1 of 3

০৪৯. মুহাজিরদের ফিরিয়ে আনার জন্য আবিসিনিয়ায় কুরাইশদের দূত প্রেরণ

কুরাইশগণ যখন দেখলো যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ আবিনিনিয়ায় গিয়ে নিরাপদে ও শান্তিতে বসবাস করছেন, তখন তারা সিদ্ধান্ত নিল যে, নাজাশীর নিকট দু’জন যোগ্য দূত পাঠাবে। এতে নাজাশী তাদেরকে সেখান থেকে ফেরত পাঠাবে এবং তারা তাদেরকে ধর্মান্তরিত করার সুযোগ পাবে। তারা মুসলমানদেরকে তাঁদের নিরাপদ ও নিরুপদ্রব আশ্রয় থেকে যে করেই হোক বের করে আনতে বদ্ধপরিকর হলো। এ উদ্দেশ্যে যে দু’জন লোককে পাঠালো তারা হলো আবুদল্লাহ ইবনে আবু রাবী’আ ও আমর ইবনুল ’আস ইবনে ওয়ায়েল। কুরাইশরা দূতদ্বয়ের মাধ্যমে নাজাশীকে দেয়ার জন্য বিপুল উপঢৌকন সংগ্রহ করলো। অতঃপর তাদেরকে নাজাশীর কাছে পাঠালো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী উম্মে সালামা বিনতে আবু উমাইয়া ইবনে মুগীরা বলেন, আমরা আবিসিনিয়ায় গিয়ে উপস্থিত হবার পর একজন উত্তম প্রতিবেশী পেলাম। তিনি স্বয়ং নাজাশী। আমরা আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ নিরাপত্তা লাভ করলাম। নির্বিঘেœ আল্লাহর ইবাদাত করতে লাগলাম। কোন কষ্টদায়ক ব্যবহারও কেউ করছিল না এবং কোন অপ্রীতিকর কথাও আমাদের শুনতে হচ্ছিল না। কুরাইশগণ একথ জানতে পেরে সিদ্ধান্ত নিল যে, নাজাশীর কাছে আমাদের ব্যাপারে দু’জন পারদর্শী দূত পাঠাবে এবং নাজাশীর কাছে আমাদের মক্কার দুর্লভ ও নয়ানাভিরাম জিনিস উপঢৌকন পাঠাবে। নাজাশীর কাছে মক্কা থেকে যেসব জিনিস আসতো তার মধ্যে সবচেয়ে উত্ম জিনিস বিবেচিত হতো সেখানকার চামড়া। তাই তাঁর জন্য কুরাইশরা প্রচুর চামড়া সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিলেন। নাজাশীর রাজকর্মচারী ও দরবারীদের কাউকেই তারা উপহার দিতে বাদ রাখেনি। এসব উপহার উপঢৌকন সহকারে আবদুল্লাহ ইবনে আবু রাবী’আ ও আমর ইবনুল ‘আসকে পাঠালো এবং তাদের করণীয় কাজ তাদেরকে বুঝিয়ে দিল। তারা তাদেরকে বলে দিল, “মুহাজিরদের সম্পর্কে নাজাশীর সাথে কথা বলার আগে তোমরা প্রত্যেক দরবারী ও রাজকর্মচারীকে উপঢৌকন দিয়ে অনুরোধ করবে, তিনি যেন মুহাজিরদেরকে তোমাদের হাতে সমর্পণ করেন এবং সমর্পণ করার আগে তাদের সাথে যেন কোন কথা না বলেন।”

এরপর তারা রওনা হলো এবং নাজাশীর কাছে এসে উপনীত হলো। তখন আমরা উত্তম প্রতিবেশীর কাছে উত্তম বাসস্থানে বসবাস করছি। নাজাশীর সাথে কথাবার্তা বলার আগে তারা প্রতিটি দরবারী ও রাজকর্মচারীকে উপঢৌকন দিল। তাদের প্রত্যেককে তারা বললো, “আমাদের দেশ থেকে কতকগুলো বেকুব যুবক বাদশাহর রাজ্যে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তারা নিজ জাতির ধর্ম ত্যাগ করেছে অথচ আপনাদের ধর্মও গ্রহণ করেনি। তারা এক নতুন উদ্ভট ধর্ম তৈরী করেছে। সে ধর্ম আপনাদের ও আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। জাতির সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত লোকেরা আমাদেরকে বাদশাহর কাছে পাঠিয়েছেন, যেন তিনি ওদেরকে ওদের স্বাজাতির কাছে ফেরত পাঠান। আমরা যখন বাদশারহর সাথে কথা বলবো তখন আপনারা বাদশাহকে ওদের ফেরত পাঠাতে ও ওদের সাথে কোন কথা না বলতে পরামর্শ দেবেন। কেননা তাদের দোষত্রুটি সম্পর্কে তাদরে জাতিই সবচেয়ে ছাল জানে।” দরবারীরা সবাই এতে সম্মতি জানালো। অতঃপর তারা নাজাশাকীকে উপঢৌকন দিল এবং তিনি তা গ্রহণ করলেন। অতঃপর তারা তাঁর সাথে কথা বলতে শুরু করলো। তারা বললো, “হে বাদশাহ, আমাদের দেশ থেকে কতিপয় নের্বোধ যুবক আপনার দেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা তাদের স্বাজাতির ধর্ম ত্যাগ করেছে এবং আপনার ধর্মও গ্রহণ করেনি তারা একটা উদ্ভট ধর্ম উদ্ভাবন করে নিয়ছে যা আপনার ও আমাদের কাছে অজ্ঞাত। তাদের ব্যাপারে আপনার কাছে তাদের কওমের সবচেয়ে সম্মানিত লোকেরা আমাদেরকে দূত হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাঁরা তাদেরও মুরব্বী ও আম্মীয়-স্বজন। ওদেরকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ নিয়েই আমরা এসেছি। তাদের কি দোষত্রুটি আছে সে সম্পর্কে তাদের মুরব্বীরা ও আত্মীয়রাই সমধিক অবগত।”

উম্মে সালামা বলেন, নাজাশী মুহাজিরদের বক্তব্য শুনুক এটা আবুদল্লাহ ইবনে আবু রাবী’আ ও আমর ইবনুল ‘আসের কাছে সবচেয়ে অবাঞ্ছিত ব্যাপার ছিল। রাজার দরবারীরা রাজাকে বললো, “হে বাদশাহ, ওরা দু’জন ঠিকই বলেছে। তাদের জাতির তাদের দোষত্রুটি ভালো জানে। কাজেই ওদেরকে এই দূতদ্বয়ের হাতে সমর্পণ করে দিন। ওরা ওদেরকে স্বদেশ ও স্বজাতির কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাক।”

নাজাশী ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি বললেন, “না, এ পরিস্থিতিতে আমি তাদেরকে এই দূতদ্বয়ের হাতে সমর্পণ করবো না। একদল লোক আমার সান্নিধ্যে বাস করছে। তারা আমার দেশে অতিথি হয়েছে। তারা অন্যত্র না গিয়ে আমার কাছে আসাকে অগ্রগণ্য মনে করেছে। আমি তাদেরকে ডাকবো এবং এই আগন্তুকদ্বয়ের বক্তব্য সম্পর্কে তাদের বক্তব্যও শুনবো। যদি দেখি, এরা দু’জন যেরূপ বলছেন, আশ্রিতরা সত্যিই তদ্রƒপ, তা হলে ওদেরকে সমর্পণ করবো এবং তাদের জাতির কাছে ফেরত পাঠাবো; অন্যথায় পাঠাবো না। যতদিন তারা আমার কাছে থাকতে চাইবে সাদরে রাখবো।”

উম্মে সালামা বলেন, অতঃপর নাজাশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের ডেকে পাঠালেন। নাজাশীর বার্তাবাহক যখন মুহাজিরদের ডাকতে গেল, তখন সবাই পরামর্শে বসলেন। এক অপরকে জিজ্ঞেস করলেন, বাদশাহর কাছে গিয়ে কি বলা যাবে। সবাই এক বাক্যে বললেন, “আমরা যা জানি এবং আমাদের নবী যা নির্দেশ দিয়েছেন ত-ই বলবো। তাতে পরিণতি যা হয় হবে।”

তাঁরা দরবারে এলেন। নাজাশী তার আগেই ধর্মযাজকদে ডেকে হাজির করে রেখেছেন। তাঁরা বাদশাহর সামনে ইনজীল খুলে বসেছেন। বাদশাহ তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের সেই ধর্মটা কি যা গ্রহণ করে তোমরা নিজ জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছো।এবং আমার ধর্ম বা অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করোনি?”

জাফর ইবনে আবু তালিব উত্তরে বললেন, “হে বাদশাহ, আমরা ছিলাম অজ্ঞ জাতি। আমরা মূর্তিপূজা করতাম, মৃত জন্তুর গোশত খেতাম এবং অশ্লীল ও খারাপ কাজে লিপ্ত থাকতাম, আমরা নিকট আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম, প্রতিবেশীকে অবজ্ঞা করতাম এবং আমাদের মধ্যে যে সবল সে দুর্বলের হক আত্মসাত করতো। এমতাবস্থায় আল্লাহ আমাদের কাছে আমাদের মধ্যে থেকেই এক ব্যক্তিকে নবী করে পাঠালেন। আমরা তাঁকে সম্ভ্রান্ত বংশীয় ও সত্যবাদী বলে জানি এবং বিশ্বস্ত ও সচ্চরিত্র রূপে তাঁকে দেখেছি। তিনি আমাদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইাবাদাত করার ও তাঁর একত্বে বিশ্বাস করার আহ্বান জানালেন। আমরা আল্লাহকে ছাড়া অন্য যেসব বস্তু তথা পাথর ও মূর্তি ইত্যাদির পূজা করতাম, তা তিনি ছাড়তে বললেন। তিনি সত্য কথা বলা, আমানত রক্ষা করা, আত্মীয়ের সাথে সদাচরণ করা, প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করা এবং নিষিদ্ধ কাজ ও রক্তপাত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেন। তিনি আমাদের অশ্লীল কাজ করতে, মিথ্যা কথা বলতে, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাত করতে ও নিরপরাধ নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করতে নিষেধ করলেন। আমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদাত করতে ও তাঁর সাথে শরীক না করতে বললেন। নামায পড়তে ও যাকাত দিতে বললেন।” এভাবে জাফর একে একে ইসলামের বিধানগুলো তুলে ধরলেন।

জাফর আরো বললেন, “আমরা তাঁর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম। তিনি আল্লাহর তরফ থেকে যেসব বিধান দিলেন তার অনুসরণ করতে লাগলাম। এক আল্লাহর ইবাদাত করতে লাগলাম এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করলাম না। তিনি যেসব জিনিস হারাম ঘোষণা করলেন আমরা তা থেকে বিরত রইলাম, আর যেসব জিনিস হালাল ঘোষণা করলেন আমরা তা হালাল বলে মেনে নিলাম। এতে আমাদের জাতি আমাদের শত্রু হয়ে গেল, তারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালাতে লাগলো এবং আমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদাত থেকে মূর্তিপূজায় ফিরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। তারা আমাদের ওপর চাপ দিতে লাগলো যাতে আমরা ঘৃণ্য অপকর্মগুলোকে আবার হালাল মনে করে নিই। তারা যখন এভাবে আমাদের ওপর পরাক্রান্ত হয়ে উঠলো, যুলুম-নির্যতন দ্বারা আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুললো এবং আমাদের মনোনীত ধর্ম পালনে বাধা দিতে লাগলো, তখন আমরা আপনার দেশে এসে আশ্রয় নিলাম। অন্যদের চেয়ে আপনাকেই উত্তম মনে করলাম এবং আপনার প্রতিবেশী হয়ে থাকতে আগ্রহী হলাম। হে বাদশাহ, আমাদের আশা এই যে, আপনার কাছে অত্যাচারের শিকার হবো না।”

নাজাশী তাঁকে বললেন, “তোমাদের নবী আল্লাহর বাণী নিয়ে সেছেন্ তার কোন অংশ কি তোমার কাছে আছে?” জাফর বললেন, “হ্যাঁ, আছে।” নাজাশী বললেন, “আমাকে পড়ে শোনাও।” জাফর সূরা মারিয়ামের প্রথম থেকে কতিপয় আয়াত পড়ে শোনালেন। আয়াতগুলো শুনে নাজাশী কাঁদতে লাগলেন। তাঁর দাড়ি অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। তাঁর সাথে সাথে ধর্মযাজকরাও কাঁদতে কাঁদতে ইনজীল ভিজিয়ে ফেললেন। এরপর নাজাশী বললেন, “আমি নিশ্চিত যে, এই বাণী এবং ঈসার বাছে যে বাণী আসতো, উছয় একই উৎস থেকে নির্গত। হে কুরাইশ দূতদ্বয়, তোমরা বিদায় হও। আমি কিছুতেই ওদেরকে তোমাদের হাতে সমর্পণ করবো না। ওরা এখানেই থাকবে।”

উম্মে সালামা বলেন, দরবার থেকে বেরিয়ে আমর ইবনুল ‘আস বললেন, “আল্লাহর শপথ, আগামীকাল আমি আবার নাজাশীর কাছে আসবো। তখন তাঁকে এমন কথা বলবো যা আশ্রিত মুসলমানদের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত সংযত ছিলেন। তিনি বললেন, “এরূপ করো না। যদিও তারা আমাদের বিরোদী, তথাপি আমাদের এতদূর যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ তাদের বহু রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজন রয়েছে।” আমর ইবনুল ’আস বললেন, “আমি নাজাশীকে জানাবো যে, মুসলমানরা হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ামকে স্রেফ আল্লাহর বান্দা বলে বিশ্বাস করে।”

পরদিন আমরা নাজাশীর দরবারে পুনরায় হাজির হয়ে তাঁকে বললেন, “হে বাদশাহ, আশ্রিতরা ঈসা ইবনে মারিয়াম সম্পর্কে একটা মারাত্মক কথা বলে থাকে। আপনি ওদের ডাকুন এবং ঈসা(আ) সম্পর্কে তাদের মতামত কি তা জিজ্ঞাসা করে দেখুন।”

বাদশাহ আবার মুসলমানদেরকে দরবারে ডাকলেন ঈসা (আ) সম্পর্কে মতামত জিজ্ঞাসা করার জন্য। উম্মে সালামা বলেন, এবারে আমরা সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হলাম। মুসলমান মুহাজিররা আবার পরামর্শের জন্য সমবেত হলেন। সবার সামনে এখন নতুন প্রশ্ন, বাদশাহ ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে কি বলবো। অবশেষে সবাই স্থির করনেল যে, আল্লাহ যা বলেছেন এবং আমাদের নবী যে সত্য ধারনা দিয়েছেন, আমরা ঠিক তাই বলবো। ফলাফল যা হওয়ার হবে।

মুহাজিররা দরবারে হজির হলে তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা মারিয়ামের পুত্র ঈসা সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ কর?” জাফর ইবনে আবু তালিব বললেন, “আমাদের নবী তাঁর সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছেন, আমরা তাতেই বিশ্বাস করি। তিনি বলেছেন, ঈসা (আ) আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসূল, তাঁরই ফুঁকে দেয়া আত্মা এবং তাঁরই বাণী যা তিনি কুমারী ও পুরুষদের স্পর্শমুক্ত মারিয়ামের ওপর নিক্ষেপ করেছিলেন।”

এ কথা শুনে নাজাশী প্রবল উচ্ছ্বাসবশে মাটিতে হাত চাপড়িয়ে একখানা ক্ষুদ্র কাঠ হাতে নিলেন এবং বললেন, “আল্লাহর শপথ, তুমি যা বলেছো তার সাথে মারিয়ামের পুত্র ঈসার এই কাঠির পরিমাণ পার্থক্যও নেই।”

বাদশাহর এই কথা বলার সময় পার্শ্বস্থ দরবারীরা ক্রোধবশে ফিসফিস করে কি যেন বললো। বাদশাহ তা শুনে বললেন, “যতই ফিসফিস করোনা কেন, আমার মত অপরিবর্তিত থাকবে। হে মুহাজিরগণ, তোমরা এখন নিজ নিজ বাসস্থানে চলে যাও। আমার রাজ্যে তোমরা সম্পূর্ণ নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে বাস করতে থাক। যে তোমাদের গালাগাল করবে তাকে জরিমানা করা হবে। তোমাদের কোন একজনকেও কষ্ট দিয়ে আমি যদি পাহাড় স্বর্ণ লাভ করি, তথাপি আমি তা করা পছন্দ করি না। হে রজকর্মচারীগণ, তোমরা এই দূতদ্বয়ের দেয়া উপঢৌকনগুলো ফিরিয়ে দাও। ওগুলোতে আমার কোন প্রয়োজন নেই।”

উম্মে সালামা বলেন, “এরপর তারা উভয়ে চরম লাঞ্ছনার গ্লানি মাথায় নিয়ে ফিরে গেলেন। তাদের আনা উপঢৌকনও ফেরত দেয়া হলো। আমরা তাঁর কাছে অত্যন্ত নিরুদ্বেগ আবাসিক পরিবেশ ও পরম সুজন প্রতিবেশীর সাহচর্যে বসবাস করতে লাগলাম।”

উম্মে সালামা বলেন, এইরূপ নিরুদ্বেগ পরিবেশে আমরা জীবন যাপন করছিলাম। সহসা আবিসিনিয়াা এক ব্যক্তি নাজাসীর সাথে তাঁর রাজত্বের অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলো। সেই সময় আমরা যেরূপ দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছিলাম সেরূপ আর কখনো পড়িনি। আমাদের আশংকা ছিল ঐ ব্যক্তি যদি নাজাশীর বিরুদ্ধে জয়ী হয় তাহলে সে হয়তো নাজাশীর মত আমাদের আশ্রয় দিতে চাইবে না এবং আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারও স্বীকার করবে না। নাজাশী তাঁর ঐ প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চলে গেলেন। দুই প্রতিপক্ষের মাঝখানে পড়লো নীলনদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুহাজির সাহাবীগণ বললেন, “এমন কোন ব্যক্তি কি এখানে আছেন যিনি আবিসিনীয় জনগনের এই যুদ্ধের সময় রণাঙ্গণে উপস্থিত হবে এবং যুদ্ধের ফলাফল কি হয় তা দেখে এসে আমাদের জানাবেন?” যুবাই ইবনুল আওয়াম বললেন, “আমি যাবো।” বয়সে কনিষ্ঠতম এই সাহাবীর ইচ্ছায় সবাই সম্মতি দিলেন।

একট চামড়ার মশকে হাওয়া ভরে যুবাইরের সঙ্গে দেয়া হলো। তিনি ওটা বুকের ওপর স্থাপন করলেন। অতঃপর তার ওপর ভর করে সাঁতরে নীলনদের কিনারে গিয়ে উঠলেন। তারপর হেঁটে রণ্ঙ্গনে হাজির হলেন।

উম্মে সালামা বলেন, এই সময় আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকি যেন নাজাশী তার শত্রুর ওপর জয়লাভ করেন এবং দেশের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব বহাল থাকে। আমরা যখন যুদ্ধের ফলাফর জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত ছিলাম তখন সহসা যুবাইরকে দেখা গেল। তিনি কাপড় নাড়তে নাড়তে দৌড়ে আসছিলেন এবং বলেছিলেন, “তোমরা সুসংবাদ শোন, নাজাশী জয়লাভ করেছেন। আল্লাহ তাঁর শত্রুকে ধ্বংস করেছেন এবং আবিসিনিয়ায় তাঁর কর্তৃত্ব বহাল রেখেছেন।” এরপর আবিসিনিয়ায় তাঁর শাসন সুসংহত হয়। আমরা সেখানে সর্বোত্তম স্থানে অবস্থান করছিলাম। অবশেষে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফিরে যাই। তিনি তখনো মক্কায় অবস্থান করছিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *