একাদশ পাঠ
মোহ নিদ্রা দূরীভূত করণ
কাৰ্যকারক সম্মোহন করিবার বিভিন্ন প্রণালী শিক্ষার সঙ্গে মোহিত পাকে প্রকৃতিস্থ করিবার উপায় গুলিও সুন্দর রূপে হৃদয়ঙ্গম করিয়া লইবে। যেহেতু তৎসম্বন্ধে তাহার ভাল রূপ জ্ঞান না থাকিলে, সে কাহাকেও মোহিত করণান্তর পুনরায় স্বাভাবিকাবস্থায় আনয়ন করিতে পারিবে না এবং তাহাতে সে নিশ্চয় ভীত ও বিচলিত হইয়া পড়িবে। মোহিতাবস্থায় পাত্রের মন অতিশয় সংবেদ্য এবং কার্যকারকের মনের সহিত তাহার মনের খুব ঐক্য স্থাপিত হয় বলিয়া, তাহার (কাৰ্য্য কারকের) মনে কোন উত্তেজনা পূর্ণ চিন্তা থাকিলে তাহা পাত্রের মনে (telepathically) প্রবেশ করিয়া তাহাকে আরও বেশী উত্তেজিত করিয়া থাকে এবং তাহাতে সময় সময় “মেস্মেরিজম্” বা “ক্র-ম্যাগ্নেটিজ” (Cross-Mosmerism or Cross-Magnetism) নামক একটা অপ্রীতিকর অবস্থা উৎপাদিত হইতে পারে। মোহিত ব্যক্তি এই অবস্থায় পৌছিলে তাহাকে জাগ্রত করা খুব কষ্ট সাধ্য ব্যাপার হইয়া দাঁড়ায়। কেবল তাহাই নয়, উহা হইতে মোহিত ব্যক্তির শরীর এবং মনের অনেক প্রকার অনিষ্টও হইতে পারে। এতদ্ব্যতীত মোহিত ব্যক্তিকে কাৰ্যকারক ভিন্ন অপর কোন লোক স্পর্শ করিলে ও উক্ত বিসদৃশ অবস্থা উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অতএব কাৰ্যকারক নিজের মোহিত পাত্রকে কখনও অপর কোন লোকের দ্বারা স্পর্শিত হইতে দিবে না।
মোহ নিদ্রা অপসারণ অর্থাৎ পাত্রকে জাগ্রত করিবার জন্য নিম্নে যে কয়েকটি প্রণালী প্রদত্ত হইল, কাৰ্যকারক উহাদের সাহায্যে যে কোন স্তরে উপনীত পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করিতে সমর্থ হইবে।
(১) মোহিত ব্যক্তির শরীরের উপর কয়েকটি বিপরীত বা উৰ্দ্ধগামী লম্বা কিম্বা উপশম পাস প্রদান করণান্তর মাথা ও মুখমণ্ডলের উপর ফু বা বাতাস দিলে, সে জাগ্রত ও প্রকৃতিস্থ হইয়া থাকে।
(২) মোহিত ব্যক্তির মুখ মণ্ডলের উপর রুমাল বা পাখা দ্বারা তাড়াতাড়ি বাতাস-দিলে, ঐ শীতল বায়ুপ্রবাহ তাহার ফুসফুসের ভিতর প্রবেশ করিয়া রক্ত সঞ্চালনের ক্রিয়া বৃদ্ধি করে এবং তাহাতে তাহার মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বর্ধিত হইয়া তাহাকে জাগ্রত করিয়া থাকে। পাত্রের কাধ বা পিঠের উপর জোরে (অবশ্যই সে ব্যথা না পায়) হাত চাপড়াইয়া, “জাগ, জাগ” বলিয়া আদেশ দিলেও সে প্রকৃতিস্থ হইয়া থাকে। এই প্রণালীটি সচরাচর হিপ্নোটি নিদ্রা অপসারণের জন্যই ব্যবহৃত হয়। ইহাতে পাত্রের ঘুম হঠাৎ ভাঙ্গিয়া যায় বলিয়া তাহার স্নায়ু মণ্ডলীতে অল্প বিস্তর আঘাত লাগে। এই প্রণালীটি খুব নির্দোষ নয়।
(৩) মোহিত ব্যক্তির শরীরের উপর পা হইতে আরম্ভ করিয়া মাথা পর্যন্ত অর্থাৎ উৰ্দ্ধগামীভাবে জোরের সহিত পাখার বাতাস দিলে তাহার নিদ্রা ভঙ্গ হইয়া থাকে। প্রথম বৈঠকে নিদ্রিত পালকে মোহ নিদ্রা দূরীভূত করণ জাগ্রত করিতে যেরূপ সময় লাগে, পরবর্তী বৈঠকে আর তত সময়ের আবশ্যক হয় না।
(৪) অধিকাংশ মোহিত পাত্রের মুখমণ্ডল বা মাথার উপর ফু বা বাতাস দিলে তাহারা জাগ্রত হইয়া থাকে। যদি কোন পাত্র চোখ খুলিতে অসমর্থ হয়, তবে কাৰ্যকারক নিজের দক্ষিণ ও বাম বৃদ্ধাঙ্গুল দুইটি পাত্রের নাসা-মূলে স্থাপন করতঃ, উহাদের দ্বারা যথাক্রমে পাত্রের বাম ও দক্ষিণ জ্বর উপর অল্প জোরে অথচ তাড়াতাড়ি বর্ষণ করিতে করিতে উহাদিগকে বিপরীতাভিমুখে, উক্ত দ্বয়ের সীমান্ত পর্যন্ত লইয়া যাইবে। কয়েকবার এইরূপ পাস করার পর, তাহার মুখমণ্ডল বা মাথার উপর ফু বা বাতাস দিলে পাত্র প্রকৃতিস্থ হইবে।
(৫) উপরোক্ত দুই-তিনটি নিয়ম প্রয়োগ করার পরেও পাত্র প্রকৃতিস্থ না হইলে, তখন আর তাহার উপর অন্য কোন নিয়ম প্রয়োগের প্রয়াস পাইবেনা। কাৰ্য্যকারক তখন তাহাকে জিজ্ঞাসা করিবে যে, সে এখন জাগ্রত হইতে ইচ্ছুক কি না? যদি জাগিতে না চায়, তবে কখন জাগিবে? যদি সে দুই-তিন ঘণ্টা বা ততোধিক সময় পরে জাগিবে বলিয়া প্রকাশ করে, তবে সে নিশ্চয় কথিত সময়ে নিজেই জাগিয়া উঠিবে বলিয়া কাৰ্যকারক নিশ্চিন্ত থাকিতে পারে।
মোহিত পাত্র সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতিস্থ না হওয়া পর্যন্ত কাৰ্যকারক তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া যাইবে না; কিম্বা তাহাকে পৰ্ব্ব কথিত কারণে অপর কোন লোক দ্বারা স্পর্শিত হইতেও দিবে না। সে নিজে কোন ব্যক্তি কর্তৃক মোহিত হইলে, উক্তাবস্থায় তাহার নিকট হইতে যেরূপ ব্যবহারের আশা করে, সে তাহার পাত্রের সঙ্গে সৰ্ব্বদা ঠিক সেইরূপ ব্যবহার করিবে। সে পাত্রের সঙ্গে সর্বদা উক্তরূপ ব্যবহার করিলে আর কোনরূপ ভয় বা বিপদের কিছুমাত্র আশঙ্কা থাকিবে না।