জন্মাষ্টমীর উপবাস করিয়া পরদিন মধ্যাহ্নে নিমন্ত্রিত দীনবন্ধুবাবুকে স্বহস্তে পরিবেশন করিয়া খাওয়াইয়া, দক্ষিণা দিয়া, গলায় আঁচল দিয়া প্রণামান্তে বিমলা যখন উঠিয়া দাঁড়াইল, তখন দীনবন্ধু তাহার মুখের পানে চাহিয়া অন্তরের সঙ্গেই বলিলেন, আশীর্বাদ করি মা, পুণ্যবতী হও। প্রাণ তোমার শুদ্ধশুচি হোক, নিষ্পাপ হোক।
দুপুরবেলাটা কিশোরের ল্যাবরেটরি ঘরে তিনজনের খুব আনন্দে কাটিল। প্রথমটা বিমলা দীনবন্ধুর সঙ্গে কথা বলিতে সঙ্কোচ বোধ করিতেছিল, কিন্তু তিনি বলিলেন, আমার কাছে লজ্জা করা বৃথা, কারণ, কাল থেকেই আমি তোমার কাছে ফলাহারের ন্যায্য দাবি নিয়ে প্রত্যহ বিকেলবেলা যাতায়াত শুরু করব। এতদিন জানতুম না বলেই ফাঁক পড়ে গেছে, কিন্তু আর ফাঁকি দিতে পারবে না। এখন শুধু লজ্জার জোরে লোলুপ ব্রাহ্মণকে ঠেকিয়ে রাখা শক্ত হবে।
ল্যাবরেটরির সরঞ্জাম সকল পরীক্ষা করিতে করিতে কিশোরকে বলিলেন, শিশিবোতল তো সাজিয়েছে অনেক কিছু করতে পারলে?
মাথা নাড়িয়া কিশোর বলিল, না। আয়োজন দেখে মনে হয় বটে যে, উদ্যোগও ওর পিছনে বুঝি অনেকখানি আছে। কিন্তু সেটা ভ্রান্তি।
কেন, উদ্যোগ না থাকার কারণ কি?
কারণ কিছুই নেই—তবে–
বিমলা মৃদুস্বরে বলিল, উদ্যোগ খুব আছে, কিন্তু মাঝে মাঝে নিরুৎসাহ হয়ে পড়েন। বলেন, দেশের বড় বড় লোক যা পারলে না, আমার দ্বারা কি তা হবে?
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে কিশোরের পানে চাহিয়া দীনবন্ধু বলিলেন, তাহলে বিশেষ একটা কিছু চেষ্টা করছ?
কুণ্ঠিত হইয়া কিশোর বলিল, ঠিক যে চেষ্টা করছি, তা বলতে পারি না, তবে মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয়, একটা কিছু করি। প্রকাণ্ড কিছু নয়, সে আমার শক্তির বাইরে—ছোটখাটোর মধ্যে এমন কিছু যা দেশের লোকের কাজে আসতে পারে।
দীনবন্ধু বলিলেন, এ তো ভাল কথা। বড় কাজ করবার লোক দেশে ঢের আছে, ছোট কাজের বেলাতেই লোকের অভাব হয়। কি চেষ্টা করছ শুনি?
একটা ফুড বার করবার চেষ্টা করছি, যা বিদেশী মেলিন্স ফুড, হরলিকস, ওভালটিন ইত্যাদির বদলে দেশের রোগী ও শিশুরা নির্ভয়ে ব্যবহার করতে পারে। একটু হাসিয়া বলিল, পারব কিনা জানি না, কিন্তু প্রশংসা যদি কারু প্রাপ্য হয় তো সে বৌদির। আগে আমার কোন সঙ্কল্পই ছিল না, খেয়ালমত এগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতুম। উনিই দিনরাত আমার পেছনে লেগে থেকে এবং স্বহস্তে সাহায্য করে আমাকে এই চেষ্টায় প্রবৃত্ত করেছেন।
উনি তোমাকে সাহায্যও করেন? বিস্মিত দীনবন্ধুবাবু জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া করিয়া বিমলার বিজ্ঞান-প্রীতির বিষয় শুনিয়া পরম আহ্লাদিত হইলেন, বলিলেন, কিশোর যদি নূতন ফুড বার করতে পারে তো সে তোমারই গুণে পারবে। ওদিকে তোমার যে কৃতিত্ব কতদূর, সে তত আমি আজ টের পেয়েছি।
বিমল লজ্জিতমুখে বসিয়া থাকিয়া অল্পকাল পরে বালিশ বিছানা রৌদ্রে দিবার জন্য উঠিয়া গেল। তখন কিশোর স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া বিমলার ইতিবৃত্ত দীনবন্ধুবাবুকে খুলিয়া বলিল। অনুপমের মুখে সেদিন যে দু-চার কথা শুনিয়াছিলেন, তাহা দীনবন্ধুবাবুর মনে কুহেলিকারই সৃষ্টি করিয়াছিল, আজ সব কথা শুনিয়া তাহা পরিষ্কার হইয়া গেল।
যৌবনে যখন অনেকে আদর্শের পশ্চাতে ঘুরিয়া বেড়ায়, সেই সময় একদিন বোধ করি দীনবন্ধুবাবু এমনই একটি আদর্শের কল্পনোক সৃষ্টি করিয়া তাহাতে বাস করিয়াছিলেন, অনাত্মীয় দুটি নরনারীর নিষ্পাপ অথচ স্নেহঘনিষ্ঠ জীবনযাত্রার চিত্র কল্পনা করিয়া আনন্দ পাইয়াছিলেন। নিজের জীবনে তাঁহার সে কল্পনা বাস্তবে পরিণত হইতে পারে নাই। কিন্তু আজ কিশোরের জীবনে সেই আদর্শ সফল হইয়া উঠিয়াছে দেখিয়া তাঁহার অন্তর গভীর প্রীতিতে ভরিয়া উঠিল। দীর্ঘকাল নীরব থাকিয়া তিনি বলিলেন, আমার যৌবনে যদি এ সুযোগ ঘটত, আমিও এমনি আগ্রহে তাকে গ্রহণ করতুম। কিন্তু কিশোর, একটা কথা ভুলো না, সাধারণে একে সহজভাবে নিতে পারবে না, অনেক যাচাই—অনেক পরীক্ষা করে তবে গ্রহণ করবে। হয়তো শেষ পর্যন্ত না-ও করতে পারে, সেজন্য প্রস্তুত থেকো।
কিশোর চুপ করিয়া রহিল, পরীক্ষা যে অত্যন্ত কঠিনভাবেই আরম্ভ হইয়া গিয়াছে, তাহা আর বলিল না।
বেলা পড়িয়া আসিতেছিল, দীনবন্ধুবাবু উঠিয়া বলিলেন, চল, বিনয়বাবুর শরীর খারাপ, তার কাছে গিয়ে খানিক বসা যাক।
কিশোর এ কয়দিন প্রত্যহ দুইবেলা বিনয়বাবুর খোঁজ-খবর লইয়াছে; এই সূত্রে সুহাসিনীর সঙ্গেও দেখা হইয়াছে। বিনয়বাবুর স্বাস্থ্য সম্বন্ধে প্রশ্নের উত্তরে সুহাসিনী বিমর্ষ হেঁটমুখে দু-একটি কথা বলিয়াছে মাত্র। বিনয়বাবু অনেকটা ভাল আছেন, তাহা কিশোর সকালে ওবাড়ির চাকরবাকরের কাছে জানিয়া লইয়াছিল, তাই তাহার আশা সুহাসের দুভাবনামুক্ত সহাস্য মুখখানি দেখিতে পাইবে। দীনবন্ধুবাবুর কথায় সে দ্বিরুক্তি না করিয়া উঠিয়া পড়িল এবং তাঁহার সঙ্গে বিনয়বাবুর বাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইল।
বাহিরের মুক্ত বাতাস হইতে অন্ধকূপের বদ্ধবায়ুর মধ্যে প্রবেশ করিলে যেমন দম বন্ধ হইবার উপক্রম হয়, এই ঘরে পদার্পণ করিবামাত্র ইহাদেরও ঠিক সেইরূপ মনে হইল। ঘরের বাতাস যেন। কি এক অচিন্তনীয় বিপৎপাতে স্তম্ভিত ভারি হইয়া আছে। কেহ কথা কহিল না, সম্ভাষণ করিল না, চোখ তুলিয়া চাহিল না, নতমুখে চিত্রার্পিতের মত বসিয়া রহিল। যেন কোন বিষাক্ত ধূম ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া একসঙ্গে সকলকে হতচেতন করিয়া দিয়াছে।
দীনবন্ধু উদ্বিগ্নভাবে একবারে সকলের মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, কি হয়েছে? সকলে অমন করে বসে যে?
তাঁর কথায় সকলের যেন ঘুমের ঘোর কাটিয়া গেল। অনুপম প্রথম কথা কহিল, কটমট করিয়া কিছুকাল কিশোরের মুখের দিকে তাকাইয়া থাকিয়া মুখ ফিরাইয়া বলিল, দীনবন্ধুবাবু, যা হয়েছে তা এখনই শুনতে পাবেন, কিন্তু তার আগে আপনার সঙ্গীকে এখান থেকে যেতে বলুন। ও রকম লোক আমরা এখানে চাই না।
ঘোর বিস্ময়ে দীনবন্ধু বলিলেন, তার মানে?
বিনয়বাবু এতক্ষণ কেদারায় এলাইয়া পড়িয়াছিলেন, ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিলেন। দুর্বল শরীরের উপর অকস্মাৎ এই দারুণ আঘাত তাঁহার চিন্তাশক্তিকে ছিন্নভিন্ন করিয়া দিয়াছিল। তিনি ভয়ানক উত্তেজিত হইয়া অস্বাভাবিক উঁচু গলায় ঝোঁক দিয়া দিয়া বলিতে লাগিলেন, না না দীনবন্ধু, তুমি ওকে যেতে বলো। দুনিয়ায় যে ভালমানুষ, সবাই তার ওপর জুলুম করে। কাউকে বিশ্বাস নেই! আমাকে দুর্বল পেয়ে,—আমার মেয়েকে–উঃ নির্লজ্জ! না না, সন্দেহ করবার আর স্থান নেই বাপের চিঠি। আমি আর ওর মুখ দেখতে চাই না। আর যদি কখনও আমার বাড়িতে মাথা গলায় উত্তেজনার প্রবল ঝোঁকে দাঁড়াইয়া উঠিতেই মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া যাইতেছিলেন, একলাফে কিশোরই গিয়া তাঁহাকে ধরিয়া ফেলিল। সাবধানে তাঁহাকে আবার চেয়ারে বসাইয়া দিয়া, অনুপমের দিকে ফিরিয়া বলিল, অনুপমবাবু, আমার বিরুদ্ধে আপনার কী অভিযোগ, এইবার খুলে বলুন দেখি।
অনুপম রূঢ়ভাবে বলিল, অভিযোগ আমার নয়—তোমার বাবার; কিন্তু তোমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি করবার প্রবৃত্তি আমার নেই–তুমি যেতে পার। বলিয়া অঙ্গুলিনির্দেশে দরজা দেখাইয়া দিল।
কিশোরের চোখে-মুখে আগুন জ্বলিয়া উঠিল; কিন্তু সে কঠিন বলে নিজেকে সংবরণ করিয়া ধীরে ধীরে বলিল, অনুপমবাবু, তোমার অনেক অত্যাচার আমি সহ্য করেছি, কিন্তু যতই সহ্য করছি, অত্যাচার ততই বেড়ে চলেছে। কলেজের প্রিন্সিপ্যালকে তুমি আমার নামে বেনামী চিঠি দিয়েছিলে, আজ আমার আত্মীয়তুল্য বন্ধুদের আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তুলেছ। এই সব মিথ্যা কলঙ্ক রটানোর শাস্তি এখনই আমি তোমাকে দিতুম—যদি না এ ঘরে দুটি মহিলা এবং একটি পীড়িত লোক থাকতেন। কিন্তু আমি খোলসা করে জানতে চাই, কী তোমার অভিযোগ এবং কিসের জোরে তুমি আমার মিথ্যা কুৎসা প্রচার করে বেড়াচ্ছ? এর নিষ্পত্তি আজই আমি করব।
পরিপূর্ণ অবজ্ঞায় মুখ ফিরাইয়া অনুপম দীনবন্ধুকে বলিল, কৈফিয়ত আমি দিই না! তবে আপনি যদি জানতে চান, তাহলে দেখাতে পারি, কিসের জোরে আমি এই সত্য কথা প্রচার করছি। বলিয়া চিঠিখানি দুই আঙুলে তুলিয়া ধরিল।
দীনবন্ধুবাবু বলিলেন, বটে? কি ওটা দেখি।
চিঠিখানি দুই-তিনবার আদ্যোপান্ত পাঠ করিয়া দীনবন্ধুবাবু মুখ তুলিলেন, কঠোরস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি এ চিঠি পেলে কোথায়?
চিঠি পাওয়ার ইতিহাস বলিতে গেলে অনেক কথাই বলিতে হয়। বিনয়বাবু যে একজন কন্যাদায়গ্রস্ত ধূর্ত শিকারী ও তাঁহার কন্যা অন্যের প্রেমাকাঙিক্ষণী উন্নতিশীলা কুমারী, ট্রেনভাড়া দিয়া অযাচিতভাবে এই সংবাদ পশুপতিবাবুকে জানাইতে যাইবার নিঃস্বার্থ পরোপকার-স্পৃহা এবং তৎপরে পশুপতিবাবুর ভাবগতিক দেখিয়া সর্বসাধারণের কল্যাণের জন্য তাঁহার নিকট হইতে এই চিঠি আদায়ের ইতিবৃত্ত খুলিয়া বলিবার এ স্থান নহে। তাই উদ্ধতভাবে অনুপম বলিল, যেখানে পাই, সে খবরে আপনার দরকার নেই।
দরকার আছে। এ চিঠি যে তুমি জাল করে আনননি, তা আমরা কী করে জানব?
অনুপম থতমত খাইয়া গেল, জাল করে এনেছি? আমি? আমার স্বার্থ কি?
ক্রুদ্ধস্বরে দীনবন্ধু বলিলেন, তোমার কি স্বার্থ, তা আমরা সবাই জানি। তুমি কি চরিত্রের লোক, তাও আমার অজ্ঞাত নেই। আমি বলছি, এ চিঠি জাল, তুমি তৈয়ারি করেছ। নইলে কিশোরের বাবা তোমাকে চিঠি লিখবেন কোন্ পরিচয়ে জিজ্ঞাসা করি? তাঁর সঙ্গে তোমার আলাপ আছে?
দীনবন্ধুবাবুর সুতীব্র প্রশ্নে অনুপম হতবুদ্ধি হইয়া গিয়াছিল, লাফাইয়া উঠিয়া বলিল, কি, জাল করেছি আপনি বলেন? আপনার এতদুর স্পর্ধা?—আচ্ছা বেশ,—ও নিজে বলুক, ওর বাপের লেখা নয়, দেখি ওর কত বড় সাহস। তারপর আমি দেখে নেব।
কিশোর গর্জন করিয়া উঠিল, চুলোয় যাক চিঠি, আমি দেখতে চাই না। তারপর সুহাসিনীর মুখে গিয়া দাঁড়াইয়া গলা নামাইয়া বলিল, আমি শুধু জানতে চাই, তুমি আমায় বিশ্বাস কর কি না। আর যে যা বলুক, ভাবুক, আসে যায় না।
দুই করতলে মুখ ঢাকিয়া সুহাস বসিয়া রহিল, সাড়া দিল না। তাহার মনে হইতে লাগিল, এইবার তাহার দম বন্ধ হইয়া যাইবে, আর বুঝি সে নিশ্বাস লইতে পারিবে না।
কিশোর বলিল, সুহাস, যেখানে বিশ্বাস নেই, সেখানে কোন সম্বন্ধই টিকতে পারে না। যদি আমার চরিত্রে তোমার বিশ্বাস না থাকে, বলে দাও, আর আমি কখনো তোমার ছায়া মাড়াব না।
প্রাণপণ চেষ্টায় সুহাসিনী মুখ তুলিল। হয়তো সকল যুক্তিতর্ক লঙ্ঘন করিয়া কোন আশ্বাসের কথা বলিতে চাহিল। কিন্তু তাহার নীরস কণ্ঠ হইতে এই সন্দেহসঙ্কুল উক্তি বাহির হইয়া আসিল, ও চিঠি কি আপনার বাবার লেখা?
ক্ষণকাল নিশ্চলভাবে দাঁড়াইয়া থাকিয়া কিশোর দীনবন্ধুবাবুর কাছে ফিরিয়া গেল। চিঠিখানা লইয়া তাহার উপর একবার চোখ বুলাইয়া মুখ তুলিতেই দেখিল, সুহাসিনী একদৃষ্টে তাহার পানে চাহিয়া আছে—সমস্ত প্রাণ যেন তাহার চোখের উপর আসিয়া উদগ্রীব আশায় কাঁপিতেছে। কিশোরের বুকের ভিতরটা একবার মুচড়াইয়া উঠিল। কিন্তু সে চিঠিখানা ফিরাইয়া দিয়া আস্তে আস্তে বলিল, হ্যাঁ, চিঠি আমার বাবার লেখাই বটে।
দীর্ঘ কম্পিত নিশ্বাস টানিয়া সুহাসিনী আবার দুহাতে মুখ ঢাকিল।
অনুপম মুখখানা অত্যন্ত বিকৃত করিয়া দীনবন্ধুকে বলিল, হল তো? জাল করেছি। এবার কি বলবেন শুনি? বোধহয় বলবেন, বাপ মিথ্যেবাদী আর ছেলেটি একটি যুধিষ্ঠির।
কথাগুলি কিশোরের কানেও গেল না। সে সুহাসিনীর আনত মস্তকের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিয়া ধীরে ধীরে বলিল, তোমার যখন আমার উপর বিশ্বাস নেই, তখন আমারো তোমার ওপর কোন দাবি রহিল না। বাবার চিঠি আমি মিথ্যে বলতে পারব না, সুতরাং যত লাঞ্ছনাই তোমরা আমাকে দাও সবই আমার প্রাপ্য। অস্বীকার করবার আমার আর পথ নেই। একটু চুপ করিয়া পুনরায় কহিল, মানুষকে চিনতে সময় লাগে; হয়তো কোন দিন মনে হতে পারে আমাকে ভুল বুঝেছ। কিন্তু সেটা অনিশ্চিত, উপস্থিতটাই সত্য। যাক, চললুম। আমার দুর্ভাগ্য, গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত কেবল অনর্থেরই সৃষ্টি করে গেলুম। বলিয়া হেঁটমুখে অন্ধকারপ্রায় ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।
সে চলিয়া গেলে ঘর কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হইয়া রহিল। তারপর সুহাসিনী হঠাৎ উঠিয়া দাঁড়াইয়া যে দ্বার দিয়া কিশোর চলিয়া গেল, সেই দিকে ডান হাতখানা বাড়াইয়া যেন চিৎকার করিয়া কি বলিতে গেল, কিন্তু তাহার অবরুদ্ধ কণ্ঠে একটা কথাও ফুটিল না। অধ্যক্ত একটা কাতরোক্তি করিয়া সে সংজ্ঞা হারাইয়া মাটিতে পড়িয়া গেল।
করবী ছুটির আসিয়া যখন তাহার লুণ্ঠিত মাথাটা কোলে তুলিয়া লইয়া বসিল, তখন তাহারও দুই চক্ষু বাহিয়া প্রবল অশুর ধারা নামিয়াছে।