মশারি

মশারি

অনেকদিনের মশারি—গোটা কতক ছোটখাটো ফুটো হয়েছিল। কিন্তু বন্ধ করার সোজা কায়দাটা রপ্ত করে নেবার ফলে ফুটো সম্বন্ধে আমি নির্ভয় ছিলাম। সেলাই ফোঁড়াইয়ের কে ধার ধারে? পুরনো খবরের কাগজ ছিঁড়ে গঁদের আঠা মাখিয়ে তাপপি দিয়ে দাও। ফাস্‌ ক্লাস ব্যবস্থা। মশারিটা কোন এককালে সাদা ছিল হয়তো। ইদানীং কাচার কোনও উপায় ছিল না। ধুলো ময়লা জমে জমে একটা অদ্ভুত রঙ হয়েছিল, তার উপরে বিভিন্ন ধরনের কাগজের তালি। কোথাও একটা মেয়ের মুখ, কোথাও একটা দাঁতের মাজনের বিজ্ঞাপনের ছেঁড়া অংশ বিশেষ। সব মিলিয়ে অদ্ভুত একটা কারুকর্ম যার কাছে ওড়িশার এপ্লিকের কাজও হার মানে।

মশারিটার মধ্যে আমরা হোল ফেমিলি বেশ সুখেই ঘণ্টা আটেক কাটাতুম। একপাশে আমি, অন্য পাশে আমার স্ত্রী, মাঝখানে আমাদের মেয়ে। একটু সাবধানে শুলে কোনও অসুবিধেই ছিল না। খুব একটা দাপাদাপি না করলে যে কোনও শান্তিপ্রিয় দম্পতির পক্ষে মশারিটা বেশ নিরাপদই ছিল। আলো বাতাস একটু কম ঢুকত। তা আর কী করা যাবে! কম আলো আর বাতাসেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কেবল রোজ শুতে যাবার আগে নৈশ প্রার্থনার মতো একটি ঝলমলে মশারির কথা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে করতে চিৎ হয়ে ঘুমিয়ে পড়তুম। পাশ ফেরার উপায় ছিল না। মশারির গায়ে হাত বা পায়ের ছোঁয়া লাগলেই বিপদ। ফুটো হয়ে যাবার সম্ভাবনা। আগামী মাসের প্রথমে মাইনে পেয়েই একটা নতুন মশারি কিনব, এই প্রতিজ্ঞা প্রায় বছর তিনেক ধরেই চলছে।

সেই মশারিই হঠাৎ ফর্দাফাঁই হয়ে গেল। কাগজ আর গঁদের আঠা চিকিৎসার বাইরে চলে গেল। আমার স্ত্রী দাঁতে ছুঁচ চেপে ধরে হাতে সুতোর গোলা নিয়ে চারিদিক ইনসপেকশান করে রায় দিলেন, তাও বাংলায় নয় ইংরেজিতে—বিঅন্ড রিপেয়ার। কে এই সর্বনাশ করল? তোমার ছেলে আর মেয়ে। মশারি ফেলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হচ্ছিল। একজন ভীম অন্য জন দুর্যোধন। পাশ বালিশের গদা নিয়ে প্রচণ্ড যুদ্ধ। তাদের বীরত্বের তুলনায় একটা খাটের মাপের কুরুক্ষেত্রের পরিসর নিতান্তই কম ছিল বলে মনে হয়। লড়াই করতে করতে মধ্যম পাণ্ডব কুরুক্ষেত্রের একেবারে কানাচে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে মশারি-ফশারি খাটের ছত্রি-মত্রি নিয়ে একেবারে ভূমিসাৎ।

পিতামহ ভীষ্মের মতো সে রাতটা কুরুক্ষেত্রের পুণ্য ভূমিতে শরশয্যায় কেটে গেল। অসংখ্য মশার হুল শবের খোঁচাকে হার মানায়। আধুনিক সভ্যতায় মশারি জীবনযাত্রার অপরিহার্য অঙ্গ। মশা না থাকলেও মশারিতে শুতে হবে। শুয়ে শুয়ে এমন অভ্যাস হয়ে গেছে, মশারি না ফেলে শুলে ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়, নিরাপত্তার অভাব বোধ হয়। মনে হয়, ইনফিনিটিতে শুয়ে আছি। কেমন একটা ভূতের ভয় হয়। ঘুম এসেছে কি আসেনি, মনে হল কে যেন কপালে অথবা ঘাড়ের কাছে ঠাণ্ডা নিঃশ্বাস ফেলছে। ন্যাড়া খাট আর নেড়া ছাদ, দুইই সমান।

মশারি একটা কিনতেই হবে। সকালে অফিস বেরোবার আগে খাটটাকে আর একবার ভাল করে হাতে মেপে নিলাম। মনে মনে ভীষণ দুর্ভাবনা। মশারি তো আলু পটল না যে রোজ রোজ কিনে অভ্যস্ত হয়ে যাব। একটা ভাল মশারি কিনব অথচ ঠকব না। অফিসে আসার পথে সারাটা রাস্তা ভাবতে ভাবতে এলাম, সম্প্রতি আমার পরিচিতদের মধ্যে কে কে মশারি কিনেছেন, কিম্বা কিনবেন।

ভাবতে ভাবতে চোখের দৃষ্টি ফ্যালফেলে হয়ে গেল। দেখেও দেখছি না, শুনেও শুনছি না। বাসে কন্ডাকটার অন্তত দুবার টিকিট চাইলেন। লিফ্‌টে লিফ্‌টম্যান অন্তত বার পাঁচেক জানালেন দশতলা এসে গেছে। বড়বাবু অন্তত বার সাতেক জিজ্ঞেস করলেন এত দেরি কেন। কোনও উত্তর না পেয়ে শেষে রেগেমেগে বললেন—বোবা লেগেছে নাকি! আমি চেয়ারে বসতে বসতে যেন কোন সুদূর থেকে জিজ্ঞেস করলাম—আপনি কি সম্প্রতি কোনও মশারি কিনেছেন? বড়বাবু অবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে টেলিফোন রিসিভারটা মুখের সামনে তুলে ধরে বললেন—মশারি? অপারেটর অন্য দিক থেকে বোধহয় কথাটা শুনেছিলেন। বড়বাবু বললেন—না না মশারি নয়, একস্‌টেনশান টু সিক্‌স।

আমার পাশেই বসেন টাইপিস্ট কালীবাবু। কৌটো থেকে একসঙ্গে দুটো পানের খিলি মুখে পুরে, পানেতে জিভেতে ছড়ানো একটা বিচিত্র স্বরে আমাকে যা বলতে চাইলেন তা হল—মেদিনীপুরে ভাল থান তৈরি হয়। ড্যাম চিপে। তাঁর ছেলে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। গোটা তিরিশেক টাকা ছাড়ো। ছেলে আবার যখন ফিরবে একটা থান সস্তায় নিয়ে আসবে। একটা প্রমাণ সাইজের মশারি তো হবেই, সঙ্গে আর একটা ছোট বেবি মশারি বেরিয়ে আসবে। কালীবাবু জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দশতলা থেকে পিচ্‌ করে আধসের টাক পানের পিক ফেললেন। কালীবাবু পিক ফেলার সঙ্গে সঙ্গে আমি দশ গুনি। দশ গোনা শেষ হলেই নীচের রাস্তা থেকে একটা শোরগোল ওঠে। কালীবাবুর পিচ অবশ্যই কোনও পথচারীর গায়ে পড়বেই। আজও তাই হল। একশো দিনের মধ্যে নিরানব্বই দিনই চাঁদমারী হবে। কালীবাবু কিন্তু নির্বিকার। তাঁর যুক্তি হল বড় বাড়ির তলা দিয়ে যাঁরা যাওয়া আসা করেন তাঁদের এইটুকু রিস্ক নিতেই হবে।

উল্টোদিকে টেবিলের তলায় রাখা একটা টুলের উপর সটান পা তুলে দিয়ে মণিকা ঘোষ খবরের কাগজ পড়ছিলেন। এইটাই তাঁর বিখ্যাত বসার ভঙ্গি। এইভাবে বসে থাকার ফলে আমরা যারা ঠিক উল্টোদিকে বসি তাদের কী অবস্থা হয় সে সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ উদাসীন। কাগজ থেকে মুখ সরিয়ে মণিকা বললেন—কালীবাবুকে টাকা দিলে সে মশারি আপনি জীবনেও পাবেন না। টাকাটা কারণবারি খেয়ে ফাঁক করে দেবেন। অফিস ছুটির পর আমার সঙ্গে চলুন, বাড়ির পাশেই চেতলার হাট, সস্তায় ফাসক্লাস মশারি পাবেন। মশারি কিনে আমার ওখানে এক কাপ চা খেয়ে ফিরে আসবেন।

কালীবাবু মণিকার দিকে একবার আগুনে দৃষ্টিতে তাকালেন বটে কিন্তু কোনও অগ্ন্যুৎপাত হল না। বেমালুম হজম করে নিলেন। বড়বাবু এতক্ষণ চোখ আধবোজা করে কানে পায়রার পালক দিচ্ছিলেন। সেই অবস্থাতেই একটা চোখ তেরছা করে খুলে বললেন—বাড়িটা বেচে দিয়ে আমাদের দিকে চলে এসো। মশাও নেই মশারিরও প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যে চা এসে গেল। অনেক কাজ হয়েছে, এবার টি ব্রেক।

দুপুর আড়াইটে নাগাদ মনে পড়ল কয়েকদিন আগে নির্মলদা একটা মশারি কিনেছেন। নিশ্চয়ই মশারি, কারণ প্যাকেটটা বেশ বড়। সাতবার চেষ্টা করে ফোনে নির্মলদাকে পেলাম। বললেন—হ্যাঁ হ্যাঁ পরশু আমি একটা মশারি কিনেছি চাঁদনি থেকে। কেন বলো তো?

—আমি একটা কিনতে চাই। কত দাম পড়ল?

আমি কিনেছি নাইলেক্‌স, কত বত্রিশ না তেত্রিশ নিয়েছিল। তোমাকে অফিসের পর বিকেলে কিনে দেব। আরে একটা মশারি কিনবে তার জন্য অত ভাবনা।

কথা শেষ হবার আগেই লাইনটা ক্রশ হয়ে অন্য আর একটা লাইনের সঙ্গে জড়ামড়ি হয়ে গেল। কে একজন থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার মাঝখান থেকে বলে উঠল—শালা মশারি। তাড়াতাড়ি লাইনটা ছেড়ে দিলাম।

যাক্ বাবা একটা দুর্ভাবনা গেল। পর পর দুকাপ চা খেলাম। হাসি হাসি মুখ করে বড়বাবুকে বললাম—হয়ে গেছে। বড়বাবু কী বুঝলেন জানি না, বললেন—স্টেটমেন্টটা হয়ে গেছে, দিয়ে দাও দিয়ে দাও। মনে মনে ভাবলাম স্টেটমেন্ট অত তাড়াতাড়ি হয়। এর নাম সরকারি অফিস। সকাল থেকে কাগজে কলম ঠেকাতেই পারলাম না তো স্টেটমেন্ট। মুখে বললাম—স্টেটমেন্ট কাল হবে।

সাড়ে পাঁচটায় ছুটি। চারটে বাজতে না বাজতে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে ভাবলুম নির্মলদার অফিসে যাই। গিয়ে আগেভাগে বসে থাকি। কেউ পাকড়াও করে কোথাও নিয়ে যাবার আগে আমি ধরে ফেলি। কিছুটা পথ চলার পর কীরকম যেন লায়েক হবার ইচ্ছে হল। মনে হল নিজেই একবার চেষ্টা করে দেখি না। নির্মলদা তো দোকানটার অবস্থিতি মোটামুটি বলেই দিয়েছিলেন। নামটা হয়তো মনে পড়েনি। তাছাড়া দামটাও বলেছিলেন। তাহলে অসুবিধেটা কোথায়? একজন অতবড় মানুষকে সামান্য একটা ব্যাপারে বিরক্ত করি কেন?

সমুদ্রে ভাসমান নাবিকের মতো হঠাৎ মনে হল এই তো আমার সেই তটভূমি। সিনেমার উল্টো দিকের দোকান। কিন্তু মশারির দাম শুনে মনে হল ভুল জায়গায় ঢুকে পড়েছি। অবশেষে সেই দোকান পেলাম। আহা কী সুন্দর মশারি! চোখ জুড়িয়ে যায়। আকাশের মতো রঙ। জলের মতো স্বচ্ছ। মশারি আছে কি নেই বোঝাই যায় না। আমার খাটের যা মাপ সেই মাপের মশারির দাম অনেক। আমার বাজেটকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে দাম অনেক দূর পৌঁছে যায়। পকেটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কিনতে হলে কয়েক সাইজ ছোটই কিনতে হয়। ভেবে দেখলুম ভাল জিনিস একটু ছোট হলেই বা ক্ষতি কী? মশারি তো আর ইঁটের পাঁচিল নয়! চালটা হয়তো একটু ছোট হবে কিন্তু ধারগুলো টেনে টেনে গুঁজে দিলে একটা তাঁবুর মতো আকৃতি হবে। কোনও অসুবিধে হবে না, চলে যাবে। সিদ্ধান্তে আসতে একটুও দেরি হল না। নির্মলদা যে দাম বলেছিলেন দরাদরি করে তার চেয়েও কম দামে একটা মশারি বগলদাবা করে বুক ফুলিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লুম।

রাস্তায় নেমে একটা ছটফটে ভাব হল। যতক্ষণ না বাড়ি ফিরে মশারিটা ঝোলাতে পারছি ততক্ষণ যেন শান্তি পাচ্ছি না। সাত-তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে দেখে অনেকেই ভাবলেন আমার বোধহয় শরীর খারাপ হয়েছে। কী হয়েছে তা আমিই জানি। খাটের ছত্রি তো সে দিনই মচকে গিয়েছিল, মেয়ের চুল বাঁধার নাইলন ফিতে চারকোণে বেঁধে মশারি ঝুলল। এমন মশারি তো যা তা দড়ি দিয়ে টাঙানো যায় না। আহা সে কী শোভা! আকাশি রঙের মশারির ভিতরে যেন আরব্য রজনী আটকা পড়েছে। হামাগুড়ি দিয়ে মশারির ভিতর ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম, কী ভীষণ স্বচ্ছ! মনে হল স্বপ্নরাজ্যে বসে যেন বাইরের দৃশ্য দেখছি। চিৎ হয়ে শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে মনে হল যেন নীল একখণ্ড স্ফটিকের মধ্যে ফসিল হয়ে গেছি। বাইরে হাতের পাতা রেখে মশারির গায়ে ফুঁ দিয়ে দেখলাম কতটা হাওয়া চলাচল করতে পারে। গ্রীষ্মকালে অবশ্যই ঝড় বইবে। মেয়েকে বললাম, ফুঁ দে তো। সে প্রাণপণে ফুঁ দিতে লাগল। বাঃ বেশ হাওয়া লাগছে। মেয়েকে বললুম—মাকে ডেকে নিয়ে আয় তো রান্নাঘর থেকে।

আরতি ঘরে ঢুকেই বলল, আদিখ্যেতা ভাল লাগে না। সৃষ্টির কাজ পড়ে আছে।

—রাখো তোমার কাজ। ঢোকো মশারির মধ্যে। জোর করে ঠেলে ঢুকিয়ে দিলাম তাকে মশারির মধ্যে। নাও একটু কায়দা করে শোও দেখি, পাশ ফিরে শরীরটাকে একটু মোচড় দিয়ে। রাজি কী হতে চায়, অনেক ধস্তাধস্তির পর একবার শুলো।

বাইরে একটা মোড়ায় বসে দৃশ্যটা দেখলুম—উঃ কী অসাধারণ দেখাচ্ছে! আমার আটপৌরে সাদামাটা স্ত্রী, ওই স্বপ্নময় মশারির মধ্যে ঢুকে হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে লাস্যময়ী নায়িকার মতো দেখতে হয়েছে। কী ভীষণ রোমান্টিক লাগছে। নিজের স্ত্রীকে আবার নতুন করে ভালবাসতে ইচ্ছে করছে। মশারির মধ্যে থেকে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দাঁত খিচোলেও মনে হচ্ছে যেন হাসির বিজলী খেলে যাচ্ছে।

চড়া আলোটা নির্বিয়ে নরম আলোটা জ্বেলে মশারিটার শোভা একবার দেখলুম। মাথার আলো নিবিয়ে পাশের আলোতে একবার দেখলুম। অসাধারণ! গভীর রাতে সেই মশারির মধ্যে যখন একে একে আমার স্ত্রী আর মেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল, তখন আমি বাইরে একটা আরাম-কেদারায় বসে বসে সেই অদ্ভুত কম্পোজিশন দেখে রাত কাটালুম। মনে হল ঘুমকে যেন আমি স্বচক্ষে দেখছি। হাল্কা একটা ঠাণ্ডা রঙের চেহারা নিয়ে দুটি নিদ্রিত প্রাণীর উপর আলতো আলগোছে ভাসছে একটা সুখ। আমি জেগে জেগে গভীর রাতের মশারি, শেষ রাতের মশারি, ভোরের মশারি দেখলুম। মনে হল স্বপ্নরা যেন ঘরময় পায়চারি করছে। মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে আমার স্ত্রী এঁকেবেঁকে যাচ্ছে। আমার জানা অজানা সমস্ত নায়িকারা যেন সেই শরীরে একে একে ধরা পড়ছে। মশারির মধ্যে তাদের রাখার ফলে ছাঁকনির কাজ হল। প্রাত্যহিক তিক্ততাকে ছেঁকে ফেলে দিয়ে ভালবাসার নির্যাসে যেন তাদের চোবানো হল। ভোরের আলোয় মশারির রঙ মিশে গেল। নরম আলোর সমুদ্রে আমার স্ত্রী আর মেয়ে যেন দুটো পালকের মতো ভাসছে। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।

চোখ মেলে দেখলুম আমার স্ত্রী চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সেই আদি অকৃত্রিম সহধর্মিণী। মশারির বাইরে তার অন্য চেহারা—কাপটা হাতলে নামিয়ে রেখে বলল—মশারিটা আমি পুড়িয়ে দেব। যত আদিখ্যেতা! এ ঘরে এ মশারি মানায় না। দেয়াল ডিসটেম্পার করো, খাট ঝকঝকে করো। চাদর বালিস পালটাও। আর তা না হলে খাটের মাপের একটা বাঁদিপোতার মশারি কিনে আনো।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে মনে মনে বললুম—যতই মুখরা হও আমি ধরে ফেলেছি তোমার মধ্যেও সেই ভারত প্রেমকথার নায়িকারা লুকিয়ে বসে আছে। আমি কাল রাতে দেখেছি। ওই মশারির ভিতর ঢুকলেই তারা বেরিয়ে আসবে। মশারিটা আপাতত ঝুলুক, ঝিলমিলে স্বপ্নের মতো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *