১০. পরিস্থিতি স্বাভাবিক

দশ তারিখ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছিলো। তবে খবরের কাগজগুলোতে বিভিন্ন এলাকার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ গোটা সপ্তাহ জুড়েই ছাপা হয়েছে। বারো তারিখে ভোলা থেকে শেখরদার বড় ভাই রণেনদা সপরিবারে এসে রতনদের বাড়িতে উঠলেন। রতনের বড়দিরা সামনের মাসে আসবে বলেছে। শহরের অবস্থা নাকি এখন স্বাভাবিক হয়েছে। শহরের মন্দির ভাঙা ছাড়া তেমন কোন গন্ডগোল হয়নি। রণেনদাদের বাড়ি কুঞ্জের হাট-এ। সেখানে তাদের ধান সুপারির মস্ত বড় কারবার ছিলো। রণেনদা বললেন, তাদের আড়তে ধান ছিলো তিন লাখ টাকার, সুপারি ছিলো সত্তর আশি হাজার টাকার। গোটা আড়ত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, তাদের বাড়িঘর ও আগুনের হাত থেকে রেহাই পায়নি। তার পাশের বাড়ির এক মেয়েকে গুন্ডারা ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। তিন দিন পর আধমরা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভোলা হাসপাতালে আছে এখনও, বাঁচে কিনা সন্দেহ।

রণেনদা, তাঁর স্ত্রী আর তিন ছেলেমেয়ে সবাই কলকাতা চলে যাবেন। তাঁদের গ্রামে গুন্ডাদের ঢোকার খবর ডেয়ে রণেনদা একটা সুটকেসে কিছু জামা কাপড় নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলেন পাশের গ্রামের এক স্কুলে। স্কুলের হেডমাস্টার তার পরিচিত ছিলেন। আগের দিন হেডমাস্টার আবদুর রহিম এসে বলে গিয়েছিলেন অসুবিধে হলে তাদের ওখানে চলে যেতে।

সময় মতো পালাতে পেরেছিলেন বলে ঘরে নগদ টাকা আর গয়নাপত্র যা ছিলো বাঁচাতে পেরেছেন। ওঁদের সবার পাসপোর্ট আগেই গুছিয়ে রেখেছিলেন।

পরদিন তারা ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়ে এলেন ভারতীয় হাই কমিশনে। স্বপন আগেই ঠিক করে ফেলেছে তপতী, কেতকী আর রতনকে নিয়ে কলকাতা চলে যাবে। রণেনদা বললেন, যাইবাই যদি আমাগো লগে চলো। সবাই মিলে আলোচনা করে সেরকমই সিদ্ধান্ত হলো। কেতকী আর রতনের পাসপোর্ট ছিলো না। দালালকে বেশি টাকা দিয়ে একদিনের ভেতর ওদের ইন্ডিয়ার পাসপোর্ট করিয়ে নিলো স্বপন।

দুদিন পর ওদের সবার ভিসাও হয়ে গেলো। কলকাতা যাবার কথা পিন্টুকে আগে বলেনি রতন। কিভাবে বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলো না। মেজদা বলেছে ভালো একটা চাকরি জোটাতে পারলে বাবা মাকেও নিয়ে যাবে। বড়দা অবশ্য বলেছে বাপ ঠাকুদার ভিটা ছেড়ে সে কোথাও যাবে না। ঠাকুরমাও বলেছেন, আমার আর কয়দিন! যে কয়দিন বাইচ্যা আছি স্বামী শ্বশুরের ভিটায় সন্ধ্যা দিমু। তোমরা যার মনে লয় যাও গিয়া। আমি যতীনের কাছে থাকুম। রতনের বাবা হা বা না কিছুই বলেননি। সারাদিন ঘরের ভেতর গুম হয়ে বসে থাকেন। দুদিন পিন্টুর বাবা ডাকতে এসেছিলেন। শরীর ভালো না বলে ঘর থেকে বেরোননি।

উনিশ তারিখ কলকাতা যাবার দিন ঠিক হলো। এখন আর রাতে পাহারা দিতে হয় না। মাঝে মাঝে মোল্লাদের দু একটা মিছিল রাস্তায় বের হলেও শহরের উত্তেজনা থিতিয়ে গেছে। যোত তারিখ ছিলো বিজয় দিবস। সাংস্কৃতিক জোট এগারো তারিখ থেকে বিজয় মেলার বিরাট আয়োজন করেছিলো।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কমিটি করেছে। দশ তারিখে সমন্বয় কমিটি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বড় বড় বেশ কয়েকটা মিছিল আর জনসভাও হয়েছে। বাবরী মসজিদ ভাঙা নিয়ে যারা বেশি বাড়াবাড়ি করছিলো এতে তারা অনেকখানি দমে গেছে।

বিজয় দিবসের দিন বিকেলে পিন্টুর সঙ্গে রতন বেরিয়েছিলো অনুষ্ঠান দেখতে। পাবলিক লাইব্রেরির সামনে বিশাল মঞ্চ বানানো হয়েছে। গত চারদিন ধরে ওখানেই হচ্ছিলো মূল অনুষ্ঠান, যার বেশির ভাগই ছিলো হিন্দু মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে।

রাতে রিকশায় করে বাড়ি ফেরার সময় রতন বললো, রণেনদারা উনিশ তারিখে কলকাতা যাচ্ছেন।

পিন্টু চুপ করে রইলো। রতন আবার বললো, মেজদা, সেজদি আর ছোড়দি ওদের সঙ্গে যাচ্ছে।

পিন্টু কোন কথা বললো না।

রতন আস্তে আস্তে বললো, ওদের সঙ্গে আমিও যাচ্ছি।

পিন্টু চমকে উঠলো–কী বললি?

আমিও কলকাতা যাচ্ছি।

কেন?

এখানে থেকে কী করবো?

কী করবো মানে?

 এখানে আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। স্বপনের যুক্তি দিয়ে পিন্টুকে বোঝাতে চাইলো রতন।

তার মানে তুই একেবারে চলে যাচ্ছিস?

হ্যাঁ।

পিন্টু চুপ করে রইলো। রতনের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছিলো ওর। অভিমানে বার বার গলা বুজে আসতে চাইছে। এ কী বলছে রতন। দু দিন পর ওকে ছেড়ে চিরদিনের মতো চলে যাবে? গত দশ বছর ধরে যার সঙ্গে ওঠা বসা, চলাফেরা, সকল সুখদুঃখের একমাত্র অংশীদার–পিন্টু কী নিয়ে থাকবে? নিজের কোন ভাই থাকলেও বুঝি তাকে এতোখানি ভালোবাসতো না, যতখানি ও রতনকে ভালোবাসে। রতন কি সব ভুলে গেছে?

পিন্টু চুপ করে থাকলেও ওর মনের অবস্থা রতন ঠিকই বুঝতে পারছিলো। অনেকক্ষণ পর বললো, তোকে ছেড়ে যেতে কি আমার কম কষ্ট হচ্ছে পিন্টু? গত দুরাত এক ফোঁটা ঘুমোতে পারিনি। সারাক্ষণ তোর কথা ভেবেছি। জানি তুই কতখানি কষ্ট পাচ্ছিস। তবু আমাদের অবস্থাটা একবার বোঝার চেষ্টা কর। আমার জায়গায় যদি তুই হতি তাহলে কী করতি?

পিন্টু থমথমে গলায় বললো, তোর জায়গায় আমি হলে রুখে দাঁড়াতাম। তোর মতো পালিয়ে যেতাম না।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে রতন বললো, তোর মতো সাহস আমার নেই।

ঠিক আছে যা! তিক্ত গলায় পিন্টু বললো, কলকাতায় নিশ্চয় আমার চেয়ে অনেক ভালো বন্ধু পাবি।

তোর মতো বন্ধু পৃথিবীর কোথাও পাবো না।

বাজে কথা বলবি না রতন।

সত্যি বলছি পিন্টু। তোকে কোনদিন ভুলতে পারবো না।

এসব কথা তোর কলকাতার বন্ধুদের বলিস।

রতন চুপ করে রইলো। পিন্টুর সঙ্গে এভাবে কথা বলতে গিয়ে ওর বুকের ভেতর জমে থাকা কান্না গুমরে মরছিলো। পিন্টু ওর অবস্থা বুঝতে পারবে না। পিন্টুর পক্ষে সাহস দেখানো যত সহজ রতনের পক্ষে ততই কঠিন।

বাকি রাস্তা একটা কথাও বললো না পিন্টু। কাগজিটোলা গলির মুখে রিকশা থামিয়ে ও ভাড়া দিলো। রতন একটু ইতস্তত করে মৃদু গলায় বললো, আজ রাতে কি তোর সঙ্গে থাকবো পিন্টু?

ফালতু দরদ দেখাবার কোনো দরকার নেই। বলে পিন্টু ওদের বাসায় ঢুকে গেলো।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রতন বাড়ির পথে পা বাড়ালো।

রণেনদারা যাবে বাই বোড়। বাসে করে যশোর, সেখান থেকে বেনাপোেল। বর্ডার পার হয়ে বনগাঁয়ে গিয়ে কলকাতার ট্রেন ধরবে। সকালে রওনা হলে রাত আট নটা নাগাদ কলকাতা পৌঁছবে। যাবার আয়োজন নিয়ে সবাই খুব ব্যস্ত। রণেনদার সঙ্গে হাজার পঞ্চাশেক টাকা ছিল। গয়নাপত্রও কম ছিল না। এত টাকা গয়না সঙ্গে নেয়া যাবে না বলে হুন্ডির ব্যবস্থা করতে হয়েছে। হুন্ডিওয়ালাদের ঢাকায় বাংলাদেশের টাকা। দিলে কলকাতায় ওদের লোক সেই পরিমাণ ভারতীয় টাকা দেবে। অবশ্য ওদের কমিশন কেটে রাখা হবে।

রতনের মা ওদের জিনিসপত্র গুছিয়ে দিচ্ছিলেন, আর সুযোগ পেলেই চোখের জল ফেলছিলেন। ঠাকুরমা অবশ্য কয়েকবার বলেছেন, কান্দ ক্যান বউ? যাত্রার সময় এই রকম কানলে পোলা মাইয়ার অকল্যাণ ওইবো। ওতে মার কান্না থামেনি।

পরদিন সকালে পিন্টু ওর মাকে বাইরে যাচ্ছি, ফিরতে রাত হবে, বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। রতন ওকে খুঁজে পেলো না। পিন্টুর মা বলতে পারলেন না ও কোথায় গেছে।

দুপুরে একবার, রাত নটার দিকে আরেকবার পিন্টুর খবর নেয়ার জন্য রতন ওদের বাসায় গিয়েছিলো। ওর দেখা পায়নি। বুঝতে পারলো পিন্টুর সঙ্গে যাবার আগে আর দেখা হবে না।

অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছিলো পিন্টু। ওর মা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। হাসি বার বার বলছিলো, রাত হবে মানে কি দশটা বাজাবে? আজ আসুক বাড়িতে। ওকে তুমি বেশি লাই দিচ্ছে মা! পিন্টুর বাবা বুঝতে পেরেছেন ছেলে কেন বাড়ি থেকে দূরে সরে থাকছে। হাসিকে বললেন, পিন্টুকে কিছু বলিস না। বুঝতে পারছিস না রতনরা চলে যাচ্ছে বলে ওর খারাপ লাগছে!

রাত করে ফেরার জন্য পিন্টুকে বাড়িতে কেউ কিছু বলেনি। পরদিন ভোরে আবার বেরিয়ে গেলো ও। রতন খুঁজতে এসে মন খারাপ করে ফিরে যাচ্ছিলো, পথে এরফানের সঙ্গে দেখা। ওর শুকনো চেহারা দেখে এরফান জানতে চাইলো, তোমার কী হয়েছে রতন? খুব ডিপ্রেসড মনে হচ্ছে! রাতে ঘুম হয়নি?

রতন ধরা গলায় বললো, আমরা চলে যাচ্ছি ইরফান ভাই।

কোথায়? অবাক হয়ে জানতে চাইলো ইরফান।

কলকাতা। মেজদা, সেজদি, ছোড়দি সবাই যাচ্ছে। একটু থেমে আবার বললো, পিন্টু খুব রাগ করেছে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে বাইরে ঘুরেছে। আজও ভোরে বেরিয়ে গেছে। ইরফানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রতন ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললো। ও এরকম কেন ইরফান ভাই? আমাদের অবস্থা একটুও বুঝতে চাইবে না!

ইরফান জানে রতন আর পিন্টুর গভীর বন্ধুত্বের কথা। রতনের কাঁধে হাত রেখে বললো, আমাদের বাসায় চল। তোমার সঙ্গে কথা বলবো।

চোখ মুছে রতন ইরফানের সঙ্গে ওদের বাসায় এলো। বাড়িতে ওর বাবা মা আর একটা কাজের ছেলে থাকে। ড্রইংরুমে রতনকে বসিয়ে ইরফান কাজের ছেলেকে ডেকে দুকাপ চা দিতে বললো। তারপর রতনকে সরাসরি প্রশ্ন করলো, সবাই যাচ্ছে যাক, তুমি কেন যেতে চাইছো?

কলকাতা যাবার পক্ষে স্বপন অনেকগুলো যুক্তি দাঁড় করিয়েছে। যতীনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলার সময় রতনও ছিলো। স্বপনের যুক্তিগুলো নিজের মতো করে ও ইরফানকে বললো। অপমানের কথা, জীবনের ঝুঁকির কথা, চাকরি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে অসুবিধের কথাগুলো বড়রা যেভাবে বলে রতনও সেভাবে বললো।

চা খেতে খেতে ইরফান বললো, আমি সব বুঝি রতন। তারপরও তোমাকে বলবো, কলকাতা তোমার দেশ নয়। ওখানে গিয়ে দেখবে ওদের কথা বলার ধরন আলাদা, চলাফেরার ধরন আলাদা, চিন্তা ভাবনা–কোনো কিছুর সঙ্গেই তুমি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবে না। এটা ঠিক যে ধর্মের কারণে কেউ সেখানে তোমাকে অপমান করবে না বা নিজেকে ছোট মনে হবে না। কিন্তু জীবনের অনিরাপত্তা সব জায়গায় আছে। কলকাতায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আমাদের চেয়ে বেশি। ওখানেও চাকরি বাকরি ব্যবসার ক্ষেত্রে তোমাকে বাঙাল বলে হেনস্তা করবে, কোনঠাসা করতে চাইবে। এখানে হিন্দু বলে নিজেকে মাইনরিটি মনে হচ্ছে তোমার। আমি নিজে কোনো ধর্ম মানি না। এ দেশে আমিও মাইনরিটি। মাইনরিটি হলেই কি দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে? নিজেকে হিন্দু না ভেবে বাঙালি ভাবো, যেভাবে আমরা ভাবতাম মুক্তিযুদ্ধের সময়। তখন বুকে অনেক সাহস পাবে। কারণ এদেশে শতকরা নিরানব্বই দশমিক নয় জনই বাঙালি। যারা রাজাকার, বাংলাদেশকে যারা পাকিস্তান বানাতে চায়, যারা ধর্মের নামে বাঙালি জাতিকে ভাগ করতে চায়, পাঞ্জাবিদের গোলামি করতে যারা ভালোবাসে, তারা হাজারে একজনও নয়। আমরা বরং তাদেরই পাকিস্তান পাঠিয়ে দেবো। তাদের জন্য কেন আমরা নিজের দেশ ছাড়তে যাবো, যে দেশের স্বাধীনতার জন্য তিরিশ লক্ষ বাঙালি প্রাণ দিয়েছে?

রতন পাথরের মতো চুপ হয়ে ইরফানের কথা শুনছিলো। এ ধরনের কথার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা ওর নেই। একটু থেমে ইরফান আবার বললো, তুমি পিন্টুর কথাও কি ভাববে না রতন? কলকাতার নির্বান্ধব পরিবেশে থাকতে পারবে তুমি পিন্টুকে ছেড়ে? আমরা সবাই যদি এসব দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে এক জোট হই তাহলে কি ওরা পারবে আমাদের সঙ্গে? দেখোনি সেদিন কিভাবে ওদের তাড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের সবাইকে একজোট হয়ে ওই পশুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দেখবে ওরা পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।

ইরফানের বাড়িতে ঘন্টা খানেক ছিলো রতন। শেষের দিকে ও একতরফা শুনে গেছে শুধু। কোনো কথা বলতে পারেনি। বাড়িতে এসে দেখলো কলকাতা যাওয়ার আয়োজন প্রায় শেষ। কাল সকালে যশোর যাওয়ার কোচের নটা টিকেট এনেছেন। রণেনদা। ওকে দেখে ঠাকুরমা বললেন, পিন্টু গো বাড়িত থনে বিদায় লইয়া আইছস? স্বপন কেতু, তপু গিয়া তর কাকা কাকীরে প্রণাম কইরা আইছে।

রতন কোনো কথা না বলে ওর ঘরে গিয়ে ঢুকলো। ইরফানের কথাগুলো ওর বুকের ভেতর প্রচন্ড ঝড় তুলেছে। সেই ঝড়ের কথা বাড়ির কাউকে ও টের পেতে দিলো না।

পরদিন ওদের কোচ ছাড়ার কথা সকাল নটায়। রণেনদা বলেছেন আটটার সময় বাড়ি থেকে বেরোলেই চলবে। রতন ঘুম থেকে উঠলো ছটার দিকে। পাড়ার মসজিদে সবে মাত্র ফজরের আজান দিয়েছে। আকাশে তখনও ভালো করে আলো ফোটেনি। সাদা কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে সব কিছু।

ওর মা ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে ঢুকেছেন। রতন একটা চাদর মুড়ি দিয়ে মাকে বললো, আমি অক্ষণই আইতাছি।

আজ ও পিন্টুকে পালাতে দেবে না। বাইরের দরজাটা আস্তে বন্ধ করে দিয়ে সাদা কুয়াশার সমুদ্রে নামলে রতন। চারপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু পিন্টুদের বাড়ি যেতে ওর কোনো অসুবিধে হলো না। পিন্টু থাকে বাইরের ঘরটায়। রতন ওর দরজায় টোকা দিতে যাবে এমন সময় খুট করে শব্দ হলো। কে যেন দরজা খুলছে।

পিন্টু বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বেরোতে যাবে, দরজা খুলে দেখে সামনে রতন দাঁড়িয়ে। অবাক হয়ে ও তাকালো রতনের মুখের দিকে।

রতনের ঠোঁটের ফাঁকে ভোরের ঘুম ভাঙা সূর্যের মতো এক ঝলক হাসি ফুটে উঠলো। পিন্টুর চোখে চোখ রেখে ও বললো, তোকে ফেলে আমি পৃথিবীর কোথাও যাবো না।

পিন্টুর বুকের ভেতর হাজারটা হলুদ পাখি গান গেয়ে উঠলো। রতনের নির্মল হাসি ততক্ষণে সারা আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে। পিন্টু আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো কিভাবে শুরু হয় এক আলো ঝলমল উজ্জ্বল দিন।