০৫. অরাজকতা ও মাৎস্যন্যায়

পঞ্চম পরিচ্ছেদ –অরাজকতা ও মাৎস্যন্যায়

১. গৌড়

শশাঙ্কের মৃত্যুর পরে আনুমানিক ৬৩৮ অব্দে হুয়েন সাং বাংলা দেশ পরিভ্রমণ করেন। তিনি কজঙ্গল (রাজমহলের নিকট), পুণ্ড্রবর্দ্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও তাম্রলিপ্তি এই পাঁচটি বিভিন্ন রাজ্যের উল্লেখ করিয়াছেন। উৎকল এবং কোঙ্গোদও তখন স্বাধীন রাজ্য ছিল। আৰ্য্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্পে উক্ত হইয়াছে যে শশাঙ্কের মৃত্যুর পর গৌড়রাষ্ট্র আভ্যন্তরিক কলহ ও বিদ্রোহে ছিন্নভিন্ন হইয়া গিয়াছিল; একাধিক রাজার অভ্যুদয় হয়-তাঁহার মধ্যে কেহ এক সপ্তাহ, কেহ বা এক মাস রাজত্ব করেন; শশাঙ্কের পুত্র মানব ৮ মাস ৫ দিন রাজত্ব করেন। এই বর্ণনা সম্ভবত অনেক পরিমাণে সত্য। এই প্রকার আত্মঘাতী অন্তর্বিদ্রোহই সম্ভবত শশাঙ্কের বিশাল রাজ্যের শক্তি নষ্ট এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণের পথ প্রশস্ত করে।

আঃ ৬৪১ অব্দে হর্ষবর্দ্ধন মগধ জয় করেন এবং পর বৎসর তিনি উত্তাল ও কোঙ্গোদে বিজয়াভিযান করেন। এই সময়েই কামরূপরাজ ভাস্করবর্ম্মা গৌড় জয় করিয়া কর্ণসুবর্ণে তাঁহার জয়স্কন্ধাবার সন্নিবেশিত করেন। আঃ ৬৪২ অব্দে যখন হর্ষ জঙ্গল রাজ্যে অবস্থিতি করিতেছিলেন তখন ভাস্করবর্ম্মা বিশ হাজার রণহস্তী লইয়া হর্ষের সহিত সাক্ষাৎ করেন। তাঁহার ত্রিশ হাজার রণপোতও গঙ্গা নদী দিয়া কজঙ্গলে গমন করে। এইরূপে শশাঙ্কের দুই প্রবল শত্রু তাঁহার রাজ্যের ধ্বংস সাধন করে।

৬৪৬ অথবা ৬৪৭ অব্দে হর্ষবর্দ্ধনের মৃত্যু হয়। ইহার পরই তাঁহার সাম্রাজ্য ধ্বংস হয় এবং তিব্বতরাজ কামরূপ ও পূর্ব্বভারতের কিয়দংশ অধিকার করেন। সুতরাং গৌড়ে ভাস্করবর্ম্মার অধিকার খুব বেশী দিন স্থায়ী হয় নাই। ইহার পরেই জয়নাগ নামক একজন রাজা কর্ণসুবর্ণে রাজত্ব করেন। তাঁহার মহারাজাধিরাজ উপাধি হইতে অনুমান হয় যে তিনি বেশ শক্তিশালী রাজা ছিলেন। কিন্তু তাঁহার রাজ্যের বিস্তৃতি অথবা তাঁহার সম্বন্ধে আর কোনো বিবরণ জানা যায় না।

শশাঙ্কের মৃত্যুর পরবর্ত্তী একশত বৎসর গৌড়ের ইতিহাসে এক অন্ধকারময় যুগ। এই যুগে অনেক বহিঃশত্রু এই রাজ্য আক্রমণ করে। অনেকে অনুমান করেন যে তিব্বতরাজ ও পরবর্ত্তী গুপ্তবংশীয় সম্রাটগণ এই রাজ্য জয় করিয়াছিলেন-কিন্তু ইহার বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ নাই। অষ্টম শতাব্দীর প্রারম্ভে শৈলবংশীয় একজন রাজা পুদেশ জয় করেন। ইহার অনতিকাল পরে কনৌজের রাজা যশোবৰ্ম্মা গৌড়রাজকে পরাভূত ও বধ করেন। কনৌজের রাজকবি বাকপতিরাজ এই ঘটনা উপলক্ষ করিয়া গৌড়বহো (গৌড় বধ) নামক প্রাকৃত ভাষায় এক কাব্য রচনা করেন। কিন্তু ইহার পরেই কাশ্মীরের রাজা ললিতাদিত্যের হাতে যশোবর্ম্মার পরাজয় ঘটে এবং তাঁহার বিশাল রাজ্য ধ্বংস হয়। গৌড়রাজ ললিতাদিত্যের অধীনতা স্বীকার করেন। রাজতরঙ্গিণী নামক কাশ্মীরের ইতিহাসে গৌড় সম্বন্ধে যে একটি আখ্যান লিপিবদ্ধ হইয়াছে, তাহা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ললিতাদিত্য গৌড়রাজকে কাশ্মীরে আমন্ত্রণ করেন এবং বিষ্ণুমূর্ত্তি স্পর্শ করিয়া শপথ করেন যে কাশ্মীরে গেলে তাঁহার কোনো বিপদ ঘটিবে না। অথচ গৌড়রাজ কাশ্মীর যাওয়ার পরেই ললিতাদিত্য তাঁহাকে হত্যা করেন। এই ঘৃণ্য বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ লইবার জন্য গৌড়রাজের কতিপয় বিশ্বস্ত অনুচর তীর্থযাত্রার ছলে কাশ্মীর গিয়া উক্ত বিষ্ণুমূর্ত্তি ভাঙ্গিবার জন্য মন্দিরে প্রবেশ করে। ভুলক্রমে তাহারা অন্য একটি মূর্ত্তি ভাঙ্গিতে আরম্ভ করে এবং ইতিমধ্যে কাশ্মীরের সৈন্য আসিয়া তাহাদিগকে হত্যা করে। রাজতরঙ্গিণীর রচয়িতা ঐতিহাসিক কুতুণ এই বাঙ্গালী বীর অনুচরগণের প্রভুভক্তি ও আত্মোৎসর্গের ভূয়সী প্রশংসা করিয়া লিখিয়াছেন যে উক্ত মন্দিরটি আজও শূন্য কিন্তু পৃথিবী গৌড়বীরগণের প্রশংসায় পূর্ণ। কুতুণ ললিতাদিত্যকে আদর্শ রাজা বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন কিন্তু তিনি স্বীকার করিয়াছেন যে চন্দ্রের ন্যায় ললিতাদিত্যের নির্মল চরিত্রে দুইটি দুরপনেয় কলঙ্ক ছিল এবং গৌড়রাজের হত্যা তাঁহার অন্যতম। রাজকবির এই সমুদয় উক্তি হইতে উল্লিখিত গৌড়বীরগণের কাহিনী সত্য বলিয়াই অনুমিত হয়।

কহ্লণ লিখিয়াছেন যে ললিতাদিত্যের পৌত্র জয়াপীড় পিতামহের অনুকরণে দিগ্বিজয়ে বাহির হন। কিন্তু তাঁহার অনুপস্থিতিতে জৰ্জ্জ কাশ্মীর রাজ্য অধিকার করে এবং জয়াপীড়ের সৈন্যগণও তাঁহাকে পরিত্যাগ করে। অতঃপর সমুদয় অনুচরগণকে বিদায় দিয়া একাকী ছদ্মবেশে ভ্রমণ করিতে করিতে তিনি পুণ্ড্রবর্দ্ধন নগরীতে উপস্থিত হন। এই প্রদেশ তখন জয়ন্ত নামক একজন সামন্ত রাজার অধীনে ছিল। জয়াপীড় জয়ন্তের কন্যাকে বিবাহ করেন এবং গৌড়ের পাঁচজন রাজাকে পরাস্ত করিয়া জয়ন্তকে তাঁহাদের অধীশ্বর করেন। এই কাহিনী কত দূর সত্য বলা যায় না। তবে গৌড় যে তখন পাঁচ অথবা একাধিক খণ্ডাজ্যে বিভক্ত ছিল, ইহা সম্ভব বলিয়াই মনে হয়।

নেপালের লিচ্ছবিরাজ দ্বিতীয় জয়দেবের শিলালিপিতে গৌড়ের আর এক বহিঃশত্রুর উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৫৩ সংবতে (৭৪৮ অথবা ৭৫৯ খৃষ্টাব্দ) উৎকীর্ণ এই লিপিতে নেপালরাজের শ্বশুর ভগদত্তবংশীয় রাজা হর্ষ গৌড়, ওড্র, কলিঙ্গ ও কোশলের অধিপতিরূপে অভিহিত হইয়াছেন। ভগদত্তবংশীয় রাজগণ কামরূপে রাজত্ব করিতেন, সুতরাং অনেকেই অনুমান করেন যে কামরূপরাজ হর্ষ গৌড় জয় করিয়াছিলেন। কিন্তু উড়িষ্যার করবংশীয় রাজগণও ভগদত্তবংশীয় বলিয়া দাবী করিতেন। সুতরাং অসম্ভব নহে যে হর্ষ করবংশীয় রাজা ছিলেন। কিন্তু কেবলমাত্র গৌড়াধিপ এই সম্মানসূচক পদবী হইতে কামরূপ বা উৎকলের কোনো রাজা গৌড়ে রাজত্ব করিতেন এইরূপ স্থির সিদ্ধান্ত করা যায় না-তবে সম্ভবত তিনি গৌড়ে বিজয়াভিযান করিয়া কিছু সাফল্য লাভ করিয়াছিলেন।

.

২. বঙ্গ

রাজ্য শশাঙ্কের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল কি না নিশ্চিত বলা যায় না। কিন্তু শশাঙ্কের মৃত্যুর পরই যে এখানে সমতট নামে স্বাধীন রাজ্য ছিল হুয়েন সাংয়ের বিবরণ হইতেই তাহা জানা যায়। হুয়েন সাং আরও বলেন যে সমতটে এক ব্রাহ্মণবংশ রাজত্ব করিতেন, এবং এই বংশীয় শীলভদ্র তাঁহার সময়ে নালন্দার অধ্যক্ষ ছিলেন।

অতঃপর খড়গবংশের অভ্যুদয় হয়। খড়েগাদ্যম, তৎপুত্র জাতখড়গ ও তৎপুত্র দেবখড়গ এই তিনজন রাজা সম্ভবত সপ্তম শতাব্দীর শেষার্ধে রাজত্ব করেন। দেখড়েগর পুত্র রাজরাজ অথবা রাজরাজভটও সম্ভবত তাঁহার পরে রাজত্ব করেন। এই রাজগণ সকলেই বৌদ্ধধর্ম্মাবলম্বী ছিলেন। তাঁহাদের রাজ্য দক্ষিণ ও পূর্ব্ববঙ্গে বিস্তৃত ছিল। কেহ কেহ অনুমান করেন যে তাঁহাদের রাজধানীর নাম ছিল কৰ্ম্মান্ত এবং ইহাই বর্ত্তমানে কুমিল্লার নিকটবর্ত্তী বড়কামতা নামে পরিচিত। কিন্তু এই মত নিঃসংশয়ে গ্রহণ করা যায় না।

চীনদেশীয় পরিব্রাজক সেংচি সপ্তম শতাব্দীর শেষে এদেশে আসেন। তিনি সমতটের রাজা রাজভটের বৌদ্ধধর্ম্মে বিশেষ অনুরাগের কথা লিখিয়াছেন। সম্ভবত এই রাজভট ও খড়গবংশীয় রাজরাজ অভিন্ন। দেখগের রাণী প্রভাবতী কর্ত্তৃক একটি ধাতুময়ী সৰ্ব্বাণী (দুর্গা) মূৰ্তি কুমিল্লার ১৪ মাইল দক্ষিণে দেউলবাড়ী গ্রামে আবিষ্কৃত হইয়াছে।

কেহ কেহ মনে করেন যে খড়গবংশীয়েরা অষ্টম অথবা নবম শতাব্দীতে রাজত্ব করেন। খড়গবংশীয়ের উৎপত্তি সম্বন্ধেও সঠিক কিছু জানা যায় না। নেপালে খড়ুক অথবা খর্ক নামে এক বংশ ছিল। তাহাদের রাজা ক্ষত্রিয় বলিয়া দাবী করিতেন। ষোড়শ শতাব্দীতে এই বংশের রাজা দ্রব্য সাহ গুখা জিলা দখল করেন এবং বর্ত্তমান গুর্খা রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন খড়গ বংশের সহিত এই বংশের কোনো সম্বন্ধ থাকা অসম্ভব নহে। তবে এ সম্বন্ধে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না।

কনৌজের রাজা যশোবৰ্ম্মা গৌড়রাজকে বধ করার পর বঙ্গ জয় করেন। বাকপতির বর্ণনা হইতে অনুমিত হয় যে বঙ্গরাজ বেশ শক্তিশালী ছিলেন এবং তাঁহার বহু রণহস্তী ছিল। গৌড়বহো কাব্যে উক্ত হইয়াছে যে যশোবর্ম্মার নিকট বশ্যতা স্বীকারের সময় বঙ্গবাসীদের মুখ পাণ্ডুর বর্ণ ধারণ করিয়াছিল, কারণ তাহারা এরূপ কাৰ্য্যে অভ্যস্ত নহে। বিদেশী কবি কর্ত্তৃক বঙ্গের বীরত্ব ও স্বাধীনতা প্রীতির উল্লেখ সম্ভবত তাঁহার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ফল। যশোবর্ম্মার অধিকার খুব বেশী দিন স্থায়ী হয় নাই। গৌড়ের অপর দুই বহিঃশত্রু ললিতাদিত্য ও হর্ষের সহিত বঙ্গের কোনো সম্বন্ধ ছিল না।

যশোবর্ম্মা যে সময় বঙ্গ জয় করেন, সে সময়েও খড়গবংশীয়েরা রাজত্ব করিতেছিলেন কি না বলা কঠিন। কারণ ইহার কিছু পূৰ্ব্বে রাত উপাধিধারী এক রাজবংশ কুমিল্লা অঞ্চলে রাজত্ব করিতেন। এই বংশীয় জীবধারণ রাত ও তাঁহার পুত্র শ্রীধারণ রাত এই দুই রাজার সমতটেশ্বর উপাধি ছিল এবং শ্রীধারণের তাম্রশাসনে উক্ত হইয়াছে যে সমতটাদি অনেক দেশ তাঁহার রাজ্যভুক্ত ছিল। শ্রীধারণের সামন্তসূচক উপাধি হইতে অনুমিত হয় যে আদিতে এই বংশের রাজগণ কোনো রাজার অধীন ছিলেন কিন্তু শেষে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন রাজার ন্যায় রাজত্ব করিতেন। কেহ কেহ অনুমান করেন যে রাতবংশ খড়গবংশের সামন্ত ছিল। কিন্তু এই দুই বংশ মোটামুটি সমসাময়িক হইলেও এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিতরূপে গ্রহণ করা যায় না। শ্রীধারণের তাম্রশাসন হইতে জানা যায় যে ক্ষীরোদা নদী পরিবেষ্টিত দেবপৰ্বত এই বংশের রাজধানী ছিল। দেবপর্বত খুব সম্ভবত কুমিল্লা নগরীর পশ্চিমে লালমাই-ময়নামতী পাহাড়ের দক্ষিণভাগে অবস্থিত ছিল। কেহ কেহ অনুমান করেন যে ময়নামতী টিলার প্রায় সাড়ে তিন মাইল দক্ষিণে পাহাড়ের পূর্ব্ব উপকণ্ঠে “আনন্দ রাজার বাড়ী” নামে বর্ত্তমানকালে পরিচিত স্থানই ঐ দেবপৰ্ব্বতের ধ্বংসাবশেষ-কারণ ইহার নিকটবর্ত্তী খাতটি এখনো স্থানীয় লোকের নিকট ক্ষীর নদী বলিয়া পরিচিত।

এই সময়কার একখানি তাম্রশাসনে সামন্তরাজ লোকনাথের ও তাঁহার পূৰ্বপুরুষগণের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁহারা ত্রিপুরা অঞ্চলে রাজত্ব করিতেন। লোকনাথ ও জীবধারণ রাত সমসাময়িক ছিলেন কিন্তু উভয়ের মধ্যে কী সম্বন্ধ ছিল, সঠিক নির্ণয় করা যায় না। কাহারও কাহারও মতে লোকনাথ জীবধারণের সামন্ত ছিলেন, কিন্তু প্রথমে উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ উপস্থিত হইয়াছিল। জীবধারণ বহু সৈন্য ক্ষয় করিয়াও লোকনাথকে পরজিত করিতে পারেন নাই। কিন্তু পরে অন্য এক যুদ্ধে লোকনাথ তাঁহাকে সাহায্য করায় সন্তুষ্ট হইয়া তিনি লোকনাথকে বিস্তৃত ভূখণ্ডসহ শ্রীপট্ট দান করেন। এই মতটি নিশ্চিত সিদ্ধান্তরূপে গ্রহণ করা যায় না।

উল্লিখিত বর্ণনা হইতে অনুমিত হয় যে শশাঙ্ক-হর্ষবর্দ্ধন-ভাস্করবর্ম্মার তিরোধানের পরে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষভাগে পূৰ্ব্ববঙ্গে অনেকগুলি স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হইয়াছিল। তিব্বতীয় লামা তারনাথ সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারতীয় বৌদ্ধধৰ্ম্মের যে ইতিহাস রচনা করেন, তাহাতে এই যুগের বাংলা দেশের অনেক কাহিনী লিপিবদ্ধ হইয়াছে। এই সমুদয় কাহিনী একেবারে অমূলক না হইলেও অন্যবিধ প্রমাণ ব্যতিরেকে সত্য বলিয়া গ্রহণ করা যায় না। তিনি চন্দ্রবংশীয় অনেক রাজার উল্লেখ করিয়াছেন। এই বংশের শেষ দুই রাজা গোবিচন্দ্র ও ললিতচন্দ্র। এই দুই রাজার অস্তিত্ব স্বীকার করিলে বলিতে হয় যে এই চন্দ্রবংশীয় রাজারাই খড়গ অথবা রাতবংশীয়দের নিকট হইতে বঙ্গ জয় করেন এবং সম্ভবত ললিতচন্দ্রই যশোবর্ম্মার হস্তে পরাজিত হইয়াছিলেন। রাজা গোপীচন্দ্র ও তাঁহার মাতা ময়নামতী সম্বন্ধে বঙ্গদেশে বহু প্রবাদ, কাহিনী ও গীতিকাব্য প্রচলিত আছে। ইহার মর্ম এই যে গোপীচন্দ্র অদুনা ও পদুনা নামক দুই রাণীকে পরিত্যাগ করিয়া যৌবনে মাতার আদেশে সন্ন্যাস অবলম্বন করেন এবং হাড়ি সিদ্ধা অথবা হাড়িপার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অনেকে মনে করেন যে তারনাথ কথিত গোবিচন্দ্র ও এই গোপীচন্দ্র অভিন্ন। কিন্তু এ সম্বন্ধে সন্দেহ করিবার যথেষ্ট কারণ আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *