নুটু বলল, তুমি যা বলছ দ্বারিকদা, তা ঠিকই, আমি মানি, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই, আমি তো এখানে থাকতে পারছি না!
দ্বারিক যেন একটা শারীরিক আঘাত পেল।
তুই এখানে থাকবি না? কোথায় যাবি?
এখানে থাকলে খাব কী? বাবা জমি-টমি সব বিক্রি করে দিয়ে ফতুর হয়ে বসে আছে…আমাকে যেতে হবে জামশেদপুরে, সেখানে এক মামা আছেন।
সেখানে চাকরি করবি!
পেলে তবে তো! চেষ্টা করে দেখতে হবে কতদিনে জোটে। মামার কাছে থাকলে কিছুদিন খাওয়া-পরাটা অন্তত জুটবে…জেলে থাকার সময় পড়াশুনোটাও শেষ করতে পারলাম না, আলসারে এত কষ্ট পেতাম।
এখন সেটা কমেছে?
অনেকটা…আমি স্বীকার করি, আমাদের আবার দল গড়া উচিত, নইলে আমরা হারিয়ে যাব, আমাদের এতদিনের কাজ, এত পরিশ্রম সব নষ্ট হয়ে যাবে, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে আমার তো গ্রামে থাকার আর কোনো উপায়ই নেই…এক-এক সময় মনে হয়, জেলেই ভালো ছিলাম, তখন অন্তত সংসারের চিন্তা করতে হয়নি।
রবি তো আর তোদের সঙ্গে মেশে না আজকাল।
মিশবে না কেন, দেখাসাক্ষাৎ হয়, কিন্তু ও অন্য পার্টিতে ভেড়বার তালে আছে..সুখময়কে ওর বাড়ির লোকেরা এখন একদম বেরোতেই দেয় না বাড়ি থেকে, পরশু আমি ডাকতে গেলাম, ওর মা বললেন, সুখু বাড়ি নেই, অথচ আমি ঠিক বুঝেছিলাম, বাড়িতেই আছে…আমি হাসলাম।
তা বলে সুখময় কিছুতেই চুপচাপ বাড়িতে বসে থাকার ছেলে নয়।
শুনছি ও-ও আর গাঁয়ে থাকবে না…আসানসোল চলে যাবে।
বীথি চা নিয়ে এল ওদের জন্য। নুটু হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে হালকা গলায় বলল, কি বউদি, কাল রাত্তিরে আর একটু হলেই আগুনে রোস্ট হয়ে যাচ্ছিলেন?
ভুতো আর নুটু প্রায় সমান বয়সি। তবু ভুতোর বউকে সে বউদি বলে সম্বােধন করছে। লজ্জা পাচ্ছে শুধু নাম ধরে ডাকতে।
বীথি বলল, আপনি এত সকাল সকাল খবর পেয়ে গেলেন কী করে?
গাঁয়ের একটা নিজস্ব টেলিগ্রাফ সিস্টেম আছে। আর কিছুদিন থাকলেই বুঝতে পারবেন। শহরের লোক পাশের বাড়ির খবরও রাখে না, কিন্তু গাঁয়ে একটা কিছু ঘটলেই আশপাশের পাঁচখানা গ্রামে সঙ্গে সঙ্গে রটে যায়।
দ্বারিক বলল, যারা আগুন লাগাতে এসেছিল, তারাই বোধ হয় রটিয়েছে।
নুটু বলল, সেটাও আশ্চর্য কিছু না। হয়তো তারা তোমাদের আগুনে পুড়িয়ে মারতে চায়নি, তোমাদের ভয় পাইয়ে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য ছিল!
বীথি বলল, এবার আমরা একটা কথা রটিয়ে দিলে পারি না? যে, আমরা যথেষ্ট ভয় পেয়েছি, আর ভয় পাওয়ারও দরকার নেই!
দ্বারিক জিজ্ঞেস করল, তুমি সত্যি ভয় পেয়েছ নাকি, বীথি?
আমি…আমি মায়ের কথা ভেবে বলছি।
নুটু বলল, আমাদের মায়েদের জন্য আগে একটা ট্রেনিং কোর্স খোলা উচিত ছিল। সব বাড়িতেই মায়েদের নিয়ে একটা বড়ো সমস্যা!
দ্বারিক লক্ষ করল, আগুন লাগার খবর শুনেই নুটু ছুটে এসেছে বটে, কিন্তু ঘটনাকে যেন সে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে না। দ্বারিকরা যে সত্যিই একটা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে, সেটা কি বুঝতে পারছে না নুটু? অথবা, সে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলেই আর এসব সমস্যার মধ্যে মাথা গলাতে চায় না!
তুই কবে চলে যাচ্ছিস নুটু?
পরশু!
রাজেন, অনন্ত ওরা কোনো খবর পায়নি।
জানি না! রাজেনের সঙ্গে দেখা হয় না, ও আবার পড়াশুনো শুরু করবে শুনেছি। অনন্তটা ফেরার পর থেকেই রক্ত আমাশয়ে ভুগছে।
আমি আর বীথি রোজ পালা করে রাত জেগে পাহারা দেব। আবার যদি কেউ আগুন দিতে আসে…
কারা আগুন দিতে এসেছিল, তুমি জান না, দ্বারিকদা?
কী করে জানব?
নিশ্চয়ই মহাদেব সাহার লোক।
তার এতখানি সাহস হবে?
তুমি এখন এই গাঁয়ে একা পড়ে গেছ, তাই ওরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।
সেইজন্যই তো আমি দল গড়তে চেয়েছিলাম। তোরা সবাই পালিয়ে যাচ্ছিস…কিন্তু আমি পালাব না।
দ্বারিকা, পাঁচ-ছ-বছর আগে আমরা সবাই ছিলাম ছাত্র। এখন আর ছাত্র নই। এখন একটা কঠিন জিনিসের মুখখামুখি এসে পড়েছি…দু-বেলা দুটো ভাত অন্তত জোগাড় করতে হবে তো! এখন চাকরি-বাকরি খোঁজা ছাড়া উপায় কী? এই সময় ভুলতা ফিরে এলে তোমাদের অনেক সাহায্য হত।
দ্বারিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
নুটু বীথির পা থেকে মাথা পর্যন্ত সারাশরীরে চোখ বুলোলো দু-বার। তারপর খালি কাপটা বীথির হাতে তুলে দিল। বলল, আর এক কাপ চা চাইলে কি খুব অন্যায় আবদার করা হবে বউদি?
বীথি বলল, আপনি গুড়ের চা খেতে পারবেন? সামান্য একটু চিনি আছে, সেটুকু বাবার জন্য লাগবে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, গুড়ের চা-ও খুব চমৎকার।
দ্বারিক বুঝেছিল, নুটু চাইছে বীথিকে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ির মধ্যে পাঠিয়ে দিতে।
দ্বারিকদা, তুমি বউদিকে কিছুদিনের জন্য বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিলে না কেন?
কেন, হঠাৎ তাকে জোর করে পাঠাতে যাব কেন?
বউদি এখানে থাকলে তুমি আরও বিপদে পড়বে, সেটা বুঝতে পারছ না?
কীসের বিপদ?
কিছু লোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে তোমার নামে এখন নানা কথা রটাচ্ছে। এখন চোর-গুণ্ডা বদমাশদের নজর পড়বে তোমাদের বাড়ির দিকে। ওরা বোঝে যে এই সময় তুমি পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও কোনো সাহায্য পাবে না। এই সময় বউদির মতন একটি যুবতী মেয়ে বাড়িতে থাকলে—তুমি একলা—
তা বলে আমি ভয় পেয়ে ওকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেব? আসল ব্যাপারটা আমি জানি। তোমার এখন সঙ্গে থাকলেও তুমি নিজে মুখ ফুটে সে-কথা বউদিকে বলতে পারবে না! তোমার সম্মানে লাগবে! তাহলে আমি বউদিকে বুঝিয়ে বলব?
না!
দ্বারিক এত জোরে বলল কথাটা যে নুটু চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ দু-জনেই চুপচাপ। নুটু তাকে উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই ভাবটা সহ্য হচ্ছে না দ্বারিকের।
নুটু একটা কাঠি দিয়ে দাগ কাটছে মাটিতে। দ্বারিক যখন পছন্দ করছে না, সে আর কিছু বলতে চায় না।
তুই শুনেছিস, আমার নামে নরবলি দেওয়ার গুজব উঠেছে?
না শুনে উপায় কী? চারদিকে ম-ম করছে গুজবটা। তোমার নাকি চোখ দুটো এখন টকটকে লাল! সত্যিই খানিকটা লালচে হয়েছে তোমার চোখ, দ্বারিকদা!
তুই হাসছিস, নুটু?
হাসব না? এ-রকম একটা অদ্ভুত কথা নিয়েও লোকে মাতামাতি করতে পারে!
তোর নামে এ-রকম গুজব উঠলে তুই কী করতিস?
কিছুদিন অন্য কোথাও চলে গিয়ে গা-ঢাকা দিয়ে থাকতাম!
আমি এখন এখান থেকে পালিয়ে গেলে আর আমার ফিরে আসবার পথ থাকবে? পালিয়ে যাওয়া মানেই তো মেনে নেওয়া!
তুই চাইছিস, বীথিকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিই? আমি নিজেও পালিয়ে যাই? বাঃ বাঃ, চমৎকার ব্যবস্থা! এই তোর রাজনৈতিক শিক্ষা।
আমি তোমায় পালাতে বলছি না দ্বারিকা। এখানে থাকলে তুমি কি করতে পারবে না। সিউড়িতে, মেদিনীপুর, কলকাতায় আবার নতুন করে দল গড়া হচ্ছে, তুমি সেখানে গিয়ে যোগ দিতে পার, আবার কাজ শুরু করতে পার।
মোটেই না। আমি এখানেই দল গড়ব! তোদের যদি না পাই, আমি যাব মালোপাড়ায়, ওরা ভীতু নয়, আমি ওদের নিয়েই দল গড়তে পারি, আবার!
নুটু আস্তে আস্তে বলল, আমি যদি গ্রামে থাকতাম, আমিও মালোপাড়ায় গিয়েই নতুন করে কাজ শুরু করতাম। তুমি কি এর মধ্যে গিয়েছিলে ওদিকে? আমি গিয়েছিলাম… দুর্যোধনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
মালোপাড়াটা মোরামডাঙা গ্রামের একটু বাইরের দিকে। এখান থেকে মল্লিকপুর যেতে মাঝামাঝি পথে পড়ে। মালোরাই এদিককার খেত-মজুরি করে। সাঁওতালরা এদিকে আসে না। প্রথম রাজনীতি করতে নেমে দ্বারিকরা মালোপাড়াতেই কাজ শুরু করেছিল।
নুটু বলল, মালোপাড়া সম্পর্কে তোমাকে একটা সুসংবাদ দিতে পারি। কুয়োতে জল আসায় ওরা খুব খুশি হয়েছে। একটা নালি কাটা হচ্ছে মালোপাড়ার পাশ দিয়ে, সেখানে জলের মধ্যে দাপাদাপি করছে ছেলে-বুড়ো সবাই! জল মানেই সৌভাগ্য! ওরা তোমার নাম করছিল! ওরা বিশ্বাস করে, তুমি নরবলি দিয়ে ওদের দারুণ উপকার করেছ!
নুটুর কথায় দ্বারিক একটু একটু খুশি হয়ে উঠছিল, আবার দমে গেল খুব!
ফ্যাকাশে গলায় বলল, ওরা বিশ্বাস করে?
হ্যাঁ করে। কিন্তু ভদ্রলোকদের মতন ওরা ভন্ড নয়! তুমি ওদের উপকার করেছ, তাতেই ওরা কৃতজ্ঞ। গাঁয়ের ভদ্রলোকশ্রেণি, যারা ওই গুজবটা ছড়াচ্ছে, তারা ওই জল ব্যবহার করবে কিন্তু তোমাকে একঘরে করে রাখবে কিংবা গাঁ থেকে তাড়িয়ে ছাড়বে। কিন্তু মালোরা এখন তোমায় পেলে নাচবে মাথায় করে।
কিন্তু একটা মিথ্যে কথা…একটা জঘন্য মিথ্যে কথা…ওই জলের জন্য আমি কিছুই করিনি।
তবু মালোদের মধ্যে কাজ করতে গেলে…তুমি এটার সুযোগ নাও।
একটা কুসংস্কার—ওদের মধ্যে আমি সেটাকে আরও দূর করব?
বীথি আবার চা নিয়ে আসতেই নুটু তিন-চার চুমুকে তাড়াহুড়ো করে শেষ করে ফেলল সেই চা। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম বউদি।
যেন নুটু বেশিক্ষণ বীথির সামনে থাকতে চায় না। বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে কেন সে এত আড়ষ্ট ব্যবহার করছে কে জানে।
বীথি জিজ্ঞেস করল, আপনি এখানে আজ খেয়ে যাবেন?
নুটু বলল, না, আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে। বাড়িতে একজন লোক আসবে। সাইকেলটা দাঁড় করিয়ে সে বলল, চলি বউদি, আমি পরশু দিনই জামশেদপুরে চলে যাচ্ছি, হয়তো এর মধ্যে আর দেখা হবে না…। তবে, ভুতো ফিরে এলে, দ্বারিকদা একটা খবর দিয়ে। আমি নিশ্চয়ই এসে দেখা করে যাব।
দ্বারিক বলল, চল, নুটু তোকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।
বীথি জিজ্ঞেস করল, আপনি আজ স্কুলে যাবেন না?
স্কুলে এখনও চাকরিটা আছে কিনা দ্বারিক তা-ই জানে না। অন্তত আজ তো স্কুলে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সে দু-দিকে মাথা নেড়ে বলল, না আজ একবার থানায় যেতে হবে।
নুটুর পাশাপাশি কিছুক্ষণ দ্বারিক হেঁটে গেল নিঃশব্দে। এবার নুটু সাইকেলে উঠবে!
দ্বারিক তার একটা হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, তোকে একটা কথা বলছি নুটু…তোর কাছে…লুকোনো কোনো আর্মস আছে?
আর্মস?
একটা রিভলবার…কাছে রাখতে চাই!।
ও কাজও কোরো না দ্বারিকদা!
মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার চারদিক দিয়ে একটা বিপদ ঘিরে আসছে, একটা নির্বোধ শক্তি যেন আমায় পিষে ফেলবে…সেইজন্য আমারও একটা কিছু অবলম্বন দরকার…অন্তত লোককে ভয় দেখাবার জন্যও।
এক সঙ্গে বহু লোক এলে তুমি একটা রিভলবার দিয়ে কী করবে? তাতে আরও বিপদ বাড়বে! তুমি নিরঞ্জনদার খবর শোনোনি?
কী হয়েছে নিরঞ্জনদার?
ধানকা গ্রামে ডাকাতি হয়েছিল…পুলিশ এসে নিরঞ্জনদার বাড়ি সার্চ করে দুটো আর্মস পায়…নিরঞ্জনদাকে ডাকাতির চার্জ দিয়ে পুলিশ অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে।
নিরঞ্জনদা কক্ষনো ডাকাতি করতে পারে না।
সে তুমিও জান, আমিও জানি। কিন্তু পুলিশ যদি এ-রকম ফলস চার্জ দিয়ে ধরে নিয়ে যায়…এখন তোমার ওপর নজর পড়তে পারে…
ঠিক আছে, তুই যা।
আমি চলে যাচ্ছি বলে তুমি আমাকে স্বার্থপর ভাবছ হয়তো, কিন্তু আমার উপায় নেই। আমার বাড়িতে একদিন গেলে তুমি বুঝতে পারবে..বড়োমামা একটা ইন্টারভিউয়ের কথা লিখেছেন, নইলে আমি হয়তো কিছুদিন থেকে যেতাম।
তার দরকার নেই, তুই যা, আমার জন্য চিন্তা করিস না কিছু…
আমার কাছে কোনো আর্মস নেই লুকোনো, তোমায় সত্যি বলছি, থাকলে হয়তো তোমায় দিতাম..কিন্তু অনেক লোকের বিরুদ্ধে একটা রিভলবার নিয়ে দাঁড়ানো আরও ডেঞ্জারাস, আমার অভিজ্ঞতা আছে, সেইজন্যই তোমাকে বললাম।
বুঝেছি, আমিও তা জানি, হঠাৎ একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।
দ্বারিকদা, তোমাকে একটা কথা বলব? তুমি আমার সাইকেলটা নেবে?
দ্বারিক চমকে উঠে বলল, কেন তোর সাইকেল আমি নেব কেন?
এটা রাখো তোমার কাছে…আমি তো চলেই যাচ্ছি, আমার কাজে লাগবে না, তোমার কাজে লাগতে পারে…হঠাৎ কোনো দরকার হলে তুমি যদি সুখময়কে রাজেনকে খবর দাও, আমার বিশ্বাস ওরা ঠিকই ছুটে আসবে।
আমি কারুকে ডাকতে যাব না।
তবু সাইকেলটা রাখখা…তুমি থানায় যাবে বলছিলে, অত দূরের রাস্তা…
কিন্তু সাইকেল…একটা দামি জিনিস…তোর জিনিসটা আমি রাখব কেন?
এটা আমার না, বাবার। বাবা এখন বাতের ব্যথার জন্য চালাতে পারেন না। আমি চলে গেলেই বাবা এটা বিক্রি করে দিতেন। তোমার কাছ থেকেও বাবা এটা চেয়ে পাঠাবেন নিশ্চয়ই…
তবু যে ক-দিন হয় রাখো তোমার কাছে, আমি বাবাকে বলে যাব।
সাইকেলটা দ্বারিকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নুটু বলল, দ্বারিকদা, তুমি এটা রাখো, না হলে বুঝব তুমি আমার ওপর রাগ করে আছ।
দ্বারিক বিব্রতভাবে বলল, ঠিক আছে…কিন্তু এখন…তুই এখনই রেখে যাচ্ছিস কেন…আমি পরে তোর বাড়ি থেকে চেয়ে নেব।
না তুমি রাখো।
তুই এখন যাবি কী করে?
আমার কোনো অসুবিধে হবে না…কদমতলি থেকে বাসে চেপে যাব—তুমি রাখো।
নুটু আর দাঁড়াল না। হাঁটতে লাগল খুব জোরে জোরে। সোজা টানা রাস্তা। নুটুকে অনেকক্ষণ দেখা যায়। দু-তিনবার পেছন ফিরে তাকাল নুটু।
দ্বারিক মূর্তির মতন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।