• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

পোকা-মাকড় – জগদানন্দ রায়

লাইব্রেরি » জগদানন্দ রায় » পোকা-মাকড় – জগদানন্দ রায়

পোকা-মাকড় – জগদানন্দ রায়

উৎসর্গ
পরম সাহিত্যানুরাগী
লালগোলাধিপতি
রাজা শ্রীযুক্ত যোগীন্দ্রনারায়ণ
রায় বাহাদুরের
শ্রীকরকমলে

————-

নিবেদন

পুস্তকখানি ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য লিখিয়াছি, এজন্য যে-সকল পোকা-মাকড় আমরা সর্ব্বদা দেখিতে পাই তাহাদেরি জীবনবৃত্তান্ত ইহাতে বিশেষভাবে স্থান পাইয়াছে। বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে প্রাণীদের শ্রেণী-বিভাগ করিবার চেষ্টা ইহাতে আছে, কিন্তু পাছে বইখানি নীরস হয় এই ভাবিয়া বিশেষ শ্রেণীবিভাগে দৃষ্টি রাখি নাই।

যাহাদের জন্য পুস্তকখানি লিখিয়াছি, তাহারা পুস্তক পাঠে আনন্দ ও শিক্ষা লাভ করিলে ধন্য হইব।

শ্রীজগদানন্দ রায়
ব্রহ্মচর্য্যাশ্রম, শান্তিনিকেতন,
আশ্বিন ১৩২৬।

——-

দ্বিতীয় সংস্করণ

চারি বৎসর পরে “পোকামাকড়ের” দ্বিতীয় সংস্করণের প্রয়োজন হইল। পুস্তকখানি আমাদের বালক-বালিকা ও সাধারণ পাঠকদিগের নিকটে আদর পাইয়াছে দেখিয়া আনন্দ লাভ করিয়াছি।

পুস্তকখানি তাড়াতাড়ি ছাপাইয়া প্রকাশ করিতে প্রথম সংস্করণে যে সকল ক্ষুদ্র ক্রটী ছিল, বর্ত্তমান সংস্করণে তাহা সংশোধন করিয়া দিয়াছি।

শ্রীজগদানন্দ রায়
বিশ্বভারতী
শান্তিনিকেতন,
ফাল্গুন, ১৩৩১

———–

প্রথম কথা

আমরা যে-সকল বস্তু দেখিতে পাই, তাহাদের মধ্যে কতকগুলি জড় এবং বাকি সকলি জীব। জড় ও জীব ছাড়া আর কোনো নূতন জিনিস এই পৃথিবীতে নাই এবং পৃথিবীর বাহিরেও নাই।

বাড়ী-ঘর, পাহাড়-পর্ব্বত, জল-বাতাস এবং মাটি এগুলি জড়। গাছ-পালা, মানুষ-গোরু, পোকা-মাকড় ইহাদের সকলেই জীব।

আমাদের মনে হয়, যাহারা নড়াচড়া করে না, তাহারাই বুঝি জড়; এবং যাহারা চলাফেরা করে, তাহারাই জীব। কিন্তু এই কথাটা ঠিক নয়। যাহারা বাহির হইতে খাদ্য জোগাড় করিয়া নিজেদের দেহ পুষ্ট করে এবং শেষে সন্তান উৎপন্ন করিয়া মরিয়া যায়, এক কথায় বলিতে গেলে তাহারাই জীব। পশু-পক্ষী, গাছ-পালারা দেহের এক-একটা অংশ দিয়া বাহির হইতে খাদ্য সংগ্রহ করে; আর একটা অংশ দিয়া তাহা পরিপাক করিয়া বড় হয়; তার পরে কেহ ফল, কেহ বীজ, কেহ ছোটো ছোটো শাবক উৎপন্ন করিয়া মরিয়া যায়। কাজেই এইগুলিকে জীবের কোঠায় ফেলিতে হয়। মাটি, পাথর, সোনা, রূপা ইত্যাদি আহার করে না, দেহ পুষ্ট করে না, ফল-ফুল বা সন্তান-সন্ততি উৎপন্ন করে না,—কাজেই এইগুলি জীব নয়,—ইহারা জড়।

আমরা এই পুস্তকে জড়ের কথা বলিব না এবং গাছপালা প্রভৃতি যে-সকল জীবকে উদ্ভিদ্ বলা হয়, তাহাদের কথাও আলোচনা করিব না। পোকা-মাকড় ইত্যাদি যে-সকল ছোটো জীবকে আমরা প্রাণী বলি, কেবল তাহাদেরি ক্রমে পরিচয় দিব।

প্রাণীর সংখ্যা

পৃথিবীতে কত রকমের প্রাণী আছে, তোমরা বলিতে পার কি? তুমি হয় ত অনেক ভাবিয়া কুকুর, ঘোড়া, বেজি, কাঠবিড়াল, ব্যাঙ্ প্রভৃতি পঁচিশ-ত্রিশ রকম প্রাণীর নাম করিতে পারিবে। কিন্তু পঁচিশ, পঞ্চাশ বা একশত রকম প্রাণী লইয়া এই পৃথিবী নয়। লোকে যতই খোঁজ করিতেছে, ততই নিত্য নূতন প্রাণীর সন্ধান পাইতেছে। ইংলণ্ড দ্বীপটি কত ছোটো, তাহা তোমরা জান। আমাদের রাজপুতানার চেয়ে ইহা বড় নয়। সেখানে ভয়ানক শীত; আবার শীতকালে বরফ পড়ে। ছোটো প্রাণীরা এই রকম শীতে বাঁচিতে পারে না। কিন্তু তথাপি সেই ছোটো দেশের শীতের মধ্যেও চারিশত বাষট্টি রকমের পাখী দেখা যায়। সমস্ত পৃথিবীতে অন্ততঃ দশ হাজার রকমের পাখী আছে।

মাছ, ব্যাঙ্, সাপ, গোরু, বানর, মানুষ, এই সব প্রাণীর দেহে মেরুদণ্ড অর্থাৎ শির-দাঁড়া আছে। বিছা, কেন্নো, জোঁক, প্রজাপতিদের মেরুদণ্ড নাই। হিসাব করিয়া দেখা গিয়াছে, পৃথিবীতে মেরুদণ্ডযুক্ত প্রাণীই অন্ততঃ পঁচিশ হাজার রকমের আছে।

আমরা হয় ত রুই, কাত্‌লা, কই, মাগুর প্রভৃতি আট-দশ রকম মাছের কথা জানি, কিন্তু পণ্ডিতেরা দেশ-বিদেশে সন্ধান করিয়া প্রায় আট হাজার রকম মাছের সন্ধান পাইয়াছেন। ইহাদের প্রত্যেকেরই আকার-প্রকার আহার-বিহার স্বতন্ত্র।

গ্রীষ্মকালে রাত্রিতে আলো জ্বালিয়া পড়িতে বসিলে, কত কীট-পতঙ্গ আলোর চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়ায়, তাহা তোমরা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ। ইহাদের মধ্যে কোনোটা বড়, কোনোটা নিতান্ত ছোটো, কোনোটা কালো, কেনোটা সবুজ, কোনোটা উড়িয়া বেড়ায়, কোনোটা বা লাফাইয়া লাফাইয়া চলে। আমরা হয় ত ইহাদের দুই-একটির নাম জানি। কিন্তু এই হাজার হাজার রকমের পোকা কোথায় থাকে, কি খায়, কি রকমে জীবন কাটায়, পণ্ডিতেরা তাহা অনুসন্ধান করিয়া ঠিক করিয়াছেন। তাঁহারা বলেন, পৃথিবীতে অন্ততঃ চারি লক্ষ রকমের কীট-পতঙ্গ আছে।

আমরা এখানে কেবল কয়েকটিমাত্র প্রাণিজাতির সংখ্যার কথা বলিলাম। প্রত্যেক জাতিতে প্রাণীরা সংখ্যায় কিপ্রকারে বাড়িয়া চলে, তাহার কথা শুনিলে তোমরা আরো অবাক্ হইয়া যাইবে।

মানুষ খুব বুদ্ধিমান প্রাণী; সে বুদ্ধির জোরে অন্য প্রাণীদের উপরে ক্ষমতা দেখায়। কিন্তু তথাপি সাপ, ব্যাঙ্, ফড়িং যেমন এক-একটি বিশেষ জাতীয় প্রাণী, মানুষ তাহার বেশি আর কিছুই নয়। পৃথিবীতে মোট একশত সত্তর কোটি মানুষ আছে। এই কয়েকটি মানুষের মাথা গুঁজিয়া রাখার জন্য পৃথিবীতে অতি অল্প জায়গারই আবশ্যক হয়। তাই সমুদ্রের উপরে, মরুভূমিতে, মেরুদেশের শীতে এবং আফ্রিকা ও আমেরিকার গভীর জঙ্গলে মানুষ ইচ্ছায় বাস করে না। কিন্তু ঐ-সকল জায়গায় অন্য প্রাণীর অভাব নাই। সেখানকার দু’হাত জমিতে হাজার হাজার প্রাণী দেখা যায়। পৃথিবীর জল, স্থল, আকাশ সকলি ছোটো বড় নানা প্রাণীতে পূর্ণ। সমুদ্রের তল এবং পর্ব্বতের গুহা—যেখানে সূর্য্যের আলো কোনো কালে প্রবেশ করিতে পারে না, সেখানেও অসংখ্য প্রাণী বাস করে। আমাদের সমুদ্রগুলির গভীরতা গড়ে প্রায় আড়াই মাইল। তিন মাইল এবং সাড়ে তিন মাইল গভীর জলের তলে যে-সকল অদ্ভুত প্রাণী আছে, তাহার কথা চল্লিশ-পঞ্চাশখানা বড় বড় বইয়ে লেখা হইয়াছে।

প্রাণীর বংশবৃদ্ধি

যে হারে প্রাণীদের বংশবৃদ্ধি হয়, তাহাও বড় অদ্ভুত। হাতী ঘন ঘন সন্তান প্রসব করে না। দশ বৎসর অন্তর ইহাদের এক-একটি শাবক হয়। একজন হিসাব করিয়া দেখিয়াছিলেন, পৃথিবীতে যদি কেবল এক জোড়া হাতী থাকিত, তবে তাহাদের বাচ্চায় এবং বাচ্চাদের বাচ্চায় মিলিয়া সাড়ে সাত শত বৎসরে পৃথিবীতে উনিশ লক্ষ হাতী হইয়া দাঁড়াইত। মাছের বংশ-বিস্তার আরও বেশি। আট-দশ সের ওজনের মাছ পৃথিবীর নদী-সমুদ্রে, খালে-বিলে যে কত আছে, তাহা ঠিক করা যায় না। হয় ত তোমাদের পুকুরেও খুঁজিলে দুই-চারিটি পাওয়া যায়। এই রকম মাছ বৎসরে প্রায় নব্বই লক্ষ ডিম ছাড়ে। একসের আধ-সের ওজনের মাছের কুড়ি হাজার হইতে সাতচল্লিশ হাজার পর্য্যন্ত ডিম হয়। ছোটো ইঁদুর তোমরা দেখিয়াছ। লেপ, বালিশ, কাগজপত্র সকলি কাটিয়া ইহারা ঘরে মহা উৎপাত করে। ইহাদের বংশবৃদ্ধির কথা শুনিলে তোমরা অবাক্ হইবে। বৎসরে ইহারা ছয়-সাত বার শাবক প্রসব করে এবং এক-একবারে ইহাদের ছয়টি হইতে উনিশটি পর্য্যন্ত বাচ্চা হয়। বাচ্চা ছোটো অবস্থায় মারা গেলে, কখনো কখনো মাসে মাসেই ইহারা গড়ে দশ-বারোটা বাচ্চা প্রসব করে। খরগোসের বাচ্চাও বড় কম হয় না। তোমাদের মধ্যে কেহ যদি সাদা খরগোস পুষিয়া থাক, তবে হয় ত তাহা স্বচক্ষেই দেখিয়াছ। বৎসরে ইহারা চারিবার শাবক প্রসব করে এবং প্রতিবারে প্রায় ছয়টা করিয়া বাচ্চা হয়।

এই ত গেল বড় জানোয়ারদের কথা। ছোটো প্রাণীদের বংশবৃদ্ধি আরো অধিক হয়। পতঙ্গ খুব ছোটো প্রাণী; ইহারা যেমন বেশি আহার করে, তেমনি বেশি সন্তান প্রসব করে। গোলাপ ফুলের গাছে এবং কফি প্রভৃতি তরকারির গাছে যে এক রকম ডানা-ওয়ালা সবুজ ছোটো পোকা হয়, তাহা বোধ হয় তোমরা দেখিয়াছ। বর্ষার শেষে এবং ফাল্গুনের সন্ধ্যায় এই পোকাদের উৎপাতে ঘরে আলো জ্বালা দায় হয়। দেওয়ালির রাত্রিতে ইহারা অলোকের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসিয়া দীপের শিখায় পুড়িয়া মরে। হক্‌স্‌লি সাহেব হিসাব করিয়া দেখিয়াছিলেন,—এই পোকার একটিতে যে সকল সন্তান উৎপন্ন করে, পুত্রপৌত্রাদিক্রমে তাহারা গ্রীষ্মের তিন-চারি মাসে চীনদেশের জনসংখ্যার সমান হইয়া দাঁড়ায়। পৃথিবীর সকল দেশের চেয়ে চীন দেশে বেশি লোক বাস করে। চীনে এখন প্রায় চল্লিশ কোটি লোকের বাস। একটা পোকায় যদি এত সন্তান প্রসব করিতে পারে, তবে তোমাদের বাগানের সমস্ত পোকারা মোট কত পোকা জন্মায় বলিতে পার কি? ইহার হিসাবই হয় না। তার পর মনে রাখিয়ো,—পৃথিবীতে যে কেবল তোমাদেরি বাগান আছে তা নয়। কত দেশের কত লক্ষ লক্ষ বাগানে ও কত বন-জঙ্গলে, কোটি কোটি সবুজ পোকা আছে, তাহাদের প্রত্যেকটি ঐ-রকমে সন্তান জন্ম দিয়া যাইতেছে।

মাছিরা গ্রীষ্মকালে কি-রকম উৎপাত করে, তাহা তোমরা জান। একটু বিশ্রাম করিতে গেলে মুখে চোখে ও কানে বসিয়া বিরক্ত করে, আহারের সময়ে খাবারের উপরে বসিয়া উৎপাত করে। ইহারা যে পরিমাণে সন্তান জন্মায় তাহাও অদ্ভুত। একটিমাত্র মাছি গ্রীষ্মের কয়েক মাসে এত ডিম প্রসব করে যে, সেগুলি হইতে নূতন মাছি জন্মিয়া পুত্র-পৌত্রাদিতে এক বৎসরে পাঁচ শত কোটি হইয়া দাঁড়াইতে পারে। পাখীদের বংশবৃদ্ধিও বড় অল্প নয়। এক জোড়া পাখী যদি চারিটি করিয়া শাবক শত্রুর হাত হইতে বাঁচাইয়া রাখিতে পারে, তবে পনেরো বৎসর পরে তাহাদেরি বংশে দুই শত কোটি পাখী হইয়া দাঁড়ায়।

এত প্রাণী কোথায় যায়?

