টেবিল ল্যাম্প

টেবিল ল্যাম্প

বঙ্কিম সম্প্রতি একটু ধর্মে-কর্মে মন দিয়েছে। বয়সটয়স বাড়ছে। সংসারী লোক। নানা ফ্রাসট্রেশান। চাকরিতে একই জায়গায় পড়ে আছে বিশ বছর। ন যযৌ ন তস্থৌ। সংসার বাড়ছে আয় বাড়ছে না। বড় ছেলেটার মধ্যে একটু বখামির ভাব আসছে। দিন-রাত স্ত্রীর অভিযোগ শুনতে শুনতে প্রায় আধপাগলা। সামনে বলার সাহস নেই। বাথরুমে ঢুকে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে জলশৌচের বিবর্ণ প্ল্যাস্টিক মগটাকে হাতের সজোর চাপে পাকড়ে ধরে বলে ‘ন্যাগিং ওয়াইফ?’ এই অবস্থায় ধর্মই একমাত্র প্যান্যাসিয়া। আনঅফিসিয়াল গুরুও একজন না চাইতেই পেয়ে গেছে। বঙ্কিমের বাবা পরমেশ্বর ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমার গুরু কতদূর এগিয়েছেন?’ বঙ্কিম সাধনমার্গে সবে প্রবেশ করতে চলেছে। এসব গূঢ় প্রশ্নের সে মানেও বোঝে না উত্তরও জানে না। গুরুকেই জিজ্ঞেস করে বসল কতদূর এগিয়েছেন আপনি? তিনি একটু অফেন্ডেড হয়ে বললেন—‘ষট চক্র ভেদ বোঝো?’ বঙ্কিম ফ্রাঙ্কলি বলল—‘নো সার।’ সার শব্দটা তার কথার আষ্টেপৃষ্ঠে। সরকারি অফিসে বিশ বছর চাকরির এইটাই একমাত্র শিক্ষা। সেখানে আগে সার পিছে সার। শ্বশুরমশাইকে একবার সার বলে ফেলেছিল। গুরু তাঁর চেয়েও মাননীয়। গুরু বললেন—‘সারটা কী? সাধন পথে সার নেই ম্যাডামও নেই, একমাত্র তিনি ক্যাপিটালি হি।’

সেই আনঅফিসিয়াল গুরুর নির্দেশে বঙ্কিম তার জীবনকে একটু মিনিংফুল করার জন্য সম্প্রতি বাড়িতে তার ইষ্ট দেবতার একটি পট প্রতিষ্ঠা করেছে। পটেশ্বর। পরমেশ্বরের ঘরে একটা হাফ্‌ বেঞ্চি ছিল একটু লো টাইপের, সেইটাকে ঝেড়ে মুছে বেদি বানিয়েছে। মেয়ের ফ্রকের জন্য বড়বাজারের আড়ৎ থেকে কাট পিস্‌ কিনেছিল, মেয়ের ছলছলে চোখের সামনে সেই কাপড়টাকেই বেদির কভার হিসেবে ব্যবহার করেছে। মনকে এই বলে শক্ত করল, ধর্ম আগে না মেয়ে আগে। ভেংচি কাটার গলায় অনুচ্চারিত ভাষায় বলল—‘যা যা, তোদের অনেক সেবা করেছি, এবার ঈশ্বর। ইহকালটাই সব নয়, পরকাল ইজ দি ওনলি থিং। তোরা তো সব লেনেওলা খিঁচনেওলা পার্টি, দেনেওলা একমাত্র তিনি। কুড়ি বছর একই পোস্টে পড়ে আছি। তাঁর ইচ্ছে হলে পঙ্গু শালাও গিরি লঙ্ঘন করতে পারে।’

ছবিটা বাঁধাতেই শেষ মাসে শেষ থোক একুশ টাকা বেরিয়ে গেছে। হাত একেবারে খালি। অথচ শুভ অনুষ্ঠানের দিন ঠিক হয়েছে একেবারে মাসের কিনারায়। এখনও ফুল আছে প্রসাদ আছে আর আছে একটা টেবিল ল্যাম্প। যেদিকে খুশি নোয়ানো চলে, পাকানো পাকানো স্প্রিংয়ের কাণ্ডওলা একটা টেবিল ল্যাম্প চাই। ছবির সামনে ঘাড় কাত করে ফেলে একটা ফোকাস মারতে হবে। তবে আলো নিভিয়ে ওই মৃদু ফোকাস ইষ্টকে উজ্জ্বল করে চোখ বুজিয়ে অনড় ধ্যানে বসতে হবে।

এখন টেবিল ল্যাম্প পায় কোথায়। ছাত্রজীবনে একটা কাঠের পিলসুজ ধরনের ল্যাম্প কিনেছিল। বঙ্কিমের স্ত্রী সেটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। মাথার উপর ছাতার মতো একটা প্ল্যাস্টিকের কাপড়ের শেড ছিল। বাড়ির পেয়ারের ঝিকে সেটা দেওয়া হল বর্ষাকালে মাথায় টুপির মতো পরে বাইরের কলতলায় বাসন মাজার জন্য। প্রতিবাদে কোনও কাজ হয়নি। স্ত্রী প্রতিমা সমস্ত প্রতিবাদের ঊর্ধ্বে স্বয়ংসিদ্ধা। এক বর্ষাতেই সেই শেড শেষ হয়ে গেল। পড়ে রইল তারের কাঠামো। পড়ে রইল পেছনের বাগানে পাঁচিলের ধারে। বঙ্কিম বহুবার প্রতিমাকে অনুরোধ করেছে—তোমার বিয়ের বেনারসীটা তো পোকায় ফুটো করে দিয়েছে, ওটাকে মিউজিয়াম পিস করে না রেখে একটুকরো কেটে নিয়ে ওই তারের ফ্রেমটায় ফিট করে একটা শেড বানিয়ে দাও না, রাজার মতো হবে। বঙ্কিম কোনও এক পড়তি মহারাজার বাড়িতে এইসব ব্যাপার দেখেছিল, বেনারসীর পর্দা বালিশের খোল, ল্যাম্প শেড। সেই থেকে প্রতিমার বেনারসীটার উপর লোভ। প্রতিমা কিন্তু বেনারসীটা হাতছাড়া করতে রাজি নয়। বেনারসী দিয়ে আদিখ্যেতা করতে হয় তো তোমার মার বেনারসীটা বাবার ট্রাঙ্ক থেকে বের করে আনো। মার বেনারসী আর স্ত্রীর বেনারসী এক হল! কী বুদ্ধি! ভেড়ার বুদ্ধি। মা নেই। মার বেনারসী একটা পুণ্য স্মৃতি। লজিকে প্রতিমার সঙ্গে পেরে ওঠা শক্ত। আমার ছেলের কাছে আমার বেনারসীও পুণ্য স্মৃতি, তোমার কাছে তার কোনও সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু না থাকলেও আমার ছেলের কাছে আছে। প্রতিমা ইচ্ছে করলে অন্য যে কোনও কাপড়ের টুকরো দিয়ে শেডের খাঁচাটাকে পুনরুদ্ধার করে দিতে পারত। আসলে ফাঁকিবাজি। যে কোনও কাজের কথা বললেই ইনভেরিয়েবলি এক উত্তর—এই বাড়িতে এসে আমার সোনার অঙ্গ ভূর্সে পড়া লণ্ঠনের মতো হয়ে গেল। বঙ্কিম মাঝে মাঝে একটু তাতিয়ে দেয়, ল্যানটার্ন হলেও তো কাজ হত—একটু আলো দিতে, আসলে তুমি একটা পয়মাল, কাজের মধ্যে তো একবেলা চারটে লোকের রান্না তাও তো হৈহৈ-এর চোটে মনে হয় রান্নাঘর ধসে পড়বে। বাড়িতে দুটো কাজের লোক, একটা ফুলটাইম সব সময় ল্যাজে বাঁধা অন্যটা দুবেলা পার্ট টাইম।

শেডটা তো উদ্ধার হলই না। এক কালী পুজোয় বঙ্কিমের কৃতি সন্তান কাগজের ফানুস তৈরি করে তারের খাঁচায় কাপড় কৰ্পূর আর কেরোসিন তেলের ইন্ধন লাগিয়ে ফানুসের গায়ে ম্যানটল হিসেবে ফিট করে আকাশে উড়িয়ে দিল। বঙ্কিম পেছন দিকে ঘাড় বেঁকিয়ে উড়ন্ত ফানুসের সঙ্গে তার ছাত্রজীবনের স্মৃতির অনন্তযাত্রা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। প্রতিমা একটু রসিকতা করে বলল, কৃপণের ধনের এতদিনে সদ্গতি হল।

টেবিল ল্যাম্পের বেশ গোছা কাণ্ডটাকেও প্রতিমা নিষ্কৃতি দেয়নি। এদিকটার জল ভীষণ হার্ড, ডাল গলতে চায় না। সেই কাঠের ল্যাম্প এখন ডালের কাঁটা। তলার চ্যাটালো অংশটা দিয়ে রোজ কড়ার ডালে চটাস চটাস করে চেপে প্রতিমার চটকানোর কেরামতি চলে, সবশেষে ফাইনালি দুহাত দিয়ে গোলাকার ল্যাম্পটাকে খড়্‌ড় করে ঘুরিয়ে ফিনিশিং টাচ দেয়। রান্নার এমন কায়দা কেউ কখনও দেখেছে কি না সন্দেহ। প্রতিমা বলে নেসাসিটি ইজ দি মাদার অফ…।

বঙ্কিম ছবি রাখার পেডেস্টালে মেয়ের ফ্রকের ফুলফুল কাপড়টা পেতে যত্ন করে ছবিটা প্লেস করে মেয়েকে জিজ্ঞেস করল—কেমন দেখাচ্ছে। মেয়ে গোবদা মুখে বলল—জানি না। রাগ করছিস কেন। তোর মা জীবনে ছুঁচ সুতোয় হাত দিয়েছে? গয়ায় উৎসর্গ করে এসেছে। এই কাপড়ে কোনওদিনই ফ্রক হত না। আমি তোকে কিনে দেব। তৈরি জামাই কিনে দেব।

ওই আনন্দেই থাকো। প্রতিমার ঝাঁঝাল গলা কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বঙ্কিম খেয়াল করেনি। সেই পুজোর সময় একবার দুটো জামা কেনা হবে। যখন ছোট ছিল তখন চারটে কেনা হত। সাইজ বাড়ছে, দাম বাড়ছে, জামার সংখ্যাও কমছে, উল্টো রুল অফ থ্রি। এরপর জিরো হয়ে যাবে, তখন সব নাঙ্গা বাবা। বঙ্কিম প্রতিজ্ঞা করেছে ঝগড়া করবে না, যত প্রোভোকেশানই আসুক না কেন। সে এখন যে পথের পথিক তাতে মেজাজটাকে একেবারে হিমশীতল করতে হবে। তাছাড়া ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছে। এই তো সেদিনই একটু কথা কাটাকাটি মতো হচ্ছিল। ছেলে ছড়া কেটে উঠল ‘ঝগড়াঝাটি মাত করো বউকে নিয়ে ঘর করো।’ বঙ্কিমের বেশ কড়া কিছু কথা বলার ইচ্ছে করছিল, মেয়ের সামনে ইনসালট, কিন্তু না, দ্রুত বার কয়েক মনে মনে মন্ত্র জপ করে নিল—‘কা তব কান্তা কস্তে’ দাঁতে দাঁত চেপে বলো গুষ্টির পিণ্ডি। শেষ রক্ষে হল না, একটু ফসকে বেরিয়ে এল ‘তোমার মাদার অফ ইনভেনশানের জন্য আমার অতদিনের টেবিল ল্যাম্পটা গেল, এমনকী থ্রি পিন প্লাগটা পর্যন্ত বাপের বাড়িতে দান করে দিলে; এখন আমি ফোকাস করব কী দিয়ে?’ ‘ধম্ম করছ একটা কিনে আনো’, প্রতিমা উদাসীন গলায় বলল। ‘তোমরা তো বলেই খালাস, টেবিল ল্যাম্পের দাম জানো?’

‘কেন তোমার সেই আর একটা আলো ছিল না যেটা বিয়ের সময় পেয়েছিলে? তোমার প্রাণের বন্ধু অজিত দিয়েছিল।’ প্রতিমা সেই গোলমেলে ব্যাপারটা বোধহয় ইচ্ছে করেই তুলল। বঙ্কিম বউভাতে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে বিশেষ কিছুই পায়নি। যা পেয়েছিল তার মধ্যে একটা পোর্সিলিনের টেবিল ল্যাম্প ছিল, মাথায় একটা সাদা কাচের ডোম। গায়ে একটা ছাঁচে ঢালা উলঙ্গ পরী। আড়চোখে তাকানো যায়, সোজাসুজি তাকাতে লজ্জা করে। ল্যাম্পটা একদিন জ্বালাবার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখা গেল ডিফেকটিভ। কিছুকাল সেই পরীমার্কা অকেজো আলো বাইরের ঘরের টেবিলে পড়েছিল। পরমেশ্বর একদিন ছেলেকে ডেকে বললেন: বাইজি পাড়ার জিনিসটা এখানে ভদ্রবাড়িতে কে রেখে গেল? বঙ্কিম সাদা ডোম আর মাথার হোল্ডারটাকে ভেঙে বের করে নিয়ে সেই উদ্ধতযৌবনা স্ত্রীকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়ে এল।

বঙ্কিমের ধারণা আলোটা প্রতিমার দূর সম্পর্কের কোনও এক ভাই দিয়েছিল যার সঙ্গে আইবুড়ো বয়সে প্রতিমার একটু বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। প্রতিমা কিছুতেই স্বীকার করবে না। প্রতিমার ধারণা অজিতবাবু দিয়েছিলেন। বঙ্কিম বেশ ভালই জানে, অজিত সাধারণত লোকলৌকিকতায় টাকা দুয়েকের বেশি খরচ করে না। অনেক সময় পাওয়া জিনিস বা চোরাই জিনিস যা শত্রু পরে পরে বলে চালিয়ে দেয়। অজিতের একটা ঘটনা বঙ্কিমের এখনও মনে পড়লে হাসি পায়। কোনও এক কমন ফ্রেন্ডের বিয়েতে অজিত প্রেজেন্ট করল ‘জাহানারার আত্মকাহিনী’, পরের দিনই পড়ব বলে বইটা নিয়ে এল, সে বই আর ফেরত গেল না। প্রতিমা সেই কন্ট্রোভার্শিয়াল আলোর কথা তুলে পুরনো বিবাদটাকে আর একবার ঝালিয়ে নিতে চাইছে। বঙ্কিম বেশিদূর এগোতে প্রস্তুত নয়। মনে মনে বলল, ঝগড়া ইজ ইওর লাইফ ব্রেদ। ইও রেভেল ইন ঝগড়া। ঝগড়ার দেবী তুমি। নারদের ফিমেল এডিশন। মা মনসা।

সেই প্রতিমাই অবশেষে সন্ধ্যাদের বাড়ি থেকে একটা টেবিল ল্যাম্প চেয়ে নিয়ে এল। সন্ধ্যাদের বাড়িতে ইলেকট্রিসিটি নেই তবু একটা টেবিল ল্যাম্প আছে। দাদার বিয়ের পাওনা। দানের জিনিস যেমন হয় আর কী! সুইচটা বার ছয়েক টিপলে আলো তার মর্জি মতো জ্বলে। প্রতিমার টিকটিকির ল্যাজের দৈর্ঘ্যের চুলের মতো এক ফালি সরু তার ঝুলছে। প্লাগটা তারের সঙ্গে লাগানো ছিল না। বঙ্কিম তার জুড়তে গিয়ে আবিষ্কার করল প্লাগের পেছনে তার ঢোকাবার ছেঁদাটাই নেই। যাইহোক অল্পস্বল্প মেকানিজমে আলোটা জ্বালা গেল। নড়া ধরে ছবির পায়ের কাছে প্রণামের ভঙ্গিতে সেটা হেঁট মুণ্ড করাও সম্ভব হল।

বঙ্কিম ভেবেছিল, সন্ধ্যাদের বাড়িতে যখন বিদ্যুৎ নেই তখন আলোটা আর ফেরত না দিলেও চলবে। তাছাড়া হিন্দুর মেয়ে সন্ধ্যা, দেবসেবায় যে আলো নিবেদন করেছে তা কি আর ফেরৎ চাইবে? দিন পনেরো কেটে গেল। হঠাৎ সন্ধ্যা একদিন আলোটা চেয়ে বসল। বঙ্কিম একটু ক্ষিপ্ত হল। ক্ষিপ্ত হলেই তার মধ্যে একটা পুরনো জমিদারি মেজাজ উৎক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তখন তার কৃপণ কৃপণ হিসেবি সত্তাটার সাময়িক মৃত্যু হয়। টেবিল ল্যাম্প থেকে বাড়তি তার যেটা সে যোগ করেছিল টান মেরে খুলে নিল। হোলডারে অতিকষ্টে বাল্ব ঢুকিয়েছিল। ডিফেকটিভ বাল্বটা খোলাই গেল না। যা চেয়েছে তার চেয়ে কিছু বেশি দেব বলে নাট পাওয়ারের বাল্ব সমেত আলোটা তৎক্ষণাৎ ফিরিয়ে দিল। ফিরিয়ে দিয়ে ঠিক করল আজই একটা আলো কিনবে। এমন আলো কিনবে যাতে ফোকাসটা আরও ভাল হয়। সন্ধ্যার আলোটা মাঝে মাঝে অবাধ্য ছেলের মতো ঝটকা মেরে ঘাড় উঁচু করার চেষ্টা করত। তপস্যার বিঘ্ন হত। এবার একটা বাধ্য আলো কিনবে। যার ভাবটা হবে সাত্ত্বিক। যার ভাবনা হবে, মাথা নত করে দাও হে আমার।

অফিস থেকে ঘণ্টাখানেক আগে ওবিডিয়েন্ট আলোর খোঁজে বঙ্কিম বেরিয়ে পড়ল। আলোর আড়ত এজরা স্ট্রিট তার গন্তব্যস্থান। এজরায় ঢুকেই প্রথমে বাঁদিকে একটা বড় দোকান পড়ল। অনেক আলো-টালো চারিদিকে টাঙানো। কয়েকটা ঝাড় ঝুলছে। বঙ্কিম কিন্তু দোকানটায় ঢুকতে পারল না। দুটো ঠ্যালা, একটা স্কুটার, একটা মোটর এবং কয়েকটা ঝাঁকা দিয়ে ঢোকার মুখে একটা ভীষণ ব্যারিকেড। হাইজাম্প না জানলে কারুর পিতার সাধ্য নেই ঢোকে। কুছ পরোয়া নেই। আরও কদমখানেক এগোতেই আর একটা বড় দোকান। ধবধবে ফর্সা মোটাসোটা গোলগাল এক ভদ্রমহিলা আলো পছন্দ করছেন। মালিক এবং দুজন সেলসম্যান একসঙ্গে সেই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে পড়েছেন। বঙ্কিম পিছনে এসে দাঁড়াল। কেউ তাকে লক্ষই করল না। দেয়ালে নানারকম শেড ঝুলছে। এটা জ্বলছে, ওটা জ্বলছে। তিনজনে রানিং কমেন্ট্রি দিচ্ছেন। বাঙালি দোকান। ক্রেতা অবাঙালি। তেমন বিশুদ্ধ হিন্দি না হলেও লম্বা চুল ওলা হিরো সেলসম্যান বোঝাচ্ছে—ভাবিজি, ইসমে ইয়াদা আলো নেই হোগা। আঁখ মে ধাঁদা নেই লাগে গা। চাপা চাপা অন্ধকারমে বহত রোমান্টিক লাগে গা। ক্রেতা বলছেন—ম্যায় তো আলো লেনে আয়া, আপতো অন্ধকারকা বাত বোলতা। বঙ্কিম দেখল, একটা মোটা কাচের চোঙার গায়ে গোটাকতক ফুটো দিয়ে আলো বেরুচ্ছে। তার মনে হল ব্যাপারটা সে আরও ভাল একসপ্লেন করতে পারবে। মালিককে একস্ট্রা সার্ভিস দিয়ে প্লিজ করতে পারলে তার টেবিল ল্যাম্পের দাম হয়তো খুশি হয়ে একটু কমিয়ে দিতে পারেন। বঙ্কিম বলে উঠল, ইসকো বোলতা হ্যায় সাইকাডেলিক এফেক্ট। ওই ছেঁদা দেকে পানকা পিককা মাফিক পিচ পিচ করকে আলো ছিটকায়গা, আমেরিকান ডিজাইন। দিশি আমেরিকানকে বঙ্কিম ওয়াশিংটনের আমেরিকার কথা তার বর্ণসঙ্কর হিন্দিতে পেশ করল। মহিলা ঘাড় ফিরিয়ে বঙ্কিমকে একবার দেখে নিলে। খুব শ্রদ্ধা হয়েছে বলে মনে হল না। সেলসম্যানকে বললেন—সাইকেল লেকে হাম কেয়া করে গা, হাম, তো শেড মাংতা। উল্টো বুঝলি রাম। দোকানদার বেশ বেজার মুখে বঙ্কিমকে বললেন, ক্যা মাংতা। বঙ্কিম বলল, টেবিল ল্যাম্প। টেবিল ল্যাম্প নেই। ওই যে রয়েছে। ওর অনেক দাম। কত? পাশের দোকানে দেখুন। বঙ্কিম বেরিয়ে এল। তার জামাকাপড় দেখে ব্যাটা বাঙালি বঙ্কিমের পকেটটা বুঝে ফেলেছে। ঠিক হ্যায়।

উল্টোদিকের মাঝারি একটা দোকানের শো কেসের সামনে বঙ্কিম দাঁড়াল। মনে মনে বলল, ইয়েস দিস ইজ মাই শপ। শো উইন্ডোতে গোটা কয়েক টেবিল ল্যাম্প ডিসপ্লেড। বঙ্কিম মনোযোগ দিয়ে তন্ময় হয়ে দেখছিল। কানে এল ওসব আমাদের জন্য নয় মশাই। আমাদের জন্য লোহার তৈরি বগর ফোঁস। ওই শেষের দোকানে পাবেন। বঙ্কিম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল তারই মতো এক ছাপোষা মানুষ, দশ পয়সার ছোলা ভাজা মিনি ঠোঙা থেকে বের করে চিবোতে চিবোতে সারাদিনের পর বাড়ি ফিরছেন। মুখে উদাসীন দৃষ্টি। বঙ্কিমের যমজ। দোকানের মালিক অবাঙালি। সামনেই গদিয়ান। গায়ে ঘিয়ে রংয়ের টেরিসিল্কের পাঞ্জাবি। বঙ্কিমের সঙ্গে চোখাচোখি হল। বঙ্কিম ভেবেছিল—আইয়ে আইয়ে বলে সম্বর্ধনা করবেন। তা তো করলেনই না। উল্টে মুখটাকে পিচকিরির মতো করে পিক করে পোয়াটাক পানের পিক ছুঁড়ে দিলেন। ইঞ্চি খানেক দূরে পড়ল। পাশ দিয়ে মোট মাথায় একটা লোক ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছিল। ধমকে দিয়ে গেল, খবরদার। বঙ্কিমের ইচ্ছে হল একটা প্রমাণ সাইজের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার খুঁটিয়ে দেখে। তার চেহারায় কী ক্রেতাসুলভ কোনও ভাবই নেই?

এবার সে প্রায় চোখ কান বুজিয়ে একটা অন্ধকার ছোট দোকানে ঢুকে পড়ল। আলোয় অন্ধকার। মধ্যবয়সী বাঙালি কোষ্ঠকাঠিন্যের মুখ নিয়ে বসে আছেন। কোনও প্রশ্ন নেই। জানেন, যে এসেছে সে কিছু বলবেই। টেবিল ল্যাম্প আছে? বঙ্কিমের প্রশ্নে ভদ্রলোক যেন বহু দূর থেকে ফিরে এলেন। ক্লান্ত গলা—ওই যে। একটা ল্যাম্প শোকেসের এক পাশে রাগ করে কেতরে আছে। নিকালো—বঙ্কিম একটু ব্যক্তিত্ব আনতে চাইল। ‘চৌদ্দ টাকা দাম’, বসে বসেই আগে দামটা শুনিয়ে দিলেন। উঠে বের করার কষ্টটা যদি বাঁচে। দাম শুনেই খদ্দের যদি ভাগে মন্দ কী! ‘বের করুন’ বঙ্কিম বেশ ভারী করে বলল। ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন। শরীরটা দুটো ইনস্টলমেন্টে সোজা হল। সোজা হবার সময় ছাতা খোলার মতো খট করে একটা শব্দ হল। ল্যাম্পটা অন ইনস্পেকশান বঙ্কিমের পছন্দ হল না। অনেকদিন পড়ে আছে। দ-এর মতো ফিটিংসে মরচে ধরেছে। ‘আর আছে?’ বঙ্কিম দোকানদারকে একটা চান্স দিল। ‘না, ওই একটাই আছে। আমি একটা একটা করে বিক্রি করি।’ এটা খারাপ কী? এই দেখুন ফোন্ড হল, ধস্তাধস্তি করে ল্যাম্পটাকে কৌটোর মতো মুড়ে ফেললেন। দুটো মুখ অর্থাৎ বেস আর শেড এক হল না। বাচ্চা ছেলের ভেংচিকাটা মুখের মতো একটু ফাঁক হয়ে রইল। বঙ্কিম বলল, ‘এইবার খুলুন’। ব্যস আর খোলে না। টানাটানি হ্যাঁচকা হেঁচকি। বৃদ্ধকে খোলার কাজে এনগেজ করে দিয়ে বঙ্কিম রাস্তায় নেমে পড়ল। দুটো দোকান পরে আর একটা মাঝারি দোকানে ঢুকে পড়ল।

মালিক খাড়া দাঁড়িয়েছিলেন। বসার চেয়ারে পেসটিসাইড রেসিসট্যান্ট ছারপোকা। ঠিক হাসিও নয়, কান্নাও নয়, এমন একটা মুখ করে দাঁড়ানো মালিক জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী চাই?’ ‘টেবিল ল্যাম্প’। বঙ্কিম কী ধরনের ল্যাম্প চায় বলে দিল। ‘সব দিকে মাথা ঘোরাতে পারে এই রকম একটা মাল ছাড়ুন।’ বয়স কম কর্মচারী আলমারি খুলে কাউন্টারে মাল প্লেস করল। সেই আগের দোকানের মডেল। দাম সতেরো টাকা। বঙ্কিম অনেকটা গবেষকের মতো প্রশ্ন করল, ‘এমন কেন হয় বলুন তো। পাশের দোকানে বলল চোদ্দ টাকা।’ মালিক লাফিয়ে উঠলেন, ‘সেটায় আর এটায় অনেক তফাত মশাই। চোখ থাকলে দেখতে পেতেন। চোদ্দ কেন দশেও পাবেন। কলকাতা মশাই ডেনজারাস জায়গা। সব জোচ্চোরে ভরা। একটু দেখেশুনে না কিনলেই ঠকে মরবেন। চোদ্দর মাল বাড়ি অব্দি পৌঁছবে না। রাস্তাতেই সব খুলে পড়ে যাবে। এসব মাল বিয়ের প্রেজেন্টেশানে চলে। বাড়ির কাজে অচল।’

বঙ্কিম ল্যাম্পটাকে একটু নাড়াচাড়া করল, ‘সুইচ ঠিক আছে?’

‘এসব সুইচ কোনওকালে ঠিক থাকে! মাসখানেক পরমায়ু। বাড়িতে বাচ্চা আছে!’ বঙ্কিম বলল, ‘আছে’। ‘কটা’? মরেছে, ফ্যামিলি প্ল্যানিং নয়তো। পাঁজাকোলা করে হেলথ সেন্টারে নিয়ে গেলেই দুশো টাকা পুরস্কার। ভয়ে ভয়ে বলল, ‘দুটো।’ ‘তবে ছদিন যাবে।’ ‘কী ক্যালকুলেশন?’ বঙ্কিম জানতে চাইল। উত্তর ‘সাধারণ ত্রৈরাশিক। দু’জনে সারা দিনে বার দশেক ওই সুইচটাকে পটপটাপট করবে, ছ’দিনে ষাটবার। আপনি দিনে দু’বার করলে মাসে ষাটবার। ষাটবারই এর পরমায়ু।’ অঙ্কটা বঙ্কিমের কাছে জলের মতো সহজ হয়ে গেল। বঙ্কিমের দ্বিতীয় প্রশ্ন, ‘হোল্ডারে বাল্ব ঢুকবে’? ‘হোল্ডারে ডিফেক্‌ট থাকলে ঢুকবে না’ সোজা উত্তর। তৃতীয় প্রশ্ন, ‘প্লাগ সকেটে ঢুকবে’! ‘ঢুকতেও পারে নাও পারে। সব প্লাগ সমান? সব মানুষ সমান?’ ভদ্রলোক দর্শনে চলে গেলেন, ‘না ঢুকলে হয় প্লাগ না হয় সকেট কিম্বা মেল ফিমেল দুটোকেই পাল্টে নেবেন’। এইবার চতুর্থ প্রশ্ন ‘ফোকাস মারবে?’

‘ফোকাস’! ভদ্রলোক একটু থতমত খেলেন। বঙ্কিম ল্যাম্পের গলাটাকে সাপের ছোবল মারার ধরনে পেছনে একটু হেলিয়ে দিতেই ডিগবাজি খেয়ে পড়ে গেল। উত্তরটা বঙ্কিমই দিল, ‘না, ফোকাস মারবে না’। বঙ্কিম শোকেসের কাছে সরে এল, ‘এটা কী’? ‘ওটা টেবিল ল্যাম্প নয়’। ‘কী তা হলে’? ‘ওটা খাটিয়া ল্যাম্প’।

‘বের করুন’। অ্যাসিসটেন্ট বের করে আনল। সবুজ রঙের বেশ বড় একটা কাগজ ক্লিপের একটা পাশে হোল্ডার, হোল্ডারে বাল্ব, বাল্বের মাথায় একটা টুপির মতো মেটাল শেড। বেশ ছোটখাটো নির্ঝঞ্ঝাট ব্যাপার। দামও বেশ মানানসই। মাত্র ছ’টাকা।

‘এটার ব্যবহার জানেন’? দোকানের মালিকের সন্দেহ খুব অমূলক নয়। বঙ্কিমের নলেজ সাদামাটা টেবিল ল্যাম্প পর্যন্ত। খাটিয়া ল্যাম্পের সে এ বি সিও জানে না। খাটিয়া বস্তুটার সঙ্গে তার পরিচয় আছে। জীবনের খেলা শেষ হলেই মানুষকে চাপতে হবে। পল্লীগ্রামে সঙ্গে লণ্ঠন চলে। শ্মশানের পথ চেনার জন্য। শহরে কী আধুনিক ব্যবস্থা। তাহলে তো সঙ্গে একটা জেনারেটর চাই। ঠাকুর বিসর্জনের সময় যেমন ব্যান্ডপার্টি, জেনারেটর প্রভৃতি লটবহর চলে। দেবতার বিসর্জন আর মানুষের বিসর্জন তো এক হতে পারে না। দেবতা সর্বজনীন। বঙ্কিমের ভরসা বঙ্কিম নিজেই। এমনিই ঘাট খরচা বেড়ে গেছে। বঙ্কিমের ছেলে জেনারেটর পাবে কোথায়। ফাঁক ফাঁক দড়িওলা একটা নড়বড়ে খাটিয়ার দাম পনেরো টাকা। সে যা দড়ির বুনোন যেকোনও মুহূর্তে ছিঁড়ে পড়ে যেতে পারে। নেহাত ডেডবডি। মানুষ একবারই মরে। ছিঁড়ে পড়ে গেলে দুবার মরার চান্স নেই। তাহলে পনেরো প্লাস খাটিয়া ল্যাম্প ছয় প্লাস সাঁইত্রিশ টাকা ঘাটখরচ। বঙ্কিমের যা চেহারা আর তার ফ্যামিলির যা ট্রাডিশন মিনিমাম ছ’ মাস তো ভুগবেই। মেয়ে বিয়ে দিয়ে প্রভিডেন্ট ফান্ড ফিনিশ হয়ে যাবে। ছেলে রোজগারী হবে জ্যোতিষিও বলতে পারবে না। বঙ্কিমের মুখাগ্নিই হবে কি না সন্দেহ। ঘটা করে শ্রাদ্ধ সে তো বহু দূরের কথা।

বঙ্কিমের চিন্তা চটকে গেল। দোকানদার বলছেন: ‘ছ’টাকায় ফোকাস হবে না মশাই, ফোকাসের জন্য মিনিমাম তিরিশ ছাড়তে হবে। এই দেখুন।’ লম্বা হাত বাড়িয়ে শোকেসের মাঝের তাক থেকে ক্যামেরাস্ট্যান্ডের মতো একটা বস্তু বের করলেন। অনেকটা ফড়িংয়ের মতো একটা সুদৃশ্য আলো। ‘এই দেখুন সামনের ফোকাস, মাথার ওপর ফোকাস, পিছনে, পাশে সবদিকে ফোকাস। মুণ্ডুটা যে দিকে ঘোরাবেন সেই দিকেই ঘুরবে।’ বঙ্কিম মুগ্ধ হল। পকেটে মোট এগারোটা টাকা আছে। তিরিশ টাকার আলোটা দেখা চলতে পারে। স্পর্শ করা যেতে পারে। অধিকার করা চলে না। অধিকার অর্থে হ্যাজ, হ্যাভ।

এই আলোটাই আমি নেব, তবে আজ নয়। এই আলোর জন্য মানানসই টেবিল চাই, সেই রকম ঘর চাই, বেশ সুন্দর রঙ করা তেলা দেয়াল চাই। আস্তে আস্তে হবে। বঙ্কিম বেশ মোলায়েম করে বলল। ‘আমি বরং এই ছ’ টাকারটা’— দোকানের মালিক খুব অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে মনে হল না। খাটিয়া ল্যাম্পটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললেন, ‘ছ’টাকার আলোও জ্বলে। আলো ইজ আলো। সবই এক আলো। ছয়ে ছত্রিশে তফাত নেই যদি সাপ্লাই আর ভোল্টেজ ঠিক থাকে। তবে এটা হল বেডসাইড ল্যাম্প। খাটের মাথার দিকে। খাটে হবে না তক্তপোেষ চাই। এইভাবে ফিক্‌স করে দিন।’ কাউন্টারের ধারে ভদ্রলোক পেপার ক্লিপের মতো বস্তুটা ফিট করে দিলেন। ‘ব্যস এইবার পুট করে সুইচ টিপে আলো জ্বলুন, বই পড়ুন, পড়তে পড়তে ঘুমে চোখ জুড়ে আসছে, আলগোছে ঘুমন্ত হাত বাড়িয়ে পুট, অন্ধকার। একবার পুটে হবে না, বার কতক পুট পুট করতে হবে। এ সি না ডি সি’?

বঙ্কিম বলল, এ সি। ‘তাহলে এক কাজ করবেন, বিছানার ওপর একটা কাঠের তক্তা পেতে তার উপর শোবেন। শক খেলেও মরবেন না।’

বঙ্কিম আলোর টুপিটাকে একপাশে কাত করে দেখতে চাইল সামনে কোনও রকমে একটু ফোকাস ফেলা যায় কি না। টুপিটা বাল্বের মাথা থেকে হড়কে সশব্দে মাটিতে পড়ে গেল। অ্যাসিসটেন্ট সঙ্গে সঙ্গে কুড়িয়ে নিল।

‘আপনি তখন থেকে শেডটা নিয়ে ওরকম করছেন কেন বলুন তো? এ কী মানুষের মাথা, যেদিকে খুশি হেলালেও টুপি থাকবে। মানুষের মাথায় চুল আছে, বাঘের মাথায় চুল নেই।’

বঙ্কিম বলল, ‘আমার আলোর চেয়ে ফোকাসের প্রয়োজনই বেশি।’

‘তখন থেকে ফোকাস ফোকাস করছেন কেন বলুন তো? আমি প্রথমেই বলেছি দুধের স্বাদটা ঘোলে মেটে না।’

‘আমি এই আলোটাকে এইভাবে ফিক্‌স করব। সামনে থাকবে একটা ছবি। সেই ছবিটার উপর আলোটা থ্রো করতে চাই।’ বঙ্কিম এতক্ষণে ব্যাপারটাকে স্পষ্ট করল। মালিক কর্মচারীকে আলো তুলে রাখতে বললেন, ‘এ কী জল না বল যে থ্রো করবেন? আলো থ্রো করতে হলে কেরামতি চাই! রিফ্লেকটারের দাম জানেন?’

দোকানের কর্মচারী, ইয়ংম্যান এতক্ষণ পাশে দাঁড়িয়ে হুকুম তামিল করছিল। একটাও কথা বলেনি। সে এইবার মুখ খুলল, ‘আমি এইতেই ফোকাস করে দেব। সারা জীবনে কত ফোকাস করলুম। এ তো সামান্য ফোকাস।’

কর্মচারীর কেরামতি মালিকের তেমন পছন্দ হল না। তিনি বললেন, ‘এ তোর বারোয়ারী পুজো নয়। সবেতেই ফোকাস। বেডসাইড ল্যাম্পে ফোকাস হয় না। ব্রাহ্মণের ছেলে মিথ্যে কথা বলব না। তিরিশের এক পয়সা কমে ফোকাস হয় না, হতে পারে না।’

কর্মচারী ফোকাস এক্সপার্ট, সে তার কৃতিত্ব দেখাবেই। বঙ্কিম মালিককে ইগনোর করে কর্মচারীকে একটু উৎসাহ দিল—’দেখো তোতা ভাই যদি করতে পারো বলব বাহাদুর ছেলে।’ মালিক উদাসীন মুখে সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। বঙ্কিম যেন তাঁর কেউ নয়। দোকান এখন কর্মচারীর। ছেলেটি আলমারির পিছনে ফোকাসের জাদু আনতে গেল। ছটাকায় যদি হয়ে যায়, হে মা। নেট ২৪ টাকা সেভিংস। এখন মালিকের মানভঞ্জন করা দরকার। দুই এক্সপার্টের বিবাদ। বঙ্কিমের কী দোষ! একজন কপালগুণে মালিক, অন্যজন কর্মচারী। বঙ্কিম হঠাৎ আলমারির একপাশে নীল মতো লণ্ঠন ধরনের বেশ সুদৃশ্য একটা জিনিস আবিষ্কার করল, ‘ওটা কী?’

‘ও ওটার দিকে নজর পড়েছে! ওসব মশাই লোকঠকানো কারবার। গাঁটকাটাদের আবিষ্কার। ওটাও একটা ল্যাম্প। প্ল্যাস্টিকের তৈরি। বেশি পাওমার্কিনের খাটো লুঙ্গি আর ছেঁড়া ছেঁড়া গেঞ্জি গায়েয়ারের বাল্ব লাগালেই ভুস্‌।’

‘ভুসটা কী?’ বঙ্কিম ভেবেছিল ফিউজকে বোধহয় এক্সপার্টদের ভাষায় ভুস্‌ বলে। না তা নয়, ভুস্‌ করে জ্বলে যাবে।

‘জিরো ল্যাম্প চলতে পারে। জিরো জ্বেলে ঘুমিয়েই যদি পড়লেন, বিউটিটা কী ভূতে দেখবে! বাজার মশাই সাংঘাতিক। প্রলোভনে প্রলোভনে মানুষের মর‍্যালের বারোটা বেজে গেছে। কী করেন?’

‘সামান্য চাকরি।’

‘বাঁ হাতের ইনকাম আছে?’ বঙ্কিম বলল, ‘না’।

‘তবে ওসব দিকে নজর যাচ্ছে কেন? জোচ্চোরে কিনবে। ওই পড়ে আছে, আমি কখনও ফিরেও তাকাইনি। আজ বললেন বলে একবার দেখলুম। ওসব মাল লোকে বিয়েতে পাচার করে। বিয়ের ব্যাপারটাই মশাই পুরো ওয়েস্টেজ। আমি বয়েস থাকতেও ওই কারণে পা বাড়াইনি।’

কথা শুনতে শুনতে বঙ্কিম-এর নজর আর একটা আকর্ষণের উপর গিয়ে পড়েছে। এতক্ষণের সমস্ত উপদেশ ভুলে আবার কৌতুহল প্রকাশ করে ফেলল, ‘ওটা কী? ওই যে সবুজ মতো, বাঁ পাশে?’

দোকানের মালিক অবাক হয়ে বঙ্কিমের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন তারপর খুব ধীরে ধীরে বললেন, ‘আপনার দোকান আছে?’

‘না তো’ বঙ্কিম একটু অবাক হল।

‘দোকান যখন নেই তখন ওটার দিকে নজর কেন? ওটা জ্বালালে বন বন করে ঘোরে। খদ্দের ভোলানো জিনিস। আমাসা আছে?’

বঙ্কিম বলল, ‘আছে’।

‘বুঝেছি। সেই জন্যই এত লোভ। একবার ওটা, একবার ওটা। মনটাকে বাঁধতে শিখুন। সংসারী মানুষ জীবনে দুঃখ পাবেন।’ বঙ্কিমের মনে সেই গানের কলিটা উঁকি দিয়ে গেল, পাগলা মনটারে তুই…।

কর্মচারী ছেলেটি ইতিমধ্যে মাঝারি সাইজের একটা অ্যালুমিনিয়ামের কড়া নিয়ে এল। একটা রিমে বেশ বড় গোলাকার ফুটো। কর্মী ছেলের মুখে বেশি কথা নেই। কম কথা কাজ বেশি। ব্যাঙের ছাতার মতো শেডটা খুলে, বাল্বটা খুলে ফেলে হোল্ডারের রিংয়ে সেই কড়াটা ফিট করে দিল। তারপর বাল্বটা লাগিয়ে সগর্বে বলল, ‘নিন ফোকাস করে দিয়েছি। সারা জীবনে কত ফোকাস করলুম, বৌভাতের বৌ থেকে শুরু করে, খাটিয়ার দিদিমা পর্যন্ত। এ তো মশাই এলেবেলে কাজ।’ মালিকও স্বীকার করলেন, পরেশের ব্রেন আছে। ‘আপনারও এক ঢিলে দু পাখি কেন তিন পাখি হল। আলো হল, ফোকাস হল, একটা কড়াও হল। সকালে ভাজাভুজি করলেন আপনার স্ত্রী আর রাতে আপনি করলেন ফোকাস।’

বঙ্কিম ভেবেছিল দামটা হয়তো ছটাকা থাকবে না। দোকানদার বললেন, ‘না না, ভদ্রলোকের এক কথা, ছটাকা বলেছি ছটাকাই নেব। ব্যবসাদার হতে পারি জোচ্চোর নই। তাছাড়া লিটিগেশনের দোকান। লাভ করে, মাল বেচে করবটা কী। কেস চলছে। কে হারে কে জেতে?’

পরেশ মাল প্যাক করে ফেলল। পাশের চায়ের দোকানের ছেলে চা নিয়ে এল এই সময়। ‘আসুন, চা’। বঙ্কিম একটু আপত্তি করল, ‘আমাকে আবার চা কেন?’ মালিক বেশ জোরালো গলায় বললেন, ‘আমার কাছে দুই দুই নেই। ছ’টাকার খদ্দেরও খদ্দের।’

বঙ্কিম চা খেল। নতুন দু টাকার নোট পাঁচ টাকা বলে ভুল হয়, এই নিয়ে কিছুক্ষণ নোট সম্পর্কে, ডিজাইন সম্পর্কে আলোচনা করল। শেষে দাম মিটিয়ে ছোট্ট প্যাকেটটা হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে দোকানদারকে নমস্কার করে খুব বিনীতভাবে বলল, ‘আজ তাহলে আসি’। মালিক কাউন্টারের এক দিকের কাঠ দ’য়ের মতো তুলে দোকানের বাইরে এসে বললেন, ‘যতবার আলো জ্বালাতে চাই নিভে যায় বারে বারে। সে অনেক কথা। আমার লাইফটা একটা ইতিহাস। এ দোকান কিছু নয়, এর চার ডবল দোকান আমার হতে পারত। শা আ লা আ।’ অনেকটা শেয়ালের ডাকের মতো শোনাল। বঙ্কিম কালবিলম্ব না করে সন্ধ্যার জনস্রোতে নিজেকে মিশিয়ে দিল। কে সেই অদৃশ্য শত্রু! তিরিশ টাকার ঠ্যাংঅলা আলোটা কেনার সময় জেনে যাবে।

আর কোনও রকম বায়নাক্‌কা না করে বঙ্কিম সটান বাড়ি চলে এল। সন্ধে হয়ে গেছে। তার ঠাকুর ঘর আলোর অভাবে অন্ধকার। বাইরের রকে বসে প্রতিমা ফুঁ দিয়ে চিনে বাদামের খোসা ওড়াচ্ছিল। বঙ্কিম ঢুকল। প্রথামত প্রতিমা বঙ্কিমের হাত থেকে মোড়কটা নিল। স্ত্রীর দায়িত্ব এখন এইটুকুতে এসে সীমাবদ্ধ। এই কাজটা প্রতিমা খুব নিষ্ঠার সঙ্গে করে। অবশ্যই স্বার্থ আছে।

বঙ্কিম একটু চা খাবে কি না? শরীর কেমন আছে? এসব প্রথাগত ব্যাপারের মধ্যে নেই। স্ট্রেট নিজের ঘরে এসে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে মোড়কটা খুলে ফেলল। ‘বাঃ বেশ জিনিসটা তো, বাবার এই রকম একটা ছিল’। জিনিসটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে এই প্রথম বঙ্কিমের কোনও কোনও জিনিসের প্রশংসা করল প্রতিমা।

‘এতদিনে তোমার একটু বুদ্ধি খুলেছে। বয়েস হচ্ছে তো। বুদ্ধিরও বয়েস বাড়ছে। কী অসুবিধে হয়, রাত্তিরে পড়তে পড়তে উঠে আলো নেভাতে।’

বঙ্কিম জামা খুলতে খুলতে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, ‘ওটা তোমার জন্য এনেছি নাকি?’

‘যার জন্যই আনো, এটা আমার, ব্যস।’ প্রতিমা আলোটাকে খাটের মাথায় ক্লিপ দিল।

‘ওটা ঠাকুরের জন্য এনেছি। সন্ধ্যা তো ল্যাম্পটা নিয়ে চলে গেল সব অন্ধকার করে।’

‘আমি কী জানি। তুমি আর একটা কিনে আনো।’

‘আমার ফাদারের ট্যাঁকশাল আছে তো।’

‘জীবনে কিছুই তো দিলে না, একটা আলো দিতে একেবারে বুক ফেটে যাচ্ছে। কৃপণের বংশ।’

বঙ্কিম মেজাজ খারাপ করবে না ভেবেছিল। এতক্ষণ মুখে একটা হাসির ঝিলিক রেখেছিল। এইবার আর পারল না। প্রায় গর্জন করে উঠল, ‘তোমার ভারী দাতার বংশ। কানকো ভাঙা একটি মেয়ে আর কাঁটা ভাঙা একটা ঘড়ি, এর বেশি তো আর কিছু উপুড়হস্ত হল না।’

‘নগদের কথাটা চেপে যাচ্ছ কেন? পুলিশ ধরবে বলে?’

‘হাজার টাকা নগদ নগদই না। আমার মতো ছেলের বাজার দর তিরিশ হাজার টাকা।’

‘সে তোমার বাবার কাছে। আমার বাবার কাছে তোমার দাম কাঁচকলা’। আলোটা নিরীহ সাক্ষীর মতো খাটে ঠোঁট লাগিয়ে পড়ে রইল। স্বামী স্ত্রী তাদের পারস্পরিক গায়ের ঝাল মেটাতে লাগল। বঙ্কিম মুখ ভেংচে বলল, ‘তোমার বাবা তখন হাতে ধরে আমার মেয়েটাকে নাও, মেয়েটাকে নাও বাবা, বলে একেবারে ভেঙে পড়লেন কেন; কোনও এক্স মহারাজার ছেলের সঙ্গে বোঁচা মেয়ের বিয়ে দিতে কে বারণ করেছিল।’

‘বিয়ের আগে লেখা তোমার চিঠিগুলো বের করব?’

‘সেগুলো চিঠির মতো দেখতে হলেও সাহিত্য। কোনও সম্পাদক লেখা ছাপছিলেন না বলে তোমার মতো মুখের কাছে কিছু পরীক্ষামূলক জিনিস ছেড়ে যাচাই করেছিলুম।’ চেঁচামেচি শুনে ছেলে আর মেয়ে দুজনেই ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়ে ধরেছে বাপের হাত, ছেলে মার। দুজনেই বলছে, বাবা এইমাত্র অফিস থেকে এসেছে মা, ঝগড়া কোরো না।

পরমেশ্বর দোতলা থেকে একতলার সিঁড়ির বাঁকে দাঁড়িয়ে ছেলেকে বলছেন, ‘চলে আয় ওপরে। তোর ও লাইন নয়। তুই এখন অন্য পথের পথিক। বিয়ে করেছিস যখন জীবনটাই একটা স্যাক্রিফাইস। দিয়েই দে। দিয়ে দে। যা চায় সব দিয়ে দে। লেট দেয়ার বি পিস।’

প্রতিমা এক ঝটকায় ছেলের হাত ছাড়িয়ে তেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। প্রতিমা সিঁড়ির প্রথম ধাপে। মার্কিনের খাটো লুঙ্গি আর ছেড়াঁ ছেঁড়া গেঞ্জি গায়ে পরমেশ্বর উপরের ধাপে। প্রতিমার টার্গেট এখন পরমেশ্বর। দীর্ঘ দিন দুজনের কোল্ড ওয়ার চলেছে। বাক্যালাপ বন্ধ। সুযোগ পেলেই দুজনে দুজনকে চিমটি কাটেন।

প্রতিমা চিৎকার করে উঠল, ‘কী দিয়েছেন আপনারা আমাকে। মার হারটা চেয়েছিলুম বলে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের লোককে বলে বেড়াচ্ছেন, হার না পেলে বউ আমার টাক ফাটাবে। যেমন ছেলে তেমনি বাপ।’

পরমেশ্বর কী-ই বলে, আর এক ধাপ নেমে এলেন। রাগে তাঁর শরীর কাঁপছে। তিনি সেই অবস্থায় চিৎকার করে বললেন, ‘শুনলি, শুনলি, কথা শুনলি। তোর সামনে আমার অপমান।’

বঙ্কিম ছিটকে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। প্যান্টের সবকটা বোতাম খোলা। সামনে আন্ডার ওয়ারের দড়িটা পেণ্ডুলামের মতো দুলছে। বঙ্কিম তখন ক্রোধে ফুটছে। অদ্যই শেষ রজনী। বেশ কষকষে করে প্রতিমার ডান হাতের কব্জিটা চেপে ধরল। দশ টাকা দামের নকসি শাঁখা খণ্ড খণ্ড হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল। ‘তোমাকে আজ বিধবা করে ছাড়ব।’

‘যে আমাকে বিধবা করবে সে এখনও মার পেটে—প্রতিমা তখন রণচণ্ডি। বঙ্কিমের মেয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছে। ছেলে দাদুর শেখানো শ্লোক আওড়াচ্ছে—অজাযুদ্ধে, ঋষি শ্রাদ্ধে, প্রভাতে মেঘডম্বরে, দাম্পত্য কলহেচৈব বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া। পরমেশ্বর কাঁপতে কাঁপতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে খালি পায়ে খোলা দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন, ‘কর্মফল, কর্মফল, হায় ভগবান এ কী করলে, এ কী করলে, গাছতলায় পড়ে মরব সেও ভি আচ্ছা, তবু এখানে নয়, পাপের বাড়ি।’

পরমেশ্বরের একজিট। প্রতিমা ভেংচি কাটল, ‘এ কী করলে!’ নাতনি কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘দাদি শুধু পায়ে যাবেন না, আমি জুতো ঝেড়ে এনে দিচ্ছি।’ দাদির জুতো ঝাড়াটা ইদানীং তার কাজ।

বঙ্কিম বলল, ‘এগিয়ে যান আমিও আসছি।’

প্রতিমা খপ্‌ করে বঙ্কিমের প্যান্টের কোমরটা চেপে ধরে বলল, ‘পালাচ্ছ কোথায়, আমার ব্যবস্থা করে দিয়ে যে চুলোয় যাবে যাও।’

গায়ের জোরে বঙ্কিম কোনওদিনই প্রতিমার সঙ্গে পেরে ওঠেনি। আজও পারল না। আর হাতখানেক এগোতে পারলেই খোলা দরজা। প্রতিমা প্যান্ট ধরে টেনে রেখেছে। মুক্তি থেকে মাত্র গজখানেক দূরে দাঁড়িয়ে বঙ্কিম মনে মনে হাহাকার করে উঠল, ‘কিচ্ছু হয়নি, পনেরো দিনের সাধনায় ঘোড়ার ডিম হয়েছে। ঈশ্বর, এখন আত্মিক বল নয়, বাহু বল চাই।’

পরমেশ্বর বাড়ির ইট-ফেলা বাগানের রাস্তায় পা দিয়ে বুঝলেন, শুধু পায়ে চলার অভ্যাস না করে কী ভুলই করেছেন। ছানি পেকে এসেছে, চোখেও কম দেখছেন। রাস্তায় আলো নেই, ঘোর অন্ধকার, যাবেনই বা কোথায়। পাড়ায় কোনও বন্ধুবান্ধব নেই, আত্মীয়স্বজন নেই। হেল্পলেস। বাগানের কোণে নিজের হাতে পোঁতা গোলঞ্চ গাছটা বেশ বড় হয়েছে। সেইটার অন্ধকার তলায় দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ পরমেশ্বর নিজেকে বললেন, ‘পঁচাত্তর বছরের সাধনায় কিস্‌সু হয়নি। তারপর ছেলেকে সম্বোধন করে বললেন, ‘মূর্খ, টেবিল ল্যাম্পের আলোয় কতটুকু অন্ধকার কাটবে! এই অসীম এরিয়া অফ ডার্কনেস। ইলেকট্রিসিটির কম্ম নয়। ওই এক আকাশ তারাই যেখানে ফেল মেরে গেল।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *