মাতৃভাষা সংকটে বাংলা: একটি শিশুমনস্তাত্ত্বিক সমীক্ষণ – শুভঙ্কর চ্যাটার্জী

মাতৃভাষা সংকটে বাংলা: একটি শিশুমনস্তাত্ত্বিক সমীক্ষণ – শুভঙ্কর চ্যাটার্জী

মধুসূদনের ‘একেই কি বলে সভ্যতা’-য় শিবু নবকুমারকে ‘লায়র’ বলায় নব ভয়ংকর রেগে গিয়েছিল। কারণটা এমন নয় যে জ্ঞানতরঙ্গিণী সভায় নবর দেরি করে আসবার অজুহাত শিবু বিশ্বাস করেনি। কারণটা হলো, কথাটা শিবু ‘বাঙ্গালা’ করে বলল না কেন? তাই সে ‘মিথ্যাবাদী’ বলল না কেন নবকে? ইংরেজি শব্দ ‘লায়র’ নবর বরদাস্ত হয়নি। সে এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠে তাঁকে খুন করবার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। এখানে আমাদের মনে রাখতে হবে নবর এ উচ্চারণ, আঁতে ঘা লাগার এই প্রতিবাদ বেরিয়ে এসেছে ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের তাপ লাগা একজন অ্যাক্টিভ নব্যবঙ্গীয় যুবকের মুখ থেকে। এর থেকে অনুমান করে নিয়ে চলে যে, আচার-আচরণে চিন্তা ও চেতনায় নব পুরোদস্তুর পাশ্চাত্য বিলাসী হলেও অন্তরের গহীন কেন্দ্রে কোথাও স্থিরপ্রতিমার মতো জাগ্রত ছিল মাতৃভাষার প্রতি তাঁর দরদ ও গরিমা। আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ এই শব্দের প্রতিবাদ বের করে এনেছে তাঁর ভিতরের সত্তাকে, একই সঙ্গে উন্মোচিত করেছে শিকড়ের প্রতি তাঁর নিবিড় অনুভূতি ও আকর্ষণকেও।

দেড়শো বছর আগে ইংরেজ শাসকের অধীনে থেকে, ফোর্ট উইলিয়ামের মিশনারিদের সান্নিধ্যে এসে, সর্বোপরি ডিরোজিওর মতো পাশ্চাত্য যুক্তিবাদী মনীষার দ্বারা প্রভাবিত হয়েও সেদিন নবকুমারের কাছে তাঁর মাতৃভাষাই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে মাতৃভাষা বলতে ঠিক কোন্ ভাষাটিকে চিহ্নিত করব? প্রচলিত মতে, একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর যে ভাষাটির সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় ঘটে, সেটিকেই তাঁর মাতৃভাষা বলে গণ্য করা হয়। বলাবাহুল্য, এখানে মায়ের মুখ নিঃসৃত ভাষাটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে। সেটি অসঙ্গতও নয়। কিন্তু বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে উক্ত ভাষাটিকে শিশু যদি জানতে না শেখে-বুঝতে না পারে, তার সঙ্গে যদি চর্চা ও চর্যার কোনোরূপ নিত্যসম্বন্ধ গড়ে না ওঠে তাঁর, তবে সে ভাষা মাতৃভাষা হলেও কালক্রমে তার স্বরূপ হারাতে বাধ্য। বরং প্রায়োগিক দিক থেকে এমনটা মনে করা যেতে পারে যে, যে ভাষা শেখার জন্য শিশুমনের কোনো সজ্ঞান প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়ে না, আপনা হতে যা হাড়ে-মজ্জায় গেঁথে যায়, সেটিই তো মাতৃভাষা! অন্তত হওয়া উচিত তো এমনটাই। আর শিশুকে যদি মাতৃভাষাকেও যথেষ্ট ক্লেশ স্বীকার করে শেখবার চেষ্টায় লেগে থাকতে হয় এবং তারপরও কিছুতেই ভাষাটির সঙ্গে আত্মিক সংযোগ গড়ে না ওঠে তখন বড়ই আক্ষেপের বিষয় হয়ে ওঠে।

বিবর্তমান সমাজ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সম্ভ্রান্ত বাঙালি শিশুর কাছে বাংলার গ্রহণযোগ্যতা সত্যিই আজ আক্ষেপের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর মাতৃভাষা হিসেবে তার অবস্থা তো আরও শোচনীয়। শৈশবের শুরু থেকেই এসব শিশুর জীবনবৃত্তে হিন্দি ও ইংরেজির প্রাধান্য। সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে তাকে বসতে হয় ঝাঁ-চকচকে কোনো এক ইংরেজি মাধ্যমে। কেতাদুরস্ত সেসব স্কুলে সমস্তকিছু ঢালাও পশ্চিমি ধাঁচের। সেখানে পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে আচার-আচরণ পর্যন্ত এমন আঁটোসাঁটো ইংরেজিয়ানায় মোড়া যে, বাঙালি ভাবধারা প্রবেশের জন্য খিড়কির দরজা পর্যন্ত বন্ধ। স্কুলে সাধারণ কথাবার্তাও চলে ইংরেজি কিংবা হিন্দিতে, বাংলার আমল বিশেষ নেই। তবে চাঁদবণিকের বাঁ হাতে মনসাপুজো দেবার মতো বাংলার অবস্থান সিলেবাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা হিসেবে রয়েছে। ফলত পাশ্চাত্য অনুকরণেচ্ছু আধুনিক দৃষ্টির কাছে এই মরচেপড়া ব্যাকডেটেড ভাষাটির সঙ্গে বাঙালি শিশুর কোনোরকম জানা ও বোঝার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় না। স্রেফ কোনোক্রমে পাস করার লক্ষ্যমাত্রাকে ধ্রুবতারা করে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ মার্কা এক আশ্চর্য কৌশলে পঠন-পাঠন চলতে থাকে।

কিন্তু এইভাবে কোনো ভাষা শেখা সম্ভব নয়; মাতৃভাষা তো নয়ই। ‘জীবনস্মৃতি’-র ‘বাংলা শিক্ষার অবসান’ নামক অধ্যায়ে রবীন্দ্রনাথ মাতৃভাষা প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন, “শিক্ষা জিনিসটা যথাসম্ভব আহার-ব্যাপারের মতো হওয়া উচিত… বাঙালির পক্ষে ইংরেজি শিক্ষায় এটি হইবার জো নাই”। রবীন্দ্রনাথ এখানে কোথাও কিন্তু ইংরেজি শিক্ষার বিরূপতা দেখাননি। ‘বাঙালির পক্ষে’ বলতে সম্ভবত তিনি বুঝিয়েছিলেন যাদের মাতৃভাষা বাংলা, সামগ্রিকভাবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদেরকে ইঙ্গিত করার উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হয় না। মাতৃভাষা যাদের বাংলা, এমন সব শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে আপন ঘরের ভাষার মধ্যে দিয়েই জ্ঞানচর্চার শুরু করা উচিত। অন্তত যে ভাষায় তাঁর বুনিয়াদি ভিত, সেই ভাষার মধ্যে চিন্তাভাবনা করবার শক্তি জন্মাতে পারলে ক্রমশ অন্য ভাষাতেও তা ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হয়। কিন্তু ভাষাশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বে মাতৃভাষার চর্চা আজ ব্রাত্য।

বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রে তো বটেই, দুঃখের বিষয় বাড়িতেও মাতৃভাষা চর্চার উপযুক্ত পরিসর বর্তমানে অমিল। অথচ শিশুর মৌখিক ভাষা শিক্ষার বিকাশে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। চাইল্ড সাইকোলজি বলে, শৈশব অবস্থায় আমাদের মনের গঠন থাকে শূন্য শ্লেটের মতো। তখন সেখানে কোনো দাগ-ছোপ থাকে না। সবটা এক্কেবারে সফেদ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের অনতিক্রম্য প্রভাবে গ্রহণ-বর্জনের দ্বারা ধীরে ধীরে তাতে বিভিন্ন রকমের আঁকি-বুকি ফুটে ওঠে এবং একসময় তা স্থায়ী চিহ্নে পরিণত হয়। ফ্রয়েড শৈশবের প্রথম পাঁচ থেকে সাত বছর সময়কালকে শিশুর মানসিক গঠনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন। এই সময়ে সে যা কিছু গ্রহণ করে (accept নয়, perceive অর্থে), ঠিক যেরকম আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠে তার শৈশব, তা-ই পরবর্তীকালে মনের ভিত্তি প্রস্তুত করে দেয়, বাকি জীবনে যার অধিকাংশটাই অপরিবর্তিত রয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে পারিবারিক প্রভাবের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ছোঁয়া না পেয়ে আশাপূর্ণা দেবীর মতো স্বনামধন্য লেখিকা বাংলাকে কী পরিমাণেই না ঋণী করে গেছেন, কেবল পরিবারের মধ্যে মাতৃভাষা চর্চার ধারাবাহিক রেওয়াজ ছিল বলে। কিন্তু বর্তমানের ছবিটি এমনটা নয়। সর্বক্ষেত্রে এখন ‘বাজার’ জিনিসটা অত্যন্ত কদর পেয়ে থাকে। বাজার এখন কী চাইছে, বাজারের লেটেস্ট ট্রেন্ড কী, কোনোকিছু শুরু করবার আগে এধরনের প্রাকশর্তগুলো ভীষণভাবে প্রভাবিত করে আমাদের। তাই বাঙালি মানেই তাঁকে মাতৃভাষায় রীতিমতো দখল রাখতে হবে এমন ভাবনা আর আজকের আরবান (urban) সমাজ মনে স্থান দেয় না। বরং চাকরির ইন্টারভিউতে গ্রেড বাড়ানোর জন্য সন্তানকে কাজ চলার মতো কোনো একটা বিদেশি ভাষা শেখার কোর্সে ভর্তির তাগিদ জোরালোভাবে পরিলক্ষিত হয়।

বর্তমানে বহুতলিক আবাসনের উচ্চশিক্ষিত বাঙালি অভিভাবকেরা স্বয়ং জড়িমাজড়িত মিশ্রভাষা ব্যবহার করে থাকেন এবং এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মাতৃভাষা প্রসঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আশ্চর্য মৌনীবৃত্তি তাদের অবলম্বন। বাংলা ‘মাতৃভাষা’ হবার দরুন খানিক হীনম্মন্যতাবোধে যেন ভুগতে দেখা যায় তাঁদের। অনুকরণপ্রিয় শিশুও গার্জিয়ানের ইচ্ছাকে নিরাশ করে না। ছোট থেকে হিন্দি ও ইংরেজি মিশ্রিত নপুংসক বাংলা শুনে শুনে ধীরেধীরে এটাতেই সে সাবলীল হয়ে ওঠে। একসময়ে এই হ-য-ব-র-ল ভাষাটিকে ভয় ও কুন্ঠার সঙ্গে মাতৃভাষা হিসাবে চিহ্নিত করতে হয়। যেখানে গ্রহণ (accept) করা দূরে থাক, ক্রমাগত বর্জন (reject) করতে করতে এগিয়ে চলে তার মাতৃভাষা পাঠ। খিদে পেলে আজ মাকে সে বলে যে, তার ‘ভুখ’ লেগেছে, আনন্দের সঙ্গে স্কুলের নতুন বন্ধুকে চিনিয়ে দেয় এ আমার ‘দোস্ত’ বলে, কোনো দুঃসাহসী অপকর্ম করতে না পারলে ভীতু সহপাঠীর উদ্দেশে তাচ্ছিল্যের আস্ফালন যায় শোনা, তুই খুব ‘ডরপোক’। সুদীর্ঘকাল ধরে যে ভাষার সঙ্গে একটি জাতির নাড়ির টান অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়ে আছে, ভিন্ন সংস্কৃতির ঔপনিবেশিক লালসা সেখানে এভাবেই থাবা বসাতে থাকে। বাঙালি ছেলের চিরন্তন ডাকনাম ‘বাপি’ বা ‘বাবু’-র জায়গায় হাজির হয় ‘বেটা’। ‘কাকু-কাকিমা’-কে দূরে ঠেলে কাছে আসে ‘আঙ্কেল’ ও ‘আন্টি’। এরকম দৃষ্টান্তের গ্রাফ ক্রমাগত ঊর্দ্ধমুখী।

দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত এইসব শব্দগুলো হয়ত তেমন ওজনদার নয়। উপরন্তু পরিবর্ত হিসাবে অন্য শব্দের আগমন ঘটায় ঘরোয়া এসব মোলায়েম শব্দগুলোর যে মূলোচ্ছেদ হয়ে গেলো তা কতকটা নজর এড়িয়ে যায়। বস্তুত, যে কোনো ভাষার বেঁচে থাকার মেয়াদ নির্ভর করে থাকে তার মৌখিক ব্যবহারের উপর, যাকে ‘বচন’ বলা হয়। যে ভাষা যত বেশি সংখ্যক মানুষের মুখে মুখে ফেরে, সেই ভাষা তত জীবন্ত, তত সজীব। আর এই সজীবতা বজায় রাখার জন্য নিত্যদিনের ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে তার সঙ্গে সৌহার্দ্যের বন্ধন তৈরি করা জরুরি। নিত্যদিনের চলাফেরা, ওঠা-বসায় মাতৃভাষা যেন শিশুমনে মোলায়ম ছাপ রেখে যেতে পারে। অন্তরের তাগিদ থেকে শিশু তাকে জানতে চায় যেন। পরিতাপের বিষয়, প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজের মধ্যে দিয়ে শিশুর সঙ্গে তাঁর মাতৃভাষার যে সেতু নির্মাণ করার কথা ছিল তার বিন্দুমাত্র সুযোগ মেলে না। টিভির যে কার্টুনগুলো শিশুর নিত্যসঙ্গী, তার বেশিরভাগই হিন্দি আশ্রিত। বাজার রমরম করে চলা অত্যন্ত জনপ্রিয় এই কার্টুনগুলোয় কাহিনী, প্লট থেকে শুরু করে যে সংস্কৃতির পরিচয় সেখানে ফুটে ওঠে তার সঙ্গে বাংলার যথেষ্ট রকমের দূরত্ব আছে। ফলত, শিশুমনে গোড়া থেকেই জেঁকে বসে ভিন্ন সংস্কৃতির রেওয়াজ-রুচি আর অন্ধভাবে সেগুলি অনুকরণ করে চলবার স্বভাবজ প্রয়াস। ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, ‘ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী’, ‘সাত ভাই চম্পা’-কে সাত সাগরের পারে নির্বাসন দিয়ে সে পেশি আস্ফালন করে বলে, “ম্যায় ছোটা ভীম বানুঙ্গা”। ‘নিনজা হাতোড়ি’ যার সহায়, ‘ডোরেমন’ যার বন্ধু, তার ভাবনা কীসের! ডোরেমন যে শুধু তাকে বাড়ি থেকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে কল্পনার বিবিধ রাজ্যে প্রবেশ করাতে চায় তাই নয়, সে তার আত্মপরিচয়, তার শিকড় থেকেও সরিয়ে নিয়ে যেতে চায় তাকে। এর সঙ্গে রয়েছে আধুনিক মুঠোফোনে হাজির হরেক কিসিমের অজস্র মনভোলানো সব ভিডিও গেম। এসব গেম খেলবার অনুষঙ্গ ভাষা হলো ইংরেজি। এখানে পর্দায় ভেসে ওঠা ছোটো ছোটো অপশন কী্ প্রেস করে প্লেয়ারকে গেমের গতিবিধি কন্ট্রোল করতে হয়। যুদ্ধের খেলায় বন্দুক বদল, রেসের খেলায় গাড়ি বদলসহ এধরনের অনেক আবশ্যকীয় খুঁটিনাটি জিনিস সাবলীলভাবে সামলে নেয় শিশু। কারণ ভাষাটা ইংরেজি। ইংরেজি না হয়ে মাতৃভাষা হলে তার খেলা যেত মাটি হয়ে। তবে আমাদের বক্তব্য এমনটা নয় যে, আন্তর্জালিক ঐসব গেমগুলির ভাষা বাংলা করে দেওয়া হোক কিংবা যে কার্টুনগুলির কথা এইমাত্র বলা হলো সেগুলিও সম্প্রচারিত হোক বাংলায়; না, এমন অনৈতিক দাবি আমরা করছি না। তবে সমাজ সমীক্ষার দিকে দৃষ্টি রেখে এইটুকু মাত্র বলা যায় যে একটি বাঙালি শিশুর পক্ষে ওগুলো মনোরঞ্জনের দুর্দান্ত অপশন হলেও তা মাতৃভাষা চর্চার পক্ষে বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠতে পারেনি।

বাংলাকে বাঙালির অন্তরে আরও বহুকাল ধরে মাতৃভাষারূপে জাগরূক দেখতে চাইলে আমাদের উচিত পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এর উপযুক্ত সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা। এর জন্য নিত্য-প্রয়োজনের ব্যবহারে আরও বেশি করে শুদ্ধ বাংলার চর্চা করা দরকার, দরকার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিশুর সপ্রাণ উপস্থিতি। এছাড়াও অন্যান্য উপায় অবশ্যই গ্রহণ করা যেতে পারে। মোটকথা ছোট ছোট সুকুমারহৃদয়ে বাংলা যেন কোনোভাবেই ভীতি ও তাচ্ছিল্যের বস্তু হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে আমাদের। একইসঙ্গে শিক্ষায়তনগুলিতে বাংলাকে কোণঠাসা করে রাখবার বজ্রআঁটুনিও শিথিল করার প্রয়োজন। যাতে আজকের শিশুও একদিন প্রয়োজন হলে মাতৃভাষার অবমাননার বিরুদ্ধে নবকুমারের মতো সোচ্চার প্রতিবাদ জানাতে পারে। আর তাঁর মাতৃভাষা বিরাগী মাকে যেন কখনও গর্বের সঙ্গে সর্বসমক্ষে বলতে না হয়, “আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।”

প্রবন্ধঋণ:

১। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, প্রথম সংস্করণ, কলকাতা, পুনশ্চ, ২০০৭

২। সুকুমার সেন, ‘ভাষার ইতিবৃত্ত’, প্রথম আনন্দ সংস্করণ, কলকাতা, আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৩

৩। সুখেনলাল ব্রহ্মচারী, ‘শিশুর মন’, প্রথম প্রকাশ, কলকাতা, বিশ্বভারতী, ১৩৫৩

৪। সুচিত্রা ভট্টাচার্য, ‘বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে’, উত্তর সম্পাদকীয়, এবেলা, ২রা ডিসেম্বর ২০১২

৫। সুনীলকুমার সরকার, ‘ফ্রয়েড’, পঞ্চম সংস্করণ, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, ২০০২

৬। ‘Freud for Beginners’, first impression, new delhi, orient Blackswan, 2010

৭। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘জীবনস্মৃতি’, কলকাতা, বিশ্বভারতী, ১৯৬৮

লেখক পরিচিতি: এম. ফিল স্কলার, বাংলা বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *