৬.৫.২ শল্ক-পক্ষ পতঙ্গ : গুটিপোকা

গুটিপোকা

তোমরা গুটিপোকা দেখিয়াছ কি? ইহাদের আকৃতি বড় প্রজাপতিদের মত। পুত্তলি-অবস্থায় দেহের চারিদিকে সূতা জড়াইয়া যে আবরণ তৈয়ার করে তাহাই রেশমের গুটি। এই গুটির সূতা লইয়া আমরা রেশমী কাপড় তৈয়ার করি। দেখিতে প্রজাপতি হইলেও গুটিপোকারা সাধারণ প্রজাপতির জাতীয় নয়। ইহারা নিশাচর প্রজাপতিদের দলের পোকা। প্রজাপতিদেরই মত ইহাদের ডানায় রঙের গুঁড়া লাগানো থাকে। ডানায় আঙুল দিলেই গুঁড়া খসিয়া যায়।

গুটিপোকার প্রজাপতিদের মুখে শুঁড় থাকে না। শুঁড়ের দরকারও হয় না। কারণ পুত্তলি-অবস্থার পর প্রজাপতি হইয়া দাঁড়াইলে, ইহারা মোটেই আহার করে না। কয়েক দিন এদিকে ওদিকে ঘুরিয়া সকলেই মরিয়া যায়। ইহারা প্রাণান্তে দিনে উড়িয়া বেড়ায় না। কাক চিল প্রভৃতি অনেক পাখীই ইহাদের পরম শত্রু।

আমাদের দেশে ছোট বড় নানা জাতীয় গুটিপোকা দেখিতে পাওয়া যায়। ইহারা সাদা হল্‌দে লাল্‌চে প্রভৃতি নানা রঙের রেশমী সূতা দিয়া গুটি বাঁধে। তসরের কাপড় তোমরা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ, লাল্‌চে রেশমের সূতা দিয়া ইহা প্রস্তুত। এই সূতা এক রকম গুটিপোকা প্রস্তুত করে।

তসরের গুটিপোকা

তসরের পোকা আমাদের দেশের বনে জঙ্গলে শাল কুল প্রভৃতি গাছে জন্মে এবং সেই সকল গাছে আমড়ার আঁটির মত গুটি বাঁধে।

তসর-পোকার প্রজাপতি সাধারণত প্রজাপতির চেয়ে বোধ হয় আট-দশ গুণ বড়। ডানা মেলিয়া থাকিলে লম্বায় ও চওড়ায় ইহাদিগকে এক একটা পাখী বলিয়া মনে হয়। এই পোকারা শাল, কুল প্রভৃতি গাছে মসূর ডালের মত চেপ্‌টা থোকে। থোকো ডিম পাড়ে। মসূর ডালের রঙ্ লাল, গুটি পোকার ডিম সাদা। যাহাতে বাতাসে পাতা হইতে পড়িয়া না যায়, সেই জন্য ডিমের গায়ে এক রকম আঠা লাগানো থাকে। ইহা শুকাইয়া শক্ত হইলে পাতায় আট্‌কাইয়া যায়। এক-একটি পোকা প্রায় দুইশত ডিম পাড়িতে পারে।

ডিম হইতে যে শুঁয়ো-পোকার আকারের বাচ্চা বাহির হয়, তাহা বোধ হয় তোমরা সকলে দেখ নাই। বাচ্চাদের রঙ্ কতকটা সবুজ ধরণের। তাই ইহারা যখন গাছের সবুজ পাতা খাইয়া বেড়ায় তখন তাহাদিগকে হঠাৎ চেনা যায় না এবং যে-সকল পাখী পোকা-মাকড় ধরিয়া খায়, তাহারাও সবুজ পাতার মধ্য হইতে সবুজ পোকাগুলিকে চিনিয়া ধরিতে পারে না। গুটিপোকাদের বাচ্চার পিঠে কয়েক গোছা লোম সাজানো থাকে এবং সাধারণ পোকাদের মত ইহাদের সম্মুখে তিন জোড়া আসল পা এবং পাঁচ জোড়া অস্থায়ী পা থাকে। তা’ ছাড়া গায়ের উপরে ছোট রূপার বোতামের মত কয়েকটি বোতাম বসানো থাকে। এইগুলি কেন শরীরে লাগানো থাকে, তাহা বুঝা যায় না। ইহাদের মুখগুলি দেখিতে অতি বিশ্রী; ঠিক পেঁচার মুখের মত চেপ্‌টা। কিন্তু চোয়ালে যে দাঁত বসানো থাকে, তাহা ভয়ানক ধারালো। সেই দাঁত দিয়া গোটা গোটা পাতা কাটিয়া উহারা দিবারাত্রি আহার করে এবং শীঘ্র বড় হইয়া পড়ে।

বড় হইলেই তসর-পোকার বাচ্চারা গুটি বাঁধিতে সুরু করে। একটা পাতা বা একটা সরু কচি ডালকে আঁক্‌ড়াইয়া ইহারা নিজের দেহের চারিদিকে রেশমের সূতা জড়ায় এবং ক্রমে তাহা আম্‌ড়ার আঁটির মত বড় হইয়া পড়ে। ইহাই গুটিপোকার গুটি। পোকারা ইহারি মধ্যে পুত্তলি-অবস্থায় ঘুমাইয়া কাটায়। তার পরে যখন শরীর পরিবর্ত্তন করিয়া তাহারা ডানা-ওয়ালা প্রজাপতি হইয়া দাঁড়ায়, তখন সেই গুটি কাটিয়া বাহির হয়। কোনো কোনো পোকা বাহির হইবার সময়ে মুখ হইতে এক রকম লালা বাহির করিয়া গুটির গায়ে লাগাইতে থাকে। ইহাতে গুটির রেশমী সূতা আল্‌গা হইয়া পড়ে। তার পরে পোকারা অনায়াসে সেই আল্‌গা সূতা ঠেলিয়া গুটি হইতে বাহির হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *