1 of 3

০৪১. রাসূলুল্লাহর (সা) ওপও উৎপীড়নের বিবরণ

ক্রমেই কুরাইশরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে লাগলো। রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সহচরদের শত্রুতায় তারা বেসামাল হয়ে উঠলো। তারা মূর্খ ও বখাটে ধরনের লোকদের উস্কিয়ে দিতে লাগলো। এইসব অর্বাচীন তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে গালাগালি এবং নানাভাবে কষ্ট দিতে লাগলো। তাঁকে কনি, যাদুকর, জ্যোতিষী ও পাগল বলে অপবাদ দিলো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দীন প্রচার ও প্রসার করার কাজে অবিচল থাকরেন। ক্রমেই তিনি অধিকতর প্রকাশ্যভাবে দাওয়াত দিতে লাগলেন। আরবদের বাতিল রসম রেওয়াজের সমালোচনা, তাদের মূর্তিপূজা প্রত্যাখ্যান ও তাদের কুফরী মতবাদের সাথে তাঁর সম্পর্কচ্ছেদের কথা তাদের কাছে ঘোর আপত্তিকর হওয়া সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তা করতে লাগলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস বলেন-

“একদিন যখন কুরাইশ সরদারগণ হাজরে আসওয়াদের নিকট সমবেত হয়েছে, তখন আমি সেখানে উপস্থিত হলাম। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বললো, “এই লোকটার ব্যাপারে আমরা যতটা সহিষ্ণুতা দেখিয়েছি তা নজিরবিহীন। সে আমাদেরকে বোকা বানিয়েছে এবং আমাদের দেবদেবীকে গালাগালি করেছে। অত্যন্ত নাজুক ও মারাত্মক ব্যাপারে আমরা তাকে সহ্য করেছি।” এভাবে তাদের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকাকালে সহসা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে আবির্ভূত হলেন। শান্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়ে তিনি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন। তাদের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখম-লে আমি সে মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলাম। দ্বিতীয়বার যখন তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন তখন তারা আবার শ্লেষপূর্ণ মন্তব্য করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় আমি তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলাম। তৃতীয় বারে তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় আবার তারা অনুরূপ মন্তব্য করলে তিনি সেখানে থেমে বললেন, “হে কুরাইশগণ, শোন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার শপথ করে বলছি, আমি তোমাদের সর্বনাশ বয়ে এনেছি (যদি তোমরা ঈমান না আন)।”

তাঁর উক্তিতে জনতা বজ্রাহতের ন্যায় স্তব্ধ ও হতবাক হয়ে গেল। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ক্ষণকাল আগেও তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী আক্রোশ ও উস্কানিমূলক কথা বলেছে, সেও যথাসম্ভব মিষ্ট কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শান্ত করতে উদ্যত হলো। এমনকি সি বলতে বাধ্য হলো, “আবুল কাসিম, তুমি যাও। তুমি তো আর নির্বোধ নও।”

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে চলে গেলেন। পরদিন সবাই একই স্থানে সমবেত হলো। আমিও সেখানে ছিলাম। তখন তারা বলাবলি করতে রাগলো, “দেখলে তো! মহাম্মাদের কতদূর বাড় বেড়েছে এবং সে কতদূর ধৃষ্টতা দেখালো। তোমরা যে কথা একবারেই পছন্দ কর না তা সে তোমাদের মুখের ওপর স্পষ্ট বলে দিল। আর তোমরা তাকে ছেড়ে দিলে।”

ঠিক সেই মুহূর্তেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে আবির্ভূত হলেন। আর যায় কোথায়! সকলে একযোগে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। সবাই তাঁকে ঘেরাও করে বলতে থাকলো, “তুমিই তো আমাদের ধর্ম ও দেব-দেবীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলে থাকো।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ আমিই ঐসব কথ বলে থাকি।” আমি দেখলাম তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহকে তাঁর গলার ওপরের চদরের দু’পাশ ধরে ফাঁস লাগিয়ে হত্যা কতে উদ্যত হয়েছে। সেই মুহূর্তে হযরত আবু বাক্র এগিয়ে গিয়ে বাধা দিলেন। তিনি কেঁদে ফিললেন এবং বললেন, “একটি লোক আল্লাহকে নিজের রব কলে ঘোষনা করেছ, এই কারণে কি তোমরা তাঁকে হত্যা করে ফেলবে।”

এরপর জনতা সেখান থেকে চলে গেল। সেদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কুরাইশদের যেরূপ মারাত্মক আক্রমণ দেখেছি, তেমন আর কখনও দেখিনি।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *