পঞ্চম পাঠ
মোহ নিদ্রার বিভিন্ন স্তর
মেস্মেরিক বা মোহ নিদ্রার পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন স্তর বা অবস্থা আছে। কেহ কেহ বলেন উহার স্তর ছয়টি। এই পুস্তকে পাঁচটি স্তরই স্বীকৃত এবং উহাদের লক্ষণ সকল বর্ণিত হইল।
প্রথম স্তর—উদাসীনাবস্থা (Passive Condition), দ্বিতীয় স্তর শারীরিকাবস্থা (Physical Condition), তৃতীয় স্তর—মানসিকাবস্থা (Mental Condition), চতুর্থ স্তর-আধ্যাত্মিক বা আত্মিকাবস্থা (Spiritual or Psychical Condition), এবং পঞ্চম স্তর—উচ্চাবস্থা (Elevated Condition).
(১) উদাসীনাবস্থা :–ইহাই মোহনিদ্রার প্রথম স্তর। সম্মোহনবিদের (mesmerist) উপস্থিতি, হাব-ভাব, কথা-বার্তা বা সরাসরি আদেশ হইতে প্রথমে পাত্রের মনে যে সংস্কার বা ধারণা জন্মে, তাহা হইতেই ইহা উৎপাদিত হইয়া থাকে। পাত্রের মনে পূর্বে কোনরূপ উত্তেজনা, স্নায়বিক দুর্বলতা, রোষ প্রবণতা ইত্যাদি বর্তমান থাকিলে তাহা এই অবস্থায় দমিত হইয়া থাকে। ইহাতে কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ ব্যাপারের সংঘটন হয়না। পরবর্তী স্তর সকল ইহা হইতেই প্রকাশিত হইয়া থাকে।
এই অবস্থায় পাত্রের মনে নিম্নোক্ত ভাব সকল উৎপাদিত হইয়া থাকে। যথা—পূর্ণ মনাযোগ, কাৰ্যকারকের মনের সহিত তাহার মোহ নিদ্রার বিভিন্ন স্তর মনের ঐক্য এবং পরবর্তী স্তরে পৌছিবার আকাঙ্ক্ষা। এই অবস্থায় নিজের শরীর ও মনের উপর তাহার সম্পূর্ণ আধিপত্য এবং চতুঃপার্শ্বস্থ বস্তু, বিষয় বা অবস্থা সম্বন্ধে তাহার পুর্ণ জ্ঞান বর্তমান থাকে।
লক্ষণ–এই স্তরে পাত্রের উপরোক্ত লক্ষণ সকল প্রকাশ পাইয়া থাকে।
(২) শারীরিকাবস্থা:–এই শুরে পাত্রের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের স্পৃহা হ্রাস পায় এবং তাহার শরীর ও মন সম্পূর্ণরূপে স্থির হয়। তাহার উপর নিদ্রা উৎপাদনের প্রণালী প্রযুক্ত হওয়ার পর, যেমন এই অবস্থা গাঢ় হইতে থাকে, সেই সঙ্গে তাহার নড়া-চড়ার ইচ্ছাও অধিকতর রূপে কমিয়া যাইতে থাকে এবং সে ক্রমে মেস্মেরিক শক্তির আয়ত্তাধীন হইয়া পড়ে। যদিও মনোবৃত্তি সমূহের উপর তাহার সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকে, তথাপি তাহার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ক্ষমতা অন্তর্হিত হয়।
এই স্তরে পাত্রের শরীর স্বতঃই সম্মোহনবিদের আকর্ষণী শক্তির বশীভূত হয়। যদিও সে নড়া-চড়া করিতে অক্ষম, তথাপি তাহার চৈতন্য পূর্ণ মাত্রায় সজাগ থাকে। এই অবস্থায় পাস দ্বারা তাহার অঙ্গ প্রত্যঙ্গাদি শক্ত বা শিথিল করিয়া দেওয়া যায়। যে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গাদি সে ইচ্ছা মাত্র নাড়াচাড়া করিতে সমর্থ (যেমন হাত, পা, মুখ, চোখ ইত্যাদি) উহারা কাৰ্যকারকের আয়ত্তাধীন হইয়া থাকে। এই স্তরে সে সকল ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য ব্যাপার ঘটে সেগুলি সম্পূর্ণরূপে শারীরিক বিষয়ের অন্তর্গত। যদিও কাহারও মন আয়ত্ত করা অপেক্ষা স্থূলতঃ এই সকল ব্যাপার জটিল বলিয়া বোধ হয়, তথাপি তাহাকে শারীরিক পরীক্ষা দ্বারা অভিভূত করা সৰ্ব্বাপেক্ষা সহজ। যে সকল ব্যক্তি এই স্তরে বেশ সংবেদনার পরিচয় দেয়, তাহাদের মধ্যেও কেহ কেহ কাৰ্যকারকের যথা সাধ্য চেষ্টা সত্বেও ইহার পরবর্তী স্তরে পৌঁছায়না।
লক্ষণ :—স্বাভাবিক নিদ্রার পূর্ব মুহূর্তে লোকের যেরূপ অবস্থা হয়, এই স্তরের প্রথমে পাত্রের ঠিক সেইরূপ অবস্থা প্রকাশ পাইয়া থাকে। ইহাতে পাত্র উদাসীন থাকে এবং তাহাকে বাহ্যতঃ নিদ্রিত বলিয়া বোধ হইলেও তাহার সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকে এবং সে চতুঃপার্শ্বস্থ বস্তু, বিষয় বা অবস্থা সম্যকরূপে উপলব্ধি করিতে পারে। তাহার চক্ষু বন্ধ বা খোলা থাকিতে পারে; বন্ধ থাকিলে পাতার ভিতরেও উহারা চঞ্চল থাকে। তখন তাহাকে জাগ্রত করিয়া দিলে, যাহা যাহা ঘটিয়াছে তাহা সে সঠিক রূপ বর্ণনা করিতে পারে। এই অবস্থা আর একটু গভীর হইয়াই পাতলা মেস্মেরি নিদ্রায় পরিণত হয়। তখন তাহাকে সম্মোহনবিৎ বা অপর কেহ কোন প্রশ্ন করিলে সে উত্তর দিবার পূর্বে জাগিয়া যায়, (তখনও তাহার চক্ষু বন্ধ বা খোলা থাকিতে পারে) কিম্বা সে উহাতে চমকিয়া উঠিয়া শরীরটি অধিকতর আরাম জনক ভাবে স্থাপন করতঃ পুনরায় ঘুমাইবার চেষ্টা পায়। বোধ হয় ইহাতে তাহার শান্তি ভঙ্গ হয় বলিয়াই যেন সে একটু বিরক্ত হইয়া অনিচ্ছুক ভাবে ও আলস্য জড়িত কণ্ঠে জবাব দিয়া থাকে। ইহা সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন অবস্থা নয়; কেবল অস্পষ্ট চৈতন্য বিদ্যমানতার নির্দেশক মাত্র। যদি এখন তাহার উপর কোন পরীক্ষা করা যায় এবং তাহার ফল উক্তরূপ হয়, তবে ইহা নিশ্চিতরূপে বুঝিতে হইবে যে, তাহার আত্ম সংযমের ক্ষমতা বিদ্যমান রহিয়াছে।
(৩) মানসিকাবস্থা :–এই স্তরে উপনীত পাত্রের যে কেবল সমস্ত শরীর কার্যকারকের বশপন্ন হয়, তাহা নয়, তাহার মনোবৃত্তি সকলও তাহার আয়ত্তাধীন হইয়া থাকে। এই অবস্থায় পাত্রের মন সম্মোহন শক্তি মানিয়া লয় এবং তাহার চৈতন্যও সম্মোহনধিদের সংজ্ঞার বশবর্তী হয়। সম্মোহনবিদের আকাঙ্ক্ষা খুব প্রবল হইলে, সে যাহা চিন্তা করে, পাত্রের মনেও সেই ভাবই উদয় হয়, অধিকন্তু পাত্র ঐ ভাবকে স্বীয় মনের অভিব্যক্তি বলিয়া ধারণা করতঃ তাহা দ্বারাই অপ্রতিহত ভাবে চালিত হইয়া থাকে। এই অবস্থাতেই সম্মোহনবিদের ইচ্ছা বা আদেশে নানারূপ ইন্দ্রিয়গ্রাহ ব্যাপার সংঘটিত হইয়া থাকে।
এই অবস্থা আরও গাঢ় হইলে পর, বাহিরের গোলমাল, শব্দ, স্পর্শ ইত্যাদি আর পাত্রের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করিতে পারে না। যে শক্তি দ্বারা দর্শন, শ্রবণ, আস্বাদন, আম্রাণ ইত্যাদি কাৰ্য্য নিষ্পন্ন হয়, তাহার ক্রিয়া আপাতত স্থগিদ থাকে বলিয়া জ্ঞানেন্দ্রিয়গণের সজ্ঞান কৰ্ম্ম-শক্তি লোপ পায় এবং পাত্ৰ কাৰ্যকারকের উপস্থিতি সম্বন্ধেই সজ্ঞান থাকে। ইহাতে পাত্র এরূপ সংবেদ্য হয় যে, সম্মোহনবিৎ তাহাকে যাহা করিতে আদেশ করে, সে বিনা আপত্তিতে ক্রীড়া পুত্তলীর ন্যায় তাহাই করিয়া থাকে। এখন তাহার স্বেচ্ছাকৃত যাবতীয় কৰ্ম্ম দমিত হইয়া থাকে এবং তাহার কল্পনাকে আদেশ দ্বারা বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করা যায়। এই স্তরে কাৰ্যকারক ইচ্ছামাত্র তাহার মনে যে কোন প্রকার মায়া ও ভ্ৰম সৃষ্টি এবং তাহার বহু প্রকার রোগ আরোগ্য করিতে পারে। সম্মোহন ক্রীড়াতে যে অবস্থায় মোহিত পাত্রগণ মায়া ও ভ্রমের অধীন হয় বর্তমান অবস্থা তাহার সদৃশ।
লক্ষণ :—এই স্তরে পাত্রের আত্ম সংযমের ক্ষমতা যাহা পূৰ্বে বর্তমান ছিল, তাহা লোপ পায় এবং সে ক্রমশঃ সংজ্ঞা হীন হইয়া পড়ে। এখন তাহার চতুঃপার্শ্বস্থ গোলমাল, শব্দ ইত্যাদি সম্বন্ধে কোন জ্ঞান থাকেনা এবং সম্মোহনবিৎ ব্যতীত অপর কেহ কোন প্রশ্ন করিলে সে তাহা গ্রাহ্য করে না। তাহার চক্ষুর চঞ্চলতা দুর হইয়া যায়, এবং উহারা সম্পূর্ণরূপে স্থির ভাব ধারণ করে এবং নিদ্রা গভীরতর হইলে স্পর্শ দ্বারাও আর বিচলিত হয়না। এখন আর কিছুতেই তাহাকে বিচলিত করিতে পারেনা; কিন্তু যদি দৃঢ়তার সহিত পুনঃ পুনঃ গোলমাল করা যায়, তবে সে অস্থির হইয়া উঠিতে পারে; তথাপি তাহার ভাব-গতিকে উপরোক্ত অবস্থাই প্রকাশ পাইয়া থাকে। যদি তাহার হাত বা পা খাপছাড়া ভাবে রাখা যায়, তবে উহা সেই ভাবেই অবস্থিত থাকে। যদি তাহাকে কোন প্রশ্ন করা যায়, তবে সে প্রথম উত্তর দিতে ইতস্ততঃ করে এবং পরে যেন সম্মোহন শক্তি প্রভাবে বাধ্য হইয়াই কতকটা অচৈতন্য ভাবে যা-কিছু একটা উত্তর দেয়; এবং পরক্ষণেই নিদ্রা মগ্ন হইয়া পড়ে। এই অবস্থা গভীরতর হইলে সে কাৰ্য্যকারকের স্বেচ্ছাকৃত প্রশ্ন ব্যতীত অপর কোন প্রশ্নের উত্তর দেয় না। যদি তখন তাহাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করা যায়, তবে সে নিশ্চল ও নিরুত্তর থাকে। কিন্তু উহা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করিলে অস্পষ্টভাবে কয়েকটি দুর্বোধ্য বাক্য উচ্চারণ করিয়া থাকে মাত্র। ইহাতে বোধ হয়, যেন সে এখনও সন্তোষ জনক উত্তর দিবার অবস্থায় উপনীত হয় নাই, সুতরাং কি উত্তর দিবে তাহা স্থির করিয়া উঠিতে পারে নাই। এই লক্ষণটি তাহার গভীরতর মোহ নিদ্রায় পৌছিবার ক্ষমতা সূচক। তৎপরে পাত্রের নিদ্রা আরও গভীর হইলে সে যে অবস্থায় উপনীত হয়, উহাকে কেহ কেহ “অচেতন চৈতন্যাবস্থা (unconscious consciousness) বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। এই অবস্থায় পাত্র স্পষ্টতঃ চৈতন্যের সহিত পরিষ্কাররূপে যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, এবং জাগরণের পর তাহার কিছুই স্মরণ থাকে না। এই স্তরের শেষ সীমায় পৌছিলে পাত্রের শরীর অসার হইয়া যায়, সুতরাং তখন সে কোনরূপ বেদনা বা উত্তেজনা অনুভব করিতে পারে না। যদি তখন তাহার শরীরে কাটা বা সূচ বিদ্ধ করা যায়, কিম্বা চিটি কাটা যায়, অথবা চীৎকার ইত্যাদি করা যায়, তথাপি তাহার একটুও শাস্তি ভঙ্গ হয়না; সে এমন স্থিরভাবে নিদ্রা মগ্ন থাকে যেন কিছুই ঘটে নাই। ইহাই তাহার মানসিক স্তরে উপস্থিতির নিঃসন্দেহ প্রমাণ।
(৪) আধ্যাত্মিক বা আত্মিকাবস্থা:–পূর্বোক্ত মানসিকাবস্থা হইতে নীরব, শান্ত, গভীর বা মোহ নিদ্রাকারে এই অবস্থা প্রকাশ পায়। পূর্ববর্তী স্তরে সম্মোহনবিৎ স্বাধীনভাবে নিজের ইচ্ছামত আদেশ দ্বারা পাত্রকে যে কোন কার্যের জন্য বাধ্য করিতে পারে, কিন্তু এই স্তরে তাহার সেরূপ করার কোন ক্ষমতা থাকে না। এই অবস্থায় পাত্রের লুকায়িত আত্মিক শক্তি ও মনোবৃত্তি সমূহের বিকাশ হয় এবং সে আর পূর্বের ন্যায় কাৰ্যকারকের আদেশ পালনে বাধ্য থাকে না।
এই স্তর উৎপাদনের নিমিত্ত সম্মোহনবিৎ পাত্রের প্রতি সহানুভাবী হইয়া ধীরতা, সহিষ্ণুতা ও অধ্যবসায়ের সহিত উপযুক্ত পরিমাণে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ ও পাস প্রদান পূর্বক তাহাকে সাহায্য করিবে; কখনও জোর জবরদস্তি করিয়া ইহাতে আনিবার চেষ্টা পাইবেনা! তাহা করিলে সে উহাতে সম্পূর্ণরূপে অকৃতকার্য হইবে। সম্মোহনবিৎ এই স্তরের বিকাশ বা বর্ধন সম্পূর্ণরূপে তাহার আত্মিক সংবেদনার উপর ন্যস্ত রাখিয়া, উক্ত ভাব অবলম্বন পূর্বক কথিতরূপে শক্তি ও নিয়ম-প্রণালী প্রয়োগ করিবে, যদি তাহার উপযুক্ত পরিমাণে সংবেদনা থাকে, তবে সে নিশ্চয় এই স্তরে উপনীত হইবে, অন্যথায় হইবে না। সুতরাং সকল পাত্র ইহাতে পৌঁছে না। এই স্তরে উপনীত পাত্রের আত্মিক শক্তি সকল — দিব্যদৃষ্টি, দিব্যশ্রুতি, চিন্তা-পঠন, অন্তর্দষ্টি (intro-vision) পূৰ্ব দৃষ্টি (prevision) ইত্যাদি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিকশিত হইয়া থাকে। এবং পাত্র উহাদের দ্বারা সম্মোহনবিৎকে তাহার চর্চা বা অনুসন্ধানে সিদ্ধির উপযোগী পন্থা। নির্দেশ করতঃ যথেষ্ট সাহায্য করিতে পারে এবং বিশেষ কোন রোগ চিকিৎসার সময়ও, যে প্রণালীতে কাৰ্য্য করিলে তাহা সত্বর নিরাময় হইবে, সে সম্বন্ধেও মূল্যবান উপদেশ দিয়া সহায়তা করিতে পারে।
লক্ষণ :–এই স্তরের লক্ষণ সকল অপেক্ষাকৃত জটিল। তন্মধ্যে প্রধান লক্ষণগুলি এই :
(ক) যখন পাত্র মানসিকাবস্থা হইতে বর্তমান স্তরে পৌঁছে, তখন তাহার মাথা পূর্বের ন্যায় হাঁটুর দিকে ঝুকিয়া না পড়িয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের সহিত উঠা-নামা করিতে থাকে—শ্বাস গ্রহণের সময় উপরের দিকে উঠে, আর শ্বাস ত্যাগের সময় নীচের দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে। তখন তাহার মাংসপেশীগুলির কোন কর্তৃত্ব না থাকাতে তাহার মাথা হঠাৎ বুক বা হাঁটুর উপর পড়িয়া যাইতে পারে। তাহার শ্বাস-প্রশ্বাস যাহা পূর্বে কষ্টের সহিত বহিতেছিল বলিয়া বোধ হইতেছিল, তাহা এখন শান্ত ভাব ধারণ করে।
(খ) পাত্রের শরীর যেন এক রকমের সংকোচন ও প্রসারণের কাৰ্য্য দ্বারা খুব সত্বরতার সহিত সম্পূর্ণ শিথিল ও দৃঢ় হইতে থাকে। উহা যত শীঘ্ৰ শিথিল হয়, তত শীঘ্রই আবার দৃঢ় ভাব ধারণ করে। চক্ষু-গোলক দুইটি উটিয়া গিয়া অদৃশ্য হয় এবং কেবল উহাদের সাদা অংশই দেখা যায়। এই অবস্থায় তাহার চতুঃপার্শ্বস্থ বস্তু, বিষয় বা ঘটনা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ বিস্মৃতি ঘটিয়া থাকে।
(গ) সম্মোহনবিৎ নিজের হাত পাত্রের মুদিত চক্ষুর সামনে আস্তে আস্তে এদিক-ওদিক চালনা করিলে পাত্রের মাথা উহার গতি অনুসরণ করিয়া থাকে। কারণ এখন তাহার আত্মিক ইন্দ্রিয়গণ কার্যোপযোগী ভাবে সজাগ হইয়া উঠে বলিয়া সে, উহাদের সাহায্যে সূক্ষ্মতর উপায়ে বস্তু বা বিষয় সকল উপলব্ধি করিতে সমর্থ হইয়া থাকে। যদি তাহাকে জিজ্ঞাসা করা যায় যে, সে কাৰ্যকারককে দেখিতে পাইতেছে কিনা, তবে সে তাহাতে স্পষ্টরূপে সম্মতি সূচক জবাব দিয়া থাকে। এখন তাহাকে যে কোন প্রশ্ন করিলে সে অনায়াসে উহার উত্তর দিতে পারে।
(৫) উচ্চাবস্থা :–পূর্ববর্তী অবস্থাই গভীরতর হইয়া এই অন্তিম স্তরে পরিণত হয়। এই স্তর কদাচিৎ দৃষ্টি হয়। যে সকল পাত্রের আত্মিক সংবেদন। অত্যন্ত অধিক, তাহাদের মধ্যে যাহারা এই স্তরে পৌঁছিবার আন্তরিক অভিলাষী, তাহাদের কেহ কেহ কদাচিৎ এই শুরে উপনীত হইয়া থাকে। সম্মোহনবিং স্বীয় শক্তি বা কৌশল দ্বারা কখনও কোন পাত্রকে এই স্তরে আনয়ন করিতে পারেন, ইহা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিকশিত হইয়া থাকে। এই স্তর স্ফুরণের নিমিত্ত কাৰ্যকারক পাত্রকে গভীর মোহ নিদ্রায় অভিভূত রাখা ভিন্ন অন্য কিছুই করিতে পারেনা। ইহাতে পাত্রের অভ্যন্তরীণ জাগরণ হয়, এবং তাহার অন্তর্নিহিত আত্মিক শক্তি ও বৃত্তি সমুহ পূর্ণ মাত্রায় স্ফরিত হইয়া অতি উচ্চ শ্রেণীর রহস্যময় নানা প্রকার ইন্দ্রিয়গ্রাহ ব্যাপার সকল সংঘটন করিয়া থাকে।
এই অবস্থা খুব অল্প দৃষ্ট হইলেও এবং ইহার বিকাশ সম্পূর্ণরূপে পাত্রের আত্মিক সংবেদনার উপর ন্যস্ত থাকিলেও কাৰ্যকারক উপযুক্ত পাত্র সংগ্রহ করিতে পারিলে, তাহাকে এই স্তরে পৌছাইবার নিমিত্ত যথা নিয়মে সাহায্য করিতে ক্রটি করিবেনা। যদি তাহার চেষ্টা বিফল হয় কোন ক্ষতি নাই; আর যদি সফল হয়, তবে সে তাহার উপদেশ দ্বারা জীবনে বহু বিষয়ে প্রভূত পরিমাণে উপকৃত হইতে পারিলে, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই।
লক্ষণ :–পূর্বোক্ত স্তরে পাত্রের যে সকল লক্ষণ দৃষ্ট হয়, বর্তমান ক্ষেত্রে সেইগুলিই বর্ধিতাকারে প্রকাশিত হইয়া থাকে। এখন পাত্র যে কোন বিষয়ে অসাধারণ প্রাঞ্জলতার সহিত কথা কহিতে পারে এবং মনের ভাবগুলি অত্যন্ত স্পষ্টরূপে ব্যক্ত করিতে সমর্থ হয়। এই অবস্থায়ই তাহার দিব্যদৃষ্টি, দিব্যশ্রুতি, দিব্যানুভূতি, অন্তদৃষ্টি ইত্যাদি শক্তি সমূহ চরম ৰ্ত্তি লাভ করে এবং তাহার নিকট হইতে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ব্যাপার সকল আশা করা যায়। এখন তাহাকে ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান সম্বন্ধে যে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলে সে যথার্থ উত্তর দিতে পারে এবং নানা বিষয়ের গুহ তত্বাদি প্রকাশ করিতে সমর্থ হইয়া থাকে।