সপ্তম পাঠ
পাত্রকে জাগ্ৰদবস্থায় মেস্মেরাইজ করণ
পাত্রকে মোহ নিদ্রায় নিদ্রিত করিতে প্রয়াস পাইবার পূর্বে হিপ্নোটিজমের ন্যায় তাহার উপর কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষা করিয়া লইবে। শারীরিক পরীক্ষা না করিয়া ও তাহাকে হিপ্নোটি বা মেস্মেরি নিদ্রায় আচ্ছন্ন করা যায়। কিন্তু তৎপূর্বে তাহাকে এই পরীক্ষাগুলি দ্বারা অভিভূত করিয়া লইলে, মেস্মেরিক শক্তির প্রতি তাহার সংবেদনা বৃদ্ধি পায় এবং সে সহজে নিদ্রাভিভূত হইয়া পড়ে। পাত্র প্রথম স্তর বা উদাসীনাবস্থায় উপনীত হওয়ার পর, এই পরীক্ষা গুলি সম্পাদনের চেষ্টা পাইবে, অন্যথায় উহাতে বিশেষ সাফল্য লাভ হইবেনা। মেস্মেরি পাত্রের উপরে এই পরীক্ষাগুলি করিতে হিপ্নোটিজমের ন্যায় তাহাকে বেশী মৌখিক আদেশ দেওয়ার আবশ্যক হয় না। মেস্মেরিক শক্তি দ্বারা পাত্রের যে প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত বা অভিভূত করিতে ইচ্ছা করিবে, তাহার উপর ক্ষুদ্র বা স্থানীয় পাস প্রদান এবং তৎসঙ্গে আকর্ষণী স্পর্শ ও মোহিনী দৃষ্টি স্থাপন করিয়া একাগ্র মনে মানসিক এবং মৌখিক আদেশ দিতে হয়।
প্রথম পরীক্ষা–পাত্রের চক্ষু জুড়িয়া দেওয়া
প্রথমে পাত্রের চক্ষু বন্ধের পরীক্ষাটি করিবে। তজ্জন্য তাহাকে বসাইয়া বা বঁড় করাইয়া তাহার নাসিকা-মূলে আকর্ষণী স্পর্শও মোহিনী দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক দৃঢ়রূপে চক্ষু বন্ধ করিতে বলিবে। সে তাহা করিলে পর, তাহার চোখ জুড়িয়া যাউক বলিয়া খুব একাগ্র মনে ইচ্ছাশক্তি পূর্ণ মানসিক আদেশ দিবে এবং তৎসঙ্গে বৃদ্ধাঙ্গুলিটি এক একবার নাসা-মূলের নীচের দিকে টিপিয়া দিবে। তৎপরে তাহার মুদিত চোখের উপর কয়েকটি স্পর্শ যুক্ত ক্ষুদ্র পাস এবং উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মাঝে মাঝে দুই একবার অল্প জোরে চক্ষু দুইটি টিপিয়া দিবে ও সেই সঙ্গে মানসিক আদেশ দিবে। এরূপে কয়েকবার পাস ও আদেশ দেওয়ার পর, তাহাকে জিজ্ঞাসা করিবে যে, সে চোখ খুলিতে পারে কি না? যদি পাত্ৰ সংবেদ্য হয়, তবে তাহার চক্ষু দৃঢ়রূপে বন্ধ হইয়া থাকিবে এবং সে সাধ্যমত চেষ্টা করিয়াও উহাদিগকে খুলিতে পারিবেনা।
দ্বিতীয় পরীক্ষা–পাত্রকে মুখ বন্ধ করিতে অসমর্থ করণ
পাত্রকে পূর্বের ন্যায় চেয়ারে বসাইয়া বা দাঁড় করাইয়া তাহার নাসিকা-মূলে সতেজ দৃষ্টি স্থাপন পূৰ্ব্বক তাহাকে মুখ খুলিতে অর্থাৎ হা করিতে বলিবে। তৎপরে তাহার নাসা-মূলে আকর্ষণী স্পর্শ স্থাপন পূৰ্ব্বক একাগ্ৰমনে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করিবে যে, সে আর মুখ বন্ধ করিতে পারিবে না। দুই-এক মিনিট এরূপ করার পর, আকর্ষণী স্পর্শ অপসারণ পূৰ্ব্বক দুই হাত দ্বারা তাহার দুই চুয়ালের উপর কয়েকটি স্পর্শ যুক্ত ক্ষুদ্র পাস দিবে। কয়েকবার এরূপ করিলেই সে আর মুখ বন্ধ করিতে সমর্থ হইবে না।
তৃতীয় পরীক্ষা–পাত্রের হাত শক্ত করিয়া দেওয়া পাত্রকে বসাইয়া বা দাঁড় করাইয়া তাহার একখানা হাত (বাহু মূল হইতে আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত) খুব শক্ত করিতে বলিবে। তৎপরে তাহার নাসা-মূলে আকর্ষণী স্পর্শ ও মোহিনী দৃষ্টি স্থাপন পূৰ্ব্বক, তাহার হাতখানা কঠিন হইয়া থা’ বলিয়া দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ করিবে। এখন আকর্ষণী স্পর্শ অপসারিত করিয়া ঐ হাতের উপর কয়েকটি স্পর্শ যুক্ত ক্ষুদ্র পাস দিলেই উহা কঠিন হইয়া থাকিবে এবং সে সাধ্যমত চেষ্টা করিয়াও উহা বাকাইতে বা গুটাইতে পারিবেনা।
চতুর্থ পরীক্ষা-দাঁড়াইতে অসমর্থ করণ। পাত্রকে চেয়ারে বসাইয়া তাহার নাসা-মূলে আকর্ষণী স্পর্শ ও মোহিনী দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক খুব দৃঢ় ভাবে ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ করিবে যে, তাহার সমস্ত শরীর চেয়ারের সঙ্গে দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া থাকিবে এবং সে আর কিছুতেই উঠিতে পারিবে না। তৎপর আকর্ষণী স্পর্শ অপসারিত করিয়া উভয় হাত দ্বারা তাহার কোমর হইতে পা পর্যন্ত এবং তাহার কোমরের চারিপার্শ্বে কয়েকটি পাস দিবে। সেই সময় একাগ্রতা ও বিশ্বাসের সহিত এরূপ চিন্তা করিবে যে, মেস্মেরিক শক্তি তাহার কোমর হইতে পা পর্যন্ত স্থানকে চেয়ারের সঙ্গে অত্যন্ত কঠিন রূপে জুড়িয়া দিতেছে এবং সে আর ঐ আসন হইতে উঠিতে পারিবে না। দুই-তিন মিনিট উক্তরূপ পাস ও ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ করিলেই, সে আর চেয়ার হইতে উঠিতে পারিবে না।
পঞ্চম পরীক্ষা -পাত্রকে হাত খুলিতে অসমর্থ করণ পাত্রকে চেয়ারে বসাইয়া বা দাঁড় করাইয়া তাহার এক হাতের আঙ্গুলগুলি অপর হাতের আঙ্গুলগুলির মধ্যে (হিপ্নোটিজমের তৃতীয় শারীরিক পরীক্ষার ন্যায় প্রবেশ করাইয়া দিয়া একটি দৃঢ় মুষ্টি করিতে বলিবে। তাহা করা হইলে, তাহার নাসা-মূলে আকর্ষণী স্পর্শ ও মোহিনী দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক দৃঢ় ভাবে ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ করিবে যে, তাহার হাত দুইখানা পরস্পরের সহিত অত্যন্ত দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া থাকিবে এবং সে আর উহাদিগকে খুলিতে পারিবে না। তৎপর দুই হাত দ্বারা পাত্রের উভয় বাহু মূল হইতে আরম্ভ করিয়া হাতের মুঠ পৰ্য্যন্ত স্পর্শযুক্ত পাস দিবে। এইরূপ কয়েকবার পাস ও মানসিক আদেশ দিলেই তাহার হাত দুইখানা দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া থাকিবে এবং সে যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াও উহাদিগকে খুলিতে সমর্থ হইবে না।
এই রকমের কয়েকটি পরীক্ষায় পাত্রকে অভিভূত করার পর, তাহার সংবেদনা বাড়াইবার জন্য তাহার উপর নিমোক্ত রূপ আরও দুই একটি পরীক্ষা করিবে। যেমন তাহার (নিজের হাত ঘুরাণ, নাচা, চলন ইত্যাদি কাৰ্য্যের গতিরোধ করণ। কাৰ্যকারক নিজের বুদ্ধি বলেও এই রকমে নানারূপ কাৰ্য্য পরীক্ষা রূপে গ্রহণ করতঃ তাহার উপর সম্পাদনের চেষ্টা পাইতে পারে।
ষষ্ঠ পরীক্ষা—হাত ঘুরাণ বন্ধ করিতে অসমর্থকরণ পাত্রকে সম্মুখে দাঁড় করাইয়া তাহার নাসা মূলে আকর্ষণী স্পর্শ ও মোহিনী দৃষ্টি স্থাপন করিবে এবং তাহাকে তাহার উভয় হাতের নিম্না (উভয় হাতের কনুইর নীচ হইতে আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত অংশ) পেটের সম্মুখে পাশাপাশি ও অসংযুক্ত ভাবে স্থাপন করতঃ উহাদের একটিকে অপরটির চারি পাশে খুব তাড়াতাড়ি গোলাকারে ঘুরাইতে বলিবে। যখন সে তাহা করিতে থাকিবে, তখন দৃঢ় ভাবে ইচ্ছাশক্তি পূর্ণ মানসিক আদেশ দিবে যে, সে আর তাহার হাত ঘুরাণ বন্ধ করিতে পারিবে না। কয়েক মিনিট এরূপ করিলেই সে যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াও উহা বন্ধ করিতে পারিবে না।
পাত্রকে প্রকৃতিস্থ করণ
এই সকল শারীরিক পরীক্ষায় অভিভূত পাত্রের আক্রান্ত স্থানে উৰ্দ্ধগামী পাশ, ফুঁ ও তৎসঙ্গে ইচ্ছাশক্তি পূর্ণ মানসিক বা মৌখিক আদেশ দিলেই সে প্রকৃতিস্থ বা স্বাভাবিকাবস্থা প্রাপ্ত হইবে।