আবু জাহলের এসব কথা বলার পর নাদার ইবনে হারেস উঠে দাঁড়ালো। সে বললো, “হে কুরাইশ জনতা, আল্লাহর শপথ, তোমাদের ওপর এমন এক আপদ আপতিত হয়েছে যার প্রতিকারে তোমারা এখনো কোন কৌশল অবলম্বন করতে পারনি। মুহাম্মাদ ছিল তোমাদের মধ্যে একজন তরুণ কিশোর মাত্র। সে ছিল তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় ও সবচেয়ে সত্যবাদী। সে ছিল সবচেয়ে বিশ্বস্ত।ভ কিন্তু প্রৌঢ়ত্বে পদার্পণ করা মাত্রই সে নতুন জিনিস নিয়ে আবির্ভূত হলো। তখন তোমরা তাকে বললে যাদুকর। না, আল্লাহর শপথ, সে যাদুকর নয়। আমরা যাদুকরদের দেখেছি। তাদের তন্ত্রমন্ত্র ও ফুকও আমরা দেখেছি। তোমরা তাকে বললে জ্যোতিষী। আল্লাহর শপথ, সো জ্যোতিষী নয়। জ্যোতিষীদের মারপ্যাঁচ ও রংঢং আমরা অনেক শুনেছি ও দেখেছি। পাগলের কথাবার্তায় যে জড়তা, আবোল াতবোল ও ভাবেবেগ থাকে, তা তাঁর কথাবার্তায় অনুপস্থিত। হে কুরাইশগণ, তোমরা নিজেদের অবস্থাটা খতিয়ে দেখ। আল্লাহর শপথ, তোমাদের ওপর এক ভয়াবহ মুসীবত আপতিত হয়েছে।”
নাদার ইবনে হারেস ছিল কুরাইশদের সবচেয়ে কুটিল ও কুচক্রী সেনাদের অন্যতম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নানাভাবে কষ্ট দেয়া ও তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুতা করাই ছিল তার কাজ। সে হীরায় কিছুকাল কাটিয়েছিল এবং সেখান থেকে পারস্যের রাজ-রাজাদের কাহিনী শিখে এসেছিলো। রুস্তম ও ইসফিন্দিয়ারের উপাখ্যানও সে জানতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বৈঠকে বসে আল্লাহর বাণী শোনাতেন এবং তাঁর জাতিকে পূর্বতন জাতিগুলো কিভাবে আল্লাহর রোষের শিকার হয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেসব কথা উল্লেখ করে হুঁশিয়ার করতেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা শেষ করে উঠে যাওয়া মাত্রই সে বলতো, “হে কুরাইশগণ, আমি মুহাম্মাদের চেয়েও সুন্দর কাহিনী বলতে পারি এসো, আমি তোমাদেরকে তাঁর কথার চেয়ে চটকদার কথা শুনাই।” অতঃপর সে তাদেরকে পারস্যের রাজাদের এবং রুস্তম ও ইসফিন্দিয়ারের উপাখ্যান শোনাতো। তারপর বলতো, “মুহাম্মাদ আমার এসব কথার চেয়ে কি সুন্দর কথা বলতে পারে?”
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বলতেন, “নাদার ইবনে হারেস সম্পর্কে কুরআনে আটটি আয়াত নাযিল হয়েছে।”
যখনই তার সামনে আয়াতগুলো পাঠ করা হয় তখনই সে বলে : এগুলো তো প্রাচীনকালের উপাখ্যান!” এই আয়াতটি এবং ‘প্রাচীন কালের উপাখ্যান’- এর উল্লেখ অন্য যেসব আয়াতে হয়েছে, তা এই নাদার ইবনে হারেস সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে।