সেই উ সেন – ২.১০

দশ

ঘন ঘন পানি খেয়ে মস্ত ভুঁড়িটাকে আরও ফুলিয়ে তুলেছে লেফটেন্যান্ট-কর্নেল জাঁ থেরি। কিন্তু তৃষ্ণা তবু মিটছে না। মরুভূমির মত সেই শুকনোই থেকে যাচ্ছে গলাটা। জীবনে এই বোধহয় প্রথম ভয়ে পেটের ভিতর হাত-পা সেঁধিয়ে যাবার দশা হয়েছে তার। মনের ভিতর অবিরাম কে যেন বাজিয়ে চলেছে বিপদের ডঙ্কা। আজ বিকেলে কিছু একটা ঘটবে, এই আশঙ্কায় কাঁপছে বুকটা। কিন্তু কিভাবে, ঠিক কোথায়, কখন, কি ঘটবে তার কোন পূর্বাভাস বা সূত্র কোথাও দেখতে পাচ্ছে না সে।

নিজের প্রাণ যায় যাক—যদি মাসুদ রানাকে ধরতে না পারে সে, যাবেই। কিন্তু তার চেয়ে বড় দুশ্চিন্তা, কাপু উ সেন বিপদগ্রস্ত। কোন সুযোগে রানা যদি তাঁর উপর আঘাত হানতে পারে…

এরপর কি ঘটবে ভাবতে পারে না জাঁ থেরি। ভাবতে গেলে শুধু শিউরে শিউরে ওঠে। সে ব্যর্থ হলে তার একার প্রাণ যাবে। কিন্তু কাপুর যদি কোন ক্ষতি হয় ইউনিয়ন কর্স তাকে তো খতম করবেই, খতম করবে তার সন্তানদের, তার স্ত্রীকে, ভাই-বোনদের—চোদ্দগুষ্টির কাউকে ছাড়বে না ওরা। ইউনিয়ন কর্সের দৃষ্টিতে ব্যর্থতার শাস্তি সমূলে নিশ্চিহ্ন করা।

আর্ক ডি ট্রায়াম্প, নটরডেম এবং মন্তভ্যালেরিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল জা থেরি। কিছুই ঘটেনি। লাঞ্চের পর পুনঃ নির্বাচিত কাপু উ সেন-এর সুরক্ষিত দুর্গ- প্রাসাদের একটি কামরায় ইউনিয়ন কর্সের হাই অফিশিয়ালরা সংক্ষিপ্ত এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিল লেফটেন্যান্ট-কর্নেল। উত্তেজনা আর আতঙ্কবোধ এমনভাবে গ্রাস করেছে প্রত্যেককে, কথা বলার শক্তি পায়নি কেউ। সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে মুখের চেহারায় স্বাভাবিক ভাব ফুটিয়ে রাখতে। কিন্তু কারও পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। আতঙ্কিত, অসহায় পশুর মত দেখাচ্ছিল সবাইকে।

শুধু কর্নেল বোল্যান্ড কয়েকটা কথা বলল। প্রথমে জানাল, ‘আর মাত্র একটি অনুষ্ঠান বাকি আছে। প্লেস দু এইটিন জুনে। গোটা এলাকা নিশ্ছিদ্রভাবে ঘিরে ফেলা হয়েছে। অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল থেকে তিন মাইলের মধ্যে চোখকান খোলা রেখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইউনিয়ন কর্মের চল্লিশ হাজার সশস্ত্র সদস্য। কর্সিকান নয় এমন কোন লোকের পক্ষে এদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনুষ্ঠানের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব নয়।’

‘কাপুর গাড়ি যে-সব রাস্তা দিয়ে যাবে…

জাঁ থেরির প্রশ্ন শেষ হলো না, কর্নেল বোল্যান্ড বলল, ‘অনুষ্ঠানে পৌঁছুবার অনেকগুলো রাস্তা আছে, ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট একটা ব্যবহার করার অনুমতি নিয়ে রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠান শুরুর দশ মিনিট আগে থাকতে সে- রাস্তা খালি করে দেয়া হবে। অনুষ্ঠান শুরুর পরও তাই। কিন্তু কাপুর গাড়ি সে- রাস্তা দিয়ে যাবে না। নিরাপত্তার খাতিরে অন্য একটা রাস্তা ব্যবহার করা হবে। যানবাহনের ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে কাপু রওনা হবার সাথে সাথে। অনুষ্ঠানে পৌছুবার পাঁচটা রাস্তাতেই ইউনিয়ন কর্সের অসংখ্য লোকজন রয়েছে। এমন কি সবক’টা রাস্তায়, দু’পাশের দালানগুলোর ছাদে, জানালায় বিনকিউলার এবং রাইফেল হাতে পজিশন নিয়ে আছে তারা।’

একজনের প্রশ্নের উত্তরে কর্নেল বোল্যান্ড মাথা নিচু করল। গভীরভাবে খানিকক্ষণ চিন্তা করে জানাল, ‘সে চলে গেছে—আমার বিশ্বাস। ভয়ে পালিয়েছে। অবশ্য কেটে পড়াই তার জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। কিন্তু যত গভীরেই ডুব দিক সে, যত দূরেই পালিয়ে যাক—কোথাও তাকে ভেসে উঠতে হবেই। তখন তার নিস্তার নেই।’ এই বলে একটু হাসল সে, জাঁ থেরির কাঁধ চাপড়ে বলল। ‘রানা যদি দেখা না দেয়, তোমার অবস্থা কি হবে?’

দেখা না দিলে কাপু কি সিদ্ধান্ত নেবেন জানা নেই, ভাবছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাঁ থেরি, হয়তো রানাকে খুঁজে বের করার হুকুম দেবেন তাকে। কিন্তু দেখা দেবে না রানা একথা বিশ্বাস করতে পারছে না সে। অবশ্য নিজের সন্দেহের কথা, উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেনি সে বৈঠকে। কেউই তা করেনি। অথচ সে জানে, কর্নেল বোল্যান্ডের কথায় আশ্বস্ত হয়নি কেউ। সবাই বুঝেছে, প্রলাপ বকছে কর্নেল।

একা একা বুলেভার্দ দে মন্তপারনেসের কাছে ঘুর ঘুর করছে জাঁ থেরি। ভিড়ের কিনারা ধরে হাঁটছে সে। দুশো মিটার দূরে অনুষ্ঠান। চৌরাস্তার এতদূর থেকে অনুষ্ঠানের কিছুই চাক্ষুষ করার উপায় নেই। তার মানে ভিড়ের ভিতর কোথাও নেই রানা। প্রত্যেক প্রহরীকে প্রশ্ন করছে সে। সকলের কাছ থেকে একই উত্তর পাচ্ছে—না, ব্যারিয়ারের ভিতর কাউকে ঢুকতে দেয়নি তারা।

প্রধান সড়ক, গলি, উপগলি…সব জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ছাদে নজর রাখার নিখুঁত ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। শুধু স্টেশন পাহারাতেই রয়েছে চারশো লোক। সামনের চাতালের মুখোমুখি দালানগুলোর প্রতিটিতে সত্তর-আশি জন করে প্রহরী তৈরি হয়ে আছে। স্টেশনের এঞ্জিন শেডের মাথায়, প্ল্যাটফর্মের চূড়ায় শুয়ে আছে রাইফেলধারীরা।

একটা সাইড রোড ধরে রু দে রেনেসে ঢুকে পড়ল জাঁ থেরি।

‘কাউকে দেখেছ?’ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ব্যারিয়ার টপকাল সে, প্রশ্ন করল প্রহরীকে।

‘না, মশিয়ে,’ সসম্ভ্রমে বলল প্রহরী।

‘কাউকে আসতে দাওনি এপারে? কাউকে না?’

‘না, মশিয়ে।

‘ঠিক মনে আছে? ভেবে দেখো, ভুল করছ না তো?’

‘না, মশিয়ে। কেউ ঢোকেনি। কেউ ঢুকতে চায়নি বা চেষ্টা করেনি।’

‘সাবধান! কোন অবস্থাতেই নিজেদের লোক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিয়ো না।’ বলল জাঁ থেরি, কই, তোমার কার্ড দেখি?’ প্রহরীর কাঁধের ব্যাজটা পরীক্ষা করে দেখল সে। তারপর কার্ডটা পরীক্ষা করল। ‘জায়গা ছেড়ে নোড়ো না। চোখ কান খোলা রাখো।’

চৌরাস্তার দিকে ফিরে এগোতে যাবে, এমন সময় একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার শুনতে পেল লেফটেন্যান্ট-কর্নেল। দূরে এক ঝাঁক সাদা মোটরসাইকেল দেখতে পাচ্ছে সে। পঁচিশ ত্রিশটার কম নয়। প্লৈস দু এইটিন জুনে ঢুকছে ঝড়ের বেগে। বাঁক নিয়ে স্টেশনের সামনে চাতালের গেট পেরোচ্ছে। দু’ধারে দাঁড়ানো প্রহরীরা কাঠের পুতুলের মত দাঁড়িয়ে আছে গায়ে গা ঠেকিয়ে, বিশাল কনভয়ের দিকে পিছন ফিরে।

উঁচু ছাদগুলোর দিকে তাকাল জাঁ থেরি। শাবাশ ভায়েরা! ছাদের প্রহরীরা কেউ নিচের দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে নেই, সকলের দৃষ্টি উল্টো দিকের ছাদ আর জানালার দিকে।

রু দে রেনেসের পশ্চিম দিকে পৌঁছল জাঁ থেরি। একশো বত্রিশ নম্বর বাড়ির কাছে শেষ ব্যারিয়ার, সেখানে একজন যুবক প্রহরী দাঁড়িয়ে আছে। কার্ড দেখাতেই সিম্ভ্রমে মাথা নোয়াল প্রহরী।

‘এদিক দিয়ে গেছে কেউ?’

‘না, মশিয়ে,’ বলল,পেরি তেসিয়ার। কখন থেকে আছ তুমি এখানে?’

‘বেলা বারোটা থেকে, মশিয়ে।’

‘ব্যারিয়ারের এপারে কাউকে ঢুকতে দাওনি তুমি?’

‘না, মশিয়ে।‘

‘ভুল করছ না তো? ঠিক মনে আছে? কেউ ঢোকেনি? ভেবে দেখে বলো। ভাল করে মনে করার চেষ্টা করো।’

ঘাবড়ে গেল তেসিয়ার।

‘না, মশিয়ে… কাউকে আমি ঢুকতে দেইনি… হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল বুড়োটার কথা। ‘হ্যাঁ, মাত্র একজন পঙ্গুকে যেতে দিয়েছি। ওদিকেই থাকে সে।’

‘পঙ্গু? কোন্ পঙ্গু? কে পঙ্গু?’

‘একটা বুড়ো, মশিয়ে। প্রায় অচল একজন লোক। মহান কাপুর পদক পেয়েছে কয়েক বছর আগে। আমাদেরই লোক। তার কার্ডে কাপুর সীল এবং সইও আছে। এ গ্রেট কর্সিকান, লেখা আছে তাতে। ঢুকতে না দিয়ে কি করি, মশিয়ে—সাংঘাতিক অসুস্থ দেখাচ্ছিল তাকে। নোংরা গ্রেটকোট পরে ছিল, চোখে ভাল দেখে না…

‘গ্রেটকোট?’

‘জী, মশিয়ে। খুব লম্বা আর ঢোলা গ্রেটকোট।’

দুই হাত শক্ত মুঠো হয়ে গেছে জাঁ থেরির।

ত্রুটিটা কোথায় তার?’ রুদ্ধশ্বাসে, কিন্তু যথাসম্ভব নিচু গলায় প্রশ্নটা করল সে।

‘একটা পা নেই, মশিয়ে। টলমল করতে করতে হেঁটে এল; ক্রাচে ভর দিয়ে। একশো চুয়ান্ন নম্বর ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকে বলল…’

চৌরাস্তা থেকে ভেসে আসছে বাদ্যযন্ত্রের ছন্দবদ্ধ ঐকতান। তার সাথে কোরাস ধরেছে গায়করা। দুশো বছরের পুরানো গীতি কবিতার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে নব অভিষিক্ত মহান কাপুর অপার মহিমা।

‘ক্রাচ?’ নিজের কণ্ঠস্বর নিজের কানেই বিকৃত শোনাল জাঁ থেরির

‘জী, মশিয়ে। খোঁড়া লোকেরা যে ধরনের ক্রাচ ব্যবহার করে। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি…’

টেনে চড় কষল জাঁ থেরি, পঞ্চাশ গজ দূর থেকেও শোনা গেল—চটাস। মাথা ঘুরে পড়ে গেল পেরি তেসিয়ার। কংক্রিটের রাস্তার সাথে প্রচণ্ডভাবে ঠুকে গেল তার মাথা।

পেরির অবস্থা দেখার মত সময় নেই লেফটেন্যান্ট-কর্নেলের, রাস্তা ধরে উন্মাদের মত ছুটতে শুরু করেই চেঁচিয়ে উঠল সে, ‘ফলো মি, ইউ বাস্টার্ড!’

.

স্টেশনের সামনের ফাঁকা জায়গায় কয়েকশো যানবাহন সার সার দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িগুলোর ঠিক উল্টোদিকে একটা রেলিং, এই রেলিংটাই সামনের চাতাল এবং চৌরাস্তাকে দু’ভাগে ভাগ করে রেখেছে। কাপু উ সেন-এর কাছ থেকে সম্মানজনক পদক গ্রহণ করে কৃতার্থ হবার জন্যে রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে দশজন প্রৌঢ় কর্সিকান। চাতালের পুব দিকে উপস্থিত রয়েছে ইউনিয়ন কর্মের হাই অফিশিয়ালরা। চারকোল গ্রে-রঙের স্যুটের বিশাল একটা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেন ওখানে। তার মাঝখানে গোলাপের মত ফুটে আছে লাল ব্যাজগুলো। চাতালের পশ্চিম দিকে রঙচঙে ইউনিফর্ম পরা বাদ্যযন্ত্রীরা দাঁড়িয়ে আছে। গোটা চাতালটাকে কয়েক দফায় ঘিরে রেখেছে সশস্ত্র প্রহরীরা গায়ে গা ঠেকিয়ে।

রাইফেল তুলে এক চোখ বুজে টেলিস্কোপিক সাইটে দৃষ্টি রাখল রানা। পদক গ্রহণ করার জন্যে যারা দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে কাছের লোকটাকে বেছে নিল ও। বেঁটে, গাঁট্টাগোটা একজন কর্সিকান, শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড়িয়ে আছে, ফুলে উঠেছে বুকটা। টেলিস্কোপিক সাইটে তার মাথাটা পুরোপুরি এবং পরিষ্কারভাবে ধরা দিল। আর ক’মিনিট পরই এই লোকটার সামনে এর চেয়ে আরও এক ফিট লম্বা লোক, উ সেন, এসে দাঁড়াবে।

বুম-বা-বুম! উদ্দাম গতিতে বেজে ইউনিয়ন কর্সের দলীয় সঙ্গীত থেমে গেল। অটুট নিস্তব্ধতা নেমে এল বিশাল চৌরাস্তায়। কয়েক হাজার মানুষকে দেখতে পাচ্ছে রানা, কিন্তু একচুল নড়াচড়া চোখে পড়ছে না কোথাও। অকস্মাৎ কমান্ডার অভ দি গার্ডের কর্কশ গর্জন চুরমার করে দিল অখণ্ড নিস্তব্ধতাকে। ‘জেনারেল স্যালুট…প্রে-জে-এ-ন্ট আর্মস!’ সশস্ত্র কর্সিকান গার্ডদের সাদা দস্তানা পরা হাতগুলো বিদ্যুৎবেগে শরীরের পাশ থেকে উঠে এসে কাত হয়ে কাঁধে ঠেকে থাকা যার যার রাইফেলটাকে উপর দিকে খাড়া করে ধরল, তারপর ঝট করে নামিয়ে আনল খাড়াভাবে নাকের পাশে, একই সাথে একযোগে জোড়া লেগে গেল প্রত্যেকের পা, খটাস করে শব্দ হলো একটা।

সামনের ভিড়টা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেল। মাঝখান থেকে বেরিয়ে আসছে অস্বাভাবিক লম্বা একজন লোক। অদ্ভুত যান্ত্রিক কিন্তু দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে সে রেলিংয়ের দিকে। পিঠটা খাড়া হয়ে আছে। হাঁটছে, কিন্তু হাঁটার দোলায় কাঁধ দুটো একচুল এদিক-ওদিক নড়ছে না বা উঁচু-নিচু হচ্ছে না। গর্বোদ্ধত একটা ভাব ফুটে আছে তার চেহারায়। গাঢ় রঙিন চশমার ভিতর চোখ নেই, পাথর। ব্রেস্ট পকেট থেকে সরু একটা তার কানে গিয়ে ঢুকেছে। সাউন্ড ট্র্যান্সমিটার যন্ত্রের সাহায্যে শব্দ শুনছে সে, তা থেকেই জেনে যাচ্ছে নিজের চারপাশে কি ঘটছে না ঘটছে।

রেলিং থেকে আর মাত্র পঞ্চাশ মিটার দূরে উ সেন। এই সময় তাকে ঘিরে অগ্রসরমান দেহরক্ষী, কর্নেল বোল্যান্ড এবং হাই অফিশিয়ালদেরকে উদ্দেশ্য করে অধৈর্যের সাথে একটা হাত নাড়ল সে, তার ঠোঁট দুটোও নড়ে উঠল মুহূর্তের জন্যে।

হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সবাই। কাপু সবাইকে আর এক পা-ও তার সাথে যেতে নিষেধ করছেন। এভাবে ঘেরাও হয়ে থাকা পছন্দ নয় তাঁর। কিন্তু সাংঘাতিক ঝুঁকি নিয়ে ইতস্তত ভাবটা কাটিয়ে উঠল কর্নেল বোল্যান্ড। কাপুর নির্দেশ অমান্য করে তাঁর পাশে রয়ে গেল সে। এবং ইঙ্গিত করল দেহরক্ষীদের তারা যেন একটু দূরত্ব বজায় রেখে কাপুকে ঘিরে থাকে।

উ সেন-এর কাছ থেকে দশ ফুট পিছিয়ে গেল দীর্ঘদেহী দেহরক্ষীরা।

রেলিংয়ের কাছে একজন হাই অফিশিয়াল একটা ভেলভেটের কুশন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছে। কুশনে এক সারিতে সাজানো রয়েছে ধাতব পদার্থের তৈরি দশটা মেডেল এবং দশটা রঙিন রিবন।

এগিয়ে আসছে কাপু উ-সেন।

.

ছুটে এসে ফ্ল্যাটবাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাঁ থেরি। হাঁপাচ্ছে সে। মুখ তুলে বাড়ির নাম্বার দেখল। একশো চুয়ান্ন। পিছনে ছুটন্ত পায়ের শব্দ শুনে বুঝল প্রহরী অনুসরণ করছে তাকে। কিন্তু তার এসে পৌঁছবার অপেক্ষায় না থেকে ফ্ল্যাটবাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ল সে। প্রতি লাফে সিঁড়ির তিনটে করে ধাপ টপকে উঠে যাচ্ছে উপরে।

তিন তলায় উঠে জাঁ থেরি নিচের দিকে তাকাল। পায়ের শব্দ পাচ্ছে সে,

কিন্তু প্রহরীকে দেখতে পাচ্ছে না। ‘টপ ফ্লোরে এসো!’ বলেই উঠতে শুরু করল আবার। এক ঝটকায় কোটের বোতাম খুলে শোল্ডার হোলস্টার থেকে বের করে আনল সে রিভলভারটা।

.

সারির প্রথম লোকটার সামনে দাঁড়াল কাপু। পাশ থেকে কর্নেল বোল্যান্ড ব্যাখ্যা করছে লোকটার বীরত্ব আর কীর্তির কথা। কর্নেল বোল্যান্ড থামতে সরাসরি লোকটার দিকে মুখ তুলল উ সেন। একবার আধইঞ্চি উঁচু-নিচু করল মাথাটা। ‘তুমি আমাদের গর্ব,’ প্রশান্ত উৎফুন্ন কণ্ঠে বলল সে। শরীরের পাশ থেকে একটা সুদীর্ঘ হাত উঠে এল কুশন নিয়ে দাড়িয়ে থাকা হাই অফিশিয়ালের দিকে। তার হাতে একটা মেডেল তুলে দিল অফিসার। মৃদু, মধুর সুরে বেজে উঠল যন্ত্র সঙ্গীত। ‘কাপু দীর্ঘজীবী হোন, আমরা যেন তাঁর নির্দেশে প্রয়োজনে মৃত্যুবরণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হই’—কর্সিকানদের প্রিয় সঙ্গীতের সুরে দুলে উঠল নিস্তব্ধ পরিবেশটা। বয়স্ক কর্সিকানের বুকে মেডেলটা গেঁথে দিল কাপু। এরপর সে পিছিয়ে এল স্যালুট করার জন্যে।

ছয় তলার উপরে এবং একশো ত্রিশ মিটার দূরে অত্যন্ত যত্নের সাথে, সাবধানে রাইফেলটাকে স্থির করে ধরে রেখে টেলিস্কোপিক সাইট দিয়ে তাকাল রানা। চেহারাটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে ও। রোদ লেগে চকচক করছে উ-সেন-এর মস্ত কপাল। গাঢ় সবুজ চশমাটার ফ্রেম, হাতল সব পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে। কার্নিসওয়ালা টুপিটা রয়েছে তার মাথায়। স্যালুট করতে উদ্যত হাতটা নড়ে উঠল। ঝট্ করে উঠে গেল সেটা টুপির কার্নিসের কাছে। সাইটের ক্রস চিহ্নের মাঝখানটায় রয়েছে উ সেন-এর উন্মুক্ত কপালের একটা পাশ। মৃদু, আলতোভাবে ট্রিগার টিপল রানা…

.

পাঁচতলায় উঠে ঘাবড়ে গেল লেফটেন্যান্ট-কর্নেল জাঁ থেরি। শেষ পর্যন্ত বোধহয় মাসুদ রানাকে ঠেকানো গেল না। কথাটা মনে হতেই আশ্চর্য দুর্বল হয়ে পড়ল তার শরীর। সশব্দে হাঁপাচ্ছে সে, মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে, ছয়তলায় কোন দিন সম্ভব হবে না ওঠা…

কিন্তু এখনও কিছু ঘটেনি। হয়তো এক সেকেন্ড সময় পাবে সে শেষ রক্ষার। কথাটা মনে হতেই আবার ছুটল সে। এটাই শেষ সিঁড়ি, তারপরই ছয়তলা…

.

ট্রিগার টানার পর এক সেকেন্ড পেরিয়ে গেছে। নিচে, স্টেশনের সামনে চাতালের দিকে স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে রানা, যেন বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের চোখকে। ব্যারেলের শেষ প্রান্ত থেকে বুলেটটা বেরিয়ে যাবার আগেই ইউনিয়ন কর্সের কাপু কোনরকম আগাম আভাস না দিয়েই ঝট্ করে নামিয়ে নিয়েছে মাথা। চোখে অবিশ্বাস ভরা দৃষ্টি নিয়ে দেখছে রানা, সামনে দাঁড়ানো প্রৌঢ় কর্সিকানের গালে একটা চুমো খাচ্ছে সে। লোকটার চেয়ে উ সেন এক ফুট বেশি লম্বা, তাই রীতি অনুযায়ী চুমো দেয়ার জন্যে ঘাড়, পিঠ সহ মাথা নিচু করতে হয়েছে তাকে।

মাথাটা যখন নিচের দিকে নামছে সেই সময় মাথার সিকি ইঞ্চি পিছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে বুলেটটা, অনুমান করল রানা। বাতাস কেটে বুলেটের বেরিয়ে যাওয়ার শব্দ উ সেন পেয়েছে কিনা বুঝতে পারল না ও। শুনতে যদি পেয়েও থাকে, তার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। কর্নেল বোল্যান্ড, হাই অফিশিয়াল এবং সার দিয়ে দাঁড়ানো প্রৌঢ় কর্সিকানরা কিছুই শুনতে পায়নি বা টের পায়নি। দশ ফুটের বাইরে দাঁড়ানো দেহ রক্ষীরা বা পঞ্চাশ মিটার দূরে অপেক্ষমাণ কর্সিকানরাও বুঝতে পারেনি কিছু।

রোদ লেগে নরম হয়ে থাকা চাতালের পিচ ফুটো করে ভিতরে সেঁধিয়ে গেছে বুলেটটা, এক ইঞ্চি গভীরে ঢুকে বিস্ফোরিত হয়েছে। একই সুর এবং তাল বজায় রেখে বেজেই চলেছে যন্ত্র-সঙ্গীত। প্রৌঢ়ের দ্বিতীয় গালে চুমো খেয়ে সিধে হলো উ সেন, গোটা শরীর নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল, এগোল দু’পা, তারপর আবার পুরো শরীর ঘুরিয়ে মুখোমুখি হলো দ্বিতীয় কর্সিকানের।

রাইফেলের পিছনে বসে মুচকি হাসল রানা। অপ্রত্যাশিত ঘটনাটা কয়েক সেকেন্ড আয়ু বাড়িয়ে দিয়েছে উ সেন-এর। এর আগে টার্গেট প্র্যাকটিসের সময় একশো পঞ্চাশ মিটার দূরত্বের স্থির কোন লক্ষ্যকে ভেদ করতে ব্যর্থ হয়নি ও। তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শত্রু উ সেনের বেলায় কাণ্ডটা ঘটল। মন খারাপ করার কিছু নেই, নিজেকে সান্ত্বনা দিল সে, সময় আছে এখনও। রাইফেলের বীচ খুলল রানা। খোলার সাথেই ব্যবহৃত কার্ট্রিজটা পড়ল কার্পেটে। টেবিল থেকে দ্বিতীয় শেলটা তুলে নিল ও। জায়গা মত সেটাকে ঢুকিয়ে দিয়ে বন্ধ করল ব্রীচ।

হাঁপাতে হাঁপাতে ছয়তলায় পৌঁছল লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাঁ থেরি। বুকের ভিতর থেকে পাঁজরের খাঁচা ভেঙে হৃৎপিণ্ডটা বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন তার। দালানটার সামনের দিকে দুটো ফ্ল্যাট। দুটো দরজার দিকে উদ্‌ভ্রান্তের মত তাকাচ্ছে সে। দুটোর একটার ভিতর আছে মাসুদ রানা…ভাবছে সে, কিন্তু কোনটার ভিতর? ইতস্তত করছে, এমন সময় ‘পুট্’ করে মৃদু শব্দ কানে ঢুকল।

এক লাফে কিছুটা পিছিয়ে এল জাঁ থেরি। শব্দটা ডান পাশের কামরা থেকে এসেছে। হতভম্ব হয়ে এক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকল সে। পরমুহূর্তে রিভলভারটা কোমরের কাছে তুলে গুলি করল তালার ফুটো লক্ষ্য করে। কাঠের আর পিতলের কণা ছড়িয়ে পড়ল চার দিকে, কেঁপে কেঁপে উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে দরজার কপাট দুটো।

পিছনে পায়ের শব্দ। কিন্তু অপেক্ষা না করে কামরার ভিতর ঢুকে পড়ল জাঁ থেরি।

একটা নয়, লোকটার দুটো পা। গায়ে গ্রেটকোটটা নেই এখন। বগলের সাথে যেভাবে শক্ত করে চেপে ধরে আছে রাইফেলটা, বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না জাঁ থেরির, এ লোক শক্তিশালী যুবক, অসুস্থ বুড়ো নয়। হতভম্ব হয়ে এক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকল সে। টেবিলের পিছন থেকে ওঠার সাথেই সাবলীল ভঙ্গিতে আধপাক ঘুরে গিয়ে কোমরের কাছ থেকে গুলি করল রানা। এক নজরেই চিনতে পেরেছে সে সালমার হত্যাকারীকে। ও যখন ঘুরছে, ছ্যাঁৎ করে উঠল বুকটা জাঁ থেরির। নিজের ভুলটা বুঝতে পারল সে। গুলি করতে চেষ্টা করল সে, কিন্তু ট্রিগারে আঙুল চেপে বসার আগেই বুকের এক পাশে প্রচণ্ড ধাক্কা খেল সে।

কোন শব্দই করেনি বুলেটটা। ভিতরে ঢুকেই বিস্ফোরিত হলো সেটা। কাটাকুটি, ছেঁড়াছিঁড়ি এবং অকস্মাৎ প্রচণ্ড ব্যথার একটা তীব্র অনুভূতি গ্রাস করল জাঁ থেরিকে। পরমুহূর্তে তাও দূর হয়ে গেল। দেখতে পেল, এক টুকরো কার্পেট স্যাত্ করে উঠে এসে বাড়ি মারল তার মুখে। আসলে মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে সে কার্পেটের উপর। সেই সাথে তার খোলা চোখের সামনে থেকে দপ্ করে নিভে গেছে সব আলো।

জানালার দিকে ফিরল রানা। এক পা পিছিয়ে এসে তৃতীয় লোকটাকে স্যালুট করছে উ সেন। ছোঁ মেরে তৃতীয় এবং শেষ বুলেটটা টেবিল থেকে তুলে নিল রানা। রাইফেলে ভরল সেটা। পা বাধিয়ে টেনে আনল চেয়ারটাকে সামনে। সেটার উপর একটা পা তুলে দিয়ে শরীরটাকে স্থির করল, তারপর রাইফেল তুলে চোখ রাখল টেলিস্কোপিক সাইটে।

পায়ের শব্দ পাচ্ছে রানা। ভুরু কুঁচকে উঠল ওর। দেখতে পাচ্ছে, মৃদু হাসি লেগে রয়েছে উ সেন-এর ঠোঁটে। কপালের পাশে ছোট্ট একটা কালো তিল দেখা যাচ্ছে। সাইটের ক্রস চিহ্নের মাঝখানটা সেটার উপর রেখে লক্ষ্য স্থির করল ও। চতুর্থ কর্সিকানের গালে চুমো খাচ্ছে উ সেন। প্রথমে বাঁ গালে। তারপর ডান গালে। পায়ের শব্দটা পাচ্ছে রানা, এখন আরও কাছে এসে পড়েছে।

সিধে হয়ে দাঁড়াচ্ছে উ সেন। সিধে হয়েছে। শব্দটার কথা ভুলে থাকতে চাইছে রানা। ভুলে গেল। তারপর টিপে দিল ট্রিগার।

মাথার উপর খাড়াভাবে উঠে গেল উ সেনের দুটো হাত। কপালের পাশে এইমাত্র তৈরি হওয়া কালো গর্তটা ঢাকা পড়ে গেল একটা হাতের আড়ালে। পাক খাচ্ছে শরীরটা। কিন্তু আধ পাক ঘোরার আগেই কাত হয়ে গেল একদিকে। সটান আছাড় খেল সে চাতালের শক্ত মেঝেতে। মাথার ভিতর বিস্ফোরণের ফলে ফেটে গেছে টুপিতে ঢাকা মাথার খুলি। টুপির তলা থেকে নেমে আসছে হলদেটে মগজ।

চারদিক স্তব্ধ হয়ে গেছে। থেমে গেছে বাদ্যযন্ত্রগুলো। চোখে দেখেও ঠিক কি ঘটেছে বুঝে নিতে পারছে না কেউ এখনও। পরমুহূর্তে নড়ে উঠল বিশাল এলাকা জোড়া ভিড়টা। গর্জন, ছুটোছুটি—নরক গুলজার হয়ে উঠল। গুলিটা কোনদিক থেকে এসেছে আঁচ করে নিয়ে সব ক’টা মুখ ফিরল ছয়তলা দালানটার দিকে কয়েক সেকেন্ড, বিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে রইল খোলা অন্ধকার জানালার দিকে। তারপর দুলে উঠল যার যার অস্ত্র হাতে ভিড়টা। ছুটে আসছে সবাই দালানটার দিকে। সবার আগে কর্নেল বোল্যান্ড।

চরকির মত ঘুরেই ডাইভ দিয়ে পড়ল রানা জাঁ থেরির পাশে, খপ্ করে তার রিভলভারটা তুলে নিয়েই লক্ষ্য স্থির করল খোলা দরজার দিকে। এক সেকেন্ড পর দরজায় এসে দাড়াল একজন।

ট্রিগার টিপতে গিয়েও টিপল না রানা। ছোটখাট একজন লোককে দেখতে পাচ্ছে ও। দু’হাত দিয়ে ধরে আছে একটা সাবমেশিনগান। হাঁপাচ্ছে এখনও। মেহেদী রঙের ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি মুখে।

চিনতে পারল রানা। মৃদু কণ্ঠে বলল, ‘মশিয়ে ক্লড র‍্যাঁবো।’

‘মশিয়ে মাসুদ রানা,’ বললেন ক্লড রাবো।

‘আমাকে চিনলেন কিভাবে?’

‘রূপা এখন আমার বাড়িতে,’ সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলেন ক্লড র‍্যাঁবো। ‘উ সেন…?’ শেষ। কিন্তু আপনি এখানে?’

জাঁ থেরিকে অনুসরণ করে।’

ক্লড র‍্যাঁবোর কপাল লক্ষ্য করে ধরে আছে রিভলভারটা রানা। ‘মশিয়ে, হাতের ওটা এবার ফেলে দিন।’

মুচকি হাসলেন ক্লড র‍্যাঁবো। বাঁ হাতে সাবমেশিনগানটা উল্টো করে ধরে বাড়িয়ে দিলেন রানার দিকে। বললেন, ‘আপনার কাজে লাগতে পারে।’

‘ধন্যবাদ, লাগবে না। ফ্রেঞ্চ প্রশাসন কি তাহলে…’

চোখ খুলে গেছে আমাদের,’ বললেন ক্লড র‍্যাঁবো। ‘ইউনিয়ন কর্স এতটা বেড়ে গেছে, জানা ছিল না আমাদের। আমি মনে করি, আত্মরক্ষার জন্যে আপনি যা করেছেন, ঠিকই করেছেন। কংগ্রাচুলেশনস্!’ চোখে চোখ রেখে দুই গোয়েন্দা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইল তিন সেকেন্ড। রিভলভারটা পকেটে ভরে ডান সেই হাতটা বাড়িয়ে দিল রানা। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা হাত রাখলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গুপ্তচরের হাতে। মৃদু হেসে বললেন ক্লড র‍্যাঁবো, ‘আপনার কাজ শেষ, কিন্তু আমাদের কাজ সবে শুরু হলো।’

‘মানে?’

মাথাটাকে কেটে ফেলে দিয়েছেন আপনি, এবার গাছের ডালপালা আর শিকড়গুলো ধ্বংস করব আমরা।’ হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠলেন ক্লড র‍্যাঁবো। দেরি করিয়ে দিচ্ছি…এক্ষুণি আপনার পালানো দরকার…’

মুচকি হাসল রানা, বলল, ‘আপনারও। এখানে এই অবস্থায় ধরতে পারলে চার হাত-পা ধরে টেনে ছিঁড়ে ফেলবে ওরা আপনাকে।’

‘জানি। পালাবার পথও ভেবে রেখেছি। আসুন আমার সাথে।’

‘নিঃসন্দেহে বলতে পারি আপনার চেয়ে আমার পথটা বেশি নিরাপদ,’ বলল রানা।

হেসে ফেললেন ক্লড র‍্যাঁবো। বললেন, ‘মানি। এ কদিন যা খেলা দেখিয়েছেন…পালাবার ব্যাপারে আপনার ওপর নিশ্চিন্তে নির্ভর করা যায়। তবে, এই মুহূর্তে সারা প্যারিসে একমাত্র আমিই দিতে পারি আপনাকে নিরাপদ আশ্রয়। চলুন। পথ দেখান। ‘

দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে রানা।

পিছনে ক্লড র‍্যাঁবো।

***