স্মৃতি জাগানিয়া

স্মৃতি জাগানিয়া

স্মৃতি সতত সুখের। স্মৃতি অনেক সময় প্রতারকও বটে। তবু স্মৃতি মানুষের এক চমৎকার সম্পদ। অবশ্য একটু বয়স না হলে এ সম্পদের যথার্থ মূল্যায়ন করা যায় না এবং বয়স যত বাড়তে থাকে, স্মৃতি যেন তত দূর অতীতের গর্ভে সরে যেতে থাকে। একটা সময় আমার মা মাঝে মাঝেই গতকালের কথা ভুলে যেতেন, কিন্তু সেই সত্তর-পঁচাত্তর বছর আগের বহু ঘটনা তার স্মৃতিতে নির্ভুলভাবে থাকত। আমার শৈশবের স্মৃতি দু’টি জায়গাকে ঘিরে। তার একটি নোয়াখালীতে আমাদের গ্রাম, গ্রামের বাড়ি, যে বাড়ির আসল নাম মুন্সী বাড়ি, কিন্তু বাবা ওই এলাকায় প্রথম ডেপুটি-ম্যাজিস্ট্রেট হবার পর গ্রামের মানুষ নিজেরাই ওই বাড়ির নতুন নামকরণ করে ডেপুটি বাড়ি। আমরা বড় হয়েও শুনেছি মামা ও খালুরা বাবাকে সম্বোধন করছেন ‘ডেপুটি ভাই’ বলে। কেমন যেন শোনাত। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে খুব বেশি সংখ্যক বাঙালি মুসলমান ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদ লাভ করেননি। কাজেই আজ ওই রকম সম্বোধন যতটা অবাক করা মনে হয় সেদিন ততটা ছিল না। আমার পিতৃপিতামহের দেশ নোয়াখালী হলেও আমার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

আমার কোন্ বয়সের কথা আমার মনে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে? কত ছোটবেলার কথা মানুষের মনে থাকা সম্ভব? আমার জীবনের একেবারে খুব ছেলেবেলার কথা, যেসব কথা আমার নিজের মনে থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না, যা শুধু মার মুখে শোনা, তা দিয়ে শুরু করা যাক।

আমার জন্ম ১৯২৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি। মা-বাবার আমি প্রথম সন্তান। বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরে। বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস-এ পরীক্ষা দিয়ে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন। চাকরিসূত্রে সারা বঙ্গদেশে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে তাঁকে। কোথায় মেদিনীপুরের কাঁথি, ত্রিপুরার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকার মানিকগঞ্জ, মুর্শিদাবাদের লালবাগ, বাখরগঞ্জের পটুয়াখালী ও পিরোজপুর, উত্তরবঙ্গের বগুড়া, তারপর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর পাবনা, ফরিদপুর, খুলনা প্রভৃতি নানা জায়গায় তাঁকে থাকতে হয়েছে, দু’বছর-আড়াই বছর তিন বছর করে।

আমার যখন জন্ম তখন তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত। চাকরি জীবনের প্রথমদিকে, অবশ্য একেবারে শুরুর কাল নয়, কয়েক বছর চাকরি হয়েছে, বয়স তেত্রিশের মতো। মা ছিলেন বাবার চাইতে অনেক ছোট। আমার জন্মের সময় মায়ের বয়স মাত্র পনেরো কি ষোলো পেরিয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *