অষ্টম পাঠ
পাত্রের মোহ নিদ্রা উৎপাদন
[ মিঃ র্যাডেলের প্রণালী ]
প্রথম নিয়ম :–যে সকল ব্যক্তি কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষায় উত্তমরূপে অভিভূত হইয়াছে, মেসমেরাইজ, বা মোহনিদ্রা উৎপাদনের জন্য তাহাদের মধ্যে এক জনকে পাত্র মনোনীত করিবে। তজ্জন্য সর্বাগ্রে একটি নীরব ও নির্জন স্থান পছন্দ করিয়া লইবে। যে স্থানে বাহিরের গোলমাল পৌছায় তাহা মোহ নিদ্রা উৎপাদনের কখন ও উপযোগী নয়। স্থান নির্দিষ্ট হইলে মনোনীত পাত্রকে খুব আরামের সহিত একখানা ইজি বা সাধারণ চেয়ারে বসাইবে এবং তাহাকে সাধ্যমত শরীরটি শিথিল করতঃ শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকারে খুব শান্ত ভাব অবলম্বন করিতে বলিবে। সে সম্মোহিত হইবার জন্য অতিশয় ব্যগ্রও হইবে না, কিম্বা আদৌ মোহিত হইবে কি না সে বিষয়েও উদ্বিগ্ন হইবে না। উক্তরূপে পাত্র উদাসীন ভাব প্রাপ্ত হওয়ার পর, তাহার মাথাটি সম্মুখের দিকে একটু নোয়াইয়া রাখিবে (উপবিষ্টাবস্থায় ঘুম পাইলে মাথাটি যেরূপ সামনের দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে, সেরূপ) এবং তাহার হাত দুইখানা দুই হাঁটুর উপর চিৎ ভাবে এবং পা দুইখানা জোড়া করিয়া স্থাপন করিবে। যদি কাৰ্যকারক উপবিষ্টাবস্থায় থাকিয়া তাহাকে নিদ্রিত করিতে ইচ্ছুক হয়, তবে সে পাত্রের সম্মুখে একখানা চেয়ারে বসিয়া নিজের একটি হাঁটু পাত্রের দুই হাঁটুর মধ্যে স্থাপন পূৰ্ব্বক দুই হাত দ্বারা পাত্রের হাত দুইখানা একটু সময় ধরিয়া রাখিবে। তৎপরে হাত দুইখানা ছাড়িয়া দিয়া আকর্ষণী স্পর্শ স্থাপন করিবে এবং বাম হাতখানা পাত্রের দক্ষিণ স্কন্ধের উপর স্থাপিত রাখিবে। তৎপরে সে খুব স্থির ও প্রখর দৃষ্টিতে এক মিনিট বা যে পর্যন্ত তাহার সহিত পাত্রের ঐক্য স্থাপিত হইয়াছে বলিয়া বোধ না করিবে, ততক্ষণ তাহার চোখের দিকে তাকাইয়া থাকিবে। তৎপরে পাত্রকে চক্ষু বন্ধ করিতে বলিবে এবং আকর্ষণী স্পর্শ অপসারিত করিবে। এখন পাত্রের মাথা হইতে আরম্ভ করিয়া পা পর্যন্ত স্পর্শহীন নিম্নগামী পাস দিবে। এক এক মিনিটে ৪৫টি হিসাবে পাস দিবে। বলা বাহুল্য যে, প্রত্যেক পাসের শেষে ও প্রারম্ভে পূৰ্ব্ব কথিত প্রণালীতে হাত দুইখানা ঝাড়িয়া ফেলিবে। খুব সতর্ক ভাবে এইরূপে ১২১৩টি পাস দেওয়ার পর কিম্বা যখন ক্লান্তি বোধ হইবে, তখন পৰ্যায়ক্রমে উপশম ও দীর্ঘ পাস প্রদান করিবে, অর্থাৎ একটি উপশম পাস দিয়া পরে একটি দীর্ঘ পাস এবং তৎপরে আবার উপশম ও দীর্ঘ পাস দিবে। এরূপ করিতে করিতে যখন তাহার তার লক্ষণ প্রকাশ পাইবে, তখন তাহার মুখমণ্ডলের উপর ক্ষুদ্র বা স্থানীয় পাস দিবে।
উক্তরূপে মিনিট দশেক পাস দিবার পর, যখন দেখিতে পাইবে যে, পাত্রের মাথা ক্রমেই অধিকতররূপে সামনের দিকে ঝুকিয়া পড়িতেছে এবং উহাদের আর পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তনের ভাব প্রকাশ পাইতেছে না, তখন তাহা মোহ নিদ্রার প্রাথমিক লক্ষণ বলিয়া মনে করিবে এবং তখন অধিক উৎসাহের সহিত কাৰ্য্য করিতে থাকিবে। যে পর্যন্ত তাহার মাথা প্রায় হাঁটুর উপর ঝুকিয়া না পড়িবে, ততক্ষণ উক্ত প্রণালীর অনুসরণ করিতে থাকিবে। মাঝে মাঝে দীর্ঘ পাস দ্বারা পাত্রের সমস্ত শরীরে আকর্ষণী শক্তি বণ্টন করিয়া দিলে, নিদ্রার লক্ষণগুলি তাড়াতাড়ি প্রকাশ পাইবে। যখন তাহার মাথা উত্তাবস্থায় আসিয়া পৌছিয়াছে, তখন তাহার ঘাড়ের গ্রন্থিতে আস্তে আস্তে ফু দিবে এবং মাথার পশ্চাদ্ভাগ হইতে আরম্ভ করিয়া মেরুদণ্ডের উপর দিয়া উহার শেষ সীমা পর্যন্ত পাস দ্বারা উক্ত শক্তি সঞ্চালন করিয়া দিলে সে শীঘ্র নিদ্রাচ্ছন্ন হইয়া পড়িবে।
এই অবস্থায় উপনীত পাত্রকে মোহ নিদ্রায় নিদ্রিত বলিয়া মনে করা যাইতে পারে। অবশ্য এই নিদ্রা লঘু বা গভীর উভয় রূপই হইতে পারে। উহা কিরূপ গভীর হইয়াছে, তাহা পরীক্ষা দ্বারা স্থির করিয়া লইবে। কোন নিদ্রিত ব্যক্তিকে জাগাইতে যেমন প্রথম তাহাকে আস্তে আস্তে নাড়িয়া পরে জোরে ধাক্কা দিতে হয়, তাহাকেও ঠিক সেইরূপ করিবে। যদি উহাতে সে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে এবং তাহার ঘুম না ভাঙ্গে, তবে তাহার গভীর মেস্মেরিক বা মোহ নিদ্রা হইয়াছে বলিয়া উপলব্ধি করিবে।
একজন লোককে সম্পূর্ণরূপে মোহনিদ্রাচ্ছন্ন করিতে যে সময় লাগে তাহা সম্পূর্ণরূপে তাহার সংবেদনার উপর নির্ভর করে। তবে অধিকাংশ হলে ২০ মিনিট সময়ই যথেষ্ট; কোন কোন ক্ষেত্রে তদপেক্ষা অল্প সময়েও পাত্রকে মোহ নিদ্রায় অভিভূত করা যায়। যদি এই সময়ের মধ্যে কোন পাত্র মোহিত না হয়, তবে আর সে দিন তাহার উপর অধিক চেষ্টা করিবেনা; পরে যত শীঘ্র সম্ভব তাহাকে এই নিয়মে পুনৰ্ব্বার নিদ্রিত করিবার চেষ্টা পাইবে।
এই নিয়ম বা অপর কোন প্রণালী দ্বারা কোন পাত্র একবার মোহিত হইলে পরবর্তী বৈঠকগুলি (sittings) মোহ নিদ্রার গভীরতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইয়া থাকে। একবার যে পাত্র মোহ নিদ্রায় অভিভূত হয়, পরে তাহাকে সম্মোহিত করিতে কোন কষ্টই বোধ হয় না। তখন কেবল ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ ও কয়েকটি পাস দিলেই সে মোহিত হইয়া থাকে।
দ্বিতীয় নিয়ম
[ মিঃ র্যাডেলের প্রণালী ]
যে ব্যক্তি পূর্বোক্ত শারীরিক পরীক্ষায় অভিভূত হইয়াছে, তাহাকে পাত্র মনোনীত করিয়া সম্মুখে দাঁড় করাইবে। সে এই অবস্থায় তাহার শরীরটি যথাসম্ভব শিথিল করতঃ সম্মোহনবিদের কাৰ্য্য প্রণালীতে সম্পূর্ণরূপে আত্ম সমর্পণ করিবে। কাৰ্যকারক এখন পাত্রের মাথা ও কঁাধ দুইটি একটু সামনের দিকে নোয়াইয়া রাখিবে এবং তাহার হাত দুইখানা শিথিলভাবে তাহার দুই পার্শ্বে (কতকটা সামনের দিকে আনিয়া) স্থাপন করিবে। তাহাকে এই ভাবে দাঁড় করাইলে তাহার মাংসপেশী গুলির কাঠিন্য দূর হইবে এবং সে উদাসীন ভাব প্রাপ্ত হইবে। এখন কাৰ্যকারক নিজের দক্ষিণ হাত পাত্রের পিঠের মধ্যস্থলে রাখিয়া এবং বাম হাত দ্বারা আগাভাবে পাত্রের নাসিকা-মূল আবৃত করিয়া ঐ হাতের অপরাংশ তাহার কপালের উপর স্থাপন করিবে। পাত্রের দুই পায়ের পাতা জোড়া হইয়া থাকিবে, আর কাৰ্যকারক নিজের বাম পায়ের পাতা (উহাদের সম্মুখে লইয়া গিয়া) উহাদের সহিত এবং তাহার বাম হাঁটু পায়ের হাঁটুদ্বয়ের সহিত স্পর্শযুক্তভাবে স্থাপন করিয়া রাখিবে। ইহার উদ্দেশ্য এই যে, সে পাত্রের সহিত সকল প্রকার সম্ভবনীয় উপায়ে স্পর্শযুক্তভাবে অবস্থান করিবে। এই অবস্থায় কয়েক মিনিট অবস্থান করণান্তর ডান হাত দ্বারা পাত্রের ঘাড়ের গ্রন্থি হইতে আরম্ভ করিয়া পিঠের উপর দিয়া মেরুদণ্ডের শেষ সীমা পর্যন্ত স্পর্শহীন ভাবে ক্ষুদ্র বা স্থানীয় পাস দিবে এবং বাম হাত দ্বারা মাঝে মাঝে তাহার কপাল, চক্ষু ও গাল অর্থাৎ মুখমণ্ডলের উপর এক একটি পাস দিবে। তারপর হাঁটুর স্পর্শ অপসারিত করিয়া তাহার মস্তকের পশ্চাদ্ধের নিম্ন হইতে আরম্ভ করিয়া মেরুদণ্ডের শেষ সীমা পর্যন্ত একটি নিঃশ্বাস ফেলিবে।
যে পৰ্য্যন্ত পাত্রের চক্ষুর পাতা আংশিক ভাবে অবনত বা বন্ধ হইয়া তাহার শরীরে ঈষৎ কম্পন আরম্ভ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কাৰ্যকারক উক্ত প্রণালী প্রয়োগ করিতে থাকিবে। তৎপরে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা আকর্ষণী স্পর্শ স্থাপন পূৰ্ব্বক “ঘুম” বলিয়া তাহাকে চোখ বুজিতে আদেশ করিবে। যে পর্যন্ত তাহার শরীরে উক্ত কম্পন বর্ধিত না হয়, এবং তাহার ফলে সে সমতা হারাইয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে অসমর্থ না হয়, ততক্ষণ তাহাকে পুনরায় পাস দিতে থাকিবে। এই নিয়মটি প্রয়োগ করিবার সময় কাৰ্য্যকারক অত্যন্ত সতর্ক থাকিবে যে, যদি পাত্রের পিছনের দিকে পড়িয়া যাইবার উপক্রম হয়, তবে সে তৎক্ষণাৎ তাহাকে দৃঢ়রূপে ধরিয়া রাখিবে। তখন সে নিজের হাত দুইখানা পাত্রের পিঠের উপর স্থাপন করিলে সে স্থির হইবে। তৎপরে তাহার পিঠের উপর দুই হাত দ্বারা পুনরায় পাস দিবে এবং তৎসঙ্গে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করিবে যে, পাত্র তাহার হাতের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া পিছনের দিকে পড়িয়া যাউক। এরূপ করিলে সে গভীর মোহ নিদ্রায় অভিভূত হইয়া সম্মোহনবিদের বাহুর উপর পড়িয়া যাইবে।
কাৰ্যকারক এখন তাহাকে ঘরের মেঝেতে বা বিছানার উপর চিৎভাবে শোওয়াইবে। তৎপরে তাহার শরীরের উপর দীর্ঘ পাস দিবে এবং মাঝে মাঝে দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা তাহার নাসা-মূল চাপিয়া ধরিয়া “ঘুমাও”, “খুব ঘুমাও” ইত্যাদি বলিবে। ইহাতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাহার নিদ্রা খুব গভীর হইবে। পরে পরীক্ষা দ্বারা তাহার নিদ্রার গভীরতা স্থির করিয়া লইবে।
যদি এই নিদ্রা পূর্ণ হয়, তবে পাত্র সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞান হইয়া পড়িবে এবং সে কাৰ্যকারকের ইচ্ছাশক্তির অধীন হইয়া থাকিবে। কেহ কেহ ইহা জিজ্ঞাসা করিতে পারে যে, সে কতক্ষণ এই অবস্থায় থাকিকে? তদুত্তরে বলা যাইতে পারে, যদি তাহাকে এই অবস্থায় ফেলিয়া রাখা যায় এবং কোন তৃতীয় ব্যক্তি কোনরূপে তাহার শান্তি ভঙ্গ না করে, তবে সে দুই হইতে আট ঘণ্টার মধ্যে, অথবা রাত্রিতে সে যতক্ষণ ঘুমায়, ততক্ষণ পরে স্বতঃই জাগ্রত হইয়া উঠিবে।
তৃতীয় নিয়ম
[ মিঃ র্যাডেলের প্রণালী ]
এক সময়ে একাধিক ব্যক্তিকে মোহ নিদ্রায় নিদ্রিত অর্থাৎ মে মেরাইজ করিতে এই প্রণালীটি বিশেষ কার্যকর হইবে। পাত্রদিগকে এক শ্রেণীতে সারিবদ্ধ ভাবে চেয়ারে বসাইবে এবং সেই চেয়ারগুলির সম্মুখে ও পশ্চাতে এরূপ স্থান রাখিবে, যেন সুবিধাজনকভাবে তাহাদিগকে পাস দেওয়া যায়। প্রত্যেক পাত্র তাহার পার্শ্বস্থ অপর ব্যক্তির সহিত হাঁটু দ্বারা স্পর্শযুক্তভাবে অবস্থান করিবে; ইহাতে তাহাদের আকর্ষণী শক্তি পাত্রের মোহ নিদ্রা উৎপাদন সমতা প্রাপ্ত হইয়া সম্পূর্ণ একটা জিনিষের মত হইবে। তাহাদের মাথাগুলি সামনের দিকে নোয়াইয়া রাখিবে এবং হাতগুলি তাহাদের হাঁটুর উপর স্থাপন করিবে। যখন সমস্ত ঠিক হইয়াছে এবং স্থানটি খুব নীরব হইয়াছে, তখন তাহাদিগকে স্থির দৃষ্টিতে মনোযোগের সহিত স্বীয় স্বীয় নাসিকার অগ্রভাগের প্রতি তাকাইয়া থাকিতে বলিবে। সম্মোহনবিৎ তাহাদিগকে সেই সময়ে বুঝাইয়া বলিবে যে, যখন তাহাদের চোখ বুজিবার ইচ্ছা হইবে, তখন যেন তাহারা বল পূৰ্ব্বক উহাদিগকে খোলা রাখিবার চেষ্টা না পাইয়া, তৎক্ষণাৎ বন্ধ করিয়া ফেলে। এখন তাহাদের সম্মুখ দিয়া বরাবর চলিয়া যাইবে এবং তাহাদের প্রত্যেককে, মাথা হইতে আরম্ভ করিয়া হাঁটু পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে উপশম পাস দিবে এবং পশ্চাদ্দিকে যাইয়া মাথার পিছন দিক হইতে আরম্ভ করিয়া পিঠের উপর দিয়া মেরুদণ্ডের শেষ সীমা পর্যন্ত পাস দিবে। একবার কি দুইবার এরূপ করিবে এবং মাঝে মাঝে তাহাদের প্রত্যেকের নাসা-মূলে আকর্ষণী স্পর্শ সংযোগ করিবে।
উক্তরূপে পাস দিবার সময় তাহাদের মাথা সামনের দিকে আরও বেশী মুইয়া পড়ে কি না, কাৰ্যকারক সেই দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখিবে। তাহাদের মধ্যে যাহার এরূপ ভাব দৃষ্ট হইবে, কাৰ্যকারক তাহার নিকট যাইয়া ডান হাতে বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা তাহার নাসা-মূলে আকর্ষণী স্পর্শ স্থাপন পূৰ্ব্বক অপর আঙ্গুলগুলি তাহার মাথার উপর রাখিবে। সে উক্ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মোলায়েমভাবে অথচ দৃঢ়তার সহিত নাসা-মূলের নীচের দিকে চাপ দিবে এবং তাহাকে চোখ বুজিতে আদেশ করিবে। তৎপরে আরও একটি দৃঢ় চাপ দিয়া বলিবে, “ঘুমাও” এবং সেই সময় তাহার মাথা উঠাইয়া চেয়ারের হেলান দিবার কাষ্ঠ খণ্ডের উপর স্থাপন করিবে এবং ডান হাতের আঙ্গুলগুলি যাহা তাহার মাথার উপর স্থাপিত ছিল, উহাদিগকে অপসারিত করিয়া তাহার মুখমণ্ডলের উপর ক্ষুদ্র পাস দিবে। বলা বাহুল্য যে, তথন উক্ত আকর্ষণী স্পর্শ অপসৃত হইবে।
সকল পাত্রের উপরই এই প্রণালী প্রয়োগ করিবে, তবে তাহাদের মধ্যে যাহারা অধিক সংবেদ্য অগ্রে তাহাদিগকেই মনোনীত করতঃ ইহা প্রয়োগ করিবে। যাহাদের কেবল চক্ষু বন্ধ ও ঘুমের ভাব হইবে, তাহাদের উপর আরও কতকগুলি পরীক্ষা করিবার জন্য তাহাদিগকে রাখিয়া অবশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি হয় উপেক্ষা প্রদর্শন করিবে, অথবা তাহাদিগকে চলিয়া যাইতে বলিবে। তৎপরে যাহারা সংবেদ্য বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে, তাহাদিগকে আরও গভীররূপে নিদ্রিত করিতে প্রয়াস পাইবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা এক এক করিয়া গভীর নিদ্রায় অভিভূত না হয়, ততক্ষণ তাহাদের উপর দৃঢ় সংকল্পের সহিত তাড়াতাড়ি বা সতেজভাবে পাস দিতে থাকিবে। তৎপরে সম্মোহনবিৎ প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়মোক্ত পরীক্ষা পাত্রের শরীরের শিথিল বা আগা ভাব অথবা চতুঃপার্শ্বস্থ বস্তু, বিষয় বা ঘটনা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অচৈতন্য ভাব দ্বারা উক্ত নিদ্রার গভীরতার পরিমাণ উপলব্ধি করিতে সমর্থ হইবে।
চতুর্থ নিয়ম
(কাপ্তান জেমেসএর প্রণালী)
সম্মোহনবিৎ পাত্রকে খুব আরামের সহিত একখানা ইজি চেয়ারে বসাইবে বা বিছানায় শোওয়াইবে। এখন সে পাত্রের সম্মুখে দাঁড়াইয়া বা বসিয়া দুই হাতের আঙ্গুলগুলি প্রসারণ করতঃ পাত্রের মাথার উপর স্থাপন করিবে। তৎপরে সে পাত্রের মাথার উপর হইতে আরম্ভ করিয়া শরীরের উপর দিয়া পা পর্যন্ত স্পর্শহীন দীর্ঘ পাস দিবে। এইরূপ কতকগুলি পাস দেওয়ার পর, হাতের আঙ্গুলগুলির অগ্রভাগ দ্বারা পাত্রের চক্ষু দুইটি লক্ষ্য করিবে (যেন সে, আঙ্গুলগুলি দ্বারা চোখ দুইটিকে খোঁচা দিবে, এরূপ ভাবে উহাদের মাথা চোখের সামনে ধরিয়া রাখিবে)। অনেক ক্ষেত্রে পাস অপেক্ষা ইহার কার্যকরী শক্তি অধিক হইয়া থাকে। প্রথম বৈঠকে ২০ মিনিট কাল এই সম্পূর্ণ প্রণালীটি প্রয়োগ করিলে পাত্রের সংবেদনানুসারে ইহা অল্পাধিক পরিমাণে ফলোৎপদান করিবে বলিয়া আশা করা যায়।
যদি সম্মোহনবিৎ এরূপ বোধ করে যে, পাত্রের ঘুমের ভাব হইয়াছে, তবে সে তাহার চক্ষু বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাহাকে উক্তরূপে পাস দিবে; আর যদি তাহার চোখের পাতার কম্পন দৃষ্ট হয়, তবে তাহার চেষ্টা নিশ্চয় সফল হইবে বলিয়া বুবিাবে।
কখন কখন পাত্রের কপালের উপর আস্তে আস্তে ফু দিলে কিম্বা একখানা হাত স্থাপন করিয়া রাখিলে নিদ্রা গাঢ় হইয়া থাকে। কিন্তু অপরিপক্ক কাৰ্য্যকারক পাত্রের মাথা বা হৃদ্যন্ত্রের উপর আকর্ষণী শক্তি একাগ্ৰীভূত না করিয়া পাস দ্বারাই তাহাকে নিদ্রিত করিতে চেষ্টা পাইবে। যদি ২০ মিনিটের মধ্যে তাহার নিদ্রার কোন লক্ষণ প্রকাশ
পায়, তবে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিবে যে, এই সম্পূর্ণ প্রণালীটি প্রয়োগ করিবার সময় সে, বিশেষ রকমের কোন অনুভূতি বোধ করিয়াছে কিনা? যদি বোধ করিয়া থাকে, তবে কি উহা পাসের সময়ই অধিকতররূপে অনুভূত হইয়াছে?—না আঙ্গুল গুলিকে চোখের উপর বা সম্মুখে ধরিয়া রাখার সময় তাহা হইয়াছে? এই প্রশ্ন দ্বারা সম্মোহনবিৎ তাহাকে নিদ্রিত করিবার সর্বোৎকৃষ্ট প্রণালী অবগত হইতে পারিবে। যদি সে প্রথম বা পরবর্তী কয়েকটি বৈঠকে ও বিশেষ আশাজনক কোন ফল উৎপাদন করিতে না পারে, তথাপি নিরাশ হইবে না। মোহ নিদ্রা উৎপাদন
করিয়াও বেদনা দূরীভূত, রোগ আরোগ্য বা সমধিক পরিমাণে প্রশমিত করা যায়। অনেক পাত্র যাহারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ পর্যন্ত কাৰ্যকারকের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও মোহিত হয় নাই, শেষে তাহারা গভীর মেস্মেরি নিদ্রায় অভিভূত হইয়া থাকে।
পঞ্চম নিয়ম
[ মিঃ জেমস্ কৌটস্ এর প্রণালী ]
পাত্রকে খুব আরামের সহিত একখানা চেয়ারে বসাইয়া সম্মোহনবিৎ তাহার সম্মুখে বা পাশে বসিবে বা দাঁড়াইবে। পাত্র তাহার চতুঃপার্শ্বস্থ বস্তু, বিষয় বা ব্যাপারের প্রতি উদাসীন থাকিয়া কাৰ্য্যকারকের নিকট আত্মসমর্পণ করিবে। সে চক্ষু বন্ধ না রাখিতে পারে, কিম্বা কাৰ্যকারকের চোখের দিকে তাকাইয়া থাকিতে পারে। সম্মোহনবিৎ পূৰ্বে তাহাকে বলিয়া রাখিবে যে, যদি তাহার অবসন্নতা, দৃষ্টি ক্ষীণতা, স্নায়বিক দুর্বলতা, ঘুমের ভাব ইত্যদি অনুভূত হয়, তবে যেন সে তাহা রোধ করিবার চেষ্টা না পাইয়া সেই ভাবেই থাকে।
তৎপরে সম্মোহনবিং সহজভাবে ও আরামের সহিত পাত্রের হাত দুইখানা ৫৭ মিনিটের জন্য ধরিয়া থাকিবে। পাত্র ইচ্ছা করিলে তাহার হাত দুইখানা নিজের হাঁটুদ্বয়ের উপরও রাখিতে পারে এবং কাৰ্যকারক নিজের হাত দুইখান। পাত্রের হাত দুইখানার উপর অল্প জোরে চাপ দিয়াও স্থাপন করিতে পারে। যে পর্যন্ত তাহাদের উভয়ের হাতের মধ্যে উত্তাপের স্পষ্টতঃ কোন প্রভেদ অনুভূত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাহারা উক্তরূপ স্পর্শ যুক্ত ভাবে অবস্থান করিবে। সম্মোহনবিৎ এখন পাত্রের নাসিকা-মূলে স্থির ও সতেজ দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক, পাত্র মোহিত হউক এরূপ চিন্তা করিয়া ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করিতে থাকিবে। তৎপরে সে পাত্রের হাতের উপর হইতে নিজের হাত দুইখানা আন্তে সরাইয়া লইয়া উহাদিগকে পাত্রের মাথার উপর ২৩ মিনিটের জন্য এমন ভাবে স্থাপন করিবে যেন, দক্ষিণ ও বাম তালুর গভীর স্থান দ্বয় যথাক্রমে পাত্রের কপালের বাম ও দক্ষিণ পার্শ্ব দ্বয় আবৃত করে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলগুলি মাথার বাম ও দক্ষিণ পার্শ্বে নিপতিত হয় এবং বৃদ্ধাঙ্গুল দুইটি নাসিকা মূলে স্থাপিত হয়। কাৰ্য্যকারক পাত্রের কপালের উভয় পার্শ্বে হাত দ্বারা আস্তে আস্তে চাপ দিলে ঐ স্থানের ধমণীর ভিতয় দিয়া যে রক্ত মাথার দিকে সঞ্চালিত হয়, তাহা বাধা প্রাপ্ত হইয়া থাকে। এখন সম্মোহনবিৎ পাত্রের মস্তিষ্ক আরও বেশী পরিমাণে মেস্মেরিক শক্তি দ্বারা আক্রান্ত করিবার জন্য তাহার সমস্ত মাথার চারিপার্শে উপরের দিক হইতে আরম্ভ করিয়া নীচের দিকে) পাস দিবে। কাৰ্যকারক আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা তাহার চক্ষু ও কপালের দুই পাশ্ব লক্ষ্য করিয়া ধরিলে সে উক্ত শক্তি দ্বারা শীঘ্র আক্রান্ত হইয়া থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাহার চোখের পাতাগুলির কম্পন আরম্ভ না হয়, কিম্বা উহারা ভারী বা বন্ধ হইয়া না যায়, ততক্ষণ ঐ পাস ও আঙ্গুলগুলির দ্বারা উক্তরূপে আকর্ষণী শক্তি চালনা করিবে। কোন কোন ক্ষেত্রে পাত্ৰকে চক্ষু বুজিতে বলিয়া নিয় গামী পাস দ্বারা উহাদিগকে বন্ধ করিয়া দিলে, শীঘ্র ফল লাভ হয়। কাৰ্যকারক এই নিয়মগুলি সৰ্ব্বত্র ধীরভাবে প্রয়োগ করিবে, কখনও তাড়াতাড়ি করিবে না। যখন পাত্রের উক্ত লক্ষণ সকল প্রকাশ পাইয়াছে, তখন সম্মোহনবিৎ উভয় হাতের আঙ্গুলগুলি প্রসারণ করতঃ তাহার মাথা হইতে আরম্ভ করিয়া উভয় বাহুর ভিতর ও বাহিরের দিকের উপর দিয়া আঙ্গুল পর্যন্ত এবং তৎপর আবার কপাল হইতে আরম্ভ করিয়া নীচের দিকে পাকস্থলীর মুল ও হাঁটু পর্যন্ত, আস্তে আস্তে স্পর্শহীন স্থানীয় ও দীর্ঘ পাস দিবে। পাত্র বাহতঃ নিদ্রাভিভূত না হওয়া পর্যন্ত উত্তমরূপ পাস দিতে থাকিবে।
যদি সম্মোহনবিৎ প্রথম চেষ্টাতে কৃতকাৰ্য্য না হয়, তবে সে উপযুপরি কয়েকদিন তাহার উপর চেষ্টা করিবে এবং পরবর্তী চেষ্টা গুলি এমন ভাবে করিবে, যেন সে পূৰ্বে কখনও অকৃভকাৰ্য্য হয় নাই। সে একবার কাহাকে ও মোহিত করিতে পারিলেই তাহার শক্তি বৃদ্ধি পাইবে এবং ক্রমে ক্রমে সে অধিক সংখ্যক লোক মোহিত করিতে সমর্থ হইবে। সে পাত্রের নিদ্রার সন্তোষজনক প্রমাণ পাওয়ার, তৃতীয় বৈঠক পৰ্যন্ত তাহার উপর কোন পরীক্ষা করিবে না। প্রত্যেক বৈঠকে তাহাকে কিছুক্ষণ নিদ্রা উপভোগ করিতে দিয়া, আস্তে আস্তে জাগ্রত করিয়া দিবে; কখনও এই বিষম্বে তাড়াতাড়ি করিবে না। কারণ তাহা করিলে, সে হয়ত একটি উত্তম পাত্রকে চিরকালের জন্য নষ্ট করিয়া ফেলিতে পারে। সে পাত্রের সম্মুখে বা পশ্চাতে দাঁড়াইয়া তাহার মুখ মণ্ডলের সানে প্রথম আস্তে আস্তে, পরে তাড়াতাড়ি স্পর্শহীন উর্ধগামী পাস এবং তাহার কপালের উপর আস্তে আস্ত ফু দিলে পাত্র, এই সুনিদ্রা উপভোগ দ্বারা খুব বিস্ময়াবিষ্ট ও উপকৃত হইয়া জাগিয়া উঠিবে।
ষষ্ঠ নিয়ম
(মিঃ কলকুহন্ এর প্রণালী)
একটি বিশেষ প্রণালীতে হস্তসঞ্চালন (manipulation) দ্বারা আকর্ষণী শক্তির চিকিৎসা (magnetic treatment) সম্পন্ন হইয়া থাকে। ইহার ব্যবহারিক প্রণালী এই—উভয় হাতের তালু ও আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা রোগীর শরীরের এক দিক হইতে অপর দিকে অল্প জোর পুনঃ পুনঃ আঘাত করিতে হয়। ইহা রোগীর মাথায় উপর হইতে আরম্ভ করতঃ ক্রমাগত উহার পুনরাবৃত্তি করিতে করিতে পা পর্যন্ত লইয়া আসিতে হয়। একবার এইরূপ করা হইলে পর, হাতখানাকে রোগীর দুই পার্শ্বের বাহিরে একবার ঝাড়িয়া ফেলিয়া পুনৰ্বার উহাদিগকে মাথার উপর লইয়া গিয় স্থাপন করিবে; কিন্তু তাহা করিতে উভয় হাতের তালু বাহিরের দিকে ও হাতের পিঠ রোগীর দিকে রাখিয়া, তাহার দুই পার্শ্বের। বাহির দিয়া অর্ধ বৃত্তাকারে হাত দুই খানাকে উপরের দিকে লইয়া যাইতে হইবে; অন্যথায় পূর্ব প্রদত্ত আঘাতের ক্রিয়া নষ্ট হইয়া যাইবে। ইহার বিপরীত ভাবে অর্থাৎ পা হইতে মাথা পর্যন্ত উক্তরূপে আঘাত করিলে যে, উহা কেবল নিম্নগামী আঘাতের ক্রিয়া নষ্ট করে তাহা নয়, বিশেষ ভাবে উদ্দীগনীয় বা রোষ প্রবণ পাত্রদিগের ক্ষেত্রে ইহা প্রতিরোধক বা হানিজনক ভাবে কাৰ্য্য করিয়া থাকে। যদি আমরা হাতের পিঠ দ্বারা পাস বা আঘাত করিতে চেষ্টা পাই, তবে সম্ভবতঃ ইহা রোগী বা পাত্রের শরীরে কোন ফলই উৎপাদন করিবে না।
যদি ইহা রোগীর শরীর স্পর্শ করিয়া দেওয়া যায়, তবে উহাকে “স্পর্শ যুক্ত হস্ত সঞ্চালন” আর স্পর্শহীন ভাবে করিলে উহাকে “স্পর্শহীন হস্ত-সঞ্চালন” বলে। স্পর্শযুক্ত পাস আবার দুই প্রকার। যথা—জোর আঘাত ও মৃদু আঘাত। কঠিন স্পর্শযুক্ত হস্ত সঞ্চালন নিশ্চয়ই খুব প্রাচীন এবং অত্যন্ত সাৰ্বজনীনভাবে ব্যবহৃত প্রণালী।
আমার অভিজ্ঞতায় ইহা উপলব্ধি হইয়াছে যে, স্পর্শহীন ও মৃদু স্পর্শযুক্ত হস্ত সঞ্চালন দ্বারাই সর্বোৎকৃষ্ট ফল লাভ হইয়া থাকে। উত্তম শ্রেণীর পাত্র এবং সংবেদ্য রোগীদিগকে অন্য কোন প্রকার চিকিৎসা করিলে, তাহাদের স্নায়বিক ও মস্তিষ্কের উত্তেজনা অন্যায়রূপে উদ্রেক করিয়া থাকে। সুতরাং যদি পাসের উদ্দেশ্য নিদ্রাকর্ষণ, বেদনা উপশম ও রোগ আরোগ্য হয়, তবে ইহা অবশ্য পরিত্যাগ করিবে।
সপ্তম নিয়ম
[ মিঃ ডিলুজ এর প্রণালী ]
পাত্রকে একখানা চেয়ারে যথা সম্ভব আরামের সহিত বসাইয়া সম্মোহনবিৎ তাহার সম্মুখে মুখামুখি হইয়া অপেক্ষাকৃত আর একখানা উচ্চ চেয়ারে এমন ভাবে বসিবে যেন, তাহার হাঁটুদ্বয় কাৰ্যকারকের হাঁটু দুইটির মধ্যে এবং কাৰ্যকারকের পায়ের পাতা দুইটি পাত্রের দুই পায়ের পাতার মধ্যে স্থাপিত হয়। এখন পাত্র সম্মোহনবিদের নিকট আত্মসমর্পণ করতঃ চিন্তাশূন্য মনে অবস্থান করিবে। পাত্র নিজের শরীরে আকর্ষণী শক্তির ক্রিয়া পরীক্ষা করিতে উদগ্রীব হইয়া মন বিক্ষিপ্ত করিবেনা এবং ভয় পরিত্যাগ করিয়া মোহিত হইবার জন্য আশান্বিত ভাবে অবস্থান করিবে এবং যদি আকর্ষণী শক্তি প্রয়োগের ফলে তাহার শরীরে ক্ষণিকের জন্য বেদনা জন্মায়, তথাপি সে নিরুৎসাহ বা উদ্বিগ্ন হইবেনা। এরূপে সমস্ত ঠিক হইয়া গেলে, কাৰ্যকারক পাত্রের বাম ও দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলি দুইটি যথাক্রমে নিজের দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলি ও অনামিকার মধ্যে। এবং পাত্রের দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলি নিজের বাম বৃদ্ধাঙ্গুলিও অনামিকার-মধ্যমার মধ্যে এমন ভাবে স্থাপন করিবে, যেন তাহার বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয়ের ভিতরের দিক পাত্রের বৃদ্ধাঙ্গুলি দুইটির ভিতরের দিকের সঙ্গে সংলগ্ন থাকে। তৎপরে সে পাত্রের নাসা-মূলে স্থির ও প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করিবে। কাৰ্যকারক এইরূপ স্পর্শযুক্ত অবস্থায় দুই হইতে পাঁচ মিনিট বা যতক্ষণ পর্যন্ত তাহাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দুইটিতে সমান উত্তাপ অনুভূত না হইবে, ততক্ষণ উক্তাবস্থায় অবস্থান করিবে। তৎপরে কাৰ্যকারক পাত্রের বৃদ্ধাঙ্গুলি দুইটি ছাড়িয়া দিয়া নিজের দক্ষিণ ও বাম হাতের কৰ্জী দুইটি এমন ভাবে ঘুরাইবে, যেন তাহাদের ভিতরের দিক বাহিরের দিকে প্রকাশ পায়। পরে সে, এই হাত দুইখানা পাত্রের মাথা অপেক্ষাও কিঞ্চিৎ উচ্চে উত্তোলন করিয়া পরে উহাদিগকে তাহার কাপের উপর এক মিনিটের জন্য স্থাপন করিবে। এখন উহাদের দ্বারা এই স্থান হইতে পাস আরম্ভ করিয়া স্পর্শযুক্তভাবে বাহুর উপর দিয়া আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত আনিয়া শেষ করিবে (বলা বাহুল্য যে, কাৰ্য্যকারকের দক্ষিণ ও বাম হাত যথাক্রমে পাত্রের বাম ও দক্ষিণ স্কন্ধের উপর স্থাপিত হইবে, সুতরাং কাৰ্যকারককে ডান হাত দ্বারা পাত্রের বাম হাতের এবং বাম হাত দ্বারা পাত্রের ডান হাতের উপর স্পর্শযুক্ত পাস করিতে হইবে)। এইরূপে ৫৬টি পাস দিবে এবং প্রতিবারেই পাস শেষ হওয়ার পর, হাত দুইখানা উহাদের নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপনের জন্য আনিতে পূৰ্ব্ব কথিতরূপে পাত্রের শরীরের দুই পার্শ্বের বাহির দিয়া লইয়া যাইতে হইবে। তৎপরে সম্মোহনবিৎ হাত দুইখানাকে একটু সময় তাহার মাথার উপর শূন্যে রাখার পর, এই স্থান হইতে আরম্ভ করতঃ তাহার মুখমণ্ডলের উপর দিয়া না স্পর্শহীন ভাবে পাকস্থলীর মূলে এবং অপর আঙ্গুল গুলিকে পাঁজরের নীচে স্পর্শযুক্ত ভাবে স্থাপন করিবে। তৎপরে আবার সেখান হইতে হাত দুইখানাকে নীচের দিকে পা পর্যন্ত এবং অসুবিধা বোধ না করিলে, পায়ের আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত লইয়া আসিবে। বৈঠকের বেশী সময়ই এই প্রণালীটির পুনরাবৃত্তি করিবে। সম্মোহনবিৎ সুবিধা বোধ করিলে, মাঝে মাঝে হাত দুইথানা পাত্রের কাঁধের পিছনে স্থাপন করিবে এবং সেখান হইতে আবার আস্তে আস্তে পিঠের উপর দিয়া নিতম্ব দেশ পর্যন্ত এবং আবার সেখান হইতে উরুর উপর দিয়া হাঁটু পর্যন্ত এবং সেখান হইতে পায়ের পাতা পর্যন্ত লইয়া আসিবে। প্রথম পাসের পর পাত্রের মাথার উপর আর হাত স্থাপনের আবশ্যকতা নাই। উহার পরবর্তী পাসগুলি পাত্রের বাহুর উপর করা যাইতে পারে। যদি আধ ঘণ্টার মধ্যে কোন ফল না হয়, অর্থাৎ পাত্র নিদ্রিত না হয়, তবে বৈঠক ক্ষান্ত করিবে এবং দুই-তিন বৈঠক পৰ্যন্ত পাত্রের উপর এই প্রণালী প্রয়োগ করিবে; ইহার মধ্যেই সাফল্য লাভ হইবে বলিয়া আশা করা যায়। কেহ কেহ ইহাকে খুব ধীর প্রণালী বলিয়া মনে করিতে পারেন, তথাপি ইহা মেস্মেরাইজ, করিবার পুরাতন নিয়ম গুলির একটি সুস্পষ্ট আদর্শ এবং ইহা দ্বারা উৎকৃষ্ট ফল লাভ হইয়া থাকে। অদম্য অধ্যবসায় সহিষ্ণুতা, ধীরতা ও নিয়ত শ্রমশীলতার সহিত কাৰ্য্য করার অভ্যাস না থাকিলে কখনও উচ্চ শ্রেণীর কাৰ্যকারক হওয়া যায় না।