শল্ক-পক্ষ পতঙ্গ
(Lepidoptera)
ইহারা প্রজাপতি ও রাত্রিচর পতঙ্গ। ইহাদিগকে কেন শল্ক-পক্ষ নাম দেওয়া হইল, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। মাছের গায়ে যেমন শল্ক অর্থাৎ আঁইস থাকে, এই পতঙ্গের ডানায় সেই রকম খুব ছোট আঁইস বসানো থাকে। ইহা কেবল প্রজাপতি ও কতকগুলি নিশাচর পতঙ্গের ডানাতেই দেখা যায়। এই জন্যই আমরা ইহাদিগকে শল্ক-পক্ষ পতঙ্গ (Lepidoptera) বলিলাম।
এই পতঙ্গের চারিখানি করিয়া রঙিন্ ডানা থাকে এবং তাহাতেই রঙিন্ আঁইস লাগানো দেখা যায়। প্রজাপতির ডানায় তোমরা আঙ্গুল দিয়া পরীক্ষা করিয়ো, দেখিবে, সেই রঙিন্ আঁইস রঙের গুঁড়ার মত আঙুলে লাগিয়া যাইতেছে। প্রজাপতির ডানায় কত রঙের কত চিত্রই তোমরা দেখিতে পাও। রঙের গুঁড়ার মত আঁইস দিয়াই ঐ-সকল চিত্র আঁকা থাকে। এই গুঁড়াগুলিকে আঁইস বলিয়া হঠাৎ চেনা যায় না, অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখিলে সেগুলি যে আঁইস স্পষ্ট বুঝা যায়।
সাধারণ পতঙ্গদের মত ইহাদের ছয়খানা পা এবং মাথায় দুইটা করিয়া শুঁয়ো থাকে। তা’ ছাড়া দু’টা করিয়া চোখও থাকে। এই চোখ সাধারণ পতঙ্গের চোখের মত হাজার হাজার ছোট চোখ মিলাইয়া প্রস্তুত। ছয়খানা পায়ের মধ্যে সম্মুখের দুখানি পা খুব ছোট থাকে। এই জন্য তাহা দিয়া হাঁটিয়া বেড়াইবার কাজ চলে না।
এই দলের মুখের গড়ন বড় মজার। হাতীর শুঁড় আছে, তোমরা ইহাই জান। কিন্তু ইহাদেরও দুইটি চোখের মাঝে একটা শুঁড়ের মত অংশ জোড়া থাকে। এই শুঁড় দিয়াই এই পতঙ্গেরা ফুলের মধু বা ফলের রস টানিয়া খায়। যদি মধু খুব ঘন হয়, তবে তাহারা সেই শুঁড় হইতে জলের মত এক রকম তরল জিনিস ঢালিয়া তাহা পাত্লা করিয়া লয় এবং পরে সেই পাত্লা রস টানিতে সুরু করে। যখন শুঁড় ব্যবহার করার দরকার থাকে না, তখন ইহারা সেটিকে ঘড়ির স্প্রীঙের মত গুটাইয়া মুখের নীচে লুকাইয়া রাখে। এই জন্য যখন উড়িয়া বেড়ায়, তখন এই পতঙ্গদের মুখের সে লম্বা শুঁড় দেখাই যায় না।