1 of 3

০৪৩. রাসূল্লাহর (সা) আন্দেলন প্রতিরোধে উতবার ফন্দি

একটি সুত্র আমাকে জানিয়েছে যে, বিশিষ্ট কুরাইশ সরদার উতবা ইবনে রাবীআ একদিন কুরাইশদের দরবারে বসে ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সমজিদে হারামে একাকী বসেছিলেন। উতবা বললো, “হে কুরাইশগণ, আমি মুহাম্মাদের কাছে যেয়ে কিছু কথা বলবো। তার কাছে কিছু প্রস্তাব রাখবো। হয়তো সে কিছু প্রস্তাব মেনে নেবে এবং তার প্রচার বন্ধ করবে। তোমরা এটা কেমন মনে কর?”

এ সময়ে হামযা ইসলাম গ্রহণ করায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে আরম্ভ করেছে। তাই সকলে বললো, “খুব ভালো প্রস্তাব। আপনি যান এবং কথা বলুন।”

উতবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেল এবং তাঁর পাশে গিয়ে বসলো। সে বললো, “ভতিজা, তুমি আমাদেরগোত্রের মধ্যে কতখানি সম্ভ্রান্ত ও বংশমর্যাদা সম্পন্ন তা তোমার অজানা নয়। তুমি একটা মারাত্মক ব্যাপার নিয়ে তোমার জাতির কাছে আবির্ভূত হয়েছ। তোমার এ দাওয়াত জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। তুমি তাদেরকে বেকুফ ঠাউরিয়েছ এবং তাদের পূর্বপুরুষদের হেয় প্রতিপন্ন করেছ। আমার কথা শোনো! তোমার কাছে কয়েকটা বিকল্প প্রস্তাব রাখছি। একটু ভেবে দেখো এর কিছু কিছু মেনে নিতে পার কিনা।”

রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “বেশ, বলুন। আমি শুন।”

উতবা বললো, “ভাতিজা, তুমি যে নতুন দাওয়াত দিতে শুরু করেছ, এর দ্বারা যদি বিপুল সম্পদ লাভ করা তোমার ইচ্ছা হয়ে থাকে, তাহলে আমরা তোমার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তোমাকে আমাদের ভিতরে সবচেয়ে বিত্তশালী বানিয়ে দেবো। আর যদি তুমি পদমর্যাদা লাভ করতে চাও তাহলে আমরা তোমাকে এ দেশের রাজা বানিয়ে দেবো। আর যদি এমন হয়ে থাকে যে, তোমার কাছে জ্বিন আসে, তাকে তুমি হটাতে পারছ না, তাহলে আমরা তোমার চিকিৎসা করাবো। যত টাকা লাগুক তোমাকে সুস্থ করে তুলবো। কেননা অনেক সময় জ্বিন মানুষের ওপর পরাক্রান্ত হয়ে থাকে এবং তাকে তাড়ানোর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।”

এই পর্যন্ত বলে উতবা থামলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনোযোগ সহকারে উতবার কথা শুনছিলেন। তার কথা শেষ হলে তিনি বললেন, “হে আবুল ওয়ালীদ, আপনার কথা কি শেষ হয়েছে?”-“হাঁ।” তিনি বললেন, “তাহলে আমার কিছু কথা শুনুন।” উতবা বললো, বলো।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা হামীম আস সাজদা তিলাওয়াত করা শুরু করলেন। “বিসমিল্লাহির রাহমনির রাহীম। হা-মীম! এটা পরমত করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া কিতাব। আরবী ভাষায় নাযিলকৃত কিতাব কুরআন। এর আয়তগুলোকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, জ্ঞানী লোকদের জন্য। সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী হিসেবে তা এসেছে। কিস্তু তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে; তারা শুনতে চায় না। তারা বলে, তুমি যে বিষয়ের দিকে আমাদের আহ্বান করছো, আমাদের মন তা থেকে পর্দার আড়ালে রয়েছে।”উতবা স্তব্ধ হয়ে শুনতে লাগলো। সে পেছনের দিকে হাতে ভর দিয়ে বসে খুবই মনোযোগের সাথে তাশুনছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করতে করতে ঐ সূরায় সিজদার আয়াতে গিয়ে থামলেন এবং সিজদা করলেন।[২৫.আয়াতটি হলো এই : দিন ও রাত,সূর্য ও চন্দ্র এ সবই আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন। তোমরা সূর্য ও চন্দ্রের উদ্দেশ্যে সিজদা করো না- একমাত্র আল্লাহকে সিজদা কর,যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন- যদি একমাত্র তাঁর ইবাদাত করতে প্রস্তুত থেকে থাক।] এরপর বললেন, “যা শুনবার তা তো শুনলেন। এখন যা করনীয় মনে করেন করুন।”

অতঃপর উতবা উঠে তার সঙ্গীসাথীদের কাছে ফিরে গেলো। সঙ্গীরা তাকে দেখে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, উতবা এক রকম চেহারা নিয়ে গিয়েছিল, এখন ভিন্ন রকম চেহারা নিয়ে ফিরে আসছে।” দলবলের মধ্যে গিয়ে বসতেই সবাই তাকে জিজ্ঞেস করলো, “হে আবুল ওয়ালীদ, আপনার কথা কী?”

উতবা বললো, “আমি এমন বাণী শুনেছি যা আর কখনো শুনিনি। হে কুরাইশগণ, সত্যিই তা কবিতাও নয়, কোন জ্যোতিষীর কথাও নয়। তোমরা আমার কথা শোনো এবং এই ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। এই লোকটা যা করতে চায় করতে দাও। তার সাথে কোন সংশ্রব রাখো না। আমি নিশ্চিত যে, মুহাম্মাদ যে কথা প্রচারে নিয়োজিত, তা ভবিষ্যতে বিরাট আলোড়ন তুলবে। আরবরা যদি তার বিপর্যয় ঘটায় তাহলে তোমরা অন্যের সাহায্যে তার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেলে। আর যদি সে আরবদের ওপর জয়যুক্ত হয় তাহলে তার রাজত্ব তোমাদেরই রাজত্ব হবে। তার মর্যাদা তোমাদেরই মর্যাদার কারণ হবে। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সৌভাগ্যবান জনগোষ্ঠী।” এ কথায় সবাই একবাক্যে বলে উঠলো, “মুহাম্মাদ এবার তোমাকে যাদু করেছে।” উতবা বললো, “এটা আমার অভিমত। এখন তোমরা যা ভাল বুঝ কর।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *