০৭. আল কাপিতান

আল কাপিতান

৩০ এপ্রিল

প্রকৃতি শূন্যতা সহ্য করে না।

যা ভেবেছিল, ভুল। এখানে জীবন এসে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যু তাকে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে। অনভিপ্রেত অতিথি মাত্র চারদিন যেতে না-যেতেই বলছে, তবে উঠি রে।

কিচেন-সংলগ্ন টেবিলে অমিয় আর ছন্দা বসে আছে। সামনে একটা প্যাড। হোল্ডারে গুচ্ছের ডট পেন। আর, আজকের খবরের কাগজ অনেকগুলো। ছন্দা চা খাচ্ছিল। আন্ডারলাইন করার বদলে, বেঢপ মোটা মার্কার কলম দিয়ে একটা সম্পূর্ণ প্যারাগ্রাফের লাইনগুলোর ওপর স্বচ্ছ হলুদ কালি বোলাচ্ছিল অমিয়। ওরা আমার দরজা খোলার শব্দের দিকে মুখ তুলে তাকায়।

মর্নিংনদা, ছন্দার গলার সুরে আত্মীয়তা, ঘুম হয়েছিল?

ঠিক আছে। আমি বলি।

বসুন। চা করি আপনার জন্যে। এক কাপ জল কুকিং রেঞ্জের একটা বাক্সের মধ্যে রেখে সে কাচের ডালাটা তুলে দেয়। দূটো-তিনটে বোতাম টিপে। ভেতরে আলো জ্বলে ওঠে। ফুটন্ত জলসুদ্ধ কাপ বের করে এনে তাতে টি-ব্যাগ, সুগার আর শুকনো দুধ-কিউব মিশিয়ে চা পরিবেশন করতে তার এক মিনিটের বেশি সময় লাগে না।

এগুলো মাইক্রোওয়েভ ওভেন। এক কাপ জল ২০ সেকেন্ড। বলতে বলতে ছায়া ঘনিয়ে এল ছন্দার মুখে, সুমি আগুনকে ভয় করত খুব। রান্নাবান্না সব মাইক্রোওয়েভেই করত।

অমিয় ওয়েস্ট কোস্ট স্টার নামে একটি কাগজ আমার দিকে নিঃশব্দে এগিয়ে দেয়। প্রথম পাতার ডান দিকের সেকেন্ড লিডটা কালো সাইন পেনে চৌকো করে বর্ডার দেওয়া।

তিন কলমের হেডিং: টারলক বয় প্লিডস ইন্নোসেন্স। ছেলেটির নাম জন পার্ল। বয়স ১৯। তার এক কলম ছবি।

টারলক? চেনা-চেনা লাগছে। অ্যাঁ-হ্যাঁ, মনে পড়ল, এইটারলকশহর ছিল জন আপডাইকের কাপল উপন্যাসের চরিত্রদের লীলাক্ষেত্র। সেটা তাহলে ধারেকাছেই? টারলকের সেই জোড়ায়জোড়ায় ইদুর-দম্পতি, এর গোড়ালি ওর পায়ে বাঁধা— তাদের খাড়া-ল্যাজ ইঁদুর-দৌড়। ইঁদুর বৌ-দের অনবরত বিছানা-বদল। সব নাম ভুলে গেছি, তবু বেশ কিছু লোক, যাদের সঙ্গে দেখা হলেই চিনতে পারব, এমন কিছু মানুষের কাছাকাছি কোথাও আমি, এই বিভুই-এ, এমনটা ভেবে একটু স্বস্তি বোধ করছি দেখি।

জন পার্ল বিধবার একমাত্র ছেলে। বাড়ি টারলকে। ড্রপ-আউট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাকে। সে বেকার ভাতা পায়। সান্টা মারিয়া থেকে সে একটা খালি পিক-আপ ভ্যান নিয়ে যাচ্ছিল স্টকটনের দিকে, ফ্রি-ওয়ে হান্ড্রেড থার্টির ৩নং লেন ধরে না, গাড়িটা তার নয়। তার বন্ধু স্যাম পিয়ার্সনের। হ্যাঁ, সে কিছুটা মদ খেয়েছিল। কিন্তু সে তো দুপুরবেলায়। অনেক আগে। হা, স্পিডলিমিট ছাড়িয়ে সে গাড়ি চালিয়েছিল কিছুক্ষণ। একসময় ছিল ৯০ মাইলে, ৬০-এর লেনে। বোধহয় রাডারে ধরা পড়ে যায়। ট্রাফিক-পেট্রল তাকে তাড়া করে। পুলিস বলেছে, না? তাড়া করেনি! পিছনে জোর আলো ফেলে অনেকক্ষণ ধরে তবে কারা আসছিল? তার তাই মনে হয়েছিল, এনিওয়ে। যে, পুলিস! তখন রাত? ১০টা হবে। মডেরা শহর থেকে বেরোবার মুখে শোল্ডার থেকে নেমে এল একটা নীল রঙের লিঙ্কন। সে তখন পুলিসের ভয়ে প্রাণপণে চালাচ্ছে। সে ভাবতেই পারেনি যে গাড়িটা ওভাবে নামবে। গাড়িটার পেছনে সে সোজা ধাক্কা মারে। উইথ মাই আইজ ক্লোজড। তাকে অবাক করে গাড়িটা মুহূর্তে দপ্ করে জ্বলে ওঠে। তারপর…

ছন্দা বলল, চা খান নদী। এগুলো পেস্তোশিয়া। সল্টেড পেস্তা। আর এগুলোকে এরা বলে ককি। আমেরিকান বিস্কুট। অনেকটা আমাদের লেড়ো বিস্কুটের মতো, তাই না? বলে কী মনে করে সে একটু হেসেই বলে, আমি দর্জিপাড়ার মেয়ে। আপনারা তো বেনেটোলার?সুমিতা ছিল আমার… চোখের জল লুকোতে সে মুখ লুকোয়, লোকে বলত, অনসূয়া-প্রিয়ংবদা।

টেবিলে ইন্ডিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিয়া অ্যাব্রড, নেভাদা পোস্ট আর মর্নিং স্টার। সবই আশপাশের কাগজ। সবাই ফলো-আপ ছেপেছে কিছু না-কিছু।

টি ভি-র টেনথ-চ্যানেলে থার্টি মিনিটস-এ পুরোটা দেখিয়েছে। ছন্দা জানাল, অঞ্জনের ইন্টারভিউ নিয়েছে। আপনার মেয়েকেও দেখিয়েছে।

গত তিনদিনের খবরের কাটিং ওই বোর্ডটায় ছন্দা টেলিফোনের পাশে বোর্ডটা দেখায়। বোর্ড পিন দিয়ে আটকানো খবরগুলির মধ্যে একটি চার কলমব্যাপী গাড়ির ভস্মীভূত কঙ্কাল! আমি শিউরে উঠি।

অবিচুয়ারি বোর্ডের পাশ থেকে শুরু কিচেনের। কিচেনের গোটা পূর্ব দিক জুড়ে লম্বা গ্লাসপ্যানেল। সুমিতা এখানে দাঁড়িয়ে পূর্বাস্য হয়ে রান্না করত।

…বাবা, আজ কি ওখানে রথ?

…না, রথ তো কাল রে।

…কাকিমা বলল আজ!

…ও-হ্যাঁ, তোদের হিসেবে তাই তো হবে।

.. আমরা এখন রাইস-ক্রিসপি, মানে ঠিক মুড়ি নয়, ধরো চালভাজা— চালভাজা দিয়ে বেগুনি আর পাঁপড় খাব। কাকিমা ভাজছে। ছোটকাকা বলল, তোর বাপকে ডাক। ডেকে বল।

তাই ফোন করলাম।

কুকিং রেঞ্জের গ্লাস-প্যানেল দিয়ে বাড়ির পিছনে বিঘে চারেকের মাঠ পেরিয়ে সিয়েরা নেভেদা পর্বতমালা পর্যন্ত দেখা যায়। দেখা যায় আল কাপিতান। রেড ইন্ডিয়ানরা থাকত মূলত ওখানে, ওই ইওসেমিটি উপত্যকায়। ওখানেই সেই পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু, ৪০০০ ফুটের সাদা-ধূসর ওয়ান-পিস গ্রানাইটের খাড়া পাহাড়: আল কাপিতান। কাপিতান ছিল বিখ্যাত রেড-ইন্ডিয়ান ডাকাত। জানো বাবা? সে যখন ঘোড়া ছুটিয়ে যেত, ঘোড়ার ওপর তাকে দেখা যেত না। শুধু দেখা যেত তার মাথার পালকের মুকুট আর হাতের বর্শা। জানো বাবা, ওই কাপিতান আসছে বলে এখানে ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়ায়।

শরতের ছেঁড়া মেঘ ছাড়া কিছু মানায় না এমন নীল আকাশের দিকে মাঠের বেড়া ডিঙিয়ে বন পেরিয়ে, আল কাপিতান পর্যন্ত সুমিতার চোখের ভেতর দিয়ে আমি দেখবার চেষ্টা করি। সুমিতা নিশ্চয় দেখত। রান্না করতে করতে। মাঝে মাঝে। মুখ তুললেই: আল কাপিতান!

কাপল-এর নায়কের নাম মনে পড়ে গেছে। পিয়েতনাম মনে না পড়ে যাবে কোথায়, চেনা মানুষ! পিয়েতের প্রেমিকার নাম ছিল জর্জি। তাই কী?

টারলক এখান থেকে কতদূর?

টারলক? সে তো খুব কাছে। ৩০ মাইল। কেন, চেনেন বুঝি কাউকে?

অমিয় উঠে গিয়েছিল ডোরবেল শুনে। হাউসক্লিনিং লেডি এসেছে। হাই মারিয়া: অমিয়। শুনলাম, পোটুরিকান। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বের করে সে লিভিং রুমের ভেলভেট কার্পেট ঝাঁট দিতে শুরু করেছে দেখতে পাই।

অ্যাঁ-হ্যাঁ। পিয়েত কী যেন ইঞ্জিনিয়ার বোধহয়। এ নিয়ে আরও কৌতূহল চাপা দিতে আমি মার্কার পেন দিয়ে শোল্ডার শব্দটার ওপর হলুদ বুলাতে বুলাতে তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা, শোল্ডার ব্যাপারটা কী?…

ইউ নো, অমিয় এতক্ষণে নড়ে-চড়ে চেয়ার টানল, দেঁয়ার আর সিক্স লেনস্‌ অন দ্য ফ্রিওঁয়ে। দিঁস হাইওয়ে অঁর ফ্রি-ওঁয়ে অ্যাজ উই প্রেফার টু কঁল ইট, রানস দ্য এনটাঁয়ার ইউনাইটেঁড স্টেটস, ইভন্ থ্রু দ্যঁ ডেঁজার্টস অফ আঁরিজোনা, গ্রু দ্য গ্রাঁন্ড ক্যানিয়ন। দিঁস ইজ দ্যঁ প্রিন্সিপাল আঁর্টারি দ্যাঁট কিপস ম্যারিকান ব্লাড অন দ্যঁ মুভ। আপ অ্যান্ড ডাউন-ও-কেঁ? লাইক দিঁস—সে প্যাডে ছবি আঁকতে শুরু করে, শোল্ডার হল এই ফ্রি-ওঁয়েতে গাড়ি পার্ক করার জায়গা। মাঝে মাঝে, একশো-দেড়শো মাইল অন্তর ওগুলো থাকে। এদিকে তিনটে রাস্তা, ওদিকে তিনটে রাস্তা মাঝখানে শোল্ডার। দুহাতের তালু জড়ো করে, ডাইনে ও বাঁয়ে দুদিকে দুলিয়ে, তারপর জোড়া তালু টেবিলের ওপর সশব্দে ঠকে সে ব্যাপারটা বিশদ করে।

রাত দশটায় ওরা গাড়ি পার্ক করল? যখন বাড়ি থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরে?

অ্যাঁট লিঁস্ট, দ্যাঁট ইঁজ দ্যঁ স্টোরি দ্যাঁট সান-অফ-আ বিচ জন পার্ল ওয়ান্ট টু সেঁএল…

আনুনাসিকতা-সহ দিব্যি একটা ক্যালিফোর্নিয়ান অ্যাকসেন্ট রপ্ত করেছে অমিয়, আমি লক্ষ্য করলাম, অথচ, বাংলা বলার সময় সেটা একদম আসে না ভাগ্যিস। তাহলে, নিঃসন্দেহে, ভূত মনে হত।

রি-রি-রি-রি-রি-রি। ফোন। নন্দিন?

এখানে রিসিভার লম্বালম্বি ভাবে হুকে ঝোলে। কিড়িং-কিড়িং শব্দে বেয়ারা ডাকা নয়। এর স্বর সবল ঝিঝি পোকার। প্রেস-বাটন ডায়াল। রিসিভারের সঙ্গে থাকে ৩০/৪০ গজ তার। রিসিভার নিয়ে ছন্দা লিভিং রুমে চলে গেল। ফিরে এসে বলল, না আপনার ফোন।

হিরণদা, আমি ফ্রিমন্ট থেকে বলছি।

আপনি?

আমি রঞ্জনদার ছোট ভাইয়ের মতো। আমাকে তুমি বলুন। আমার নাম ধূর্জটি পালিত। সাহেবরা সংক্ষেপে বলে ধুজ (হাসি)। স্বর পাল্টে, যাক। দেখুন, যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। হ্যালো…

আমি শুনতে পাচ্ছি। আপনি বলুন।

দেখুন দাদা। কথা বলার মতো অবস্থা আপনার নয়। আমি জানি। এমন মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি… এ তো আমরা কখনও শুনিনি। আই ওয়াজ দ্য লাস্ট ম্যান টু সি দেম অফ। ফ্রম এল-এ। কেন যে, ডি-ট্যুর করে ওরা ফ্রিকো গেল। কী জন্যে? ইটস্ রিয়েলি আ মিষ্ট্রি টু মি। যাক, আপনি এসে গেছেন। জানতাম, কেউ এলে আপনিই আসবেন। আপনিই তো নদা?

হ্যাঁ, আমিই ন’দা।

আপনার কথা সবসময় বলত। হি ওয়জ সো ভেরি প্রাউড অফ ইউ। বাট…মাই ব্রাদার ইজ আ গিফটেড রাইটার। একটু ড্রিঙ্ক করলেই শুরু করত। আমরা হাসাহাসি করতাম। এই রে, আবার নদা শুরু হল।

আর কারও কথা বলত না?

না! আর আপনাদের বাবার কথা।

তাই নাকি? জানতাম না তো।

ও ইয়েস। দ্যাটস ফর শিওর। তারপর যেন গোপন খবর, যেন কাছে ডেকে, ধূর্জটি কানে কানে বলল, হি ইউজড নট টু হোল্ড আ ভেরি হাই ওপিনিয়ন অ্যাবাউট দ্য রেস্ট অফ ইওর ফ্যামিলি, ইউ ননা।

আমি তা জানি। কিন্তু, ফ্ল্যাটার্ড হওয়ার বদলে, এখানে কারও মুখে সে-কথা শুনে খুবই কুৎসিত লাগল। ভীষণ খারাপ লাগল লোকটাকে। রিসিভারের ওপর আমার মুঠো শক্ত হয়ে চেপে বসে যাচ্ছে।

দেখুন, কী বলব, সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তবে একটা কথা বলি। স্বর নামিয়ে, ওই যে ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা পরিত্রাতার ভূমিকায় প্রথম দিন থেকে নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে ওখানে গেড়ে বসেছেন, ইউ মাস্ট হ্যাভ ওয়ান্ডার্ড— হোয়াই?

কী দিক দেখে বলুন তো?

শুনতে পাচ্ছে নাকি? দেখলাম, অমিয় আর ছন্দা জ্বলন্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। বোধহয় ভুল করলাম। টেলিফোন নিয়ে আমি চলে গেলাম পাশের ঘরে।

এই… টাকাকড়ি, গয়নাগাটি, দরকারি কাগজপত্র সবই তো ছড়িয়ে। ধূর্জটি বলে চলেছে, আই হ্যাভ ইনফর্মেশনস যে ওরা অঞ্জনকে নিয়ে ব্যাঙ্কে ভল্ট দেখতে গিয়েছিল। ছেলে মাইনর, হাউ কুড দে মেকআ প্রিপসটারাস মুভ লাইক দ্যাট! আপনি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিল। হাউয়েভার, কিপ অল দ্য রুম আন্ডার লক অ্যান্ড কি। নো বড়ি শুড হ্যাভ এনি অ্যাকসেস টু দ্য কম্পিউটার রুম ইন পার্টিকুলার। ওখানেই সব আছে আমি জানি। উইল আছে। রঞ্জনদা ইউজড টু ট্রাস্ট মি আ লট। ফিউনারাল কবে করছেন?

ফিউনারাল?

হা। আপনার জন্যেই তো সাসপেন্ডেড হয়ে আছে। কিচেনে ফিরে গিয়ে আমি মাউথ পিসে হাত চাপা না দিয়েই জানতে চাই, ফিউনারাল কবে ছন্দা?

আঁই নিড, অ্যাঁট লিস্ট টু-টু-থ্রি ডেঁজ টাইম অমিয় গর্জন করে উঠল, সেঁফ ডিসট্যান্সে বসে খালি ফোন আর কৈফিয়ত। আঁস্ক হিম, হোয়ার ইজন্ট হি হিয়ার— দিস ইজ দ্য ফোর্থ ডে–নট আ সিঙ্গল সোল ইজ অ্যারাউন্ড আজ ইয়েট। হাঃ!

আস্তে, আস্তে ছন্দা বলল।

হোঁয়াট ফর? হোঁয়ায় দা হেল!

ধূর্জটি বলল, আচ্ছা দাদা, আমি আবার ফোন করব। জেনে নেব। মিন হোয়াইল কিপ আ ভিজিল অন মিঃ উইচ অ্যান্ড মিসেস উইচেস। বায়।

খুব সহজভাবে হেসে অথচ আমার চোখের তারায় তার চোখের তারা আটকে ছন্দা যেন কিছু নয়, এমনভাবে জানতে চাইল, কী বলছিল ধুজ?

ফিউনারাল কবে জানতে চাইছিল।

ছন্দা-অমিয় মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। আমাকে বোঝবার চেষ্টা করছে। বুঝছে মনে হল, আমি তাদের মধ্যে পড়ি না, যাদের বলা হয় ওপেন-বুক।

ও, আচ্ছা। তাহলে এই ব্যাপার। বীরিভড়-টার্নড় টুরিস্ট ভাইপোর সঙ্গে দুদিন দুরাত্রি লুডোর খোলে ছক্কার মতো ঝাঁকুনি খেতে খেতে আমি উড়ে এসেছি। আমি জানতাম, মার্সেদে গিয়ে আমাকে পড়তেই হবে। সে ছয়-পাঁচ, তিন-দুই, পাঞ্জা বা পোয়া, যা হয়েই পড়ি। ছেলেটা আর মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে তাদের জেঠকে আর বাবাকে। তারপর ভাই হিসেবে, ভাসুর হিসেবে চোখের জলে ভাসতে ভাসতে ওদের শেষকৃত্য করা— এর বেশি কিছু কৃত্য আমার ধারণায় ছিল না। কিন্তু, এখন দেখছি, আরও একটা লাশ পড়েছে। এবং, তা হল ওদের বিষয়সম্পত্তি, টাকাকড়ির লাশ—–ডানা মেলে শকুনের পাল উড়ে আসছে সেদিকেই—এরা কি সেই লাশের ওপর বসে?

আচ্ছা, এদের বিষয়-সম্পত্তি কত হবে?

সম্পত্তির কথা পরে। অমিয় বলল, দুদিন ধরে বডি সিটি করোনারের অফিসে পড়ে আছে। আসুন, আগে ওদের সৎকারের ব্যবস্থা করি।

অবশ্য, সকার আর কীসের হবে। বডি বলতে তো কিছু নেই। মুখ চোখ বিকৃত করে ছন্দা বলল, শুধু তাল-তাল মাংস। ডেন্টিস বডি আইডেনটিফাই করেছে। সুমি-র তিনটে দাঁত বাঁধানো ছিল। সেটা ছিটকে পড়েছিল। আর আপনার মেয়ের বডি কার্ড।

বডি কার্ড?

হ্যাঁ। ওতে ছবি থাকে। নাম-ধাম থাকে। ড্যাশ বোর্ডে ছিল। ওই গাড়িতেই নন্দিন ড্রাইভিং শিখছিল কিনা। ওগুলো পোড়ে না। ওই জন্যেই তো ভাইস-কনসাল আপনাদের প্রথমে জানিয়েছিলেন নন্দিনও…. কাগজেও প্রথম দিন তাই বেরিয়েছিল। আমরা তো তাই জেনেই এসেছিলাম। যে শুধু অঞ্জন বেঁচে আছে।

ডিং-ডং, ডিংডং, ডিংডং। ডোর-বেল।

প্রথম মোর্নার। থ্রি-পিস ডাভ-গ্রে স্যুট। গ্যাবার্ডিন। হাতে প্রচুর খাবার। সেই প্রথম আর শেষ রোগা আমেরিকান। নাম বলল, হ্যারি। গভীরভাবে মর্মাহত। আবার আসব বলে চলে গেল।

আমরা ওদের মৃতদেহ দেখিনি। প্যাডে হিজিবিজি দাগ কাটতে কাটতে মাথা নিচু করে ছন্দা বলে গেল, দেহ বলতে কিছু ছিল না। এবং ওদের শরীরের সবটাই যে করোনারের কাছে আছে, তাও না বলতে বলতে হাল্কা মেহেদি-রঙা ববড় চুল তার মুখ ঢেকে দেয়, গয়নার বাক্স যেটা গাড়িতে ছিল, তার চারদিকে জমে ছিল তাল-তাল মাংস, যেন সূর্যের তাপে পুড়ে অমন পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। আমাদের তো…. আমাদের তো ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে মাংস ছাড়াতে হয়েছিল। গয়নাগুলোর, আশ্চর্য, কিছুই হয়নি।

ছন্দার ধারণা, গয়নার বাক্সের চারদিকে জমে থাকা যে তাল-তাল মাংসপিণ্ড, তা ছিল সুমিতার। তার মতে, নিজের মাংস ঢেলে সে সম্পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে সেগুলোকে রক্ষা করে গেছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি দীঘা যাওয়ার সময় বাসস্ট্যান্ডেমাথা থেকে একটা হেয়ার-পিন পড়ে গেল সুমিতার। খোঁজ, খোঁজ। সুমিতা একটা এঁটো শালপাতার নিচে থেকে সেটা কুড়িয়ে পেল, তবে পরের বাসে উঠল। আবার টিকিট কাটতে হল।

আর একটা জিনিস মিরাকিলাসলি সেভড় হয়েছে ছন্দা জানাল, কী বলুন তো?

মাইনাস আট-দশ পাওয়ারের সোনালি সেল-ফ্রেমের চশমার মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে চোখের কোণ মুছল সে। ঠিক পরমুহূর্তে, মুখে এনে জীবনের উদ্ভাস, বলল, যাবতীয় ফোন-নম্বর আর ঠিকানা লেখা রঞ্জনদার ডায়েরিটা। ওটাও গাড়িতে ছিল। সত্যি, কী করে যে ওটা বাঁচল। পুরো একটা দিন আমরা হাত গুটিয়ে বসে। কিছু করতে পারছি না। একটা ঠিকানা নেই, কিছু নেই। পুলিস ভাগ্যিস দিয়ে গেল। নইলে তো কাউকে কনট্যাক্টই করতে পারতাম না। ছন্দা গর্বের সঙ্গে বলে যায়, দেখবেন, কত লোক আসবে ফিউনারালে। কত ভালবাসত সবাই রঞ্জনদাকে। অ্যাজ আ সার্জন, হি ওয়াজ অ্যাট দা টপ। বলতে বলতে চশমা খুলে সে রুমাল বের করে।

৫ থেকে ১০ মিনিট অন্তর মোর্নাররা আসতে থাকে। হাতে রাংতা দিয়ে মোড়া কাগজের থালায় খাবার, বা, ঝুড়িতে ফল। ফুলের দোকান থেকে খেপে খেপে ফ্লাওয়ার-স্ট্যান্ড বা ফ্লাওয়ারবাস্কেট আসছে। সঙ্গে কার্ড। একজন স্নিগ্ধ, আত্মকর্মক্ষম, দুচার ডায়ালগের অভিনেতাকে বদলিহিসেবে সহসা ট্র্যাজেডির হিরো-চরিত্রে নামালে সে যতটা পারে, ততটা আপ্রাণভাবে করমর্দন করতে করতে আমি সমানে আই অ্যাপ্রিসিয়েট বলে যাচ্ছি। গ্রেগ লুইস নামে এক কালো দৈত্য এসে, কী যেন করে, সমানে ডাঃ চ্যাটার্জির প্রশংসা করে যাচ্ছে, তারপর সে যখন ইট উইল টেক আ লঙ লঙ তাইম তু…তু…ফরগেত আ পার্সন লাইক হিম বলছে, দেখি তার সাদা চোখে জল আমি অভিভূত হয়ে তার দুহাত জড়িয়ে আই অ্যাম গ্রেটফুল টু ইউ যেই না বলেছি, মনে হল, দারুণ রেগেই যেন সে চিৎকার করে উঠল, নো নিড! আমি তার হাত চমকে ছাড়িয়ে নিয়ে দুপা পিছিয়ে আসি। তা নয়, ছন্দা আমাকে পরে বোঝাল, আসলে ও বলতে চেয়েছে, ইংরেজরা যেমন বলে, নিড নট মেনশন। তবে, ওর গলাটা ওইরকম রাগী। মেঘের হুঙ্কারের মতন। আমি ভেবেছিলাম, ও বলছে, তোমার কৃতজ্ঞতার আমি পুটকি মারি। ছন্দা বলল, শুধু ডায়ালেক্ট নয়,

এদের ভাষা একদম আলাদা।

সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় শোক প্রকাশ করে গেলেন পাশের বাড়ির মিসেস স্টেইনসন। ভদ্রমহিলা রোগা, একা বিধবা, ৫০, ছেলে থাকে লাস ভেগাসে। ছাই রঙের গোড়ালি পর্যন্ত স্কার্ট পরে শুধু তিনি হেঁটে এসেছিলেন। দুঃখ জানাতে এসে, শুধু তাঁরই দেখলাম, ওই নামের শব্দটির আদৌ দরকার হয় না। মাই পার্স ইজ ইওর্স তিনি মাথা নিচু করে শুধু এইমাত্র আমাকে জানালেন।

দুটোর সময় নন্দিন ফিরে এল। ততক্ষণে ডাইনিং রুম ফল আর খাবারে বোঝাই। লিভিং রুমে রঞ্জন, সুমিতা আর জীয়নের ছবি রেখেছে ছন্দা। সমস্ত ফুল সেখানে রাখা হচ্ছে।

যাওয়ার সময় ঝি মারিয়া অনেকক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। কী ব্যাপার। অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ করছি, এমন সময় সে বলল, আমার চোখ থেকে চোখ না সরিয়ে, স্ট্রেঞ্জ! ব্যাপার কী!

ইউ লুক একজ্যাক্তলি লাইক ইওর নেফিউ। ওনলি দিফারেন্স, হি ইজ মাচ মোর স্ত্রং। সে বলে গেল।

অর্থাৎ, অঞ্জন। আমি তা জানি। ছোটটাকে দেখতে হয়েছিল ওর বাপের মতো।

সকালে সেই যে বেরিয়েছে অঞ্জন, আর দেখা নেই। একটা ফোনও করেনি। ওর সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে।

৩০ এপ্রিল।

৩টের সময় জেফ কোনিগ ফোন করল। ৩টে বলতে দুপুর নয়, কারণ, এরা বলেছে সন্ধ্যা হবে রাত ৮টায়।

জেফ রঞ্জনের অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বিস্তর শোকপ্রকাশ করে সে জানতে চাইল, আমরা খরচাপত্র চালাচ্ছি কী করে। আমি বললাম, আমাদের সঙ্গে হাজারখানেক ডলার আছে। আর বাড়িতে তো প্রচুর খাবার-দাবার। জেফ বলল, ফিউনারালের বিষয়ে আমি কী ভেবেছি। শুধু ফিউনারালেই ১০ হাজার ডলারের মতো খরচ হতে পারে। একটু ইতস্তত করে সে বলল, আমি যদি তাকে টেম্পােরারি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করি, তাহলে ডাঃ চ্যাটার্জির এস্টেট থেকে সে আপাতত সব বিল মেটাতে পারবে। এটা অবশ্য একটা খুবই টেম্পােরারি অ্যারেঞ্জমেন্ট, ও বলল, আগামী তিন বছরের জন্য এস্টেটের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং ছেলের গার্জেন কোর্ট থেকে যতদিন না হচ্ছে শুধু সেই কদিনের জন্য। দিস ইজ নো বাইন্ডিং, ও বলল। ওকে, এ বিষয়ে একটু পরে জানাচ্ছি বলে ফোন রেখে, আমি ছন্দা আর অমিয়র পরামর্শ চাইলাম। এখন আমার মুশকিল একটাই, কে বিশ্বাসযোগ্য, বা কারা? আসার আগে জানতাম, আমার কাজ একটাই এবং তা হল—এখানে এসে-পড়া। তারপর চিৎপাত ভেসে-থাকা, শোক-সাগরে। ভেসে-যাওয়া। কিন্তু, ওই চিত্রকল্পের সূত্র ধরে বলা যায়, তীরে এত ঢেউ, ঢেউয়ের পরমুহূর্তে ঢেউ যে, কাল থেকে আমি হাঁটু জলেও নামতে পারিনি।

ওরা রাজি হল। মনে হল, বেশ খুশি, ওদের কাছে আমার এই প্রথম আত্মসমর্পণে।

ওদের দুজনের মধ্যে কথা বলে ছন্দা, অমিয় স্ত্রীর ইঙ্গিত না-পাওয়া পর্যন্ত চুপ করে থাকে।

ছন্দা অমিয়কে বলল, তাহলে ফিউনারাল পরশুই হয়ে যাক। তুমি জেফকে ডাক।

অমিয় জেফকে ফোনে ধরলে আমি বললাম, তাহলে কাগজপত্র আনো, আমি সই করে দিচ্ছি।

জেফ যা বলল, তা শুনে এ-দেশে এসে এই প্রথম আমি অবাক হলাম। বা, আমেরিকা জিনিসটা কী, তার প্রথম স্বাদ পেলাম, এভাবেও বলা যায়। জেফ বলল, আজ রবিবার। কাল সকাল থেকেই আমি যেন সমস্ত বিল তার অফিসে পাঠাই। সে কাল সকালে কোর্ট বসলেই, জাজকে একটা স্টেটমেন্ট দেবে যে ডাঃ চ্যাটার্জির নিয়ারেস্ট রিলেশান তার দাদা তাকে টেম্পােরারি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করেছেন।

আমার মুখের কথাতেই হবে?

সেটাই যথেষ্ট। এখানে কেউ মিথ্যে কথা বলে না।

শুনে ছন্দা বলল, তা ঠিক। কিন্তু এখানে কেউ কারুকে বিশ্বাসও করে না।

কাদের দেশে এসেছি, জানবার ইচ্ছে হওয়া স্বাভাবিক। আমি বললাম, আর-একটু বলুন।

 

না, আমি খারাপভাবে কথাটা বললাম না। তবে, খুব একটা ভালও নয় হয়ত ব্যাপারটা। ছন্দা হাই তুলে বলল, আসলে, এদের কারুকে বিশ্বাস করার দরকারই হয় না। কারণ এদের আত্মবিশ্বাস আছে।

জেফ বলছিল, এখানে কেউ মিথ্যে কথা বলে না।

বলবে কোত্থেকে, মিথ্যে কথা তো বলে মানুষ। কারণ, মিথ্যে বলতে বুদ্ধি লাগে। এখন, একটা বাঘ এসে যদি বলে আমি মিথ্যে বলি না, আমি বলি, হালুম, আপনি কি খুব ইমপ্রেসড় হবেন? সেটাকে তার সততা বলবেন? অনেস্টলি, দে হ্যাভ হার্ডলি এনি চয়েজ ইন দা ম্যাটার। সে হঠাৎ উঠে পড়ে বলল, চলুন বাড়িটা দেখবেন। আগে বাইরেটা দেখি চলুন। তারপর ভেতরটা দেখবেন। তুমি থাক।

ফিউনারাল কবে হবে?

পরশু। ও হ্যাঁ, তুমি জেফকে বল, সে অমিয়র দিকে ঘাড় বাঁকায়, সমস্ত অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে।

বেশ একটা রানী রানী ভাব ছন্দার আত্মপ্রত্যয়ে। চোখ ছাইরঙা। চুলের রঙ বাদামি। হংসিনী গ্রীবা।

সামনে দিয়ে বেরুলে দীর্ঘ ড্রাইভওয়ের দুপাশে সবুজ ছাঁটা ঘাসের লন। অনেকগুলো অজানা গাছ। এটা মেহগিনি যেতে যেতে ছন্দা একটার গায়ে হাত রাখে। আমরা বাড়ির পিছনের বিশাল কোর্ট ইয়ার্ডের দিকে গেলাম। যেতে যেতে দেখলাম পথের ধারে তিনটে নুড়ির মতো অনুল্লেখযোগ্যভাবে তিনখানা গাড়ি পড়ে আছে। এটা ক্যাডিলাক, ওটা মার্সেডিজ, এটা কামপারা, যেতে যেতে ছন্দা হাত রাখে গাড়িগুলোর গায়ে। লিঙ্কন কন্টিনেন্টালটা তো গেছে। বিশাল গাড়ি ছিল, নীল রঙের। সুমি ওটাই বেশি চালাত। দামি বলে, শুধু টার্বো পোর্সাটা আছে গ্যারেজে।

আহা, রঞ্জনদা বারদুয়েকও চাপেনি।

এখন ৭টা। খাঁটি বিকেলবেলা। হাওয়ার জোর বাড়ছে। বসন্তের আবহাওয়া। যেতে যেতে ঙ্কিলারগুলো নিজের থেকে খুলে গিয়ে, মাঠময় বৃত্তাকারে জল ছড়াতে লেগেছে।

আমরা মাঠের ধারে সাদা রঙ করা কাঠের বেড়া পর্যন্ত গেলাম। ছন্দা বলল, ওই যে বনটা দেখছেন ওটাও চ্যাটার্জির্দার। অ্যামন্ড আর ওয়ালনাটের পর পর দুটো অৰ্চাৰ্ড। মাইল তিনেক লম্বা হবে।

আমরা সুইমিং পুলে গেলাম। ৭২ ফিট লম্বা। মার্সেদে এত বড় সুইমিং পুল আর কারও নেই। একে বলে জাকুসি। মাঝখানের দেওয়াল দিয়ে ভাগ করা ছোট অংশটায় গরম জল। ধোঁয়া ওড়ে। হট স্প্রিং আর কী। বাকিটা কনকনে ঠাণ্ডা। পরপর দুটোয় স্নান করে উঠলে ক্লান্তি বলে কিছু আর থাকে না। মার্সেদে জাকুসি আর কারও নেই। গার্ডেনারের নাম আমোস। সে পুলের জুল তুলে ফেলেছে। আমি দেখলাম পুলের ধারে কাঁটা চামচ আর একটা শুকনো কোয়ার্টার প্লেট পড়ে আছে। একটা প্রকাণ্ড সোনা ব্যাঙ পাশেই সোফায় বসে আছে এখনও না লাফ দিয়ে।

অঞ্জন ফিরেছে। ছন্দা বাড়ির পিছন দিকে একটা প্রকাণ্ড আলো-জ্বলা ঘর দেখিয়ে বলল, ওই ঘরটা ছিল সুমি আর রঞ্জনদার। এখন অঞ্জন থাকে।

ঘরের ভেতর থেকে বাজনার শব্দ। জ্যাজ। সো জেঠ। ইউ আর হিয়ার…কাল সন্ধেবেলা সেই একটাই কথা হয়েছিল অঞ্জনের সঙ্গে। তারপর ও বেরিয়ে গেল বন্ধুদের সঙ্গে। আজ সকাল থেকে দেখা পাইনি। কী করছে ছেলেটা। কোথায় যাচ্ছে। আজ ওর সঙ্গে কথা বলব। ওকে আটকাব। রঞ্জন নেই। সুমি নেই। আমি আছি। আমি ওর গার্জেন। ওর দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে।

সূর্য নেভাদা পর্বতমালার পিছনে অস্ত গেছে। আমার অজান্তে কখন যে সব অন্ধকার হয়ে গেল! মাঠের ধারে ধারে, কোর্ট-ইয়ার্ড, ড্রাইভওয়ে, সামনেরলন সর্বত্র বাতিস্তম্ভগুলি জ্বলে উঠেছে। ফেরার পথে দেখলাম জীয়নের একটা খেলনা মোটরগাড়ি মার্সেডিজের বনেটের ওপর। দূরে, আল কাপিতান।

অন্ধকারেও দেখা যায়। ছন্দা বলল, সাদা তো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *