2 of 2

৬৮. তৃষা যখন তার জন্য চা করতে গেল

তৃষা যখন তার জন্য চা করতে গেল তখন দীপনাথ সারা বাড়ি ঘুরে দেখতে বেরিয়ে পড়ল।

তার মন ভাল নেই। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না। হাঁফ ধরে যায়। জীবন থেকে কী একটা হারিয়ে গেল হঠাৎ। মনের মধ্যে একটা আলো জ্বলত এতদিন। সেটা নিভিয়ে কে যেন একটা ঘুম-আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। একটা লাবণ্য ছিল, একটা উগ্র আগ্রহ ছিল দিন যাপনের, বেঁচে থাকার। সেসব আর মনেই হয় না। সকাল থেকে কেবল গড়িমসি ভাব। দিন গড়িয়ে গড়িয়ে কাটে।

বোস সাহেবকে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয়েছে। মাইল্ড স্ট্রোক। বিপদ তেমন কিছু নয়। তবু ডাক্তাররা সাবধান হচ্ছেন। ডাক্তার সেনগুপ্ত বলেছেন, মাইল্ড স্ট্রোকের পরের স্টেজেই মেজর স্ট্রোক হতে পারে।

মহুয়াকে আগে কখনও দেখেনি দীপনাথ। কাল নার্সিংহোমে দেখল। বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশের বেশি নয়। খুব সেজে এসেছিল বলেই কি না কে জানে, দারুণ সুন্দরী দেখাচ্ছিল। মহুয়া বোস সাহেবের কীরকম বোন তা জানে না দীপনাথ। রঞ্জন অতটা ভেঙে বলেনি। শুধু বলেছে, মহুয়াদির সঙ্গে অনেকদিনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং। ফ্যামিলির ব্যাপার বলে আমরা বাইরে এ নিয়ে আলোচনা করি না।

গভীরভাবে দীপনাথ জিজ্ঞেস করেছিল, মহুয়া কেমন মেয়ে?

খারাপ বলে কিছু শুনিনি কখনও। কিন্তু এ ব্যাপারটা ডেভেলপ করার পর সবই অন্যরকম হয়ে গেছে। মহুয়াদিকে কি আর ভাল বলা যায়!

দু’জনের মধ্যে কার ইনিশিয়েটিভ বেশি, জানো?

রঞ্জন মাথা নেড়েছে, যা ঘটবার তা ঘটেছে আমাদের অজ্ঞাতে।

দীপনাথ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছে, আমি এই ভেবে অবাক হচ্ছি, এতদিনের ব্যাপার, তবু আমি জানতে পারিনি কেন!

রঞ্জন হেসে ফেলে বলেছে, দীপুদা, এটা আপনার জানার কথাই নয়। মহুয়াদি আমার সেজো পিসির মেয়ে, ওদের বাড়িতে আমাদের ভীষণ যাতায়াত; তবু আমরাই ভাল করে জানি না। ভাসা ভাসা শুনেছি মাত্র।

মহুয়ার ঠিকানাটা আমাকে দেবে?

কেন? সেখানে যাবেন? গিয়ে লাভ নেই। মহুয়াদি ভীষণ রিজার্ভ মেয়ে। একটি কথাও বের করতে পারবেন না।

কাল নার্সিংহোমেও খুব রিজার্ভ দেখাচ্ছিল বটে মহুয়াকে। বেশি হাসে না, কথা বলে না। এম এসসি পাস করে পোকা-মাকড়ের ওপর শক্ত ধরনের রিসার্চ করছে বলে শুনেছে দীপনাথ। মুখে-চোখে পড়ুয়া ছাপটা আছে। বেশ লম্বা, ফর্সা, অভিজাত চেহারা। মুখখানা অসম্ভব মিষ্টি দেখতে। এই মেয়ে বোস সাহেবের প্রেমে কেন পড়বে তা বুঝতে পারছিল না দীপনাথ। রহস্যটা। ভাঙতেই হবে।

মণিদীপা নার্সিংহোমে আসে সকালের দিকে। বিকেলে কখনওই নয়। বোধহয় বিকেলে দীপনাথ যায় বলেই। কিন্তু বিকেলে বোস সাহেবের বাড়ির লোক, আত্মীয়কুটুমরা আসে, আসে মণিদীপার বাড়ি থেকেও কখনও কেউ। বেশ ভিড় হয়ে যায় ঘরের মধ্যে। কালও ছিল এরকম ভিড়ের দিন।

বোস সাহেবকে কয়েকটা কুশল প্রশ্ন করে এবং মহুয়াকে খুব ভাল করে দেখে করিডোরে এসে অপেক্ষা করছিল দীপনাথ। মহুয়ার জন্য।

পৃথিবীর সব সমস্যারই সমাধান সে করতে পারবে, এমন কথা সে নিজেও ভাবে না। কিন্তু দীপনাথের এ যাবৎকালের জীবন কেবল কতগুলি প্রয়াস এবং চেষ্টার সমষ্টি। চেষ্টা করতে দোষ কী?

সবাই চলে যাওয়ার পরও আধ ঘণ্টা বেশি থেকেছিল মহুয়া। যখন বেরিয়ে এল তখন খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল তাকে। চোখ নিচুর দিকে, বটুয়াটা বুকের কাছে চেপে ধরা।

সিঁড়ির কাছ বরাবর দীপনাথ তার সঙ্গ ধরে বলল, আপনিই কি মহুয়া? নমস্কার। আমার নাম দীপনাথ চ্যাটার্জি। আমি বোস সাহেবের

মহুয়া একটু থতমত খেয়ে অবাক হয়ে তাকায়। তারপর বলে, জানি। ওর কাছে শুনেছি।

কোনদিকে যাবেন?

মহুয়া একটু হাসল। বলল, আমাকে এগিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।

মরিয়া দীপনাথ বলে, কিন্তু আপনার সঙ্গে যে আমার একটু জরুরি দরকার!

মহুয়া বোধহয় দরকারটা জানে। বোস সাহেবের কাছেই শুনে থাকবে। সংক্ষেপে বলল, আসুন।

বলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল।

নার্সিংহোমের গায়েই মিন্টো পার্ক। মাঝখানে পরিষ্কার চৌকো জলাশয়। মহুয়া বিনা ভূমিকায় পার্কে ঢুকল এবং প্রায় একবারও দীপনাথের দিকে না তাকিয়ে বলল, এইখানে কথা বলা যায়।

হ্যাঁ।-বলে দীপনাথ বসবার জায়গা খুঁজছিল।

মহুয়া ঘাসের ওপর বসে বলল, বলুন।

দূরত্ব রেখে দীপনাথ বসে এবং কোনওরকম দ্বিধা সংকোচ এসে বাধা দেওয়ার আগেই বলে, আপনি ভুল করছেন।

মহুয়া ন্যাকামি করল না, বিস্ময়ের ভান করল না, কিংবা জানতেও চাইল না কোন কাজটার কথা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। একটু চুপ করে থেকে মৃদু স্বরে বলল, আপনি খুব উদ্যোগী পুরুষ শুনেছি।

দীপনাথের স্বভাবে একটা ঠাট্টা-রসিকতার পুরনো রোগ আছে। সে জিজ্ঞেস করল, অধ্যবসায় আর উদ্যোগ শব্দের অর্থ কি এক?

না। একটু আলাদা।

তা হলে আমি উদ্যোগী নই। তবে অধ্যবসায়ী।

মহুয়া এ কথাটা বাঁকাভাবে ধরল না। খুবই সিরিয়াস গলায় বলল, আমাকে আপনার কথা বলুন।

কেন বলুন তো! আমার কথা জেনে কী হবে?

আমি ধৈর্যশীল অধ্যবসায়ী লোকদের কথা পছন্দ করি।

দীপনাথ মাথা নেড়ে বলে, আমার জীবনে তো তেমন কোনও কিছু ঘটেনি।

ও আপনাকে খুব পছন্দ করে।

বোস সাহেব?–বলে দীপনাথ একটু হেসে বলে, আগে হয়তো বা করতেন। এখন করেন না।

আপনি কি রিজাইন করতে চেয়েছিলেন?

চেয়েছিলাম। বোস সাহেব হঠাৎ অসুস্থ হয়ে না পড়লে হয়তো এর মধ্যেই কাজ ছেড়ে দিতাম। কিন্তু উনি নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ায় আমাকেই সব সামলাতে হচ্ছে।

জানি। সব শুনেছি। এও শুনেছি, ওর অসুখ সম্পর্কে আপনিই ওকে অনেকদিন আগে ওয়ার্নিং দিয়েছিলেন!

আমার মনে হয়, ওঁর এই অসুখটা অনেকদিন ধরে পাকাচ্ছিল।

মহুয়া মৃদু স্বরে বলল, এসব অসুখ অনেকদিন ধরেই তৈরি হয়। কিন্তু আমরা যারা ওকে ভালবাসি বলে ক্লেম করি তারা কেউই এটা লক্ষ করিনি। আপনি করেছেন।

দীপনাথ একটু লজ্জা পেয়ে বলে, সেটা কোনও ব্যাপার নয়। আমার ওয়ার্নিং উনি পাত্তা দেননি।

পাত্তা দেয়নি নিজের সম্পর্কে ভুল ধারণার ফলে। ও মনে করে ও খুব ফিট, খুব এফিসিয়েন্ট।

আমি কিন্তু বোস সাহেবের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে চাইছি না।

মহুয়া এ কথাতেও রাগল না। বলল, আপনাকে বলতে হবে না। আপনি কী জানতে চান তা আমি জানি।

দীপনাথ চুপ করে ছিল। মহুয়া উদাসভাবে কিছুক্ষণ জলের দিকে চেয়ে থেকে বলে, ভুল করছি তাও জানি। কিন্তু তবু তো এরকম কিছু ঘটে যায়। যাকে ঠেকানো যায় না।

ভুল কথাটা খুব নরম। এ ক্ষেত্রে শব্দটা হওয়া উচিত অন্যায়। আপনি তাও কি জানেন?

জানি। কিন্তু আমার দিক থেকেও কিছু বলার আছে।

বলুন। আমি শুনতেই চাইছি।

কিছু করতে চাইছেন। ঠিক তো?

সম্ভব হলে।

মহুয়া মৃদু হেসে বলল, আমিও আপনাকে হেলপ করতে চাই। কিন্তু পারব কি না জানি না। আপনার কথাটা বলুন।

আমার কথা হল, ও খুব হেলপলেস। দীপা বউদি ওকে কম্প্যানিয়নশিপ দিতে পারেনি। ওর দিক থেকেও একইরকম। যদি ওরা পারত তবে আমি সরেই দাঁড়াতাম।

আপনি সরে দাঁড়ালে কি পারবে?

বোধহয় না। আমি সরেই ছিলাম। বুধোদার সঙ্গে বহুকাল আমার কোনও সম্পর্কই ছিল না। অতীতে যে সফটনেস ছিল সেটা আমি জোর করে মন থেকে সরিয়ে রাখতাম। খুব কাজ করতাম। তারপর একদিন, খুব রিসেন্টলি, বুধোদা আমার কাছে গিয়ে বলল, জীবনের আর মোটে ক’টা দিন আমার অবশিষ্ট আছে। এ ক’টা দিন আমাকে একটু শান্তি দাও। আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না।

সঙ্গে সঙ্গেই কি আপনি প্রস্তাবটা মেনে নিলেন?

না। বুধোদার কাছে সব আগে শুনলাম। অনেক ভেবে, বিশ্লেষণ করে বুঝলাম, বুধোদা হয়তো ঠিক কথাই বলেছে। একটা কথা বলে রাখি, ও কিন্তু দীপাবউদির কোনও নিন্দে করেনি আমার কাছে। বউদি কেমন তা আমরাও জানি।

কেমন বলুন তো!

একটু হেডস্ট্রং। একটু বেপরোয়া। খুব অহংকারী। বুধোদার দরকার ছিল ধীর স্থির বিবেচক একটি মেয়ে।

দীপনাথ সামান্য উম্মার সঙ্গে বলে, কিন্তু বোস সাহেবই যে কিছুদিন আগে মিসেস বোসকে ডিভোর্স দিতে রাজি ছিলেন না।

মহুয়া শান্ত গলায় বলে, এখনও ঠিক রাজি নয়। ডিভোর্স মানেই পাবলিসিটি। ও তা পছন্দ করে। তাই চায়নি। আর তাতেই প্রমাণ হয়, বুধোদার দিক থেকে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।

দীপনাথ গুম হয়ে থেকে কিছুক্ষণ বাদে জিজ্ঞেস করে, আপনারা কোনও ফাইনাল ডিসিশন নিয়েছেন?

ওর অসুখ না হলে নিতাম। অসুখের জনাই এখনও নিইনি।

ডিসিশনটা কি পজিটিভই হবে?

মহুয়া হেসে ফেলে বলে, আমি সিরিয়াসলিই আপনাকে হেলপ করতে চাই। বিশ্বাস করুন।

কথাটার মধ্যে কোনও বিদ্রুপ বা প্রচ্ছন্ন চ্যালেঞ্জ ছিল না। মহুয়া যে ভাল জাতের মেয়ে তাতে কোনও সন্দেহ করেনি দীপনাথ। সে শুকনো মুখে বলল, আপনি যদি চেষ্টা করেন তবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

মহুয়া ম্লান হেসে বলে, আমি তো এ ব্যাপারে একটি পার্টি। আমার চেষ্টায় আন্তরিকতা থাকবে না। বরং আপনার মাথায় যদি কোনও সাজেশন আসে তবে আমাকে বলবেন।

আপনি যদি বিয়ে করেন?

মহুয়া এ কথায় চটে উঠল না। তবে একটু গম্ভীর হয়ে বলল, ও প্রসঙ্গটা থাক। মানুষ তো পুতুল নয়।

দীপনাথ লজ্জিত হয়ে বলল, মাপ করবেন, আমার বুদ্ধিসুদ্ধি একটু গুলিয়ে যাচ্ছে।

মহুয়া উঠল। বলল, আজ আসি।

 

সেই থেকে দীপনাথ আনমনা, বিমর্ষ। একা একা মেসবাড়িতে ফেরার সময় তার মনের মধ্যে নানা আবেগ, রাগ, হতাশা খেলা করে গেল। কিছু করার নেই তার? কিছু করা যাবে না?

ঘুরতে ঘুরতে দীপনাথ বাবার ঘরে এসে দাঁড়ায়। দরজাটা খোলা। বাবা অবশ্য এখানে নেই, সোমনাথের কাছে আছে। ফাঁকা ঘরটার দিকে শূন্য চোখে চেয়ে থাকে সে কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে। ধীরে হেঁটে এসে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়ায়।

বউদি।

তৃষা চা ছাকতে হুঁকতে ফিরে চেয়ে বলল, কিছু বলছ?

বলছি, হারটা বাবার নাম করে চিত্রাকে আশীর্বাদি দিয়ো।

তোমার নামে নয়?

না, বাবার নাম করেই দিয়ে। বাবা হয়তো তেমন কিছু দিতে পারবে না। চিত্রার শ্বশুরবাড়িতে এ নিয়ে কথা হতে পারে।

তৃষা মুখ টিপে একটু হাসল। বলল, সংসারী বুদ্ধি তো দিব্যি টনটনে, বিয়ে না করলে কী হবে!

দীপনাথ একটা শ্বাস ছেড়ে বলে, বিয়ে তো আর তোমরা দিলে না!

বিয়ে দিতে কি ইচ্ছে করে বলো! এমন ভাল দেওরটিকে কোন টগবগে মেয়ে এসে দখল করে নেবে, দেওর আর ফিরেও চাইবে না আমাদের দিকে। এখনই চায় না, বিয়ে হলে তো আরও।

মনে থাকবে তো বউদি? বাবার নাম করে দিয়ো।

থাকবে গো, থাকবে। তোমার মতো বুদ্ধি বিবেচনা বাপু আমারও নেই। কথাটা আমার মাথাতেও খেলেনি।

দীপনাথ ম্লান হেসে বলে, বাবাও যে সংসারের একজন এবং খুবই ইম্পর্ট্যান্ট একজন সে কথা মনে না রাখাটা আমাদের পক্ষে গৌরবের নয় বউদি। ইন ফ্যাক্ট, আমিও ভুলে গিয়েছিলাম। তুমি

তো পরের মেয়ে।

এইখানে চা খাবে, না ঘরে?

এই তো বেশ। দাও উঠোনে দাঁড়িয়ে খাই।

বৃন্দাকে মোড়া পেতে দিতে বলি। দাঁড়াও।

বৃন্দা মোড়া দিয়ে যায়। দীপনাথ আর তৃষা চায়ের কাপ নিয়ে মুখোমুখি বসে।

দীপু!

বলো।

তোমাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন বলো তো আজ?

মন ভাল নেই বউদি।

কেন?

সব কি বলা যায়?

আমাকে যায়। আমি তোমার পুরনো বন্ধু।

দীপনাথ একটু হেসে বলে, তোমাদের সংসার-টংসার অনেক দেখলাম বউদি। কিছু ভাল লাগে, একদিন পাহাড়ে চলে যাব দেখো।

আবার পাহাড়? ওটা যে তোমার মাথায় একটা কী ঢুকেছে!

দীপনাথ চায়ে চুমুক দিতে দিতে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিল। সেটা লক্ষ করে তৃষা আজ খুব নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে দীপু?

দীপনাথ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, সংসারে কারও সঙ্গেই খুব একটা মাখামাখি করতে নেই বউদি, তা হলে দুঃখ পেতে হয়। যত জড়াবে তত অশান্তি। এই অশান্তির ভয়েই কত লোক সাধুসন্ন্যাসী হয়ে পালিয়ে যায়।

তুমিও কি সাধু হওয়ার কথা ভাবছ?

প্রবল একটা শ্বাস ফেলে দীপনাথ মাথা নাড়ে, না বউদি, সাধু হওয়ার মতো পজিটিভ মেটেরিয়াল আমার ভিতরে নেই। তবে একটা কিছু করব। আর ভাল লাগছে না।

দীপু, জিজ্ঞেস করতে সংকোচ হয়। ব্যাপারটা কি হৃদয়ঘটিত?

আরে দূর! তা নয়। অন্তত আমার হৃদয়ের ব্যাপার নয়।

তবে কার হৃদয়?

দীপনাথ মৃদু একটু হাসল, পেটের কথা বার করতে চাও?

মুখে হতাশার ভাব দেখিয়ে তৃষা বলে, আমার কি সে সাধ্যি আছে?

দীপনাথ হাসিমাখা মুখেই চেয়ে ছিল। হঠাৎ বলল, বরং তোমার কথা বলল তোমাকে আগের মতো দেবী চৌধুরানি মার্কা লাগছে না কেন বলো তো? ব্রজেশ্বর কি তোমার ওপর ডাকাতি করেছে? হৃদয় ছিনতাই?

ভ্রু কুঁচকে তৃষা বলল, খুব রকবাজদের ভাষা শিখেছ তো! তোমাব ব্রজেশ্বরের বয়েই গেছে আমার হৃদয় নিয়ে টানাটানি করতে।

তা হলে সেই দেবী চৌধুরানির মুখ-চোখ হাবভাব এমন প্রফুল্লময়ীর মতো হয়ে গেল কেন?

চেহারায় লাবণ্য এসেছে বলছ?

লাবণ্য তোমার বরাবর ছিল। ইয়ারকি কোরো না। কী বলবে বলছিলে যে!

তৃষা সত্যিই হয়তো আর আগের মতো নেই। নইলে তার হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস আসবে কেন? খানিকক্ষণ সে মুখ নিচু করে বসে রইল। তারপর বলল, দীপু, সংসার আর আমাকেও টানে না। তোমার দাদাকে বলেছি, কাশীতে বাড়ি করে দু’জনে গিয়ে থাকব।

দু’জনে?–বলে হাঁ করে থাকে দীপনাথ। বলে, এক বাড়িতে দু’জনে থাকবে? তা হলে যে দু’দিন বাদে বাড়ি থেকে দুটো লাশ পাওয়া যাবে। দু’জনেই দু’জনকে খুন করে ফেলেছে।

আমরা দুজনে কি দু’জনের অতটাই শত্রু দীপু?

দীপনাথ হাসতে হাসতে দুলতে থাকে, তা একটু আছ তোমরা।

একটু যে আছি তা অস্বীকার করছি না তো! তা বলে খুন করার মতো?

আরে না, না! ঠাট্টা করলেও দেখছি বিপদ!

তোমার দাদাও ওরকম কথা বলে প্রায়ই। তার খাবারে নাকি বিষ মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্লো পয়জন।

শ্রীনাথ চাটুজ্জে একটু বায়ুগ্রস্ত, জানোই তো! রাগ করো কেন?

আজকাল রাগ হয় না। সজলও বাবার কথা বিশ্বাস করে।

সজল! সজল কি তার বাপের ভক্ত হয়েছে নাকি আজকাল?

ভীষণ! বাপের জন্য সব পারে। দরকার হলে পরশুরামের মতো মাকে মেরে ফেলতেও, শুধু বাপ যদি হুকুম করে।

আচ্ছা! বলে দীপনাথ খুব অবাক হয়ে ব্যাপারটা ভাবতে থাকে। যত ভাবে ততই অবিশ্বাস্য মনে হয়।

সজলের হাতেই একদিন আমি খুন হয়ে যাব, দেখো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *