ভীমরুল
তোমরা ভীমরুল নিশ্চয়ই দেখিয়াছ। ইহারা বড় বোল্তার মত পতঙ্গ। কেবল রঙটা গাঢ় বাদামী ধরণের এবং লেজের দিকে হল্দে রঙের মোট ডোরা দেওয়া থাকে। ইহাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রায় বোল্তাদেরি মত। কিন্তু বোল্তার চেয়ে ইহারা বেশি রাগী। অনেক সময়ে মিছামিছি রাগ করিয়া মানুষ ও পশুদের তাড়া করে ও গায়ে হুল ফুটাইয়া দেয়। ভীমরুলের হুলে ভয়ানক বিষ। দশ বারোটা ভীমরুলে কামড়াইলে মানুষ মরিয়া যায়।
বোল্তাদেরি মত ভীমরুলেরা চাক করে। কিন্তু বোল্তা যেমন খোলা জায়গায় চাক বাঁধে, ইহারা প্রায়ই তাহা করে না। ইহাদের চাক ফুটবলের মত গোল আবরণের মধ্যে থাকে। আবরণের গায়ে ছিদ্র থাকে। ভীমরুলেরা সেই পথ দিয়া ভিতরে যাওয়া-আসা করে। কাজেই বোল্তার চাক তোমরা যেমন সর্ব্বদাই দেখিতে পাও, ভীমরুলের চাক সে রকমে দেখিতে পাইবে না। হঠাৎ দেখিলে মনে হয়, চাকের আবরণটি বুঝি কাদা দিয়া গড়া,—কিন্তু তাহা নয়। ভীমরুলেরা দাঁত দিয়া কাঠ গুঁড়া করে এবং পরে তাহার সঙ্গে মুখের লালা মিশাইলে যে কাদার মত জিনিস হয়, তাহা দিয়া আবরণটা প্রস্তুত করে। এই জন্যই চাকের আবরণ পেষ্ট্-বোর্ডের মোটা কাগজের মত শক্ত হয়।
ভীমরুলেরা ঠিক বোল্তাদেরি মত বাচ্চাদের যত্ন লয়। কিন্তু ইহাদের চাক আবরণের মধ্যে থাকে-থাকে সাজানো দেখা যায়। ভীমরুল ছোট পোকা-মাকড়ের পরম শত্রু। এই সকল পোকাই উহাদের প্রধান খাদ্য। বোল্তারা ভীমরুলকে বড়ই ভয় করে। বোল্তার চাকের সন্ধান পাইলে ভীমরুলের দল সেখানে গিয়া ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ড শুরু করিয়া দেয় এবং চাকে ডিম বাচ্চা যাহা-কিছু থাকে, সকলি খাইয়া ফেলে।
আগেই বলিয়াছি, ভীমরুলেরা ভয়ানক রাগী; এইজন্য ইহারা চাকে কি-রকমে চলা-ফেরা করে তাহা দেখিবার সুবিধা হয় না। চাকের কাছে গেলেই ইহারা ছুটিয়া তাড়া করে। ভীমরুলের জীবনের অনেক কথা এখনো জানিতে বাকি আছে।