তোমরা বোধ হয় এখন মনে করিতেছ, যদি প্রাণীদের সত্যই এই প্রকারে বংশবৃদ্ধি হয়, তবে পোকা-মাকড় ইঁদুর, বিছে, ব্যাঙ্, হাতী, ঘোড়াতে আজও পৃথিবী পূর্ণ হয় নাই কেন? এই রকম প্রশ্ন মনে হওয়াই সঙ্গত। কিন্তু ইহার উত্তর কঠিন নয়। তোমরা যদি একটু খোঁজ কর, তবে দেখিবে,—যে-প্রাণী অধিক সন্তান প্রসব করে, তাহার সন্তানগুলির অধিকাংশই বড় হইবার পূর্ব্বে নানা রকমে মরিয়া যায়। সবুজ-পোকারা কত বেশি সন্তান উৎপন্ন করে তাহা তোমরা শুনিয়াছ। সেই সকল সন্তানদের অধিকাংশই অন্য পোকা এবং পাখীরা খাইয়া ফেলে; পরে কতক আবার শীতে রৌদ্রে বৃষ্টিতে ও ঝড়ে নষ্ট হইয়া যায়। এই প্রকার ক্ষয়ের পর যাহা অবশিষ্ট থাকে, তাহাদের অনেকেই জলে বা আগুনে পড়িয়া মারা যায়; শেষে দেখা যায়, মোটের উপরে পোকার সংখ্যা বাড়ে নাই,—পুরানো পোকার দল মরিয়া গেলে, তাহাদের জায়গা পূরণ করিবার জন্য যতগুলি নূতন পোকার দরকার, কোটি কোটি নূতন পোকার মধ্যে কেবল ততগুলিই বাঁচিয়া আছে। কেবল সবুজ-পোকাদের মধ্যেই যে ইহা দেখা যায় তাহা নয়। এক-একটা মাছে কত ডিম প্রসব করে, তাহা তোমরা শুনিয়াছ। প্রত্যেক ডিম হইতেই যদি মাছ জন্মিত, তাহা হইলে পৃথিবীর নদী, সমুদ্র, খাল, বিল এক বৎসরেই মাছে পূর্ণ হইয়া যাইত। তােমরা জলে ডুব দিয়া যে স্নান করিবে, তাহারও উপায় থাকিত না। কিন্তু তাহা দেখা যায় না। ডিমের অধিকাংশই জলে থাকিয়া নষ্ট হইয়া যায়, কাজেই সেগুলি হইতে মাছ জন্মে না। আবার ডিম ফুটিয়া যে ছােটো ছােটো মাছ বাহির হয়, তাহাদেরও সকলগুলি শেষ পর্য্যন্ত বাঁচে না। নানা রকম বড় মাছ এবং অন্য জলচর প্রাণীরা সেগুলিকে খাইয়া ফেলে। শেষে দেখা যায়,—মোটের উপরে মাছের সংখ্যা বাড়ে নাই।

এত প্রাণিহত্যা কেন হয়?

পৃথিবীতে প্রাণিশূন্য স্থান নাই; জল, স্থল, আকাশ সকলি প্রাণীতে পূর্ণ। তবুও বিধাতা যে কেন এই প্রকারে বহু প্রাণীর সৃষ্টি করিয়া তাহাদিগকে মৃত্যুর মুখে ফেলিয়া দেন, তাহা হঠাৎ বুঝা যায় না। কিন্তু তোমরা যদি একটু চিন্তা করিয়া দেখ, তাহা হইলে বিধাতার উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিবে। বিধাতা নিষ্ঠুর নয়,—সমস্ত প্রাণীর মঙ্গলের জন্যই জন্ম-মৃত্যু পৃথিবী জুড়িয়া চলিতেছে।

জল, বাতাস ও মাটির সার অংশ খাইয়া গাছপালা বাঁচিতে পারে, কিন্তু প্রাণীরা তাহা পারে না। তাহাদের বাঁচিয়া থাকার জন্য লতাপাতা চাই, পোকা-মাকড় চাই এবং কাহারো কাহারো জন্য মাংসও চাই। অধিকাংশ পাখীই কীট-পতঙ্গ খাইয়া বাঁচে,—বাঘ, সিংহ ইত্যাদির প্রধান খাদ্য মাংস। কাজেই বংশ-রক্ষার জন্য যত নূতন কীট-পতঙ্গের দরকার, ঠিক্ ততগুলি সন্তানই যদি জন্মিত, তবে পাখীরাই সেগুলিকে খাইয়া শেষ করিয়া দিত,—ইহাতে কীট-পতঙ্গের বংশ লোপ পাইয়া যাইত। ইহা নিবারণের জন্যই কীট-পতঙ্গের দল অসংখ্য ডিম্ব প্রসব করিয়া অসংখ্য নূতন পতঙ্গ উৎপন্ন করে। ইহাতে পাখীরা পেট ভরিয়া খাইতে পায়, অথচ আহারের পর যে-সকল নূতন পতঙ্গ অবশিষ্ট থাকে, তাহারাই বংশ রক্ষা করে।

তোমরা হয় ত ভাবিতেছ, পতঙ্গদের বংশ-রক্ষা হউক বা না হউক, তাহাতে পৃথিবীর কিছুই ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। ঐ আপদ্‌গুলা সমূলে মরিয়া গেলেই ভালো। কিন্তু যিনি জগতের সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনি এই কথা ভাবেন না,—তিনি অতি ছোটো প্রাণীর বাঁচিয়া থাকার জন্য যেমন ব্যবস্থা করেন, খুব বড় বড় বুদ্ধিমান্ প্রাণীদের জন্যও সেই রকম ব্যবস্থা রাখেন। সিংহ বা ব্যাঘ্র সংসারের কি উপকার করে জানি না। কিন্তু মানুষের ন্যায় সিংহ-ব্যাঘ্ররাও জগদীশ্বরের সৃষ্ট প্রাণী। মানুষের যদি পৃথিবীতে থাকিবার দাবি থাকে, তবে বাঘ, ভালুক, সিংহেরও দাবি আছে। খুঁটি পুঁতিয়া, প্রাচীর উঠাইয়া পৃথিবীর জমি ভাগ করিয়া মানুষ বলে,—এই জমি আমার, এই দেশের রাজা আমি। সিংহের দল যদি জঙ্গল হইতে বাহির হইয়া বলিতে আরম্ভ করে,—এই জঙ্গল আমাদের, ইহাতে মানুষের কোনো দাবি নাই; তবে তাহাদিগকে অপরাধী করা যায় না। সকল প্রাণীই বিধাতার স্নেহের পাত্র। সিংহ-ব্যাঘ্র, লতাপাতা বা ফলমূল খায় না, দুর্ব্বল পশুদের মাংসই ইহাদের প্রধান খাদ্য। কাজেই সিংহ-ব্যাঘ্রের খাদ্যের আয়োজন এবং তাহাদের বংশরক্ষার উপায় বিধাতাকে করিতে হয়, আবার ইহাও তাঁহাকে দেখিতে হয়, যেন এই সকল বলবান্ প্রাণীর উৎপাতে দুর্ব্বলেরা হঠাৎ প্রাণ হারাইয়া নির্ব্বংশ হইয়া না যায়। এই দুই উদ্দেশ্য সফল করিবার জন্য দুর্ব্বল প্রাণীরা যাহাতে বহু সন্তান প্রসব করে, জগদীশ্বর তাহার বিধান করিয়া দিয়াছেন। কিন্তু ইহাতে যে সকল দুর্ব্বল প্রাণীরই বংশ রক্ষা হইয়াছে তাহা বলা যায় না। প্রবলের উৎপাত অধিক হওয়ায় এবং আবহাওয়ার সহিত মিলিয়া মিশিয়া থাকিতে না পারায়, অনেক দুর্ব্বল প্রাণী নির্ব্বংশ হইয়া পড়িয়াছে।

প্রাণিহত্যার অন্য কারণ

প্রাণীদের ঐরকম জন্ম-মৃত্যুর ইহাই একমাত্র কারণ নয়। যে-সকল পণ্ডিত প্রাণীদিগের জীবনের ব্যাপার লইয়া অনেক পরীক্ষা ও চিন্তা করিয়াছেন, তাঁহাদের কাছে এই সম্বন্ধে আর একটি কথা শুনা যায়। তোমাদিগকে তাহাও সংক্ষেপে বলিতেছি। তাঁহারা বলেন,—আজকাল আমরা যেমন কোনো প্রাণীকে বুদ্ধিতে, কাহাকে দেহের শক্তিতে, কাহাকে আবার চতুরতায় প্রধান দেখিতে পাইতেছি, প্রথম সৃষ্টির সময়ে তাহাদের কেহই এই সকল গুণ লইয়া জন্মে নাই। জগদীশ্বর প্রথমে কোটি কোটি প্রাণী সৃষ্টি করিয়া এই পৃথিবীতে ছাড়িয়া দিয়াছিলেন। ক্রমে খাবার লইয়া, আরামের সামগ্রী ও বাসস্থান লইয়া তাহাদের মধ্যে ঘোর মারামারি হানাহানি হইয়াছিল। এই যুদ্ধে যাহারা একটু বুদ্ধি খাটাইয়া বা নানা রকম ফন্দি আঁটিয়া জিতিতে পারিয়াছিল, তাহাদেরই বংশধর যুগযুগান্তর ধরিয়া সেই সকল গুণের উন্নতি করিতে করিতে, এখন প্রাণীদের মধ্যে প্রধান হইয়া দাঁড়াইয়াছে। যাহারা হারিয়া আসিতেছিল,—তাহাদেরই বংশধর এখন নিকৃষ্ট প্রাণী।

এখন সেই নিকৃষ্ট প্রাণীরা প্রবলের নিকটে হার মানিয়াই জীবন শেষ করিতেছে, অথবা পৃথিবী হইতে তাহাদের বংশলোপ হইতেছে। সুতরাং বলিতে হয়, ক্ষুদ্র প্রাণীদের জন্ম এবং তাহাদের পরস্পরের মারামারি হানাহানি প্রাণিজাতিকে মোটামুটি উন্নতির পথে লইয়া যাইবার জন্যই হইয়াছে।

প্রাণীদের উন্নতি

যে কথাগুলি বলিলাম, বোধ হয় তাহা তোমরা ভালো করিয়া বুঝিলে না। একটা উদাহরণ দেওয়া যাউক। পরীক্ষার ফল বাহির হইলে তোমাদের স্কুলে পুরস্কার দেওয়া হয়। ক্লাসে ছেলে অনেক, সকলেই পুরস্কার পাইবার জন্য পরিশ্রম করে। শেষে তোমাদের মধ্যে যে তিন চারিটি ছেলে পরীক্ষায় সকলকে হারাইয়া বেশি নম্বর রাখে, তাহারাই পুরস্কার পায়। মনে কর, তোমাদের স্কুলের নিয়ম হইল,—ভালো-মন্দ প্রত্যেক ছেলেই পুরস্কার পাইবে এবং লোকে সকলকেই আদর করিবে। এই অবস্থায় তোমরা কি করিবে, ভাবিয়া দেখ দেখি। তখন তোমরা কেহই পরীক্ষায় ভালো হইবার জন্য চেষ্টা করিবে না; তোমাদের মনে হইবে, যখন সকলেই সমান পুরস্কার ও সমান আদর পাইতেছে, তখন মিছামিছি খাটিয়া কষ্ট পাই কেন?

আর একটা উদাহরণ দেওয়া যাউক। চুপ করিয়া ঘরে বসিয়া থাকিলে মানুষ জীবনে সুখ পায় না। সকলকেই খাটিয়া টাকাকড়ি মানসম্ভ্রম ও বিদ্যাজ্ঞান উপার্জ্জন করিতে হয়—যে যত বুদ্ধি করিয়া খাটিতে পারে, সে জীবনে ততই সুখী হয়। মনে কর, পৃথিবীটা এমন হইয়া গেল, যেন, লোকজনের খাওয়া-দাওয়া ও সুখভোগের ভাবনা থাকিল না—যখন যেটি দরকার তাহা ভগবানের আদেশে হাতের গোড়ায় ও মুখের উপরে আসিতে লাগিল। তখন পৃথিবীর এই লোকগুলা কি করিবে, বলিতে পার কি? ঘুমাইয়া, গড়াগড়ি দিয়া, হাঁই তুলিয়াই জীবন কাটাইবে না কি? তখন কলকারখানা ট্রাম্-রেলওয়ে, স্কুল-কলেজ, সকলি বন্ধ হইয়া যাইবে। এই অবস্থায় মানুষ একেবারে মাটি হইয়া যাইবে, তখন দুই পা চলিয়া বেড়াইতে বা একটু নড়িয়া বসিতেও তাহাদের কষ্ট হইবে।

সুতরাং বুঝা যাইতেছে, যে-সকল জিনিস পাইলে মানুষ সুখে স্বচ্ছন্দে জীবন কাটাইতে পারে এবং মনের সুখ পাইতে পারে, তাহা সহজে হাতের গোড়ায় পাওয়া যায় না। এই জন্যই লোকে যত্ন করিয়া লেখাপড়া শিখে, জ্ঞানবুদ্ধির উন্নতি করে। তাহার পর যে দেশের লোক পরিশ্রম ও বুদ্ধির বলে, শিল্পের বলে এবং টাকার জোরে বড় হয়, সেই দেশই পৃথিবীতে সম্মান পায়।

মানুষের সম্বন্ধে এতক্ষণ যাহা বলিলাম, ছোটো প্রাণীদের সম্বন্ধেও ঠিক সেই কথা বলা চলে। পৃথিবীর উপরে যে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি পোকা-মাকড় চলিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেছে, তাহাদিগকেও মানুষের মত চেষ্টা করিয়া খাবার জোগাড় করিতে হয়। বলবান্ শত্রুরা যখন তাহাদিগকে আক্রমণ করে, তখন জোর দেখাইয়া বা কৌশল করিয়া আত্মরক্ষা করিতে হয়। তা-ছাড়া সন্তানদিগকে বাঁচাইয়া রাখিবার জন্য চেষ্টা করিতে হয় এবং মাথা গুঁজিবার মত বাসা না থাকিলে নিরাপদ জায়গায় বাসা প্রস্তুত করিতে হয়। তোমাদের ঘরের কোণে বা বাগানের গাছের ডালে মাকড়সারা কত কষ্ট করিয়া জাল বুনে, তাহা অবশ্যই দেখিয়াছ। ক্ষুধা লাগিলেই যদি মোটা মোটা মাছি ও পোকা আসিয়া মাকড়সার কাছে ধরা দিত, তাহা হইলে কোনো মাকড়সা কি জাল পাতিয়া মাছি ধরিতে যাইত? কিন্তু কোনো মাছিই মাকড়সার কাছে ধরা দিতে চায় না; তাই তাহারা মাকড়সা দেখিলেই কৌশলে পলাইয়া যায় এবং মাকড়সারা আরো কৌশল খাটাইয়া জালের ফাঁদ পাতে, ও সেই ফাঁদে মাছিদিগকে ফেলিয়া খাবারের জোগাড় করে।

ইহা হইতে তোমরা বুঝিতে পারিবে, মাকড়সার জাল বুনিবার কৌশল এবং মাছির সতর্কভাবে চলাফেরার অভ্যাস, পরস্পরকে হারাইয়া দিবার চেষ্টা হইতে জন্মিয়াছে। ইহা যেন তোমাদের ক্রিকেট খেলা। তুমি চাও, তুমি যাহাতে “আউট্” না হও, আর তোমার বন্ধু চায়, তোমাকে “আউট্” করিতে। দুই দশ দিন এই প্রকারে খেলা করিতে করিতে তুমি “বল্” মারিবার কৌশল এমন সুন্দর শিখিয়া যাও যে, কেহ তোমাকে সহজে “আউট” করিতে পারে না; সঙ্গে সঙ্গে তোমার বন্ধুও “বল্” দিবার এমন কৌশল শিখিয়া যায় যে, সে একজন পাকা “বোলার” হইয়া দাঁড়ায়।

যাহা হউক, আমরা মাকড়সা ও মাছি সম্বন্ধে যে কথা বলিলাম, পৃথিবীর অনেক প্রাণীর সম্বন্ধেই সেই কথা বলা খাটে। শত্রুকে হারাইয়া নিজের ও সন্তানদের জীবন রক্ষা করিতে হইবে বলিয়াই উঁচু গাছের পাতার আড়ালে পাখীরা ক্রমে এমন বাসা বাঁধিতে শিখিয়াছে। শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করিয়া বাঁচিয়া থাকিবার জন্যই শামুক ও কচ্ছপের শরীর কঠিন আবরণে ঢাকা থাকে এবং ছুঁচোর গায়ে এমন বিশ্রী দুর্গন্ধ মাখানো থাকে। আবার আর এক দিকে দেখ,—বড় বড় প্রাণীদিগকে মারিয়া আহার করিবার জন্য বাঘ ভালুক ও সিংহের মুখে এমন ধারালো দাঁত এবং থাবায় এমন ছুঁচ্‌লো নখের সৃষ্টি হইয়াছে।

কেবল শত্রুর হাত হইতে রক্ষা পাইবার জন্য এবং খাবার সংগ্রহের জন্যই যে, প্রাণীরা এইরকম বিচিত্র আকার পাইয়াছে, তাহা নয়। বাসের জায়গা লইয়া কাড়াকাড়ি আরম্ভ হইলে অনেকে দেহের পরিবর্ত্তন করিয়া ধীরে ধীরে নানা জাতিতে পরিণত হইয়াছে। গ্রামে বসতি বেশি হইলে বা সেখানে চোর ডাকাতের উৎপাত ঘটিলে লোকে কি করে, তোমরা অবশ্যই জান। তখন লোকে গ্রাম ছাড়িয়া নদীর ধারে মাঠের মধ্যে নূতন বাড়ী-ঘর নির্ম্মাণ করিতে আরম্ভ করে। ক্রমে দূরদূরান্তর হইতে আরো লোকজন আসিয়া সেখানে বাড়ী করে। ইহাতে এক নূতন গ্রামের পত্তন হইয়া যায়। ছোটো প্রাণীদের মধ্যে বাসস্থানের এই প্রকার নড়াচড়া যে কত দেখা যায়, তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। জলেই প্রথম প্রাণীর জন্ম হইয়াছিল। তার পরে সমুদ্রের ও নদীর জল এককালে যখন প্রাণীতে প্রাণীতে পরিপূর্ণ হইয়া পড়িয়াছিল, তখন জলের প্রাণী ডাঙায় আসিয়া বাস করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। শামুক গুগ্‌লি জলের প্রাণী, যখন তাহারা নানা কারণে জলে টিঁকিয়া থাকিতে পারিল না, তখন তাহাদেরি মধ্যে কতকগুলি ডাঙায় আসিয়া সুখে স্বচ্ছন্দে বাস করিতে আরম্ভ করিল এবং সঙ্গে সঙ্গে তাহাদের দেহেরও অনেক পরিবর্ত্তন হইতে লাগিল। আমরা এখন যে সকল ডাঙার শামুক দেখিতে পাই, তাহারা জলের শামুকদেরই জ্ঞাতি। আবার ডাঙায় থাকিয়া আত্মরক্ষা করা যাহাদের কঠিন হইয়াছিল, তখন তাহারা স্থলের প্রাণী হইয়াও জলে আশ্রয় লইয়াছিল। তিমি মাছ ইহাদের একটা উদাহরণ। ইহারা গোড়ায় স্থলচর প্রাণী ছিল। যাহাদের জলে বা স্থলে কোনোখানেই থাকার সুবিধা হইল না,—তাহারা উভচর হইয়া দাঁড়াইল। ব্যাঙ্, কচ্ছপ এবং আরো অনেক প্রাণী উভচর। ইহারা সুবিধামত কখনো জলে এবং কখনো স্থলে বাস করিয়া বাঁচিয়া আছে। যে সকল দুর্ব্বল প্রাণীর উপরে শত্রুর উৎপাত বেশি ছিল, তাহারা জলের উপরে বা ডাঙায় প্রকাশ্যভাবে বাস করিতে পারে নাই,—সমুদ্রের পাঁকের তলায় কিংবা অন্ধকার পর্ব্বতের গুহায় আশ্রয় লইয়া বাস করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। এই সকল প্রাণীর সন্তান-সন্ততি এখন অনেক আছে,—সমুদ্রের উপরকার জলে বা ডাঙায় তাহারা বেড়াইতে পারে না,—সূর্য্যের আলো তাহাদের সহ্যই হয় না।

এপর্য্যন্ত যাহা বলিলাম তাহা হইতে তোমরা বোধ হয় বুঝিয়াছ,—জগদীশ্বর যে কোটি কোটি প্রাণীর জন্ম দিয়া জলে স্থলে আকাশে ছাড়িয়া দিয়াছেন, তাহারা দলে দলে মরিয়া নির্ব্বংশ হউক, ইহা তাঁহার উদ্দেশ্য নয়। স্থান লইয়া, খাদ্য লইয়া ও আবাস লইয়া পরস্পরের মধ্যে কাটাকাটি মারামারি চলুক, এবং সকলে এই লড়াইয়ে যোগ দিয়া পরস্পরকে উন্নত করুক, এবং যাহারা এই লড়াইয়ে যোগ দিবার অনুপযুক্ত, কেবল তাহারাই মরুক্—ইহাই তাঁহার অভিপ্রায়। এই লড়াইয়ে যোগ দিয়া কিছুকাল জিতিয়াছিল বলিয়াই, পিপীলিকা ও মৌমাছিরা এত বুদ্ধিমান্।

প্রাণীদের দেহের বৃদ্ধি

ছেলেবেলায় যখন তোমাদেরি মত ছোটো ছিলাম, তখন কেবলি মনে হইত—বাগানে ঐ যে ছোটো চারা গাছটি পুঁতিয়াছিলাম এবং খাঁচায় ঐ যে পাখীর বাচ্চাটি রাখিয়া যত্ন করিতেছিলাম,—দুই মাস পরে তাহারা এত বড় হইল কেন? মনের এই প্রশ্নটির উত্তর তখন কাহারো কাছে পাই নাই,—হয় ত কাহাকে জিজ্ঞাসা করিতেও সাহস হয় নাই। তোমাদের মধ্যে কাহারো কাহারো মনে হয় ত এই রকম প্রশ্ন উপস্থিত হয়। তাই কোন্ কোন্ সামগ্রী দিয়া প্রাণীদের শরীর গড়া হইয়াছে, এবং দিনে দিনে তাহারা কি প্রকারে বাড়ে তাহার একটু পরিচয় দিব।

মাটি দিয়া পুতুল গড়া হয়, ইট কাঠ চূণ বালি দিয়া ঘর-বাড়ী গাঁথা হয়। যে জিনিস দিয়া গাছপালা এবং প্রাণীদের দেহ প্রস্তুত, তাহাকে কোষ বলে। ইট কাঠের আকৃতি হাতে নাড়িয়া চাড়িয়া এবং চোখে দেখিয়া আমরা সহজে জানিতে পারি। কিন্তু প্রাণীদের শরীরের কোষ এত ছোটো যে, তাহা খালি-চোখে দেখা যায় না; দেখিতে হইলে খুব বড় অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দরকার হয়। তোমরা হয় ত মনে করিতেছ, কোষগুলির আকার ইটের মত চৌকা রকমের, না হয় ভাঁটার মত গোল; কিন্তু তাহা নয়। দেহের সকল জায়গার কোষের আকৃতি একই রকম হয় না। চৌকা লম্বা গোল চেপ্‌টা সকল রকমের কোষই প্রাণীর শরীরে আছে। মানুষের গায়ের মাংসপেশীর কোষ অণুবীক্ষণ যন্ত্রে কি রকম দেখায়, এখানে তাহার একটা ছবি দিলাম। দেখ, এই কোষ লম্বা। তার পরের ছবিটি প্রাণীর লিভার অর্থাৎ যকৃতের কোষের আকৃতি। যকৃতের কোষগুলি যেন মৌমাছির চাকের এক একটা কুঠারি। কোষের আকৃতি কত বিচিত্র হয়, ছবি দুইটি দেখিলেই তোমরা বুঝিতে পারিবে।

ছবির প্রত্যেক কোষের মধ্যে তোমরা এক একটি কালো বিন্দু দেখিতে পাইবে,—ইহাকে কোষসামগ্রী বলে। কিন্তু ইহাই কোষের একমাত্র বস্তু নয়। ঐ জিনিসটাকে ঘিরিয়া আর একটি বস্তু থাকে, ইহাকে জীব-সামগ্রী বলে। প্রাণী ও গাছপালার শরীরে ইহাই সজীব দ্রব্য। যাহা আমাদের খুব আদরের ও কাজের জিনিস, তাহাকে আমরা অনেক যত্ন করিয়া রাখি; সর্ব্বদা ভয় হয়, পাছে তাহা নষ্ট হইয়া যায়। প্রাণীর দেহের সেই ছোটো কোষের ভিতরকার কোষ-সামগ্রী এবং জীব-সামগ্রীর মত আদরের দ্রব্য আর নাই। এইগুলিই প্রাণীকে বাঁচাইয়া রাখে। তাই যাহাতে হঠাৎ নষ্ট না হয়, তাহার জন্য ঐ দুইটি জিনিসের চারিদিক্ প্রায়ই খুব মজবুত প্রাচীর দিয়া ঘেরা থাকে। ছোটো কৌটার মধ্যে যেমন তোমরা সোনার আংটি সাবধানে রাখিয়া দাও, কোষ-সামগ্রী কোষের প্রাচীরের মধ্যে ঠিক সেই প্রকার সাবধানে থাকে। এই ব্যবস্থায় বাহিরের আঘাত কোষের ভিতরকার আসল জিনিসটাকে নষ্ট করিতে পারে না। আমরা কোষের যে নানা আকৃতির ছবি দিয়াছি, তাহা কোষ-প্রাচীরেরই ছবি। কোষ-সামগ্রী অতি ছোটো এবং তরল জিনিসের মত। আমিবা প্রভৃতি এক-কোষ প্রাণীর কোষে কিন্তু কোষ-প্রাচীর দেখা যায় না।

এখন প্রাণীদের শরীর কি রকমে বৃদ্ধি পায়, তাহা বলিব। পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে, প্রাণিদেহের কোষ-সামগ্রী যখন পুষ্ট হইয়া পড়ে, তখন তাহা একটি কোষের মধ্যে আটক থাকিতে চায় না। এই অবস্থায় তাহা আপনা হইতেই দুই ভাগে ভাগ হইয়া পড়ে। এই রকমে গোড়ার একটি কোষ দুইটি হইয়া দাঁড়ায় এবং পরে সেই দুইটি কোষই বড় হইয়া চারিটি হয়। প্রাণীরা যতদিন সবল থাকে, ততদিন এই প্রকার নূতন নূতন কোষ জন্মে। কাজেই, প্রাণীর দেহের বৃদ্ধি হইতে থাকে। নূতন ইট কাঠ জুড়িলে যেমন ছোটো ঘর বড় হয়, দেহে নূতন নূতন কোষ জড় হইলে ঠিক সেই রকমেই দেহ বড় হইয়া পড়ে। কিন্তু এই রকম নূতন কোয-সৃষ্টির একটা সীমা আছে। তাই প্রাণী বা গাছপালার দেহ কিছু দিন বাড়িয়াই আর বাড়ে না। ঐ রকম কোষ-সৃষ্টি যদি বুড়া বয়স পর্য্যন্তই চলিত তোমরা তাহা হইলে একটা ছোটো পোকাকে হাতীর মত বড় হইতে দেখিতে।

অতি সংক্ষেপে তোমাদিগকে দেহের বৃদ্ধির কথা বলিলাম৷ কিন্তু প্রাণিদেহের বৃদ্ধির ইহাই কারণ। মাতার গর্ভে যখন সন্তান জন্মে এবং ডিম হইতে যখন শাবকের সৃষ্টি হইতে থাকে তখনো গোড়ার একটি কোষই নিজেকে ভাডিয়া চুরিয়া ঐ প্রকারেই কোটি কোটি নূতন কোষের উৎপত্তি করে। শেষে সেইগুলিই পৃথক্ হইয়া গিয়া সন্তানের হাড় রক্ত মাংস ইত্যাদির সৃষ্টি করে।

কোষ-সামগ্রী কোন্ কোন্ পদার্থ দিয়া প্রস্তুত তাহা জানা গিয়াছে। তাহা কি প্রকারে পুষ্ট হয়, কোন্ শক্তিতে তাহা আপনা হইতেই ভাঙিয়া চুরিয়া পৃথক্ কোষের সৃষ্টি করে, এই সকল বিষয়ে বড় বড় পণ্ডিতেরা বড় বড় কথা বলিয়াছেন; কিন্তু ঠিক ব্যাপারটি কি তাহা আজও স্পষ্ট জানা যায় নাই। তা-ছাড়া গাছপালা ও প্রাণীরা পূর্ণ আকার পাইলে, তাহাদের দেহে কেন আর নূতন কোষের সৃষ্টি হয় না, তাহাও ভালো করিয়া জানা যায় নাই। এই সকল শক্ত বিষয়ের কোনো কথা তোমাদিগকে এখন বলিব না। তোমরা বড় হইয়া যখন জীবতত্ত্বসম্বন্ধে বড় বড় বই পড়িবে, তখন এই সম্বন্ধে অনেক খবর পাইবে।

প্রাণীদের শ্রেণীবিভাগ

সংসারের জিনিস-পত্র ঠিক গুছাইয়া না রাখিলে, কোনোটাই কাজের সময়ে হাতের গোড়ায় পাওয়া যায় না। তখন বড় মুস্কিলে পড়িতে হয়। মনে কর, যেন তোমাদের রান্নাঘরের হাতাবেড়ি, ভাণ্ডার ঘরের চাল-দালের পাত্র, শুইবার ঘরের বিছানা-বালিশ এবং পড়িবার ঘরের কাগজ-পত্র, সকলি এলোমেলো করিয়া একটি ঘরে গাদা করিয়া রাখা হইয়াছে। এই অবস্থায় কোনো একটা জিনিস খুঁজিতে গেলে অনেক সময় কাটিয়া যায়। বামুন ঠাকুর হাঁড়িকুঁড়ি চাল-দাল হাতের গোড়ায় না পাইয়া তখন চীৎকার আারম্ভ করে,—ঠিক সময়ে খাওয়া হয় না। পড়ার বই খুঁজিতে গেলে সমস্ত সকালটা কাটিয়া যায়,—তোমাদের পড়া তৈয়ারি হয় না। ঘুমাইবার সময়ে বালিশ কম্বল খুঁজিয়া পাওয়া যায় না,—তখন হয় ত ঘরের মেজের উপরে শুইয়াই রাত্রি কাটাইতে হয়। জিনিস-পত্র গুছাইয়া না রাখার এমনই বিপদ। তোমাদের বাড়ীতে কতগুলি বই আছে, তাহা জানি না। হয় ত দুই তিনটা আল্‌মারিতে সংস্কৃত, বাংলা ও ইংরাজি ভাষার গল্পের বই, ব্যাকরণ, অভিধান কত কি আছে। এই সকল বই তোমরা যদি থাকে-থাকে আল্‌মারিতে সাজাইয়া না রাখ, তাহা হইলে কোনো একখানি বই খুঁজিতে গেলে গোলযোগে পড়িতে হয় না কি? তখন একখানি সংস্কৃতের বই বাহির করিতে গেলে, হয় ত এক ঘন্টা খুঁজিয়া মরিতে হইবে এবং শেষে অঙ্কের বইয়ের কাছে সেখানির সন্ধান পাইবে।

এই পৃথিবীতে নানা রকমের প্রাণী আছে। কাহারো দু’খানা পা, কাহারো চারিখানা পা, কাহারো কাহারো আবার ছ’খানা, আটখানা এবং একশতখানা পা; কাহারো আবার পা নাই, তাহারা বুকে হাঁটিয়া চলে। কেহ উড়িয়া বেড়ায়, কেহ জলে ডুব দিয়া চলাফেরা করে; কাহারো শরীরে হাড় নাই, কাহারো শরীর আবার হাড়ের মত শক্ত আবরণে ঢাকা। কাজেই, যাঁহারা প্রাণীদের শরীরের এবং তাহাদের জীবনের কথা জানিতে চাহেন, হাজার হাজার রকমের প্রাণীদের মধ্যে পড়িয়া তাঁহাদিগকে দিশাহারা হইতে হয়। তাই কাজের সুবিধার জন্য আমরা যেমন ঘরকন্নার জিনিসপত্র ও আল্‌মারির খাতাপত্র রকমে রকমে সাজাইয়া রাখি, পণ্ডিতেরাও সেই প্রকারে শরীরের গঠন প্রভৃতি অনুসারে সমস্ত প্রাণীকে কয়েকটি বড় বড় দলে ভাগ করেন। কিন্তু এই রকমে ভাগ করিয়াই তাঁহারা নিশ্চিন্ত থাকেন না। ইহার পরেও প্রত্যেক দলের প্রাণীদের শরীরের ছোটোখাটো প্রভেদ এবং চলা-ফেরা খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির খুঁটিনাটি পার্থক্য জানিয়া লইয়া, তাঁহারা প্রত্যেক বড় বড় দলের প্রাণীগুলিকে আরো ছোটো ছোটো দলে ভাগ করেন।

একটা উদাহরণ দিলে প্রাণীদের বিভাগের কথা তোমরা ভালো করিয়া বুঝিবে।

মনে কর,—আমরা গোরুর শ্রেণী-বিভাগ করিতেছি। দেখিলেই বুঝা যায়, গোরুর দেহে শিরদাঁড়া অর্থাৎ মেরুদণ্ড আছে; সুতরাং গোরু যে, মেরুদণ্ডী প্রাণী তাহা সহজেই স্থির হইয়া যায়। কিন্তু কেবল গোরুই মেরুদণ্ডী প্রাণী নয়,—সাপ, ব্যাঙ্, মাছ, বানর, মানুষ সকলের মেরুদণ্ড আছে। কাজেই গোরু যাহাতে সাপ ব্যাঙের দলে না পড়ে, তাহা দেখা প্রয়োজন হয়। এই জন্য ইহার জীবনের কাজ-কর্ম্ম ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালো করিয়া দেখিতে হয়। গোরুর দেহ লোমে ঢাকা থাকে; ইহারা সাপ বা ব্যাঙের মত ডিম প্রসব না করিয়া শাবক প্রসব করে, এবং শাবকগুলিকে স্তনের দুধ খাওয়াইয়া বড় করে। অনুসন্ধান করিলে গোরুর এই সকল ব্যাপার আমাদের নজরে পড়িয়া যায়। সুতরাং গোরুকে স্তন্যপায়ী প্রাণী বলা যাইতে পারে,—কাজেই ইহা মেরুদণ্ডীদের গণের স্তন্যপায়ী শ্রেণীর প্রাণী হইয়া দাঁড়ায়।

কিন্তু এই বিভাগকেই শেষ বিভাগ করিলে চলে না। যাহাদের মেরুদণ্ড আছে, আবার যাহারা স্তনের দুধ খাওয়াইয়া শাবকদিগকে বাঁচায়, এইরকম প্রাণী গোরু ছাড়া আরো অনেক আছে। মানুষ, বানর, শূকর, বাঘ, ভালুক সকলেই এই রকম প্রাণী; সুতরাং গোরুর জীবনের আরো কিছু কিছু বিষয় জানিয়া তাহাকে মানুষ, বানর, বাঘ, ভালুক ইত্যাদি হইতে পৃথক্ করা দরকার। গোরুরা কি রকমে খায় এবং কি রকমে খাদ্য চিবায়, মনে করিয়া দেখ। একগাদা টাটকা ঘাস সম্মুখে রাখিলে গোরু তাহা পাঁচ মিনিটে খাইয়া শেষ করে, কিন্তু ইহাতে ঘাসগুলি পেটে যায় না। পেটের ভিতরে পাক-যন্ত্রের কাছে যে একটা থলি থাকে, উহা প্রথমে সেখানে জমা হয়। পরে গাছের ছায়ায় বা গোয়াল-ঘরে শুইয়া যখন গোরুরা ঝিমাইতে থাকে, তখন সেই ঘাসই আবার তাহাদের মুখে আসিয়া উপস্থিত হয়। তখন, উহারা সেই ঘাস অনেকক্ষণ ভালো করিয়া চিবাইয়া গিলিয়া ফেলে। এই রকমে দ্বিতীয়বার চিবাইয়া গিলিলে, খাদ্য পাকযন্ত্রে অর্থাৎ পেটে পৌঁছে। এই প্রকার দ্বিতীয়বার চিবানোকে “জাবর-কাটা” বলে,—ভালো কথায় তাহাকেই “রোমন্থন” করা বলা হয়। সুতরাং গোরু রোমন্থক প্রাণীদের বর্গে (Order) পড়ে। এই বর্গের প্রাণীদের পায়ের খুর জোড়া নয়। ঘোড়ার খুর জোড়া,—তাহারা গোরুদের মত জাবর কাটায় না,—তাহারা যাহা খায় তাহা একবারে গিলিয়া পাকযন্ত্রে লইয়া যায়।

যাহা হউক, দেখা গেল—গোরু মেরুদণ্ডী, স্তন্যপায়ী এবং রোমন্থক প্রাণী। কিন্তু এই রকম ভাগ করাতেও গোরুর পরিচয় সম্পূর্ণ হয় না,—কারণ উট, হরিণ, মহিষ প্রভৃতি জন্তুরাও গোরুদের মত দুইবার গিলিয়া খায়। কাজেই উট ও হরিণের সঙ্গে গোরুদের গোলযোগ বাধার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং আরো কোনো নূতন পরিচয়ে গোরুকে ঐ সকল জন্তু হইতে পৃথক্ করা দরকার। এইরূপ স্থলে জীবতত্ত্ববিদ্‌গণ প্রাণীদিগকে এক একটা বিশেষ নাম দিয়া এই কাজটি শেষ করেন। তাঁহারা গোরুকে বৃষগোষ্ঠীর (Bos) অন্তর্গত করেন। এই রকমে প্রাণি-বিভাগে গোরুর সহিত আর কোনো জানোয়ারের মিল থাকিতে পারে না।

সুতরাং আমরা যে-রকমে গোরুর স্থান নির্দ্দেশ করিলাম, সেই অনুসারে গোরুরা মেরুদণ্ডীদের গণের স্তন্যপায়ীদের শ্রেণীতে পড়িল। তার পরে খাদ্য দুইবার গিলিয়া খায় বলিয়া ইহারা রোমন্থক প্রাণীদের বর্গে গেল এবং অন্য রোমন্থক প্রাণী হইতে পৃথক্ করিবার জন্য তাহাদিগকে শেষে বৃষ-জাতিতে ফেলা হইল।

কেবল গোরু নয়, সকল প্রাণীকেই বৈজ্ঞানিকেরা এই রকমে শরীরের মোটামুটি গড়ন দেখিয়া প্রথমে বড় বড় শাখায় ভাগ করেন। তার পরে তাহাদের চালচলন ও দেহের ভিতরকার কাজ খোঁজ করিয়া, সেইগুলিকেই আরো কতকগুলি ছোটো ছোটো দলে ফেলেন। ইহাতে প্রাণীদিগকে চিনিয়া লইয়া তাহাদের জীবনের সকল বিষয় সন্ধান করার সুবিধা হয়।

আমরা প্রাণীদের ছোটো দলগুলির কথা বলিব না। পৃথিবীর সমস্ত পোকা-মাকড়কে কয়েকটি প্রধান শাখায় ভাগ করা হইয়াছে, তাহাদেরি অল্প পরিচয় দিব এবং সেই সকল শাখার যে প্রাণীদের সহিত তোমাদের জানাশুনা আছে, তাহাদের জীবনের কথা বলিব।

Book Content

১. এক-কোষ প্রাণী – খড়িমাটির পোকা
২. স্পঞ্জ
৩.১ হাইড্রা
৩.২ রাবণচ্ছত্র
৩.৩ প্রবাল
৪. তারা-মাছ – স্নায়ুমণ্ডলী
৫.১ কেঁচো
৫.২ পরাশ্রিত অকেজো প্রাণী
৫.৩ জোঁক
৫.৪ ক্রিমি – গোল ক্রিমি
৬.০ কীট-পতঙ্গ, প্রাণীদের বিভাগ
৬.১.১ কঠিনবর্ম্মী : চিংড়িমাছ
৬.১.২ কঠিনবর্ম্মী : কাঁকড়া
৬.১.৩ কঠিনবর্ম্মী : পতঙ্গ
৬.১০.১ সহস্রপদী : তেঁতুলে-বিছা
৬.১০.২ সহস্রপদী : কেন্নো
৬.২.১ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : বোলতা
৬.২.২ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : ভীমরুল
৬.২.৩ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : কুমরে-পোকা
৬.২.৪ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : কাঁচ-পােকা
৬.২.৫ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : মৌমাছি
৬.২.৬ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : পিপীলিকা
৬.৩.১ শিরা-পক্ষ পতঙ্গ : উই
৬.৩.২ শিরা-পক্ষ পতঙ্গ : জল-ফড়িং
৬.৩.৩ শিরা-পক্ষ পতঙ্গ : ভুঁই-কুমীর
৬.৩.৪ শিরা-পক্ষ পতঙ্গ : পাখীর গায়ের উকুন
৬.৪.০ কঠিন-পক্ষ পতঙ্গ
৬.৪.১ কঠিন-পক্ষ পতঙ্গ : গোবরে পোকা
৬.৪.২ কঠিন-পক্ষ পতঙ্গ : ধামসা পোকা
৬.৪.৩ কঠিন-পক্ষ পতঙ্গ : জোনাক পোকা
৬.৫.০ শল্ক-পক্ষ পতঙ্গ
৬.৫.১ শল্ক-পক্ষ পতঙ্গ : প্রজাপতি
৬.৫.২ শল্ক-পক্ষ পতঙ্গ : গুটিপোকা
৬.৬.০ দ্বিপক্ষ পতঙ্গ
৬.৬.১ দ্বিপক্ষ পতঙ্গ : মাছি
৬.৬.২ দ্বিপক্ষ পতঙ্গ : মশা
৬.৭.০ গান্ধী পোকা
৬.৭.১ ছারপোকা
৬.৮.০ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ
৬.৮.১ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ : ফড়িং
৬.৮.২ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ : উচ্চিংড়ে ও ঘুর্‌ঘুরে পোকা
৬.৮.৩ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ : আরসুলা
৬.৯.০ লূতা
৬.৯.১ মাকড়সা
৬.৯.২ কাঁকড়া-বিছা
৭. কোমলাঙ্গী : শঙ্খ, শামুক, গুগলি
লেখক: জগদানন্দ রায়বইয়ের ধরন: গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.