॥ ৮০ ॥ ‘ও-ফন-চ’ বা অবণ্ড
এ রাজ্যটির আয়তন দু’হাজার থেকে আড়াই হাজার লি হবে। রাজধানীর ঘের কুড়ি লির মতো। এ রাজ্যেরও কোন স্থানীয় রাজা নেই। এটি সিন্ধুর অধীন।
মাটি শস্য আবাদের উপযোগী। ডাল ও গমের ফলন প্রচুর। ফুল ও ফল নেহাৎই কম। বন, গাছপালাও কম। আবহাওয়া ঠাণ্ডা, হাওয়ার দাপট বেশি। লোকজন উগ্র স্বভাবের ও তাড়নার বশ। ভাষা সাদামাটা ধরনের; তেমন কিছু মার্জিত উন্নত নয়। লেখাপড়ার তেমন কদর নেই। তবে তারা বৌদ্ধধর্মে উৎসাহী ও তার আন্তরিক অনুগামী।
কুড়িটির মতো সংঘারাম রয়েছে। সেখানে হাজার দু’য়েক ভিক্ষু থাকেন। অধিকাংশই সম্মতীয় শাখার হীনযানপন্থী। গুটি পাঁচেক দেবমন্দির। সেখানে পাশুপত সম্প্রদায়ের অনুরাগীদেরই প্রাধান্য
শহরের উত্তর-পূর্বে খানিকটা গেলে বনের মাঝে প্রায় ভেঙে পড়া অবস্থায় একটি সংঘারাম চোখে পড়বে। এখানকার ভিক্ষুদের তথাগত জুতা পরার অনুমতি দিয়ে যান। পাশেই রাজা অশোকের তৈরী একটি স্তূপ। ভিত অনেকটা মাটিতে দেবে গেছে, তাহলেও বাকী অংশ কয়েকশো ফুট উঁচু। স্তূপের পাশে একটি বিহার মধ্যে নীল পাথরে গড়া একটি দাঁড়ানো বুদ্ধমূর্তি আছে।
দক্ষিণে ৮০০ পা মতো দূরে বনের মধ্যে অশোকের তৈরী আরো একটি স্তূপ। এই বনের মাঝে আরো কতক স্তূপ রয়েছে। এরই একটি স্তূপে বুদ্ধদেবের চুল ও নখকণা রয়েছে।
॥ ৮১ ॥ ‘ফ-ল-ন’ বা বরণ
এখান থেকে উত্তর-পূর্বদিকে ন’শো লি মতো পথ চলার পর আমরা ‘ফ-ল-ন’ বা বরণ রাজ্যের দেখা পাই।
রাজ্যটি চার হাজার লি অঞ্চল জুড়ে। প্রধান শহরটি কুড়ি লি মতো। ঘন- জনবসতি ভরা। এটি কপিশার অধীন রাজ্য।
রাজ্যের বেশীরভাগ অঞ্চলই বন আর পাহাড়ে ভরা। নিয়মিতভাবে চাষ আবাদের কাজ চলে। আবহাওয়া একটু ঠাণ্ডাই। লোকজনের আচার ব্যবহার রুক্ষ ও উগ্র। নিজেদের রীতিনীতি সুরক্ষার দিকে গোঁড়ামী রয়েছে ও তার সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই এর উদ্ভব। ভাষা কতকটা মধ্য ভারতের মতোই। কতক বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী, কতক অন্য ধর্মে। সাহিত্য বা শিল্পের দিকে কোনরকম আগ্রহ নেই। বেশকিছু সংঘারাম আছে। তবে সবগুলিই প্রায় ভাঙা বা ভেঙে পড়ার মুখে। শ’তিনেক ভিক্ষু আছেন। সকলেই মহাযানের চর্চ্চা করেন। পাঁচটি দেবমন্দির রয়েছে। পাশুপত সম্প্রদায়ের অনুগামীর সংখ্যাই বেশী।
শহর থেকে একটু দক্ষিণে একটি পুরানো সংঘারাম আছে। পাশেই অতীত চার বুদ্ধদেবের স্মারক। সাধারণ খবর মতো এ রাজ্যের পশ্চিম সীমান্তে কি- কিয়াঙ-ন (কিকন?) রাজ্য। বিরাট পাহাড়ী এলাকায় ও পর্বত উপত্যকায় লোকজন গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। এদের কোন রাজা নেই। এরা প্রচুর ভেড়া ও ঘোড়া উৎপাদন করে। সেই ঘোড়াগুলি বড়ো আকারের। পাশের রাজ্যগুলিতে খুব কম ঘোড়া জন্মে। এ জন্য সেখানে তাদের খুব কদর।
এ রাজ্যটিকে পিছনে ফেলে আমরা আবার চলতে শুরু করলাম উত্তর- পশ্চিমদিকে। বিরাট বিরাট পাহাড় ডিঙ্গিয়ে, চওড়া উপত্যকা ভেঙে, পর পর অনেক ছোট ছোট শহর পার হয়ে এগিয়ে চললাম। কম-বেশি দু’হাজার লি পথ চলার পর আমরা ভারত সীমান্ত পার হলাম। পা দিলাম ৎসোউ কু-ট বা সৌকূট রাজ্যে।