৫ম অধ্যায় – গৌস্ট ড্যান্স ও কালো-পায়ের গান : লোকায়ত আমেরিকান ধর্মীয় সংগীত
ভূমিকা
নেটিভ আমেরিকান বা আমেরিকো-ইন্ডিয়ান ধর্মীয় সংগীতের উদ্ভব, প্রয়োগ ও পরিবেশন দেখা যায় আমেরিকার উত্তরখণ্ডে। এটি মূলত আমেরিকার সুপ্রাচীন আদিবাসী সংগীত (tribal music)। অন্যান্য নানা দেশের লোকায়ত ধর্ম ও তার ধর্মীয় সংগীতের ইতিহাসে নেটিভ আমেরিকান ধর্মীয় সংগীত একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অধ্যায়। পৃথিবীর এই অন্যতম সুপ্রাচীন আদিবাসী সংগীতের ধারা অনুসরণ করে পরবর্তীকালে আধুনিক আমেরিকান রক, জ্যাজ, ব্লুস, হিপহপ ও রেগে’-র পরিচয় পেয়েছি।
বস্তুত লোকায়ত আমেরিকান ধর্মীয় ভাবধারার১ ইতিহাসে সংগীতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর সমস্ত আদিবাসী সংস্কৃতি-বিজ্ঞান-সাহিত্য ও ধর্ম যুগে যুগে মুখ থেকে মুখে শ্রুতিভাষ্যের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। আমেরিকার ক্ষেত্রেও তা ভিন্ন নয়। সংগীতের অবদানও এসকল ক্ষেত্রে উল্লেখনীয়। নব্য আমেরিকার ধর্মীয় ভাবধারা বিস্তারে সে-সকল প্রদেশের আদিবাসী সংগীতের সুগভীর প্রভাব লক্ষণীয়। আমেরিকার সুদীর্ঘ ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় সপ্তম শতাব্দীতে২ প্রথম ধর্মীয় সংগীতের প্রচলন। উত্তর আমেরিকার নানা অঞ্চলে বিস্তৃত নানান প্রকার আদিবাসীদের ধর্ম ও তার ধর্মীয় সংগীতের মধ্যে বিশাল এক মেলবন্ধন পরিলক্ষিত হয়। তা হল পৃথিবীর কিছু আদিম শব্দ ও সুরারোপনে। এ সকল শব্দ, লোকায়ত ধবনি বা শব্দ প্রাকার কোনো অভিধানে পাওয়া দুষ্কর। আদিম ধর্মীয় আচার-আচরণে এগুলির বহুমুখী বিবর্তন ঘটেছে যুগ যুগ ধরে। এখানেই আমেরিকার লোকসংগীতের স্বতন্ত্রতা।
ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী অভিযাত্রীদের আগমনের অনেক আগে থেকেই আমেরিকার প্রাচীন লোকধর্ম ও লোকাচার সর্বজনবিদিত। এর মধ্যে গ্রেটবাসিন অঞ্চলের লোকধর্ম ও তার ধর্মীয় সংগীতচর্চার ইতিহাস সর্বাপ্রেক্ষা প্রাচীন। কণ্ঠসংগীতের এক বিশেষ ‘স্টাইল’ এখানেই সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়। মূলত এটি মেসো-অ্যামেরিকান মেক্সিকোতে উদ্ভূত হয়ে উত্তর আমেরিকায় ছড়ায়।
নেটিভ অ্যামেরিকান ধর্মীয় সংগীতের এই প্রভূত বিস্তারের সময় মূলত তিনটি প্রধান এশিয়ান সাংগীতিক ধারা এই সংগীতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এই তিনটি বিশেষ ধারা হল—চাকচি (chukchee), উকাগীর (yukaghir) ও কোর্য়াক (koryak)। এই বিশেষ সাংগীতিক ধারাগুলিকে পোলিও-সাইবেরিয়ান আদিবাসীদের লোকসংগীত হিসেবে অনেকে মনে করেন। এখান থেকেই পরবর্তীকালে সাংগীতিক বিবর্তনের মাধ্যমে তিনটি প্রাচীন আমেরিকান সংগীতের মূলধারার প্রচলন ঘটে, যা হল—উত্তর-পশ্চিম আঞ্চলিক (North-west) সংগীত, প্যুবলো (Pueblo) ও নাভাযো (Navajo) সংগীত। এই সব ক-টি স্বতন্ত্র সাংগীতিক ধারাই উত্তর আমেরিকার ধর্মীয় আচার-আচরণ ও সংগীতকে সমৃদ্ধ করে।৩
এই সমস্ত আমেরিকান লোকধর্মীয় সংগীতে কণ্ঠসংগীত ও যন্ত্রসংগীতের ব্যবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কণ্ঠসংগীতের মধ্যে একক গায়ন (Solo), দ্বৈত সংগীত (Duet) ও সমবেত সংগীত (choral song)-এর প্রচলন দেখা যায়। যন্ত্রানুষঙ্গ ও যন্ত্রসংগীতে মূলত চামড়ার বাদ্য (drums) ও অন্যান্য (যেমন, rattles)-র বহুল ব্যবহার দেখা যায়। মূলত এই ধর্মীয় সংগীতগুলি ধীরগতিতে শুরু হয়, তারপর ধীরে ধীরে তাদের ছন্দ বাড়ে। একসময় এই সংগীত সর্বজনসমক্ষে যথেষ্টই পরিচিতি ও প্রসার লাভ করে।
নেটিভ আমেরিকার লোকায়ত ধর্মীয় সংগীতে বেশ কিছু প্রাকৃত শব্দ ও গুপ্তমন্ত্র৪ বিদ্যমান। মূলত এগুলি সুপ্রাচীন এবং অশ্রুত। এই বিশেষ শব্দ বা মন্ত্রগুলি প্রাচীন আদিবাসীদের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং ধর্মীয় আচার-আচরণের মুখ্য অঙ্গরূপে পরিচালিত হয়। এমনকী মাঝে মাঝে ধর্মাচরণ বা ধর্মীয় ব্যাখ্যাগুলিও সংগীতের অংশরূপে প্রতিভাত হয়েছে। অনেকাংশেই তাই এই গানগুলির পাঠান্তর বা অনুবাদ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর মধ্যে যেগুলির পাঠান্তর বা ভাষান্তর সম্ভব তার মধ্যে ‘নাভাযো’-র ‘শি-নাশা’ অন্যতম যেটি নিউ মেক্সিকোতে বিশেষ ধর্মীয় আচার-আচরণের অন্যতম বলে মানা হয়। এছাড়াও এই উত্তর আমেরিকার ধর্মীয় লোকগীতির মধ্যে—’ডিক্সি’, ‘জামবালায়া’ ইত্যাদি বিদ্যমান যা প্রাচীন আমেরিকান আধিবাসীদের নবান্ন উৎসব ও ধর্মীয় স্তুতিগানরূপে পরিচিত।
উত্তর আমেরিকার এই লোকসংগীত ইতিহাস ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতেও সমান প্রভাব ফেলতে সক্ষম। বিভিন্ন লোকসাংস্কৃতিক উৎসব, অধিবেশন ও শ্রুতিপরম্পরায় বাহিত নানান শিক্ষামূলক গল্প এই সংগীতের মাধ্যমে পূর্বসূরি থেকে উত্তরসূরিতে জারিত হয়৫। সনাতনি ভাবধারায় সমৃদ্ধ এই লোকধর্মীয় সংগীত মূলত আদিবাসীদের নানান উপাস্যদের ও চিরঅবিনশ্বর আত্মার স্তুতিরূপেও উল্লেখিত। ধর্মীয় আচার-আচরণগুলিতেও নানান সংগীত, নৃত্য, পোশাক-পরিচ্ছেদ-এর অপরিহার্য ভূমিকা পরিলক্ষিত। প্রাচীন আমেরিকো উপকথাগুলি এই ধর্মীয় সংগীত, নৃত্য ও অন্যান্য আচার-ব্যবহারাদির মাধ্যমে পরিবেশিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে নানান বীরগাথা, এলিজি, স্তুতিপাঠ, মহাকাব্য ও ধর্মাচরণ বিদ্যমান।
প্রাচীন আমেরিকার লোকধর্মীয় সংগীতে লিঙ্গ বৈচিত্র্য৬ উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনকালে সংগীতে, বাদ্যযন্ত্রে ও নৃত্যে পুরুষ ও মহিলাদের অংশগ্রহণ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। প্রাচীন আমেরিকান ধর্মীয় সংগীতে (মূলত আদিবাসী সংগীত) নারীরা নেপথ্য কণ্ঠ ও নৃত্যে পরিবেশনীয় গুরুত্বপূর্ণ অংশপ্রদান করত। পুরুষেরা মূলত বাদ্যযন্ত্র, প্রধান কণ্ঠসংগীত ও নৃত্যে অংশ নিত। ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনকালে পুরুষেরা মূলত শক্তি এবং নারীরা শান্তি, সমৃদ্ধি ও দেবস্তুতির ভূমিকায় অগ্রগণ্য ছিল। সূর্যের স্তুতি৭ (সংগীতে ও নৃত্যে), গৌস্ট ড্যান্স (অশরীরী নৃত্য) ও প্রাচীন আত্মাদের৮ (Spirit) সম্বোধনকালে নারী ও পুরুষ উভয়েরই মহৎ ভূমিকা দর্শনীয়। এক্ষেত্রে নারীরা মূলত নানারকমের নৃত্য, গীত ও প্রার্থনা৯ পরিবেশন করে থাকে। এটি এমন এক পর্যায় যেখানে প্রাচীন ধর্মীয় সংস্কৃতির আলাপ ও প্রয়োগ, ঐশ্বরিক স্তুতি, উপকথা ও বিভিন্ন লোকসংস্কৃতির চর্চা পুরুষ ও নারী উভয় সম্প্রদায়ই করত।
প্রকারভেদ
বিভিন্ন পণ্ডিতদের মতানুসারে নেটিভ আমেরিকান ধর্মীয় সংগীতকে কয়েকটি বিশেষ ভাগে ভাগ করা যায়। এই প্রতিটি বিভাগই উত্তর আমেরিকার ধর্মীয় সংগীত মাহাত্ম্যের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নীচে এই বিশেষ ভাগগুলিকে নিয়ে আলোচনা করা হল :
১. দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত সংগীত (South-west)
প্রাচীন আমেরিকার লোকধর্ম ও ধর্মীয় সংগীতের অন্যতম প্রধান অধ্যায় হল দক্ষিণ-পশ্চিম। এই বিশেষ অংশটিতে লোকায়ত আমেরিকান সংগীতে দুটি প্রধান গোষ্ঠী ‘প্যুবলো’ (Pueblo) ও ‘আথাবাস্কান’১০ (Athabaskan) জনসম্প্রদায়ের লোকগীতি বা ধর্মীয় সংগীতের মেলবন্ধন লক্ষ করা যায়। দক্ষিণ আথাবাস্কান-এর ‘নাভাযো’ (Navajo) ও ‘আপাচে’ (Apache) জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় কণ্ঠসংগীতের সঙ্গে প্যুবলো গোষ্ঠীর নীচুপর্দার গভীর স্বর প্রয়োগের বৈচিত্র্য দর্শনীয়। আথাবাস্কান ধর্মীয় গীতিতে চামড়ার বাদ্যযন্ত্র (drums) ও তারের সংগীতের প্রচুর ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়া দক্ষিণ পুবলো সংগীত দুর্বোধ্যতা, জটিল দার্শনিক তত্ত্ব ও ধীর চলনের জন্য বিখ্যাত। আথাবাস্কানের চেয়ে অনেক শান্ত, স্থিতধী চলনের এই বিশেষ ধর্মীয় সংগীতে নানাবিধ যন্ত্রানুষঙ্গের প্রচলন পাওয়া যায় যা পবিত্র আত্মাদের স্তুতি করে। এর বিভিন্ন শাখা-উপশাখায় যথা ‘হোপি’, ‘জুনি’, তাও প্যুবলো’, ‘সানইডিফেনসো, ‘সান্টো ডোমিনিগো’ ইত্যাদিতেও এর প্রভাব বিদ্যমান। এর সাংগীতিক রূপ, মাত্রা, দৈর্ঘ্য ও স্বরবিন্যাস অন্যান্য সকল আদিবাসী সংগীত থেকে স্বতন্ত্র এবং গভীর ভাবনির্মাণে নির্মিত। প্যুবলো ধারার ‘কাচিনা’ নৃত্যসংগীত একটি বিশেষ নৃত্যশৈলী এবং হোপি ও জুনি সংগীত সর্বাপেক্ষা জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এতে ‘পিমা’, ‘পাপাগো’, ‘য়ুমান’, ও ‘ইরিমো’ ভাবধারার মিশ্রণ বা বর্ণবৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়।১১
অন্যদিকে ‘আপাচে’ ও ‘নাভাযো’-দের দক্ষিণ আথাবাস্কান ধারাটি সর্বাপেক্ষা সরল ও বহুজনবিদিত, বিশেষত গ্রেটবাসিন অঞ্চলে। এই সংগীতে নানান স্বরপ্রয়োগের তারতম্য, যন্ত্রানুষঙ্গ ও ছন্দজ্ঞান বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়াও ‘পোমো’, ‘মিওয়াক’, ‘লুসিনো’, ‘গ্যাব্রিলিনো’ ও ‘য়ুমান’ জাতির ধর্মীয় সংগীতে প্যুবলো ও আথাবাস্কান সংগীতের বহুল প্রচলন ও যৌথপ্রয়োগ বিদ্যমান। দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত ধর্মীয় সংগীত ধারাটি এইভাবে যুগ যুগ ধরে নানা আদিবাসী গোষ্ঠীর ধর্মীয় আচার-আচরণে স্বতন্ত্রতার ছাপ রেখেছে। ছাপ রেখেছে আধ্যাত্মিকতা, ধর্মীয় মাহাত্ম্য ও আদিবাসী সংস্কৃতির ভাবধারায়।
২. পূর্ব বনভূমি অঞ্চল (Eastern woodland)
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সন্ধিস্থলে যা কিনা পূর্ব বনভূমি অঞ্চল (Eastern woodland)-রূপে পরিচিত সেখানকার আদিবাসীদের মধ্যে মূলত ‘সওয়াল-জবাবি’১২ (Antiphony) সংগীত বর্তমান। এটি ‘প্যুবলো’ সংগীতের একটি বিশেষ পর্যায়। এই বিশেষ সাংগীতিক সীমারেখার মধ্যে মেরিটাইম কানাডা, নিউ ইংল্যান্ড, গ্রেট লেকস ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলগুলি বিদ্যমান। এই বিশেষ অঞ্চলের আদিবাসীদের ধর্মীয় সংগীতের মধ্যে মূলত কণ্ঠসংগীতের প্রাধান্য বেশি। এখানে ধর্মীয় গীতিতে সংগীত ছন্দগতভাবে জটিল, ‘পর্দা’ অতিক্রম (Scale change) এবং ধর্মীয় নৃত্যের পরিবেশন উল্লেখনীয়। এই অঞ্চলে বাঁশি এবং হুইসল একক যন্ত্রানুষঙ্গরূপে পরিলক্ষিত এবং নানান ধরনের বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন দেখা যায়। এই পূর্ব বনভূমি অঞ্চল বস্তুত মিসিসিপি থেকে আটলান্টিক পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সংগীতের অপেক্ষাকৃত জটিল রূপটি ‘দক্ষিণ-পূর্ব ক্রীক’ ‘য়ুচি’, ‘কেরোকি’, ‘বাকতাও’, ‘ইরোকুইস’ ইত্যাদি জাতির মধ্যে এবং সরলাংশটি অ্যালগোকুইন১৩ ভাষাভাষী যথাযথ ‘ডেলাওয়ার’ ও ‘পেনবস্কট’ ইত্যাদির মধ্যে প্রচলিত। এই সকল জাতির ধর্মীয় সংগীতগুলিতে লোকসংগীতের প্রভাব ও আমেরিকার আদিবাসী সংস্কৃতির আচার-আচরণের জ্বলন্ত উদাহরণ পাওয়া যায়।
৩. সমতলভূমি (Plainland)
লোকায়ত আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের ধর্মীয় সংগীত ও পূর্বস্থলী বনভূমিতে প্রচলিত লোকাচারের নানান প্রভাব এতে পরিগণিত হয়। এই সমতলভূমির আদিবাসীদের লোকসংগীত নেটিভ আমেরিকান ড্রামস-এর এক অনন্য পর্যায়। একমাত্র এখানেই দ্বিতল চামড়ার ভারী ড্রাম ব্যবহৃত হয়, যা একক বাদন বা ঐকতানে বিশেষ উইলো কাঠের বাঁশির (Flageolet) সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। এখানকার ধর্মীয় সংগীতে বিলম্বিত (Slow mode) ও দ্রুত (fast mode)-র বিন্যাস পাওয়া যায়। বস্তুত সমতলভূমির নানা অধিবাসী১৪ যেমন, ‘কালো-পা রেড ইন্ডিয়ান’, ‘ক্রো’, ‘ডাকোটা’, ‘আরাফো’, ‘কিওয়া’, ও ‘কোমাঞ্চে’ ইত্যাদির লোকসংস্কৃতি ও ধর্মীয় সংগীতে এর বহুল ব্যবহার দেখা যায়। সমতলের সংগীতে কণ্ঠসংগীতের অসাধারণ তারতম্য, স্বরকম্পন ও স্বরবিন্যাস দেখা যায়। বিশেষত ‘আরাফো’, ‘ডাকোটা’ ও ‘কালো-পা’ রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে গ্রীষ্মে Sun dance বা সূর্য নৃত্য ও বর্ষায় rain dance-এর প্রচলন আছে। এটি মূলত একক বা দলগতভাবে পরিবেশিত হয়। এছাড়াও পূর্বজ যোদ্ধাদের স্মৃতিতে, বা তাঁদের আত্মাদের প্রতি স্তুতিতেও এই সংগীত বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। কথিত আছে আছে কোনো বিশেষ ধর্মীয় প্রভুর আত্মা সমগ্র আদিবাসীদের এই নৃত্যগীতে সহায়তা করে, এমনকী মুমূর্ষু কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সংগীতের প্রয়োগও এখানে পরিলক্ষিত হয়। মৃত্যুর আগে ও পরমুহূর্তে সেই ব্যক্তির অনন্ত, অক্ষয় আত্মার শান্তিকামনার উদ্দেশ্যে।
৪. গ্রেট বাসিন (Great Basin)
লোকায়ত আমেরিকার অন্যতম বিখ্যাত ধর্মীয় সংগীত ধারাটি হল—গ্রেট বাসিন১৫-এর সংগীত। এই অঞ্চলের সংগীত অত্যন্ত সহজ, সরল, বহুমুখী ও নানান বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এখানে কণ্ঠসংগীতে স্বরপ্রয়োগ খুব সাধারণ কিন্তু তারতম্যে ভরপুর। মূলত এখানকার কণ্ঠসংগীত AABB CC AA BB CC এই ফর্ম মেনে চলে। এই বিশেষ রূপটিই একে অন্যান্য সংগীতগুলির থেকে স্বতন্ত্র করে তোলে। বস্তুত গ্রেট বাসিন অঞ্চলের ধর্মীয় সংগীত ধারাটি ‘নেভাদা’, ‘উটাহ’, ‘মোড়োাক’ ও ‘ক্ল্যামাথ’ অধিজাতিগুলির মধ্যে সবিশেষ প্রচলিত। এই অঞ্চলের লোকধর্মীয় সংগীতে প্রাচীন ধর্মীয় সংগীতের তীব্র প্রভাব লক্ষণীয় যার মধ্যে ‘গৌস্ট ড্যান্স’ বা ভূতুড়ে নৃত্য থেকে শুরু করে প্রকৃতির সাধনা পর্যন্ত বিদ্যমান। এখানকার সাংগীতিক ধারাটি সরল, একমুখী অথচ প্রক্ষিপ্ত। এখানে ইতিহাসের নানান বীরগাথার গল্প সংগীতের মাধ্যমে বলা হয়ে থাকে যা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীগুলির ন্যায় পূর্বজ থেকে উত্তরসূরিতে প্রসারিত। এই অঞ্চলে বাদ্যসংগীতের মাধ্যম অন্যান্য কণ্ঠসংগীতের তুলনায় কম ব্যবহৃত। একই শব্দ বা শব্দবন্ধনীকে পুনঃপুনঃ উচ্চারণের ধারা এখানে লক্ষণীয়। ‘মোড়োক’ ও ‘ক্লামথ’১৬ গোষ্ঠীতে এই সাংগীতিক ধারার একটি উন্নত রূপ পরিলক্ষিত হয়। প্রথম প্রথম এই ধর্মীয়সংগীতটি শুধুমাত্র গ্রামের পুরোহিতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে তা সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়ায় ও উত্তর আমেরিকার নেটিভ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সংগীতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়, যা আজও অক্ষুণ্ণ।
৫. উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সংগীত (North-West)
দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত, গ্রেট বাসিন ও পুবে বনভূমি অঞ্চলের ন্যায় আমেরিকার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের প্রাচীন ধর্মীয় সংগীতও যথেষ্ট কৃতিত্বের দাবি রাখে। এখানকার সুদীর্ঘ সাংগীতিক ধারাটি অন্যান্য সংগীতগুলির থেকে বেশ স্বতন্ত্র। এখানে সংগীতের সঙ্গে কণ্ঠতারতম্য, জটিল সুরারোপন ও যন্ত্রানুষঙ্গের ব্যবহার দেখতে সহজাত হলেও এর বিস্তার সহজাত নয়। এখানে যন্ত্রানুষঙ্গের বিশেষ প্রচলনের পাশে কণ্ঠসংগীতের অবদানও কিছু কম নয়। মূলত এটিও একক বা যৌথ বা সমবেত তিনটি সাংগীতিক ধারায় বিদ্যমান। যন্ত্রসংগীতে এখানে বাঁশি, চামড়ার বাদ্য ও হর্ন-এর প্রচলন আছে। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের প্রাচীন আদিবাসীদের মধ্যে যথা ‘সিমসিয়ান’, ‘মাকাহ’, ‘নু-চা-নথ’ এবং অন্যান্য ছোটো ছোটো জাতিগোষ্ঠীর ধর্মীয় সংগীত এই অঞ্চলে যথেষ্ট উন্নতিসাধন করেছে। কণ্ঠসংগীতের মধ্যে ‘সিয়াসিয়ান’ ও ‘কোয়াকওয়াকা ওয়াক’ জাতিগোষ্ঠী, বাদ্যসংগীতে ‘মাকাহ’ গোষ্ঠীগুলি যথেষ্ঠ জনপ্রিয়। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের ধর্মীয় সংগীত তার লোকাচারের মতোই সমান মাহাত্ম্যপূর্ণ।১৭
৬. আর্কটিক (Archtik)
প্রাচীন আলাস্কা, উত্তর-পশ্চিম খণ্ড, য়ুকন ও গ্রিনল্যান্ড যা আর্কটিক শ্রেণিভুক্ত কণ্ঠসংগীতের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলের প্রাচীন আদিবাসীদের মধ্যে ‘য়ুকোন’, ‘এস্কিমো’ বিশেষ উল্লেখনীয় এদের গালবাদ্য, কণ্ঠসংগীত ও তারতম্যের জন্য। নানান প্রকার ড্রামস, বক্স, ও মরু-কাঠের বাঁশি এখানে ধর্মীয় যন্ত্রসংগীতরূপে পরিলক্ষিত হয়।১৮ পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে স্তুতি থেকে শিকার সংগীত নানান অনুষ্ঠানে ও ধর্মীয় আচারবিধিতে এই আর্কটিক অঞ্চলের লোকসংগীত তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় রাখে। ‘টামবোরিন’ জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের প্রথম প্রচলন এখানেই দেখা যায়, যা নেটিভ আমেরিকান ধর্মীয় সংগীতে এক বিশেষ স্থান বজায় রাখে। এই ট্র্যাডিশন আজও অব্যাহত।
যন্ত্রানুসংগীত
নেটিভ আমেরিকার লোক এবং ধর্মীয় সংস্কৃতির সংগীতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে যন্ত্রানুসংগীতের ভূমিকা। বহু যুগ আগে, রীতিমতো সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগে যখন এই বিশেষ ধর্মীয় সংগীতের নথিকরণও হয়নি তখন থেকে আদিবাসী সংস্কৃতি ও ধর্মচেতনায় যন্ত্রসংগীতের প্রভাব বিদ্যমান। আদিবাসী জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই যন্ত্রসংগীতের অবদান যার মধ্যে মূলত ‘বাঁশি’ এবং ‘চামড়ার বাদ্যযন্ত্র’ উল্লেখনীয়।
১. নেটিভ আমেরিকান বাঁশি
নেটিভ আমেরিকান বাঁশি তার অসাধারণ বৈচিত্র্য, সুর এবং শ্রুতিমাধুর্যের জন্য জগদবিখ্যাত। উত্তর আমেরিকার কমবেশি সব ক-টি আদি জনগোষ্ঠীতে বাঁশির বহুল প্রচলন লক্ষণীয়। প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত এর জনপ্রিয়তা ও সর্বজনগ্রাহ্যতায় বিন্দুমাত্র ছেদ আসেনি। এই বাঁশি পৃথিবীর একমাত্র বাঁশি যাতে দুটি বায়ু প্রকোষ্ঠ (Air chambers) রয়েছে—যা যথাক্রমে বাঁশির ঊর্ধ্ব ও নিম্লভাগে অবস্থিত। প্রথম প্রকোষ্ঠটি মূল স্বরক্ষেপণে সাহায্য করলে দ্বিতীয়টি সাহায্য করে তার মূর্ছনায়। এই বিশেষ আঙ্গিকে গঠিত বাঁশি পৃথিবীর অন্য সমস্ত বাঁশির থেকে স্বতন্ত্র।১৯ লম্বায় এটি প্রায় দেড় হাত হয়ে থাকে। সনাতনি এই বাঁশি প্রথমে মূলত মেষপালকদের হাতে দেখা যেত, পরবর্তীকালে তা যোদ্ধা ও শিকারবাহিনীর নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। এর গম্ভীর অথচ ভাবসম্পূর্ণ আওয়াজ-এ উত্তর আমেরিকার প্রাচীন মাটির গন্ধ পাওয়া যায়। পুরাকাল থেকে আদি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে, রাজসভায়, শিকার, যুদ্ধে ও রোগ দূরীকরণের আধ্যাত্মিক সংস্কার-সংস্কৃতিতে এর প্রচলন অবাধ ও অপাপবিদ্ধ।২০ বিংশ শতাব্দীতে এসে ‘দো নেভাকুয়া’, ‘কার্ল ডিয়ার’, ‘জে ইগল’, ‘রবার্ট মির্যাবল’ প্রমুখ বিভিন্ন জনপ্রিয় নেটিভ আমেরিকান বাঁশিবাদকের পরিচয় পাওয়া যায়, যাঁরা এর মাহাত্ম্যকে দিনের পর দিন আরও গৌরবোজ্জ্বল করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
২. নেটিভ আমেরিকান ড্রামস
নেটিভ আমেরিকান ধর্মীয় যন্ত্রানুসংগীতের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রাচীন যুগে রেড ইন্ডিয়ান পুরোহিতরা এর প্রচলন ঘটালেও অচিরেই এটি জনজীবনে বিস্তার করে এবং মূলত শিকার ও যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন আদিবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র ও তার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এখানে দ্বিতল চামড়ার বাদ্যযন্ত্রের (নাকাড়া সদৃশ) পাশাপাশি জলতরঙ্গের প্রচলনও দেখা যায়। এই জাতীয় বাদ্যযন্ত্র২১ মূলত ‘নেভাদা’, ‘উটাহ’, ‘আরাফো’ ও ‘ডাকোটা’ আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত। কমবেশি সমস্ত উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের ধর্মীয় সংগীত ও নৃত্যে ড্রামের প্রচলন আছে। চামড়া ও গঠনশৈলীর তারতম্য ঘটিয়ে এর সাংগীতিক প্রভাব আরও বৈচিত্র্যমূলক করা হয়। ধর্মীয় রীতি, রেওয়াজেও বিশেষত পূর্বপুরুষদের স্তুতি, ভূতুড়ে নৃত্য ও অতীন্দ্রিয় শক্তির জাগরণ হিসেবে এই সুপ্রাচীন ধর্মীয় যন্ত্রসংগীতমাধ্যমটি যুগে যুগে এর সাংগীতিক ভাবধারাকে অক্ষুণ্ণ এবং বিশেষ প্রভাবান্বিত করে এসেছে এবং তা আজও সমানভাবে বিদ্যমান।
উপসংহার
পুরাতত্ত্বের বিচারে উত্তর আমেরিকার সনাতনি ধর্মীয় সংগীতের ইতিহাস প্রায় কয়েকশত বর্ষ প্রাচীন যা শুরু হয় ষষ্ঠ শতাব্দীর দোরগোড়ায়। যদিও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের হাত ধরে এর পর্ব নথিকরণ সম্ভব হয়েছিল, কিন্তু এর প্রচলন, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও রীতিনীতি বহু আগে থেকেই পূর্ণমাত্রায় বিকশিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ থেকেই এই বিশেষ ধর্মীয় সংগীতটির সাংগীতিক ভাবধারা ও ব্যবহারিক নৈপুণ্য নিয়ে গবেষণা শুরু হলেও প্রাচীন যুগে এই আদিবাসী জীবনের বিশেষ ধর্মীয় সংগীতের প্রভাবটি চিরকাল সংগীতপিপাসু ও সংগীতমনস্ক ব্যক্তিদের বিস্মিত করেছে। বিংশ শতাব্দীতে ‘প্যান-ট্রাইবালিজম’২২ নিয়ে আরও একটি বিশেষ বহিঃসংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত ধর্মীয় সাংগীতিক প্রভাব নেটিভ আমেরিকান ধর্মীয় সাংগীতিক ভাবধারাকে আরও গৌরবোজ্জ্বল করে তোলে। বিশ্বায়নের ফলে বহিঃবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ও ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ভাব-বিনিময়ের মাধ্যমে এর বিশেষ ধর্মীয় মনোভাব ও তার বিস্তার আরও উন্নত শ্রেণির রূপকল্পনায় পর্যবসিত হয়। এর মধ্যে ‘পোউয়ো’, ‘পিয়্যুট’ ‘গৌস্ট ড্যান্স’ উল্লেখযোগ্য। নেটিভ আমেরিকান চার্চসংগীতও এইসব সাংগীতিক প্রভাববিমুক্ত নয়। এমনকী এখানে অদ্ভুত কিছু পদ্যভাষ্য’-র নিদর্শনও পাওয়া যায় যা আদিবাসী পুরোহিতদের মধ্যে আত্মার অতীন্দ্রিয়চর্চা ও ধর্মীয় রীতিনীতির অঙ্গরূপে চর্চিত হয়। এইসব পদ্যভাষ্য-র ভাষা, রূপ ও গঠনশৈলী নিয়ে আজও পণ্ডিতমহলে মতভেদ থাকলেও এর উৎকর্ষ নিয়ে তেমন কোনো দ্বিমত পাওয়া যায় না।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আরও একবার এটা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, আধুনিক যুগের ধর্মীয় সংগীতে নানান ঐকান্তিক বিবর্তনের ধারা অক্ষুণ্ণ থাকলেও প্রাচীন আমেরিকার সুপ্রাচীন লোকধর্মীয় সংগীত মানবসভ্যতার সংস্কৃতির অন্যতম প্রাচীন ধারক ও বাহকরূপে পরিচালিত। আজও কান পাতলে সেইসব আদিম শব্দোচ্চারণ, মন্ত্রবিন্যাস, ধর্মীয় সংগীতের সুপ্রাচীন লোকাচার আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় নিজেদের শিকড়ে—নিজেদের ও পৃথিবীর প্রাচীন অন্তঃসারিত অস্তিত্বের চাপাপড়া কালের ভগ্নস্তূপের দিকে। এই সংস্কার, অতীন্দ্রিয়তা, ধার্মিক রীতিনীতি ও তার সাংগীতিক রূপবৈচিত্র্য এত সহজে বদলে যাওয়ার নয়। আর বদলালেও পৃথিবীর অন্যান্য লোক-ধর্মীয় সংগীতগুলির মতো এটিও ঠিকই খুঁজে নেবে তার চলার পাথেয়, তার সুর বিচরণের প্রশস্ত ভূমি, ছন্দ ও যন্ত্র-শব্দের প্রত্ন-শৈল্পিক আধার।২৩
***
৫ম অধ্যায়
গৌস্ট ড্যান্স ও কালো-পায়ের গান : লোকায়ত আমেরিকান ধর্মীয় সংগীত
১. R. David Edmunds (2006), The People : A History of Native America: Wadsworth Pub, 978-0669244953, p. 18
২. Ibid, pp. 29-31
৩. John co Troutman (2009), Indian Blues : American Indians and the politics of music, University of Oklahoma Press, 978-0806140193, p.58
৪. Ibid pp. 92-94
৫. Ibid p. 121
৬. Tim Lawrence (2004), Love saves the day : A History of American Dance Music Culture, Duke up, 978-0822331988, p.67
৭. Ibid, p.72
৮. Ibid, p. 74
৯. Ibid, p. 81
১০. James Wilson (2000), The earth shall weep : A History of Native America, Grove Press, 9780802136800, p. 226
১১. Ibid, p. 312
১২. Ibid, p.337
১৩. Carl Waldman (2006) ; Encyclopaedia of the Native American tribes, Checkmark Books, 9780816062744, p. 139
১৪. Ibid, p. 86
১৫. Ibid, p. 86
১৬. Ibid, p. 212
১৭. Ibid, p. 231
১৮. Ibid, p. 231
১৯. Tim R. Crawford (2001), Flute Magic : An introduction to the Native American Flute, Mel Bay, 97800786658169, p. 31
২০. Ibid, p.141
২১. John W. Troutman, p. 204
২২. Michael V. Pisani (2006), Imagining Native American music, Yale Up, 9780300108934, p. 276
২৩. Ibid, pp. 187-191