচ্ছু ভাববেন না আপনি—আমি ঠিকই ওর সাথে ভাব করে নেব।’
‘আমার মনে হয়…’
ভুল ধারণা, এক্ষুনি প্রমাণ করে দিচ্ছি।’
কথা শেষ হওয়ার আগেই তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে আরম্ভ করে দিয়েছে বেল্ক। তার বিশাল দেহ চোখের আড়ালে চলে গেল। নীরবে চোখাচোখি করল থর্ন দম্পতি। একটু অনিশ্চিত ভাবে সম্মতিসূচক ভঙ্গি করল রবার্ট।
‘মেয়েটাকে বেশ পছন্দ হয়েছে আমার,’ বলল ক্যাথি।
আমারও। কোথায় পেলে ওকে?’
‘আমি? আমি তো ঠিক করিনি ওকে?’ অবাক হয়ে বলে উঠল ক্যাথি। ‘আমি তো ভাবছিলাম তুমিই জোগাড় করেছ।’
বিভ্রান্তির মাঝে একটু চুপ করে থেকে রবার্ট উপর দিকে চেয়ে ডাকল, ‘মিসেস বেল্ক?’
তেতলার সিঁড়ির প্রায় মাথায় পৌঁছে গেছে সে ততক্ষণে। ঝুঁকে পড়ে গলা বাড়িয়ে জবাব দিল সে, ‘বলুন?’
মানে…আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না তুমি এখানে কিভাবে…।’
‘কেন? ট্যাক্সিতে করে! ওকে আমি বিদায় করে দিয়েছি গেট থেকে।’
‘না, সে কথা বলছি না— আসলে, তোমাকে আমাদের এখানে কে পাঠাল।’
‘এজেন্সি।’
‘এজেন্সি?’
‘হ্যাঁ, ওরা কাগজে দেখেছে আপনার ন্যানির মৃত্যুর খবর, তাই তারা আমাকে বদলি হিসেবে পাঠিয়েছে।’
যুক্তিটা একটু আষাঢ়ে গল্পের মত শোনালেও লণ্ডনের চাকরির বাজারে যে—রকম প্রতিযোগিতা তাতে এটা অসম্ভব কিছু নয়।
‘খুব যত্নবান বলতে হবে!’ মন্তব্য করল রবার্ট।
‘আমরা ফোন করে নিশ্চিত জেনে নেয়ায় আপত্তি নেই তো তোমার?’ জিজ্ঞেস করল ক্যাথি।
‘কোন আপত্তি নেই, এখনই ফোন করে জেনে নিন,’ জবাব দিল মেয়েটা। ‘আমি না হয় ততক্ষণ বৃষ্টির মধ্যে বাইরেই অপেক্ষা করি?’
‘না, না…’ ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল রবার্ট।
আমাকে দেখে কি বিদেশী গুপ্তচরের মত মনে হচ্ছে আপনাদের?
‘না, তা মনে হয়নি,’ হেসে ফেলল রবার্ট।
‘কিছুই বলা যায় না,’ বলল মোটা মেয়েটা। ‘হয়ত আমার গার্ডলে টেপ রেকর্ডার ফিট করা আছে। একজন সুন্দর তরুণ মেরিনকে পাঠিয়ে দিন ওপরে ভাল করে চেক করে দেখবে?’
সবাই হেসে উঠল। মিসেস বেলুকের হাসির আওয়াজই সবচেয়ে বেশি শোনা গেল।
‘ঠিক আছে তুমি যাও,’ বলল রবার্ট, ‘আমরা পরে একসময় ফোন করে জেনে নেব।’ টেলিফোন নাম্বার জানাল মিসেস বেল্ক সহজ ভঙ্গিতে।
ড্রইং রূমে চলে এল রবার্ট আর ক্যাথি। ফোনে ক্যাথি খোঁজ নিল মিসেস বেল্কের পেশাগত যোগ্যতা সম্পর্কে। ট্রেনিং আর অভিজ্ঞতা দুই-ই আছে তার। এজেন্সি থেকে ওরা উচ্চ প্রশংসা করল। কেবল একটা ব্যাপার ঠিক পরিষ্কার হল না, তা হচ্ছে ফাইল অনুযায়ী মিসেস বেল্কের রোমে থাকার কথা। তবে এমন হতে পারে যে কিছু তথ্য বাদ পড়ে গেছে, ফাইলে তোলা হয়নি। ফোন রেখে দিয়ে রবার্টের দিকে চাইল সে তারপর দুজনেই কাঁধ ঝাঁকিয়ে খুশিমনে ভাগ্যকে মেনে নিল। দেখতে একটু বেঢপ হলেও প্রাণবন্ত আর হাসিখুশি আছে মহিলা।
উপরে, হাসি মিলিয়ে গেছে মিসেস বেলুকের মুখ থেকে। জলে ভরা ঝাপসা চোখে চেয়ে আছে সে জানালার ধারে বিছানায় ঘুমন্ত ডেমিয়েনের দিকে। বোঝাই যাচ্ছে জানালার ধারে থুতনি রেখে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ছেলেটা। সামনে দাঁড়িয়ে বেলকের থুতনি থরথর করে কেঁপে কেঁপে উঠছে। মন্ত্রমুগ্ধ আর অভিভূত সে। ঘুম ভেঙে ধীরে ধীরে চোখ মেলে চাইল ডেমিয়েন তার ন্যানির দিকে। আড়ষ্ট হয়ে জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে সোজা হয়ে বসল সে।
‘ভয় নেই, ছোট-বন্ধু,’ ফিসফিস করে কাঁপা গলায় বলল বেল্ক। ‘আমি তোমাকে রক্ষা করার জন্যেই হাজির হয়েছি।’
বাইরে কড় কড় কড়াৎ শব্দে বজ্রপাত হল। দুই সপ্তাহ অনবরত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস।