বারো
ফিরতি ফ্লাইটে আট ঘন্টায় রবার্ট এসে পৌছল লণ্ডনে। সারা পথ একটা ঘোরের মধ্যে কেটেছে ওর। তার মনে যেসব সন্দেহ, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সঙ্কোচ ছিল তা সবই ধুয়ে মুছে গেছে এখন। কোন ভয়, কোন ব্যথা বা কোন আচ্ছন্নতা নেই আর সব ভুলে গেছে সে কেবল তার করণীয় কি, সেটাই তার মনে আছে।
লণ্ডন এয়ারপোর্টে বিমান বালা তাকে ছুরিগুলো ফেরত দিল। হাইজ্যাকিং রোধক ব্যবস্থা হিসেবে ওগুলো প্লেনে ওঠার আগে তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছিল। মেয়েটা মন্তব্য করল ওগুলো খুব সুন্দর, কোথায় কেনা তাও জানতে চাইল সে, কিন্তু রবার্ট কাঁটাগুলো জ্যাকেটের পকেটে ভরতে ভরতে কাটা কাটা জবাব দিয়ে বেরিয়ে এল। রাত বারোটা বেজে গেছে। এয়ারপোর্টে লোকজন নেই বললেই চলে। কুয়াশার কারণে অন্যান্য ফ্লাইটের আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রবার্টের ফ্লাইট ছিল শেষ ফ্লাইট। শহরটা কুয়াশাচ্ছন্ন-ট্যাক্সি ড্রাইভাররা পর্যন্ত রবার্টকে পেরিফোর্ডে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাবে পিছিয়ে গেল। রবার্টের এইভাবে লণ্ডনে ফেরাটা সত্যিই করুণ। তাকে অভ্যর্থনা করতে আসেনি কেউ, তাকে গাড়ি করে নিয়ে যাবার কেউ নেই—কেমন যেন একটা ব্যথা বাজছে তার মনে। সব সময়েই তার জন্যে হর্টন উপস্থিত থাকত আবহাওয়ার খবর নিয়ে বাসায় ক্যাথি অপেক্ষা করত তাকে হাসি মুখে অভ্যর্থনা করার জন্যে। আজ সে রাতের বেলা ঠাণ্ডায় দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাইভেট লিমোসিন সার্ভিস থেকে একটা গাড়ি এসে তাকে নিয়ে যাবার অপেক্ষায়। একাকীত্বের বেদনা আচ্ছন্ন করে ফেলল তার মন।
পেরিফোর্ডে পৌছুতে চারটে বাজল। গাড়িটা মালপত্রসহ থর্নকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবার পরেও বাড়িটার দিকে চেয়ে অনেকক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে রইল সে। একদিন এখানেই তার প্রিয়জন বাস করত। ভিতরে একটা বাতিও কোথাও জ্বলছে না। অতীতের অনেক স্মৃতিই এখন মনে পড়ে মনটাকে মোচড় দিচ্ছে।
বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল সে। ঠাণ্ডায় জমে আড়ষ্ট হওয়া আঙুলের দরজায় চাবি ঢুকাল। পিছন থেকে একটা শব্দ শুনতে পেল রবার্ট, যেন জলের দিক থেকে কিছু একটা ছুটে আসছে দ্রুত পায়ে। শ্বাস দ্রুত হল তার। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল সে। মনে হচ্ছিল কেউ যেন তাড়া করছে তাকে। দরজার কাঁচের ভিতর দিয়ে বাইরে চাইল রবার্ট, কিন্তু কুয়াশা ছাড়া আর কিছুই নজরে পড়ল না। হয়ত ওটা তার মনের ভুল মনে মনে নিজেকে সাবধান করল সে। এমন ভয় পেলে তার চলবে না ভয়কে জয় করতে হবে তার।
বসার কামরা পার হয়ে রান্নাঘরে ঢুকল রবার্ট। রান্নাঘরের দরজা খুলে দেখল গ্যারেজে ক্যাথির স্টেশন ওয়াগন আর তার মারসিডিস পাশাপাশি দাঁড় করানো রয়েছে। মারসিডিসের কাছে গিয়ে দরজা খুলে চাবি দিয়ে ইগনিশন সুইচ অন করে দেখল লণ্ডন যাবার মত যথেষ্ট পেট্রল আছে গাড়িতে। গাড়ির দরজা খোলা রেখে চাবিটা ইগনিশন সুইচে ঢুকিয়ে ফিরে এল রবার্ট। আসার আগে অটোম্যাটিক সুইচটা টিপে দিয়ে গ্যারেজের দরজাটা খুলে দিল। আবার তার মনে হল যেন একটা শব্দ হল। রান্নাঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল সে। দরজায় কান পেতে শুনল না, আর কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না। ভাবল হয়ত কল্পনাতেই ওসব শব্দ শুনছে সে!
নিজের ঘরে এসে ইলেকট্রিক শেভারে গোঁফ আর জুলপি ছাঁটার বিশেষ অংশটা জুড়ে নিল রবার্ট। ডেমিয়েনের ঘরের দরজা ভেজানো, ঘরে ঢুকে ওটা বন্ধ করে দিল সে। নিজের বিছানায় ঘুমিয়ে আছে বাচ্চাটা। শান্ত, নিষ্পাপ চেহারা চোখ ফিরিয়ে নিল রবার্ট। আর চাইতে সাহস হচ্ছে না তার মনটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। ধীর পায়ে রবার্ট এগিয়ে গেল বিছানাটার দিকে। ব্যাটারি সেট শেভারটা অন করল। নীরব রাতে মৃদু শব্দে ভরে উঠল ঘরটা-কিন্তু ছেলের ঘুম ভাঙল না। ঘুমন্ত ছেলেটার মাথায় শেভারটা ছোঁয়াল সে। সাথে সাথেই এক গোছা চুল মাথা থেকে খসে পড়ে মাথার সাদা চামড়া উন্মুক্ত হল। একটু ইতস্তত করে আবার তার কাজ শুরু করল সে। মাথার চুল ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে আসছে। অস্ফুট শব্দ করে পাশ ফিরল ছেলেটা। এখন আর থামার উপায় নেই রবার্টের, আরও জলদি হাত চালাল সে। চোখ মিটমিট করে জেগে উঠল ডেমিয়েন। ভিতরে ভিতরে আতঙ্কিত হয়ে উঠল রবার্ট। ওর মাথা নাড়াচড়া বন্ধ করার জন্যে ওর মাথাটা বালিশে ঠেসে ধরে রেজার চালিয়ে যেতে লাগল সে। প্রায় ন্যাড়া হয়ে এসেছে ওর মাথা। হাত পা ছুঁড়তে আরম্ভ করেছে ও। রবার্ট আরও জোরে ওর মাথাটা ঠেসে ধরে রেজার চালিয়ে যাচ্ছে। ধস্তাধস্তিতে ওর মাথার কয়েক জায়গা ইলেকট্রিক শেভারে লেগে কেটে গেল। শেষ পর্যন্ত জন্ম দাগটা বেরিয়ে পড়ল। রক্ত বেরিয়ে এলেও স্পষ্টই পড়া যাচ্ছে, তিনটে ছয়! ওকে ছেড়ে পিছিয়ে এল রবার্ট। উঠে বসে ছেলেটা তার ছোট ছোট হাত দিয়ে নিজের ন্যাড়া মাথাটা ধরে দেখল। রক্তে লাল হয়ে গেল হাত। রক্তমাখা হাতের দিকে চেয়ে কেঁদে উঠল শিশু। সাহায্যের আশায় রবার্টের দিকেই দু’হাত বাড়িয়ে দিল কোলে ওঠার জন্যে। ফুঁপিয়ে উঠল থর্ন। কিন্তু কি করতে হবে জানা আছে—আর কোন সন্দেহ নেই তার।
পিছন দিকের দরজাটা দড়াম করে খুলে গেল। রবার্ট চেয়ে দেখল বিশাল দেহ নিয়ে মিসেস বেল্ল্ক ছুটে আসছে। ছেলেটাকে ধরল রবার্ট, কিন্তু বেল্ক ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর। দুজনেই এক সাথে মেঝেতে পড়ল ওরা। ভয়ে চিৎকার করে উঠে বিছানা থেকে নেমে দৌড় দিল ডেমিয়েন। নিচে পড়েছে রবার্ট দৈত্যাকার মহিলা এক হাতে তার গলা টিপে ধরেছে অন্য হাতে তার চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। বেলকের হাত দুটো ধরে ঠেকাতে চেষ্টা করছে সে। কিন্তু ওজনই জিতছে—পেরে উঠছে না রবার্ট। গলার ওপর মাংসল হাতের চাপে চোখ—ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে তার। হাত দিয়ে তার মুখ ঠেলে তাকে সরাতে চেষ্টা করল রবার্ট। ওর হাত কামড়ে ধরল বেল্ক। রবার্টের পা লেগে টেবিলের ওপর থেকে টেবিল ল্যাম্পটা উল্টে নিচে পড়ল। অন্য হাতে ওটা তুলে নিয়েই সজোরে আঘাত করল সে বেলকের মাথায়। আঘাতে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল ওটা। মহিলা একপাশে কাত হয়ে গড়িয়ে পড়ল। হাতে ধরা গোড়ার অংশটা দিয়ে আবার তার মাথায় আঘাত করল রবার্ট। ওর মাথার খুলিটা ভেঙে সামান্য ঢুকে গেল টেবিল ল্যাম্পের গোড়া। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে তার পাউডার মাখা গাল বেয়ে-কিন্তু রবার্টকে এখনও ছাড়েনি সে, আঁকড়ে ধরে আছে। তৃতীয়বার আঘাত করায় রবার্টকে ছেড়ে ঢলে পড়ল বেলুক। টলমল পায়ে উঠে দাঁড়াল সে। ছেলেটা এতক্ষণ অন্য পাশের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দেখছিল সব। রবার্ট এগিয়ে ওকে ধরে ফেলল। ঘর থেকে বের করে আনার পথে দরজার হাতল আঁকড়ে ধরল সে। টেনে ওখান থেকে ছাড়িয়ে নিতেই রবার্টের মুখে খামচি দিল ছেলেটা। সামলে নিয়ে ওকে সিঁড়ির দিকে টেনে নিয়ে চলল রবার্ট। সিঁড়ি শেষ কয়েক ধাপ থাকতে ওর দুই পায়ের ফাঁকে পা ঢুকিয়ে দিল ডেমিয়েন। হুমড়ি খেয়ে দুজনেই নিচে পড়ল।
টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল রবার্ট। জ্ঞান হারিয়েছে ডেমিয়েন। ওকে দু’হাতে তুলতে গিয়ে রবার্টের বগলের ক্ষতটা ঝিলিক দিয়ে ব্যথা করে উঠল। পড়ে গেল রবার্ট। দরদর করে রক্ত বেরিয়ে আসছে ওর বগল বেয়ে। ধুপধাপ শব্দ পাওয়া যাচ্ছে সিঁড়িতে। উপর দিকে চেয়ে দেখল প্রচণ্ড বেগে ছুটে আসছে বেল্ক। ডেমিয়েনকে তুলে নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকল রবার্ট। প্রায় সাথে সাথেই ঢুকল বেলুক। ডেমিয়েনকে মেঝেতে নামিয়ে রাখতেই রবার্টের জ্যাকেটের কলার ধরল বেলুক। হ্যাঁচকা টান দিয়ে তাকে ধরাশায়ী করল মহিলা। পড়ার আগে একটা দেরাজের হাতলে রবার্টের হাত ঠেকেছিল, টানের চোটে দেরাজটা খুলে চলে এল। ভিতরের সব জিনিস মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল। নিচে ফেলে দুহাতে শক্ত করে রবার্টের গলা খামচে ধরেছে বেল্ক। চোখ দুটো বেরিয়ে আসতে চাইছে। মেঝেতে দেরাজের ছুরি, কাঁটা চামচ সব ছিটিয়ে রয়েছে। দু’হাতে দুটো কাঁটা তুলে নিয়ে দুদিক থেকে এক সাথে বেল্কের মাথায় আঘাত করল থর্ন। কানের একটু উপরে দু’পাশে গেঁথে গেল কাঁটা দুটো। ব্যথায় চিৎকার করে ওকে ছেড়ে উঠে দাঁড়াল বেল্ক। টলতে টলতে কাঁটা দুটো খোলার চেষ্টা করছে সে। ডেমিয়েনের অজ্ঞান দেহটা তুলে নিয়ে গ্যারেজে চলে এল থর্ন। ডেমিয়েনকে ভিতরে রেখে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসতেই কুকুরটা কোথা থেকে এসে তার কাঁধের কাছে কামড়ে ধরল। জোরে গাড়ির দরজা টেনে কুকুরটার মুখে আঘাত করল রবার্ট! কয়েকবার আঘাত করতেই রক্তাক্ত মুখে কুকরটা থর্নকে ছেড়ে দিল। গাড়ির দরজা বন্ধ করে চাবি ঘুরিয়ে স্টার্ট দিল রবার্ট। কুকুরটা বারবার লাফিয়ে পড়ছে উইগুশীল্ডের ওপর। চোখ তুলে চেয়ে একেবারে ধ হয়ে গেল রবার্ট। সামনেই একটা গ্রেজ-হ্যামার উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেলুক! এখনও বেঁচে আছে! হাতুড়িটা নেমে এল কাঁচের ওপর। বেশ বড়সড় একটা গর্ত হয়ে গেল উইগুশীল্ডে। ওই গর্ত দিয়ে মাথা গলিয়ে কুকুরটা রবার্টকে কামড়ানোর চেষ্টা করছে। নিজেকে বাঁচাবার জন্যে সিটের সাথে সেঁটে আছে রবার্ট। জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা স্টিলেটো বের করে মাথার ওপর হাত তুলে সজোরে বসিয়ে দিল কুকুরের দুই চোখের মাঝখানে। একেবারে গোড়া পর্যন্ত ঢুকে গেল কাঁটাটা। ব্যথায় আর্তচিৎকার করে উঠল কুকুর। বেল্ক এগিয়ে এসে দুহাতে কাঁচের জানালায় কিল দিতে আরম্ভ করল।
‘…আমার ছেলে…’ ফুঁপিয়ে উঠল সে।—আমার ছেলে…’
গীয়ার দিয়ে পিছিয়ে গাড়িটা বের করল রবার্ট। বিশাল দেহ নিয়ে গাড়ির পথ আটকে দাঁড়াল বেল্ক। সোজা সামনের দিকে গাড়ি চালিয়ে দিল রবার্ট। ইচ্ছা করলে বেল্ককে কাটিয়ে যেতে পারত কিন্তু তা না করে সোজা ওর ওপর দিয়েই চালিয়ে দিল গাড়ি। প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে বনেটের উপর পড়ল বেলুক—তারপরে গড়িয়ে পড়ে গেল নিচে। ছুটন্ত গাড়ির রীয়ার ভিউ মিররে রবার্ট দেখল হাত পা ছড়িয়ে অসাড় হয়ে পড়ে আছে বেল্কের দেহটা। তার অল্প একটু দূরেই পড়ে পা খিঁচাচ্ছে কুকুরটা মরণ যন্ত্রণায়।
সকাল হয়ে আসছে। কুয়াশা প্রায় কেটে গেছে এখন। লণ্ডনের পথে গাড়ি ছোটাল রবার্ট। বাচ্চাটা নড়েচড়ে উঠল পাশের সিটে। জ্ঞান ফিরছে তার। দ্রুত ছুটে চলেছে গাড়ি। ওয়েস্ট-১০ এ খুব জলদি বাঁক ঘোরায় গাড়ি স্কিড করল। সিট থেকে গাড়ির মেঝেতে পড়ে গেল ডেমিয়েন। ঝাঁকিতে জ্ঞান ফিরে পেয়ে উঠে বসল সে। ড্যাবড্যাব করে ভীত চোখে রবার্টের দিকে চেয়ে রইল বাচ্চাটা।
দূর থেকে অল সেইন্টস চার্চের মাথার ক্রসটা দেখতে পাচ্ছে রবার্ট। আকাশে হঠাৎ কালো করে মেঘ করে এল। মনে হচ্ছে যেন আবার রাত হয়ে আসছে। বিজলী চমকাচ্ছে আকাশে। চার্চের কাছে এসে গাড়ি থামাল রবার্ট। মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। গাড়ির দরজা খুলে ডেমিয়েনের শার্টের কলার ধরে নিজের দিকে টেনে আনল সে। চিৎকার করে হাত পা ছোঁড়া শুরু করল ছেলেটা। পেটে লাথি খেয়ে পিছিয়ে গেল থর্ন। আবার ছেলেটাকে ধরতে যেতেই গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিল সে। রবার্টও ছুটল পিছনে। ছেলেটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল রবার্ট। দুজনেই মাটিতে পড়ে গেল ওরা। বিজলী চমকে উঠল-গাড়ির খুব কাছেই একটা বাজ পড়ল। ওকে দুহাতে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে টেনে হিঁচড়ে চার্চের দিকে নিয়ে চলল থর্ন। ছেলেটা চিৎকার করে অনবরত হাত পা ছুঁড়ছে। রাস্তায় একটা বাসার জানালা খুলে গেল—কেউ চিৎকার করে থর্নকে কিছু বলল। কোনদিকে কান না দিয়ে ডেমিয়েনকে টানতে টানতে নিয়ে চলল সে চার্চের দিকে। ঘূর্ণি হাওয়া প্রচণ্ড বেগে ঝাপটা মারছে ওদের চোখে মুখে। ছেলেটা রবার্টের ঘাড়ে কামড় বসাল। ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠল সে। ঝড়ের শব্দ ছাপিয়ে শোনা গেল একটা পুলিশ সাইরেনের শব্দ। জানালার ধার থেকে লোকটা বারবার চিৎকার করে ছেলেটাকে ছেড়ে দিতে বলছে। গির্জার সিঁড়ির কাছে পৌঁছে গেছে ওরা। ডেমিয়েন খামচি বসাল রবার্টের মুখে। চোখে খামচি খেয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল সে। কিন্তু ডেমিয়েনকে ছাড়েনি। হামাগুড়ি দিয়েই সে ছেলেটাকে ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে চলল সিঁড়ির ধারে। রবার্টের পাশেই রাস্তার ওপর বাজ পড়ল একটা। সিঁড়িতে উঠেছে রবার্ট—ওর জোর কমে আসছে আর ছেলেটা যেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে প্রতি মুহূর্তে। হাঁটু দিয়ে জোরে আঘাত করল ডেমিয়েন তার পেটে। হাঁ করে শ্বাস নিল থর্ন—সমস্ত শক্তি দিয়ে ছেলেটাকে ধরে রেখেছে সে। ঠেসে ধরে রেখে ছুরিগুলো পকেট থেকে বের করল। বিকট চিৎকার করে লাথি মেরে রবার্টের হাত থেকে ওগুলো ফেলে দিল ডেমিয়েন। ঝনঝন করে সিঁড়ির ওপর ছড়িয়ে পড়ল কাঁটাগুলো। চার্চের কাছে এসে পুলিশ সাইরেনটা থামল। একটা স্টিলেটো কুড়িয়ে নিয়ে মাথার ওপরে হাত তুলল থর্ন। চিৎকার করে উঠল ছেলেটা।
‘থাম!’ রাস্তার ওপর থেকে একটা আদেশ শোনা গেল। দুজন পুলিশ নেমে এসেছে গাড়ি থেকে। তাদের মধ্যে একজনের হাতে রিভলভার। মুখ তুলে একবার ওদের দিকে চাইল থর্ন। তারপরেই চোখ ফেরাল ছেলেটার দিকে! হাতের স্টিলেটোটা সজোরে নামিয়ে আনল সে নিচের দিকে। একই সাথে শোনা গেল একটা গুলির আওয়াজ।
মুহূর্তের জন্যে সব কিছু থেমে গেল। পুলিশ দুজন অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আড়ষ্টভাবে সিঁড়ির ওপর বসে আছে রবার্ট—তার সামনে বিছিয়ে পড়ে আছে ছেলেটার দেহ। গির্জার দরজাটার মুখে দেখা গেল একজন লম্বা আলখাল্লা পরা পুরোহিত।