১৯. উপসংহার

উপসংহার (Conclusion)

বাঙালির ধর্মচিন্তা গ্রন্থের আলোচনার পরিধি প্রায় পৌনে সাত শ’ পৃষ্ঠায় পৌঁছে গেল। আলোচনার বিষয় ভিন্নতার প্রেক্ষিতে গ্রন্থটি আঠারটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করে স্বতন্ত্র শিরোনামে উপস্থাপিত হল। সেই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সূত্র নির্দেশনার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট স্থানে সম্পূরক তথ্য সন্নিবেশ ও সম্প্রসারণ লক্ষ্যে সংযোজিত হল চৌত্রিশটি দীর্ঘ-নাতিদীর্ঘ টীকা। গ্রন্থে ধর্মের বহুমুখী দিগন্ত উন্মোচন ও বিশ্লেষণে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বীকৃত স্বদেশী-বিদেশী (Local and International Scholars) প্রাজ্ঞ পণ্ডিতবর্গের সংশ্লিষ্ট চিন্তার প্রাসঙ্গিক বক্তব্যও যথাস্থানে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ উপস্থাপন শুধু নিজ বক্তব্যের মান্যতা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নয়, পাঠককে বর্তমান গ্রন্থকারের চিন্তার সন্ধিৎসা অনুধাবন তথা মানসজগতের গন্তব্য (Destination) নির্ধারণেও সহায়ক হবে। এতদ্ভিন্ন পাঠকের চিন্তার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতিটি অধ্যায়ের আলোচনার শেষে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশে-বিদেশে এ-যাবৎ প্রকাশিত (Local and International Books) নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি কালানুক্রমিকভাবে উল্লিখিত হল। তবে উল্লিখিত গ্রন্থপঞ্জির অধিকাংশ গ্রন্থের সংশ্লিষ্ট সহায়ক তথ্য পুনরুক্তি পরিহার নিমিত্তে বর্তমান গ্রন্থে উপস্থাপনের সুযোগ হয়নি। শুধু সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সন্ধিৎসু পাঠকদের চিন্তার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অনেকটা অতিরিক্ত পাঠের ( Suggestions for Further Reading) সুপারিশ গ্রন্থ হিসেবে উপস্থাপিত হল। সমগ্র গ্রন্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা ও বক্তব্য বিশ্লেষণের প্রয়োজনে প্রসঙ্গত দেশি-বিদেশি মনীষী চিন্তার নির্যাস নিরূপণে সহায়ক এক নজরে অবলোকন ও তথ্য অনুসন্ধানের জন্য (Information finding for at a Glance in the Index) একটি নির্ঘণ্ট বা বর্ণানুক্রমিক নাম- তালিকা দেয়া হল।

আলোচিত আঠারটি অধ্যায়ে ধর্মের বহুমুখী দিকের বিশ্লেষিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আমাদের এই উপলব্ধিতে উপনীত হতে হয় যে, একদিকে ধর্মের চেয়ে শান্তির অফুরন্ত ভাণ্ডার দ্বিতীয়টি নেই, অন্যদিকে ধর্মের চেয়ে ‘উত্তেজক’ আর ‘বিস্ফোরক’ আর আছে কিনা সন্দেহ। ধর্মের এই উত্তেজক আসক্তিদের নজরুল আখ্যায়িত করেছেন ‘ধর্ম-মাতাল’ (পৃ. ৩৪৩) বলে। কার্ল মার্কস বলেছেন, ‘বিবেকহীন বিশ্বের আবেগ” অনুরক্ত ‘জনগণের আফিম’ (পৃ. ১৩৬)। আর এই ‘আফিম’ অনুরক্ত মানুষ দিয়ে অশুভ চক্র সমাজে বহু অমানবিক কর্ম স্ব-স্বার্থে হাসিল করে নেয়। এজন্যই আমরা দেখতে পাই, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মিথ্যা বলা হয় ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে, যেটা আদালতে— আর সবচেয়ে বেশি সত্য বলা হয় মদ ছুঁয়ে, যেটা পানশালায়’ (মির্জা গালিব)। ধর্মের এই মাতলামির ফলে মানুষ যে- মানবাচরণ প্রত্যক্ষ করে তাতে বিশ্বাসী বিভ্রান্ত হয়। ঘটে বিশ্বাস বিভ্রাট! ফলে বিশ্বাসের অমোঘ শক্তির (power of faith) আস্বাদন থেকে সে বঞ্চিত হয় (পৃ. ১৭৫-৭৬)।

যেকোন ব্যাপারে ধর্মের নাম আর দোহাই নিয়ে এলে তখন আর মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ফলে যে-সংঘর্ষ দেখা দেয় তাতে ধর্মই হয় সর্বাগ্রে বলি! অথচ ‘ইসলাম ধর্মপরায়ণ ও ধর্মহীনের মধ্যে কোনও পার্থক্য সৃষ্টি করে না। কাজেই ধর্মনিরপেক্ষতা বা ইহজাগতিকতা ইসলামের অখণ্ড অংশ এবং এ কারণেই ইসলামী রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সকল গুণ গ্রহণ করে।’

মহাত্মা গান্ধী হিন্দু ধর্মকে অহিংসার ধর্ম বলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি হিন্দু ধর্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন:

অর্থাৎ—

If I were asked to define the Hindu Creed, I should simply say: Search after truth through non-violent means. A man may not believe in God, and still call himself a Hindu. Hinduism is a relentless pursuit after truth. Hinduism is the religion of truth. Truth is God. Denial of God we have known. Denial of truth we have not known.

আমাকে যদি হিন্দু ধর্মের সংজ্ঞা দিতে বলা হত, আমি সাদাসিধেভাবে শুধু বলতাম: হিন্দু ধর্ম মানে অহিংস পন্থায় সত্যের অন্বেষণ। একজন লোক ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেও নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিতে বাধা নেই। হিন্দু ধর্ম মানে অদম্য, তীব্র ও অনমনীয়ভাবে সত্যলাভের প্রচেষ্টা ও তার অনুসরণ। হিন্দু ধর্ম হল গিয়ে সত্যের ধর্ম। সত্য হল ঈশ্বর। (প্রথমে গান্ধী ‘ঈশ্বর সত্যত বলেছিলেন, যুক্তিবাদীদের সমালোচনায় তিনি কথাটি পরিবর্তন করেন। ঈশ্বরকে বর্জন করার কথা আমরা জানি। সত্যকে বর্জন করার কথা আমাদের জানা নেই।

তাই সত্যানুসন্ধানীরা বলেন, “ঈশ্বরের মুখ দিয়ে মুনি-ঋষিরা তাঁদের নিজস্ব চিন্তাধারা ব্যক্ত করেছেন। নিজেরা যা ভাবতেন ও বিশ্বাস করতেন, হোক তা সৎ উদ্দেশ্যে অথবা কায়েমী স্বার্থ (vested interests) রক্ষার্থে, ঈশ্বরের নামে রটিয়ে দেওয়ার প্রয়াস পেয়েছেন। অথবা নিজেদের চিন্তা-ভাবনা-কল্পনায় ও দার্শনিকত্বে অতিমাত্রায় সম্মোহিত হয়ে ওগুলোকে ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করেছেন। আর সসীম বুদ্ধি দিয়ে অসীম কোন কিছুর কল্পনা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। কল্পিত বস্তুটির চেহারা নিজের অজান্তে বিশ্রী করে করুণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। সবগুলো ধর্ম অথরিটারিয়্যানিজমের প্রচারক। প্রভুত্ব-ব্যঞ্জক স্বৈরাচারী ও একনায়কতান্ত্রিকতাসুলভ রাষ্ট্রনীতি ধর্ম থেকে উদ্ভূত, ধর্মের কাছে তা ঋণী। আসলে কল্পিত ঈশ্বরের কোন দোষ নেই। একেবারেই innocent, নিষ্পাপ।’ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ ড. তাহা হুসেন বলেন-

They must explain what distinguishes Christianity from Islam for both stem from the same source. The essence of Islam is the same essence of Christianity.

অর্থাৎ—

যাঁরা সুস্থ চিন্তা-ভাবনা করেন তাঁদেরকে অবশ্যই ব্যাখ্যা করে দেখাতে হবে ইসলাম ধর্ম ও খ্রিষ্টান ধর্মের মধ্যে কী সব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে, কেননা উক্ত দুটি ধর্ম একই উৎস থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ইসলামের মূল বৈশিষ্ট্য ও উপাদান আর খ্রিষ্টান ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য ও উপাদান একই রকম।

ইসলামি চিন্তার প্রখ্যাত পণ্ডিত বিচারপতি স্যার সৈয়দ আমীর আলী তাঁর বিখ্যাত The Spirit of Islam গ্রন্থে পণ্ডিত তাহা হুসেনের অনেক আগেই বলেছেন—

The true Muslim is a true Christian, in that he accepts the ministry of Jesus, and tries to work out moral preached by him…

Excepting for the conception of the sonship of Jesus, there is no fundamental difference between Christianity and Islam. In their essence they are one and the same; both are the outcome of the same spiritual forces working in humanity…

অর্থাৎ—

প্রকৃত মুসলমান একজন প্রকৃত খ্রিষ্টান, প্রকৃত মুসলমান যিশুর নবুয়তকে স্বীকার করে এবং যিশুও যে নৈতিক শিক্ষা দিয়েছেন তা কাজে-কর্মে পরিণত করার জন্য সে অনুযায়ী চলার জন্য চেষ্টা করে। ….

যিশুর পুত্রত্বের ধারণাকে বাদ দিলে খ্রিষ্টান ধর্ম ও ইসলাম ধর্মের মধ্যে কোনও মৌলিক পার্থক্য নেই দুই ধর্মের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কোন তফাৎ নেই, মূলের দিক দিয়ে উভয় ধর্মই এক এবং অভিন্ন; উভয় ধর্মই মানুষের মধ্যে কার্যকর একই আধ্যাত্মিক শক্তি থেকে উৎপন্ন। ….

সব মানুষেরই জগৎ ও জীবন সম্পর্কে কমবেশি কৌতূহল থাকে। তবে সব কৌতূহলের উত্তর ও জবাব দেবার কৌশল সব মানুষের একরকম নয়। কেউ কেবল বুদ্ধিবৃত্তির সন্তুষ্টি চান, আবার কেউ নিজের ব্যক্তিত্বের পরিতৃপ্তি চান। বস্তুত পরিবর্তনশীল এই জগতের নানা বৈচিত্রের মধ্যে ঐতিহ্যের সন্ধান না পেয়ে মানব মনে সংশয় দেখা দেয়। সংশয় নানা প্রকার প্রশ্নের জন্ম দেয়। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একদিকে যেমন সৃষ্টি হয় ধর্মের, অন্যদিকে তেমনি উৎপত্তি হয় দর্শনের। কালের বিবর্তনে এই ধর্মদর্শনেরও ব্যবহারিক বিধান বদলে যায়। ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক প্রভাব পড়ে ধর্মবিশ্বাসে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ জবানীতে জানানো হয়েছে, ‘পুরনো রীতি রেওয়াজ কখনোই মানুষকে সঠিক পথে চালনা করে না। যুগের সাথে সাথে যে মানুষ নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে না, তার বিনাশ নিশ্চিত।’ পরিবর্তনের এই প্রয়োজন ইসলাম ধর্মেও স্বীকৃতি আছে। এই স্বীকৃতির সারকথাটি সৈয়দ আমীর আলীর সাহসী জবানীতে ব্যক্ত হয়েছে এভাবে : ‘যেসব নির্দেশ একটি অর্ধসভ্য জাতির সাময়িক প্রয়োজনে জারি করা হয়েছিল, সেগুলি কেয়ামত অবধি অপরিবর্তিত বা চালু থাকবে এই ছিল মোহম্মদের কাম্য, এটি মনে করা তাঁর প্রতি স্রেফ অবিচার।’ (ইসলামের তাৎপর্য, ১৯২২)।

তারপরেও সৃষ্টিজগতের বিস্ময় বৈচিত্র্যে সন্ধিৎসু ব্যক্তিমাত্রই জিজ্ঞাসু ও কৌতুহলী! সকল সন্ধিৎসা ও গবেষণা শেষে সে জেনেছে, সৃষ্টি জগতে যত বৈচিত্র্য বা ভিন্নতাই থাকুক না কেন, আসলে সকল কিছুই এক হতে সৃষ্টি, একেরই বিকশিত রূপ; এক ঐশী পদার্থের বিভিন্ন রূপভেদ মাত্র। সেজন্য এই ধারার বক্তব্য হল: আল্লাহই সব এবং সবই আল্লাহর অর্থাৎ এ বিশ্বজগৎ আল্লাহসত্তাময়। আল্লাহ ব্যতীত দ্বিতীয় কোন সত্তা নেই। সমগ্র সৃষ্টি তাঁর পরিচয় বহন করে। (ওয়াহাদাতুল ওজুদ তত্ত্ব দ্রষ্টব্য)।

‘আসুন আমরা সত্যি বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে স্বর্গে এমন একজন শিশু একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির কথা কল্পনা করি। অবশ্য স্বর্গে প্রাপ্তবয়স্কজন শিশুটির চেয়ে উঁচু স্থানে রয়েছে। শিশুটি ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করবে : ‘আপনি কেন ওই লোকটিকে উপরে স্থান দিলেন?’ ‘সে অনেক ভালো কাজ করেছে?’ উত্তর দেবেন ঈশ্বর। তারপর শিশুটি বলবে, “আমাকে কেন এত আগে মরতে দিয়েছেন যাতে আমি ভালো কাজ করা থেকে বঞ্চিত হই?’ ঈশ্বর উত্তর দেবেন, ‘আমি জানতাম যে তুমি পাপী হয়ে বেড়ে উঠতে; তাই ছোট থাকতে মারা যাওয়াই তোমার জন্যে ভালো হয়েছে।’ এরপর নরকে শাস্তি ভোগকারীদের ভেতর থেকে আর্তনাদ শোনা যাবে, ‘হে, প্রভু কেন আমরা পাপীতে পরিণত হওয়ার আগেই আমাদের মরতে দিলেন না?’

তবে মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে তাঁর পূর্ণ পরিচয় উন্মোচন অসম্ভব! কে তাহারে চিনতে পারে’? বলা হয়েছে : ‘প্রেমের আরশিতে তাঁকে চেনা যায়’। নিষ্কলুষ অন্তরেই উদ্ভাসিত হতে পারে তাঁর মহিমান্বিত রূপ! ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ টয়েনবী (১৮৮৯-১৯৭৫) মানুষের ধর্মচেতনার স্বরূপ-সন্ধান দিতে গিয়ে বলেছেন : এই বিশ্বপ্রকৃতির অন্তরালে যে সত্য রয়েছে তার সঙ্গে যুক্ত হতে চাওয়াই মানুষের চরম লক্ষ্য। এই পরম আধ্যাত্মিক সত্যের সঙ্গে নিজের আত্মার যোগ-সাধনের উদ্দেশ্যে মানুষ চাইছে মিলতে— যে মিলের মধ্যে তার জীবনের সার্থকতা। (Man’s goal is to seek communion with the presence behind the phenomena, and to seek it with the aim of bringing his self into harmony with this absolute spiritual reality. Arnold Joseph Toynbee, An Historian’s Approach to Religion, p. 32) ।

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে স্রষ্টার সঙ্গে এসব কল্পিত বিতর্কের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্লাবন-জলোচ্ছ্বাস-বন্যা-বজ্রপাত-মহামারি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে নির্বিচারে নির্বোধ-নিষ্পাপ প্রাণের নির্মম মৃত্যু নিয়ে কালে কালে মানবিক মনে বহু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বারবার। প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্রষ্টার এই নির্বিচার মৃত্যুপ্রবাহ তিনি কেন নিয়ন্ত্রণ করেন না, কেন তিনি পাপী-নিষ্পাপ সবাইকে সম্মিলিত শাস্তি প্ৰদান করেন- কখনো বা নিষ্পাপকেই বেশি— তা এখনো মানববোধের বহির্ভূত বিষয়! এ ব্যাপারে মুসা নবী (আ) একবার আল্লাহর কাছে প্রশ্ন করেছিলেন: হে আল্লাহ! জগতে তোমার ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ! আমি মানুষকে এ ব্যাপারে সদুত্তর দিতে অক্ষম। এ রহস্য তুমি আমায় উন্মোচন করো। জবাবে আল্লাহ্ বলেছিলেন: হে মুসা! তুমিও দেখছি আরো অনেকের মত কৌতুহলী ও জিজ্ঞাসু। তুমি যদি তোমার জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে চাও, তবে আগামীকাল প্রথম প্রহরে তুর পাহাড়ের পাদদেশে হাজির হও! এই গায়েবি নির্দেশে মুসা নবী (আ) যথাসময়ে তুর পাহাড়ে যথাস্থানে দাঁড়ালেন। এই অপেক্ষমান সময়ে দেখা গেল মুসা নবীর (আ) দুই পায়ে হাজার-হাজার বিষাক্ত পিঁপড়া তাঁর শরীরে ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে। কতিপয় পিঁপড়ার কামড়ে বিষাক্ত বেদনায় তিনি তাৎক্ষণিক পরিত্রাণের জন্য দুই পায়ে দুই হাতে সজোরে ঘষা দিলেন। এতে অধিকাংশ পিঁপড়াই পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করল। ওমনি সময়ে আসমানি আওয়াজ এল: হে মুসা! সব পিঁপড়া কি তোমাকে কামড়িয়েছে? তাহলে সব পিঁপড়া তুমি পিষে মারলে কেন? (Conversation into the God and Mosses)। কিন্তু স্রষ্টা তো সর্বশক্তিমান। তিনি তো নিষ্পাপ প্রাণকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখেন। তবে তিনি কেন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে নিষ্ক্রিয় থাকেন? এ প্রশ্নের উত্তর আজও অমীমাংসিত। কেউ কেউ স্রষ্টার সপক্ষে বলে থাকেন: নগর পুড়লে কি দেবালয় রক্ষা পায়? কেউ কেউ বলেন, পরীক্ষার সময়ে শিক্ষক তো নীরবই থাকেন!

পরিশেষে মানুষের সকল প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞানের আলোকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, ঈশ্বরীয় সিদ্ধান্ত কোন মানবীয় বিচার ধারা যথার্থ নিরুপণ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানী ব্যক্তিরা কোন মানুষকে কখনো ‘শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী’ বলে ভাবতে পারে না। মানুষের চিন্তার এই সীমাবদ্ধতার কথা রুমির ভাষায় বলা যায়—

‘তুমি যা কিছু চিন্তা করবে, ধারণা করবে তা নশ্বর,
তুমি যা ধারণা করতে বা কল্পনা করতে পার না, তাই ঈশ্বর।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *