০৪. ব্যাপারটা খুনও হতে পারে

ব্যাপারটা খুনও হতে পারে

পরদিন ২৮ এপ্রিল হিরণ এয়ারপোর্ট পৌঁছল বিকেল সওয়া ৫টার সময়। ফ্লাইট ৬টা ১০-এ। লাউঞ্জ থেকে সে দেখতে পেল, এয়ার লাইন্স-এর কাউন্টার ফাঁকা। প্যাসেঞ্জাররা ইমিগ্রেশন এনক্লোজারে চেকিং-এর জন্যে ঢুকে গেছে। লেদু এখনও আসেনি।

বিকেল ৪টের সময় ভিসা হল। তার এবং লেদুর। কনসুলেট থেকে ফোনে সে খবর চিনুকে জানিয়ে ব্রেবোর্ন রোড থেকে পাসপোর্ট তুলে সে ভি. আই. পি ধরে সোজা এসেছে এয়ারপোর্টে। লেদু আগাগোড়া সঙ্গে ছিল। সল্টলেকে নেমে গেল, বাড়ি হয়ে আসবে বলে।

হিরণের কাঁধে চিরপুরাতন ঝোলা ব্যাগ, পায়ে হাওয়াই চপ্পল। পরনে রঙচটা জিনস্। সে দেখল, এই মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চিনু জড়ো করেছে অনেককেই। চিনুর দিদি, ভায়রাভাই, সস্ত্রীক শ্যালক কল্যাণ, ভূপেশবাবু ও তাঁর স্ত্রী… বোন বকু আর তার ছেলে তোপসে মায়, তাদের অফিস থেকে রাখাল সেন— এসেছে অনেকেই। সকলের মুখে-চোখে লেখা একটাই কথা:তুমি পেরেছ!

মাত্র ৬ ঘণ্টা। ১১টা থেকে ৫টা। এ কঘণ্টা জেদি, গুণটানা ক্রমাগত চেষ্টায় হিরণ পাসপোর্ট এবং ভিসা দুটোই জোগাড় করতে পেরেছে। শুধু তার একার নয়। তার এবং লেদুর। অবশ্য লেদুর পাসপোর্ট ছিল। জোগাড় করতে পেরেছে না বলে ছিনিয়ে আনতে পেরেছে বলাই ঠিক। শেষ মুহূর্তে আটকে যাচ্ছিল এন-ও-ডি নামে একটা রাবার স্ট্যাম্পের জন্যে। সেটা পাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন। সকলের চোখের সামনে সোজা পাসপোর্ট অফিসারের ঘরে সে এত অবসন্ন ও ধুকতে ধুকতে ঢুকে পড়ে, যে কেউ বাধা দেওয়ার কথা ভাবেনি। আমেরিকান এক্সপ্রেসের জয়ন্ত সেন সকাল থেকে গাড়ি নিয়ে তার সঙ্গে। সে ধরে ধরে তাকে নিয়ে গিয়েছিল ভিতরে। সত্যি, সে, শেষ পর্যন্ত পেরেছে। টানা ৬ ঘণ্টায় যতগুলো মিনিট, যতগুলো মহুর্ত, তার প্রতিটি অব্যর্থভাবে ব্যবহারের পুরস্কার হিসেবে তার ঝোলা ব্যাগের মধ্যে রয়েছে শুধু তার নয়, লেদুরও, সাতরাজার ধন দুই মানিক পাসপোর্ট আর ভিসা!

চিনু তার জন্যে হাতে করে একটা ছোট সুটকেস এনেছে। তাতে আছে, টুথপেস্ট ব্রাশ ইত্যাদি—একটা প্যান্ট ও দুটো জামা, সে জানাল, একটা চিরুনি আর দূটো রুমালও আছে সুটকেসে, সে বলল, হিরণ যেন প্লেনে উঠেই চুলটা ঠিকমতো আঁচড়ে নেয় ও মুখটুখ ধুয়ে নেয় টয়লেটে গিয়ে, সে মনে করিয়ে দেয়। পৌঁছেই যেন ফোন করে। চিনু যে ২২ হাজার টাকা লেদুর হাতে পাঠিয়েছিল, তা থেকে যা বেঁচেছিল, মুঠো করে হিরণ চিনুর হাতে তুলে দেয়।

কত আছে?

হাজার দুই-আড়াই হবে, জানি না। হিরণ বলল, কিন্তু, ওটা তুমি দিদিকে এখন ফেরত দিও। তোমার দরকার হবে। আমি কবে ফিরতে পারব ঠিক নেই। এসে যা হয় করব।

ওর দিদিমীনা দশ হাজার দিয়েছে।

অফিস?

ও, অফিস।

সে আমি দেখবখন। রাখাল বলল, একটা অ্যাপ্লিকেশন ওখান থেকে পাঠিয়ে দিও।

মাইনে?

সে বলতে হবে না। আমি বৌদিকে দিয়ে যাব।

আমার সই? রেভেনিউ…

সব দেখব আমি। তুমি যাও, এখুনি চেকিং-এ ঢুকে পড়।

লেদু?

সে এলেই পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি যাও—চিনু বলল। সবাই একরকম ঠেলেই তাকে সিকিউরিটি এলাকায় ঢুকিয়ে দিল। যেতে যেতে সে একবার পিছন ফিরে তাকায়। ওই যে, লেদু এসে পড়েছে।

অঞ্জনের আঁ-আঁ-আঁ, বা নন্দিনের শেষ কথা বাবা, আমরা এখন কী করব, শুনে হিরণ বলতে হবে তাই বলেছিল বটে যে, তোরা সাবধানে থাক, আমি যাচ্ছি যত তাড়াতাড়ি পারি, খুব সম্ভব পরের ফ্লাইটেই—কিন্তু রিসিভার নামিয়ে রেখেই সে বুঝেছিল, পরের ফ্লাইটে কেন, সে যেতেই পারবে না। নন্দিন গেছে গত বছরেই, সে জানে, একপিঠের ভাড়াই ১১ হাজারের মতো, সঙ্গে ৫০০ ডলার নিতে হয়, সেও প্রায় ৭ হাজার। ফেরার কথা না ভাবলেও, শুধু গিয়ে পৌঁছনোটাই হাজার কুড়ির ধাক্কা। ২০ হাজার ভারতীয় টাকার তবু একটা বাস্তবতা আছে। সেটা, এ-হেন ভূমিকম্পে জড়ো হতেও পারে। সে ধাক্কা হয়ত-বা সামাল দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু পাসপোর্ট? ভিসা? এ জিনিস এত তাড়াতাড়ি হওয়ার নয়, হতে পারে না। পুলিস রিপোর্ট পেতেই তো মাসখানেক। পেতে কালঘাম ছুটে যায়। আর ভিসা? নন্দিনের সময় দেখেছেতো। সুচের ভেতর দিয়ে উট যাওয়া আর আমেরিকান ভিসা পাওয়া অনেকটাই এক ব্যাপার। যিশুর কৃপা ছাড়া তা কোনও বাঙালি ভগবানের কাজ নয়।

ফুরনে পাড়ার ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে কাল রাতে বেরিয়েছিল লেদু। কথা হয়েছিল, ঘঘারাঘুরির শেষে ড্রাইভার বিবেচনা করে যা চাইবে তাই তাকে দেওয়া হবে। ট্যাক্সিতে, অনর্গল বৃষ্টির মধ্যে, কলকাতার আত্মীয়স্বজন সবাইকে খবর দিতে দিতে রাত ভোর হয়ে গেল। ভোরবেলা ঘুম থেকে তুলে টালিগঞ্জে সুমিতার বড়মামা ভূপেশবাবুকে খবর দেওয়ার পর বার্তাবহ হিসেবে তার কাজ শেষ হল।

বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। আকাশে পাইপলাইনের উপ-কক খুলে গেছে যেন। হুড়হুড় করে একভাবে জল পড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শেষ রাত থেকে শুরু হয়েছে সো-সোঁ হাওয়া। পুরো সাইক্লোনের আবহাওয়া।

ভূপেশবাবুর ড্রয়িংরুমে দক্ষিণ দরজার ওই ভারী পর্দাটা তুলেই সুমিতা প্রথম বেরয় ও হাত তুলে সবাইকে নমস্কার করে, আজ থেকে ১৮ বছর আগে যখন রঞ্জন আমেরিকা থেকে তাকে দেখতে আসে। সেটা ছিল ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। সঙ্গে ছিল হিরণ, চিন আর বোন বকু। ওই এখন-নিশ্চল পর্দাটা দুদিকে ঠেলেই ঘরে প্রবেশ করেছিল চওড়া কাঁধ, লম্বাপানা সুমিতার দুর্গামূর্তি, তাকে সেই প্রথম দেখে চালচিত্রহারা একটি প্রতিমার কথাই মনে হয়েছিল হিরণের। কিন্তু, মেয়ে দেখার পর বেরিয়ে এসে রঞ্জন ইংরেজিতে তাকে বলে, আচ্ছা, নদা, ওরা মেয়ের যে ফোটোটা পাঠিয়েছিল, তোর কি মনে হয় সেটা কি খুব রিসেন্টলি তোলা?

অর্থাৎ, সেই তন্বী, শ্যামা, শিখরদর্শনা এখানে কোথায়। এত মোটালো কবে। অর্থাৎ, আমি একে বিয়ে করব না।

মানুষমাত্রই যে প্রয়াস করে থাকে ও করে বারংবার ব্যর্থ হয়, এবং তবু তা করে যায় পর্দা তুলে সুমিতার সেই প্রথম আবির্ভাবের মুহূর্তটিকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছিল হিরণ, এমন সময় ওঃ-হো-হো একবার মাত্র বলে সেই থেকে নিস্ফূপ ভূপেশবাবু এই প্রথম কথা বললেন, হিরণ, আমার মনে হয় তোমার ওখানে যাওয়া উচিত। ইউ শুড গো।

কিন্তু, মামাবাবু–

কথা দেওয়ার আগেরিটায়ার্ড ভদ্রলোক বোধহয় ভেবে দেখলেন কিছুক্ষণ। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আই উইল স্ট্যান্ড ফর দ্য প্যাসেজ-মানি। তুমি অঞ্জন, জীয়ন আর তোমার মেয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়াও।

হিরণের চোখ থেকে বৃষ্টির জল তখনও শুকোয়নি। জামা-গেঞ্জি খুলে নিংড়ে সে পাখার হাওয়ায় শুকোতে দিয়েছে। মামিমা মনে করিয়ে দিলেন, কফিটা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।

টাকার প্রশ্ন নয় মামাবাবু। বৃষ্টির ছাট চোখ থেকে হাত দিয়ে মুছতে মুছতে হিরণ বলল, সে আমি জানি হয়ত হয়ে যাবে। কিন্তু পাসপোর্ট ও ভিসা? এ-সব কিছুই তো আমার নেই!

ভূপেশবাবু চুপ করে গেলেন। সুমিতার মামা তাকে পছন্দ করেন খুবই, হিরণ জানে, তাকে স্নেহ করেন। সফদরজং হাসপাতালে ইন্টার্নি তখন সুমিতা। দিদির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা। বাম, মারা, প্রিয়তমা ভাগ্নীকে তিনিই আনিয়েছিলেন সদর দিল্লি থেকে— নট ভেরি রিসেন্ট ফোটোগ্রাফ-এর অজুহাতে রঞ্জন যাকে এককথায় বাতিল করে দেয়। সেই অনিচ্ছক ঘোড়াকে লাগাম ধরে, পেছন চাপড়ে জল পর্যন্ত টেনে এনেছিল এই হিরণই— এটা তিনি কৃতজ্ঞচিত্তেই মনে রেখেছেন।

কাল মধ্যরাত থেকে এই অতি-নাটক শুরু হয়েছে।

বাইরে বৃষ্টি পড়ে চলেছে বিরতিহীন একটানা–তার ওপর এই সাইক্লোনের আবহাওয়া। এর শেষ কোথায়?

যখন, যেখান থেকে সম্ভব, হিরণ এর মধ্যে বারছয়েক টেলিফোন করেছে সল্টলেকে। তাদের বুক-করা কল ওরা রেসপন্ড করেছে। এছাড়া ওরা আরও দুবার ফোন করেছে। মার্সেদ থেকে ফোন করেছিলেন ডাঃ অরোরা নামে এক পাঞ্জাবি প্রতিবেশী। জানা গেছে, শুধু রঞ্জন-সুমিতা নয়, গাড়িতে পিছনের সিটে হয়ত ঘুমিয়েই পড়েছিল ৭ বছরের জীয়ন— সেও মারা গেছে, যদিও ভূপেশবাবুকে সে আর জীয়নের কথা বলেনি। ডাঃ গ্রেওয়াল আরও জানিয়েছেন, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ব্যাপারটা খুনও হতে পারে। অঞ্জন আর নন্দিনকে উনি তাঁর বাড়িতে এনে রেখেছেন। অঞ্জনকে একটা ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। খুন শোনার পর সে বারবার অ্যাক্সিডেন্ট-স্পটে ছুটে বেরিয়ে যেতে চাইছে। তার মাথায় এখন প্রতিহিংসা ছাড়া কিছু নেই।

ভূপেশবাবু পাইপ ধরিয়েছেন পরনে সুমিতার দেওয়া বিদেশি স্লিপিংসুট। অনেকক্ষণ কথা বলেননি। হিরণ বলল, তাহলে উঠি মামাবাবু?

নো। ভূপেশবাবু উঠে দাঁড়ালেন, তুমি বোস। কী বলছ তুমি হিরণ! তোমার ছোটভাই, কত ভালবাসত সে তোমাকে, আমি তো জানি। আমি, আমি তো গেছি স্টেটসে। ওদের ওখানে থেকেছি। সুমিতা, রঞ্জন দুজনেই খালি নদ-নদা করত। আর কারও কথা তো বলত না। কতবার তোমাকে যেতে বলেছে বল তো? নন্দিনের সঙ্গে তোমার টিকিটও পাঠিয়েছিল। পাঠায়নি? তুমি গেলে না।

দেখুন, মামাবাবু, পারলে আমি নিশ্চয়ই যেতাম। যদি যেতে দিত। এ কি বলতে হত আমাকে। আমার মেয়ে নন্দিন ওখানে রয়েছে, আমার নাবালক ভাইপো— কিন্তু, আমাকে যেতে দিচ্ছে কে?

না হিরণ। অঞ্জন নয়, নন্দিনও নয়। তোমার ভাই! আমি রঞ্জনের কথা বলছি। বিদেশবিভুইয়ে তার অন্ত্যেষ্টি হবে, তার আত্মীয়স্বজন কেউ থাকবে না? ওখানকার লোকে জানাবে এ লোকটা হা ঘরে, এ পৃথিবীতে এর কেউ নেই, কেউ ছিল না! নিবে-যাওয়া পাইপ টেবিলে বিচারপতির হাতুড়ির মতো ঠুকতে ঠুকতে উনি বলে গেলেন, দিস ইজ নট হাউ ইট শুড বী। একি একটা কুকুর-বেড়াল মরেছে নাকি, যে টান মেরে ওরা ভাগাড়ে ফেলে দেবে? নো-ননা,ইউ মাস্ট বী দেয়ার হিরণ। ইফ নট ফর এনিথিং এলস, ফর দ্য ডেড সোলস অনার। ইউ মাস্ট অ্যাটেন্ড দেয়ার ফিউনারাল। আমি বড্ড বুড়ো হয়ে গেছি। নইলে আমি যেতাম। ইয়েস, টু আপহোল্ড দ্য অনার অব দা ডেড! বাট ইউ ক্যান। কান্ট ইউ? ইউ। মাস্ট। গো।

অনেকক্ষণ একটানা কথা বলে ভূপেশবাবু হাঁফাতে লাগলেন। প্রথমবারের কফি ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। মামীমা দ্বিতীয়বার কফি আনলে হিরণ চুপচাপ কফি খেতে লাগল। ক্যালিফোর্নিয়ার বে-এরিয়ার সবচেয়ে নামকরা সার্জন ডাঃ রঞ্জন চ্যাটার্জির এ পৃথিবীতে কেউ নেই! ভারতবর্ষের থেকে তার ফিউনারাল অ্যাটেন্ড করতে কেউ এল না? কুকুর…… ভাগাড়……. মুখ তুলে সে হঠাৎ অবাক হয়ে দেখল, আরে, বৃষ্টি হঠাৎ থেমে আসছে। সেই জোলো হাওয়াও আর নেই তো। একই সঙ্গে সে টের পেল, তার চোয়াল শক্ত হয়ে আটকে রয়েছে, তার মধ্যে জন্ম নিচ্ছে, সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিক থেকে তার অস্তিত্ব জুড়ে নেমে আসছে এক অজানা আত্মপ্রত্যয়, তার সারা জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে যার দৃষ্টান্ত নেই। কখনও ছিল না।

হ্যাঁ, আমি যাচ্ছি। যদিও তুই, রঞ্জু, বিদেশে বেঁচে ছিলিস নদা ছাড়া একা-একাই, এতগুলো বছর, কিন্তু মৃত্যুর পর তোকে একা থাকতে দেব না। তোর মৃতদেহের পাশে আমাকে গিয়ে দাঁড়াতেই হবে। সে তুই আমার জন্য যত টাফ কাজই রেখে গিয়ে থাকিস। আমি যাব। আমি গিয়ে দাঁড়াব। আমার ভাই-এর মৃতদেহের পাশে। কেউ, কোনও কিছুই এ অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে পারে না। পারবে না।

উঠে গিয়ে সে সল্ট লেকে ডায়াল করল। আশ্চর্য, এক চান্সেই পেয়ে গেল। একটা নতুন খবর দিল চিন। সানফ্রান্সিসকো থেকে ভাইস-কনসাল আবার ফোন করেছিলেন। পাসপোর্ট অফিস ও কলকাতার আমেরিকান কনসালকে টেলেক্স পাঠানো হয়েছে। ডাঃ চ্যাটার্জির ফিউনারালে তার ফ্যামিলির কেউ যদি আসেন সব রকমে অন এমার্জেন্সি বেসিস মোস্ট সিমপ্যাথেটিক অ্যান্ড সিনসিয়ার সাহায্য করতে বলা হয়েছে। শুনে, হিরণ এতক্ষণে যেন একটা আশার আলো দেখতে পেল। তাহলে সে চেষ্টা করতে পারে। সে যেতে পারে।

তুমি ব্যাঙ্ক খুললেই আমাদের ফিক্সডটা ভাঙিয়ে ফেল। যা পার জোগাড় কর। কিন্তু ফিক্সে তো মাত্র দশ। আঃ! তার গলা ধরে গেছে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে, যা বলছি কর না। যা পার জোগাড় কর। যতটা পার, যেখান থেকে পার। যেভাবে পার। গয়না বাঁধা দাও। অন্তত পনের জোগাড় করে রাখ। আমি যখন যেখানে বলব, লেদুর হাতে পাঠিয়ে দেবে। আমি মার্সেদ যাচ্ছি। সম্ভব হলে আজই। লেদুকে দাও।

লেদু বলল, ন কাকা, আমার পাসপোর্ট আছে। আমিও যাব। তুমি আমার জন্যেও চেষ্টা কর। আমি হাজার তিরিশ পর্যন্ত পারব।

সুমিতার বড়মামাকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে করতে, যেন সঙ্কল্প, হিরণ বলল, ঠিক আছে মামাবাবু। আমি যাচ্ছি। আর….চোখে চোখ রেখে, আজই।

সে ট্যাক্সি নিয়ে ছুটল জয়ন্তর কাছে। জয়ন্ত সেন আমেরিকান এক্সপ্রেসে আছে। সে ঢের সাহায্য করতে পারবে। সে বন্ধু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *