লরিস্টন গার্ডেন্স রহস্য
বন্ধুবরের থিয়োরি যে এতখানি প্র্যাকটিক্যাল, তার নতুন প্রমাণ পেয়ে সত্যিই হকচকিয়ে গেলাম। ওর পর্যবেক্ষণ আর বিশ্লেষণ ক্ষমতার ওপর বহুগুণে শ্রদ্ধা বেড়ে গেল আমার। খানিকটা সন্দেহ তবু গেল না মন থেকে। কে জানে হয়তো পুরো জিনিসটাই সাজানো আমার মন ধাঁধিয়ে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু আমাকে হকচকিয়ে দিয়ে তার কী উদ্দেশ্য তা অবশ্য বুঝতে পারলাম না। তাকিয়ে দেখি চিঠি পড়া সাঙ্গ হয়েছে হোমসের। গালা-চকচকে শূন্যগর্ভ চোখে কী যেন ভাবছে–মন আর এখানে নেই।
কী করে বুঝলে বল তো? জিজ্ঞেস করলাম।
কী বুঝলাম? খিটখিটে গলায় বলল ও।
লোকটা রিটায়ার্ড জাহাজি সার্জেন্ট?
তুচ্ছ ব্যাপারে মাথা ঘামাবার সময় আমার নেই। অভদ্রভাবে বলে উঠল হোমস। তারপরেই মৃদু হেসে বললে, রুক্ষতার জন্যে ক্ষমা চাইছি। চিন্তার সুতো ছিঁড়ে দিলে কিনা। যাকগে সে-কথা। তুমি তাহলে সত্যিই দেখনি লোকটা রিটায়ার করা জাহাজি সার্জেন্ট কিনা?
একেবারেই না।
কী করে জানলাম তা বুঝিয়ে বলার চেয়ে জানাটা অনেক সোজা! দুয়ে দুয়ে জুড়লে চার কী করে হয় যদি প্রমাণ করতে বলা হয় তোমাকে ফাপরে পড়বে বই কী। চার যে হয়–তা কিন্তু তুমি জান। লোকটা রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকলেও হাতের উলটো দিকে উল্কি চিহ্নটা চোখে পড়েছিল। নীল রঙের বিরাট একটা নোঙর অর্থাৎ জাহাজি গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। চলাফেরা হাবভাব মিলিটারি ধরনের গালপাট্টা জোড়াও জাহাজি নাবিকদের মতো। তাহলে জাহাজ আর সমুদ্র মাথায় এসে গেল। হাবভাব আত্মমর্যাদা সম্পন্ন কর্তৃত্বব্যঞ্জক। মাথা বেঁকিয়ে ছড়ি দোলানোর কায়দা নিশ্চিত লক্ষ করেছ। দৃঢ় সংকল্প, সচ্চরিত্র, মধ্যবয়স্ক মুখেই তা স্পষ্ট। সব মিলিয়ে নিমেষে বুঝলাম সে সার্জেন্ট।
ওয়ান্ডারফুল! বললাম সহর্ষে।
সামান্য ব্যাপার, মুখে বললেও হোমসের চোখ দেখে মনে হল আমার বিস্ময়বোধ আর প্রশংসাজ্ঞাপনে সে বিলক্ষণ খুশি হয়েছে। এইমাত্র বলেছিলাম ক্রিমিন্যালের অভাব ঘটেছে। ধারণাটা যে ভুল এই চিঠি তার প্রমাণ, বলে দারোয়ানের আনা চিঠিটা ছুঁড়ে দিল আমার দিকে।
চোখ বুলিয়েই চেঁচিয়ে উঠলাম, আরে সর্বনাশ ! এ যে সাংঘাতিক ব্যাপার!
খুব একটা সাধারণ ব্যাপার মনে হচ্ছে না। প্রশান্ত কণ্ঠে বললে হোমস, জোরে পড়ো তো, চিঠিখানা, শোনা যাক!
জোরেই পড়লাম চিঠির বয়ান :–
মাই ডিয়ার মি. শার্লক হোমস—
ব্রিক্সটন রোড বহির্ভূত ৩নং লরিস্টন গার্ডেন্সে কাল রাতে একটা বিশ্রী ব্যাপার হয়ে গেছে। রাত দুটোর সময়ে বাড়ির মধ্যে আলো দেখে সন্দেহ হয় বীটের কনস্টেবলের–কেননা সে জানত বাড়িটা খালি–কেউ নেই। বাড়ির দরজা খোলা, আসবাবহীন সামনের ঘরে পড়ে ছিল একটা সুবেশ লোকের মৃতদেহ। পকেটের কার্ডে লেখা নামটা এনক জে ড্রেবার, ক্লীভল্যান্ড, ওহিয়ো, যুক্তরাষ্ট্র। ডাকাতি হয়নি–লোকটা মারা গেল কীভাবে সে-রকম কোনো চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না। ঘরে রক্তের দাগ আছে, কিন্তু লোকটার গায়ে ক্ষত নেই। ও-বাড়িতে সে এল কী করে ভেবে পাচ্ছি না পুরো ব্যাপারটা একটা প্রহেলিকা। বারোটার আগে মনে হয় যদি বাড়িটায় আসেন, আমাকে দেখতে পাবেন। আপনি না-আসা পর্যন্ত জিনিসপত্র কিছুই নাড়াচাড়া করা হবে না। আসতে যদি পারেন বিশদ বিবরণ আমার মুখেই শুনবেন খন–আপনার মতামত পেলে নিজেকে ধন্য বলে মনে করব।
আপনার বিশ্বস্ত টোবিয়াস গ্রেগসন।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দাদের মধ্যে সবচেয়ে স্মার্ট ডিটেকটিভ এই গ্রেগসন, বললে বন্ধুবর : রদ্দিমালের মধ্যে এই দুই জনই যা আছে লেসট্রেড আর গ্রেগসন। দু-জনেই চটপটে, উৎসাহী কিন্তু গতানুগতিক খুব খারাপ লাগে। রেষারেষিও আছে দু-জনের মধ্যে। কাজে দড় হলে কী হবে–কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না–আড়ালে পিণ্ডি চটকায়। এ-কেসে দু-জনে মাথা ঢোকালে বেশ রগড় হবে কিন্তু।
শান্ত মন্তব্য শুনে অবাক না-হয়ে পারলাম না। একটু জোরেই বললাম, কিন্তু আর তো দেরি করা যায় না। যাব আমি? ছ্যাকড়াগাড়ি ডেকে আনব?
আদৌ যাব কিনা সেটাই ভাবছি। মাঝে মাঝে আমি এই জুতোর চামড়ার মতোই হদ্দ কুঁড়ে–কিন্তু সময় বিশেষে ভীষণ প্রাণবন্ত।
আরে ভাই এইরকম একটা সুযোগের কথাই তো একটু আগে বলছিলে।
ভায়া ওয়াটসন, এতে আমার কী লাভ বলতে পার? ধর রহস্যের সমাধান করলাম। গ্রেগসন লেসেট্রড কোম্পানি পুরো কৃতিত্বটাই পকেটে পুরবে। বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনটা কী?
কিন্তু ও যে তোমার সাহায্য ভিক্ষা করছে!
তা করছে। কারণ ও জানে, এ-ব্যাপারে আমি ওর গুরু। নিজেও তা স্বীকার করে। কিন্তু প্রকাশ্যে নয়। জিভটা টেনে ছিঁড়ে ফেলবে–তবুও তৃতীয় ব্যক্তির সামনে আমাকে ওর চাইতে বড়ো আসন দেবে না। তাহলেও চলো দেখে আসা যাক। নিজের কৌতূহল মেটাতেই যাব। যদি কিছু না-পাওয়া যায়, হাসিঠাট্টা করে আসা যাবেখন। এসো।
ঝটপট ওভারকোটটা গায়ে চাপিয়ে চটপট পা বাড়াল হোমস উৎসাহ শেষ পর্যন্ত ঔদাসীন্যকে ঘাড়ধাক্কা দিতে পেরেছে।
টুপি নাও তোমার। বললে আমাকে। আমাকে আসতে বলছ?
হাত খালি থাকলে আসতেও পার। এক মিনিট পরে দু-জনেই একটা দু-চাকার ঘোড়ার গাড়ি চেপে ঝড়ের মতো ধেয়ে চললাম ব্রিক্সটন রোড অভিমুখে।
মেঘাচ্ছন্ন, কুয়াশা-মলিন প্রভাত; বাড়িগুলোর মাথায় বুঝি পিঙ্গলবর্ণ ঘোমটা ঝুলছে—বহু নীচের কাদারঙের রাস্তার প্রতিফলন যেন। ফুর্তিতে উচ্ছল আমার বন্ধুটি পরমোৎসাহে আমাকে বিভিন্ন বেহালার তফাত বোঝাচ্ছে। ক্ৰেমোনা বেহালার গুণাগুণ ব্যাখ্যার পর আমাতি আর স্ট্রাডিফেরিয়াসের তফাতটা বোঝানোর সময়ে আমি আর গুম হয়ে বসে থাকতে পারলাম না।
বললাম, তুমি তো দেখছি যে-কাজে চলেছ, তা নিয়ে একেবারেই ভাবছ না।
ভাববার মতো উপাদান হাতে না-আসা পর্যন্ত ভাবা উচিত নয়। সাক্ষ্যপ্রমাণ না-নিয়ে ভাবতে বসলেই বিরাট ভুল করে বসবে সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যাবে।
উপাদান পেতে আর দেরি নেই, আঙুল তুলে বললাম আমি, এই হল ব্রিক্সটন রোড, আর ওই সেই বাড়ি।
ঠিক ধরেছ। ড্রাইভার, থামো! থামো! বাড়ি থেকে শ-খানেক গজ দূরে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ল হোমস হেঁটে গেল বাকি রাস্তাটা।
৩নং লরিস্টন গার্ডেন্সের বাড়িটা দেখলেই কেন জানি না গা ছম ছম করে ওঠে। একটা অভিশপ্ত ছাপ যেন বাড়িটার সর্বত্র। রাস্তা থেকে একটু তফাতে মোট চারখানা বাড়ি। দুটিতে লোকজন আছে–দুটি শূন্য। ৩নং বাড়িটা এই শেষ দুটির একটি। তিন সারি নিরানন্দ জানলা যেন বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে–ঝাঁপসা কাচে ছানি পড়ার মতো হেথায়-সেথায় দুলছে বাড়িভাড়া পাওয়া যায় নোটিশ। রাস্তা আর বাড়ির মাঝে আগাছা বোঝাই একটা বাগান। বাগানের রাস্তা হলদেটে রঙের কঁকর আর কাদায় ছাওয়া। গত রাতের বৃষ্টিতে পুরো তল্লাটটাই অত্যন্ত কাদা প্যাঁচপেচে। তিন ফুট উঁচু ইটের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাগান। পাঁচিলের ওপরে কাঠের রেলিং। একজন পুলিশ কনস্টেবল একদল নিষ্কর্মা লোক পরিবৃত অবস্থায় এই পাঁচিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। ভবঘুরের দল পাঁচিলের ওপর দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে চেষ্টা করছে কী কাণ্ড চলেছে বাড়ির ভেতরে।
ভেবেছিলাম একটুও দেরি না-করে হন হন করে বাড়ি ঢুকে রহস্য নিরীক্ষণে ব্যস্ত হবে শার্লক হোমস। কিন্তু সে-রকম লক্ষণ দেখলাম না। উদ্দীপনাহীনভাবে পায়চারি করতে লাগল ফুটপাথে, শূন্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আকাশ, জমি, উলটোদিকের বাড়ি আর কাঠের রেলিংয়ের দিকে। আমার মনে হল স্রেফ ভণ্ডামি লোক দেখানো ভান! পর্যবেক্ষণ সমাপ্ত হলে এগোল রাস্তার কিনারায় ঘাসের পটি বরাবর চোখ রইল কিন্তু রাস্তার ওপর। থামল দু-বার, একবার হাসল, সহর্ষে চেঁচিয়ে উঠল। কর্দমাক্ত পথে পায়ের চিহ্ন অনেক। পুলিশ যাতায়াত করেছে বলেই অত পায়ের ছাপ পড়েছে। অত ছাপের মধ্যে থেকে হোমস কী করে যে আসল জিনিসটি খুঁজে পাবে ভেবে পেলাম না। তবে ওর প্রখর ইন্দ্রিয়ের অসাধারণ ক্ষমতা এবং চক্ষের পলকে অনুধাবন করবার শক্তির যে-নমুনা একটু আগে পেয়েছি তাতে মনে হয় আমার চোখে যা অদৃশ্য, তার অনেক কিছুই দৃশ্যমান হয়েছে ওর চোখে।
দোরগোড়ায় মুখোমুখি হলাম এক দীর্ঘকায়, সাদামুখো পুরুষের সঙ্গে, হাতে একটা নোট বই, চুলগুলো শণের মতো। হোমসকে দেখেই তিরবেগে দৌড়ে এসে দু-হাতে ওর হাত জড়িয়ে ধরে বলল গদগদ কণ্ঠে, অসীম দয়া আপনার! সব যেমন তেমনি রেখে দিয়েছি আপনার জন্যে একদম হাত দিইনি।
ওইটে ছাড়া। বাগানের রাস্তার দিকে আঙুল তুলে বলল হোমস। একপাল মোষ গেলেও রাস্তার অবস্থা ওর চাইতে খারাপ হত কিনা সন্দেহ। তার আগে নিশ্চয় সিদ্ধান্ত খাড়া করে নিয়েছ?
জবাবটা এড়িয়ে গেল ডিটেকটিভ গ্রেগসন! বললে, ভেতরের ঝামেলা নিয়ে বড় ব্যস্ত ছিলাম বলে এদিকের ব্যাপারটা লেসট্রেডকে দেখতে দিয়েছি। ও এখানেই রয়েছে।
আমার দিকে চেয়ে ব্যঙ্গভরে ভুরু তুলল হোমস। বললে, তোমার আর লেসট্রেডের মতো দু-দুজন বাঘা গোয়েন্দা হাজির থাকার পর তৃতীয় ব্যক্তি আর কী পাবে বল। রিক্ত হস্তে ফিরতে হবে।
খুশি হল গ্রেগসন। দু-হাত ঘষে বললে, যা করবার সবই করেছি। তবে কী জানেন, কেসটা অদ্ভুত। আপনি আবার এইসব কেসই পছন্দ করেন।
এসেছ কীভাবে? ঘোড়ার গাড়িতে নিশ্চয়ই নয়? জিজ্ঞেস করল শার্লক হোমস।
আজ্ঞে না।
লেসট্রেডও নিশ্চয় গাড়িতে আসেনি?
আজ্ঞে না।
চলো তাহলে ঘরের ভেতরে যাওয়া যাক, বাড়ির ভেতরে পা বাড়াল হোমস। খাপছাড়া মন্তব্য নিয়ে আর একটি কথাও বলল না। হতভম্ব মুখে পেছন পেছন এল গ্রেগসন।
নগ্ন তক্তা লাগানো, ধূলিধূসরিত একটা ছোটো করিডর গিয়ে শেষ হয়েছে রান্নাঘর আর অফিস ঘরে। করিডরের বাঁ-দিকে আর ডান দিকে দুটো দরজা। একটা নিশ্চয় বন্ধ অনেক হপ্তা ধরে। আর একটা দরজা খাবার ঘরের। রহস্যজনক ব্যাপারটা রেখে গেছে এই ঘরেই। হোমস আমার আগে ঢুকল ঘরে, পেছনে আমি। মৃত্যুর সান্নিধ্যে হৃদঘাত মন্থর হয়ে আসে আমার এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না।
ঘরটা চৌকোনা, বেশ বড়ো। আরও বড়ো মনে হচ্ছে ফার্নিচার না-থাকায়। লাল শিখার মতো সমুজ্জ্বল সস্তা রুচির কাগজে মোড়া দেওয়াল, মাঝে মাঝে ছাতলার দাগ, কোথাও কোথাও বেশ খানিকটা ছিঁড়ে ঝুলছে, তলায় বেরিয়ে পড়েছে হলদে পলেস্তরা। দরজার উলটোদিকে একটা বাহারি ফায়ার প্লেস, নকল সাদা মর্মর দিয়ে চারদিক বাঁধানো। এরই এক কোণে এটা লাল গালার মোমবাতির তলদেশ। একটিমাত্র জানালা এত নোংরা যে আলো আসছে অতি ক্ষীণ আর অনিশ্চিতভাবে; ম্যাড়মেড়ে ধূসরতায় আবৃত করে রেখেছে ঘরের প্রতিটি বস্তু পুরু ধুলো জমে থাকার ফলে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে ধূসরতা।
এত খুঁটিনাটি লক্ষ করেছিলাম পরে। আমার সমস্ত সত্তা যেন তখন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল মেঝের তক্তার ওপর শায়িত নিস্পন্দ দেহটির ওপর। চোখ খোলা, কিন্তু দৃষ্টি নেই সে-চোখে। ফ্যালফ্যাল শূন্য চোখে চেয়ে আছে বিবর্ণ কড়িকাঠের দিকে। বয়স চুয়াল্লিশ কি পঁয়তাল্লিশ, মধ্যমাকৃতি, চওড়া কঁধ, কুঁচকানো ছোটো কালো চুল, খাটো মোটা শক্ত দাড়ি। পরনে ভারী কাপড়ের ফ্রক কোট আর ওয়েস্ট কোট, ট্রাউজার্স হালকা রঙের, কলার আর কাফ বেশ পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি। পরিষ্কারভাবে বুরুশ করা টপ হ্যাটটা বসানো রয়েছে দেহের পাশে মেঝের ওপর। হাত মুষ্টিবদ্ধ, বাহু দু-পাশে ছড়ানো, মৃত্যু যেন বড়োই যন্ত্রণাদায়ক হয়েছে। আড়ষ্ট মুখে পরিস্ফুট এমন একটা ভয়াবহ বিভীষিকা এবং সেইসঙ্গে একটা বিজাতীয় ঘৃণা যার সংমিশ্রণ কোনো মানুষের মুখে কখনো আমি দেখিনি! এই উৎকট আর ভয়ংকর মুখ-বিকৃতির সঙ্গে নীচু কপাল, থ্যাবড়া নাক আর ঠেলে-বেরিয়ে-আসা চোয়াল যুক্ত হওয়ায় মৃতব্যক্তিকে একটা অদ্ভুত নরবানরের মতো দেখতে হয়েছে। মৃত্যুকালীন যন্ত্রণায় দুমড়ে মুচড়ে অস্বাভাবিক ভঙ্গিমায় পড়ে থাকার দরুন আরও প্রকট হয়েছে নরবানর আকৃতি। মৃত্যুকে অনেক রূপে, অনেক চেহারায় আমি দেখেছি। কিন্তু সেদিন খাস লন্ডন শহরের অন্যতম মূল ধমনীর ওপর নির্মিত ছায়াচ্ছন্ন প্রকোষ্ঠে যে-মৃত্যু দেখলাম, তার চাইতে ভয়াবহ আর কিছু দেখিনি?
দোরগোড়ায় বেজির মতো চটপটে ক্ষীণ বপু নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল লেসট্রেড–অভ্যর্থনা জানাল আমাদের দুজনকেই।
বললে, কেসটা সাড়া ফেলবে, স্যার। জীবনে এ-রকম দৃশ্য দেখিনি। জানেন তো, সহজে বুক কাঁপে না আমার।
গ্রেগসন বললে, সূত্র-টুত্র কিছু পাওয়া গেল?
একেবারেই না যেন সুরে সুরে মেলাল লেসট্রেড।
মড়াটার কাছে গিয়ে নতজানু হয়ে বসল শার্লক হোমস, খুঁটিয়ে দেখল থেকে মাথা পর্যন্ত। তারপর চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য রক্তের দাগের দিকে আঙুল তুলে বলল, দেহে চোট লাগেনি বলছ ঠিক তো? একেবারে ঠিক! একই সঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠে দুই ডিটেকটিভ।
তাহলে এ-রক্ত দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির খুব সম্ভব হত্যাকারীর আদৌ যদি সত্যি হয়ে থাকে। ১৮৩৪ সালে ইট্রেক্টে ভ্যান জ্যানসেনের মৃত্যুর ব্যাপারটা মনে পড়ে যাচ্ছে। গ্রেগসন কেসটা মনে আছে!
আজ্ঞে না।
পড়ে নিয়ো–পড়া উচিত। সংসারের নতুন কিছু হচ্ছে না–সব হয়ে গিয়েছে।
কথার সঙ্গেসঙ্গে আঙুল চলছে হোমসের। তৎপর, দ্রুত, চঞ্চল আঙুল এত তাড়াতাড়ি টিপে দেখছে, বোতাম খুলছে, বুলিয়ে অনুভব করছে যে চোখে না-দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এত তাড়াতাড়ি অথচ এত নিপুণভাবে যে পরীক্ষা করা যায়, আগে জানতাম না। দুই চোখে কিন্তু সেই দিগন্ত বিস্তৃত স্বপ্নিল চাউনি—আগে যা বলেছি। সবশেষে মড়ার ঠোঁট এঁকে তাকাল পেটেন্ট চামড়ার জুতোর শুকতলায়।
বললে, লাশ নাড়ানো হয়নি তো?
আমাদের পরীক্ষার জন্যে যেটুকু নাড়ানো দরকার, তার বেশি নয়।
মর্গে চালান করতে পার। আর কিছু জানার নেই।
চারজন লোক স্ট্রেচার নিয়ে গ্রেগসনের হুকুমের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। হাঁকডাক শুনেই ঢুকল ভেতরে, আগন্তুককে নিয়ে বেরিয়ে গেল বাইরে। লাশ তোলবার সময়ে কিন্তু একটা আংটি টং করে মেঝেতে পড়ে গড়িয়ে যেতেই লাফিয়ে গিয়ে ছোঁ মেরে তুলে নিল লেসট্রেড। চেয়ে রইল ফ্যাল ফ্যাল করে।
পরক্ষণেই বললে গলার শির তুলে, মেয়েছেলেও ছিল এখানে। এ-আংটি বিয়ের আংটি। কনের আঙুলে থাকে।
বলতে বলতে হাতের তেলোয় আংটি বাড়িয়ে ধরেছিল লেসট্রেড। হুমড়ি খেয়ে পড়লাম আমরা সবাই। না, কোনো সন্দেহই নেই, সোনার এই ছোটো চক্রটি একদা এক বিয়ের কনের আঙুলেই শোভা পেয়েছিল।
কেস দেখছি আরও জটিল হল, বললে গ্রেগসন। এমনিতেই জটের ঠেলায় চোখে অন্ধকার দেখছিলাম, জুটল নতুন উৎসর্গ।
তাই নাকি? আংটি তাহলে জট বাড়িয়ে দিচ্ছে? মন্তব্য করল শার্লক হোমস। হাঁ করে আংটির দিকে চেয়ে থাকলে নতুন কিছুই জানা যাবে না। লকেটে কী পেয়েছ বল।
এইখানেই সব আছে, সিঁড়ির নীচের ধাপে স্তুপীকৃত কয়েকটি বস্তুর দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বললে গ্রেগসন। লন্ডনের ব্যারড কোম্পানির তৈরি একটা সোনার ঘড়ি–নম্বর ৯৭১৬৩। খুব ভারী আর নিরেট সোনার অ্যালবার্ট চেন। গুপ্ত সমিতির চিহ্ন আঁকা সোনার আংটি। সোনার পিন–মাথাটা বুলডগের, চোখ দুটো চুনির। রাশিয়ান চামড়ার কার্ড-কেস, কার্ড লেখা এনক জে ড্রেবার অফ ক্লিভল্যান্ড। জামাকাপড়েও লেখা ই জে ডি। মানিব্যাগ নেই। কিন্তু আছে সতেরো পাউন্ড তেরো শিলিংয়ের মতো খুচরো টাকা পয়সা। বোকাসিওর ডেক্যামেরন বইখানার পকেট সংস্করণ, পুস্তনিতে লেখা জোসেফ স্ট্যানজারসনের নাম। দুটো চিঠি–একটা লেখা হয়েছে ই জে ড্রেবারকে, আর একটা জোসেফ স্ট্যানজারসনকে।
কোন ঠিকানায়?
স্ট্যান্ডের আমেরিকান এক্সচেঞ্জের ঠিকানায় –এসে নিয়ে যাওয়ার চিঠি। দুটোই এসেছে গুইয়ন স্টিমশিপ কোম্পানি থেকে, লিভারপুল থেকে জাহাজ ছাড়ার খবর। বেচারা নিউইয়র্কে ফেরার তোড়জোড় করছিল।
স্ট্যানজারসন সম্বন্ধে খোঁজখবর নিয়েছ?
সঙ্গেসঙ্গে ব্যবস্থা করেছি, বললে গ্রেগসন।সবক-টা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন পাঠিয়ে দিয়েছি। লোক পাঠিয়েছি আমেরিকান এক্সচেঞ্জে, ফেরেনি এখনও।
ক্লিভল্যান্ডে খবর দিয়েছ?
টেলিগ্রাম পাঠিয়েছি আজ সকালে।
কী জানতে চেয়েছ?
ঘটনার বিবরণ দিয়ে লিখেছি এই সম্পর্কে কিছু খবর পেলে খুশি হব।
যে-পয়েন্টটা প্রামাণিক আর চূড়ান্ত বলে মনে হয়েছে, সে-সম্বন্ধে বিশদ বিবরণ জানতে চাওনি?
স্ট্যানজারসন সম্বন্ধে খবরাখবর চেয়েছি।
আর কিছু নয়? পুরো কেসটাই ঝুলছে যে-পয়েন্টে, সেটা সম্বন্ধে কিছুই জানতে চাওনি? আর একটা টেলিগ্রাম পাঠাবে?
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে গ্রেগসন বললে, যা বলবার সবই বলেছি।
খুক খুক করে হেসে উঠল শার্লক হোমস। কী একটা কথা বলতে যাচ্ছে, এমন সময়ে বাইরের ঘর থেকে লেসট্রেড এসে পৌঁছোল এ-ঘরে। আত্মম্ভরিতা আর আত্মতৃপ্তি ঝরে পড়ছে দু-হাত ঘষার মধ্যে।
বললে, মি. গ্রেগসন, এইমাত্র একটা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছি। ভাগ্যিস দেওয়ালটা তন্নতন্ন করে দেখছিলাম, নইলে তো এ-জিনিস সবারই চোখ এড়িয়ে যেত।
সতীর্থকে একহাত নিতে পেরে সে কী ফুর্তি খর্বকায় মানুষটার। ঝিকমিক করছে দুই চোখ, চাপা উত্তেজনা বুড়বুড়ি কাটছে চোখে-মুখে।
হুড়মুড় করে ভেতরে এসে বললে সোল্লাসে, আসুন এদিকে দাঁড়ান এখানে। বিকট মড়া সরানোর ফলে ঘরে আবহাওয়ার উন্নতি ঘটেছিল। বুটের চামড়ায় দেশলাই ঘষে জ্বলন্ত কাঠিটা দেওয়ালের ওপর দিকে তুলে ধরল লেসট্রেড।
বললে বিজয়োল্লাসে, দেখুন!
আগেই বলেছি, ছেড়া কাগজের লম্বা ফালি ঝুলছিল সবক-টা দেওয়ালেই। এই জায়গাটায় চৌকোনো হলদে পলেস্তারা বেরিয়ে পড়েছে বেশ খানিকটা কাগজ ছিঁড়ে যাওয়ায়। হলুদ প্লাস্টারের ওপর রক্ত-লাল অক্ষরে লেখা একটি মাত্র শব্দ–
RACHE
বলুন কী বুঝলেন? সাড়ম্বরে হস্তসঞ্চালনে লেখাঁটি দেখিয়ে বললে লেসট্রেড, যেন জবর খেলা দেখাচ্ছে সার্কাসের বাজিকর। লেখাটা ছিল সবচেয়ে অন্ধকার কোণে–তাই কারো চোখে পড়েনি–দেখবার কথাও মনে হয়নি। হত্যাকারী এ-লেখা লিখেছে নিজের রক্ত দিয়ে। দেখছেন না অক্ষর থেকে রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়েছে দেওয়াল বেয়ে। আত্মহত্যার সম্ভাবনা তাহলে নাকচ হয়ে গেল। শব্দটা ঘরের এ-কোণে কেন লেখা হয়েছিল বলুন তো? আমি বলছি। মোমবাতিটা দেখছেন? ওটা জ্বালানো হলে কিন্তু ওই কোণেই আলো পড়বে সবচেয়ে বেশি–অন্ধকার আর থাকবে না।
আবিষ্কারের ফলে লাভটা কী হল? প্রতিপক্ষকে পথে বসিয়ে দেওয়ার স্বরে বলল গ্রেগসন।
লাভ? আরে মশাই, RACHEL নামটা লিখতে গিয়ে বাধা পাওয়ায় RACHE পর্যন্ত লেখা হয়েছে। RACHEL নামটা কিন্তু মেয়ের। কেসটা যখন গুটিয়ে আনা হবে, তখন দেখবেন র্যাচেল নামে একটা মেয়ে এর মধ্যে আছে। হাসা খুব সোজা মি. শার্লক হোমস। আপনি খুবই চালাক আর স্মার্ট মানছি, কিন্তু জানবেন কাঙালের কথা বাসি হলেও খাটে।
খর্বকায় ডিটেকটিভের মেজাজ খিচড়ে গিয়েছিল হোমসের অকস্মাৎ অট্টহাসির জন্যে। হাসি থামিয়ে এখন বললে, কিছু মনে কোরো না। পুরো কৃতিত্ব তোমারই কেউ দেখে ফেলার আগেই তুমি দেখেছ এমন একটা নাম যে কাল রাতের রহস্য নাটিকার অন্যতম ব্যক্তির স্বহস্তে লেখা। ঘরটা এখনও পর্যন্ত দেখিনি। এবার যদি অনুমতি কর তাহলে দেখা যাক।
বলতে বলতে হোমস পকেট থেকে ঝাঁ করে টেনে বার করল একটা মাপবার ফিতে আর একটা মস্ত গোলাকার আতশকাচ। এই দুটি সরঞ্জামসহ শুরু হল তার নিঃশব্দ সঞ্চরণ ঘরের সর্বত্র। কখনো হেঁট হল, কখনো হাঁটু গেড়ে বসল, কখনো মুখ থুবড়ে সটান মেঝের ওপর নুয়ে পড়ল। মনোযোগী হয়ে রইল নিজের কাজে আমাদের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিস্মৃত হয়েছে মনে হল। কেননা, বিবিধ মন্তব্যর ধারাবর্ষণ চালিয়ে গেল একনাগাড়ে আপন মনে চাপা গলায়। কখনো হর্ষে ফেটে পড়ল, কখনো বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠল, কখনো বিষাদে গুঙিয়ে উঠল, কখনো ফুর্তিতে শিস দিয়ে উঠল–বিপুল উৎসাহ আর প্রত্যাশা যেন মূর্ত হল ছোটো ছোটো চিৎকারের মধ্যে। ঠিক যেন খানদানি রক্তের উপর্যুক্ত ট্রেনিং পাওয়া একটা ফক্স হাউন্ড–ঝোঁপের মধ্যে দিয়ে ছুটোছুটি করছে, সাগ্রহে গরগর করছে, হারিয়ে যাওয়া গন্ধটা নাকে না-আসা পর্যন্ত স্থির থাকতে পারছে না। কুড়ি মিনিট কি তারও বেশি সময় এইভাবে চুলচেরা মাপজোক করে গেল হোমস হাতের ফিতে দিয়ে কী যে ছাই মাপল আমি বুঝলাম
কেননা আমার চোখে তা সম্পূর্ণ অদৃশ্যই রয়ে গেল। আমি না-দেখলেও ও কিন্তু অনেক। দাগ দেখেছিল এবং একটা দাগ থেকে আর একটা দাগ কতটা দূরে ফিতে দিয়ে মাপছিল শুধু মেঝেতে নয়–দেওয়ালেও ফিতে ফেলে কী যে মাপল, বিন্দুবিসর্গ বুঝলাম না। একবার মেঝে থেকে ধূসর ধুলোর ছোট্ট একটা স্তুপ সযত্নে তুলে নিয়ে খামে পুরে রাখল পকেটে। সবশেষে আতশকাচ দিয়ে দেওয়ালের লিখন নিরীক্ষণ করল অসীম যত্নে কিছুই যেন বাদ না-যায় এমনিভাবে তন্নতন্ন করে সবক-টা হরফ ম্যাগনিফাইং গ্লাসের মধ্যে দিয়ে বিবর্ধিত আকারে দেখার পর মনে হল যেন বেশ সন্তুষ্ট হয়েছে! ফিতে আর কাচ রাখল পকেটে।
হেসে বলল, কথায় বলে প্রতিভাকে অনেক কষ্ট করতে হয়, নইলে কেষ্ট মেলে না। সংজ্ঞাটা যাচ্ছেতাই হলেও ডিটেকটিভ লাইনে খাটে।
শখের গোয়েন্দার চাতুর্যপূর্ণ গতিবিধি, বিলক্ষণ কৌতূহল এবং কিছুটা অবজ্ঞাসহ লক্ষ করছিল গ্রেগসন আর লেসট্রেড। একটা ব্যাপার স্পষ্ট বুঝলাম। শার্লক হোমসের ছোটোখাটো তৎপরতাও যেন নির্দিষ্ট এবং বাস্তব লক্ষ্য অভিমুখী এরা দুইজনেই হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনি।
তাই দুজনেই শুধালো একই সাথে, বলুন কী বুঝলেন।
বন্ধুবর বললে, আমি যদি তোমাদের সাহায্য করে ফেলি, তাহলে তোমাদের আর বাহবা নেওয়া হয় না। কাজ যা করছ তা চমৎকার, মাঝখান থেকে বাগড়া দিতে চাই না। প্রত্যেকটা শব্দের মধ্যে ধ্বনিত হল নিঃসীম বিদ্রপ। তদন্ত করছ কীরকম, সে-খবর যদি আমাকে জানানোর দরকার থাকে বলে মনে কর, তখন না হয় আমার সাধ্যমতো সাহায্য করা যাবেখন। আপাতত লাশ যে আবিষ্কার করেছে সেই কনস্টেবলটির সঙ্গে কথা বলতে চাই। নাম-ঠিকানা দেবে?
নোটবই বার করে নাম-ঠিকানায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে লেসট্রেড বললে, জন রান্স। এখন ডিউটি নেই। কেনিংটন পার্ক গেটে৭ ৪৬ নম্বর অডলি কোর্টে গেলেই পাবেন!
ঠিকানাটা লিখে নিল হোমস।
বলল, এসো ডাক্তার! জন রান্সকে খুঁজে বার করা যাক। দুই ডিটেকটিভের দিকে ফিরে, তোমাদের শুধু একটা ব্যাপার বলে যেতে চাই–শোনা থাকলে তদন্তের সুবিধা হবে! এটা খুন–খুনি একজন পুরুষ। মাথায় ছ-ফুটেরও বেশি ঢ্যাঙা, পূর্ণ যুবক মাথায় যতখানি ঢ্যাঙা সে-অনুপাতে পা অনেক ছোটো, পুরু চৌকোনো-মুখ বুটজুতো পরে, ত্রিচিনোপল্লী চুরুট খায়। যে খুন হয়েছে তার সঙ্গে ঘোড়ার গাড়ি চেপে এসেছিল এখানে। এক ঘোড়ায় টানা গাড়ি। গাড়িটায় চারটে চাকা। ঘোড়াটার সামনে পায়ের একটা নাল নতুন, বাকি তিনটে পুরোনো, খুব সম্ভব হত্যাকারীর মুখ উজ্জ্বল লালচে, রক্ত যেন ফেটে পড়ছে আর ডান হাতের আঙুলের নখ আশ্চর্য রকমের বড়ো! সামান্য কিছু পথনির্দেশ দিলাম, তোমাদের কাজে লাগবে।
অবিশ্বাসের হাসি হেসে পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করে লেসট্রেড আর গ্রেগসন।
খুনই যদি হবে তো হয়েছে কী করে বলে যান? শুধোয় লেসট্রেড।
বিষে, অশিষ্টভাবে সংক্ষেপে জবাব দিয়ে পা বাড়ায় শার্লক হোমস। দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, আর একটা কথা, লেসট্রেড। র্যাচি একটা জার্মান শব্দ–মানে প্রতিশোধ। কাজেই খামোকা মিস র্যাচেলকে খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট কোরো না।
ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল হোমস–পেছনে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী।