1 of 3

০৪২. হামযার ইসলাম গ্রহণ

আসলাম গোত্রের একজন তুখোড় স্মৃতিধর ব্যক্তি আমাকে বললেন,

“একদিন সাফা পর্বতের পাশে আবু জাহল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাত পায়। ঐ সময় সে তাঁর সাথে দুর্ব্যবহার করে তাঁকে গালি দেয়। সে তাঁকে অত্যন্ত অপ্রীতিকর কথা বলে। ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি এবং তাঁর দাওয়াত ও আন্দোলনের প্রতি শ্লেষাত্মক বাক্যবাণ নিক্ষেপ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে কোন একটি কথা বললেন না। আবদুল্লাহ ইবনে জুদআনের এক দাসী নিজের ঘরে বসে এসব কটূক্তি শুনতে পায়। অতঃপর আবু জাহল সে স্থান ত্যাগ করে কা’বার পাশে কুরাইশদের এক দরবারে গিয়ে বসে।

এর অল্পক্ষণ পওেরই আবদুল মুত্তালিবের পুত্র হামযা তীর-ধনুক সজ্জিত অবস্থায় শিকার থেকে ফিরছিলেন। তিনি একজন ভাল শিকারী ছিলেন। শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপে ও শিকারের সন্ধান করায় তিনি বেশ পটু ছিলেন। এরকম শিকার করে যখনই তিনি ফিরতেন তখন পথে কুরাইশদের কোন দরবার বা জটলা দেখলে সেখানে থামতেন, সালাম দিতেন এবং তাদের সাথে কথাবার্তা বলতেন। তিনি ছিলেন কুরাইশদের সম্ভ্রান্ত ও তাগড়া জোয়ান। তিনি যখন আবদুল্লাহ ইবনে জুদআনের দাসীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। দাসি হামযাক দেখেই বললো, একটু আগে হিশামের পুত্র আবুল হাকাম [২৪. আবুল হাকাম আবু জাহলের উপনাম বা উপাধি। তার নাম আমর ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমার ইবনে মাখযুম।] তোমার ভাতিজা মুহাম্মাদের সাথে কি আচরণ করেছে তা যদি দেখতে। এখানে মুহাম্মাদ বসা ছিল। তাকে দেখেই সে তার সাথে দুর্ব্যবহার ও গালাগালি করেছে। তার সাথে অত্যন্ত আপত্তিকর আচরণ করেছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা কথাও না বলে চলে গেল।”

হামযা এ কথা শুনে ক্রোধে অধীর হয়ে পড়লেন। কেননা আল্লাহ তাঁকে ইসলামের গৌরব মুকুট পরাতে চাচ্ছিলেন। তাই তিনি আবু জাহলেন সন্ধানে দ্রুত ছুটে গেলেন। পথে কারো কাছে দাঁড়ালেন না। তাঁর ইচ্ছা ছিল আবু জাহলকে পেলেই তাকে শিক্ষা দেবেন। মসজিদে হারামে ঢুকেই দেখলেন, সে দরবার জমিয়ে বসে আছে। তিনি তার গিকে এগিয়ে গেলেন। কাছে গিয়েই ধনুক দিয়ে তাকে প্রচ- আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করে দিলেন। অতঃপর বললেন, “তুই মুহাম্মাদকে গালাগালি করিস? অথচ আমি তার ধর্ম গ্রহণ করেছি। সে যা কিছুই বলে আমি তা সমর্থনকারী। পারিস তো আমাকে পাল্টা আঘাত কর দেখি।”

তৎক্ষণাৎ বনী মাখযুম গোত্রের কিছু লোক ছুটে এল হামযার বিরুদ্ধে আবু জাহলকে সাহায্য করতে। কিন্তু আবু জাহল বললো, “তোমরা হামযাকে কিছু বলো না। কেনানা আমি সত্যিই তার ভতিজাকে অত্যন্ত জঘন্য ভাষায় গালাগালি করেছি।”

হামযা ইসলামের ওপর দৃঢ় ও অবিচল রইলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কার্যক্রমে সাহায্য ও সহায়তা অব্যাহত রাখলেন। হামযার (রা) ইসলাম গ্রহণের পর কুরাইশরা উপলব্ধি করলো যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এখন আর নিপীড়ন ও হেয় করা সহজ হবে না। কিছু করতে গেলেই হামযা এসে রুখে দাঁড়াবে। তাই আপাততঃ তারা উৎপীড়নের মাত্রা কিছুটা কমিয়ে দিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *