1 of 2

১.৩২ কাহারও অজ্ঞাতসারে মন পরিবর্তিত করণ

দ্বাত্রিংশ পাঠ
কাহারও
অজ্ঞাতসারে মন পরিবর্তিত করণ

দৈহিক রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা কষ্ট ভোগ করে বলিয়া আরোগ্য লাভের জন্য যেমন আগ্রহান্বিত ও যত্নবান হয়, কোন মানসিক বা নৈতিক রোগগ্রস্ত ব্যক্তিরা তেমন হয়না; অধিকন্তু তাহারা সেই মনোবিকার হইতে সুখই লাভ করিয়া থাকে। তাহাদের পক্ষে আরোগ্য লাভের অর্থ, প্রিয় বস্তু বা বিষয়-ভোগের সুখ হইতে বঞ্চিত হওয়া। এজন্য তাহারা উহা হইতে মুক্তি লাভের ইচ্ছা করেনা। যে পর্যন্ত তাহারা ঐ মনোবিকারের বিষময় পরিণামে কষ্ট ভোগ না করে, ততদিন তাহারা উহাতেই আসক্ত থাকিতে ভালবাসে। অবশ্য তাহাদের মধ্যে সময় সময় এরূপ লোকও দেখা যায়, যাহারা যথার্থই সংশোধনের অভিলাষী, কিন্তু আসক্তির দৃঢ়তা বশতঃ তাহারা ও কেবল নিজের চেষ্টায় ভাল হইতে পারে না। এই শ্রেণীর লোকদিগের সহজেই সম্মোহন চিকিৎসায় সম্মত করাইয়া সংশোধন করা যাইতে পারে; কিন্তু অপর ব্যক্তিরা তাহাদের প্রিয় বস্তু বা বিষয় ভোগের সুখ হইতে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে কিছুতেই উহাতে স্বীকৃত হয়না। বর্তমান পাঠে এই প্রকৃতির লোকদিগকে তাহাদের অজ্ঞাতসারে সংশোধন করার প্রণালী প্রদত্ত হইল।

যাহারা সুরাপায়ী, ইন্দ্রিয়পরায়ণ, ব্যভিচারাসক্ত, কুসংসর্গ লিপ্ত কিম্বা যে সকল বালক বালিকা অবাধ্য, দুঃশীল, মিথ্যাবাদী, লেখাপড়ায় অনিচ্ছুক বা অমনাযোগী অথবা যে সকল স্বামী-স্ত্রী বা দুই বন্ধুর মধ্যে বিশ্বাস ও ভালবাসা নাই; তাহাদিগকে এবং কেহ কাহার সহিত শত্রুতাচরণ করিলে বা তাহার সম্বন্ধে বিরুদ্ধ ভাব পোষণ করিলে, কিম্বা কেহ অন্যায় রূপে কাহারও বশীভূত হইয়া থাকিলে তাহাদিগকে নিম্নোক্ত প্রণালীতে সংশোধন বা তাহাদের মন পরিবর্তন করা যাইবে। এতদ্ব্যতীত ইহা দ্বারা উক্তরূপ বহুকাৰ্য্য সম্পন্ন করা সম্ভব হইবে।

এই প্রণালীতে কাহার মন পরিবর্তিত করিতে খুব সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যক। কারণ মনোবিকারগ্রস্ত রোগী তাহার মনোভাব পরিবর্তনের ইচ্ছা করেনা বলিয়া তাহার উপর এমন ভাবে চেষ্টা করিতে হইবে, যেন সে উহার বিন্দু বিসর্গও জানিতে না পারে। অন্যথায় সব পণ্ড হইয়া যাইবে এবং ভবিষ্যতেও তাহার উপর এইরূপ চেষ্টা ফলবতী হইবেন। দিনে বা রাত্রিতে যখন সে গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত থাকিবে, তখন তাহার কোন হিতৈষী নিঃশব্দে তাহার শয্যার উপর গিয়া বসিবে এবং তাহার নাসিকা-মূলে স্থির ও প্রখর দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক (নাসমূল দেখা না গেলে কেবল তাহার মুখের দিকে তাকাইয়াই) খুব মৃদু স্বরে অথচ দৃঢ় ভাবে ও একাগ্র মনে অভীতি বিষয়ে আদেশ দিবে। সম্পূর্ণ আদেশটিকে উক্তরূপে আট-দশবার দেওয়ার পর, নিদ্রিত ব্যক্তি প্রদত্ত আদেশানুসারে অবশ্য কাৰ্য্য করিবে—২৩ মিনিট এরূপ চিন্তা করিয়া সেস্থান পরিত্যাগ করিবে এবং যে পর্যন্ত সে সংশোধিত বা তাহার মনোভাব পরিবর্তিত না হয়, ততদিন প্রত্যহ নিয়মিতরূপে তাহাকে আদেশ দিবে। উক্তরূপে ইহা করিতে পারিলে, এক হইতে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাহার মনোভাবের পরিবর্তন দেখা যাইবে।

হিতৈষী রোগীকে যে আদেশটি প্রদান করিবে, তাহা অভীপ্সিত কাৰ্য্য সাধনের সম্পূর্ণ উপযোগী হওয়া চাই। সে নিম্নোক্ত আদেশের দৃষ্টান্ত কাহারও অজ্ঞাতসারে মন পরিবর্তিত করণ হইতে ভাব গ্রহণ করিয়া একটি উপযুক্ত আদেশ রচনা করিবে এবং তাহা এক টুকরা কাগজে লিখিয়া কয়েকবার আওড়াইয়া লইবে, যেন বলিবার সময় কোন কথা মুখে না বাধে। কথার শব্দে তাহার ঘুম না ভাঙ্গে, অথচ ভাবটিও তাহার মনে গভীর রূপে অঙ্কিত হয়, তৎপ্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখিবে। তাহার একাগ্রতা শক্তি স্বভাবতঃ অধিক থাকিলে, সে মৌখিক আদেশ না দিয়া মানসিক আদেশ ও দিতে পারে, কিন্তু তাহা না থাকিলে মানসিক আদেশে কোন ফল হইবে না। সে সদিচ্ছা প্রণােদিত হইয়া আত্মবিশ্বাস, সংকল্পণীলতা ও ধৈর্য্যের সহিত কাৰ্যে রত থাকিলে তাহার চেষ্টা অবশ্য সাফল্য মণ্ডিত হইবে।

দৃষ্টান্ত সুরা ও বেশ্যাসক্ত কোন ব্যক্তিকে সংশোধন করিতে নিম্নোক্তরূপ আদেশ দিবে। যথা—“তুমি আর মদ খাইবেনা এবং বেশ্যাবাড়ীও যাইবেনা। আজ হইতে তোমার মন সুরা ও বেশ্যার প্রতি আর আকৃষ্ট হইবেনা। এখন হইতে এই অভ্যাসের প্রতি তোমার ঘৃণা জন্মিবে এবং দিন দিনই ইহা বৰ্ধিত হইতে থাকিবে। এই মহা অনিষ্টকর অভ্যাসের কবলে পতিত হওয়াতে যে তোমার ধন-সম্পত্তি-মান-মৰ্য্যদা ইত্যাদি নষ্ট হইয়া যাইতেছে এবং তোমার নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে ঘোর অবনতি ঘটিতেছে, তাহা তুমি সহজেই উপলব্ধি করিতে সমর্থ। সুতরাং তুমি আজ হইতে আর কখনও মদ স্পর্শ করিবেনা এবং বেশ্যাবাড়ীও যাইবেনা। তুমি চিরজীবনের জন্য এই জঘণ্য অভ্যাস পরিত্যাগ করিবে এবং কিছুতেই তোমাকে আর উহাতে আবদ্ধ রাখিতে পারিবেনা। তুমি আজ হইতেই এই কুৎসিৎ অভ্যাস করিবে—অবশ্যই করিবে-নিশ্চয় করিবে।” আবশ্যক মত ইহার স্থল বিশেষ পরিবর্তন করিয়া লওয়া যাইতে পারে।

যে সকল লোকের সহিত মনোবিকারগ্রস্ত রোগীর ভাব বা পরিচয় নাই, তাহাদের পক্ষে তাহাকে সংশোধনের চেষ্টা করা সুবিধা হইবে না। কারণ তাহাদের কার্যের সময় যদি হঠাৎ তাহার ঘুম ভাঙ্গিয়া যায়, তবে সে তাহার শয্যার নিকট একজন অপরিচিত লোেক দেখিতে পাইয়া অত্যন্ত সন্দেহ যুক্ত হইবে এবং তাহাতে কাযটি নষ্ট হইয়া যাইতে পারে। এই নিমিত্ত যে সকল স্ত্রী বা পুরুষের সহিত তাহার বিশেষ ভাব বা প্রণয় আছে, কিম্বা সে যাহাদিগকে বিশ্বাস করে, কেবল তাহারাই খুব সুবিধার সহিত তাহার উপর চেষ্টা করিতে পারিবে। তাহারা সম্মোহন বিদ্যাভিজ্ঞ হইলে সহজেই অভীতি কাৰ্যে সফল মনোরথ হইবে; আর যদি এই বিদ্যায় তাহাদের কোন জ্ঞান না থাকে, তবে তাহারা এই নিয়মের যথাযথ অনুসরণ করিতে পারিলেও অনেক স্থলে আশানুরূপ সাফল্য লাভে সমর্থ হইবে। সকল নরনারীর হৃদয়েই স্বভাব-দত্ত সম্মোহন শক্তি বিদ্যমান আছে এবং তাহা উপযুক্ত প্রণালীতে প্রযুক্ত হইলে মানুষকে অল্পাধিক পরিমাণে বশীভূত করিতে পারে। সুতরাং যাহারা এই বিদ্যায় অনভিজ্ঞ তাহারাও সময় সময় ইহা দ্বারা তাহাদের আত্মীয় বন্ধুগণের উপকার করিতে পারিবে।

পিতামাতাগণ এই প্রণালীতে তাহাদের শিশু সন্তানদিগের ভবিষ্যৎ জীবনও অল্পাধিক পরিমাণে নিয়ন্ত্রিত বা চালিত করিতে পারে। যদি কাহারও অজ্ঞাতসারে মন পরিবর্তিত করণ তাহারা সন্তানদিগকে ধৰ্ম্ম, নীতি, বিশেষ কোন বিদ্যা বা বিষয়ের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার জন্য উপযুক্ত আদেশ প্রদান করে, তবে তাহারা পরিণত বয়সে সেই বিষয়ের প্রতি সমধিক পরিমাণে আকৃষ্ট হইয়া থাকে এবং সেই বিষয়ের চর্চা বা সাধনায় নিযুক্ত থাকিয়া স্বীয় স্বীয় ক্ষমতা বা সুবিধানুসারে সাফল্য লাভ করিতে সমর্থ হইয়া থাকে।

কাহার কাহার মতে সম্মোহন আদেশের সাহায্যে ইচ্ছামত পুত্রকন্যাও উৎপাদন করা যায়। তাহারা বলেন, যদি কোন নারীর গর্ভসঞ্চারের অব্যবহিত হইতে তাহার পুত্র বা কন্যা হইবে বলিয়া ক্রমাগত আদেশ দেওয়া যায়, তবে উক্ত আদেশানুযায়ী সে পুত্র বা কন্যা সন্তান প্রসব করিয়া থাকে। অবশ্যই এরূপ পরীক্ষা এবং খুব বেশী হয় নাই এবং আমি নিজেও এ বিষয়ে চেষ্টা করার সুযোগ পাই নাই। শিক্ষার্থীদিগের মধ্যে কাহারও এই বিষয়ের সত্য নির্ধারণের জন্য আগ্রহ জন্মিলে, সে নিজে ইহা পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *