শ্বশুর বাড়ির শাল

শ্বশুর বাড়ির শাল

বড় বাজারের এক ঘুপচিগলির দোকানের দোতলায় শালের আড়ত। সারা ভারতবর্ষের শাল, দোশাল, তুঁষ, মলিদা, এই একেবারে মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত ডাঁই হয়ে আছে। স্বয়ং মালিক টেরি কটনের ধুতি পরে একটু ঊরু, দোকানের অন্যতম দর্শনীয় বস্তু মনে করে, বের করে বসে আছেন। পেছনে একটি মানানসই দশাসই তাকিয়া। বঙ্কিম এখন ক্রেতা। ফিনানসিয়ার তার সম্বন্ধী। শীতে ভগ্নীপতিকে একটি শাল দেবার কথা ছিল। দিচ্ছি দেব করে দুটো শীত পার করে দিয়েছে। এই থার্ড উইন্টারে বঙ্কিমবাবুর কাঁধে শাল উঠবেই। দোকানটা সম্বন্ধীরই আবিষ্কার। আড়ত থেকে কিনলে দুটো পয়সা সস্তা হবে।

মালিক জংঘাদেশ আয়েস করে চুলকোতে চুলকোতে জিজ্ঞেস করলেন: পকেটের খবর কী? সেই অনুসারে মাল ফিট করবেন। পকেট তো সম্বন্ধীর। উত্তরটা সেই দেবে। বঙ্কিম উদাস হয়ে মালিকের থাই দেখতে লাগল। ছেলেবেলায় ওয়ার্ডবুকে পড়েছিল—শূকরের শুষ্ক লবণাক্ত জংঘা, হ্যাম। কেন জানে না তার এই কথাটাই মনে পড়ল। সম্বন্ধী ইতিমধ্যে টাকার অংক বলে দিয়েছে, দেড়শো, ম্যাকসিমাম একশো পঁচাত্তর।

ওই দামের শালেরা সব অ্যালুমিনিয়ামের মই বেয়ে বঙ্কিমের সামনে নেমে এল। দেড়শ টাকায় আর কত ভাল জিনিস হবে? হাল্কা একরোখা কাজ। জমি তেমন ভাল নয়। মধ্যবিত্তের শাল এর চেয়ে ভাল হলে মানাবেও না। বঙ্কিম দেখে শুনে একটা সাদা শাল পছন্দ করে নিল।

সম্বন্ধী ফিস ফিস করে বলল, দেখো এইটাই নেবে তো? রাখতে পারবে না কিন্তু।

বঙ্কিমের মনে হল সম্বন্ধীর এই কথায় নিশ্চয়ই কোনও ইন্টারেস্ট আছে। সাদা থেকে বঙ্কিমকে তুঁতে রঙেরটায় নামাতে পারলেই, পঁচিশ টাকা সেভিংস। বঙ্কিম কানে কানে বলল, তোমার বোনকে যখন রাখতে পেরেছি শালটাকেও না পারার কোনও কারণ নেই। মেনটিন্যান্স ইজ এন আর্ট।

দোকানের মালিক আর্ট শব্দটা শুনতে পেয়ে বললেন—হ্যাঁ হ্যাঁ, ইয়ে আর্টিস্ট লোককো লিয়ে হায়। পরের পয়সামে যো লোক টিংচার আইডিন ভী পিতা হায় এ সাদা শাল উঃ আদমী কে লিয়ে।

বঙ্কিম মনে মনে বলল—ধূর ব্যাটা। পরের পয়সা কী রে! হিসেব করে দেখ, সারা জীবন একটা মেয়েকে মেনটেন করার কষ্ট, আর শ্বশুরবাড়ির সারা জীবনের পাওনা, ইনভার্স রেশিওতে চলে। সবশেষে ওই জামাই ষষ্ঠী। তাও বন্ধ হয়ে যায়। ওয়ান জামাই গোজ, অন্যাদার জামাই কামস। দাঁত পড়া, চুলে পাক ধরা জামাইরা লিস্ট থেকে বাদ পড়ে যায়। আসলে দখল করে থাকে ফুল কি রাঙা জামাই। আদরের ধর্মই হল উজ্জ্বল রংয়ের মতো ক্রমশ ফেড হয়ে আসে। বিবর্ণ দাম্পত্যজীবন এই শাল দিয়ে চাপা দেওয়া যাবে।

সম্বন্ধীর নাম সূর্যকুমার। বিদেশে কাজ করে। সেখানে সে সূরযকুমার। সূরযকুমার, এক টাকা দাম কমাবার জন্য যখন ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে বঙ্কিম তখন দূর ভবিষ্যতে শাল গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বেনারসের গঙ্গার ঘাটে বৃদ্ধ বঙ্কিম। শালটার রং তখন সাদা নয়। পোকায় ফুটো ফুটো করে দিয়েছে। রংটা হয়েছে শনের মতো। জায়গায় জায়গায় তেলের ছোপ। পাশে এক গাল-তোবড়ানো বুড়ি, বঙ্কিমের স্ত্রী। কয়েকটা লম্বা পাকা চুল জড়িয়ে আছে শালের এখানে ওখানে। অনেক অনেক আগে যখন তাদের যৌবন ছিল তখন লেগে থাকত কাঁচা চুল। এই বুড়িটারই যখন যৌবন ছিল, তখন আকাঙক্ষা ছিল, লোভ ছিল, লালসা ছিল, রক্তে আগুন ছিল। তখনও কাঁধে মাথা রাখত, এখনও রাখে। তখন রাখত, কাজ আদায়ের জন্য, পাওনা বুঝে নেবার জন্য। এখন রাখে নির্ভরের জন্য। দিন তো শেষ হয়ে আসছে। কে আগে যায়, কে যায় পরে। শুরুতে এক, যাবার সময় বিচ্ছিন্ন। বঙ্কিম শালের একটা অংশ বুড়ির গায়ে জড়িয়ে দিল। বয়েস হয়েছে, ঠাণ্ডা লেগে যাবে। একজনের শীর্ণ হাত অন্যজনের শীর্ণ হাতে ধরা। মৃত্যু হাত বেয়ে উঠে আসছে।

বঙ্কিমের ধ্যান চটকে গেল। সূরযকুমার কানে কানে বলল, কিছুতেই এক টাকাও ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। দু কাপ চা আদায় করেছি। আমার নাম সূরযকুমার। বঙ্কিম এসব উঞ্ছবৃত্তি ভালবাসে না। সে বলল, তুমি চা খেয়ে এসো, আমি নীচে দাঁড়াই।

সূরযকুমার বলল, না না ও বেটার দু কাপ চা-ই ধ্বংস করে যেতে হবে, চালাকি নাকি। তাকিয়াবাজি করে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছে, আর আমরা মরছি গাধার মতো খেটে।

বড় এলাচ, ছোট এলাচ, জায়ফল জৈত্রী দেওয়া চা খেয়ে দুজনে ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে সাবধানে রাস্তায় নেমে এল। শালের মোড়কটা সম্বন্ধীর বগলে। বঙ্কিমের হাতে এখনই দেওয়া যায় না। নানা রকম প্রোটোকল আছে। বলা যায় না, সামনে একাধিক বিয়ের লগ্ন, সূরযকুমার হয়তো শালটাকে বার কতক ব্যবহার করে দামটা খানিক উসুল করে নেবে।

শালের প্রোটোকল হল এক বাকসো ল্যাতা সন্দেশ। চিনির ভাগ বেশি, ছানার ভাগ কম। শালেতে সন্দেশেতে শীতের একটা কুচো তত্ত্ব মতো হল। বঙ্কিমের প্রতিমার তাইতেই কী আনন্দ। কী উঁচু নজর আমার বাপের বাড়ির। ওঃ পিওর কাশ্মীরি শাল। আড়ত থেকে কিনেছে তো, তাই একটু সস্তা হয়েছে। বাইরে থেকে কিনলে পাঁচশো টাকার কম নয়।

প্রতিমা শালটা হাতে নিয়ে বলল, যাও না একবার তোমার বাবাকে দেখিয়ে এসো, সন্দেশের কথাটাও বোলো। স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য বঙ্কিম দোতলায় উঠেছিল সত্যি, তবে পিতা পরমেশ্বরের ঘরে না গিয়ে, তিন তলার ছাদে গিয়ে, শালটাকে একটু হাওয়া খাইয়ে এনেছিল। বলা যায় নাকি—এই যে, দেখুন শ্বশুর বাড়ির শাল, কাশ্মীর কি কলি।

শালটা দিন সাতেক একজিবিট নম্বর এক হয়ে বাইরের ঘরে রইল। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই জেনে গেল বঙ্কিমের একটা শাল হয়েছে, শালা পছন্দ করে কিনে দিয়েছে শালের গুদাম থেকে। বঙ্কিমের একবার মনে হয়েছিল একটা গ্লাস কেস তৈরি করে, শালটাকে ভরে রেখে দেবে। সকাল সন্ধে ধুনো গঙ্গাজল দেবে। একটা করে ধুপ জ্বেলে দেবে। ওপরে ফুল ছড়িয়ে দেবে গোটা কতক।

বঙ্কিমের শাল গায়ে দিয়ে কাপ্তেনি করার অবসর কোথায়? সে তো মেহনতী জনতারই একজন। সকালে বাজারে গুঁতোগুঁতি। নটার সময় বাসে বাঁদরামি। সাত ঘণ্টা অফিসে ফাজলামি। ছটায় আবার বাসে বাঁদরামি। এরপর বাড়িতে সংসার নামক শূন্য প্রাঙ্গণে ছেলে মানুষ করার ধাষ্টামি। মহামূল্যবান শাল ন্যাপথলিনের গোল্লা বগলে নিয়ে কাপড়ের আলমারির ভি আই পি কর্নারে অপেক্ষা করে রইল, কবে আসবে সেদিন যেদিন বাবু বঙ্কিমের কাঁধে চাপবেন তিনি।

অবশেষে সেই দিন এল। ছোট সম্বন্ধীর বিয়ে! বরযাত্রী বঙ্কিম, বঙ্কিমের স্ত্রী। ধবধবে সাদা ধুতির ওপর লালচে পাঞ্জাবি। ধুতির রংয়ের সঙ্গে, পাঞ্জাবির রংয়ের উনিশ বিশ হবেই। সংসারের ধর্মই তাই। কারুর সঙ্গে কারুর মিল হতেই পারে না। সব সময় কনট্রাস্ট। আগে বঙ্কিমের খুঁতখুতানি ছিল। এখন এইসব পার্থক্য সে গ্রাহ্যই করে না। শালটা বগলের তলা দিয়ে আড়াআড়ি করে চিত্রতারকাদের মতো গায়ে চাপিয়ে নিল। একটু সেন্ট লাগাতে যাচ্ছিল, প্রতিমা হই হই করে উঠল, করো কী, করো কী? বঙ্কিম যেন খুন করতে যাচ্ছিল। এক্ষুনি দাগ লেগে যাবে। ঘটে কী কোনও বুদ্ধিই নেই। কানের লতিতে লাগাও। বঙ্কিম তাই লাগাল। শালে দাগ লাগে, মানুষের চামড়া সে দিক থেকে নিরাপদ। সহজে দাগ লাগে না। শালের ধাত একমাত্র তার বউ-ই বোঝে।

বরযাত্রীরা বাসে যাবেন। একে একে সবাই উঠছে। বঙ্কিমও উঠছিল। পেছনেই প্রতিমা। হঠাৎ প্রতিমা চিৎকার উঠল, দেখে দেখে। বঙ্কিম তাড়াতাড়ি যে পা-টা ফুটবোর্ডে রেখেছিল নামিয়ে নিল। কী দেখবে? কেউ বমিটমি করে রেখেছে নাকি? না সে সব নয়। প্রতিমা বলল, শাল গায়ে দিয়ে ওভাবে কেউ হুড়মুড় করে ওঠে নাকি। বাসের চারদিকে পেরেক খোঁচ হয়ে থাকে, এক্ষুনি লাগবে আর ফাঁস করে ছিড়ে যাবে।

চলতি বাসের জানালা দিয়ে হু-হু করে হাওয়া আসছে। ভেতরে একটা সোয়েটার পরলে ভাল করত। শালটার কোনও দাম নেই। শালটা গায়ে দেবার আগে ওভার এস্টিমেট করে ফেলেছে। একে সর্দির ধাত। ভুগতে হবে। প্রতিমাকে বলল, শালটার তেমন গরম নেই। প্রতিমা বলল, সে কী গো। আমি পাশে বসে গরম পাচ্ছি। মনে হচ্ছে তোলা উনুনের পাশে বসে আছি, তুমি পাচ্ছ না? বঙ্কিমের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, ও তুমি তো ভুল গায়ে দিয়েছ। ঠাণ্ডার দিকটা ভেতরে দিয়েছ, গরমের দিকটা ওপরে।

বঙ্কিম কিছুক্ষণ হাঁ করে বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, সে কী রে বাবা! শালের আবার গরম পিঠ, ঠাণ্ডা পিঠ আছে নাকি? শোনেনি তো কখন। নিজে একবার হাত বুলিয়ে দেখল। দুটো পিঠই তো একরকম। বঙ্কিম বলল, এরকম হয় নাকি?

প্রতিমা বিশেষজ্ঞের মতো বলল, হয় না? শালের তুমি জানো কি? সারাজীবন তো দোনলা আর ফতুয়া পরে কাটালে। আমার দাদুর একটা শাল ছিল। সে যুগেই তার দাম ছিল হাজার টাকা, বিলিতি শাল, এয়ার কন্ডিশানড। একটা দিক গরম কালে গায়ে দিতেন, আর একটা দিক শীতে।

বঙ্কিম ব্যাপারটা হজম করার জন্য একটু সময় নিল। সংশয়টা তার তখনও কাটেনি। বিলেতে আবার শাল হয় নাকি। বঙ্কিম বলল, উল্টে গায়ে দিলে গরম লাগবে?

নিশ্চয় লাগবে।

তাহলে এই কাজটাও তো উল্টে যাবে।

তা তো যাবেই। ওরা তো ভুল করেছে। আর তুমিও তো তেমনি মূর্খ। দেখে দেখে উল্টোটাই ঠিক কিনে নিয়ে এলে। একটা কাজ যদি তোমাকে দিয়ে ঠিকমতো হয়! সমস্ত দোষ বঙ্কিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে প্রতিমা খোঁপার ফুল ঠিক করতে লাগল। আর বঙ্কিম নিজের দোষে ঠাণ্ডা শাল গায়ে দিয়ে শীতে হি হি করতে করতে সম্বন্ধীর বিয়ের বরযাত্রী হয়ে নৈহাটি চলল।

বিয়ে বাড়ির মেয়েদের ভিড়ে মিশে যাবার আগে প্রতিমা সাবধান করে দিয়ে গেল, কাপে যদি চা খাও, বাঁ হাতটা কাপের তলায় ধরে মুখে তুলবে, তা না হলে শালে চায়ের ফোঁটা পড়বে। ভাঁড়ে খেলে দেখে নেবে, ছাঁদা আছে কি না! বরং আর একটা ভাঁড়ের ওপর বসিয়ে নেবে। পান খাবে না। পিক ফেলতে গেলেই ফোঁটা পড়বে। ফোল্ডিং চেয়ারে বসার সময় পেরেক উঠে আছে কি না দেখবে। চেয়ারে আলুর দমের ঝোল লেগে থাকে। হলুদ আর লঙ্কার দাগ লাগলে হয়ে গেল, জীবনের মতো দাগরাজি। তুমি তো আবার চোখে কম দেখো। যে কোনও লোককে দিয়ে চেক করিয়ে নিও। প্যান্ডেলের বাঁশে হেলান দিও না। তুমি তো আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারো না, সব সময় ত্রিভঙ্গমুরারি। যদি গোলাপের বোকে দিতে আসে নেবে না। কাঁটা আর লাল রং দুইই আছে। তোমার মতো হুঁসো লোককে আর কত সাবধান করব বলো। সব সময় নজর রাখবে, পেছন থেকে কেউ এসে হাত না মুছে দিয়ে যায়। হাঁ করে মেয়েছেলে দেখো না। তোমার যা স্বভাব। প্রতিমা ডুজ আর ডোন্টস বলে দিয়ে হুল্লোড়ে মিশে গেল। বঙ্কিমের ইচ্ছে করছিল, শালটাকে পাট করে বগলে নিয়ে বসে থাকে। নেহাত শীত করবে তাই। দরকার নেই শাল। খুব শিক্ষা হয়েছে।

এক সময় খাবার ডাক পড়ল। আবার ফিরতে হবে তো এতটা রাস্তা। বঙ্কিমের ঠিক উল্টোদিকে বসেছে প্রতিমা। প্রতিমার পাশে বসেছেন তার সম্পর্কের মাসি। বঙ্কিমের গায়ের শালটা দেখিয়ে প্রতিমা মাসিকে কী যেন বলল। মাসির মুখে হাসি আর ধরে না। ইতিমধ্যে পাতে পড়েছে ফ্রায়েড রাইস আর মাংস। বঙ্কিম খাওয়ায় একেবারে তন্ময়। হঠাৎ সাবধানবাণী। প্রতিমার গলা, সামলে, সামলে। বাঁ কাঁধ থেকে শালটা নেমে আসছে পাতের দিকে। বঙ্কিম হেল্পলেস। ডান হাত জোড়া। প্রতিমা বঙ্কিমের পাশের অপরিচিত ভদ্রলোককে অনুরোধ করল, আপনার বাঁ হাত দিয়ে বেশ করে ওপরে তুলে দিন তো। এক্ষুনি ঝোলেঝালে মাখামাখি করে বসে থাকবে।

ভদ্রলোক হাসতে হাসতে শালটাকে উঠিয়ে দিতে বললেন, থাকবে না, আবার এক্ষুনি ঝুলে যাবে, কাঁধে একটা সেফটিপিন লাগিয়ে দিলে ভাল হয়।

প্রতিমাও জানে থাকবে না। ভদ্রলোকের উপদেশ কার্যকরী করার জন্য সে পাশের মাসিমার কাছে সেফটিপিন চেয়ে বসল। প্রবীণা মহিলাদের ব্লাউজে বোতাম থাকে না। ঠিক তাই। প্রতিমা মাসিমার ভুড়ির কাছে হাত চালিয়ে কাম্য জিনিসটি খুলে নিয়ে এল। ওদিক থেকে এদিকে আসতে গিয়ে গোটাকতক গেলাস ওল্টাল।

যাঁরা দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা সকলেই এখন বঙ্কিমকে দেখছেন। প্রতিমা টানটান করে সেফটিপিন আটকে দিয়ে গেছে। ডান হাতটা মুখের কাছে পুরোপুরি তুলতে গেলে টান পড়ছে। মুখটাকেই নামিয়ে আনতে হচ্ছে পাতের কাছে হাতের সীমানায়। অনেকটা কুকুরের টেকনিকে খেতে হচ্ছে। প্রতিজ্ঞা, আর যদি সে কখনও শাল গায়ে দিয়েছে। চাটনির সময় প্রতিমার চিৎকার, না না, ওখানে নয়। বঙ্কিমের বরাতে প্লাস্টিক চাটনি জুটল না।

ফেরার সময় প্রতিমার সঙ্গে বাক্যলাপ হল না। মেরুদণ্ড সোজা করে, লগবগ করতে করতে বঙ্কিম ফিরে এল। শীত করছে। শালটা মুড়ি দেবারও উপায় নেই। মাথার তেল লেগে যাবে। বঙ্কিম ঘরে ঢুকেই টান মেরে শালটা খুলে ফেলল। তারপর শ্রীরামকৃষ্ণের মতো শালটাকে মাটিতে ফেলে দুপায়ে ঠাসতে লাগল আর বলতে লাগল—শালা, শালার শালের নিকুচি করেছে। দরজার মুখে দাঁড়িয়ে প্রতিমা বলছে—একী একী! পাগল হয়ে গেলে নাকি!

বঙ্কিম জানে পাগল নয়, সে এতক্ষণে সুস্থ হতে চলেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *