১৫. এসকাইলাসের মৃত্যু ও অন্যান্য

এসকাইলাসের মৃত্যু ও অন্যান্য

১০ মে।

আজকের ডাকে রঞ্জনের একটা চিঠি এসেছে। জবৃলপুর থেকে ছোড়দির লেখা। ভাই রুনু ছোড়দি লিখেছে, ১৯৩৮ সালের ২১ এপ্রিল শেষরাতে তোর জন্ম। সেদিন দারুণ ঝড়বৃষ্টি। বেলার দিকে হৃষীকেশ থেকে এতোয়ারি বাবা আমাদের বাড়িতে এসে হাজির। হুলুস্থুল কাণ্ড। কদিন থেকেও গেলেন সেবারে। তোর কুষ্ঠি তৈরি করে দিলেন। বলে গিয়েছিলেন, এই ছেলের ৭ মাসে, ১৭ বছরে আর ৪৯ বছরে মৃত্যুযোগ আছে। ৪৯ পেরুলে এ জাতক রাজা হবে। ৭ মাসে কাচকামিনীদের বাড়ির পুকুর থেকে তোকে প্রায় মতই ভোলা হয়। সবাই তাই ভেবেছিল। ঠিক ১৭ বছর বয়সে হয়েছিল সাঙ্ঘাতিক পেরিটোনাইটিস। অপারেশনের পর ওই অসুখ হলে তখন কেউ বাঁচত না। এ বছর ২১ এপ্রিল তোর ৪৯ পূর্ণ হয়ে গেল। যাঃ তাহলে তুই বেঁচেই গেলি শেষ পর্যন্ত। প্রার্থনা করি, আমাদের স্বর্গীয় পরমারাধ্য কুলগুরুর কথার বাকিটাও ফলুক। তুই রাজা হ।

আমি জ্যোতিষে বিশ্বাস করি না। তবে, এই একটি ক্ষেত্রে দুর্বলতা হয়। ইচ্ছে হয় ভাবি যে, ওর জন্মমুহূর্তটি হয়ত অব্যর্থভাবে বলা যায়নি, তাই ৫ দিন এদিক-ওদিক…এমন ভাবনার শৌখিনতাকে প্রশ্রয় দিতে মন চায়, যদিও, আমি জানি, অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু, তার কোনও যথাস্থান নেই, নেই কোনও যথাসময়, সে-আবহাওয়ার কোনও পূর্বাভাস থাকতে পারে না। অন্তত মৃত যারা তাদের কাছে তো নয়ই। দুর্ঘটনায় যারা মারা যায়, তারা দেশে মরে না। বিদেশেও মরে না। তারা রাত ৯টায় মরে না, বা ভোর ৬টায় মরে না। পৃথিবীর দেশ-বিদেশ বা পৃথিবীর সময় তাদের পক্ষে প্রযোজ্য হয় না।

গ্রিক নাট্যকার এসকাইলাস জ্যোতিষে বিশ্বাস করতেন। তাঁর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, অমুক তারিখ থেকে অমুক তারিখের মধ্যে মাথায় আঘাত লেগে তাঁর মৃত্যু হবে। এসকাইলাস দিকচিহ্নহীন প্রান্তরে গিয়ে বসে রইলেন। সেখানেই কদিন আহার-নিদ্রা। হয়ত মৈথুন। আকাশ থেকে তো কিছু পড়বেনা, এক আকাশ ছাড়া! দুর্নিরীক্ষ উঁচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল একটা ঈগল, কচ্ছপের খোল ঠোঁটে নিয়ে। সেটা মাথায় এসে পড়ল। অত বড় নাট্যকারের তাতেই মৃত্যু হয়। আকাশ ব্যাপারে এ নিশ্চিন্ত যদিও এমনকি, পারস্যের সেই নিরক্ষর উপজাতি-প্রধানেরও ছিল না, তুমি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কাকে ভয় করো বিজেতা আলেকজান্ডারের এই প্রশ্নের উত্তরে অভিপ্রেত আলেকজান্ডার না বলে যে বলেছিল, আকাশ!

সত্যি, কার মাথায় কখন আকাশ ভেঙে পড়বে এবং কোথায় আর কীভাবে, আগে থেকে তা টের পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। জুতো পালিশ করতে করতে বা চুম্বন, কখন যে মারা যায়নি মানুষ! মন্দিরে-টয়লেটে কোথায় নয় যে। রোমের সম্রাট ক্লদিয়াসের দরবারে সম্রাটের কানে শব্দ ও নাকে গন্ধ যেতে পারে এই ভয়ে বাতকর্ম চেপে রাখতে রাখতে এক বিদূষকের বায়ু-চাপে হার্ট-স্ট্রোক হয়। দুহাতে বুক চেপে সে রাজসভায় লুটিয়ে পড়ে।

চুড়ান্ত অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হয়েছিল বটে বাদলের বড় পিসেমশায়ের। তিনি ছিলেন বামার লরির বিলেত-ফেরত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বেনেটোলার বাড়িটা বাদলের বাবা জলের দামে কিনে ফেললে, একদিন দেখতে এসে, সেদিন মহাঅষ্টমী, বুঝেছ উপেন, এই সিঁড়িটা বেশি দিন থাকবে না, এটা তাড়াতাড়ি সারিয়ে নিও এই না বলে বেড়াবার ছড়ি দিয়ে যেই একটা খোঁচা দিয়েছেন সিঁড়িতে, অমনি হুড়মুড় করে সেটা কিনা তাঁর মাথাতেই ভেঙে পড়ল! তাই বলছিলাম, অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু, এর কোনও জাত নেই। স্থান নেই। সময় নেই।

১ মে রাতের স্বপ্নে, গায়ে অ্যাপ্রন ও রক্তাক্ত গ্লাভস হাতে সিরিঞ্জ আমার দিকে তুলে ধরে রঞ্জন প্রশ্ন করেছিল, তুই আমাকে আগে বলিসনি কেন?

শিল্প-সাহিত্যে, কবিতায়, সময় কেমন এগিয়ে-পিছিয়ে যায়, কত অবলীলভাবে। সেখানে আগে থেকে জানা যায় কত কিছু। গীতার মূর্তিমান, জীবিত যুযুত্সবা: কত সহজে কুরুক্ষেত্রে আগে থেকে মরে পড়ে থাকে। অপরাহ্নে খুন হবে সান্তিয়াগো নাসার, তার রক্ত ক্রনিক অফ আ ডেথ ফোরটোল্ড-এর পাতায় মধ্যাহ্নেই ঘাতকের ছুরি থেকে ঝরতে থাকে। জীবনেও এমনটা হয়। হয়ে থাকে। কিন্তু, আগে থেকে কিছুই বোঝা যায় না। কেন যে।

দীঘা, ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭। ২৬ এপ্রিল তখনও প্রায় তিন মাস দূরে। সেই অনাগত ২৬ এপ্রিলের ক্যালিফোর্নিয়ার রাত-উপকূলে জেগে উঠে নীল প্যাসিফিক ও পীতাভ দক্ষিণ চীন সমুদ্র পেরিয়ে, সরু মলাক্কা প্রণালীর মধ্যে দিয়ে চলে এসে, ভারত মহাসাগরও পিছনে ফেলে, বঙ্গোপসাগরের ঘোলা জলে যখন ঘাই মারল খুনে-খরশান সেই নীল ঢেউ, হাঁটু-জলে লাইফ বেল্টের ওপর সুমিতা তখন শুয়ে আছে। সুমিতা সাঁতার জানে না। তাই আমি আর লেদু আছি কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। সে এসে প্রথমে তাকে উল্টে জলের মধ্যে ফেলে দিলে। এমন বিজাতীয় অর্বাচীন ঢেউ, যাতে এত নীলাভা, এত বড় ঢেউ, এখানে, তীরের এত কাছে আর এই শীতশেষের শুরুতে— দীঘার বেলাভূমিতে এ ছিল প্রায় কল্পনাতীত। আমরা দেখলাম, এক অ-দেখা নীল জলপ্রবাহের মধ্যে সে চিৎহয়ে শুয়ে। তা, এমন ঢেউ একটি বই তো না, সরে যেতে কসেকেন্ড দুই, চার, পাঁচ… আর কত। আমি তাই কাছে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। জানি, জল ভেঙে কাছে পৌঁছবার ঢের আগেই ও উঠে দাঁড়াল বলে। কিন্তু, এ কি অবিশ্বাস্য! সুমিতা ওঠবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করার আগেই উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কোনাকুনিভাবে একবার এবং দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে কোনাকুনিভাবে আর একবার, দু-দুবার ফিরে এসে সে ওকে জলের নিচে চিৎ করে শুইয়ে রাখল। তারপর আর এল না।

এতক্ষণে আমি ওর পাশে চলে গেছি। সম্পূর্ণ সরে যাওয়ার আগে স্বচ্ছ-নীল সেই বিদেশি অপর-জলের মধ্যে আমি স্পষ্ট দেখলাম, মৃত্যুর পর যে হিমাভা ওর মুখে ছড়িয়ে থাকার কথা, তা এখনই ওখানে লেগে আছে। আজ যদি আমি বলি, গীতা বা ক্রনিক-এ যেমন, ২৬ এপ্রিল মার্সেদে ওর মৃত্যুর তিন মাস আগে আমি ওকে দীঘায় মৃত দেখেছি, তাহলে আমি একটুও মিথ্যে বলবনা।

তবু কেন যে বুঝতে পারিনি। কেন যে আগে বলে দিইনি, ওগো জীবন, তুমি সাবধান। তুমি মরে গেছ।

কেন যে।

মার্সেদের দিকে সোজা সড়ক ফ্রি-ওয়ে নাইনটি ওয়ান ছেড়ে কেন সে ১১৩ ধরে সানফ্রান্সিসকোর দিকে ওভাবে বেঁকে গেল, তা শুধু আমি জানি। আর জানত সে। সারপ্রাইজ দেবে বলে সে রঞ্জনকে কিছু বলেনি।

দীঘা থেকে ফেরার পথে, বাসে খুবই ক্যাজুয়ালি সুমিতা আমার কাছে জানতে চেয়েছিল, আচ্ছানদা, স্কেল-চেঞ্জিং হারমোনিয়ামগুলো কি আজকাল পাওয়া যায়, ওই যে-গুলো পোর্টেবল? একসময় ডোয়ার্কিন খুব এক্সপোর্ট করত। কী কিউট, না?

যাওয়ার আগের দিন দুপুরবেলা মানকুণ্ডু থেকে ঘেমে-নেয়ে একসা হয়ে ফিরে, বিছানার ওপর, দরজা খুলেই, নতুন, এক্সপোর্ট-কোয়ালিটি, পোর্টেবল হারমোনিয়ামটি দেখতে পেয়ে সে কী উন্মাদনা তার মুখে-চোখে! মন্ত্রচালিতেরমতো হেঁটে গিয়ে, একেবারে কোলেটোলে তুলে নিয়ে সেটা, স্টপারগুলো খুলে ও বন্ধ করে, কী ক্ষিপ্রতায় সে সরগমে ভরিয়ে তুলল তার ঊর্ধ্ব ও অধঃ চেম্বার যখন জ্ঞান ঘোষের গ্রেন ও বন্দিশ পেরিয়ে এসে ঝরে পড়তে লাগল তার হাস্কি গলা থেকে: গোলাপ জানে, বকুল জানে
মঞ্জরী আর মুকুল জানে
মোর গগনে কোন ফাগুনে
হেসেছিল কোন সে রাগিণী…

এত আগ্রহ! এ কি নয় নিদ্রাতুরার যাই বলে নিশিডাকে সাড়া দিয়ে ওঠা। আমার তখনই ভীষণ অমঙ্গলময় মনে হয়েছিল।

ফিরে যাওয়ার সময় সব গেল। শুধু হারমোনিয়ামটি গেল না। ওজনে শুধু ওটাই বেশি হয়ে গেল?বিশাল স্কাইব্যাগ ফেলে যাবে, তবু হারমোনিয়ামটি সে ছেড়ে যাবে না কিছুতে। আমি কথা দিলাম, যত তাড়াতাড়ি পারি পাঠিয়ে দেব।

সব গেল। আনক্যারেড লাগেজ হিসেবে গেল না শুধু হারমোনিয়ামটি। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল কেন। স্কাইব্যাগ রেখে, হারমোনিয়ামটা ওকে কেন যে তখনই নিয়ে যেতে দিইনি। তাহলে তো, ২৫ এপ্রিলের ভোররাতে, ৯১ নং ফ্রি-ওয়ে ছেড়ে ১১৩ নং ধরে ওভাবে

সহসা বেঁকে সানফ্রান্সিসকোর দিকে সে স্বামীপুত্রকে টেনে নিয়ে যেত না।

কেন না, এ শুধু গোলাপ জানে, আর বকুল জানে, আমি জানি আর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স জানে যে, সেই আনক্যারেড হতমানিনী হারমোনিয়ামটি সানফ্রান্সিসকো বিমানবন্দরের এয়ারকার্গোর অন্ধকার গুমঘর থেকে প্রেতিনীর হাতছানি দিয়ে তখন ওকে ডাকছিল।

 

১০ মে।

কাল লিভারমোরে শ্রাদ্ধ। লেদু ফিরে এসেছে।

কত খড়কুটোই যে এই অটুট ধ্বংসস্তুপ থেকে তুলে এনে সে আমাকে মাঝে মাঝে দেখায়। কাল কোথা থেকে পেয়ে একটা ছোট্ট, খুব গরিব কার্ড এনে দেখাল। তাতে লেখা: ডাঃ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, সুচরিতে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। গ্রহণ করুন। চিন্ময়ী রায়চৌধুরি। ৭ আগস্ট। ১৯৬৭

তখনও বিয়ে হয়নি আমাদের। কার্ড হাতে পেয়ে বুঝলাম, এটা আসলে ছিল রঞ্জনের কাছে চিনুর একটা নোটিস। যে, আমি আছি। আমি আসছি।

কার্ডটা উল্টে দেখি, পিছনে রঞ্জনের হাতে লেখা: ভাই নদা, আমার…

ব্যস এইটুকু। আর কিছু লেখেনি। ২০ বছর পরে মার্সেদে ওদের বাড়িতে বসে আমি, ভাই নদা আমার উচ্চশিক্ষার্থে এ মহাশ্মশান যাত্রার শেষ কোথায় এভাবে বাক্যটি সম্পূর্ণ করছি দেখি।

১০ মে।

হাইওয়ে ট্রাফিক ট্রেলের ডিউটি অফিসার সার্জেন্ট ববি স্টিলম্যান এসেছিল কালো পোশাকে শোকপ্রকাশ করতে। বয়স হবে ২৪/২৫, দেখতে সিলভেস্টার স্ট্যালোনের মতো। মাথায় বালি রঙের পাতলা চুল যা কপালের দুপাশ থেকে ধনুকাকারে বেঁকে এই বয়সেই পিছন পর্যন্ত ঝরে গেছে। দেখে মনে হয়, শিগ্‌গিরই সবটায় টাক পড়ে যাবে। বৌ বলে যার পরিচয় দিল সেও রীতিমতো ঢ্যাঙা, শরীরে-স্বাস্থ্যে তাকে একটি মেয়ে-রোবো বললেই হয়।

ববি বলল, অ্যাক্সিডেন্ট রিপোর্ট পাওয়া গেছে। গাড়ি চালাচ্ছিল সুমিতা। গোলাকার লাল মাথাভর্তি কালো কালো তিল চুলকে সে আমাকে নানাদিক থেকে সান্ত্বনা দেয়। যেমন, যাক, ছেলেটা তো বেঁচে গেছে। তোমার মেয়ের তো যাওয়ার কথা ছিল ওদের সঙ্গে, তাইনা? ইত্যাদি। কুকুতে নীল চোখ থেকে স্টিল ফ্রেমের শৌখিন প্যাশনে খুলে এই ববিই আমাকে শেষ পর্যন্ত ভৌত-বিজ্ঞানের এক পরমাশ্চর্য খবর জানাল। যেভাবে মুহূর্তে দপ্ করে জ্বলে উঠেছিল, সে বলল, তাতে গাড়ির ভেতরে অক্সিজেন ২ থেকে ৩ সেকেন্ডের মধ্যে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হওয়ার কথা। এদিক থেকে মৃতরা দগ্ধযন্ত্রণা ভোগ করেনি বললেই হয়। তার আগেই অক্সিজেনের অভাবে তারা মরে গেছে।

ইট ওয়জ মিয়ারলি দ্য কর্পসসেস দ্যাট দা ফায়ার কুড বার্ন– সে এভাবে আমাকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করে।

বিদায় দিতে গিয়ে দরজা বন্ধ না করে আমি অপসৃয়মাণ গাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওরা এসেছিল একটা লম্বাটে কালো পুরনো মডেল ভ্যান গাড়িতে চেপে। অবিকল হিন্দুসকার সমিতির গাড়ি।

১০ মে।

২৮৫৬ হোয়াইট গেট ড্রাইভে যখন ঢুকি, মাঝে মাঝে মনে হয়, এই বাড়ির প্রবেশদ্বারে উৎকীর্ণ রয়েছে ৩৫ শতাব্দী আগেকার সেই ফলক, যাতে লেখা:

মৃত্যুর ডানা তাকেই স্পর্শ করুক
যে নিদ্রাভঙ্গ করবে এই প্রবলপ্রতাপ ফারাও-এর
যিনি এখানে শুয়ে আছেন
অনন্তকালের জন্য…

যা লেখা ছিল টুটানখামেনের সমাধিমন্দিরের প্রধান ফটকের ওপর। ভয় হয়, শৃগাল-দেবতা আনুবিস এ-বাড়ির মধ্যে কোথাও হাঁটু পেতে বসে আছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *