হলদে গোলাপ – স্বপ্নময় চক্রবর্তী
আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত উপন্যাস
হলদে গোলাপ – স্বপ্নময় চক্রবর্তী
দে’জ পাবলিশিং
প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ২০১৫, মাঘ ১৪২১
প্রচ্ছদ : গৌতম সেনগুপ্ত [লেসলি থর্নটনের একটি ভাস্কর্য অনুসরণে ]
প্রকাশক : সুধাংশুশেখর দে, দে’জ পাবলিশিং
.
শ্রদ্ধা, মুগ্ধ ভালোবাসায়
অগ্রজ সাহিত্যিক
বুদ্ধদেব গুহকে
.
প্রাসঙ্গিক কথা
ছোটবেলা থেকেই তথাকথিত ‘মেয়েলি ছেলেদের’ অপমানিত হতে দেখেছি সমাজের নানা ক্ষেত্রে। ওদের কষ্ট পাওয়া উপলব্ধি করেছি। মানুষের লিঙ্গ পরিচয় এবং লৈঙ্গিক আচরণের আলোছায়া বুঝতে চেষ্টা করেছি। ১৯৯৪/৯৫ থেকে এ বিষয়ে অল্প বিস্তর তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি, কিছু ক্ষেত্রে সমীক্ষাও। উপন্যাস লেখার কথা ভাবিনি। ২০১০ সাল নাগাদ কোনও এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে এ বিষয়ে সামান্য কিছু বাক্যালাপ হয়। বছরখানেক পরে অভাবনীয়ভাবেই ওঁর সম্পাদিত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে এই বিষয় নিয়ে একটি উপন্যাস লেখার প্রস্তাব পাই। এর আগে আমাকে কেউ কোথাও ধারাবাহিক উপন্যাস লিখতে বলেননি।
এই পটভূমিটুকু বলা দরকার ছিল মনে হয়। ওঁকে আর কৃতজ্ঞতা জানানোর উপায় নেই, তবে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়-সহ ‘টিম রোববার’কে কৃতজ্ঞতা জানাই, আমার বিচ্ছিরি হাতের লেখাকে ওঁরা ছাপার অক্ষরে পরিবর্তিত করেছেন।
আমি কৃতজ্ঞ ‘রূপান্তরিত’ অধ্যাপিকা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। তিনি আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা অকপটে জানিয়েছেন আমাকে। তাঁর মাধ্যমেই পরিচিত হতে পেরেছিলাম আরও কয়েকজন রূপান্তরকামী মানুষের সঙ্গে।
আমার এই কাজটা অনেকটা সহজ করে দিয়েছেন অজয় মজুমদার এবং নিলয় বসু। ১৯৯৭ সালে ওঁরা বাংলা ভাষায় ‘হিজড়া’ সম্পর্কিত একটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন।
প্লাস্টিক সার্জন ডাক্তার কলিন রায় আমাকে সময় দিয়েছেন, ইনডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউটের বায়োলজিকাল অ্যানথ্রোপলজির অধ্যাপক ডাঃ পরশমণি দাশগুপ্ত কয়েকটি বইপত্রের প্রয়োজনীয় হদিশ দিয়েছেন, ই.এন.টি-র বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইন্দ্রনীল সেন ওঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন, এরকম আরও অনেকের সাহায্য নিয়েই এই লেখা।
সাহায্য নিয়েছি বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়ার। বহু কবির কবিতার অংশ ব্যবহার করেছি। কবিদের কাছে তো ঋণী হয়েই আছি জীবনভর।
স্বপ্নময় চক্রবর্তী
.
ফ্ল্যাপের লেখা ১
সমাজের শরীর ও শরীরের সমাজতত্ত্ব নিয়ে এক দুঃসাহসিক উপন্যাস এই হলদে গোলাপ। ২০১২-১৩ সাল জুড়ে প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদিত রোববার-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশকালে পাঠকসমাজ আলোড়িত হয়—যা খুব কম উপন্যাসের ক্ষেত্রেই ঘটে। কাহিনি বয়নে মানুষের লিঙ্গ পরিচয়ের সমস্যা তুলে আনতে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে খুঁড়েছেন ইতিহাস, নৃ-বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, শারীর বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, জিনেটিক্স, মিথ-পুরাণ…। এক বিশিষ্ট সমালোচক বলেছিলেন ‘স্বপ্নময়ের গল্প আমাদের শেকড় খোঁজার কোদাল। ওই উক্তিটির কথা মনে পড়বে উপন্যাসটি পড়তে পড়তে। এই উপন্যাসটি আসলে এক সংকট- সঙ্কুল মানুষের অনুভূতিগুলি চিত্রিত হয়েছে আশ্চর্য মায়াময় দক্ষতায়। কাহিনির পরতে পরতে মিশে আছে বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলি।
শুধু বাংলা সাহিত্য কেন, সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যে এর আগে এভাবে কোনও উপন্যাস লেখা হয়নি।
ফ্ল্যাপের লেখা ২
“হে ফ্রয়েড, ইয়ুং, পাভলভ, কেইস, ডকিন্স্… তোমরা দেখে নাও—মন-পরিবেশ, হরমোন-জিন শুধু নয়, আরও এক প্যারামিটার আছে। যেটা শুক্লা জেনেছে—সেটা স্বপ্ন”।
লিঙ্গ পরিচয়ের সংকটকে কেন্দ্র করে লেখা এই অনাস্বাদিতপূর্ব মানবিক আখ্যানটি স্নাত হয়েছে ভালোবাসার অলৌকিক জলে।
.
লেখক পরিচিতি
জন্ম ১৯৫২। উত্তর কলকাতায়। দেশলাইয়ের সেল্সম্যান হিসেবে কর্মজীবনের শুরু বাইশ বছর বয়সে। নানা জীবিকা বদলের পর আকাশবাণীতে দীর্ঘকাল, শেষ তিন বছর ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে যুক্ত ছিলেন। গত সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে লেখালেখি শুরু। প্রথম গল্পটি অমৃত পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও ছোট অবাণিজ্যিক পত্র-পত্রিকাতেই উজ্জ্বল গল্পগুলির অধিকাংশ প্রকাশিত হয়েছিল। ওঁর বেশ কিছু ছোটগল্প বাংলা ছোটগল্পের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। তিনশোর মত ছোটগল্প লিখেছেন। প্রথম উপন্যাস চতুষ্পাঠী ১৯৯২ সালের শারদ আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর ঔপন্যাসিক হিসেবেও নিজেকে বিশিষ্ট করেছেন। তাঁর প্রতিটি উপন্যাসের বিষয়বস্তু আলাদা এবং গবেষণা সমৃদ্ধ। বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ এবং মনোজ্ঞ কলাম কিংবা রম্যরচনাতেও তাঁর কলম সমান সাবলীল।
Leave a Reply